শীতকালটা সাহেবদের দেশের থেকে আমাদের দেশে একেবারে আলাদা। ওখানে শীত ধূসর, বিবর্ণ, হাড়ে কাঁপন ধরানো। আমাদের শীত মানে উজ্জ্বল নীল আকাশ, বাতাসে উপভোগ্য হিমেল ছোঁয়া, ওপেন এয়ার পিকনিক টাইম, ডালিয়া, পিটুনিয়া, গাঁদার রংবাহার। এই রঙ বলতে মনে পড়ল শীতকালে রামধনুর সাতটা রঙের ছড়াছড়ি দেখবার জন্য সেরা জায়গা কোনটা বলো দেখি? সে হল সবজির বাজার। সবুজের কম সে কম একশোরকম শেড পাবে। মটরশুঁটি, পালং শাক, মুলো শাক, সর্ষে শাক, মটর শাক, প্রত্যেকের সবুজ আলাদা। কাঁচা তেতুলের ধূসর খোসায় নখ দিয়ে হাল্কা কুড়ে দিলে দেখবে তার তলায় আরেকরকম শেডের সুগন্ধী সবুজের আস্তর। বাঁধাকপি আবার আর এক ওস্তাদ। তার একেবারে বাইরেটা। উজ্জ্বল ঘন সবুজ। তারপর পাতা ছাড়াতে ছাড়াতে যত ভেতরে ঢুকবে ততই সবুজের শেড হালকা থেকে আরও হালকা হতে হতে সাদার দিকে এগোবে। শেষে ভেতরে পৌঁছুলে ধবধবে সাদা। ঠিক যেন রঙের দকানের কালার শিটের একগাদা শেড একের ওপর আরেক করে সাজানো। তীব্র বেগুনি থেকে হালকা বেগুনি হয়ে ধবধবে সাদা, কিংবা সবুজ, কিংবা বেগুনি সাদার কম্বিনেশন কালার নিয়ে বেগুনও কম যায় না রংবাহারে। আছে বিপ্লবী টোমাটো- যেন একগাদা সকালবেলার সূর্য টিকমিষ্টি স্বাদ নিয়ে এসে দোকানদারের ঝুড়িতে আলো করে বসেছে। আর আছে মেটে আলু। এই সময়টায় ওঠে তার এলোমেলো গড়ণের ফুলোফুলো গায়ে কালচে, বাদামি, লাল, বেগুনি, নানান রঙের ঝলকানি খেলে যায়। কোথাও সবুজ পেঁয়াজকলির মাথায় সাদা ফুল আলো হয়ে ফোটে, কোথাও চুকাই তার পোড়া লাল রঙ নিয়ে গুটিয়ে রাখা বেনারসির মত স্তূপ হয়ে জমে থাকে ব্যাপারীর ঝুড়িতে। অথবা ক্যাপসিকাম। সবুজ, হলুদ, লাল রঙের ঝলকানি ছুঁড়ে রানির মত সে সভা আলো করে বসে থাকে। কোঠাও দেখবে চককে কালো, টুকটুকে লাল আর চারপাঁচ রকম সবুজের শেড নিয়ে হাজির মরশুমি লঙ্কার দল। ওহো বলতে ভুলেছি, সফেদ ফুলকপি, সবুজ ব্রকোলি এদের পাশাপাশি ফুলকপির দুনিয়ায় বেগুনি আর হলদে ফুলকপিদেরও আবির্ভাব ঘটছে আজকাল শীতের বাজারে।
তাই বলি, শীতকালে, চিড়িয়াখানা, ফ্লাওয়ার শো এই সবকিছুর সঙ্গে সবজির বাজারেও ঘুরে এসো, আর কত রকমের রঙ আর একেক রঙের কতরকমের শেড দেখতে পেলে সেইটে খাতায় লিখে নিও তো! দেখো তো লিস্টটা কত বড় হয়!
ভালো কাটুক শীতকাল।
শুভেচ্ছায় তোমাদের জয়ঢাকি দাদাদিদিরা