ভ্রমণ মার্‌খা উপত্যকায় তিন উজবুক-হিন্দোল মণ্ডল- শরৎ ২০২০

মার্‌খা উপত্যকায় তিন উজবুক

হিন্দোল মণ্ডল

হিমগিরি এক্সপ্রেস থেকে আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনেই লোটা-কম্বল সমেত নেমে পড়ে তিন উজবুক। জম্মু গিয়ে আর কাজ নেই। সেই যে শ্রীনগরে কার্ফু লেগেছে, ছাড়ার নাম করছে না। শ্রীনগরে আটকে পড়লে সব মাটি হবে। তাই আম্বালা থেকে বাস ধরে চণ্ডীগড়। চণ্ডীগড় বাস-আড্ডায় বাস ঢুকতে না ঢুকতেই কন্ডাক্টর সাহেব আরেকটা বাসে তুলে দেন। “ইয়ে বস মনালি যায়েগি, তুরন্ত চড় যাইয়ে।” যাক বাবা, সেইদিনই মানালি পৌঁছে যাওয়া যাবে। তিন উজবুকের চা পর্যন্ত খাওয়া হল না। বেলা হয়ে গেছে, তাই বাসে গাদাগাদি ভিড়টা নেই। বসার সিট পাওয়া গেছে। লোটা-কম্বল কোনোমতে সামলে-সুমলে রাখতে হয়েছে।

মানালিতে বাস ঢুকল প্রায় রাত সাড়ে ন’টা। বাস-আড্ডা ছাড়া মানালি অনেকটাই নিঝুম। অগাস্ট মাসে মানালিতে বাঙালি ট্যুরিস্টদের ভিড় শুরু হয়নি। বাস-আড্ডাতে মালপত্র গুছিয়ে নিয়ে নামতে না নামতেই তিন উজবুককে পাকড়াও করল কয়েক দল দালাল। তারা তাদের গাড়িতে এই তিনজনের জন্যেই অনেক কষ্টে তিনটে করে সিট বাঁচিয়ে রেখেছে লে নিয়ে যাবে বলে। রাত আড়াইটায় যাত্রা শুরু। যা বাবা! একরাতও মানালিতে কাটবে না! বাস স্ট্যান্ডেই তিন উজবুকের ছোট্ট মিটিং। চলো, চলে যাই লে। “কিন্তু রাতে একটু ঘুমাতে…” ঘুম কাতুরে উজবুকের কথা শেষ হল না। লে পৌঁছে দু’দিন টেনে ঘুমিয়ে নিবি। এখন চলে চল।

রাত দুটো চল্লিশে যাত্রা শুরু হল আবার। সস্তার তিন অবস্থা। গাড়ির একেবারে লাস্ট সিটে কাঁচুমাচু হয়ে তিন উজবুক কোনোমতে গুঁজে গেল। বহু উঁচুনিচু চড়াই-উতরাই সামলে সন্ধেবেলা উপসি পৌঁছাতেই তিন উজবুকের আবার ভেজ মোমোর খিদে পেয়ে গেল। অবশেষে বোঁচকাবুঁচকি সমেত বিধ্বস্ত অবস্থায় তিন উজবুক রাত সাড়ে আটটা নাগাদ লেহ (লে) বাস-আড্ডায় নিজেদেরকে আবিষ্কার করল। কিছুক্ষণ বাদে গাড়ি নিয়ে তেনজিং উদ্ধারে না এলে রাতটা হয়তো বাস স্ট্যান্ডেই কাটাতে হত। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ পূর্বপরিচিত ওয়ারি লা গেস্ট হাউসের ঘরে।

পরের দুটো দিন চলে গেল লাদাখের মারখা উপত্যকা সহ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর খুঁটিনাটি জোগাড়যন্ত্রের কাজে। নিজেদেরকে উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যে স্তোক গ্রাম থেকে স্তোক কাংড়ির বেস ক্যাম্পের দিকে একটু হেঁটে আসাও হল। হালকা চালে লেহ প্রাসাদ, বৌদ্ধ গুম্ফা ইত্যাদি হেঁটে-হেঁটেই দেখা হলো। এইবার তেনজিংকে বলে রাখা হল গাড়ি করে লেহ থেকে জিংচান গ্রাম পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। ব্যস, উজবুকগণ এবার মারখা উপত্যকায় পাড়ি দিতে প্রস্তুত।

লেহ শহর থেকে স্তোক কাংড়ি শৃঙ্গরাজির দিকে তাকালে, স্তোক কাংড়ি আর লেহ শহরের মাঝে সিন্ধু নদ বয়ে গেছে। আর স্তোক কাংড়ি গিরিশিরার পেছনেই প্রায় সমান্তরালভাবে মারখা নদী বয়ে গিয়ে চিলিং-এর কাছে জাঁসকার নদীতে মিশেছে। সেই জাঁসকার নদী আবার নিমুতে এসে সিন্ধু নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

মারখা নদীর উপত্যকায় ঢুকতে গেলে গাড়ি করে সিন্ধুর ধার ধরে নিমু পর্যন্ত গিয়ে বাঁক নিয়ে জাঁসকারের ধার ধরে চিলিং পর্যন্ত যাওয়া যায়। তারপর নদী পেরিয়ে মারখা উপত্যকায় হাঁটা যায়। কিন্তু তিন উজবুক ও-পথ মাড়াবে না। তারা গাড়ি করে লেহ এয়ারপোর্টের পাশে স্পিতুক গুম্ফার কাছ থেকে সিন্ধু পার হয়ে জিংচেন গ্রাম পর্যন্ত যাবে। তারপর হাঁটা।

সকালবেলা নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি নিয়ে তেনজিং এসে গেল। তিন উজবুক লটবহর সামলে গাড়ি চড়ে স্পিতুক গুম্ফাকে পাশ কাটিয়ে সিন্ধুকে পার করে জিংচেন নদীর গর্জে ঢুকে পড়ল। তেনজিং ওদের জিংচেন গ্রাম ছাড়িয়ে কিছু দূর আরও গিয়ে এক চায়ের দোকানের সামনে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। এই যা। জিংচেন গ্রামটা তো দেখাই হল না ভালো করে! এবার এই বিপুল লটবহর পিঠে তুলে হাঁটতে হবে ভাবতেই ভ্যাক করে কান্না পেয়ে গেল ঘুমকাতুরে উজবুকটার। আচ্ছা চলো, আপাতত কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর কতদূর হাঁটতে হবে কে জানে।

নেতা গোছের উজবুকটা চা খাওয়া শেষ হতেই বললে, “উঠো উঠো।” উঠে পড়তে হল। আরামের দিন শেষ। জিংচেন নদীগর্ভ ধরে মোটামুটি ভালোই পথ। বার কয়েক নদীকে এপার ওপার করতে হল। মাঝে মাঝে চমরি গাই নিয়ে এক-দুজনের দেখা মিলছে। চলতে চলতে থামা, আর থামতে থামতে চলা। প্রায় ঘণ্টা সাড়ে তিন-চার বাদে নদীগর্ভ খুলে গিয়ে অনেকটা চওড়া হয়ে গেল। ওই তো দেখা যায় সাদা প্যারাস্যুট কাপড়ের তাম্বু। মানে চায়ের দোকান। মানে রুমবাক গ্রাম কাছেই এসে গেছে।

পিঠ থেকে ভার নামল। গরম চায়ে গলা ভিজল। বুক ভরে দম নেওয়া গেল। স্তোক গ্রাম থেকে স্তোক-লা পেরিয়েও নাকি এই রুমবাক গ্রামে আসা যায়। এক তুর্কি দলের চারজনকে দেখলাম ওপথেই রুমবাক গ্রামে এসে নদী পেরিয়ে যাচ্ছে। তিন উজবুকও শুরু করল নদী পার। এখানে নদীতট বেশ চওড়া। অনেকগুলো ধারায় নদী বইছে। টলোমলো পায়ে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে একশা হয়ে নদী পেরোনো গেল। নেড়া পাহাড়টা পুরো লালচে পাথরের। জ্ঞানী উজবুক বললেন যে এই পাহাড়ের পাথরে লোহার ভাগ বেশি। তাই এমন লালচে। এবারে পথ একটু চড়াই। একটু বাদে-বাদেই দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এক তরুণ তুর্কি এখানে বমি করে ফেলল। গাছপালা নেই। শুধু লাল লাল পাথর। রুমবাকে তাও কিছু গাছপালা ছিল। রুমবাকের উচ্চতা প্রায় সাড়ে বারো হাজার ফুট। লাদাখে ট্রেকের বৈশিষ্ট্যই হল প্রায় এগারো-সাড়ে এগারো হাজার ফুট উচ্চতা থেকে শুরু হয়। লেহ শহরের উচ্চতাই প্রায় সাড়ে এগারো হাজার ফুট।

মাঝে মাঝে বোতল থেকে জল খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে আবার চলা। বোতলের জল শেষ হওয়ার আগেই আবার চাষের জমি দেখা গেল। দাড়িয়াল উজবুক মুরগির সাইজের তিতির পাখি দেখে ফেললেন। চার পা এগোতেই একটা সাদা বাড়ি দেখা গেল। উরুৎসে গ্রাম। একটা মাত্র চোখে পড়ার মতো বাড়ি। সেই বাড়িতেই রাতের আশ্রয় জুটে গেল। মাথাপিছু ১০০০ টাকা। এক পয়সা কম নয়, এক পয়সা বেশিও নয়। ঘরে পর্যাপ্ত লেপ-কম্বল। এ বাবা! এত কষ্ট করে স্লিপিং ব্যাগগুলো বয়ে নিয়ে আসা হল। যতবার চাই ততবার গরম চা। লাদাখি থার্মোফ্লাস্কগুলো বেশ বড়ো বড়ো আর দারুণ মজবুত। অনেক্ষণ চা গরম থাকে তাতে। রাতে ডিনার দেবে। সকালে ব্রেকফাস্ট। আবার লাঞ্চও নাকি প্যাক করে দেবে। যাচ্চলে! তাহলে সঙ্গে করে কাঁড়ি কাঁড়ি চিঁড়ে ভাজা, চানাচুর আর শুকনো খাবার নিয়ে আসা কেন?

বিকেলের আলো থাকতে থাকতে উরুৎসে গ্রামটাকে পায়ে পায়ে একটু ঘুরে দেখা হল। বেশি ঘরবাড়ি দেখা গেল না। বাড়ির তুলনায় চাষের জমি বেশি মনে হয়। বেশ কিছু রঙিন তাঁবু পড়েছে। ট্রেকারদের থাকার জন্যে। এখানে পানীয় জলের উৎস থাকায় অনেকেই এখানে রাত্রিযাপন করেন। চলার পথে পানীয় জলের খুব অভাব। তবে অনেকে আবার কিছুটা এগিয়ে আপার উরুৎসে ক্যাম্প বা বেস ক্যাম্পে গিয়েও থাকেন। হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি এসে গেল। আবার একটু বাদেই রোদ উঠে জোড়া রামধনু দেখা দিল। তারপর আলো মরে গেলে হোম-স্টের ডাইনিং রুমে গিয়ে বসা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। এতক্ষণ বোঝা যায়নি যে এতজন নানান বয়সি নানান দেশিয় অনেক ট্রেকার এই হোম-স্টেটাতে রয়েছেন। হালকা গল্পগাছার পর ডিনার সেরে যে যার ঘরে সেঁধিয়ে গেল। তিন উজবুক ঠিক করল যে কিছু খাবার এই হোম-স্টেকে দান করে যাবে।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ। পরদিন সকালে ভরপেট ব্রেকফাস্টের পর সঙ্গে আনা বেশ কিছু চিঁড়ে ভাজা চানাচুরের প্যাকেট সবিনয়ে দান করা গেল হোম-স্টের মালিককে। ওফ্‌, পিঠ থেকে একটু হলেও তো বোঝা কমল! আজ বহু দূর পথ পাড়ি দিতে হবে। উরুৎসে থেকে স্কিউ প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ। উরুৎসের উচ্চতা সাড়ে তেরো হাজার ফুট আর স্কিউ এগারো হাজার। কিন্তু পেরোতে হবে প্রায় ষোলো হাজার ফুটের কান্ডা লা বা গান্ডা লা।

‘বুকে রাখবি দুর্জয় সাহস, আর যা থাকে কপালে।’ বনভূষণ নায়ক বাবুর কথাটা স্মরণ করে পথে নামা হল। ঘণ্টা খানেকের হালকা চড়াই পথ ভেঙে আপার উরুৎসে ক্যাম্প বা কান্ডা লা বেসক্যাম্প এসে গেল। সব সরঞ্জাম তালা বন্ধ করে চা দোকানি কেটে পড়েছেন। বাঙালির যে খানিক বাদে-বাদেই চা তেষ্টা পায়। চায়ের তেষ্টা কি আর জলে মেটে? কিন্তু কিছুই করার নেই। একটু বিশ্রাম। পিঠের যমদূতের মতো ভারী বোঝাটাকে একটু নামিয়ে রাখা। সামনের পথটুকু যতটা সম্ভব দেখে বুঝে নেওয়া। তারপর আবার বোঁচকাটাকে পিঠে তুলে হাঁটতে থাকা।

পথের চড়াই এবার ধীরে ধীরে বাড়ছে। এক পা দু’পা করে এগিয়ে চলা। সামনে বেশ কিছু বিদেশি-বিদেশিনী তুরতুর করে এগিয়ে চলেছেন। কারও কারও বোঝা বওয়ার জন্যে ঘোড়া আছে। নিজেরা ওয়াকিং স্টিক আর ক্যামেরা কাঁধে চলেছেন। গ্রাম ছেড়ে আসার পরপরই গাছের আর চিহ্ন দেখা যায় না। শুধু নেড়া পাথুরে পাহাড়। হঠাৎ চোখ তুলতেই স্তোক কাংড়ি শৃঙ্গ দেখা দিলেন। লেহ শহর থেকে যেদিকটা দেখা যায় এটা তার পিছন দিক। বরফে ঢাকা শৃঙ্গ দেখে চোখের একটু আরাম হয়। প্রায় দু’ঘণ্টামতো হয়ে গেল। পাসের দেখা তো পাওয়া যায় না। উলটো পথে কিছু লোককে আসতে দেখা গেল। পাস অভি বহত দূর হ্যায়। ও বাবা! ঘুমকাতুরে উজবুকটার আবার খিদে পেয়ে গেল যে। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে উরুৎসে থেকে। লাঞ্চের প্যাকেট বের হয়। রুটির মতো কীসে যেন জ্যাম মাখিয়ে দিয়েছে। তাই একটু দাঁতে কেটে জল খেয়ে গলা ভিজিয়ে আবার হাঁটা।

এবার ভালো চড়াই পথ। এপথে শর্টকাট করতে গিয়ে দম শেষ। শুধু অভয় দিচ্ছেন স্তোক কাংড়ি শৃঙ্গ। উফ্‌ আফ্‌ করে হাঁপাতে হাঁপাতে বেশ কিছুটা উঠে আসা গেল। বহু নিচে দেখা যাচ্ছে আপার উরুৎসে ক্যাম্প। ওপরে তাকাতে গিরিশিরায় একটা নিচুমতো অংশ দেখা যাচ্ছে। ওইদিকেই উঠে গেছে পথ। ওই নাকি পাস? উলটো দিকে স্বমহিমায় স্তোক কাংড়ি। মনে জোর আনতে হয়। চলো চলো, আর একটু। দশ পা এগিয়েই বুক হাপরের মতো পড়তে থাকে। যতই পাসের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয় হাওয়ার জোর বাড়তে থাকে। জোর হাওয়ার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এখানে চড়াই একটু কম। এক পা এক পা করে পাস লক্ষ করে এগিয়ে চলা। অবশেষে কান্ডা লার মাথায়। দারুণ হাওয়া আড়াল করে দাঁড়াতে হয়। দু’বছর আগে চাকুরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত দাড়িয়াল উজবুক আজ ষোলো হাজার ফুট উঁচু কান্ডা লার মাথায়। অনেক ছবি তোলা হয় এতোল বেতোল। ঠাণ্ডা হাওয়ায় পাসের মাথায় বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যায় না। আরেক উজবুক তো এখনও এল না পাসের মাথায়। এসে যাবে ধিকি ধিকি। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাগল পাসের মাথায় আসতে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন মেঘ চলে এল। ফেলে আসা পথের দিকটা ঢেকে দিল। পাসের উলটোদিকের নিচে তখন রোদ্দুর। অনেক নিচে একচিলতে সবুজ। কোনও গ্রাম হবে বোধহয়। চলো ধীরে ধীরে নামতে থাকি।

উফ্‌, কী ধুলো রে বাবা! মাটি আর ধুলো। নামতি পথে দাড়িয়াল উজবুক পিছিয়ে পড়ে। বেশ কিছু মারমট খেলা করছে। কাছে গেলেই সুড়ুত করে গর্তে ঢুকে পড়ে। হুড়মুড়িয়ে নামার পথে থামা খুব মুশকিল। একটু দাঁড়া না বাবা, ছবি তুলি। কিন্তু মারমটগুলো কি আর কথা শোনে? তবুও চেষ্টা চলে। আর কত যে নিচে নামতে হবে! গ্রামের চাষের জমি স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও কাছে আসে না। আড়াই ঘণ্টা লড়াইয়ের পর একটা সাদা প্যারাস্যুট কাপড়ের তাঁবুতে চায়ের দোকান। ঘুমকাতুরে উজবুক তড়িঘড়ি চায়ের ওর্ডার দেয়। একটু চা না খেলেই নয়। চা দোকানি দিদি নিজেই জিজ্ঞেশ করেন রাত কাটানোর ঘর লাগবে কি না। বিকেল গড়িয়ে গেছে। দুই উজবুককে এখনও দেখা যাচ্ছে না। আজ আর স্কিউ যাওয়া যাবে না। বেশি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায় শিঙ্গো গ্রামে রাত কাটাতে। চায়ের দোকান থেকে গ্রামটা সামান্য নিচে। কান্ডা লার দিক থেকে নেমে আসা শিগরি নালার দুই পাড়েই ছোট্ট গ্রাম। যত না ঘর বাড়ি, তার থেকে চাষের ক্ষেত বেশি। মূলত বার্লি আর গম। কিছু তরিতরকারি। এই ঠাণ্ডায় নাকি ধান হয় না। বেশ কিছু পরে হাঁটুর ব্যাথায় কাতর হয়ে দাড়িয়াল উজবুককে আরেক উজবুকের সঙ্গে আসতে দেখা যায়। আজ আর পারব না রে হাঁটতে। কোনও ব্যাপার নয়। ঘর রাখাই আছে। এখানে একটু চা খেয়ে নাও। গ্রাম আর সামান্যই দূর। দিদির হোম-স্টেতে যখন পৌঁছানো গেল তখন রোদ্দুর চলে গেছে। আলো যদিও আরও কিছুক্ষণ থাকবে। লাদাখে প্রায় সন্ধে সাতটা-সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আলো থাকে। শিঙ্গো গ্রামে দিদির বাড়িতেও মাথাপিছু ১০০০ টাকা প্রতি রাতের জন্য দিতে হবে। কিন্তু দিদির আথিতেয়তা যেন আরও বেশি।

ষোলো হাজার থেকে নেমে সাড়ে তেরো হাজার ফুটে রাত্রিবাস। আজ সারাদিন খুব খাটুনি গেছে। রাতটা একটু আরামের। পরের দিনের অপেক্ষায়।

আরামের ঘুম ভাঙল পরদিন সকাল সকাল। সঙ্গে আনা আরও কিছু খাবার শিঙ্গোর দিদিকে দিয়ে আরও খানিকটা বোঝা হালকা করা গেল। দিদি খুশি হয়ে খুব যত্ন করে ব্রেকফাস্ট খাওয়ালেন। দুপুরে খাবার জন্যে আরও কীসব যেন বেঁধে-ছেদে দিলেন। আজকের পথও অনেক লম্বা। আগের দিন স্কিউ গ্রামের আগেই থেমে যেতে হয়েছিল। শিঙ্গো থেকে স্কিউ ঘণ্টা তিনেক লাগার কথা। আর স্কিউ গ্রাম থেকে মারখা গ্রাম প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। তবে আজ তেমন চড়াই ভাঙতে হবে না। শিঙ্গো থেকে স্কিউ বেশ আরামদায়ক উৎরাই। তারপর চিলিং-এর দিকে বয়ে যাওয়া মারখা নদীর উজানে পথ মারখা গ্রাম পর্যন্ত। মোটামুটি সমতল পথ।

আহ্‌! গতকালের হাঁটুভাঙা উৎরাই আর নেই। আর চড়াইও নেই। কী মজা। আড়াল থেকে কেউ কি হাসলেন? মজা করে নেমে চলা স্কিউ গ্রামের দিকে। মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম। শিগরি নালার গিরিখাত বেশ সরু। মাথা উঁচু করে উপরের আকাশ দেখতে হয়। দু’পাশের পাহাড়ের দেয়াল যেন ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। তবে পথ হারানোর কোনও উপায় নেই। শিগরি নালাকে এপার ওপার করেই রাস্তা। পৌনে তিন কি তিন ঘণ্টা পরে সামনের দিকেও খাড়া পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল দেখা গেল। মানে সোজা কি আর এগোনো যাবে না? আরও কিছু দূর যেতেই সামনে স্কিউ গ্রাম দেখা দিল। কিন্তু শিগরি নালাটা কোথায় গেল? এমন নিশ্ছিদ্র পাথুরে পাহাড়ের দেয়াল দু’দিকে, কোথায় হারিয়ে গেল নালাটা। পাতাল প্রবেশ করেছে হয়তো।

স্কিউ গ্রামে ছোটো আর পুরনো গুম্ফাটাকে সযত্নে নতুন করে সাজানো হয়েছে। সুন্দর ছোটোমতো একটা ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড। ক্যাম্প ছেড়ে লোকজন চলে গেছে। ভাঙা হাট। চায়ের দোকান পেলেই নিয়ম মাফিক চা খাওয়া। আবার এদিক সেদিক ছবি তোলার চেষ্টা। চিলিং থেকে একদিনেই স্কিউ আসা যায় মারখা নদীর তীর ধরে। কোনও পাস পেরোতে হয় না। গাড়ি চলার মতো চওড়া রাস্তা। বলাই বাহুল্য যে উজবুকরা ও-পথ মাড়ায়নি। বহু কষ্ট করে কান্ডা লা পার করে স্কিউ এসেছে। গতকাল আলাপ হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার ছেলেটার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল। চায়ের দোকানে বসে নুডুলস খাচ্ছে। সে তার দেশে নাকি রাঁধুনির কাজ করে। আঁকার হাতটিও মন্দ নয়। গত সন্ধেয় খাতায় খুব সুন্দর পাহাড় এঁকেছিল। তার সঙ্গে এসেছে আরেকটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি মনে হয় ভারতীয় পাহাড়ে প্রথম। কাল খুব কষ্ট পেয়েছে। অন্য ছেলেটি মজার। সবসময় খুব হাসিখুশি।

স্কিউ গ্রামে এসেই প্রথম মারখা নদীকে দেখা গেল। এবার সারাটা পথেই সঙ্গী মারখা নদী। জলের কোনও অভাব নেই তাই নদীর ধারে ধারে গাছপালাও প্রচুর। পথ কখনও নদীর একেবারে গায়ে গায়ে। নদীর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলা। কখনও নদী থেকে অনেক উঁচুতে উঠে আবার নেমে আসা। হাঁটা আর হাঁটা। চলি চলি চলি চলি পথের যে নাই শেষ। একটা নালা মারখা নদীতে এসে পড়েছে। তার পাশে একটামাত্র বাড়ি। স্কিউ গ্রাম অনেক পেছনে পড়ে। বাড়িটি একটা চা-কাম-খাবারের দোকান। চাইলে রাত্রিবাসও করা যায়। পরের গ্রাম এসে গেল নাকি? ‘ইয়ে কৌনসা গাঁও হ্যায়?’ ‘স্কিউ।’ যাহ্‌ কলা। এটাও স্কিউ গ্রাম! চা পাওয়া যাচ্ছে যখন তাহলে চা খাওয়া যাক। মারখা গ্রাম এখনও অনেক দূর। আজ তাহলে চালাক পর্যন্ত যাই। চল না কতদূর যাওয়া যায়। চায়ের সঙ্গে একটু টা খেয়ে উঠে পড়া হল। বোঁচকা আবার পিঠে চড়ে বসল। স্কিউ গ্রামের গুম্ফা থেকে শুরু করে প্রায় ঘণ্টা চারেক পথ মারখা নদীর প্রকৃত ডান তট ধরে। এবারে একটা সাঁকো পেরোতে হবে। মারখা নদীর প্রকৃত বাম তটে এবার পথ। দূর আর তো কোনও গ্রামের দেখা নেই। মারখা গ্রাম তো দূরস্ত, তার আগে কত গ্রাম রয়েছে। পেনৎসে নাকডি সারা চালাক লাহথো। একটারও তো দেখা নেই। এদিকে দিন ফুরিয়ে আসছে। এত না ভেবে এগিয়ে চল। থেমে থাকলে পথও থেমে থাকবে যে। আরে! প্রার্থনা পতাকা (লুংদার)। একটা গ্রাম আছে তাহলে সামনে। চল রে চল সবে।

একটা ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড ছাড়িয়ে আবার একটা চায়ের দোকান।

“দিদি, ইয়ে কৌনসা গাঁও?”

“নট আন্ডারস্ট্যান্ড। ইংলিশ।”

ওরে বাবা, ইংলিশ! “হুয়িচ ভিলেজ?”

“নাকডি।”

নাকডি গ্রাম এসে গেল।

“নিড রুম? ওয়ান রুম অ্যাভেলেবল।”

“হাউ মাচ?”

“হাউ মেনি মান?”

“থ্রি।”

“থ্রি থাউজ্যান্ড।”

“ওকে।”

“আর ইউ ইণ্ডিয়ান?” এক বিদেশিনী বসে চা খাচ্ছিল।

“ইয়েস ম্যাম।”

“উই আর ফ্রম বেলজিয়াম। প্লিজ বুক আ রুম ফর আস। শি কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড আস।”

“ইয়েস, নো প্রবলেম।”

ও মা! সে কি! বোঝো ঠেলা।

“দিদি, দে ওয়ান্ট এ রুম।”

“ইয়েস, নো প্রবলেম।”

বেলজিয়ান দম্পতি ঘরে ঢুকে গেল। দুটো মাত্র ঘর। একটা ওরা দখল নিল। খানিক বাদে ওরা নদীর দিকে তোয়ালে সাবান নিয়ে চলে গেল। ইতিমধ্যে বাকি দুই উজবুকের আগমন। ঘর পাওয়া গেছে? বাহ্‌! আজ আর শরীর দিচ্ছে না। ঘরে চলো। আজ একটু নদীতে নামব। বাহ্‌! এখানে কিন্তু একেবারে বায়ো-টয়লেট। লাদাখের ট্রেক পথে পায়খানাগুলো মোটামুটি এরকমই হয়। একটা ঘেরামতো জায়গার মাঝে মাটিতে গর্ত করা থাকে। গর্তের মুখটা ছোটো করা। পাশে ঝুরো মাটি আর একটা বেলচা রাখা। কাজ হয়ে গেলে বেলচা দিয়ে একটু মাটি ফেলে দাও। অনেক পরে মাটির সঙ্গে মিশে ভালো সার হবে। চাষের কাজে ব্যবহার করা যাবে। নদীতে নেমে ভালো করে হাত-মুখ-গা ধোয়া হল। অনেক ট্রেকার নাকডি গ্রামকে ফেলে এগিয়ে গেল সামনের গ্রামের দিকে।

সন্ধেবেলায় বেলজিয়ান দম্পতির সঙ্গে বেশ আড্ডা জমল। বেলজিয়াম মানেই টিনটিনের স্রষ্টার দেশ। বেলজিয়াম মানে এনজো শিফো। বেলজিয়াম মানে… খাওয়া হয়েছে, ঘরে চল। ঠাণ্ডা লাগছে।

হাঁটা শুরু করার দ্বিতীয় দিন থেকেই আর টার্গেট হিট করা যাচ্ছে না। তাই মারখা গ্রাম এখনও বহু দূর। তাই সকাল সকাল বেরোতে হবে। যতটা এগিয়ে যাওয়া যায়। নাকডির পর সারা চালাক লাথো মারখা (১২,১৭৩ ফুট) তেৎসা উমলুং হাংকার (১২,৭৯৬ ফুট) গ্রামগুলি পড়বে। এদের মধ্যে মারখা আর হাংকার গ্রাম দুটো বেশ বড়ো গ্রাম।

দাড়িয়াল উজবুকের সকালের দিকে হাঁটার গতি খুব ভালো থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতি কমতে থাকে ভীষণরকম। অনেকদিনের অভ্যাস। সারাদিন কিছুতেই একইরকম গতি ধরে রাখতে পারে না। তাই উনি সবচেয়ে আগে পথে নামেন। অন্য উজবুকরা তাঁর পেছন ধরে।

সকালবেলা হোম-স্টের দিদি ও তাঁর শাশুড়ি-মাতার সঙ্গে গল্প করতে করতে লটবহর গুছিয়ে নিয়ে সকাল সকাল পথে নামা হল। বেলজিয়ান দম্পতির ঘরের দরজা তখনও খোলেনি। ওরা কিন্তু দেরি করে বেরিয়েও উজবুকদের থেকে এগিয়ে চলে যাবে।

কিছুক্ষণ মারখা নদীর প্রকৃত বাম তট ধরে চলার পর একটা গ্রাম এল। একটা চায়ের দোকানের তাঁবুও আছে। সাইন বোর্ডে লেখা সারা গ্রাম। সারা গ্রামের তখনও ঘুম ভাঙেনি। তাই চায়ের দোকানও বন্ধ। অতএব এগিয়ে চলো। হাঁটতে হাঁটতে পরের গ্রাম চালাক। এখানে আবার মারখা নদী পার হতে হবে। কাঠের সাঁকো। চালাক গ্রামের ক্ষেতের মাঝ দিয়ে পথ। বেলজিয়ান দম্পতি সহ আরও কয়েকজন বিদেশি পেছন থেকে চলে আসে। বেঁটেখাটো উজবুকদের এইটুকুন-টুকুন পা। আর বিদেশিদের ইয়া লম্বা লম্বা। উজবুকদের তিন স্টেপের সমান বিদেশিদের এক স্টেপ। বিদেশিদের পিঠে হালকা ছোটো ছোটো স্যাক। আর উজবুকদের যমদূতের মতো বড়ো আর ভারী।

মারখা নদী এঁকেবেঁকে বয়ে এসেছে। নদীর উজানে হেঁটে চলা। কোথাও কোথাও পুরনো রাস্তা ভেঙে নদীতে নেমে গেছে। নতুন পথ পাহাড়ের ওপর দিয়ে। ওঠো আর নামো। ঝুরো মাটির পথে সাবধানে নামতে হয়। না হলেই হড়াৎ আর ঝপাং। খরস্রোতা মারখা নদীর বরফ-ঠাণ্ডা জলে। অনেকক্ষণ বাদে আবার গ্রাম দেখা গেল। মারখা গ্রাম নাকি? আরে দূর, গ্রাম কোথায়? কয়েকটা মাত্র ঘরবাড়ি। মারখা গ্রাম এখনও বহুদূর।

চলতে-চলতেই দূরত্ব কমে। বেলাও বাড়তে থাকে। মাথার ওপর সূর্যদেব। একটু ছায়া খুঁজতে হয়। একটু বিশ্রাম। আবার হাঁটা। নদীর ধারেই একটা ক্যাম্প-সাইট। ‘মারখা ভ্যালি ক্যাম্পিং গ্রাউন্ড’। আবার নদী পেরোনো। কাঠের সাঁকো। সাঁকো পেরিয়েই গ্রামের শুরু। মারখা গ্রাম। সামনে নিশ্চয়ই চায়ের দোকান আছে। পেট তো চুঁইচুঁই করছে। একটু এগিয়ে যেতেই মনে হয় যে গ্রাম শেষ। কিন্তু সেটা মনের ভুল। কিছুটা জঙ্গলমতো পেরিয়েই আবার ঘরবাড়ি দেখা যায়। বাহ্‌! এই তো চায়ের দোকান। বোঁচকা নামা। উফ্‌! আর কত হাঁটতে হবে রে বাবা। মারখা গ্রামে কি থাকা যায় না? এখন তো সবে দুপুর। আরও কিছুটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। তাই চলো। আগে পেটের ইঁদুরগুলোকে শান্ত করতে হবে।

অল্প কিছু দাঁতে কেটে বেশ কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলা। একটু যেতেই পাহাড়ের ওপর পরিত্যক্ত মারখা কেল্লা। বাবা, এত খাড়া! যাওয়ার রাস্তা কোথায়? এক পর্তুগিজ দেখি স্যাক নামিয়ে রেখে তরতর করে উঠে গেল কেল্লার দিকে। চলো তাহলে।

অবশেষে মারখা গ্রাম পেরিয়ে চলে যায়। চলতে চলতে বিশ্রাম। বিশ্রাম নিতে নিতে হাঁটা। কিন্তু এবার কী হবে? রাস্তা যে শেষ। আবার নদীর ও-পাড়ে পথ। কোনও সাঁকো নেই। জলে এবার নামতেই হবে। একপাল ঘোড়া নিয়ে কিছু লোক নদী পার হচ্ছে। ওদের পথেই নদী পার হয়ে যেতে হবে। ওরাই ভালো জানে কোথা থেকে নদী পার হওয়া সুবিধেজনক। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিন্তু জলে পা দিতেই পা যেন কেটে বেরিয়ে গেল। যেমন স্রোত, তেমন ঠাণ্ডা। হাঁটুর ওপর পর্যন্ত ভিজে গেল। পা অসাড়। ও-পাড়ে গিয়ে ভালো করে পা শুকিয়ে তারপর আবার জুতো পরা। ওহ্‌! কী অভিজ্ঞতা! মিনিট চল্লিশেক বাদে ছোট্ট একটা জনপদ পড়ল। উমলুং। চায়ের দোকান বিদেশিদের ভিড়ে জমজমাট। চা না কোল্ড ড্রিঙ্ক? চা-ই বল। বেলা পড়ে আসছে। বেশিক্ষণ বসা যাবে না কিন্তু। ঠিক আছে, ঠিক আছে।

এগিয়ে চলতে গিয়ে একটু বাদেই আকাশের গায়ে দেখা দিলেন কাং ইয়াসে শৃঙ্গ। হাঁ করে চেয়ে থাকা খানিক। আরাম হল মনে। আবার চলা। নদীর ডান তটে নদীকে ছেড়ে একটু পাহাড়ে চড়তে হয়। আরে কত উঁচুতে একটা বাড়ি। বাড়ি নয়, বাড়ি নয়, গুম্ফা, তাচা গুম্ফা। বহু প্রাচীন। দিন শেষের দিকে। দাড়িয়াল উজবুকের এবার কষ্ট হচ্ছে। আর গুম্ফা দেখে কাজ নেই। রাতের আশ্রয় খুঁজি। সামনে গ্রাম বলতে হাংকার। কাং ইয়াসে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছেন। শৃঙ্গ দেখতে দেখতে হাঁটা বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু পথ অনেকটা। প্রায় ঘণ্টা আড়াই বাদে দূরে গ্রাম দেখা গেল। কিন্তু বেশ দূরে। রাস্তা আবার নদীতে মিলিয়ে গেছে। একটা জাপানি দল তো নদীতেই নেমে পড়েছে। ওদের গাইড সাহেব রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু পাহাড়ের ওপর দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায়। দিনের শেষে আবার এতটা চড়াই ভাঙতে হবে! চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু কিছু করার নেই। নদীর জলে নামার থেকে তো ভালো। সেই কোরিয়ান দলটাকে আবার দেখতে পাওয়া গেল। অনেক আগে পৌঁছে গেছে ওরা। ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাংকারে অনেক বিদেশির ভিড়। থাকার জায়গা পাওয়া যাবে তো? গ্রামে ঢোকার মুখে প্রথম হোম-স্টেতেই আশ্রয় জুটে গেল। আজকের মতো হাঁটা শেষ। কাল আবার দেখা যাবে।

‘বহত দূর যানা হোগা আজ আপলোগো কো। ইয়ে হাংকার কে বাদ কোই গাঁও ভি নহি হ্যায়। টেন্ট মিলেগা থোচুনশে (১৩,১৬৫ ফুট) আউর নিমালিং (১৫,৫১৮ ফুট) মে। চড়াই ভি চড়না হ্যায়। তুরন্ত ভাগিয়ে। বাদ মে মৌসম খারাব হো যায়েগা।’ হোম-স্টে থেকে বলে দেওয়া হল। এমন ঝকঝকে সকাল। মৌসম খারাব হো যায়েগা! আশ্চর্য!

বোঁচকা পিঠে উজবুকের দল পথে নামল পত্রপাঠ। হাংকার বেশ বড়ো গ্রাম। মাঝখানে পাহাড়ের উঁচু মাথায় পরিত্যক্ত রাজপ্রাসাদ। অল্প চড়াই ভেঙে রাজপ্রাসাদের পদতলে। ভগ্নপ্রায় প্রাসাদ আরও উঁচুতে। তরতরিয়ে ওঠো আর নামো। তারপর পথ কিছুটা নিম্নমুখী। অনেকটা চাষের জমি। কিছুদূর গিয়েই মারখা নদীকে বিদায় দিতে হল এবারের মতো। মারখা নদীর প্রকৃত ডানদিক থেকে একটা নালা এসে মিশেছে মারখা নদীতে। সেই নালা ধরেই এবারে নিমালিং-এর পথ। দিক নির্দেশ করা আছে। মারখা নদী পার হয়ে অন্য একটা পায়েচলা পথ চলে গেছে। সে অন্য পথ। ও-পথে গেলে জাঁসকার উপত্যকায় চলে যাওয়া যায় বলে শোনা যায়। ক্ষমা করো এবারের মতো।

‘ধিকি ধিকি আউগা রে ভাই।’ পথের চড়াই ক্রমবর্ধমান। ঘণ্টা দুয়েক বাদে দূরে সাদা প্যারাসুট কাপড়ের তাঁবু দেখা গেল। আর দেখা গেল একপাল ভরালের। নালার ধারে নিশ্চিন্তে চরে বেড়াচ্ছে। ক্যামেরা বার করে ছবি তোলার চেষ্টা। কিন্তু কেউই তেমন ছবি তোলাতে আগ্রহী নয়। থোচুংশেতে অনেক বিদেশি ট্রেকার জমা হয়েছে। গতরাতে অনেক বিদেশি হাংকারে ছিল। আগে আলাপ হওয়া পর্তুগিজ ছেলেটার সঙ্গেও দেখা হল। জার্মান ফরাসি ইংরেজ। কত কত বিদেশি। স্টেফি গ্রাফের মতো দেখতে জার্মান মেয়েটি নাকি কিছুদিনের জন্যে কলকাতায় গিয়েছিল। চায়ের সঙ্গে টা খেতে খেতে আড্ডা হয়। কেউ কেউ এগিয়ে যায়। সেই বেলজিয়ান দম্পতিও এসে পড়ে। হাসি, হাতে হাত মেলানো। কেউ কেউ উঠে পড়ে। বহু চড়াই পথ পড়ে আছে সামনে।

রাস্তা আরও খাড়া হয়ে যাচ্ছে। হাঁটার গতিও কমে যাচ্ছে। বিদেশিদের হাতে ওয়াকিং স্টিক। উজবুকদের লম্বা ছাতা। যা লাঠিরও কাজ করে। হঠাৎ একটা ছাতা কেতরে গিয়ে ভেঙে গেল। বৃষ্টি এলে খুব মুশকিল হবে। তাই বলে থেমে থাকা চলে না। ঘণ্টা খনেক চড়াই ভাঙার পর পাহাড়ের মাথায় অনেক পাথর সাজিয়ে কেয়ার্ণ করে রাখা আছে। কিছু কেয়ার্ণ আবার নড়াচড়াও করে। আরে ওগুলো কেয়ার্ণ নয়, মানুষ। আগে পৌঁছে গেছে। থোচুংশে ছেড়ে বেশি দূর আসা হয়নি। সে কি! ওই পাহাড়ের মাথায় চড়তে হবে? এখনই বুকের মধ্যে দমাস দমাস শব্দ। পাহাড়ের মাথায় যেতে গেলে তো বুক ফেটে যাবে। অল্প করে জল খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিয়ে আবার চড়াই ভাঙা শুরু। আরও প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় পাহাড়ের মাথায় সেই কেয়ার্ণ করা জায়গাটায় আসা গেল। পিঠের বোঝা নামিয়েই ধপাস। এখান থেকে আর ওঠা যাবে না। পর্তুগিজ ছেলেটা উৎসাহ দিল। পিঠে ঝোলা থেকে চকোলেট বার হয়। সেলিব্রেশন হয়। কাং ইয়াসে শৃঙ্গ এখান থেকে আরও কাছে। ছেলেটা উঠে পড়ে। ধীরে ধীরে সামনের দিকে মিলিয়ে যায়।

হঠাৎ অর্কদেব মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। আর তৎক্ষণাৎ ঠাণ্ডা হাওয়ায় হাড়ে হাড়ে ঠোকাঠুকি লেগে যায়। আর ল্যাদ খেলে চলবে না। তাড়াতাড়ি রাতের আশ্রয়ে পৌঁছাতে হবে। এবারে পথের চড়াই আগের থেকে কম। তবে অনেকটা উঠে আসার ফলে আর ঝড়ো হাওয়ায় দম নিতে কষ্ট হয়।

বেশ কিছুটা হাঁটার পর আবার অনেক বিদেশিদের দেখা গেল। একটা ছোটো পুকুরকে ঘিরে ছবি তুলছে। পুকুরের জলে কাং ইয়াসের ছায়া। কিন্তু বেশিক্ষণ থামা যায় না ঠাণ্ডা হাওয়ার চোটে। আরও কিছুটা যাওয়ার পরই হাওয়ার জোর বাড়ল। সঙ্গে হালকা বৃষ্টি। হাওয়ায় উড়িয়ে ফেলে দেবে নাকি? পাহাড়ের মাথায় আড়াল খুব একটা নেই। একটু আড়াল পেলেই দাঁড়িয়ে দম নিতে হয়। কিছুতেই আর নিমালিং-এর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে হোয়াইট আউট হয়ে যাচ্ছে। সব বিদেশি এগিয়ে চলে গেছে। নিমালিং-এ থাকার জায়গা পাওয়া যাবে তো? মনে সন্দেহ নিয়েই এগিয়ে চলা। একটা ঢিবি পার হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ সামনে একটা বিশাল ময়দান। ময়দানের বুক চিরে সমতল পথ। কুয়াশার মধ্যে অনেক দূরে ছোটো ছোটো তাঁবু দেখা যায়। কিন্তু কিছুতেই যেন কাছে আসে না। অবশেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাঁবু এলাকার মধ্যে ঢোকা গেল। তিন উজবুকের জন্যে একটা তাঁবুও জুটে গেল। বেশ ভালো ঠাণ্ডা এখানে। এই নিমালিং হল কাং ইয়াসে শৃঙ্গে চড়ার বেস ক্যাম্প। ক্যাম্পের একপাশ দিয়ে একটা নালা বয়ে যাচ্ছে। কাং ইয়াসে হিমবাহ থেকেই নাকি এর সৃষ্টি। একটা বড়ো তাঁবুতে খাওয়াদাওয়া আর সন্ধের আড্ডা। অনেক বিদেশিদের মাঝে গুটিকয় ভারতীয়। আগামীকাল শুরুতেই কোংমারু লা বা গোংমারু লা-এর ভয়ংকর চড়াই। তবে ভরসা এই যে নিমালিং থেকে পাসের দূরত্ব বেশি নয়। কুয়াশায় চারদিক ঢেকে গেছে, তাই আর কিছুই দেখা গেল না। পাসে ওঠার শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই যে যার তাঁবুতে আশ্রয় নিল।

পরদিন ভোর পাঁচটায় তাঁবু থেকে বাইরে বেরোতেই আকাশের মুখ গম্ভীর। বৃষ্টির মতো বরফ পড়ছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে। আজ প্রায় সতেরো হাজার ফুটের কোংমারু লা পার করতে হবে। চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। দৃশ্যমানতা বড়োজোর পনেরো ফুট। পাস পেরোনোর পর অনেকটা নেমে যেতে হবে। অনেক নিচে চোকদো গ্রাম। তার আগে ম্যাপে চুস্কুর্মো বলে একটা জায়াগা দেখাচ্ছে, কিন্তু সেটা কোনও গ্রাম নয়। চোকদোর আগে কোথাও থাকার ব্যবস্থা নেই যদি না নিজেদের তাঁবু থাকে। চোকদো গ্রাম থেকে অল্প দূরে শাং সুমদো গ্রামে (১২,২৩৭ ফুট) পৌঁছে পায়ে চলা শেষ। গাড়ি করে সোজা হেমিস গুম্ফার পাশ দিয়ে লেহ।

“ক্যায়া সাব, কব নিকলোগে? জলদি ভাগো। জলদি জলদি পাস ক্রস করো। নহি তো পঁহছ নেই পাওগে।”

“ইতনা খারাব ওয়েদার মে ক্যায়সে যায়ুঁ?”

“সব লোগ যা রহে হৈঁ। উনকে পিছে পিছে একসাথ চলে যাও।”

সেই কোরিয়ান দলটাও দোনামনা করছে। তাঁবুর মালিক ওদেরকেও তাড়া দিল। কোনোমতে তৈরি হয়ে মুখে অল্প কিছু দিয়েই পথে নামতে হল। ক্যাম্প সাইট থেকে বেরিয়ে পাশের নালাটার ওপর সাঁকো পার হয়ে সোজা উত্তর দিকে খাড়া পথ। শুধু পায়ের দিকে তাকিয়ে সাবধানে পথ চলা। হালকা বরফ জমে আছে। পথ কাদামাখা পিছল। চারদিকে সাদা ধোঁয়ার মতো কুয়াশা। কাং ইয়াসের আর দেখা নেই। কত শোনা গেছিল যে কোংমারু লার মাথা থেকে অনেক দূর কারাকোরাম গিরিশ্রেণী পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে। সে আশায় বরফপাত। খুব ধীরে ধীরে চড়াই ভাঙা। বুক ধড়াস ধড়াস করে পড়ছে। একটানা দশ পা হেঁটেই বিশ্রাম নিতে হয়। ঘণ্টা দেড়েক পর পথের চড়াই একটু কমল। তবুও জোরকদমে চলা যায় না। মিনিট পনেরো পর আবার খাড়া চড়াই। সকলে ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছে। উজবুকদের পেছনে ফেলে বিদেশিরা এগিয়ে চলে। উলটোদিক থেকে কাউকেই আসতে দেখা যাচ্ছে না।

হঠাৎ একটু চারদিকটা পরিষ্কারমতো হয়ে গেল। কিছুটা ওপরে গিরিশিরা দেখা গেল। কোংমারু লা কি এসে গেল? একটু উৎসাহ বাড়ে। ক্রমশ প্রার্থনা পতাকাগুলো নজরে আসে। তার মানে পাস কাছে এসে গেছে। কিন্তু দূরের পাহাড়গুলো মেঘের আড়ালে। একসময় সামনেই চলে আসে লুংদারগুলো। পাসের মাথায় এগুলো টাঙানো থাকে। প্রাচীন বৌদ্ধ বিশ্বাস। অভিযাত্রীরাও বোঝেন যে তারা লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। প্রায় ঘণ্টা তিনেক লাগল। মজারু কোরিয়ান ছেলেটি জড়িয়ে ধরে।

“কনগ্র্যাচুলেশনস!”

“কনগ্র্যাচুলেশনস!”

“প্লিজ টেক মাই ফোটো।”

“ওহ্‌, শিওর।”

“থ্যাঙ্ক ইউ।”

“থ্যাঙ্ক ইউ।”

হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা হাওয়া। বিশ্রাম নিলে শরীর ঠাণ্ডা হতে শুরু করে। আর তখুনি কাঁপুনি শুরু হয়। আবার কুয়াশায় ঢেকে যায়। নিচে নামার খাড়া উতরাই পথ। বরফে বৃষ্টিতে কাদা কাদা পিছল হয়ে আছে। পাসে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। ধীরে সাবধানে নামা শুরু হয়। গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব কষ্টকর। এবারে শুধু নামা আর নামা। আধা ঘণ্টা একটানা খাড়া নামার পর পথের খাড়া ভাবটা একটু কমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া বেশ পরিষ্কার হয়। একটা নালার সরু গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে পথ। নালাটাকে কয়েকবার পারাপার করতে হয়। একটানা কেবল নেমে চলা। পৃথিবীর টানে হুড়মুড়িয়ে নামতে হয়। দমের কষ্ট না হলেও হাঁটু দুটো কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। দাড়িয়াল উজবুকের বাষট্টি বছরের পুরনো হয়ে যাওয়া হাঁটু দুটো তো রীতিমতো বেঁকে বসে।

অনেক কষ্ট করার পর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ একটা চা-দোকানের সাদা তাঁবু দেখা যায়। স্বদেশি বিদেশি সব অভিযাত্রী তখন উজবুকদের ছেড়ে অনেক এগিয়ে গেছে। কেউ কেউ হয়তো লেহও পৌঁছে গেছে। কিন্তু দাড়িয়াল উজবুকের তখন খুব করুণ দশা। আর এক পাও হাঁটার ক্ষমতা নেই। কোনোমতে চায়ের দোকান পর্যন্ত যাওয়া গেল। ঢকঢক করে এক লিটার ঠাণ্ডা পানীয় শেষ। একটু কিছু খাওয়া হল। চা-দোকানি যেন উজবুকদের জন্যেই দোকান খোলা রেখেছিলেন। অভয় দিলেন। কাছেই চোকদো গ্রাম। গ্রামে ওঁর বাড়িতেই থাকা যাবে। কোনও চিন্তা নেই। দোকানির কালো ঘোড়াটা দাড়িয়াল উজবুককে গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে।

অনেকটা বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা শুরু। পথ নদী বক্ষে নেমে গেছে। এক বিদেশি দম্পতি এই গ্রামেই রাতের আশ্রয় নিয়েছে। পথেই পরিচয় হয়েছিল। দেখা হতেই হাত নাড়িয়ে অভিনন্দন জানানো। দিনের শেষে পা আর কথা শুনতে চায় না। নদীবক্ষের পাথরে হোঁচট খেতে হয়। নদীর জলে পড়ে গিয়ে জুতো-মোজা ভেজে। অবশেষে রাতের উষ্ণ আশ্রয়। গরম চা আর অখণ্ড বিশ্রাম। আজ আর লেহ পৌঁছানো গেল না।

গতকাল যারা শাং সুমদো পৌঁছে গেছে তারা কালই লেহ পৌঁছে গেছে শাং সুমদো থেকে গাড়ি ধরে। উজবুকরা শাং সুমদো পৌঁছাতে পারেনি। আজ ঘণ্টা দেড়েকের হাঁটা। শাং সুমদো পৌঁছে গাড়ির খোঁজ করা। ব্যস। তারপর বিশ্রাম।

ল্যাদ করে একটু দেরি করে বিছানা ছাড়া হল আজ। ধীরেসুস্থে সকালের খাওয়া শেষ করে পথে নামা। কোংমারু লা থেকে নেমে আসার পর যে নালাটা সঙ্গী হয়েছিল আজও সেই নালাটাই সঙ্গী। খুব হালকা উতরাই পথ। মাঝে মাঝে নদী খাতে নেমে গেছে। দু’দিকেই লালচে পাথরের পাহাড়। কোনও ট্রেকারকে আজ আর দেখা যাচ্ছে না। ঘণ্টা দেড়েক চলার পর নদীখাত অনেকটা চওড়া হয়ে গেল। নালার পাড়ে চাষের জমি দেখা গেল। গাড়ি চলার মতো চওড়া হয়ে গেল রাস্তা।

কিছুক্ষণ বাদেই শাং সুমদো গ্রামের ঘর-বাড়ি দেখা গেল। একটা মোড়ের বাঁকে চায়ের দোকান। পিঠের বোঝা নামিয়ে চা খেতে খেতে লেহ ফেরার গাড়ির খোঁজ চলে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর অবশ্য গাড়িও পাওয়া গেল। তবে সে গাড়ি সিন্ধু পেরিয়ে লেহ যাবার প্রধান সড়কের ওপর স্তাকনায় নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে অন্য গাড়ি ধরতে হবে।

জয়ঢাকের ভ্রমণ লাইব্রেরি

4 thoughts on “ভ্রমণ মার্‌খা উপত্যকায় তিন উজবুক-হিন্দোল মণ্ডল- শরৎ ২০২০

  1. বুকে বল ভরষা নিয়ে পারি দিয়েছিলাম মারখা উপত্যকা ভ্রমণে, তিন উজবুকের একজন আমি অবসরপ্রাপ্ত বটে তবে চলাফেরার সাচ্ছন্দ বর্তমান। কিন্তু এই ভ্রমনের উপযুগি ছিলনা। পদযুগল সায় দিচ্ছিলনা বটে তবে মনে ভরশা রেখে কোনোমতে এ যাত্রা পার পেয়ে গেছি। জানি ভবিষ্যতে আর সম্ভব হবেনা এটা হলফ করে বলতে পারি। তবে কষ্টের মধ্যেও যে আনন্দ পেয়েছি তা ভোলবার নয়। ধন্যবাদ রইল বাকি দুই উজবুকদ্বয়কে।

    Like

    1. তোমার অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় বার করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

      Like

  2. তোমার অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় বার করে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

    Like

Leave a comment