FUNবিজ্ঞান-বিজ্ঞানের গল্প- ক্লেয়ারভয়েন্স কারসাজি -সৌম্যকান্তি জানা- শরৎ২০২২

সৌম্যকান্তি জানা-র আগের লেখা- ক্লোরোফিল চোর, বঁটিঝাঁপের মেলায়, রঙবদল, অবচেতন মনের আয়না, হাওয়া বাবা হাওয়া, অ্যাটমোবাবু কাবু , শিম্পাঞ্জির হাত

biggangolpo

(এক)

এগারোটা পঁয়ত্রিশের কল্যাণী সীমান্ত লোকালটা তখন শিয়ালদা থেকে ছেড়ে সবে দমদমে পৌঁছেছে। একে রবিবার, তায় চড়া রোদ। অন্য সময় দমদম থেকে যত যাত্রী ওঠানামা করে তার সিকিভাগ যাত্রীও নেই। ট্রেনটা দাঁড়াতেই দু-তিনটে লোক উঠল ওদের কামরায়। অঢেল সিট দেখে তারা কোথায় বসবে ঠিক করতে পারছিল না। হঠাৎ লেট্টু একজনের দিকে তাকিয়ে হেঁকে উঠল, “প্রতীক না? তুই কোথা থেকে?”

ডাক শুনেই একরাশ বিস্ময় প্রতীকের চোখে-মুখে, “লেট্টু! তুই কোথায় যাবি?”

“আরে আমি যাব কল্যাণী। তুই?”

“বাড়ি যাব।”

“ও হ্যাঁ, তোর বাড়ি তো ব্যারাকপুর। তাই না?”

“হ্যাঁ। কল্যাণী পরে যাবি। এখন চল আমাদের বাড়ি।”

প্রতীক ততক্ষণে এসে বসেছে লেট্টুর পাশে। বুবাই সরে গিয়ে প্রতীকের জন্য জায়গা করে দিয়েছে। প্রতীক ও লেট্টু কলকাতায় একই কলেজে পড়ে। প্রতীকের বিষয় স্ট্যাটিস্টিকস, আর লেট্টুর ফিজিক্স। খুব ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফিসে দুজনের যাতায়াতের সুবাদে মাঝে মাঝে গল্পগুজব হয়।

“তারপর? সামার ভ্যাকেশনের সদ্ব্যবহার করছিস?” লেট্টুর ঊরুতে হাত রাখে প্রতীক।

“তা বলতে পারিস। আসলে আমার মাসতুতো দিদির বিয়ে আছে আগামী পরশু। তাই সদলবলে চললুম।” লেট্টু আঙুল তুলে পাশে বসে থাকা বুবাই আর সামনে বসে থাকা কেতো আর পিচকুকে দেখায়, “এরা সব আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ফ্রেন্ড কাম ব্রাদার।” বেশ গর্ব ঝরে পড়ে লেট্টুর গলায়।

“কী অদ্ভুত ব্যাপার দেখ লেট্টু, আজ সকালেই আমি তোর কথা ভাবছিলাম।”

“কেন?”

“আরে দু-দিন হল আমাদের বাড়িতে আমার এক মেসো এসেছে ওয়ারশ থেকে। মেসো ওখানে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। মেসোর কাছ থেকে একটা গল্প শোনার পর থেকে আমার খালি তোর কথাই মনে পড়ছিল।”

“তাই নাকি? কী গপ্পো শুনি?” লেট্টুর চোখে-মুখেও তখন খুব উৎসাহ।

প্রতীক সাইড ব্যাগের চেন খুলে জলের বোতল বার করে দু-ঢোঁক জল খেয়ে বলতে শুরু করল। চারজোড়া চোখ তখন প্রতীকের মুখে নিবদ্ধ।

ব্যাপারটা হল, প্রতীকের মেসো অরিন্দম গুহ চাকরিসূত্রে প্রায় পনেরো বছর পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে থাকেন। তিনি নাকি অতীন্দ্রিয় শক্তির অধিকারী। তিনি এই বিদ্যা পোল্যান্ডে একজন নামি প্যারাসাইকোলজিস্টের কাছ থেকে শিখেছেন।

গল্পটা বলে প্রতীক বলে ওঠে, “গতবছর কলেজের ইউনিয়ন রুমে কোনও এক প্রসঙ্গে অতীন্দ্রিয় শক্তির কথা উঠতে তুই বলেছিলি, ওসব Sixth sense, অতীন্দ্রিয় শক্তি-ফক্তি পুরো ঢপ। কীসব ব্যাখ্যাও দিয়েছিলি। আমিও তা-ই বিশ্বাস করতাম। কিন্তু ভেবে দেখ, আমি কাল থেকে অনেকবার তোর কথা ভেবেছি। বার বার ভাবছিলাম তোর সঙ্গে যদি একবার দেখা হত খুব ভালো হত। তোকে মেসোর মুখোমুখি বসাতাম। আমার মন তো আজ সকাল থেকেই বলছিল তোর সঙ্গে আমার দেখা হবেই খুব শিগগির। আর আজ তোর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। অথচ তুই কোথায় থাকিস আর আমি কোথায় থাকি! এটা কি তুই সিক্সথ সেন্স বলবি না?”

টিটাগড় ছাড়াতেই লেট্টু বুবাইদের উদ্দেশে বলে উঠল, “চল আজ ব্যারাকপুরেই নামি। মাসিকে ফোন করে দিচ্ছি, কাল দুপুরে পৌঁছব।”

গুরুর আদেশ অমান্যি করার স্পর্ধা ওদের নেই। প্রতীকের সঙ্গে লেট্টুরা পা রাখল ব্যারাকপুরের প্ল্যাটফর্মে।

(দুই)

প্রতীকের মেসো ভদ্রলোক বেশ আমুদে। কথার মাঝে মাঝে বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা করেন। প্রতীক অবশ্য লেট্টুকে ধরে আনার আসল কারণটা বাড়িতে বলেনি। বাড়ির সবাই জানে, ট্রেনে প্রতীকের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়ায় লেট্টুই প্রতীকের বাড়ি আসতে চেয়েছে।

প্রতীকদের ড্রইংরুমটা বেশ বড়ো। দু-দিকের দেয়াল বরাবর দুটো সোফা। আর একদিকে বেতের দুটো চেয়ার। সন্ধেয় প্রতীকের মা সবার হাতে এক-একটা প্লেটে চিকেন পকোড়া, স্যালাড আর টম্যাটো সস ধরিয়ে দিয়েছেন। টিভিতে খবর চলছিল—ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার খবর। প্রতীকের বাবা আর অরিন্দম মেসো ছাড়া বাকিরা সবাই খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল। একটা সোফায় বসে বুবাই, পুচকু আর কেতো। অন্য সোফায় প্রতীক আর লেট্টু। অরিন্দম মেসো আর প্রতীকের বাবা বসে বেতের চেয়ারে।

“অরিন্দম, তুমি তো ইউক্রেনের পাশের দেশে থাকো। তুমি বলো তো, জেলনস্কি কেন এখনও সারেন্ডার করছে না? পরাজয় তো নিশ্চিত। মাঝখান থেকে প্রতিদিন এত প্রাণ যাচ্ছে। দেশটা ধ্বংস হয়ে গেল।” প্রতীকের বাবার মুখে বেদনার ছায়া।

“দেখুন দাদা, যুদ্ধ আজ না হয় কাল হতই। রাশিয়ার আগ্রাসনে অন্তরায় হচ্ছিল ইউক্রেন। ফলে যুদ্ধ হতই। জেলনস্কি বয়সে নবীন, অভিজ্ঞতাতেও নবীন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পুতিন কবে যে তার জমিতে Put in করেছে তা টের পায়নি।” কথার মাঝে হালকা রসিকতা মিশিয়ে দিলেন অরিন্দম মেসো।

“তো UN কী করছে? কিছু কি করার নেই?” প্রতীকের বাবার গলায় হতাশা ঝরে পড়ে।

“UN হাবেভাবে জেলনস্কিকে জানিয়েই দিয়েছে You end, মানে তোমার বিনাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না।” অরিন্দম মেসোর ঠোঁটের কোণে হাসি। একটা পকোড়া মুখে পুরে ফের বললেন, “আসলে সবকিছু চোখে দেখে তবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, আগে থেকে অনুমান করতে হয়, Sixth sense-কে কাজে লাগাতে হয়। সবার এই ক্ষমতা থাকে না। জেলনস্কির নেই। যাদের আছে তারা ভালোমন্দ যাই হোক না কেন লক্ষ্য পূরণ করতে পারে।” কথা শেষ করে আরেকটা পকোড়া মুখে পুরলেন।

লেট্টু ঠিক এমন একটা কথার অপেক্ষাতেই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “Sixth sense-টা কী মেসোমশাই?”

লেট্টুর প্রশ্নে সবাই ঘাড় ফেরাল লেট্টুর দিকে। অরিন্দমবাবু এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, “ব্যাপারটা অনেকটা আগাম দেখতে পাওয়ার মতো ব্যাপার বা দূরে কোথায় কে কী ভাবছে তা বুঝে ওঠার ক্ষমতা। ইংরেজিতে একে বলে ক্লেয়ারভয়ান্স।”

সবাই তখন অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে। তিনি ধীরেসুস্থে আরও একটা পকোড়া মুখে পুরে বলে উঠলেন, “আমাদের দেশে অনেকের এই ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল। তবে বিশেষ অনুশীলনের দ্বারা এই ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব। তুমি নিশ্চয়ই শ্রীরামকৃষ্ণের কথা জানো। তিনিও এই ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।”

লেট্টু চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল। অরিন্দমবাবু থেমে যেতে বলে উঠল, “কিন্তু মেসোমশাই, ক্লেয়ারভয়ান্স কি একশো শতাংশ সত্যি হয়?”

“পৃথিবীতে ক’টা কাজ একশো শতাংশ সফল হয় বলতে পারবে? যে চিকিৎসক বছরে কয়েকশো অপারেশন করেন, তাঁর সব অপারেশন কি সাকসেসফুল হয়? আসলে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

“সে তো বুদ্ধি করে অনুমান করতে পারলেই অনেক ব্যাপারই ঠিকঠাক বলে দেওয়া সম্ভব। স্ট্যাটিস্টিক্সের প্রোব্যাবিলিটি তো তাই বলে।”

এই প্রথম মনে হল লেট্টুর ওপর অরিন্দমমেসো একটু ক্ষুণ্ণ হয়েছেন, “প্রোব্যাবিলিটি আর ক্লেয়ারভয়ান্স এক নয়। তোমার কি ক্লেয়ারভয়ান্স সম্বন্ধে কোনও পড়াশোনা আছে?”

লেট্টু মাথা নাড়াল।

“তাহলে এ নিয়ে তোমার তর্ক করা মানায় না। এটা একপ্রকার পরামনোবিজ্ঞান, প্যারাসাইকোলজি। বিষয়টা নিয়ে যদি তোমার আগ্রহ থাকে তবে পড়াশুনা কোরো। তোমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।”

অরিন্দমবাবুর চোখে-মুখে একরাশ বিরক্তি। শেষ পকোড়াটা মুখে পুরে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে উঠে চলে গেলেন ঘরের ভেতর।

প্রতীকের বাবা প্রণববাবু এতক্ষণ সব শুনছিলেন। বললেন, “থাক আর বিতর্কে কাজ নেই।”

লেট্টু বলল, “না কাকু, বিতর্ক কিছুই করিনি। আমি জানতে চাইছিলাম, যা ক্লেয়ারভয়ান্স বলে মেসোমশাই বলছেন সেটাই প্রব্যাবিলিটি কি না।”

“একটা পরীক্ষা করে দেখবি লেট্টু?” প্রতীক খুব উৎসাহ দেখাল।

“কী করতে চাস বল।”

“তুই আমাকে কয়েকটা প্রশ্ন কর যাতে প্রব্যাবিলিটির ব্যাপারটা থাকে।”

“আইডিয়াটা মন্দ নয়। বেশ টাইম পাস হবে।” ফুট কাটল বুবাই।

“আমাকেও করবে কিন্তু লেট্টুদা। আমিও খেলব।” পিচকু উৎসাহ দেখায়।

“থামবি?” মৃদু ধমক দেয় লেট্টু, “এটা খেলাধুলা নয়। এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট। বুঝলি? যা, টেবিল থেকে ওই খাতা আর পেনটা নিয়ে আয়।”

ধমক খেয়ে চুপ করে যায় পিচকু। উঠে গিয়ে টেবিল থেকে খাতা আর পেনটা এনে দেয় লেট্টুর হাতে।

“আমি তোকে তিনটে প্রশ্ন করব। প্রতি প্রশ্নের উত্তর কাগজে লিখে আমার পকেটে রাখব। তারপর তুই যখন আসল উত্তর জানাবি, আমি আমার উত্তর বার করে দেখাব।” এই বলে লেট্টু খাতার পাতা ছিঁড়ে ছোটো ছোটো টুকরো করে পকেটে রাখল। তারপর প্রতীকের উদ্দেশে বলল, “তোর পার্সে ক’টা দশ টাকার নোট আছে? তুই পার্স নিয়ে আয়। ততক্ষণে আমিও টয়লেট থেকে ঘুরে আসি। ফিরে এসে আমি সংখ্যাটা লিখে রাখছি।”

প্রতীক উঠে গিয়ে ঘরের ভেতর থেকে তার পার্স নিয়ে এসে বসল। মিনিট খানেক পরে লেট্টুও টয়লেট থেকে এসে বসল।

“এনেছিস? আমি আমার পকেটে কাগজে সংখ্যাটা লিখে রাখছি।” এই বলে লেট্টু একটা কাগজের টুকরো নিয়ে তাতে কিছু লিখে পকেটে রাখল, “এবার তুই ক’টা দশ টাকার নোট আছে দেখা তো।”

প্রতীক পার্স খুলে দশ টাকার নোট গুনে বলল, “চারটে। এবার তুই কী লিখেছিস দেখি।”

লেট্টু ধীরেসুস্থে বুক পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বার করে টি-টেবিলের উপর মেলে ধরল। সবাই ঝুঁকে পড়ল টেবিলের উপর। কী আশ্চর্য! লেট্টু কাগজে চারই লিখেছে। সবার চোখে তখন এক সমুদ্র বিস্ময়। লেট্টু কিন্তু নির্বিকার। কাগজের টুকরোটা গোল্লা করে পাকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে দিয়ে বলল, “এবারের প্রশ্ন, তোর রিডিং রুমের টেবিলে ক’টা পেন আছে। যা গিয়ে একটা কাগজ বা বাক্সে ভরে নিয়ে আয়।”

লেট্টুর প্রশ্ন শুনে প্রতীক ফের উঠে গেল আর কিছুক্ষণ পরেই একটা পেনসিল বক্সে পেন ভরে নিয়ে এল। লেট্টুও কাগজের টুকরোয় কিছু লিখে পকেটে ভরে রাখল।

“এবার বক্স খুলে দেখা তো ক’টা পেন আছে।”

প্রতীক বাক্স খুলে চারটে পেন হাতে নিয়ে তুলে ধরল, “এবার তুই কী লিখেছিস দেখা তো?” প্রতীকের প্রশ্ন।

লেট্টু আবার ধীরেসুস্থে পকেট থেকে কাগজের টুকরো বার করে টেবিলে মেলে ধরল। কী আশ্চর্য, তাতে চার লেখা!

মুখ খুললেন প্রতীকের বাবা প্রণববাবু, “লেট্টু, তুমি কি সত্যি ক্লেয়ারভয়ান্স জানো? নইলে কী করে দু-বার ঠিক বলে দিলে?”

“কাকু, আর একটু ধৈর্য ধরুন।” এই বলে লেট্টু কাগজের টুকরোটা আগের মতো গোল্লা করে জানালা দিয়ে ছুড়ে দিল।

“এবারে শেষ প্রশ্ন, আজ তুই তোর মোবাইলে কতগুলো ছবি তুলেছিস?”

লেট্টুর কথা শেষ হতে না হতেই প্রতীক আবার উঠে গেল পাশের ঘরে। আর পরক্ষণেই মোবাইলটা হাতে করে নিয়ে এল। ততক্ষণে লেট্টুও কাগজে কিছু লিখে পকেটে রেখে দিয়েছে। সবার চোখে-মুখে তখন বেশ উদ্দীপনা। লেট্টু বলে উঠল, “মোবাইল খুলে তুই সবাইকে দেখিয়ে দে।”

প্রতীক কেতোর হাতে মোবাইলটা দিয়ে বলল, “ন’টা ছবি। ব্যারাকপুর স্টেশনে আমরা সবাই মিলে ন’টা ছবি তুলেছি। আর সারাদিনে অন্য কোথাও ছবি তুলিনি।”

কেতো মাথা ঝাঁকিয়ে সমর্থন করে পাশে বসা বুবাইকে মোবাইলটা দিল। বুবাই পিচকুকে দেখিয়ে মোবাইলটা দিল প্রণববাবুর হাতে।

ততক্ষণে পকেট থেকে লেট্টু কাগজ বার করে মেলে ধরেছে টেবিলে। আশ্চর্য! এবারেও মিলে গেছে!

(তিন)

আগের দিন রাত থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত সবার মুখে একটাই আলোচনা—লেট্টু নিশ্চয়ই ক্লেয়ারভয়ান্স ব্যাপারটা জানে। নইলে এভাবে নিখুঁতভাবে মিলিয়ে দেয় কী করে! পিচকু, কেতো, বুবাই আর প্রতীক অনেক চেষ্টা করেছে লেট্টুর কাছ থেকে রহস্য উদ্ঘাটনের, কিন্তু লেট্টু প্রতিবারেই মিটিমিটি হেসে বলেছে, “এসব অতি সাধারণ ব্যাপার। পরে যে-কোনো সময় বলে দেব। তোরাও পারবি। তবে একটা কথা জেনে রাখ, এসব ক্লেয়ারভয়ান্স-ফয়ান্স কিচ্ছু না।”

কথাটা অরিন্দমবাবুর কানে গেছে। আর সেজন্যই তিনি সকাল থেকে বেশ গম্ভীর। লেট্টুর মুখোমুখি হলেই একটা তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। একবারও লেট্টুর সঙ্গে কথা বলেননি।

দুপুরে খাবার টেবিলে বসে আবার অরিন্দমবাবুর মুখোমুখি হল লেট্টু। লেট্টুর তেমন কোনও ইচ্ছে ছিল না ওই প্রসঙ্গ তোলার। কারণ একে অরিন্দমবাবু প্রতীকের মেসো, খুব আপনার জন। তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করা মানে প্রতীকের বাবা-মাকেও বিব্রত করা। তাছাড়া বিকেলেই ওরা কল্যাণীতে রওনা দেবে। কিন্তু প্রতীকের মা খাবার পরিবেশন করার মাঝে হঠাৎ করেই প্রসঙ্গটা তুলে ফেললেন, “কাল রাতে লেট্টু নাকি দারুণ ম্যাজিক দেখিয়েছে!”

“ম্যাজিক না মা, ক্লেয়ারভয়ান্স!” হামলে উঠল প্রতীক।

“সে আবার কী?”

লেট্টু নির্লিপ্তভাবে বলে উঠল, “ধরে নিন কাকিমা, ওটাও একধরনের ম্যাজিক।”

এতক্ষণ চুপচাপ থাকা অরিন্দমবাবু ফুঁসে উঠলেন, “ক্লেয়ারভয়ান্সকে ম্যাজিক বলে এতটা আন্ডার-এস্টিমেট কোরো না লেট্টু। তুমি ম্যাজিক জানতে পারো। ক্লেয়ারভয়ান্স জানো না। এটা একটা বিজ্ঞান। প্যারাসাইকোলজির বিষয়। কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে এই ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। ইউরি গেলারের নাম শুনেছ? অ্যান্ড্রিজা পুহারিক?”

“বিদেশি ম্যাজিশিয়ান?” খুব সরলভাবে প্রতীকের মা জিজ্ঞাসা করলেন।

“না। গেলার হলেন বিশ্বখ্যাত প্যারাসাইকোলজিস্ট। আর পুহারিক হলেন তাঁর গুরু। এই গেলার পৃথিবীর নানা দেশে তাঁর শো করেছেন। আর প্রতিবারেই তিনি তাঁর ক্ষমতা প্রমাণ করেছেন।” অরিন্দমবাবু খেতে খেতে বেশ উত্তেজিত।

“তা ক্ষমতাটা যে কী তা তো এখনও বুঝে উঠতে পারলাম না।” লেট্টু আবার নির্লিপ্তভাবে বলল।

“অন্তর্নিহিত এক শক্তির সাহায্যে দূরে থেকে কোনও কিছু দেখা বা বোঝার বা শোনার ক্ষমতা হল ক্লেয়ারভয়ান্স। ক্লিয়ার?” কথা শেষ করে অরিন্দমবাবু লেট্টুর চোখে সোজা চোখ রাখলেন।

“তার মানে এটা হল অতীন্দ্রিয় শক্তি। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বাইরে অন্য ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করা।” লেট্টু ধীর গলায় বলল।

“যেমন ভারী বৃষ্টির আগে পিঁপড়েরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে বা ভূমিকম্পের আগে জীবজন্তুরা চঞ্চল হয়ে ওঠে তেমন কি?” কেতো ফুট কাটল।

“কী জানি।” লেট্টু আর এ নিয়ে কোনও বিতর্কে যেতে চায় না।

কিন্তু প্রণববাবু এবার শুরু করলেন, “তুমি বলছিলে না, তুমি ক্লেয়ারভয়ান্স শিখেছ?” অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।

“হ্যাঁ, কিছুটা শিখেছিলাম। তার সফল প্রয়োগও করেছি মাঝে মাঝে।” অরিন্দমবাবুর কথায় আত্মবিশ্বাস ঝরছে।

“তাহলে খাওয়ার পরে একটু হয়ে যাক!” প্রণববাবু কথাটা বলতেই লেট্টু ও অরিন্দমবাবু বাদে সবাই হইহই করে উঠল।

(চার)

প্রতীকদের ড্রইংরুমে গতকাল সন্ধের চেয়ে একজন সদস্য বেড়েছে, প্রতীকের মা। অরিন্দমবাবু কয়েকটা জিনিস জোগাড় করতে বলেছেন—এক প্যাকেট তাস, মোটা কাগজের কয়েকটা খাম, একটা ঢাকনাওয়ালা বাক্স আর আঠা। সব উপকরণ জোগাড় করে টি-টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে প্রতীক। সবাই অরিন্দমবাবুর অতীন্দ্রিয় শক্তি দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ।

“লেট্টু, প্রথমে তুমি একটা খামে যে-কোনো একটা তাস ভরে খামের মুখ ভালো করে আঠা লাগিয়ে বন্ধ করে দেবে। প্রণবদা, তুমিও একটা করবে। আর যে-কেউ আরেকটা করবে। আমি দশ মিনিট সময় দিলাম। এই সময় আমি এই ঘরে থাকব না। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে মনঃসংযোগ করব। তোমরা কোন তাস খামের মধ্যে রাখছ মনে রাখবে। ঠিক আছে? আর হ্যাঁ, ঘরের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশ আনার জন্য কয়েকটা ধূপ জ্বালিয়ে দিও।” এই ক’টা কথা বলে অরিন্দমবাবু ভেতরের ঘরে উঠে গেলেন।

প্রতীকের মা ঠাকুরঘর থেকে কয়েকটা ধূপ জ্বালিয়ে নিয়ে এসে টি-টেবিলে রাখলেন। এদিকে লেট্টু, প্রণববাবু আর পিচকু প্রত্যেকে একটা করে তাস খামের মধ্যে ভরে আঠা লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে যে-যার হাতে নিয়ে বসে থাকল।

ঠিক দশ মিনিট পর ঘরে ঢুকলেন অরিন্দমবাবু। পোশাক পালটে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে এসেছেন, “সবাই রেডি তাহলে। এবার আমাকে বাক্সটা দাও দেখি।”

প্রতীক উঠে গিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের ছোটো বাক্সটা তার মেসোর হাতে ধরিয়ে দিল। অরিন্দমবাবু একটু দূরে একটা বেতের চেয়ারে সবার মুখোমুখি বসলেন, “আমি সব খাম এই বাক্সে রাখার পর কিছুক্ষণ মনঃসংযোগ করব। তখন প্লিজ সবাই সাইলেন্ট থেকো। প্রথমে লেট্টু, তুমি তোমার খামটা নিয়ে এসো।” অরিন্দমবাবুর গলায় বেশ আত্মবিশ্বাস।

লেট্টুর হাত থেকে খামটা নিয়ে অরিন্দমবাবু বাক্সের মধ্যে রাখলেন। তারপর প্রণববাবু ও পিচকুর খামটাও বাক্সে রাখলেন। এরপর কিছুক্ষণ খামগুলোর ওপরে দু-হাত রেখে চোখ বুজে মনঃসংযোগ করতে লাগলেন। চার-পাঁচ মিনিট এভাবেই কেটে গেল। সবাই নিশ্চুপ। তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করে বাক্সটা হাতে তুলে তিনবার কপালে ঠেকালেন। তারপর বাক্সটা কোলের উপর রেখে শান্তভাবে বললেন, “লেট্টু, তুমি তো খামের মধ্যে ক্লাবসের তিন ভরেছ। তাই না?”

লেট্টু সম্মতিসূচক মাথা দোলাল।

অরিন্দমবাবু প্রতীককে ডেকে লেট্টুর খামটা ছিঁড়ে তাসটা বের করে সবাইকে দেখাতে বললেন। সবার চোখে বিস্ময়! সত্যিই তো, ক্লাবসের তিন রয়েছে।

“এবার প্রণবদার খাম।” খামটা হাতে নিয়ে বললেন, “হার্টের বিবি ভরেছ, তাই না দাদা?”

“একদম!” উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন প্রতীকের বাবা, “ইউ আর জিনিয়াস, অরিন্দম!”

“এবার তোমার খাম। কী নাম যেন তোমার?”

“পিচকু।” লেট্টু উত্তর দিল।

“হ্যাঁ। তুমি রেখেছ স্পেডের টেক্কা। কী, তাই তো?” অরিন্দমবাবুর মুখে বিজয়ীর হাসি।

“হ্যাঁ। ঠিক তাই।” পিচকুর গলাতেও বিস্ময়।

“নে, খামগুলো ছিঁড়ে সবাইকে দেখিয়ে দে তো বিনু।”

প্রতীকের ডাকনাম বিনু। প্রতীক খাম ছিঁড়ে সবাইকে তাস দেখাল। লেট্টুর মুখে কিন্তু উত্তেজনার লেশমাত্র নেই। শান্তভাবে বলল, “মেসোমশাই, বাক্সটা একবার আমি হাতে নিতে পারি?”

“নাও, নাও। দেখে নাও বিনু তার বাক্সে কোনও ম্যাজিক করে রেখেছে কি না।” শ্লেষ ছুড়ে দিলেন অরিন্দমবাবু।

লেট্টু বাক্সটা নাকের কাছে এনে শুঁকতে লাগল। সবাই অবাক! অরিন্দমবাবু প্রতীকের দিকে চেয়ে ব্যঙ্গ করলেন—“ভবিষ্যতে বাংলার শার্লক হোমস হওয়ার সব মশলাই কিন্তু মজুত আছে তোর বন্ধুর মগজে।”

লেট্টু অরিন্দমবাবুর কথায় কর্ণপাত না করে প্রতীককে বলল, “তুই এই বাক্সে কী রাখিস রে?”

“কেন? কিছুই না। ফাঁকাই পড়েছিল। ছোটোবেলায় কিছুদিন এই বাক্সে বই নিয়ে স্কুলে যেতাম। পরে মা কিছুদিন খুচরো পয়সা রাখত। তারপর বহুদিন কিছুই রাখা হয় না।”

“এখানে আনার আগে কিছু দিয়ে পরিষ্কার করেছিলি কি?” লেট্টুর গোয়েন্দাগিরি জারি।

“হ্যাঁ, একটা ন্যাকড়া দিয়ে ওপরে জমা ধুলো মুছে দিয়েছিলাম।”

“ব্যস, আর কিছু না তো?” বলেই বাক্সটা প্রতীকের নাকের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “কিছুর গন্ধ পাচ্ছিস?”

“হ্যাঁ, অ্যালকোহলের গন্ধ মনে হচ্ছে।” প্রতীকের কপালে ভাঁজ ফুটে উঠল।

“দেখি একবার, আমাকে দাও তো।” প্রতীকের মা এগিয়ে এসে গন্ধ শুঁকলেন, “হুম। এ যেন স্যানিটাইজারের গন্ধ।” প্রতীকের মায়ের কপালেও ভাঁজ।

একে একে সবাই গন্ধ শুঁকল। আর সবাই একমত হল যে এটা স্পিরিট বা অ্যালকোহলের মতো গন্ধ। ওদিকে অরিন্দমবাবুর মুখে হাসি তখন উধাও। ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরলেও তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠেছে।

(পাঁচ)

“আচ্ছা লেট্টু, তুই মেসোর ক্লেয়ারভয়ান্স রহস্যটা ভেদ করেও খোলসা করলি না কেন?” ট্রেনে উঠেই প্রতীক প্রশ্ন করল। কল্যাণীর পথে প্রতীকও লেট্টুদের সঙ্গী হয়েছে।

“আমি যদি রহস্যটা সবার সামনে খোলসা করতাম তবে তোর মেসো খুব অপমানিত হতেন। উনি তো বুঝেই গেছেন যে ধরা পড়ে গেছেন। কিন্তু আমি ওঁর আর তোদের সম্মানের কথা ভেবে আর এগোইনি।” লেট্টু শান্তভাবে জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে দেখতে জবাব দিল।

“তাহলে এবার তো বলো।” বুবাই বলে উঠল।

“আসলে তোর মেসো স্পিরিট বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছেন বাক্সের মধ্যে। উনি জামার হাতার আড়ালে কোনোভাবে ছোটো কোনও শিশিতে এনেছিলেন। আমরা খাম রাখার পর উনি বেশ কিছুক্ষণ খামের উপর হাত রেখে মনঃসংযোগ করার অভিনয় করেছিলেন। মনে আছে?”

সবাই ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ করে উঠল।

“আসলে ওই সময় উনি খামের উপরে স্পিরিট বা স্যানিটাইজার স্প্রে করে দেন। কিন্তু তার গন্ধ যাতে কেউ বুঝতে না পারে তাই আগেই ঘরের মধ্যে ধূপ জ্বালাতে বলেছিলেন।”

“বাব্বা! এত বুদ্ধি তোমার মেসোর?” প্রতীকের দিকে তাকিয়ে ফুট কাটল কেতো।

“তুই থামবি, নাকি গাঁট্টা খাবি?” ধমক দিল লেট্টু।

লেট্টু বলতে লাগল, “স্যানিটাইজারে অ্যালকোহল থাকে। স্পিরিটও তাই। কাগজের উপরে ঢেলে দিলে কাগজ স্বচ্ছ হয়ে যায়। তখন ভেতরে কী আছে সহজেই দেখা যায়। এভাবেই মেসোমশাই প্রত্যেকের খামের মধ্যে তাস দেখে নিয়েছেন।”

“কিন্তু তাস বা খাম তো ভেজা ছিল না!” প্রতীক বলে উঠল।

“স্পিরিট, অ্যালকোহল তো উদ্বায়ী। একটু পরেই উবে যায়।” কেতো বলে উঠল।

“কারেক্ট।” কেতোর পিঠ চাপড়ে দিল লেট্টু, “মনে করে দেখ, তিন-চার মিনিট পরে মেসোমশাই খামটা বাক্স থেকে বের করেছেন। ততক্ষণে স্পিরিট বা অ্যালকোহল উবে গেছে।”

“সত্যি! তোমার ব্রেন আছে বটে! কিন্তু কালকের সন্ধের কেসটা?” পিচকু জিজ্ঞাসা করল।

“ও, হ্যাঁ। খুব সিম্পল ব্যাপার।” লেট্টু বলতে শুরু করল, “আমি পকেটে এক থেকে আট পর্যন্ত লিখে আটটা কাগজের টুকরো আগেই রেখে দিয়েছিলাম।”

“তুমি যখন টয়লেটে গিয়েছিলে সেই সময়, তাই না?” কেতো চোখ নাচিয়ে বলে উঠল।

“ঠিক ধরেছিস। তবে তোদের সামনে প্রথমে কাগজের টুকরোতে নয় লিখে পকেটে রেখেছিলাম। প্রতীক দেখাল ওর পার্সে চারটে দশ টাকার নোট আছে। আমিও তখন কায়দা করে পকেট থেকে চার লেখা কাগজটা বার করে তোদের দেখালাম। তারপর যখন পেন আনতে বললাম তখন কাগজের টুকরোয় চার লিখে পকেটে রাখলাম। কারণ, তোদের সামনেই তো চার লেখা আগের কাগজটা ফেলে দিয়েছিলাম। প্রতীক চারটে পেন দেখাল। আর আমিও আবার চার লেখা কাগজটা বার করলাম। তারপর ওই কাগজটা ফেলে দিয়ে নতুন কাগজে ফের চার লিখে পকেটে রাখলাম। এবার মোবাইলে ফটো হল ন’টা। আমিও পকেট থেকে নয় লেখা কাগজটা বের করলাম। আসলে এক থেকে নয়ের মধ্যে যে-কোনো সংখ্যাই আমি দেখাতে পারতাম।” কথা শেষ করে হাসতে লাগল লেট্টু।

“আর তুমি সেই জন্য এমন সব জিনিস প্রতীকদাকে আনতে বললে যেখানে এক থেকে নয় সংখ্যার জিনিস থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই না?” বুবাই বলে উঠল।

“অ্যাবসোলিউটলি কারেক্ট।” হেসে ফেলল লেট্টু, “এই জন্যই তোরা আমার শিষ্য।”

“তোর কী বুদ্ধি রে লেট্টু! মেসো কিন্তু ঠিকই বলেছে, তুই বাংলার শার্লক হোমস হতে পারবি। তোর জন্য আমার খুব গর্ব হচ্ছে।” লেট্টুর পিঠ চাপড়ে দিল প্রতীক।

“ধুর! শার্লক হোমস না। আমরা তো বিদ্যাসাগর, রামমোহন, ডিরোজিও, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, মেঘনাদ সাহাদের উত্তরসূরি। অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অপবিজ্ঞান দূর করাই তো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই না?” লেট্টু কথাটা শেষ করে সবার দিকে এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিল।

ট্রেন তখন নৈহাটি স্টেশন ছেড়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে হালিশহরের দিকে।

জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s