ঘুম পর্ব
রামায়ণে রাবণ রাজা, নাম জানো তো তার
সারাজীবন বইতে হল দশটি মাথার ভার।
রাবণ-কথা থাকুক না হয়, তার যে সহোদর
কুম্ভকর্ণের কাণ্ড দেখি, অবাক মনোহর।
কুম্ভকর্ণ নাম কেন তার বলতে পার কেহ?
কলসিসম কান দুটি তার হস্তীসম দেহ।
ছ’টি মাস ঘুমের ফাঁকি একটি দিন জীবন,
ঘুমের ঘোরে নাক ডাকলে সবার জাগরণ।
জাগলে পরে খিদের চোটে সামনে যাকে পায়,
কপাৎ করে মুঠোয় পুরে আস্ত গিলে খায়।
সারাটি দিন খেয়েই চলে থামে না তো মোটে,
সন্ধে হলেই পেট খামচে টয়লেটে সে ছোটে।
বিছানাতে যেই না পড়া, অমনি চিৎপাত
একঘুমতে ছ’মাস কাবার ছ’মাসই তার রাত।
নাসা গর্জন চলতে থাকে ছয়টি মাস ধরে,
শব্দনাদে ধরছে ফাটল প্রাসাদ প্রাচীরে।
রাবণ রাজার চিন্তা ভীষণ, ফাটছে মাথার কোষ
থামবে কীসে কুম্ভ-নাসার বজ্রনির্ঘোষ?
দশটি মাথা ঘুলিয়ে শেষে বুদ্ধি হল বার,
নাকের ফুটোয় কষ্টে আঁটো কম্পু-সাইলেন্সর।
বলব কী ভাই, বলছি শোনো, বলছি কানে কানে
মাইরি বলছি এসব কথা কয়নি রামায়ণে।
পঁচিশ দিনে পাঁচশো দানব, সঙ্গে বিশ্বকর্মা
গড়ল নালী, লৌহ ঢালি, পঁচিশ মিটার লম্বা।
তার মধ্যে পুড়ল কত সিলিকনের চিপ,
ফাটিয়ে বোমা টেস্ট হয়ে যায়, শব্দ শুধু ‘বিপ’।
শক্ত কাচের নাকের ঢাকায় জোরসে কেটে থ্রেড,
হেঁইয়ো বলে পরিয়ে দিল, বলল লোকে গ্রেট।
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, প্রশান্ত রাজ লঙ্কায়
নাসা-শব্দ হল জব্দ, জনগণ সব ফিরে যায়।
বড়ো ক্লান্ত, দাও ক্ষান্ত, আসছি একটু ঘুরে
জাগরণের কর্মকাণ্ড শুনবে ব্রেকের পরে।
জাগরণ পর্ব
পাগল রাবণ করলি হরণ রামের জায়া জানকী,
রাম বিমনা পার পাবি না রামের শক্তি জানো কি?
রামের সৈন্য! বানর দৈন্য শক্তি কত ওর
বকছে মেলা, বুঝবে ঠেলা যুদ্ধ লাগলে ঘোর।
লাগল যুদ্ধু দ্যাখ রে বুদ্ধু মরছে কাদের সেনানী।
মরল স্বজন ইন্দ্রপতন কাঁপছে দেখ ধরণী।
কেউকেটা সব পড়ছে কাটা মরছে বাণের ঘায়ে,
ঘরের মধ্যে রাবণ রাজা কাঁপছে ভীষণ ভয়ে।
বোলাও তবে কুম্ভকর্ণ জলদি টেনে তোল,
দেখব কত শেষ করে ও বানর সেনার দল।
বোলাও তো ঠিক বললে হবে?
একমাসও তো হয়নি সবে
কুম্ভভায়া নিদ্রিত,
এখন তাকে জাগায় কেডা
কার সে এমন বুকের পাটা
রাক্ষসেরা ভয়ভীত।
তবুও যদি সাহস করে
মদ্দা রাজি বুকের জোরে
নিদ্রাপাশ টুটবে না,
শব্দহরা আঁটা মুখে
ফুরফুরিয়ে ঢুকছে নাকে
হিমেল বায়ু সুগন্ধা।
আনো তবে জলদি, যত আছে বাদ্যি
ভেঁপু শিঙা নাল খোল, খঞ্জনি শোরগোল
বেসুরো নিনাদ,
কর্কশ সেই সুরে উঠিলে পামরে
অকাল ক্ষুধার তরে ছুটিবে সমরে
শত্রু সাক্ষাৎ।
শোবার ঘরে ভীষণ জোরে উঠল বেজে বাদ্যি,
শব্দে তারি আকাশ কাঁপে, ফাটল ধরার মৃত্তি।
খবর গেল রাষ্ট্রসংঘে, বসল টেবিল গোল
শব্দমাত্রা কত জানো? লক্ষ ডেসিবল।
বন্ধ করো শব্দদূষণ, মরব নাকি মোরা?
দেশবিদেশে চলল ভাষণ থামরে হতচ্ছাড়া।
বল দেখি লঙ্কাপতি এখন করে কী
চুলকে দাড়ি ছিঁড়ল পুথি মুনি বাল্মীকি।
লঙ্কাপতির ঘুরছে মাথা বড্ড খারাপ মন,
শেষপর্যন্ত দশানন করল আমায় ফোন।
বলল কেঁদে, বাঁচা রে ভাই উপায় কর বার
নইলে আমি সাধু হব, ত্যাজিব সংসার।
অভয় দিচ্ছি, কিন্তু হে ভাই, ধৈর্য একটু ধর
একটু পরে বরং আমায় মোবাইলে ট্রাই কর।
নিচ্ছি খবর যত আছে কনসালটেন্সি ফার্ম,
রাস্তা তারা বাতলে দেবে বলছি কনফার্ম।
তবে কিনা ছাড়তে হবে লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা,
রাজি আছ! তবে তুমি লাগাও সুখনিদ্রা।
হ্যালো হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ? মন দিয়ে ভাই শোনো
যেভাবেই হোক কয়েকশো টন নস্যি তুমি কেনো।
শব্দহরা নাও খুলে নাও থ্যাবড়া নাকের থেকে,
খুঁচিয়ে লাঠি নস্যি ঢোকাও কাপড় দিয়ে ছেঁকে।
হাঁচির চোটে উঠবে জেগে ঘুমের দফারফা,
পেমেন্ট দিতে ভুল কোরো না, করেছ ভাই রফা।
আজ চটজলদি খবর শিরোনামে
কুম্ভকর্ণের খবর শোনাই প্রথমে।
আট কুইন্টাল নস্যি নিয়ে অবশেষে
ঘুম ভাঙিল। কিন্তু বিপদ অন্য বেশে।
দমকা হাঁচির ঘনঘোর ধূলিঝড়ে
যুদ্ধ গিয়েছে থেমে। সকলে হেঁচে মরে।
রাবণ সরকারের ত্রাণ তহবিলে
রুমাল করুন দান। সবে মিলে।
এরপরে ভাই যা হল ভাগ্যে লবডঙ্কা,
স্বর্ণমুদ্রা হজম করে রামের হাতে অক্কা।
রাগে আগুন তেলে বেগুন নো মোর বিবরণ
আরো বিশদ জানতে হলে খোলো রামায়ণ।
জয়ঢাকের ছড়া লাইব্রেরি এই লিংকে