নিলামের গল্প (পর্ব ১), পর্ব ২, পর্ব ৩, পর্ব ৪, পর্ব ৫, পর্ব ৬, পর্ব ৭
দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আদৌ কেন ভাবব এ প্রশ্নটা তো উঠতেই পারে। প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ যেমন আমাদের সরাসরি বলছে যে কোন রেখা যখন আঁকব তখন সেটা সোজা আঁকব না ব্যাঁকা, উপরের দিকে মুখ করে সে উঠবে না নীচের দিকে নামবে – অর্থাৎ পোশাকি ভাষায় বললে সরলরেখা আঁকা হবে না বক্ররেখা এবং সেই রেখা ঊর্ধ্বাভিমুখী (increasing) হবে না নিম্নাভিমুখী (decreasing) সেই সব তথ্য ধরা আছে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মধ্যে। একটু ভেঙে বলা যাক। যেকোনো অপেক্ষককে যখন আমরা রেখায় এঁকে দেখাই, তখন সেই অপেক্ষকের প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ রেখার পুরো অংশ জুড়েই কেবলমাত্র ধনাত্মক (positive) অথবা কেবলমাত্র ঋণাত্মক (negative) অথবা কিছুটা ধনাত্মক এবং কিছুটা ঋণাত্মক হতে পারে। কেবলমাত্র ধনাত্মক হলে পুরোটা জুড়ে তার মান একই হতে পারে আবার বারবার বদলেও যেতে পারে। কেবলমাত্র ঋণাত্মকের জন্যও একই কথা খাটে। কোনও একটা অপেক্ষকের ক্ষেত্রে যদি পুরো domain জুড়ে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান একই থাকে তাহলে তার রেখচিত্র আঁকলে সেটা একটা সরলরেখা হবে, তা সেটা ঊর্ধ্বাভিমুখী হোক বা নিম্নাভিমুখী। ঠিক নীচের চিত্র ১ এর AB অথবা CD এর মতো, যেমন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে AB ঊর্ধ্বাভিমুখী আর CD নিম্নাভিমুখী, কিন্তু এই দুই সরলরেখা বরাবরই প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান একই। এক্ষেত্রে বলে নেওয়া প্রয়োজন যে কোন অপেক্ষকের প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ সেই অপেক্ষকের রেখচিত্রে আঁকা সরলরেখা বা বক্ররেখার ঢাল বা প্রবণতার (slope) সমান।
যেমন বলা হয়েছে সরলরেখা বরাবর প্রবণতা অর্থাৎ প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান সব বিন্দুতে একই হয়। কিন্তু বক্ররেখার ক্ষেত্রে তা হয় না, সেখানে অন্তত কিছু বিন্দুতে প্রবণতার মান আলাদা আলাদা হয়। তাহলে প্রশ্ন উঠবে বক্ররেখার বিভিন্ন বিন্দুতে প্রবণতার মান মাপা হবে কী করে? এর উত্তর হল বক্ররেখার কোন বিন্দুতে তার প্রবণতার মান হল সেই বিন্দুতে তার যে স্পর্শক সরলরেখাটি আঁকা হয়েছে সেই সরলরেখার প্রবণতার সমান। চিত্র ২-কে মন দিয়ে দেখলে এই ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝা যাবে। যেমন বক্ররেখার বিন্দু P-এ ঐ রেখাটির প্রবণতা হল EF সরলরেখার প্রবণতার সমান, আবার বিন্দু Q-এ বক্ররেখাটির প্রবণতা হল GH সরলরেখার প্রবণতার সমান।
এবার চিত্র ২-এর বক্ররেখাটাকে একটু ভালো করে লক্ষ করে দেখো, কোথাও রেখাটা নীচের দিকে বেঁকেছে, আবার কোথাও উপরের দিকে ফুলে উঠেছে। বক্ররেখার যে অংশ অনুভূমিক (horizontal) ও উল্লম্ব (vertical) অক্ষের দিকে ফুলে থাকে তাকে বলা হয় উত্তল (convex), আর যে অংশ অক্ষগুলোর উল্টোদিকে ফুলে থাকে, তাকে বলা হয় অবতল (concave)। তাহলে কোনও অপেক্ষকের রেখচিত্র আঁকতে হলে তাহলে আমাদের দুটো জিনিস জানাটা জরুরি – এক, অপেক্ষকটা সরলরেখার মতো দেখতে না বক্ররেখার মতো, আর দুই, অপেক্ষকটা উত্তল না অবতল না খানিক উত্তল খানিক অবতল।
এইসব আলোচনার পর একটা বিষয় বলা যেতে পারে; ধরো কোনও একটা অপেক্ষক আছে যার রেখচিত্র একটা বক্ররেখা, এবার যদি তার পুরো domain জুড়ে সেই বক্ররেখার স্পর্শকগুলোর ঢাল সবসময় ধনাত্মক থাকে, অর্থাৎ সোজা কথায় বক্ররেখাটা সবসময় বাঁদিক থেকে ডানদিকে তার পুরো রেখচিত্র জুড়েই ওপরদিকে মুখ করে এগোতে থাকে, কিংবা ঠিক তার উল্টোটা অর্থাৎ পুরো রেখচিত্র জুড়েই নীচের দিকে মুখ করে বাঁদিক থেকে ডানদিক বরাবর নামতে থাকে, তাহলে এই দুই ক্ষেত্রেই অপেক্ষকটাকে বলা হবে monotonic অপেক্ষক। অন্যদিকে যদি অপেক্ষকের রেখচিত্র বাঁদিক থেকে ডানদিকে যাবার সময় কিছুদূর ওপর দিকে উঠতে উঠতে হঠাৎ আবার নীচের দিকে নামতে শুরু করে কিংবা উল্টোটা মানে বাঁদিক থেকে ডানদিকে যাবার সময় নীচের দিকে নামতে নামতে হঠাৎ ওপরদিকে উঠতে শুরু করে তাহলে সেই অপেক্ষককে বলা হয় non-monotonic অপেক্ষক। Non-monotonic অপেক্ষকের রেখচিত্রে এই ওঠানামা ব্যাপারটা কিন্তু অনেকবারও হতে পারে। অর্থাৎ ব্যাপারটা যা দাঁড়াল তাতে কোনও অপেক্ষকের রেখচিত্রে যদি কোনও ওঠানামা না থাকে তাহলে সে হল monotonic অপেক্ষক আর যদি থাকে তাহলে সে হল non-monotonic অপেক্ষক।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে নিলামে ক্রেতা কী দর হাঁকবে সেই নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হঠাৎ এত অন্তরকলজ, অপেক্ষক, রেখচিত্র, monotonic আর non-monotonic অপেক্ষক নিয়ে মাথাব্যথা শুরু হল কেন? রোস বাপু, কারণ আছে। মনে করে দেখ, আগেই বলা হয়েছিল যে নিলামে দর হল দরদাতাদের মূল্যায়নের অপেক্ষক (পর্ব ৫ দেখো)। আর এদিকে দরদাতাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে জানাটা কয়েকটা কারণে বিশেষ জরুরি, তা সে সুদক্ষ বণ্টনই হোক কিংবা সর্বোচ্চ প্রত্যাশিত বিক্রয়লব্ধ আয় সুনিশ্চিত করাই হোক। সুতরাং দর জানতে পারলে মূল্যায়নের হদিশ পাওয়া সহজ হয়ে পড়ে। আর তাতে যারা নিলাম করছে তাদের যে সুবিধে হয় তা বলাই বাহুল্য।
এবার কথা হল যারা নিলাম করছে তারা তো নিলামের পর এমনিতেই দর জেনে যাচ্ছে। তাহলে আগে থেকে এত মাথা খারাপ করার কোন দরকার আছে কি? এখানে যেটা মনে রাখতে হবে সেটা হল, দর কত হতে পারে তার ধারণাটা নিলামের আগে থেকেই থাকা দরকার, তা সে যারা নিলাম করছে তাদেরই হোক বা যারা নিলামে দর হাঁকছে তাদের। প্রত্যেক ক্রেতা কত দর হাঁকতে চলেছে সেটা তাকেও আগে থেকে ভেবে নিতে হয়, আর সেই ভাবনাটার জন্য তাকে মাথার মধ্যে কিছু অঙ্ক কষতেই হয়। সেই অঙ্কটা কি? সে চায় যে নিলাম থেকে তার যে প্রত্যাশিত উপযোগিতা আসতে চলেছে সেটাকে সবচেয়ে বেশি মানে নিয়ে যেতে। আর এই সবচেয়ে বেশি মানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা পুরোটাই প্রথম আর দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
ব্যাপারটা একটু সহজভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাক। ধর একটা অপেক্ষক আছে যার রেখচিত্রটা হল চিত্র ৩ (ক) এর abcde বক্ররেখার মত।
ভালো করে দেখলে দেখতে পাবে, a থেকে b তে বক্ররেখাটা ঊর্ধ্বমুখী, b থেকে c হয়ে d পর্যন্ত বক্ররেখাটা নিম্নমুখী আর d এর পর আবার ঊর্ধ্বমুখী। তার মানে a থেকে b পর্যন্ত এই বক্ররেখার ঢাল বা প্রবণতা ধনাত্মক আর b এর পর তা ঋণাত্মক হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই বক্ররেখার মাঝে কোথাও ছেদ বা বিরতি নেই। তার মানে মাঝে কোথাও এই প্রবণতা অবশ্যই শূন্য হয়েছে, কারণ ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক মানে যাবার জন্য, বিশেষত মাঝে কোন ছেদ ছাড়াই, শূন্য মানকে এড়িয়ে যাবার কোন পথ নেই। তাহলে বক্ররেখাটা ঐ b বিন্দুতে একটা সর্বোচ্চ মানে পৌঁছে যাচ্ছে আর সেখানে তার প্রবণতা হয়ে যাচ্ছে শূন্য, আর এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা জেনে গেছি যে প্রবণতা শূন্য হবার অর্থ হল ঐ বিন্দুতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ শূন্য। ঠিক একই ঘটনা ঘটে যখন বক্ররেখার প্রবণতা ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মকে বদলায়। সে ঘটনাটা ঘটছে যখন বক্ররেখাটা c থেকে d হয়ে e এর দিকে যাচ্ছে, d বিন্দুতে এই বক্ররৈখিক অপেক্ষকটার মান সবচেয়ে কম হচ্ছে, আবার তারপর বাড়তে শুরু করছে, সুতরাং অবশ্যই মাঝে প্রবণতার মান ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মকে আসার পথে শূন্য হচ্ছে। তার মানে এখানেও প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য। কোনও অপেক্ষকের কোনও বিন্দুতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হলে তার রেখচিত্রে ঐ বিন্দুতে স্পর্শকটা অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল হয়, যা b আর d দুটো বিন্দুতেই হচ্ছে, খেয়াল কর CD আর GH হল যথাক্রমে b আর d বিন্দুতে স্পর্শক আর দুটোই অনুভূমিক অক্ষের সমান্তরাল।
তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে যখনই কোন অপেক্ষকের মান সবচেয়ে বেশি বা সবচেয়ে কম হওয়ার বিষয় থাকে তখনই সেখানে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হতেই হয়। তাই এখানে অবশ্যই লক্ষ্য করা প্রয়োজন যে, কোন অপেক্ষকের কোন বিন্দুতে প্রথম শ্রেণীর অন্তরকলজের মান শূন্য না হলে সেই বিন্দুতে ঐ অপেক্ষকের সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মান থাকা সম্ভব নয়। অতএব কোন অপেক্ষকের কোনও বিন্দুতে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মান আছে কিনা তা জানতে প্রথমে যেটা দরকার তা হল ঐ অপেক্ষকের কোন কোন বিন্দুতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হচ্ছে তা খুঁজে বের করা। যদি এমন কোন একটি বিন্দুও না পাওয়া যায় যাতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য, তাহলে ঐ অপেক্ষকের কোন সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মানের অস্তিত্ব নেই। ভেবে দেখ পুরোপুরি monotonic যেসব অপেক্ষক আছে তাদের ক্ষেত্রে কোনও বিন্দুতেই প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হয় না আর এদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মানের কোন অস্তিত্ব নেই।
সুতরাং এক কথায় বললে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হওয়াটা কোন অপেক্ষকের সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন মান থাকার আবশ্যিক বা জরুরি শর্ত বা necessary condition। তাহলে এবার যে প্রশ্নটা অবধারিতভাবে উঠে আসছে সেটা হল, যদি সবচেয়ে বেশি আর সবচেয়ে কম দুটো মানের ক্ষেত্রেই প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ শূন্য হয় তাহলে কি করে বোঝা যাবে কোনটা সবচেয়ে বেশি আর কোনটা সবচেয়ে কম? এখানেই আসরে নামছে দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজ। চিত্র ৩(ক) এর ছবি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে b হল সেই বিন্দু যেখানে ঐ বক্ররৈখিক অপেক্ষকের মান সবচেয়ে বেশি আর অন্যদিকে d হল সেই বিন্দু যেখানে মান সবচেয়ে কম। এবার মন দিয়ে লক্ষ্য কর, a থেকে b তে যাওয়ার সময় প্রবণতার মান ক্রমশ কমছে এবং b এর পরে সেই কমা চলতেই থাকছে। দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজ আমাদের জানায় প্রবণতার পরিবর্তনের হার, তাহলে b তে আমরা দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ঋণাত্মক পাব। অন্যদিকে d তে যদি দেখি, তাহলে c থেকে d হয়ে e তে যাবার সময় প্রবণতা বাড়ছে, সুতরাং এক্ষেত্রে দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ধনাত্মক, যা কিনা d বিন্দুতেও সত্যি। তাহলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াল যে সবচেয়ে বেশি মানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ঋণাত্মক আর সবচেয়ে কম মানের ক্ষেত্রে তা ধনাত্মক। আর একটু গুছিয়ে বললে এভাবে বলা যেতে পারে – কোনও অপেক্ষকের কোনও এক বা একাধিক বিন্দুতে যদি প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হয়, তাহলে সেই বিন্দুতে বা বিন্দুগুলোতে দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান বের করতে হবে, সেই মান যেখানে ধনাত্মক সেখানে অপেক্ষকের মান সবচেয়ে কম আর যেখানে ঋণাত্মক সেখানে অপেক্ষকের মান সবচেয়ে বেশি। এই দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হওয়াটা অপেক্ষকের যথাক্রমে সবচেয়ে কম আর সবচেয়ে বেশি মানের জন্য যথেষ্ট শর্ত বা sufficient condition।
তাহলে এবার যে প্রশ্নটা প্রায় অবধারিতভাবে উঠে আসছে, সেটা হল একটা অপেক্ষকের কোনও বিন্দুতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হলেই কি সেখানে ঐ অপেক্ষকটার সবচেয়ে বেশি বা কম মান থাকবে? উত্তর হল, থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। কখন থাকবে তা তো আমরা এইমাত্র দেখলাম, যখন দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ঐ বিন্দুগুলোতে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হবে। কিন্তু যদি কোনটাই না হয়? যদি দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হয় তাহলে? তাহলে চিত্র ৩(খ) এ mnpqr বক্ররেখাটাকে দেখ।
এর p বিন্দুতে প্রবণতা শূন্য, IJ সরলরেখাটা একই সঙ্গে এর স্পর্শক আবার সেটা mnpqr বক্ররেখাকে ছেদও করছে। হঠাৎ ভাবতে গেলে মনে হবে এটা কি করে সম্ভব? এটা আসলে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সম্ভব। ভালো করে নজর কর, p বিন্দুর বাঁদিকে বক্ররেখাটা অবতল আর ডানদিকে উত্তল। এখানেও দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের একটা ভূমিকা রয়েছে। যখন কোনও বক্ররেখার ঢাল ধনাত্মক হারে বদলায়, তখন তার দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরলজের মান ধনাত্মক হয় আর তখন বক্ররেখাটা উত্তল হয়। ঠিক উল্টোটা হয় অবতল বক্ররেখার ক্ষেত্রে, তার ঢাল বা প্রবণতার মান ঋণাত্মক হারে বদলাতে থাকে। এখন কোন বক্ররেখা যা হল কোন এক অপেক্ষকের রেখচিত্র, তার ঢাল যদি কোথাও উত্তল, আবার কোথাও অবতল হয়, আর সেই বক্ররেখার মাঝে কোথাও কোনও বিরতি না থাকে, তাহলে সেই বক্ররেখায় অন্তত একটা বিন্দু থাকবে যেখানে দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক কিংবা ঋণাত্মক থেকে ধনাত্মক মানে পরিবর্তিত হবে আর সেজন্য সেখানে সেই মান শূন্য হবে। এমন বিন্দুকে পোশাকি ভাষায় point of inflexion বলে ডাকা হয়। চিত্র ৩(খ) তে p বিন্দুটা হল এমনই এক বিন্দু। তবে এক্ষেত্রে যেটা মনে রাখা দরকার সেটা হল, অপেক্ষকের কোথাও প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ শূন্য হোক বা না হোক, point of inflexion থাকতেই পারে, এর জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হল কেবলমাত্র দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজের মান শূন্য হওয়া। চিত্র ৩(ক) তে c বিন্দুটাকে লক্ষ্য কর, এই বিন্দুতে প্রথম ক্রমের অন্তরকলজ শূন্য নয়, কিন্তু দ্বিতীয় ক্রমের অন্তরকলজ শূন্য, ওখানেও বক্ররেখা অবতল থেকে উত্তল হয়ে যাচ্ছে। একই ভাবে কোথাও কোথাও উত্তল থেকে অবতলেও পরিবর্তন হতে পারে, মোট কথা উত্তল থেকে অবতল হোক বা উল্টোটা, আমরা point of inflexion পাব।
যাই হোক, ফেরা যাক সেই সবচেয়ে বেশি আর সবচেয়ে কমের গল্পে। নিলামে দর হাঁকার সময়, যে দর হাঁকছে, ধরে নিই সে ক্রেতা, সে নিজের প্রত্যাশিত উপযোগিতা সবচেয়ে বেশি করতে চায় একথা আমরা আগেই বলেছি। এতক্ষণের এত লম্বা ব্যখ্যান থেকে বুঝে নিলাম কি করে কোন কিছুকে সবচেয়ে বেশি করা যায়। যেভাবে ক্রেতা কত দর হাঁকবে ঠিক করে, সেই অঙ্কটা তো অন্য যে কেউই কষে ফেলতে পারে একই ভাবে, ক্রেতার সঙ্গে তাদের তফাত শুধু এটুকুতেই হবে যে ক্রেতা তার নিজের মূল্যান জানে আর বাকিরা জানে না, তারা শুধু এটুকু বের করতে পারবে ক্রেতার দর তার মূল্যায়নের অপেক্ষক হিসেবে কেমন হবে, অর্থাৎ এক কথায় বললে ক্রেতার দর অপেক্ষক বা bid function নির্ণয় করে ফেলতে পারবে। এই তথ্যটা এর পরে আরও অনেক কিছু বের করতে দারুণ সাহায্য করে। সেগুলো এরপর ধাপে ধাপে জানতে পারবে।
ক্রমশ
(চিত্র- লেখক)
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর