জয়তী রায়ের আগের গল্প- চোখ, গজুমামা জিন্দাবাদ, আলোর কৌটো , আলো আসবে
গজুমামা ভূত হিসেবে একেবারেই অকেজো একথা অনেকেই জানে। ভূত নামের কলঙ্ক আরকি! বড়োমামা বলবেন, “আরে দূর। গজু আবার ভূত হল কবে থেকে? ও তো নিজেই এত ভীতু!” বলে ফোঁৎ করে নাক ঝেড়ে ফের বলবেন, “মরার আগে তো কত কী খেত। এখন শুধু বাতাস খেয়ে খেয়ে বেঁচে যে আছে এই ঢের। তবু থালা সাজিয়ে খাবার দি।
মামী শুনে তেড়ে আসতেন, “বলি, মাথায় পোকা আছে না কি তোমার? মরা মানুষকে বলছ বেঁচে আছে?”
মামাও সমান তালে বলবেন, “গজু মরেছে? তবে, কামিনী গাছের নীচে কে আসে শুনি? রোজ রাত্তিরে? কে তোমার বাবার ওষুধ পৌঁছে দিল তিন ক্রোশ দূরে গিয়ে? নিজে তো ভুলে মেরে, ওষুধ নিয়ে নৈহাটি চলে গিয়েছিলে।”
মামীর মুখে এক গাল মাছি। সে এক কান্ড বটে। মামীর বাবা ছিলেন অসুস্থ। তাঁকে দেখতে গিয়ে পাশে রাখা জরুরি ওষুধ ভুল করে নিজের ব্যাগে পুরে নিয়ে চলে এসেছিল মামিমা। রাত বারোটায় হুঁশ এলে কী কান্না, কী কান্না, “বাবা আমার আর বাঁচবে না।”
বাড়িশুদ্দু লোকের আক্কেল গুড়ুম। গালে হাত দিয়ে বসে ভাবছে, করে কী? এখন চেঁচামেচি করেও লাভ নেই। তা কিছুক্ষণ পরে সদর দরজায় কড়া নাড়ল কেউ। এক ছোকরা দাঁড়িয়ে… “দাদু পাঠালেন গ দিদি। পেন্নাম হই। অসুদটা দ্যান দেহি।”
চিন্তাভাবনা তখন আর কে করে? ল্যান্ডফোনের যুগ। ফোন করো, যাচাই করো ওসব যুক্তি আর কাজ করেনি। মিনিটদশেক পরে মামীর বাবা নিজেই ফোন করলেন, “ভাগ্যিস ওষুধ পাঠিয়ে দিলি! রাতে খেতে গিয়ে দেখি ওষুধ নেই। ভাগ্যিস পাঠিয়ে দিলি।”
সবাই বুঝল ব্যাপারটা। মামী হুঁ হুঁ করে উত্তর দিয়ে ফোন নামিয়ে রাখল।
আমার বাবা বরাবর যুক্তিবাদী। ভূত আত্মা অলৌকিকত্ব একদম মানতে পারতেন না। কিন্তু, গজুমামার ব্যাপারে একটু খটকা, একটু রহস্য যেন ছায়ার মত বাবার ঝকঝকে চিন্তার গায়ে লেগে থাকত। যদিও মুখে স্বীকার করতেন না কখনো, তবু জোরালো প্রতিবাদ করতেন না, যেটা করতেন বাড়ির রবিবারের আড্ডায়।
আমাদের বৈঠকখানায় আড্ডার আসর বসত। আড্ডা এবং আলোচনা এবং তর্ক। বাবার বন্ধুবান্ধব, জ্ঞানীগুণী বিদগ্ধ ব্যক্তিগণ বিনা তর্কে নাহি মানিব…এইরকম পণ করে বেশ গুছিয়ে বসে পড়তেন। একদিন ওই সভায় মৃত্যু, আত্মা ইত্যাদি নিয়ে কথা উঠল। বাবা গমগম করে বলে উঠলেন যে, ওসব নিতান্ত বুজরুকি। কৈলাস জেঠু ধীরস্থির মানুষ। সভার মধ্যমণি। সাদা ধপধপে ধুতি পাঞ্জাবি, সোনালি চশমায় জ্ঞানী মানুষ। ভূত বলে কিছু নেই- বাবার এই মন্তব্যে কৈলাস জেঠু চশমা খুলে হাতে নিয়ে মৃদু গলাখাঁকারি দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “এমন বিশ্বাস আমিও করি। শুধু একটা খটকা, বুঝলে, তোমাদের বলা হয়নি ঘটনাটা…একটা ধন্দ মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“খুলে বলুন কৈলাস দা!” নরেনকাকু অধৈর্য হাতে পাইপ ধরালেন।
“গত বছর স্ত্রী-বিয়োগের পরে কাশী গেছিলুম। কারণ কিছুই না। দিন কয়েক আরাম করা। কোথাও গেলে সব গুছিয়ে রেডি করে দেয় তোদের বৌদি। সে জো আর নেই। তাই সেবার নিজেই সব ঠিক করে নিয়ে চলে গেলাম। ভালোই কাটল দিন পাঁচ। ফেরার দিন রাতে ট্রেন। ভালোই। ঘুমুতে ঘুমুতে পৌঁছে যাব।
“মাঝরাতে একবার ট্রেন থামল। অচেনা স্টেশন। হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে একটা সিগারেট খেয়ে, যেই ট্রেনে উঠতে গেছি, কে যেন শক্ত করে চেপে ধরে আছে এমন মনে হল। রাতের ঝিমন্ত প্ল্যাটফর্ম। আমি প্রাণপণে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। দেখতে দেখতে, আমার ছোট্ট সুটকেসসহ ট্রেন চলে গেল, আমিও ধপ করে বসে পড়লাম। শক্ত বাঁধন আর নেই। ওই ঠান্ডায় ঘেমে গেছি একেবারে। পরে জানতে পারলাম, মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েছিল ওই ট্রেন।”
থামলেন কৈলাসজ্যাঠা। নিস্তব্ধ ঘর। বাবা গলাখাঁকারি দিয়ে বললেন, “ইয়ে কৈলাসদা, আমি সম্মানের সঙ্গে বলছি, নিকটজনের আত্মা বিপদে পাশে দাঁড়ায় বলছেন? কোনো প্রমাণ আছে?”
“কেন হে, তোমার ছেলেই তো নৈহাটির পুকুরে ডুবে গিয়েছিল গতবার, মনে নেই? তখন বাঁচালো কে? বুঝলে চিত্তরঞ্জন, সব কিছুর ব্যাখা হয় না!”
“কোনো কারণে আপনার শরীর খারাপ লাগছিল কৈলাস দা, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে উঠতে পারেননি, তারপর দুর্ঘটনা। ব্যস দুয়ে দুয়ে চার! আপনি ভাবলেন বৌদি!”
কৈলাস জেঠু রাগ রাগ মুখে দু’কাপ চা বেশি খেয়ে বললেন, “ওহে চিত্ত, এমন একদিন আসবে যখন তোমার যুক্তির উত্তর তুমি নিজেই পাবে না।”
***
সেইসময় দাদার বারোক্লাসের পরীক্ষা শেষ। দিদি সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ার। সামনে দুর্গাপুজোর ছুটি। ঠিক হলো, পুরো পরিবার নেপাল বেড়াতে যাবে। বলে রাখা ভাল, বাবা অপছন্দ করেন বলে, আমাদের বাড়িতে গজুমামা প্রসঙ্গ আলোচনাই হত না। তার উপরে দিদি সায়েন্স, দাদা কমার্স। তারা দুজনেই বাবার চ্যালা। যা ফিসফিস-গুজগুজ…আমি মুনিয়া ভাই আর মা।
বাপের বাড়ির প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোন মেয়ের আর ভালো লাগে? ভূত হোক। তবু সে বাপের বাড়ির ভূত। তাই মা বলতেন, “সব জানা আছে। নিজের বাড়ির কেউ হলে সব বিজ্ঞান যেত জলের তলায়। আর গজুদাদা পরিবারের একজন। মায়ায় বেঁধে আছে।”
যাক গে যাক। বাবাকে আমরা সমীহ করতাম। জ্ঞানী এবং মানী মানুষ। তার উপরে জীবনে প্রথম বার প্লেনে চড়ে ঘুরতে যাবার আনন্দে, সাময়িকভাবে গজুমামা একটু সরে গেলেন বলা যায়।
***
ছবির মত রাজ্য নেপাল। বাবার অসীম ধৈর্যে একটি একটি করে জায়গাগুলোকে সুন্দর করে বোঝানোর জন্য বেড়ানো আরো সুন্দর হয়ে উঠল।বাবা বললেন, “শরীর যেমন ঘুরবে, তেমনি মনকেও জাগিয়ে রাখবে। আগে একটু জেনে নিলে জায়গাটা ভালোবেসে ঘুরত্র পারবে।
“নে মানে পবিত্র, পাল মানে গুহা। এখানে গৌতমবুদ্ধর জীবন কেটেছে। নেপালের রূপনদেহী জেলার লুম্বিনীতে ওঁর জন্ম হয়। বেশ কয়েক দশক বৌদ্ধধর্মের জোর থাকলেও, ধীরে ধীরে হিন্দু ধর্ম আবার গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। খুব নির্মমভাবে বৌদ্ধদের নির্যাতন শুরু করে। প্রাণের ভয়ে, মহা মহা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা গোপন থেকে গোপনতর গুহায় আত্মগোপন করেন। এরপর বুদ্ধদেবের ভিক্ষাপাত্রটি নিয়ে শুরু হল রাজনীতি। হিন্দুধর্ম গুরুরা সেই অমূল্য পাত্র দখল করার বহু চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজও তার সন্ধান কেউ পায়নি। শত চাপের মুখেও, শত নির্যাতনের পরেও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম পরিবর্তন করেনি। ভিক্ষাপাত্রটির খোঁজও কেউ পায়নি। তবে আজ আবার ধীরে ধীরে বৌদ্ধ প্রসার হচ্ছে।”
এত কথা বলে একটু দম নিয়ে, বাবা ফের বললেন, “নেপালীদের সংস্কৃতি আর ধর্মের সঙ্গে, দেশের গুহাগুলির যোগ নিবিড়। তাই নাম সার্থক।”
বাবার কথা শুনতে শুনতে মন কল্পনায় পাখা মেলছিল। দেশের নাম কিভাবে দেশের চরিত্র- ধর্ম- রাজনীতি-বহন করে নিয়ে বেড়াচ্ছে, এই ‘নে পাল’ নামটি তার উদাহরণ।
বাবা বললেন, “সকলে যা দেখে, আমরাও তা দেখব বইকি। কিন্তু সেই সঙ্গে খোলা রাখবি ভিতরের চোখ। তবে পাবি দেশ দেখার আসল মজা।”
মা বললেন, “আহা, ছোট্ট শান্ত ছবির মত দেশ। হিমালয় পাহাড়ের রাজকীয় সৌন্দর্যে ঘেরা। আহা!”
কথাটা সত্যি। ১২শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর তলেজু, মন্দির, গুম্ফা, তাল ভৈরব, নওতাল দরবার, চক দেখে দেখে আশ মিটছিল না। একদিন গেলাম, পোখরা লেক। আমাদের গাইড, ছটফটে চঞ্চল ছোকরা—নাম গুরুং–হিন্দি জানে। সবাইকে অবাক করে, দাদা নেপালী ভাষায় জিজ্ঞেস করল, “তিস্র নাম কে হো?”
সবাই হই হই করে ওঠায়, দাদা বেশ উৎসাহ পেয়ে, “খানা খানে ঠাঁয় কহা ছ…” খাবার কোথায় পাওয়া যাবে–এই সব নানা কথা বলতে শুরু করল। যাই হোক, এইভাবে দুদিন কেটে যাবার পরে, বাবা গুরুংকে আসল ইচ্ছেটা প্রকাশ করলেন। আর ঠিক তক্ষুনি বোমা ফাটল।
***
বাবা বললেন, “গুরুং, লারু গুহা কোথায় জানো?”
“লারু গুহা! কেয়া হুয়া বাবুজি?” ফর্সা মুখ লাল করে গুরুং চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করে, “এই কথা কেন বলছেন? কুথায় জানলেন এই গুম্ফার কথা?”
“কেন? কী হল, এরকম করছ কেন?”
টকটক লাল মুখে দেওয়ালে হেলান দিয়ে সিঁটিয়ে দাঁড়ানো বছর কুড়ির পাতলা ছিপছিপে নেপালি ছেলেটি নিমেষে মুখের ভাব পাল্টে বলল, “আমি জানে না বাবুজি। বলেন তো, কাউকে পুছতাছ করি?”
বাবা বাধা দিলেন, “ম্যাপ দেখে বার করব। সমস্যা হল, এটা এক অখ্যাত গুহা। তুমি এই অঞ্চলটা চেন কি?”
“বাবুজি, আমার দাদাজি সব জানে। বুঢ়া হয়েছে। মগর, বহুত কুছ জানে ও। আজ গাঁও যাব? গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি? কালকেই চলে আসব।”
বাবা কিছু তাকে নেপালি রুপি দিলেন। আমাদের ছুটি শেষ হতে আর তিনদিন বাকি।মা কত কী কিনেছে! মা কিছুতেই ওই গুহা দেখতে যেতে রাজি না। বারবার সাবধান করছে। বিদেশে কোনো ঝামেলায় না পড়তে। বাবা শান্ত গলায় বলছেন, “আরে, এটা কিছু নয় গো। আসুক গুরুং।”
***
পরের দিন শুকনো মুখে গুরুং ফিরে এসে যে সংবাদ দিল, তা বেশ ভয়ঙ্কর। হিন্দু রাজত্ব কায়েম হবার পরে, বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার চলে ক্রমাগত। প্রাচীন পুঁথিপত্র কেড়ে নেওয়া হলে, তারা ক্রমাগত লুকিয়ে পড়তে থাকে। তবে সেটা ভয়ে নয়। সুযোগের অপেক্ষায়। নামি বা ঐতিহ্যশালী নয়, ছোটো ছোটো অখ্যাত গুহায় লুকিয়ে রাখত সব। বাবা যে গুহাতে যেতে চেয়েছিলেন, সেটা তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। যার নাম খুব কম লোক জানে। অথচ, এই বিদেশী জানে কী করে? তবে তো ভয়ের কথা! গ্রামের প্রাচীন মানুষ দদাজী শুনেই খুব রেগে গেছেন। অবাকও হয়েছেন। বলেছেন, এই নিয়ে একটা কথাও না বলে, বাবুজি যেন ভালোয় ভালোয় দেশে ফিরে যান। ঘা খাওয়া বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা খুব সাংঘাতিক।
বাবা গুম হয়ে রইলেন। নিজের মনেই বললেন, “পরের বার একলা আসতে হবে।”
মুশকিল হল, গুরুং আর তার দাদু কথা রাখেনি। বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের কাছে খবর পৌঁছে দেয়। এক বিদেশি বাঙালি ওই গুহার খোঁজ করছিল।
এইসব তখন কিছুই জানি না আমরা। গুহা সফর বাতিল হওয়ায়, মন হালকা করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মা ছোট কুকরি, নেপালি পাথরের মালা এই সব কিনছে। বাড়ির একমাত্র ঢাউস ক্যামেরায় সাদা কালো ছবি তুলছে দাদা। মনোরম বিকেল। হঠাৎ, এক গাড়ি এসে থামল ঘ্যাচাং করে। আর কিছু বুঝে উঠবার আগেই, ভাইকে তুলে নিয়ে নিমেষে উধাও হয়ে গেল।
গুরুং যত সরল দেখায় নিজেকে তত মোটেও নয়। ওদের রাগ হয়েছে। সঙ্গে তীব্র বিদ্বেষ। একজন বিদেশী কেন ওই পবিত্র গুহার খোঁজ করবে? হয়ত ওখানেই রাখা আছে, বুদ্ধদেবের ভিক্ষা পাত্র।
বাবা দমে গেছেন। উৎকণ্ঠায়, ভয়ে সবার প্রাণ খাঁচা ছাড়া। মা অঝোরে কাঁদছেন। গুরুং বেপাত্তা। পুলিশ চৌকি থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় ফিরে আসছি হোটেলের দিকে। মা পাগলের মত বাবাকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। দিদি আর আমিও কাঁদছি। বাবার মুখ শুকনো। বিকেল গড়িয়ে রাত। কোনো খাওয়াদাওয়া নেই। বাবা বললেন, “তোমরা আগামী কাল কলকাতা চলে যেও। আমি রইলাম।”
মা চিৎকার করে বলে উঠল, “আমি কিছুতেই যাব না। তুমি এমব্যাসিতে যাও।”
হোটেলের সব লোকজন আমাদের ঘরে আসছে। সবাই বিমর্ষ। রাত কাটল জেগে।
পরের দিন ভোরবেলা পুলিশ চৌকি থেকে ফোন এল। একটি বাচ্চা ছেলে পাওয়া গেছে। ফটোর সঙ্গে মিল আছে।
***
বাবা বললেন, আততায়ীরা নিছক ভয় দেখাতে চেয়েছিল। পরে বুঝেছে, আমার কোনো বাজে মতলব নেই। ফেরত দিয়ে গেল সেই জন্য।
মায়ের কোলের মধ্যে শুয়ে সেদিনের বর্ণনা দিচ্ছিল ভাই…
-ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। অনেক রাতে কী খেতে দিল। তারপর কিছু মনে নেই।
-তোর ভয় করেনি? যখন টেনে তুলল।
-আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। চেঁচিয়ে উঠলাম গজুমামা বাঁচাও।
-গজুমামা?
সকলে হতবাক। এর মধ্যে সে এল কোথা থেকে? একমাত্র মাকেই দেখলাম, এতক্ষণ পরে যেন জেগে উঠে, খুশির গলায় বললেন, “তুই গজুদাদাকে ডাকলি? কেন রে সোনা?”
-বা রে। আমি তো সবসময় ডাকি। যখনই ভয় পাই, তখনই ডাকি। গজুমামা তো আসে।
-তারপর? তারপর?
ভাই মায়ের কোল ছেড়ে উঠে বসল। কাহিল চেহারা। থেমে থেমে ভেবে ভেবে বলল, “ছোট্ট ঘর। ছবিতে দেখা গুহার মত। নিজেদের মধ্যে চেঁচাচ্ছিল ওরা। একটু পরে হলুদ কাপড় ন্যাড়ামাথা সাধু এলো। তার সঙ্গে গুরুং। কিন্তু, গুরুং আমায় দেখে হাসল না। উল্টে বলল, ‘তোমার বলি হবে। বেশ হবে। তোমার বাবা পাপ করেছে।’”
উফফ! কী বলে রে? ভাইয়ের বলি হবে?
ভাই বলছে, “ঠিক তক্ষুনি কে যেন বলল, ‘বলি হবে না ছাই হবে!’”
“কে বলল?”
“পিছন থেকে কেউ বলল, ‘মজা করবে দিপু? ভয় পেও না, আমি যেমন যেমন বলছি তেমন তেমন করো।’
“আমি বললাম, ‘তুমি গজুমামা?’
“অন্ধকার বলল, ‘ওরা মন্ত্র পড়লে আমিও পারব না, সময় নেই। তুমি এই লোহার বাটি ছুঁড়ে মারো গুরুঙের দিকে।’
“আমি হেই বলে লাফিয়ে উঠে বাটি ছুঁড়ে মারলাম। গুরুং বিচ্ছিরি হেসে উঠে এগিয়ে এলো। ওমা! সেই বাটি ঘুরতে ঘুরতে ঠং ঠং করে ঘা মারতে লাগল সক্কলের মাথায়। কী মজা কী মজা। সবাই লাফিয়ে পালাতে গেল। বাটি ঘুরে ঘুরে মারতে লাগল সবাইকে। গুরুং দৌড়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ছেড়ে দেব তোমায়, এখন
বাঁচাও।’ বলতেই আবার ঠং, আলু হয়ে ফুলে গেল মাথা। কী মজা! গুরুং আমায় কোলে তুলে গাড়িতে করে নামিয়ে দিল পুলিশের কাছে।”
আমরা তো অবাক। ভাই কি ভুল বকছে নাকি!
“দেখলে? দেখলে? গজুদাদা ঠিক রক্ষা করল।” মা চেঁচিয়ে উঠে বলল।
“উফ। চুপ করবে তুমি? দিপুকে ওরা ফেরত দিতই।”
“বাবা,” দাদা মুখ খুলল, “এতো সোজা নয় কেসটা। গুরুং এখনো ফিরে আসেনি। এত গোপন জিনিস তুমি জানো, ওরা কিন্তু খুব সাংঘাতিক।”
“ভাইকে ফেরৎ ওরা নিজের ইচ্ছেয় দিয়েছে, এত শিওর হওয়া যাবে না।” দিদি বলল।
দাদা বলল, “ঠিক। আর একটা কথা, ভূত-ফুত না হলেও একটা রহস্য কিন্তু রয়ে গেল।”
“গজুমামা ছিল।” চকলেট খেতে খেতে ভাইয়ের নিশ্চিন্ত উত্তর।
বাবা গম্ভীর। মা উজ্জ্বল। কদিন পরে ভাইফোঁটা। জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তুলে দিল বোনের হাতে গজুমামা।
শীর্ষচিত্র- প্রদীপ গোস্বামী
বাহ্ দারুণ দারুণ লাগলো গল্পটা পড়ে ।
LikeLike