জয়ঢাকের নাট্যশালা:
হাবুদের ডালকুকুরে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুরাতন ভৃত্য , যোগীনদাদা –রবীন্দ্রনাথের কবিতার নাট্যরূপঃ (তাপস শঙ্কর ব্রহ্মচারী) রাজপুত্তুর, (কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়) সেলফিশ জায়েন্ট- (অনুপম চক্রবর্তী,) পুজোর প্রস্তুতি(আশুতোষ ভট্টাচার্য) , অমৃতযাত্রী(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়), চিচিং ফাঁক(কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়), নিউটনের সঙ্গে একবেলা(বামাচরণ ভট্টাচার্য)
মূল কাহিনি – উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
নাট্যরূপ ও গীতরচনা- কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
চরিত্র-সূত্রধার, চাষি, ঘ্যাঁঘাসুর, রাজা, যদু, ঘেঁঘি, রানি, গোষ্ঠ, ১ম লোক, ২য় লোক ,সন্ন্যাসী মানিক , মন্ত্রী, বামন, বুড়ো, ঘোষক, সান্ত্রী, সভাসদের দল
[ প্রথম দৃশ্য ] (পর্দা খোলে না। পর্দার সামনের অংশে সূত্রধারের প্রবেশ ও গান)
সূত্রধার।
অনেক কথা শুনেছ ভাই, অনেক গাথা-গল্প
যে কাহিনি কেউ শোনো নাই, সেটাই শোনো অল্প।
গল্প, শোনো গল্প, শোনো গল্প।।
এক যে ছিল রাজা, এক যে ছিল রাজা, এক যে ছিল রাজা।
হাতিশালে হাতি ছিল, ঘোড়াশালে ঘোড়া তার
অঢেল রত্ন ছিল খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া।
সেই রাজা ছিল রাজার মতো রাজা।।
কোটাল মন্ত্রী ছিল,
সেপাই শান্ত্রী ছিল সারা রাজ্য জুড়ে তার (২),
সে রাজার রাজ্যটা সুখে শান্তিতে আর
আনন্দে ছিল মোড়া।
সেই রাজা ছিল রাজার মতো রাজা।।
তবু রাজার সুখ ছিল না মনে,
একটিমাত্র কন্যা যে তার যুঝে মৃত্যু-সনে।
তাই তো রাজার সুখ ছিল না মনে।
বাঁধল কত জড়িবুটি, কতই এল বদ্যি,
বিফল সবই, রাজকন্যায় বাঁচায় কার সাধ্যি।
এমন সময়, এমন সময়, এমন সময় একদিন—
(সূত্রধারের প্রস্থান)
(পর্দা খুলে যায়। রাজসভা। রাজা, রানি, মন্ত্রী, সভাসদ সকলেই বিমর্ষমুখে রাজসভায় আসীন।
এক সন্ন্যাসীর প্রবেশ
সন্ন্যাসী।
ওঁ শান্তিরস্তু শিবঞ্চাস্তু বিনশ্যত্যশুভঞ্চ যৎ।
যতো এবাগতং পাপং তত্রৈব প্রতিগচ্ছতু স্বাহা।
ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি।।
রাজা।
প্রণমি তব পদাম্বুজে হে দিব্যকান্তি।
দয়া করিয়া জানাও মোরে কেমনে পাই শান্তি।
জানাও প্রভু জানাও আজি দুখের প্রতিকার,
তাকিয়ে দেখো রাজ্যে মোর ওঠে যে হাহাকার —
সকলে।
হায় হায় হায় হায়
হায় হায় হায় হায়।।
সারা রাজ্য নিরানন্দ
কাঁদে পক্ষী পুরবৃন্দ।
আমাদের যে ভাগ্য মন্দ
তাই সবই বৃথা যায়।।
হে মহাযোগী প্রণাম চরণে
আমাদের তুমি লও হে শরণে
বলে দাও প্রভু, বলো হে কেমনে
প্রতিকারের উপায়।।
সন্ন্যাসী।
নাহি কোনও চিন্তা রানি, নাহি চিন্তা রাজন,
যোগবলে জানিয়াছি দুঃখের কারণ।
সূর্য তেজে পৃথ্বী হতে কাটে অন্ধকার,
মোর বরে রাজ্যে শান্তি আসিবে আবার।
‘লেবু’ খেলে ব্যাধি হতে কন্যা পাবে মুক্তি,
লেবুদাতার সঙ্গে বিয়ে, এটাই হবে চুক্তি।
সকলে।
সাধু! সাধু!
রাজা।
শোনো মন্ত্রী, শোনো সভাসদ, ওগো রানি তুমি শোনো
ঘুচিল কি দুঃখ আজি, নয় তো স্বপ্ন কোন?
আজি আনন্দের গান শুধু গাও
করো উৎসব, শঙ্খ বাজাও,
একটি কেবল ‘লেবু’ তোমরা ত্বরা করি আনো।।
মন্ত্রী! কোটাল! পাত্র! মিত্র! নাজির! যেভাবে হোক, এই মুহূর্তে ‘লেবু’ করো হাজির।
(সবাই ঠেলাঠেলি করতে করতে রাজার সামনে এগিয়ে আসতে শুরু করে। তার আড়ালে
সন্ন্যাসী ঢাকা পড়ে যান)
মন্ত্রী।
লেবু! লেবু! সে আবার কী?
এমন ফলের নাম শুনি নাই,
নাম শুনি নাই কভু।।
এই রাজ্যে লেবু বলি কিছু মিলে না,
হে মহারাজ, হে মহারাজ, লেবু চিনি না,
(মোরা) লেবু জানি না।।
রাজা।
তাই তো! তবে এখন কী উপায়?
হে যোগীবর—এ কী!
তিনি গেলেন কোথায়?
(সবাই তাকিয়ে দেখল, সন্ন্যাসী কখন রাজসভা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছেন)
(মাথায় হাত দিয়ে)
হায় হায়, হায় হায়,
এখন আমি কী করি ছাই,
লেবুর খোঁজ কোথায় যে পাই।
সকল আশা বিফল হল—
তোমরা কিছু উপায় বলো।
মন্ত্রী।
হে মহারাজ। আর তো কোনও অন্য উপায় নাই।
সাধুর বিধানমতে মোরা করিব চেষ্টাই।
যেখান থেকে যেভাবে হোক লেবুর খোঁজ চাই।
আদেশটা দিন তাই।
অন্য উপায় নাই, এখন অন্য উপায় নাই।
(সমবেত)
অন্য উপায় নাই, এখন অন্য উপায় নাই।।
এখনি করো ঘোষণা
একটি লেবু চাইই আনা,
একটি লেবু চাইই আনা চাই।।
করিব যে চেষ্টা মোরা
সারিবে রাজকন্যা ত্বরা
ধৈর্য ধরে থাকুন রাজা তাই।।
সকলে স্থির হয়ে যায়। পর্দা পড়ে। আবার আলো জ্বললে দেখা যায় পর্দার সামনে ঘোষক ও বাজনদারের দল
ঘোষক। (সুরে)
শোনো শোনো, শোনো শোনো, শোনো প্রজার দল
একটি ‘লেবু’ আনলে পরে কেহ
রাজ্য সমেত রাজকন্যা পাবে সে নিশ্চয়
নেই যে তাতে কোনোই সন্দেহ।
শোনো শোনো, শোনো শোনো, শোনো প্রজার দল— (আলো নেভে)
[দ্বিতীয় দৃশ্য] (চাষির বাড়ি)
চাষি।
ওরে যদু, ওরে গোষ্ঠ, ওরে মানিক— (সকলের প্রবেশ)
ওরে যদু, ওরে গোষ্ঠ,
ওরে মানিক, শোন রে পষ্ট—
নিজ নিজ ভাগ্য লিখন
ফেরাতে আজ হও সচেষ্ট।।
বহুদূরের রাজ্য থেকে
এনেছিলাম এই লেবুর গাছ,
এ রাজ্যে আর নেই যে কোথাও
বহু যত্নে ফলেছে আজ।
রাজার জামাই করবে এরাই
যদি একটু করিস কষ্ট।।
এই নে যদু একটা ঝুড়ি
সারবে যে রোগ এটাই খেয়ে,
তুই পাবি এই রাজত্বটা,
সঙ্গে পাবি রাজার মেয়ে।
তাই তো বলি, শিগগিরি যা,
করিস নে আর সময় নষ্ট।। (প্রস্থান)
যদু।
কী মজা ভাই, কী মজা ভাই, কী মজা ভাই
দু-দিন পরেই হব আমি রাজারই জামাই।।
আমি যখন আসব বাড়ি
করবি সেলাম তাড়াতাড়ি
ঘুরব পরে সোনার পোশাক তিনটি মোরা ভাই।।
সবাই। কী মজা ভাই, কী মজা ভাই, কী মজা ভাই।
কোপ্তা কাবাব কত পাব
খাব-দাব আর ঘুমাব
খাব শুধুই পায়েস-পোলাও মণ্ডা আর মিঠাই।।
(আলো নেভে)
পর্দার সামনের অংশে একটা ঝুড়ি কাঁধে নিয়ে যদু প্রবেশ করে ও চলতে থাকে। সহসা উলটোদিক থেকে বামনের প্রবেশ)
বামন।
ও ভাই, ও ভাই, ঝুড়ি ভরে
কী নিয়ে যাও অমন করে?
যদু।
ওরে ব্যাটা, তোর তাতে কী?
চটপট তুই পালা দেখি!
বামন।
বলো না ভাই, কী রয়েছে তোমার ঝুড়িতে?
যদু।
ওরে ওরে বামনা ব্যাটা, ব্যাঙ আছে এতে। (প্রস্থান)
(বামনের নাচ ও গান)
বামন।
বেশ তবে তাই হোক তাই হোক।।
যেমনি ঝুড়ি তুই খুলবি,
অমনি বিরাট এক সত্যিকারের ব্যাঙ দেখবি,
তুই দেখবি।। (আলো নেভে)
[তৃতীয় দৃশ্য](রাজদরবার)
সান্ত্রী।
সেলাম, সেলাম, সেলাম — রাজামশাই (৩)।।
(এ) এনেছে নাকি লেবু
(এর) নাম বলছে যদু,
দরবারে একে নিয়ে এলাম
ধরে যে তাই—
রাজামশাই, রাজামশাই, রাজামশাই।। (প্রস্থান)
রাজা।
সত্যি? সে কি সত্যি?
তবে কি গো কন্যার হবে রোগমুক্তি?
যদু।
সত্যি সব সত্যি।
মিথ্যে না তো একরত্তি।।
লেবুর দৌলতে
করব কাম ফতে
পারল না যা সব বদ্যি।।
এলাম চলে রাজামশাই
রাজকন্যার রোগ সারাতে চাই।
কন্যা সারবে বলে
এলাম জলদি চলে
নিয়ে লেবু এক ঝুড়ি ভর্তি।।
রাজা।
(আহা) এ কী আনন্দ আজিকে আমার
কন্যা বুঝি মোর সারিবে এবার।
আসুন আসুন, হেথায় বসুন,
লেবুর ঝুড়ি হোথায় রাখুন।
এই কে আছিস—
এই কে আছিস জলদি করে আয় নিয়ে খাবার।।
(গানের মধ্যেই লোকজনেরা ধরাধরি করে লেবুর ঝুড়ি একপাশে রাখে ও যদুকে সমাদর জানানো হয়। গান শেষ হলে মন্ত্রী এগিয়ে যায় ঢাকনা খুলতে। রাজাও এগিয়ে যান উঁকি মারার ভঙ্গিতে)
মন্ত্রী।
দেখি দেখি কাকে
লেবু বলে ডাকে
এমন ফল কভু দেখিনি তো আগে।।
ওহে প্রতিহারী খোল খোল ঝুড়ি
জীবনে প্রথম লেবু দেখি চোখে।।
(ঝুড়ি খুলতেই একটা বিরাট ব্যাঙ লাফ দিয়ে রাজার কোলে চড়ে বসে। রাজা হাউমাউ করে লাফিয়ে ওঠেন। সবাই হতচকিত। ব্যাঙটা লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়)
রাজা।
এ কি! এত বড়ো স্পর্ধা!
আমার সঙ্গে করে ঠাট্টা!
নিয়ে যা একে—নিয়ে যা একে—
ভেঙে দে ঠ্যাংয়ের একটা।।
(সান্ত্রী এসে যদুকে ধরে নিয়ে যায়। আলো নেভে)
[চতুর্থ দৃশ্য](চাষির বাড়ি)
চাষি।
হায় হায় এ কেমন কথা রে !(২)
দিলাম তোকে ‘লেবুর’ ঝুড়ি
নিয়ে গেলি রাজার বাড়ি,
ঝুড়ি থেকে বেরোল এক ব্যাঙ।
(আর) দেখে রাজা ভাঙল যে তোর ঠ্যাং।।
লেবু বেচার পয়সা দিয়ে
তুই যদু আজ করলি কি এ?
ভাগ্য তোকে মারল যে রে ল্যাং।।
যদু।
না গো বাবা না, আমি লেবু বেচিনি তো।
ভাগ্য আমার মন্দ,
(তাই) ঘটল এমন কাণ্ড।
খেলাম আমি রাজার বাড়ির গুঁতো।
চাষি।
খুব হয়েছে, বেশ হয়েছে, থাক বসে তুই তবে।
বুঝছি এবার গোষ্ঠটাকেই হোথায় যেতে হবে।
যা তো গোষ্ঠ লেবু নিয়ে,
আয় ফিরে আয় রোগ সারিয়ে,
রাজকন্যা তোর কপালেই রবে।। (প্রস্থান)
গোষ্ঠ।
তাইরে নাইরে নাইরে না
তাইরে নাইরে না।
রাজকন্যা আমার হবে,
কেউ তো পাবে না।
তাইরে নাইরে না।।(আলো নেভে। পর্দা পড়ে)
(পর্দার সামনের অংশে গোষ্ঠ ঝুড়ি মাথায় প্রবেশ করে ও চলতে থাকে। উলটোদিক থেকে বামনের প্রবেশ)
বামন।
এই যে দাদা, পেটটি নাদা,
ঝুড়িতে কী আছে গাদা?
গোষ্ঠ।
অত খোঁজে তোর কী ব্যাটা?
হতচ্ছাড়া মুখ্যু ঢ্যাঁটা!
বামন।
বলো না ভাই, ঝুড়ি ভরে কী করে গিজগিজ?
গোষ্ঠ।
ওরে বামন, এতে আছে শুধুই ঝিঙের বীজ।(প্রস্থান)
(বামনের নাচ ও গান)
বামন।
বেশ তবে তাই হোক তাই হোক।।
খুললে ঝুড়ি ওরে গাধা,
দেখবি শুধুই তুই ঝিঙের বিচি গাদা, একগাদা।। (আলো নেভে)
(আলো জ্বলে। চাষির বাড়ি)
গোষ্ঠ।
হায়রে আমার কী কপালের গেরো। হায় হায়!
কীসের তরে কেমন করে বরাত ভেঙে যায়।।
রাজকন্যের রোগ সারাতে
লেবুর ঝুড়ি নিয়েই হাতে
গেলাম রাজার বাড়ি। সেথা লেবু যে পালটায়।।
তারপরে সব সান্ত্রী মিলে
করল আমার দশা ঢিলে
হাতটি ভেঙে নুলো হয়ে ফিরি যে বাসায়।।
চাষি।
ওরে ব্যাটা থাম থাম।
দেখিনি তো এমন বোকারাম।
তোরা দুজন চালাক ভাবতাম
এখন দেখি তোরাই হাঁদারাম।
মানিক।
বাবা এবার আমায় তুমি দাও রাজা সাজিয়ে
রাজপ্রাসাদে যাব আমি লেবুর ঝুড়ি নিয়ে।।
সব বাধা ঠিক পেরিয়ে
পথের কাঁটা সরিয়ে
দেখবে আমি করবই ঠিক রাজকন্যে বিয়ে।।
চাষি।
না রে বাবা না, না রে বাবা না।
তুই আমার ছোট্ট ছেলে, তোকে পাঠাব না।।
দুই দাদা তোর হল রে বিফল,
জানি না এ কেমনতর কল,
ঝুড়ির লেবু পালটে গেল
ব্যাঙ ও ঝিঙের বিচি হল,
যা হয়েছে যথেষ্ট তা, আর কিছু চাই না।।
মানিক।
শ্চিন্তে থাকো তুমি
কেউ কিছু করবে না।
লেবু নিয়ে ঠিক যাব আমি
কোনও বাধা মানব না।। (২)
মানিক তোমার বীর ছেলে
বুঝবে ঠিক ফিরে এলে
দেখবে তখন শেষ হয়ে যাবে
দুঃখের দিন গোনা।। (২)
(চাষি মানিকের মাথায় পাগড়ি বেঁধে দেয়। তারপর হাতে ঝুড়ি তুলে দেয়। আলো নেভে)
(এবার মানিক পর্দার সামনের অংশে ঝুড়ি মাথায় প্রবেশ করে ও চলতে থাকে। একইভাবে উলটোদিক থেকে বামনের প্রবেশ)
বামন।
ও ভাই, ও ভাই, অমন জোরে
কী নিয়ে যাও ঝুড়ি ভরে?
মানিক।
এই ঝুড়িতে লেবু আছে,
রাজবাড়িতে যাই।
লেবু খেয়ে রাজকন্যা
সারুক, এটাই চাই। (প্রস্থান)
(বামনের নাচ ও গান)
বামন।
বেশ তবে তাই হোক তাই হোক।।
তোর তরে প্রার্থনা জানাই,
তুই যেন হোস ঠিক এই রাজ্যেরই জামাই,
হোস জামাই।।(আলো নেভে)
[পঞ্চম দৃশ্য]
রাজা।
তোমার লেবু খেয়ে আমার সেরে উঠল মেয়ে।
কিন্তু আমার জামাই হওয়া শক্ত তারই চেয়ে।।
আর একটি কাজ করো যদি,
তবেই দেব মেয়ের সাদি
কিন্তু সে-কাজ শক্ত ভারি, যাবেই ঘেমে নেয়ে।।
মানিক।
সে কী কাজ? মহারাজ!
বলুন তো দেখি আজ।
পারি কিংবা নাহি পারি, দেখি বুক ফুলিয়ে।।
রাজা।
বেশ তো তবে বলি শোনো।
এমনই চাই নৌকা কোনও,
জলে ডাঙায় সদাই যেন চলে তরতরিয়ে।।
মানিক।
যথা আজ্ঞা হে রাজামশাই,
গড়ব আমি এমন নৌকাই।
এবার তবে সম্মতি দিন, সেই কাজেতে যাই।
সেলাম সেলাম সেলাম রাজামশাই।।
(জঙ্গল। মানিক কাঠ কাটছে। বামনের প্রবেশ)
বামন।
এই বনেতে কাঠ কেটে ভাই করছ তুমি কী?
মানিক।
বানাতে এক আজব নৌকো আদেশ পেয়েছি।
রাজা দেবেন আমায় মেয়ে
এমনই এক নৌকা পেয়ে
ডাঙায় যাবে গড়গড়িয়ে, চলবে জলে বেয়ে।।
বামন।
বেশ বেশ ভাই,
হোক না তবে তাই।
তুমি তোমার কাজটি করো, আমি এখন যাই।।
(মানিক কাঠ কাটতে থাকে, বামন মঞ্চের অন্যপ্রান্তে গিয়ে গান ধরে)
বামন।
কিন্তু রাজা নৌকা পেয়ে
মোটেই দেবে না মেয়ে।
আরও কঠিন শর্ত তোমায় দেবে।
আনতে হবে তোমায় বালক
ঘ্যাঁঘাসুরের লেজের পালক
তারপরেতে সবই তুমি পাবে।
তারপরেতে সবই তুমি পাবে।। (আলো নেভে)
[ষষ্ঠ দৃশ্য] (আলো জ্বলে। মানিকের প্রবেশ)
মানিক।
এবার আমি যাচ্ছি যে সেই ঘ্যাঁঘাসুরেরই দেশে।
কেউ জানে না কোথায় সেটা দেশে নাকি বিদেশে।।
ঘ্যাঁঘাসুরের লেজের পালক আনতে যদি পারি,
পরবে রাজা মাথায়, আমি জামাই হব তারই—
তাই তো আমি যাচ্ছি এখন রাজার নতুন আদেশে,
কেউ জানে না যাচ্ছি কোথায় দেশে নাকি বিদেশে।।
(১ম ব্যক্তির প্রবেশ)
মানিক।
বলতে পারো ভাই,
ঘ্যাঁঘাসুরের বাড়ি আমি কোথায় খুঁজে পাই?
১ম ব্যক্তি।
ঘ্যাঁঘাসুরের বাড়ি যাবে তুমি?
তবে শোনো যেইটুকু যা জানি।
এই দুনিয়ায় আজব সে এক প্রাণী।।
খানিকটা সে জন্তু, আবার খানিকটা সে পাখি,
খিটখিটে তার স্বভাব বড়ো, বিদঘুটে তার ডাকই,
কিন্তু ভায়া, সে যে বড়োই জ্ঞানী।।
এখান দিয়ে নাক বরাবর যাও চলে যাও যদি,
একদিন ঠিক পাবেই পাবে নীলরঙা এক নদী।
তারই পাড়ে ঘ্যাঁঘাসুরের সোনার প্রাসাদখানি।।
মানিক।
বাহ্ বাহ্ বাহ্। বেশ বেশ বেশ। ভারি চমৎকার।
জলের মতোই বুঝিয়ে দিলেন দেখি পরিষ্কার।
১ম ব্যক্তি।
যেমন আমি শুনেছি,
তাই তো তোমায় বলেছি।
এবার তুমি সেই পথে যাও চলে।।
একটা কথা কেবল শোনো
পারো যদি খবর এনো
কাজ মিটিয়ে ফেরার সময়কালে।।
সিন্দুকেরই চাবিটা মোর
হারিয়ে গেছে, তারই খবর
পারো যদি যেও আমায় বলে।।
মানিক।
যদি গিয়ে পৌঁছই সেথা,
নিশ্চয়ই জানব সে কথা।।
বলে যাব তোমাকেই যাবার বেলায়,
হবে না হবে না অন্যথা।।
(লোকটির প্রস্থান। মানিক এদিক ওদিক দেখে)
মানিক।
আঁধার সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল।
দূরে দেখা যায় কীসের আলো।।
হয়তো ওটাই রাতের আশ্রয়,
চলো হে মানিক জলদি চলো।।
(আলো নেভে)
[সপ্তম দৃশ্য](আলো জ্বলে। মানিক ও ২য় ব্যক্তির প্রবেশ)
মানিক।
রাতটি বেশ কাটল বন্ধু তোমার ঘরে এসে।
একসঙ্গে মিলেমিশে আনন্দে আর হেসে।।
২য় ব্যক্তি।
আমিও খুব খুশি হলাম,
বন্ধু তোমার দেখা পেলাম।
জানলাম যে যাচ্ছ তুমি ঘ্যাঁঘাসুরের দেশে।।
শুধু একটি আর্জি আছে,
জেনো ঘ্যাঁঘাসুরের কাছে
আমার মেয়ের অসুখ বড়ো, সারবে সে যে কীসে।।
মানিক।
বেশ বেশ বেশ, বন্ধু তোমায় জানাব ঠিক ফিরে
কী করলে তোমার মেয়ের অসুখ যাবে সেরে।।
এখন তবে দাও গো বিদায়
ধন্যবাদ জানাই তোমায়,
পথের হদিস পেলাম তোমার ভালোবাসার জোরে।।
২য় ব্যক্তি।
ধন্যবাদে নেই দরকার,
হোক শুভ হোক যাত্রা তোমার,
ফিরে এসো বন্ধু আবার কাজটা সফল করে।। (আলো নেভে)
(আলো জ্বলে। মঞ্চে মানিককে হাঁটতে দেখা যায়)
মানিক।
কেটে গেল কত কাল,
জানি না কোথায় সেই সোনার পুরী।
যেথা আছে ঘ্যাঁঘাসুর,
করব কীভাবে তার পালক চুরি।
আরে? সামনে দেখি নদী এক, ঘন নীল বারি।
তবে কি আমি পৌঁছে গেছি ঘ্যাঁঘাসুরের বাড়ি?
আর একটু এগিয়ে তবে দেখি।
(মানিক মঞ্চের পাশে গিয়ে ভালো করে দেখে)
মানিক।
হুররে! এই তো সেই নদী! জলের রঙ নীল।
যেমন ওরা বলেছিল, তেমনি আছে মিল।
আর দূরে ওই তো দেখি প্রাসাদটা সোনার।
রোদের ছটা গায়ে লেগে ঝকমকে বাহার।
কিন্তু কোনও নৌকা তো নেই করতে পারাপার।
তাহলে এই নদী আমি কী করে হব পার?
(বুড়োর প্রবেশ)
বুড়ো।
শোনো ভাই, শোনো ভাই,
আমি বুড়ো একেলাই
এই নদী করি পারাপার।
আমি ছাড়া আর জেনো
ও-পাড়ে যাবার কোনও
নেই তো উপায় বুঝি আর।।
যেখানেতে যেতে চাও
মোর কাঁধে চড়ে যাও
চলো দিই পৌঁছে এবার।।
বলো ভাই বলো ভাই কোথায় যাবে? (২)
মানিক।
যাব আমি সোনার পুরীতে এক,
(যেথা) ঘ্যাঁঘাসুর করে বাস। (২)
আনতে হবে যে তার লেজের পালক,
যেভাবেই হোক।। (৩)
বুড়ো।
অনেক কালের পরে আমি পেলাম এমন লোক,
সাহস নিয়ে করবে লড়াই, আছে এমন ঝোঁক।।
নিজের জীবন তুচ্ছ করে
যাবে ঘ্যাঁঘাসুরের ঘরে,
আহা এমন বীরের তবে যাত্রা সফল হোক।।
মনে রেখো আমার কথা,
মুক্তি আমার আছে কোথা,
একটু জেনে এসো, তবেই ঘুচবে আমার শোক।।
মানিক।
রাখব আমি রাখব ওগো তোমার কথা মনে,
কেমন করে মুক্তি পাবে, আসব সেটা জেনে।। (আলো নেভে)
[অষ্টম দৃশ্য](ঘ্যাঁঘাসুরের সোনার প্রাসাদ। ঘেঁঘি বসে আছে সোনার খাটে। মানিক প্রবেশ করে)
ঘেঁঘি।
এ কী! কীসের গন্ধ?
চারপাশ তো বন্ধ!
এ নির্ঘাত মানুষ হবে, হচ্ছে মনে সন্দ।
(নাক তুলে বাতাসে গন্ধ শোঁকে)
ঘেঁঘি।
কোথা হতে কেমন করে মানুষ এলে?
এ যে দেখি নেহাতই এক বাচ্চা ছেলে।।
ওরে বাছা, শীঘ্র পালা,
ঘ্যাঁঘা এলেই বুঝবি ঠ্যালা,
কড়মড়িয়ে মুণ্ডু খাবে ধরতে পেলে।।
মানিক।
না গো, ফেরার উপায় আমার নাই।
ঘ্যাঁঘার লেজের একটা পালক
চাই-ই আমার চাই।।
কত রাস্তা দিয়ে পাড়ি
এলাম ঘ্যাঁঘাসুরের বাড়ি,
না নিয়ে তা কেমন করে যাই।।
আর একজনের চাবির দিশে,
মেয়ের অসুখ সারবে কীসে,
কিংবা বুড়োর মুক্তি কীসে, সেটাও জানা চাই।
না জেনে তা কেমন করে যাই।।
ঘেঁঘি।
প্রাণটি নিয়ে পালিয়ে যাবে কোথায়,
তা নয় ব্যাটা ঘোরে হাজার কথায়।
কাজ কী করে পরোপকার?
ঘ্যাঁঘার লেজে কী দরকার?
কেন রে তুই মরতে এলি হেথায়?
মানিক।
ঘ্যাঁঘার লেজের পালক গেলে নিয়ে
রাজকন্যার সঙ্গে রাজা দেবেন আমার বিয়ে।।
ঘ্যাঁঘার লেজের একটা পালক তাই
চাই-ই চাই চাই-ই চাই চাই-ই চাই।।
ঘেঁঘি।
আচ্ছা বাপু একটু তবে রোস
ওই খাটটার তলায় গিয়ে বোস।
ভাগ্য সহায় থাকলে পরে তোর
ফিরবি বেঁচে, থাকবি তুই খোশ।।
(মানিক খাটের তলায় গিয়ে ঢোকে। ঘ্যাঁঘাসুরের প্রবেশ)
ঘ্যাঁঘা।
ওরে ঘেঁঘি কোথায় গেলি
শিগগিরি আন খাবার।
বড্ড খিদে পেয়ে গেছে,
করব রে সব সাবাড়।
হুঁ, এ যে মানুষ-গন্ধ পাই—
কোনোই তো ভুল নাই—
আজ বুঝি তুই মানুষ রেঁধেছিস?
(তবে) ওটাই দে আজ খাই।।
(ঘ্যাঁঘা খাটে গিয়ে বসে। ঘেঁঘি খাবার এনে দেয়)
ঘেঁঘি।
মানুষ? আমি মানুষ পাব কোথায়?
তোমার নামে কেউ কি আসে হেথায়?
(ঘ্যাঁঘা হাসতে হাসতে খাবার খায়)
ঘেঁঘি।
আসবে আর কী করে?
প্রাসাদ মোদের তেপান্তরের পারে।
(একটু থেমে চিন্তান্বিত সুরে)
তবে একটা এসেছিল বটে,
খুবই ছোটো, বুদ্ধি নেইকো ঘটে।
যেই বলেছি তোমার নাম,
অমনি যে তার ছুটল ঘাম,
তড়বড়িয়ে ঘরের পানে ছোটে।।
ঘ্যাঁঘা।
তাই নাকি? বেশ। এবার আমি শুই।
পাখার বাতাস কর তো দেখি তুই।
(ঘ্যাঁঘা শুয়ে পড়ে। ঘেঁঘি বাতাস করতে থাকে। খাটের নীচে বসে মানিক ঘ্যাঁঘাসুরের একটা পালক ছিঁড়ে নেয়)
ঘ্যাঁঘা।
ঘেঁঘি, আমার লেজ ধরে কে টানে?
ঘেঁঘি।
সে বাপু কে জানে।
তোমার অমন বিশাল লেজের গোছা—
খাটের কোথায় আটকে গেছে,
খেয়েছ তাই খোঁচা।
ঘ্যাঁঘা।
আচ্ছা বেশ বেশ।
বাতাস করিস আরও জোরে,
আসছে ঘুমের রেশ।
ঘেঁঘি।
আচ্ছা জানো, সেই মানুষটা বললে কত কথা—
সেই যে কাদের চাবি নাকি হারিয়ে গেছে কোথা—
ঘ্যাঁঘা।
জানি জানি সেটা কোথায় আছে।
গদির তলায় লুকিয়েছে তার খোকা,
তাতেই ওরা হয়েছে এমন বোকা।
ঘেঁঘি।
(আর) কাদের মেয়ের কঠিন ব্যারাম নাকি,
জানতে যে চায় সারার উপায়টা কী?
ঘ্যাঁঘা।
হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটাও জানি।
হচ্ছে তাদের খামোকা হয়রানি।
কোলা ব্যাঙেই নিয়ে গেছে মাথার চুল ওর,
সেটা পেতে ঘরের কোণে গর্ত গিয়ে খোঁড়।
ঘেঁঘি।
আরও একটা কথা—
ওই যে বুড়ো দিবারাত্র করছে নদী পার,
কেমন করে ঘুচবে কষ্ট, মিলবে মুক্তি তার?
ঘ্যাঁঘা।
হা হা, ওটা বড়োই বোকা, মস্ত সে এক গাধা।
কাউকে যদি নামিয়ে দেয় নদীটার ঠিক আধা—
মিলবে মুক্তি তার,
নতুন লোকই করবে তখন নদী পারাপার।।
(ঘ্যাঁঘা ঘুমিয়ে পড়ে। ঘেঁঘি চুপিসারে মানিককে বার করে দেয়। আলো নেভে)
[নবম দৃশ্য](নদীর পাড়। বুড়ো ও মানিক)
মানিক।
ও খুড়ো, ও খুড়োমশাই,
চিনতে পারো মোরে?
তোমার কষ্ট ঘুচিয়ে দিয়ে
এবার যাব ফিরে।
বুড়ো।
এই তো খোকা, জলদি বলো, বললে ঘ্যাঁঘা কী,
তোমার কথা শুনব বলেই দাঁড়িয়ে রয়েছি।
জলদি বলো, জলদি বলো, সইছে না আর তর,
কেমন করে মুক্তি আমার এতদিনের পর।
মানিক।
না না খুড়ো, আগে তুমি চলো আমায় নিয়ে,
তোমার ছুটির কথা আমি বলব ও-পাড় গিয়ে।
বুড়ো।
বেশ তবে তাই সই।
চলো তোমায় নদীর ও-পাড় কাঁধে করেই লই।
(বুড়ো আর মানিক বেরিয়ে যায়। তারপর মঞ্চের অপরদিক দিয়ে প্রবেশ করে)
বুড়ো।
এবার বলো শীঘ্র করে, সইছে না আর তর।
ছুটি পাব, ছুটি পাব অনেকদিনের পর।
মাণিক।
এর পরেতে নামিয়ে দিওে
কাউকে নদীর মাঝে,
তাতেই হবে মুক্তি তোমার,
সে লাগবে কাজে। (মানিক দৌড়ে পালায়)
বুড়ো।
বা বা বা! বড়োই ভালো কথা,
তোর কথাতে ঘুচল মনের ব্যথা।
তুই যে বাছা বাঁচালি মোর প্রাণ,
তোকেই রাজা করুক ভগবান। (আলো নেভে)
(আলো জ্বলে। ২য় ব্যক্তির বাড়ি)
২য় ব্যক্তি।
দেখতে দেখতে কাটল মাস
এখনও রোগ সারল না।
হায় ভগবান এ কী হল,
মানিকও যে ফিরল না।
(মানিকের প্রবেশ)
মানিক।
এসেছি! এসেছি সখা! আমি যে আজ এসেছি।
তোমার মেয়ের রোগের ওষুধ জেনেছি গো জেনেছি।।
এবার মেয়ে হবেই ভালো,
হাঁটবে, ছুটবে, ঘুচবে কালো।
ভালো হবার সেই ওষুধই এনেছি আজ এনেছি।।
এই দেখ এদিকে চেয়ে,
ব্যাঙ গেল ওর চুলটা নিয়ে,
এবার ঘরের গর্ত খুঁড়ে সেই চুল বার করেছি।।
(গান গাইতে গাইতে মানিক ঘরের কোণে গর্ত খুঁড়ে চুল বার করে। সঙ্গে সঙ্গেই মেয়ে
ভেতর থেকে দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে)
২য় ব্যক্তি।
কী আনন্দ আজিকে আমার,
ঘুরবে মেয়ে, ফিরবে চারিধার।।
তাই তোমাকে দিলাম রত্ন,
দশটা উটে করে যত্ন
যাও নিয়ে যাও ঘরেতে এবার।। (আলো নেভে)
(আলো জ্বলে। চারণের প্রবেশ)
চারণ।
চোদ্দ মাস পরে মানিক ফিরিল আবার,
রত্নভরা উটের সারি সঙ্গে ছিল তার।
ঘ্যাঁঘার পালক দেখে সবাই হল কুপোকাত,
রাজকন্যা বিয়ে করে করলে বাজিমাত।
ধনরত্ন দেখে রাজার লোভ হল ভীষণ,
ঘ্যাঁঘাসুরের দেশে রাজা চলিল তখন।
তারপরে যে তার কী হল কেউ কি জানো ভাই?
সেটাই এবার বলি শোনো চুপ করে সবাই— (প্রস্থান)
(রাজার প্রবেশ)
রাজা।
এই কে আছিস, কোথায় আছিস, নৌকা নিয়ে আয়।
রাজা যাবেন সোনার পুরী, সময় বয়ে যায়।
বুড়ো।
আজ্ঞে হুজুর আমি আছি আপনার সেবায়।
আমার কাঁধেই চড়ে সবাই নদীর পাড়ে যায়।
রাজামশাই, দয়া করুন,
চট করে মোর কাঁধে চড়ুন,
চলুন এবার পৌঁছে দেব নদীর সীমানায়।।
রাজা।
বেশ তো তবে জলদি করো,
হাতে সময় অল্প বড়ো,
নীল নদীটার পাড়ে তুমি পৌঁছে দাও আমায়।
(পর্দায় দেখা যায় রাজা ও বুড়োকে। তারা নদী পেরোচ্ছে। চলতে চলতে বুড়ো
রাজাকে জলে ফেলে দেয়। রাজার প্রবেশ)
রাজা।
আরে আরে! এই বেয়াকুফ, এ কী করলি গোল?
জলে আমার পোশাক গেল, শীঘ্রই আমায় তোল।।
আরে আরে! চললি কোথা?
আমি পড়ে রইব হেথা?
না তুললে মাথা নেব, শুনবি হরিবোল।।
কী সব্বোনাশ! শোনেই না আর,
পার করে দে বাছা আমার,
দেব গোটা রাজ্য আমার, পালটাবে তোর ভোল।।
শুনল না যে দামড়া ব্যাটা,
চলেই গেল এমন ঢ্যাঁটা,
হায়রে আমার প্রাণটা এবার গেলই রসাতল।।
বুড়ো। (মঞ্চে এসে)
মরবে না গো তুমি রাজা,
করবে নদী পার।
এতকাল তা করতাম আমি
এবার পালা তোমার।।
(হাঃ হাঃ হাঃ, কেমন মজা!)
অনেকদিনই অনেক শাস্তি
লোককে দিয়েছ,
এবার দেখো নিজের শাস্তি
নিজেই নিয়েছ।
(আজ) আমি পেলাম মুক্তি,
(তুমি)নিলে আমার ভার।।
সব হল সেই ছেলের জন্য
সে-ই সেরা সবার।। (প্রস্থান)
(চারণের প্রবেশ)
চারণ।
আজও গেলে দেখতে পাবে
দুষ্টু রাজা করছে নদী পার।
দেখে যদি দুঃখটা হয়
তখন তাকে বোলো না-হয়
কেমন করে মুক্তি হবে তার।।
কিন্তু খুবই সাবধানে ভাই
সেই কথাটা জানানো চাই,
নইলে কিন্তু বিপদ হবে তোমার।।
(ধীরে ধীরে পর্দা পড়তে থাকে)