ছোট্ট একটা যৌগ। তিনটে মাত্র পরমাণু দিয়ে তৈরি। একটা কার্বন, দুটো অক্সিজেন। যৌগটির অনেক ক্ষমতা। উপকার করে, আবার ক্ষতিও। বাতাসে মিশে থাকে। আমাদের নিঃশ্বাসেও বেরিয়ে আসে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড। গ্যাসটি উপকারী কারণ, গাছ একে গ্রহণ করে নিজের খাদ্য বানায়। সেই খাদ্য গ্লুকোজ, গাছের ফল থেকে আমরাও গ্রহণ করি।
আবার গ্যাসটি অপকারীও। কারণ, অনেকরকম বিপদ ঘটায়। সবচাইতে বড়ো বিপদ, গ্যাসটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা সমুদ্রতলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বজুড়ে ঘটে উষ্ণায়ন। সে আলোচনা পরে। এখন প্রশ্ন, গ্যাসটি তৈরি হয় কেমন করে? বাতসে কোনও জিনিস পুড়লে তৈরি হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। উলটোটাও সত্যি। কোথাও আগুন লাগলে বাতাসের চাইতে ভারি এই গ্যাস তাকে নিভিয়ে দিতে পারে।
গ্যাস বলছি, আসলে সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে (0 degrees C, 1 atmosphere) এর গ্যাসীয় অবস্থা। তাপমাত্রা কমালে (-78.5 degrees C, 1 atm.) তরল। আরও কম তাপমাত্রায় কঠিন অবস্থায় চলে যায়।
গ্যাসটির কথা আমাদের জানিয়েছেন ফ্রান্সের এক বিজ্ঞানী, জোসেফ ব্ল্যাক (১৭২৮-১৭৯৯)। অনেক-অনেকদিন আগের কথা। ডাক্তারির ছাত্র তখন। চিকিৎসার কাজে চুনের জল (Lime water) কাজে লাগানোর উপায় খুঁজছিলেন। সেই কাজ করতে গিয়ে পাথরের মতো শক্ত আরেকটি বস্তু নিলেন। সেটি ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট, পরে জানা গেছিল। আর তাপ দিতেই এর মধ্য থেকে বেরিয়ে এল একধরনের গ্যাস। নাম দিলেন ‘ফিক্সড গ্যাস’। শক্ত জিনিসে ধরা থাকে, তাই এই নাম। অনেক পরে উপাদানগুলো, তাদের পরিমাণ ইত্যাদি জানা গেল। গ্যাসটির নাম হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড।
গ্যাসটির তাপ শোষণ করে রাখবার ক্ষমতা আছে। গ্যাসটি শুষে নেয় অবলোহিত (infrared light) আলো। একধরনের তরঙ্গ। কেমন সেটি? সূর্যের আলোয় থাকে সাতটি রং। প্রতিটি আলাদা আলাদা। তাদের শক্তি, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন রকম। সাত রঙের বর্ণালীর সবচাইতে বড়ো তরঙ্গ দৈর্ঘ্য লাল আলোর। বর্ণালী, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘বর্ণলিপি’। তিনি লিখেছেন (বিশ্বপরিচয়), ‘তিন পিঠওয়ালা কাঁচের ভিতর দিয়ে সূর্যের সাদা আলো পার করলে তার সাতটা রঙের পরিচয় পরে পরে বেরিয়ে পড়ে।’
সাত রঙের একটি হল লাল বর্ণ। নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি। তাকে শুষে নেয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। আরও বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোও শুষে নিতে পারে।
আশ্চর্য ঘটনা। বিস্ময়কর ফেনোমেনা! এমন হবার কারণ আবিষ্কার করেছিলেন সুইডেনের বিজ্ঞানী স্যাভান্তে আরহেনিয়াস। বাতাস দু-ভাবে তাপ ধরে রাখে। বাতাসের মধ্য দিয়ে তাপ প্রবাহিত হবার সময় (selective diffusion) এবং তাপ শোষণের (absorption) মাধ্যমে। বাতাসের অনেক উপাদান। নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, জলীয় বাষ্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড। অন্য উপাদানগুলোয় (দুই-পরমাণুর নাইট্রোজেন, অক্সিজেন) তাপের প্রভাবে কম্পন (vibration) ঘটে। দুই পরমাণুর মধ্যেকার বন্ধনীর কম্পন। ফলে প্রচুর পরিমাণ তাপ শোষণ করতে পারে তারা। কিন্তু বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প, শোষণ প্রক্রিয়ার (absorption) মাধ্যমে তাপ গ্রহণ করে। এদের (CO2, H2O) পরমাণুগুলো কাঁপতে থাকে বর্ণালির অবলোহিত (Heat, Infrared) অঞ্চলে। কাঁপতে থাকা একটি অণু তাপমোচন (Emission) করলে আরেকটি অণু সেটি গ্রহণ করে কাঁপতে থাকে (vibrate)। একধরনের খেলার মতো। হাতে বল পেয়ে পাশের জনকে দিচ্ছে, সে তার পাশের বন্ধুকে। এভাবে বলটা থেকে যাচ্ছে নিজেদের কাছে।
এই প্রক্রিয়ার ফল কী? তাপ শোষণ-মোচন এবং পুনরায় শোষণ (Absorption-emission-absorption)—এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (এবং জলীয় বাষ্প) পৃথিবী তলে তাপ ধরে রাখে।
[কার্বন (হলুদ) ও অক্সিজেন পরমাণুর মধ্যে কম্পন। দ্বি-বন্ধনী (Double bond) তাপ শোষণের ফলে বর্ধিত ও সংকুচিত (vibrate) হচ্ছে]
বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস অনেক পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠা করলেন এক তত্ত্ব। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের উষ্ণতা মেপে প্রমাণ করলেন যে, জ্বালানি-দহনে সৃষ্টি হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বাকাশে চলে যেতে পারছে না। পৃথিবী তলে অর্থাৎ সমুদ্র ও মাটিতে ফিরে আসছে। ফলে কী ঘটছে? পৃথিবী গ্রহের উষ্ণতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
তিনি আরও বললেন, ১৮৯৬ সালে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের যা পরিমাণ, ভবিষ্যতে সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভয়ংকর কথা! তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই তো মহা প্রলয়! সলিলসমাধি ঘটবে অনেক দেশের।
চিত্র ২. কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক।
২০১৬ সালে উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে।
আধুনিক গবেষণা এই কথা মেনে নিয়েছে। জানিয়েছে আরও বহু তথ্য। গরম বাতাস আকাশে না গিয়ে মাটিতে ফিরে আসা কোনও ছোটো ব্যাপার নয়। বড়োই সাংঘাতিক। এর নাম গ্রিন হাউস এফেক্ট (Greenhouse effect)। গ্রিন হাউস গ্যাস পরিবারের সদস্য অনেকে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন। এরা ভূ-পৃষ্ঠে তাপ ফিরিয়ে আনে। এমন কাজে সবচাইতে বেশি ক্ষমতা কার্বন-ডাই-অক্সাইড আর জলীয় বাষ্পের।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অন্য গ্রিন হাউস গ্যাস বেড়ে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডলে। ফলে পৃথিবী গ্রহ বেশ গরম হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে গরম হয়ে আজকে ভয়ংকর জায়গায়। এর ফলে পৃথিবীর জল-স্থল-বনস্থল, সবখানেই আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। কোথাও প্রবল বন্যা, কোথাও খরা। কোনও জায়গায় ভীষণ গরম আবার অন্যখানে অতি তুষারপাত। ঘন ঘন ঘটছে ঝড়-ঝঞ্ঝা-তুফান। সব দেশে সবখানে শুরু হয়েছে বিপর্যয়। চারদিকে গেল গেল রব।
কেন এমন হল? জ্বালানি দহন করে করে তাপ শক্তি ছড়িয়েছি আমরা। মানুষের চাহিদা মেটাতে জ্বালানি পুড়েছে আর উত্তপ্ত হয়েছে বায়ুমণ্ডল। জ্বালানি আদতে রাসায়নিক শক্তি। প্রাকৃতিক জ্বালানি কয়লা, তার দহনে রাসায়নিক শক্তি রূপান্তরিত হয়েছে তাপ শক্তিতে (Thermal power)। একে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ (Thermal power)। বিদ্যুৎ বিনা জীবন অচল। বাড়ি ঘরে পথে প্রান্তরে বিজলি বাতি প্রয়োজন। বাড়িতে দরকার ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশন, ওয়াশিং মেশিন। এসবের ব্যবহার বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবী গ্রহের উষ্ণতা। কেমন করে?
ইতিহাসের রাস্তা ধরে পেছনে তাকাই। পৃথিবী গ্রহের উষ্ণায়ন শুরু বহু কাল আগে। শিল্প বিপ্লবের সময় (১৭৬০-১৮২০) থেকে। কলকারখানায় লোহা ও অন্য ধাতু গলিয়ে গাড়ি, রেল, জাহাজ তৈরি হতে লাগল। শক্তি জোগান দিল প্রাকৃতিক জ্বালানি (Fuel)। কাঠ তেল কয়লা। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ তৈরি হয় কয়লা পুড়িয়ে। আর পেট্রল দহন করে সংগ্রহ হয় ৩৮ শতাংশ শক্তি। যত বেশি পুড়েছে প্রাকৃতিক জ্বালানি, ততই বৃদ্ধি পেয়েছে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং চারপাশের উষ্ণতা।
কতটা বেড়েছে? এতটাই যে দশ বছরের মধ্যে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পৃথিবী গ্রহের চরম বিপদ। মহা প্রলয়ের মতো বিপর্যয় নেমে আসবে। দেশে দেশে ঘটে চলা ঝড়-বাদল-তুফান-খরা-বন্যার মধ্যে বিপর্যয়ের ভয়ংকর আভাস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের বিজ্ঞানীরা মিলিত হয়ে বলছেন: বিশ্ব উষ্ণায়ন এতদিন শুধুই বিপদের পূর্বাভাস জানাত। এবার সরাসরি উষ্ণায়নের মারাত্মক ফল ভুগতে শুরু করেছে পৃথিবী।
শিল্প বিপ্লব (১৭৫০-১৮৫০)-এর পর থেকে একশো বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে পৃথিবীর দিকে দিকে সর্বনাশের ডঙ্কা বেজেছে। বহু গবেষণায় জানতে পেরেছি আমরা যে, বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (এবং অন্য কিছু গ্যাস) বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডল গরম হয়ে উঠছে। যে হারে বাড়ছে উষ্ণতা, তাতে বর্তমান শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২.৫-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। ভয়ংকর কথা! তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই তো মৃত্যু ঘণ্টা বেজে যাবে পৃথিবীর। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রতল উঁচু করে দেবে ২৩০ ফুট। এর পরিণাম? জলের নীচে তলিয়ে যাবে বহু দেশ।
শুরু হয়ে গেছে বহু গ্রাম-শহর-দেশের অবলুপ্তি। বাড়িঘর হারা অসংখ্য মানুষ মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজছেন।
আমরা আগে থেকে কেন সাবধান হতে পারিনি? খুবই সঠিক প্রশ্ন। বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিণাম ও কারণ বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন বহু আগে।
দুজন সুইডিশ বিজ্ঞানী জন টিন্ডাল (১৮২০-১৮৯৩) এবং স্যাভান্তে আরহেনিয়াস (১৮৫৯-১৯২৭, নোবেল পুরস্কার পান ১৯০৩ সালে), বহু প্রমাণ হাতে নিয়ে মানুষকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘বাতাসে অধিক পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি ভবিষ্যতে পৃথিবীর ভয়ংকর বিপদ ঘটাবে। কারণ, এই গ্যাসটিই বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে (Greenhouse effect)’।
বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে নিজের খাদ্য বানায় (Photosynthesis) গাছ আর বাতাসে মুক্ত করে অক্সিজেন। বায়ুমণ্ডল শুদ্ধ করবার প্রাকৃতিক সম্পদ বৃক্ষ। এই কথা জেনেও দুনিয়াব্যাপী বৃক্ষ নিধন করেছে মানুষ। গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে তেল-কয়লা ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানির দহন। তৈরি হয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড। সব মিলিয়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসটির উপস্থিতি বেড়েছে বহুগুণ।
গবেষণা করে বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস আমাদের জানিয়েছিলেন, তাঁর সময়কালে (১৮৯৬ সাল) বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের যা পরিমাণ, ভবিষ্যতে সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখনকার গবেষণার তথ্য প্রায় তাই। ভয়ংকর কথা।
কতটা ভয়ংকর, বিশ্ববাসী বুঝতে পারছে ইদানীং। পৃথিবী গ্রহের অনেক দেশ এখনই ডুবতে বসেছে। টুভালু, কিরিবাটি, ফুজি—এক গাদা দেশ, তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের তলায়। বার্বাডোস, মেক্সিকো, মিশর, ইন্দোনেশিয়া—সর্বত্রই ডুবছে গ্রাম-নগর-বন্দর। আর ভারতে? উষ্ণতা আর একটু বাড়লে সমুদ্রতলের উদ্ভিদ জীবজন্তু মরে যাবে। বহু মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ গরমের সঙ্গে যুঝতে পারবে না। দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাই-কলকাতা শহরগুলো বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে।
পূর্ব-ভারতের এই প্রদেশে এখনই আমাদের ঘাড়ের উপর শ্বাস ফেলছে বিশ্ব উষ্ণায়নের দানব। ঘরের কাছে সুন্দরবনে গেলেই বুঝতে পারা যাবে। ঘোড়ামারা মউশানি দ্বীপ ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। ‘বিগত ৪৫ বছরে সমুদ্রমুখী সুন্দরবনের ২৫০ বর্গ কিলোমিটার সাগর গর্ভে তলিয়ে গেছে’। ‘সাগর দ্বীপের এক তৃতীয়াংশ ২০ বছরে নিশ্চিহ্ন’। আর সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন দ্বীপের সংখ্যা? ভারতের অন্তর্গত সুন্দরবনের শতেক দ্বীপের অর্ধেক জুড়ে মানুষের বাস। তেমনই অনেক দ্বীপের—যেমন বেডফোর্ড, কাবাসগড়ি, লোহাছারা, সুপারিভাঙা—সলিলসমাধি ঘটেছে। ঘোড়ামারা মউশানি দ্বীপের অবলুপ্তি শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আমাদের ঘরের কাছে বাংলাদেশও উষ্ণায়নের কবলে দারুণরকম ক্ষতিগ্রস্ত। দেশটির সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল এবং পদ্মা নদী তীরের বিস্তৃত ভূ-ভাগ অচিরেই তলিয়ে যাবে জলের নীচে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বড়োই ভয়ংকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘এখন যা অবস্থা, বিশ্ব উষ্ণায়ন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা প্রায় অসম্ভব। তবে সম্ভব হতে পারে যদি সমাজের সব স্তরে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটানো যায়।
এ মুহূর্তে দরকার বিশ্ব উষ্ণায়ন কমিয়ে ফেলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা। হ্রাস করা জ্বালানির দহন, গাড়ি, এয়ার কন্ডিশন মেসিন এবং অন্য ভোগ্য পণ্যের ব্যবহার।
এ তো অগ্রগতি তথা সভ্যতার কণ্ঠরোধ! এ কি সম্ভব? পৃথিবী জুড়ে চেষ্টা চলছে অসম্ভবকে সম্ভব করবার। একদিকে অগ্রগতি আরেকদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন, এই দুয়ের সমঝোতার প্রচেষ্টায় ব্যস্ত অনেক বিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রনেতা। কয়লা ও জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে একাধিক দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। উদাসীনতাও লক্ষ করা গেছে অনেক দেশের কর্মকাণ্ডে।
আশার কথা, অধিকাংশ দেশের রাষ্ট্রনায়করা এখন বুঝতে পেরেছেন, বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ন কমানো দরকার। চোখের সামনে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমাট বরফ গলতে দেখে, অনেক পাহাড় চূড়ার গ্লেসিয়ার নিশ্চিহ্ন হতে দেখে শিউরে উঠেছেন তাঁরা। বুঝতে পারছেন ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়নের রাশ টানা ভিন্ন অন্য পথ নেই। তাই চিরাচরিত শক্তির উৎস কয়লা বা তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে সৌর বিদ্যুৎ, বাতাসের শক্তি ইত্যাদিকে ব্যবহার করতে হবে। এ মুহূর্তে দরকার কম জ্বালানি কাজে লাগিয়ে বেশি শক্তি উৎপন্ন করার (Energy efficient) কারিগরি।
এসব না করলে বাঁচানো যাবে না পৃথিবীকে। পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয় এমন জ্বালানি দহন কমাতেই হবে। আর বাঁচাতে হবে বৃক্ষ সম্পদ। সবুজ ধ্বংস নয় বরং চারপাশে আরও গাছপালা লাগাতে হবে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য নিজেদেরই পরিকল্পনা করতে হবে। সময় খুব সংক্ষিপ্ত, আমাদের দায়িত্ব কিন্তু বিশাল।
চিত্র ৩ স্যাভান্তে আরহেনিয়াস
চিত্র ৪ জোসেফব্ল্যক (স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানী)
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর
Nice, smooth and informative writing. Very useful to budding science communicators. Thank you for this posting.
LikeLike