নাটক-নিউটনের সঙ্গে একবেলা-বামাচরণ ভট্টাচার্য্য-বর্ষা ২০২১

জয়ঢাকের নাট্যশালা:
হাবুদের ডালকুকুরে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরাতন ভৃত্য যোগীনদাদা –রবীন্দ্রনাথের কবিতার নাট্যরূপঃ (তাপস শঙ্কর ব্রহ্মচারী)  রাজপুত্তুর(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)   সেলফিশ জায়েন্ট- (অনুপম চক্রবর্তী,) পুজোর প্রস্তুতি(আশুতোষ ভট্টাচার্য) , অমৃতযাত্রী(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়), চিচিং ফাঁক

জয়ঢাকের নাট্যশালাঃ 
হাবুদের ডালকুকুরে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরাতন ভৃত্য যোগীনদাদা –রবীন্দ্রনাথের কবিতার নাট্যরূপঃ (তাপস শঙ্কর ব্রহ্মচারী)  রাজপুত্তুর(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)   সেলফিশ জায়েন্ট- (অনুপম চক্রবর্তী,) পুজোর প্রস্তুতি(আশুতোষ ভট্টাচার্য) , অমৃতযাত্রী(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়) ,চিচিং ফাঁক (কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)

চরিত্র

  • পাপাই – সিক্স বা সেভেনে পড়া একটা ছেলে
  • তাতাই – পাপাইর ভাই টু বা থ্রিতে পড়ে
  • পাপাইর মা
  • পাপাইর বাবা
  • পাপাইর স্যার
  • পাপাইর কাকা
  • নিউটন বিজ্ঞানী
  • একটা কুকুর ডায়মন্ড

প্রথম দৃশ্য

(স্থান: পাপাইর পড়ার ঘর। পাপাই আর তাতাই পড়তে বসেছে। টেবিলের ও-পারে স্যার, এ-পারে ওরা। পড়া চলছে। ঘাড় দুলে দুলে তারা পড়া করছে।)
স্যার : থামো থামো তোমরা, আজ তোমাদের একটা গল্প বলব।
পাপাই-তাতাই : (একসঙ্গে দুজনে) দারুণ ব্যাপার স্যার।
স্যার : গল্পটা কী জানো?
ছেলেরা একসঙ্গে : না স্যার।
স্যার : নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কারের গল্প।
ছেলেরা : দারুণ, স্যার।
স্যার : নিউটন একদিন বাগানে বসেছিল আপেল গাছের তলায়।
পাপাই : সত্যি কথা স্যার?
স্যার : সত্যি কেন হবে না? সত্যিই তো।
পাপাই : সত্যি গল্প? আচ্ছা স্যার, বলুন বলুন।
স্যার : গল্প বলার মাঝে কথা বললে আর বলব না। যা বলার গল্প শোনার শেষে বলবে।
তাতাই : ঠিক আছে স্যার, তাই হবে।
স্যার : তারপর কী হল জানো?
তাতাই : কী করে জানব স্যার, আমরা কি সেখানে ছিলাম?
স্যার : (বিরক্ত হয়ে ) উহ্‌! চুপ করবে? পাকা ছেলে কোথাকার। শোনো চুপ করে। (আবার শুরু করলেন) একটা আপেল হঠাৎ নিউটনের সামনে পড়ল। তোমরা হলে কী করতে?
পাপাই : আপেল কুড়িয়ে কলের জলে ধুয়ে নিতাম। তারপর কামড় বসাতাম।
তাতাই : দাদা, আমাকে দিতিস না?
পাপাই : দাঁড়া, আগে ধুয়ে নিই, দেখিস না পেয়ারা না ধুয়ে খেলে মা বকা দেয়?
স্যার : ওহ্‌, পারা যায় না। (চরম বিরক্ত হয়ে, জোরে চেঁচিয়ে) তোমাদের আর গল্প শুনতে হবে না। চলো পড়া করো।
(ছেলেরা আবার পড়তে লাগল।)
স্যার : আচ্ছা চুপ করো। এবারে পড়া বলো। প্রথমে পাপাই বলো। পাপাই, চাপ কাকে বলে?
(নেপথ্যে মায়ের ডাক পাপাইকে।)
স্যার : তাহলে থাক আজকে, কাল আবার পড়াব।
(তারপরে স্যার পড়া বন্ধ করে উঠে গেলেন। স্যার উঠে যেতেই দুই ভাই মারামারি লাগিয়ে দিল। তাতাইর কান্নার আওয়াজ শুনে মা ওই ঘর থেকে চিৎকার করতে লাগল।)
মা : পাপাই, তুই মারলি ভাইকে?
পাপাই : না মা, মারিনি। ভাই মিথ্যা করে কাঁদছে। (তাতাইর চুলটা ধরে টেনে দিল।)
তাতাই : (জোরে কাঁদতে কাঁদতে) মা, আবার মারল।
মা : দাঁড়া, জানোয়ার ছেলেটাকে দেখাচ্ছি।
(ততক্ষণে পাপাই একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, পর্দা নেমে গেল।)

দ্বিতীয় দৃশ্য

(কাকার ঘর। পাপাই-তাতাইর কাকা, বিজ্ঞানী। সারা ঘরে যন্ত্রপাতিতে ঠাসা, সারাদিন খুটখাট করে কাজ করে যায়। ছেলেরা এর ঘরে এলেই অবাক হয়ে যায়। মজা লাগে ওদের খুব, মাঝে মাঝে কিছু যন্ত্রপাতিতে ওরা উৎসাহিত হয়ে পড়ে।)
পাপাই : (মায়ের ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে) কাকা, ও কাকা…
(কাকা তখন মাথা গুঁজে একটা যন্ত্র নিয়ে কিছু একটা করছে; মাথা তুলতেই ভাইপোকে দেখতে পেল।)
কাকা : পাপাই এসেছিস? তাতাই কই?
পাপাই : মায়ের কাছে।
(নেপথ্যে—
মা : শুধু ভাইকে মারা! কোথায় গেল রে সে?
তাতাই : ওইদিকে গেল, কাকাইর ঘরের দিকে।
মা : ঠাকুরপো, ও ঠাকুরপো, পাপাই গেল?)
কাকা : (পাপাইর কাঁদো কাঁদো মুখের দিকে তাকিয়ে) কী করেছিস বাবা?
পাপাই : কিছু না, শুধু একবার ভাইয়ের চুল ধরে টেনেছি।
কাকা : অ, তাই! (আস্তে করে)। না তো বৌদি! (জোরে চেঁচিয়ে)
(আবার মাথা নামিয়ে কাকা যন্ত্রটাতে খুটখাট করতে লাগল।)
পাপাই : কী করছ কাকা?
কাকা : টাইম মেশিন নিয়ে কাজ করছি, আর একটু বাকি।
পাপাই : সেটা কী গো কাকাই?
কাকা : ওটা? ওটা দিয়ে তুমি অনেক আগের সময়ে যেতে পার।
পাপাই : তাই নাকি! কাকাই, আমি নিউটনকে দেখতে পাব?
কাকা : কোন নিউটন, বিজ্ঞানী?
পাপাই : হ্যাঁ, কাকাই। আজকে স্যার আপেল পড়ার গল্পটা বলতে বলতে আর বলল না। আমি যাব তাই দেখতে, পাঠাবে তুমি আমায়?
কাকা : সে যে অনেককাল আগে, তোমার যদি ভয় করে! সেখানে তো আমরা থাকব না, একা একা অত দূর যাওয়া কি ঠিক হবে?
পাপাই : কাকাই, পাঠাও না, আমি যাব। নিউটনদাদুকে দেখব।
কাকা : আচ্ছা ঠিক আছে, এখন চলো, বেলা হয়েছে খেতে চলো।
(নেপথ্যে আবার মায়ের খাওয়ার ডাক। পর্দা নেমে গেল।)

তৃতীয় দৃশ্য

(রান্নাঘর, আসন পেড়ে খেতে বসেছে সবাই। পাপাই, তাতাই, কাকা, পাপাই-তাতাইর বাবা। মা খেতে দিচ্ছেন। নেপথ্যে গান হচ্ছে – ‘ভূতের রাজা দিল বর’।)
পাপাই : মা, আমি টাইম মেশিনে চাপব। কাকাই বলেছে আমাকে চাপাবে।
তাতাই : কাকাই, আমাকে চাপাবে না?
কাকা : হ্যাঁ, তোমাকেও চাপাব।
পাপাই-তাতাইর বাবা : (পাপাইর কাকার দিকে চেয়ে) কী যে সব হুজুগ তুলিস তুই, নে এবারে ঝোঁক সামলা।
মা : ঠাকুরপো, মাছের ঝোলটা আর একটু দেব?
কাকা : দাও বৌদি, খুব ভালো হয়েছে। বলছি, সত্যি করেই আমি পাপাইকে টাইম মেশিনে চাপাব। তুমি অমত করবে না তো?
মা : সে আবার কী?
কাকা : একটা যান, যেটা দিয়ে সময়ের আগে যাওয়া যায়।
মা : ধ্যুৎ, তাই আবার হয় নাকি?
কাকা : হ্যাঁ গো, হয়।
মা : ছেলেটার কিছু ক্ষতি হবে না তো?
কাকা : না না বৌদি, ক্ষতি হবে কেন?
মা : তাহলে চড়িও।
তাতাই : কাকাই, আমিও চড়ব।
কাকা : হ্যাঁ বাবা, তোমাকেও চড়াব, কিন্তু ও ফেরার পরে। (পাপাইর মায়ের দিকে তাকিয়ে এবারে) বৌদি, একবেলার তো ব্যাপার, তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না।
মা : না না, ওকে যেতে হবে না। তুমি অন্য কাউকে দেখো।
তাতাই : কাকাই, তাহলে আমি যাব।
পাপাইর বাবা : (পাপাইর কাকার দিকে তাকিয়ে) খ্যাপা, তুইও কি ছোটো ছেলে হয়ে গেলি? যা খুশি কর। (আসন ছেড়ে উঠে গেল সে।)
পাপাই : মা, আমি যাব। নিউটনদাদুকে দেখব, দারুণ মজা হবে। মা, যেতে দাও না!
মা : আচ্ছা বেশ বেশ, এখন খেয়ে ওঠ।
(সবাই একে একে খেয়ে উঠে গেল, পর্দা নেমে গেল।)

চতুর্থ দৃশ্য

(কাকার ঘর। চেয়ারে বসে আছে পাপাই। সেটা যে-সে চেয়ার নয়, টাইম মেশিনের চেয়ার। পাপাইর মাথায় বিভিন্ন তার লাগিয়ে দিল। দিয়ে একটা খোলের মতো যন্ত্রে পাপাইর চেয়ারটাকে ঢুকিয়ে দিল।)
কাকা : ওয়ান… টু… থ্রি… পাপাই, তুমি রেডি?
পাপাই : হ্যাঁ, কাকাই।
(তারপর একটা সুইচ টিপতেই বোঁ বোঁ শব্দে চেয়ারসহ যন্ত্রটা ঘুরতে লাগল। যন্ত্র চালু হয়ে গেল। পর্দা নেমে গেল।)

পঞ্চম দৃশ্য

(কাকার ঘর, কাকা একা। এদিক ওদিক পায়চারি করছে। কাকার কানে একটা হেড ফোনের মতো যন্ত্র লাগানো আছে।)
কাকা : (যন্ত্রের একটা নব ঘোরাতে ঘোরাতে) পাপাই, তুমি শুনতে পাচ্ছ?
পাপাই : হ্যাঁ কাকাই, আমি শুনতে পাচ্ছি।
কাকা : কতটা পথ গেলে? যন্ত্র কত সময়ের পথ বাকি দেখাচ্ছে?
পাপাই : আর কুড়ি মিনিটের পথ।
কাকা : কোথায় নামবে খেয়াল আছে তো?
পাপাই : হ্যাঁ কাকাই, ঠিক নিউটনদাদুর বাগানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের।
কাকা : দিক বুঝতে না পারলে যন্ত্রটার সাহায্য নিও।
পাপাই : তুমি চিন্তা কোরো না। আমি ঠিক বুঝে নেব।
কাকা : তোমার ফেরার সময় খেয়াল আছে তো?
পাপাই : হ্যাঁ, মনে আছে।
(এমন সময় ‘ঠাকুরপো, ঠাকুরপো’ বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে পাপাইর মায়ের প্রবেশ, সঙ্গে তাতাই।)
কাকা : পাপাই, তোমার মা এসেছেন। কথা বলবে?
পাপাই : দাঁড়াও কাকাই, যন্ত্রটা ল্যান্ড করবে, যন্ত্র থেকে নেমে কথা বলছি।
(নেপথ্যে যন্ত্র ল্যান্ড করার শব্দ। তারপর একটু চুপচাপ। একটুখানি পরে বিপ বিপ শব্দ। কাকার যন্ত্রের নব ঘোরানো এবং ডায়াল-প্যাডের আওয়াজ।)
কাকা : হ্যালো, হ্যালো… পাপাই তুমি শুনতে পাচ্ছ? হ্যালো হ্যালো…
(ও-পার থেকে আওয়াজ নেই। মা চোখের জল মুছছে। কাকাই হ্যালো হ্যালো করছে। তাতাই দাদা দাদা করছে।)
হঠাৎ ও-পার থেকে : কাকাই, কাকাই, শুনতে পাচ্ছ?

(কাকা তড়াং করে এক লাফ দিয়ে—)
কাকা : হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো। কোথায়? ল্যান্ডিং সেফ?
পাপাই : হ্যাঁ কাকাই, সেফ ল্যান্ডিং। আমি ঠিক জায়গায় নেমেছি। আমার সামনেই সম্ভবত নিউটনদাদু আরামকেদারায় বসে আছেন। পাশেই একটা আপেলগাছ। আমি এবার এগোব মায়ের সঙ্গে কথা বলে।
(মা তখন ঠাকুর-প্রণাম করছে। কাকা তার মাথাতে হেড-ফোনটা পরিয়ে দিল।)
মা : পাপাই, সাবধানে যাস। বিদেশ-বিভূঁই। আমার ভয় করে। খাওয়াদাওয়া ঠিক করে করিস।
পাপাই : কোনো চিন্তা নেই। আমি ঠিক থাকব। তাতাই কোথা?
মা : এই তো পাশেই। কথা বলবি?
(তাতাইকে হেড-ফোনটা পরিয়ে দিয়ে—)
তাতাই : দাদা দাদা, আপেল গাছে আপেল ধরেছে?
পাপাই : হ্যাঁ রে। কত আপেল, সব গাছ থেকে ঝুলছে।
তাতাই : আমার জন্যে আনবি তো দাদা?
পাপাই : আচ্ছা আনব। কাকাইকে দে।
কাকাই : কথা বোঝার যন্ত্রটা কানে পরে নিস, না-হলে সেই সময়কার ইংরেজি বুঝতে পারবি না।
পাপাই : আচ্ছা, এখন টা টা। যাই, নিউটনদাদুর সঙ্গে আলাপ করি।
(সবার প্রস্থান। পর্দা নেমে গেল।)

ষষ্ঠ দৃশ্য

(নিউটন আরামকেদারায় বাগানে বসে আছেন, পায়ের কাছে কুকুর ডায়মন্ড। সামনে ডানহাতে তাঁর একটা বই খোলা আর বামহাতে কুকুর মাথায় হাত বোলাচ্ছেন। পাপাইকে দেখে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। নিউটন তখন চোখের সামনে থেকে বইটা নামালেন। চোখটা বড়ো বড়ো করে পাপাইর দিকে তাকালেন।)
নিউটন : কে তুমি? এখানে কী করে?
পাপাই : (একটু জড়িয়ে আমতা আমতা করে) আমি পাপাই।
নিউটন : ( কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে, তার দিকে তাকিয়ে) আহ্‌, ডায়মন্ড, তুই কি থামবি একটু? (তারপর পাপাইর দিকে চেয়ে) কী?
পাপাই : আজ্ঞে, পাপাই।
নিউটন : সে কে? কোথা থেকে আসছ? তুমি তো আমার মতো ফর্সা নও। কোথায় তোমার দেশ?
পাপাই : আমি তো পশ্চিমবাংলা থেকে আসছি। ওটা তো ভারতবর্ষ।
নিউটন : ভারতবর্ষ? সে তো অনেক দূর! কী করে এলে?
পাপাই : কেন, টাইম মেশিনে করে!
নিউটন : টাইম মেশিন? সে আবার কী?
পাপাই : এ মা, তুমি জানো না? ওটা দিয়ে সময়-ভ্রমণ করা যায়। এই যেমন আমি তোমার সময়ে এলাম, তেমন তুমিও ইচ্ছে করলে আমার সময়ে যেতে পার।
নিউটন : তাই নাকি! সে কেমন?
পাপাই : আমাদের ওখানে এখন ২০২০ সাল। তোমার এখানে কত?
নিউটন : বাছা আমার সাথে মশকরা করছ? তুমি ভবিষ্যতের ছেলে আমাকে তা বিশ্বাস করতে হবে?
পাপাই : হ্যাঁ, দাদু। (দাদু বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে না পেরেও দাদুই বলল।)
নিউটন : এখন কত চলছে জানো তুমি? ১৬৮৬ সাল। আর তুমি বলছ, তুমি ২০২০ সালের।
পাপাই : হ্যাঁ ,আমি প্রমাণ দিতে পারি।
নিউটন : সে কেমনে?
পাপাই : আমার যান দেখুন, আমার কাকাইর সঙ্গে কথা বলুন।
(বাগানে যানটার কাছে গিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন নিউটন; ডায়মন্ড যানটার পাশে কুঁইকুঁই করে ঘুরতে লাগল। পাপাই ওয়ান, টু, থ্রি করে যানের নব ঘুরিয়ে কাকাইকে ফোন লাগিয়ে দিল। ফোনের ও-পার থেকে কাকাই ‘হ্যালো’ বলে উঠল।)
পাপাই : নিউটনদাদু তোমার সঙ্গে কথা বলবে কাকাই।
কাকাই : তাই নাকি! দে দে।
(নিউটনের কানে যন্ত্রটা লাগাতেই একটু ভয় পেয়ে সরে গেলেন তিনি।)
পাপাই : আহা, ভয় পাও কেন?

(তারপরে যন্ত্রটা পরে)
কাকাই : কেমন আছেন স্যার?
নিউটন : (বিস্মিত চোখ, কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, চারদিকে চকিতে চেয়ে) হ্যাঁ, ভালো।
কাকাই : আমার ভাইপোকে আপনার কাছে পাঠালাম, দেখবেন।
নিউটন : (উত্তর না দিয়েই কান থেকে যন্ত্রটা খুলতে খুলতে) এই নাও বাপু তোমার যন্ত্র।
পাপাই : আচ্ছা কাকাই, রাখো, পরে কথা বলব।
কাকাই : আচ্ছা রাখো।
(প্রস্থান। পর্দা নেমে গেল।)

সপ্তম দৃশ্য

(ধীর পায়ে চিন্তামগ্ন হয়ে নিউটন তাঁর চেয়ারের দিকে এগিয়ে আসছেন। সামনে পাপাই লাফাতে লাফাতে। কুকুর ডায়মন্ড নিউটনের পাশে পাশে। হঠাৎ চেয়ারের পাশে একটা আপেল পড়ল। নিউটন দেখলেন, পাপাই ছুটে গিয়ে আপেলটা তুলে নিল।)
নিউটন : আরে, করছ কী?
পাপাই : কেন, আপেলটা নিচ্ছি!
নিউটন : ওটা নিতে হবে না, রাখো রাখো। পড়ে থাকা জিনিস কেউ নেয় কি?
পাপাই : আমাদের ওখানে তো সবাই নেয়। তো আমি নেব না কেন?
নিউটন : আচ্ছা, নাও। (একটু আনমনা হয়ে, মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে) আপেলটা কেন নীচের দিকে পড়ল? উপরের দিকে গেল না কেন? কেন, কেন, কেন?
পাপাই : কী বিড়বিড় করছ দাদু?
নিউটন : আচ্ছা, কী অবাক ব্যাপার দেখো, কেন আপেল নীচের দিকে এল? উপরে কেন গেল না? তুমি যখন কিছু উপরে ছুড়ে দাও সেটা নীচের দিকে আসে, কেন তুমি বলতে পার?
পাপাই : ও মা, তুমি জানো না?
নিউটন : তুমি জানো নাকি?
পাপাই : আমাদের স্যার জানে।
নিউটন : মানে?
পাপাই : মানে, স্যার তো তোমার গল্পটা বলছিল। আমি মাঝখান থেকে বিরক্ত করছিলাম, তাই আর বলল না। যদি বলত তাহলে জানতাম।
নিউটন : আমার গল্প মানে কী গল্প?
পাপাই : তুমি দেখছি কিছুই জানো না। ওটা তোমারই গল্প। তুমি কী একটা আবিষ্কার করবে, তার গল্প।
নিউটন : তা বলো দেখি একটু।
পাপাই : সেটা পুরো জানতেই তো এখানে আসা।
নিউটন : আচ্ছা পরে শুনব। এখন নিশ্চয় তোমার খিদে পেয়েছে, চলো তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
পাপাই : (পেটে হাত দিয়ে) হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে। চলো খাওয়া যাক।
(নিউটন, ডায়মন্ড ও পাপাইর প্রস্থান। পর্দা নেমে গেল।)

অষ্টম দৃশ্য

(কাকাইর ঘর। স্ক্রিনের সামনে কাকাই বসে আছে। মাঝে মাঝে অশান্তভাবে পায়চারি করছে। পাপাইর মা মাঝে মাঝে এসে দেখে যাচ্ছে। তাতাই এসে বিরক্ত করছে। কানের হেড-ফোনের মতো যন্ত্রটাতে বিপ বিপ শব্দ। পাপাইর সঙ্গে কন্ট্যাক্ট হচ্ছে না। আর একঘণ্টার মধ্যে যানে এসে পাপাইকে চাপতে হবে। সময় যত এগোচ্ছে, কাকার চিন্তা তত বাড়ছে, বার বার ঘড়ির সময় দেখছে।)
কাকা : হ্যালো, হ্যালো। ওয়ান, টু, থ্রি। হ্যালো পাপাই। পাপাই, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?
(খালি বিপ বিপ শব্দ)
কাকা : (আবার ডায়াল করতে করতে, নব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে) পাপাই, পাপাই…
(পাপাইর মা বার বার প্রণাম করছে আর বিড়বিড় করে বলছে, ‘মা দুর্গা রক্ষা করো, ভগবান রক্ষা করো, ছেলেটা ফিরলেই আজ হরিলুট দেব।’)
কাকা : (পাপাইর মায়ের দিকে চেয়ে) বৌদি, তুমি একটু থামবে? (পুনরায় নব ঘোরাতে ঘোরাতে) হ্যালো হ্যালো… পাপাই উত্তর দাও।
(তাতাই ঘরময় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে বলছে—)
তাতাই : দাদার সঙ্গে কথা হলে কাকাই আমার আপেল আনার কথাটা বলতে ভুলো না যেন।
(কাকা সমানে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল সে।)
পাপাইর মা : কী হল ঠাকুরপো? বসে পড়লে, আরেকবার চেষ্টা করো!
(চেয়ারে বসে বসে কাকা নবটা ঘোরাতে থাকল আর হ্যালো হ্যালো করতে থাকল। পর্দা নেমে গেল।)

নবম দৃশ্য

(নিউটনের ঘর। খাওয়ার টেবিল। খাওয়া শেষ, পাপাই আঙুল চুষছে।)
নিউটন : আরে, করছ কী তুমি?
পাপাই : আহা, কী সুন্দর খাবারটা! হাতের আঙুলে লেগে আছে, না চাটলে স্বাদটা পাব কী করে? অ, তুমি তো আবার চামচে খেয়েছ, তা জানবে কী করে আঙুল চাটার স্বাদ?
নিউটন : তোমরা কি হাত দিয়ে খাও, চামচ ব্যবহার করো না?
পাপাই : ওসব আমার পোষায় না বাপু, আমি হাত দিয়ে খাই।
(এরপর হাত ধুয়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাতেই পাপাই ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তাই দেখে—)
নিউটন : কী হল পাপাই, তুমি অমন করলে কেন?
পাপাই : আমার যাবার সময় হয়ে গেছে, বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে। আমি কানে লাগানোর যন্ত্রটা যানে ফেলে এসেছি। কাকাই নিশ্চয় চিন্তা করছে, চলো এবার যাই তাহলে।
নিউটন : চলে যাবে? আজ থাকবে না?
পাপাই : না গো। আবার আসব আমি।
নিউটন : তাহলে গল্পটা শোনা হলো না যে!
পাপাই : তা না হোক, গল্পটা তো তোমাকে নিয়ে। আমি গিয়ে স্যারের কাছে শুনে নেব। আর তুমি তোমার খাতাপত্র নিয়ে আপেল পড়ার কারণ খোঁজো। আবিষ্কারে লেগে যাও।
নিউটন : আচ্ছা, তাই হোক। (কুড়িয়ে পাওয়া আপেলটা পাপাইর হাতে দিয়ে) এটা তুমি নিয়ে যাও, গিয়ে দেখিও সাবাইকে। আর বোলো এটা তোমার নিউটনদাদুর বাগানের আপেল। ভালো থেকো, বাই বাই।
পাপাই : বাই বাই দাদু, আবার দেখা হবে। চলি এবারে।
(যানের দরজা বন্ধ হল। পর্দা নেমে গেল।)

দশম দৃশ্য

(কাকার ঘর। মা ঠাকুর-প্রণাম করে যাচ্ছে। কাকাই মাথা নামিয়ে বসে আছে। তাতাই এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে, আর মাঝে মাঝে কাকাকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কাকাই, দাদা কখন ফিরবে?’ হঠাৎ লাল আলোটা জ্বলে উঠল। আর আস্তে শব্দ আসতে লাগল, ‘কাকাই, কাকাই।’ নবটা একটু ঘোরাতেই শব্দটা জোরদার হল। ‘কাকাই, কাকাই, তুমি শুনতে পাচ্ছ?’ কাকাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে উঠল। মা ঠাকুরের পটে মাথাটা ঠুকে এল।)
পাপাই : কাকাই, যানে স্টার্ট দিলাম। কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে।
(নেপথ্যে আওয়াজ দশ, নয়…)
কাকাই : আচ্ছা, ঠিক আছে। রেডি আমরা, ফেরো তুমি।
(কাকার কান থেকে হেড-ফোনটা নিয়ে—)
তাতাই : দাদা, আমার জন্য আপেল আনছিস তো?
পাপাই : হ্যাঁ রে আনছি, আর মাত্র দুই ঘণ্টা।
(নেপথ্যে যানের আসার আওয়াজ।)
(বাইরে থেকে একটা চেয়ারে পাপাইর প্রবেশ। সেই চেয়ারে পাপাই বসে আছে। হাতে আপেল, চোখ বোজা। কাকাই পাপার মুখে একটা ট্যাবলেট পুরে দিতেই তার জ্ঞান ফিরে এল। ধীরে ধীরে চেয়ার থেকে নেমে এসে সে কাকাইকে জড়িয়ে ধরল, তারপর ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল।)
পাপাই : এই নে ভাই, তোর জন্য আপেলটা।
তাতাই : তুই একটুও নিবি না?
পাপাই : না রে, তুই খা, আমি বরং একটা ছবি তুলে রাখি। (কাকার সঙ্গে মোবাইলটা নিয়ে একটা ছবি তুলল, তারপর মায়ের দিকে এগিয়ে) মা, তোমার দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে তো?
মা : (চোখের কোণের জল আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে) হ্যাঁ, বাবা।
তারপর সবাই মিলে জোরে হেসে উঠল। পর্দা নেমে গেল।

সমাপ্ত
অলঙ্করণ- তথাগত চট্টোপাধ্যায়

1 thought on “নাটক-নিউটনের সঙ্গে একবেলা-বামাচরণ ভট্টাচার্য্য-বর্ষা ২০২১

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s