সৌম্যকান্তি জানা-র আগের লেখা- ক্লোরোফিল চোর
চৈত্রমাসের সংক্রান্তি। সূর্য পশ্চিমে বীরেন প্রধানের বাঁশঝাড়ের আগা টপকে হাত খানেক নেমে গেছে। খালপাড়ের রাস্তা দিয়ে লোকজনও চলেছে দলুইপাড়ার দিকে বঁটিঝাঁপের মেলায়। লেট্টু অশ্বত্থ গাছের তলায় পৌঁছে দেখে বুবাই, কেতো, পুচকু, টুকুন বা মেনাল্ডো কেউ এসে পৌঁছোয়নি। তিনটে বেজে দশ। এমনিতে সে নিজেই দশ মিনিট দেরি করে ফেলেছে টিভিতে অমিতাভ-ধর্মেন্দ্রর শোলে সিনেমাটা দেখতে গিয়ে। কতবার দেখেছে তার ইয়ত্তা নেই, তাও ভালো লাগে লেট্টুর। না, অমিতাভের জন্য নয়, আমজাদ খানের অভিনয়ের জন্য। লেট্টু প্রায়শই বলে, ভিলেন হো তো গব্বর য্যায়সা!
– একবার আসুক হতচ্ছাড়াগুলো। দেখাবো মজা! মনে মনে ভাবে আর দাঁতে দাঁত ঘসে লেট্টু।
-এসে গেছি লেট্টুদা! মেনাল্ডোকে সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসিয়ে পৌঁছে গেল কেতো। কেতো জানে, লেট্টুর দাঁত খিঁচুনি আর কানমলা তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
কোনও কথা না বলে লেট্টু গম্ভীর মুখে অন্য দিকে চেয়ে রইল।
– সরি লেট্টুদা। এই কান ধরে এক পায়ে দাঁড়ালুম। মেনাল্ডো কান ধরে এক পায়ে দাঁড়াল।
– কেতোটাকেও দাঁড়াতে বল। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নির্লিপ্তভাবে বলল লেট্টু।
– দাঁড়িয়েছি তো। কেতোর মুখে বিরক্তি। ওরা জানে, লেট করলে কী সাজা। এখন আর লেট্টুকে বলে দিতে হয় না, নিজেরাই সাজা নিয়ে নেয়।
– বুবাই, পুচকু আর টুকুন কোথায় রে?
– বুবাই আর পুচকু বাড়িতে নেই। বুবাই পিসির বাড়ি গেছে কোলকাতায়, আর পুচকু গেছে মামার বাড়ি। মেনাল্ডোর উত্তর।
– আর টুকুন?
– কী জানি?
– ওই তো এসে গেছে! কেতোর গলায় উল্লাস!
– ওকে কান ধরে বিনা পায়ে দাঁড়াতে বল।
– সে আবার কী করে সম্ভব লেট্টুদা? মেনাল্ডোর জিজ্ঞাসা।
– তার আমি কী জানি? কিন্তু করতে হবে। যেমন অপরাধ তার তেমন সাজা! লেট্টুর নির্লিপ্ত জবাব।
ইতোমধ্যে টুকুন পৌঁছে গেছে। সেও জানে তার জন্য সাজা অপেক্ষা করে আছে।
– সরি লেট্টুদা, স্কুলের টাস্ক করতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গেল। টুকুন কেতোর পাশে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়াল।
– মিথ্যে কথা বলার জন্য তুই দাঁত দিয়ে কান ধরে দাঁড়া। চিবিয়ে চিবিয়ে নির্দেশ দেয় লেট্টু।
– সত্যি লেট্টুদা।
– ফের মিথ্যে বলছিস? কালকেই বলেছিলি এ সপ্তাহে স্কুলে কোনও টাস্ক দেয়নি। মনে আছে মিথ্যুক? লেট্টুর গলায় বিষম রাগ ঝরে পড়ল।
ওরা জানে, ভুল সহ্য করলেও লেট্টু মিথ্যে কথা একেবারে বরদাস্ত করে না। টুকুন ধরা পড়ে গেছে নিজের জালেই। টুকুনের পরিণতি ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়ল কেতো আর মেনাল্ডো।
– এবারের মতো মাফ করে দাও লেট্টুদা। পায়ে পড়ি। এই শেষ। আর কক্ষনো বলবো না। মা কসম! টুকুনের গলায় আকুতি।
– কতবার এই কসম খেয়েছিস তোর মনে আছে? শাস্তি তোকে পেতেই হবে। কেতো আর মেনাল্ডো আমার সাথে যাবে। তুই এখানেই কান ধরে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। লেট্টুর কন্ঠ কঠিন।
– এই শেষ লেট্টুদা। প্লিজ, তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
– বেশ। তোকে নিয়ে যেতে পারি, তবে আমি যা বলব, তোকে তা-ই করতে হবে। কথা দিলি।
– আমি রাজি। কান ছেড়ে লাফিয়ে উঠল টুকুন। কী আর এমন বলবে লেট্টু। বড়জোর মেলায় সবাইকে খাওয়াতে বলবে। সে হয়ে যাবে ’খন। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা একশো টাকার একটা নোট দিয়েছে। আর তার জমানো আরও একশো টাকা আছে। তাই টুকুনের আত্মবিশ্বাস ষোলোআনা।
– মেলায় গিয়ে তোকে বঁটিঝাঁপ দিতে হবে!
লেট্টুর কথা শুনে টুকুনের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার অবস্থা। কেতো আর মেনাল্ডোও অবাক! লেট্টুদা বলে কী! জীবনে কোনওদিন তারা অত উঁচু থেকে থেকে বঁটির উপর তো দূর, লাফও দেয়নি। এ তো প্রাণঘাতী খেলা! প্রতি বছর ওরা এই মেলা দেখতে যায়। অবশ্য লেট্টুর সাথে যাচ্ছে এই প্রথম। যখন উপর থেকে “বাবা বিশ্বনাথের চরণে সেবা লাগে” আওয়াজের সাথে একজন বঁটির উপরে ঝাঁপ দেয়, তখন ভয়ে সবার গলা শুকিয়ে যায়! এই বুঝি মারাত্মক কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যায়! কিন্তু একজনেরও রক্তপাত হতে তারা দেখেনি। সবাই কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে, “সবই বাবা মহাবেদের কৃপা।”
(দুই)
মেলার মাঠটা বেশ ছোটো। মাঠ মানে একটা প্রাইমারি স্কুলের সামনে বাচ্চাদের খেলার জন্য কিছুটা উঁচু জায়গা। স্কুলের দাওয়া আর মাঠের চারধারে লোকে লোকারণ্য। কিছু লোক তো মাঠের পশ্চিম আর পুবদিকে শিরিষ গাছে উঠে গেছে। মাঠের দক্ষিণে ছোটো একটা চাষের জমি। সেখানে বসেছে মনিহারি, খেলনা, তেলেভাজা আর জিলিপির দোকান। জায়গার অভাবে সামনের মেটে রাস্তার ধারেও কিছু দোকান বসেছে।
মাঠের পশ্চিম প্রান্তে বাঁধা হয়েছে মাচা। মাটি থেকে দশ বারো ফুট উঁচু। সেখানে দাঁড়িয়ে একজন বয়স্ক সন্ন্যাসী। গামছা পরা। খালি গা। গলায় গাছাসুতোর মালা। সামনে নীচে মাটিতে রাখা একটা গদি। তোশক – কাঁথা দিয়ে বানানো। গদিটা দোলনার মতো করে মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা। গদির ওপরে অনেক ফুল রাখা আছে। ফুলের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিচ্ছে একটা লোহার ফলা। ওটাই বঁটি। গদির দু’পাশে দাঁড়িয়ে চারজন তাগড়াই চেহারার জোয়ান সন্ন্যাসী। মাচার ওপর থেকে ঝাঁপ দিলে ওরাই দড়ি ধরে গদিটাকে তুলে ধরে।
মাচার নীচে দাঁড়িয়ে পাঁচ-ছয় জন যুবক। সবাই নতুন গামছা পরা, আর গলায় সবার গাছাসুতোর মালা। মাচার উপরে থাকা বয়স্ক লোকটি থেকে থেকেই চিৎকার করে বলছে – বাবা বিশ্বনাথের চরণে সেবা লাগেএএএএ। আর সাথে সাথে সবাই তারস্বরে চেঁচিয়ে বলছে – মহাদেএএএএব।
উস্কো-খুস্কো চুলের একটা যুবক সন্ন্যাসী এসে দাঁড়াল মাচার নীচে। একজন জিজ্ঞাসা করল – তুমি কি বঁটি ঝাঁপ দেবে?
– হ্যাঁ।
– আগে তো কখনও দেখিনি। বাড়ি কোথায় তোমার?
– বামানগর গ্রামে।
– তুমি আগে কোনওদিন বঁটিঝাঁপ দিয়েছো?
– হ্যাঁ।
প্রশ্নকর্তা যুবকটি মাচার উপরে থাকা লোকটিকে চিৎকার করে বলল- কাকা, এই ছেলেটা বঁটিঝাঁপ দেবে বলছে। বামানগরে বাড়ি। আগে বঁটিঝাঁপ দিয়েছে।
উপর থেকে উত্তর এল – নতুন কাউকে নেওয়া যাবেনি। ওকে না কয়ে দে।
যুবকটি ওপরের দিকে মুখ তুলে বলল – কাকা, আমি আগে অনেকবার বঁটিঝাঁপ দিয়েছি বর্ধমানে থাকতে। এ বছর বাড়িতে আছি। তাই এলুম গো কাকা। তুমি না বোলোনি।
– ঠিক আছে। লাইনে থাকো। সবার শেষে হবে।
একটু পরেই মাচার উপর থেকে লোকটি জোরে হাঁক দিল – বঁটিঝাঁপ শুরু হবে এবার। বাবা বিশ্বনাথের চরণে সেবা লাগেএএএএ।
সবাই চেঁচিয়ে উঠল – মহাদেএএএএএব।
তরতরিয়ে একজন উঠে গেল মাচায়। কোমরে গামছাটাকে আঁট করে বেঁধে পেছন ফিরে দাঁড়াল। তার সামনে বয়স্ক লোকটি। নীচে গদি তুলে ধরে প্রস্তুত চারজন। গদির ওপরে জবা, ধুতরা আর কল্কে ফুলের গাদা। তার মধ্যে থেকে সামান্য উঁকি দিচ্ছে বঁটির ফলা। উপস্থিত লোকজন সবাই কথা বলা বন্ধ করে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মাচার দিকে। আর একবার হাঁক দিয়েই বয়স্ক লোকটি প্রথম ছোকরাটির বুকে সামান্য ধাক্কা দিতেই সে পেছন ফিরে ঝাঁপ দিল নীচে গদির উপর। সমবেত ‘মহাদেএএএএব’ ধ্বনির মধ্যে ছোকরাটি মাটির দিকে পিঠ করে পড়ল গদির উপর। গদি ধরা ছোকরাগুলো গদিটাকে নামিয়ে মাটিতে রাখতেই কপালে হাত ঠেকিয়ে বিজয়ীর ভঙ্গিতে প্রথম ছোকরাটি উঠে দাঁড়াল। এর পর একে একে আরও পাঁচজন ঝাঁপ দিল। আর আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল “মহাদেএএএএব’ ধ্বনিতে।
এবার পালা নতুন ছোকরাটির। ওপর থেকে বয়স্ক লোকটি হাঁক পাড়ল – কই হে ভাইপো, উঠে এসো তাড়াতাড়ি।
ছোকরাটি ধীরেসুস্থে মই বেয়ে উঠে গেল মাচায়। নির্লিপ্ত চাউনি। নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দাঁড়াতেই লোকটি বলল – কী ভাইপো, ভয় করছে নাকি?
– না। একইভাবে নির্লিপ্ত ছোকরাটি।
– বেশ তাহলে বাবা চোখ বুজে মহাদেবের নাম নিতে থাকো। বাবা বিশ্বনাথের চরণে সেবা লাগেএএএএ।
বুকে সামান্য ধাক্কা। ছোকরাটি কিন্তু উপুড় হয়ে পড়ল গদির উপর।
জোয়ান ছোকরা চারজন গদি নামিয়ে রাখল, মাটির উপর। কিন্তু ছোকরাটি উঠছে না কেন? উপস্থিত মানুষের মধ্যে উদ্বেগ শুরু হল। গদি ধরা ছোকরাদের দু’জন তার দুটো বাহু ধরে তোলার চেষ্টা করল। একজন বলল, মনে হয় ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। একজন বলল, উলটে গিয়ে পড়েছে, বঁটি লেগে যায়নি তো রে? আর একজনের উত্তর – না না, পড়ার সময় ঠিকঠাক ধরা হয়েছে, লাগবেনি। ওদিকে ওপর থেকে লোকটির চিৎকার শোনা গেল – কচিকে তোল, তোল। কিছু হয়নি। ওর চোখে-মুখে একটু জলের ছিটা দে। বাবা বিশ্বনাথের চরণে সেবা লাগেএএএএ।
সমবেত জবাব – মহাদেএএএএব।
কে একজন ছোকরার মাথায় একটু জল ঢেলে দিতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ল। সবার ধড়ে যেন প্রাণ এল। দৌড়ে এল আরও তিনটে কিশোর।
-লেট্টু দা!
– কিচ্ছু হয়নি রে আমার! আসলে আমি ফুলের পাহাড়ের ভেতর থেকে বটিটা খুঁজছিলাম! বলেই হে হে করে হাসতে লাগল। এই দেখ সেই বঁটি!
সবাই তাকিয়ে দেখে টাঙির মতো দেখতে ছোটো একটা ফলা লেট্টুর হাতে।
ততক্ষণে মাচার বয়স্ক লোকটি মাচা থেকে নেমে এসেছে নীচে। লেট্টুর দিকে চোখ গোল্লা পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল – এই ছোঁড়া, বাবা মহাদেবের জিনিস হাতে ধরেছিস কেন? ফাজলামি হচ্ছে?
– ফাজলামি কোথায় করলাম কাকা? বঁটিটা একটু দেখলাম। কতবড়ো সাইজ, এই আর কী!
– কেন দেখে কী হবে?
– না, কিছু না, এমনি। বর্ধমানে অনেক বড়ো বড়ো বঁটির উপর ঝাঁপ দিতাম কিনা। মাছ কাটার বঁটি। ইয়া বড়ো। দু’হাত প্রসারিত করল লেট্টু।
– যেখানে যেমন! তা বাবা, বড়ো বঁটিতেই ঝাঁপ দিতে পারতে বর্ধমানে। এখানে এলে কেন?
– এবারে বাড়িতে ছিলাম তো তাই। এই বঁটির উপরে ঝাঁপ দিলে বঁটিই লজ্জা পাবে কাকা! সামনের বছর আমি একটা মহাদেবের বড়ো বঁটি এনে দেবো কাকা।
– ইয়ার্কি হচ্ছে? বাবা মহাদেবের থানে মস্করা? গদি ধরা একজন লোক এগিয়ে এল।
আর এখানে বেশিক্ষণ থাকা সমীচীন হবে না। লেট্টুর যা দেখার ছিল দেখা হয়ে গেছে। ধর্মীয় ব্যাপারে মানুষের অন্ধ আবেগ এতটাই বেশি যে তা থেকে রক্তারক্তি খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে যায়। আর লেট্টুরা তো এখানে মাত্র চারজন।
– চল, কেতো। এখানে আর না।
(তিন)
পরেশের দোকানে বেঞ্চে বসে গরম বেগুনিতে কামড় বসাতে বসাতে টুকুন জিজ্ঞাসা করল – আচ্ছা লেট্টুদা, তুমি সত্যি বর্ধমানে বড় বঁটির উপরে ঝাঁপ দিয়েছো?
কাঁচা লঙ্কায় কামড় বসিয়ে মুড়ি চিবোতে চিবোতে লেট্টু বলে – তোর কী মনে হয়?
– আমার মনে হয় তুমি ঢপ দিয়েছো।
– রহস্যের উন্মোচন করতে কখনও কখনও সামান্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। এতে দোষের কিছু নেই। অশ্বত্থামা হত ইতি গজঃ, জানিস তো।
– তা ঠিক। কিন্তু তুমি আগে কি কখনও বঁটি ঝাঁপ দিয়েছিলে? মেনাল্ডোর জিজ্ঞাসা।
– না রে। কিন্তু দেখেছি, কীভাবে দেয়। এমন কিছু উপর থেকে তো দেয় না। ওই ধর দশ মাইনাস চার মানে ছ’ফুট উপর থেকে ঝাঁপ, তাও আবার গদির উপর। কী আর হবে!
– কিন্তু যদি সত্যি বঁটিটা গায়ে লাগতো? টুকুনের গলায় উদ্বেগ।
– তা একটু রিস্ক থাকে, তবে ওটুকু নিতেই হয়। তবে নিচে যারা গদি ধরে তারা বেশ ওস্তাদ হয়। বঁটির বা বাঁটের ওপরে যাতে সরাসরি না পড়ে তা খেয়াল রাখে। আর যারা ওপর থেকে পড়ছে তাদের পড়ার কৌশলটাও দেখেছিলাম ভালো করে।
– কী রকম? কেতো, টুকুন আর মেনাল্ডোর চোখ তখন লেট্টুর মুখের ওপর স্থির।
লেট্টু যথারীতি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে চলে – ওরা সোজা না পড়ে বাঁদিকে একটু কাত হয়ে পড়ছে, ফলে বঁটির উপর পড়ার নো চান্স। আর আমি তো আগেই দেখে নিয়েছিলাম যে ওটা বঁটিই নয়, ছোটো একটা ফলা।
– কিন্তু তুমি তো পড়েছিলে উপুড় হয়ে? মেনাল্ডোর চোখে কৌতুহল।
– ইচ্ছে করেই। পড়ার সময় বডিটাকে রোল করে নিয়েছিলাম। নইলে বঁটিটাকে বার করবো কী করে? জানিস, বঁটিটা প্রথম ঝাঁপের সময় খাড়া থাকলেও পরে আর ছিল না। ধাক্কাধাক্কিতে বাঁট থেকে খুলে গিয়ে ফুলের ভেতর শুয়ে ছিল। হাসতে লাগল লেট্টু।
– তারপর? সমস্বরে সবাই বলে উঠল।
– একটা নরম কাঠের গায়ে খুব আলগা করে ওই ফলাটা লাগানো ছিল। মনে হয় সজনে কাঠের বাঁট। একটু আঘাত লাগলেই বাঁট থেকে ফলাটা যাতে খুলে যায়।
চায়ের কেটলি ও গ্লাস ধুতে ধুতে লেট্টুর কথাগুলো এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিল পরেশ। আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল – তাহলে বঁটিঝাঁপ একটা চালাকি লেট্টু?
– তাই নয় তো কী! লেট্টু মুখ না তুলেই জবাব দেয়।
– তবে লোকে যে বলে যার মনে মহাদেবের প্রতি ভক্তি নেই তার গায়ে বঁটি লেগে যায়। রক্তপাত হয়!
– তুমি তো এতক্ষন আমাদের সব কথা শুনেছো। আমি নিজে কালকে দলুইপাড়ায় বঁটিঝাঁপ দিয়েছি। বঁটি নামের ওই ফলাটা আনতে পারলে তোমাকে দেখাতে পারতুম।
– না দেখলেও চলবে। সব বুঝে গেছি ভাই। সব ভাঁওতা। মহাদেব না ছাই!
পরেশের কথা শুনে মেনাল্ডোরা এর ওর দিকে চেয়ে মুখটিপে হাসতে লাগল।
– তোমাদের চা এবার বানাই লেট্টু? পরেশের জিজ্ঞাসা।
– হ্যাঁ। অবশ্যই। তবে পরেশদা, আজ কিন্তু দুটো চা চারটে করে নয়, চারজনে চারটে চা-ই খাবো। ফুল কাপ। আর স্পেশাল চা কোরো – দুধে এলাচ দিয়ে।
– লিকার চা খাবে না আজ?
– না পরেশদা। আজ টুকুন আমাদের সবার চা আর টিফিনের দাম দেবে। কীরে টুকুন, কালকের কথা মনে আছে তো?
টুকুন ঘাড় দোলাল।
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর