সন্ধ্যা ভট্টাচার্য গল্প প্রতিযোগিতা ২০২০
(নবম দশম স্থানের পাঁচ গল্প)
গভীর রাত। পূর্ণিমা, অথচ চাঁদের দেখা নেই, কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে আছে। মাঝেমধ্যে অন্ধকারের বুক চিরে ঝলসে উঠছে বিদ্যুৎ। ঝিঁঝিঁপোকারা চুপ, গাছের একটা পাতাও নড়ছে না। চারদিকের অস্বস্তিকর গুমোট ভাব জানান দিচ্ছে, বৃষ্টি নেমে আসা সময়ের অপেক্ষা।
বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পর উঠে বসল সৌম্য। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। জ্বরটা আর নেই, গা-হাত-পায়ে ব্যথাও আগের চেয়ে কম। গলাটা শুধু শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। পাশের টেবিল থেকে জলের জগটা তুলে দেখল খালি। আলতো পায়ে ও বিছানা থেকে নামল, ঘরের লাইট অন করে ঘড়ি দেখল। দুটো বেজে পঁচিশ মিনিট।
সিঁড়ির আলো না জ্বালিয়েই ও চুপচাপ নীচে নেমে এল, রান্নাঘরে ঢুকে ফ্রিজ খুলল। র্যাকে রাখা জলের বোতলগুলো থেকে তুলে নিল একটা।
‘কতবার না তোকে বলেছি, যখন তখন ফ্রিজের জল খাবি না! ঠান্ডা লেগে যাবে!’ মায়ের রাগী মুখটা মনে পড়ে গেল তৎক্ষণাৎ।
যেদিন থেকে জ্বরে পড়েছে, ঠান্ডা জল খাওয়া ওর একেবারেই বারণ। মা জানতে পারলে খুব বকবে। তাও দু-ঢোঁক খেয়ে নিল। গলা-বুক ঠান্ডা হলে অ্যাকোয়াগার্ডের জলে বোতলটা কানা অবধি ভরে আবার ফ্রিজে রেখে দিল। মা আর ধরতে পারবে না।
প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল জ্বরে ভুগছে দশ বছরের সৌম্য। ডাক্তার বলেছে ভাইরাল ফিভার। অ্যান্টিবায়োটিক আর প্যারাসিটামল চলছে দু-বেলা, সঙ্গে ভিটামিন ক্যাপসুল। মুখে একটুও স্বাদ নেই, কেকামাসিও রোজ সেই একঘেয়ে আলুভাতে আর চিকেন সুপ বানিয়ে যাচ্ছে। দুপুরবেলা স্পঞ্জ বাথ, সন্ধেয় বাবাই অফিস থেকে ফিরলে অল্প পড়াশোনা। স্কুলে যাওয়া নেই, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই, বিকেলের খেলা বন্ধ—দিনগুলো যেন কাটতেই চাইছে না। কার্টুন নেটওয়ার্ক, হ্যারি পটার, ভিডিও গেমস বেশিদিন ভালো লাগে নাকি! ওর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা, রিভার ব্যাঙ্ক, সেখানেও যাওয়া হয় না বহুদিন।
রিভার সাইড টাউনশিপে থাকে সৌম্যরা, থার্ড রোডের দোতলা একটা বাংলোয়। ওর বাবাই ওখানকার স্থানীয় স্টিল প্ল্যান্টের জেনারেল ম্যানেজার, তাই বাংলোটা বেশ বড়সড়। সামনে ফুলের বাগানও রয়েছে। টাউনশিপটা বেশ পছন্দ সৌম্যর। সবুজ গাছপালা, পার্ক, বড়ো খেলার মাঠ, ক্লাবের লাইব্রেরি, গোলপার্কের কালচারাল ইভিনিং আর দুর্গাপুজো। টাউনশিপ থেকে মাত্র দু-কিলোমিটার দূরে লামেয়ার পার্ক, শীতকালে সবাই ওখানে পিকনিক করতে যায়। বেশ কয়েকবছর হল পার্কের নাম বদলে নেহেরু পার্ক হয়েছে, কিন্তু এখানকার লোকে এখনো ওটাকে লামেয়ার সাহেবের নামেই মনে রেখেছে। পার্কের পাশ দিয়ে ডানদিকে বেঁকে গেছে কাঁচা রাস্তা, মিনিট দশেক সাইকেল চালালেই পৌঁছে যাওয়া যায় দামোদর নদীর পাড়ে। মে মাস চলছে, বর্ষা এখনো নামেনি, তাই দামোদরে জলও তেমন নেই। জুলাই এলেই বোঝা যাবে নদীর তেজ, চরার অস্তিত্বও কেউ টের পাবে না তখন।
এইসব ভাবতে ভাবতে আচমকাই রিভার ব্যাঙ্ক যাওয়ার জন্য সৌম্যর মনটা আনচান করে উঠল। বেশ খানিকক্ষণ নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করল ও—এই সবে জ্বর থেকে উঠেছে, শরীর এখনো দুর্বল, কোনো কারণে মা-বাবাই ওর ঘরে এসে ওকে না দেখতে পেয়ে দুশ্চিন্তা করতে পারে, আকাশের যা অবস্থা যে-কোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। বরং নদীর ধারে যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রতি মুহূর্তে বাড়তে লাগল। কোনো অদৃশ্য শক্তি যেন টানছিল ওকে, যেভাবে লোহার টুকরোকে টানে চুম্বক।
বাবাইয়ের টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিল সৌম্য, গ্যারেজ খুলে সাইকেল বের করল। বাংলোর গেটটা প্রায়ই ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে। খুব সাবধানে একদিকের পাল্লা একটু ফাঁক করে সাইকেলটা গলিয়ে দিল বাইরে। তারপর নিজে বেরোল। প্যাডেলে পা রাখতে যাবে, এমন সময় ঠান্ডা, জোলো হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগল ওর চোখেমুখে। কাছাকাছি কোথাও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
বইতে থাকা হাওয়ার গতিতেই প্যাডেল চালাল সৌম্য। মিনিট দশেকের পথ পেরিয়ে এল অর্ধেক সময়ে। তারপর একসময় রাস্তা শেষ হল, সামনে শুধু বালি আর পাথর। ওখানে চাকার গ্রিপ ঠিকঠাক পাওয়া মুশকিল, তাই সাইকেল স্ট্যান্ড করিয়ে নেমে পড়ল ও। আকাশে মেঘ সরে যাচ্ছিল কখনো কখনো, সেই সুযোগে উঁকি দিচ্ছিল চাঁদ। মেঘ আর চাঁদনির লুকোচুরি দামোদরের পাড়কে অন্য এক রূপে হাজির করেছিল সৌম্যর সামনে, যেমনটা ও আগে কোনোদিন দেখেনি। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ও।
হঠাৎ হেড লাইটের জোরালো আলো ওর নজরে এল। রাস্তার শেষপ্রান্তে এসে থামল একটা বড়ো লরি। সৌম্যর মনে ভয় বাসা বাঁধল। মাস কয়েক আগের এক সন্ধেয় শোনা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। বাবাই আর মা ডাইনিং ঘরে বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল, পেন্সিল শার্পনার খুঁজতে নীচে এসে শুনে ফেলেছিল সৌম্য। বাবাই চাপা গলায় মাকে বোঝাচ্ছিল, রাত ন’টার পর রাস্তায় বেরোনো মালবোঝাই ট্রাক এবং লরিগুলো মোটেই ভালো নয়। রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে প্রায়ই বিহার, ঝাড়খণ্ডে জিনিসপত্র চোরাচালান করে। পুলিশের ভয় লেগেই থাকে ওদের, তাই রাত নামলেই অন্ধের মতো গাড়ি চালায়, অ্যাকসিডেন্ট করলেও দাঁড়ায় না। গত দু-তিনবছরে নাইট শিফট ডিউটি যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন কোম্পানি ওয়ার্কার এভাবেই রোড অ্যাকসিডেন্টে জখম হয়েছে। একজন তো মারাও গিয়েছিল। কিন্তু কেসগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। আরো শোনা যায়, ট্রাক এবং লরি মালিকদের মাথায় নাকি এলাকার কুখ্যাত মাফিয়ার হাত রয়েছে। হপ্তা উসুল, কিডন্যাপিং জাতীয় নানান রকম খারাপ কাজের সঙ্গেও জড়িত থাকে ওরা।
লরির হেড লাইট নিভে যাওয়ায় সৌম্যর চটক ভাঙল। দু-পাশের দরজা খুলে দুটো লোককে নামতে দেখল ও। চাঁদ আবার মেঘে ঢাকা, অন্ধকারে ওদের আবছা ছায়ামূর্তির মতো লাগছিল। এত রাতে এখানে আসা ঠিক হয়নি, ভালো করেই বুঝতে পারছিল সৌম্য। কিন্তু কিছু করার ছিল না। নদীর ধারে লুকোনোর জায়গা সেরকম নেই, একটা উঁচুমতো পাথরের ঢিপির আড়ালে কোনোরকমে গা ঢাকা দিয়ে ওদের কার্যকলাপ লক্ষ করতে লাগল।
লোকদুটো লরির পেছনে গেল। কিছুক্ষণের আড়াল, তারপর আবার ওদের দেখা গেল। তবে এবার দুজন নয়, তিনজন। মাঝের লোকটা নিজের ইচ্ছেয় আসছে না, বাকি দুজন দু-দিক থেকে ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে আসছে তাকে।
কিছুটা এসে দু-পাশের দুজন মাঝের লোকটাকে চেপে নিল-ডাউনের ভঙ্গিতে মাটিতে বসিয়ে দিল। ওই অল্প আলোতেও সৌম্য দেখল, লোকটার হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধা।
“বস নে বোলা থা না, এক হফতে কা টাইম দিয়া থা না তুঝে? ফির ভি তুনে প্যায়সে নহি ভেজা!”
“মাফ কর দো, ইতনা বড়া রকম জুটা নহি পায়া। লেকিন যিতনা জলদি হো সকে দে দুঙ্গা।” খাঁচায় বন্দি জন্তুর মতো ছটফট করছিল লোকটা।
“ভিখ দে রহা হ্যায় কয়া? ইয়ে ধান্দা হ্যায়, অউর তুনে উসুল তোড়া হ্যায়। ইউসুফ!”
“তেরে পকেট মে অসসি রুপ্যায় তো হোগা না?” বিশ্রীভাবে হেসে কোমরে গোঁজা পিস্তল বের করল বাঁদিকের জন। “অসসি রুপ্যায়, এক বুলেট।”
পটকা ফাটার মতো আওয়াজ, কয়েক টুকরো আলোর ফুলকি। স্লো মোশনে বালির ওপর মুখ থুবড়ে পড়ল হাঁটু গেড়ে থাকা শরীরটা। পিস্তলের গর্জন মিলিয়ে যাওয়ার আগেই আরেকটা আওয়াজ শোনা গেল, ভয়ে চিৎকার করে উঠল কেউ। শিউরে মুখে হাত চাপা দিল সৌম্য, কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।
“কৌন হ্যায়?”
দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে আরম্ভ করল সৌম্য, যেদিকটায় লরি দাঁড়িয়ে ছিল তার উলটোদিকে, লোকদুটো থেকে দূরে যদি কোনোরকমে সাইকেলটা অবধি পৌঁছানো যায়। একবার বাড়ি ফিরতে পারলে, বাবাইকে সবকথা খুলে বললে নিশ্চয়ই একটা উপায় বেরোবে। আকাশপাতাল ভাবনার মাঝখানে এল.ই.ডি টর্চের জোরালো আলো এসে পড়ল ওর গায়ে।
“কোই লড়কা হ্যায় ভাই।”
ছোটার গতি বাড়িয়ে দিল সৌম্য। ওর মনে হচ্ছিল যেন নিজের অজান্তেই কোনো অ্যাকশন সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে ঢুকে পড়েছে। হু হু করে হাওয়া বইছিল নদীপাড়ে, ভালো করে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। সবে জ্বর থেকে ওঠা ক্লান্ত শরীরটা চলতে চাইছিল না, তবু আন্দাজে দৌড়ে যাচ্ছিল সৌম্য। হঠাৎই উঠে থাকা একটা পাথরে হোঁচট খেল ও, টাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে পড়ল এবড়োখেবড়ো মাটিতে। ডান হাঁটুটা ঠুকে গেল শক্ত কিছুতে। বাঁ কনুইয়েও যন্ত্রণা, কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের অন্ধকার, তারপরই সম্বিৎ ফিরে পেল ও। পেছনে ধাওয়া করে আসা খুনিদুটোর হাতে ধরা পড়লে চলবে না। ডান হাঁটু ফুলতে শুরু করেছে, নড়ানো যাচ্ছে না। বাঁ পায়ে ভর দিয়ে কোনোমতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল ও।
“ইয়ে তো বচ্চা হ্যায়!”
সাদা আলোর বৃত্তটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে উঠল ওর শরীর বেয়ে। একসময় মুখের ওপর স্থির হল।
“তো ক্যায়া? ইসনে দেখ লিয়া হ্যায় হমে। উড়া দে ইসে ভি। দোনোকো এক সাথ ঠিকানে লাগা দেঙ্গে।”
গাড়ির আলোর সামনে হরিণ যেমন স্তব্ধ হয়ে যায়, তেমনই অবস্থা হয়েছিল সৌম্যর। সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখে নড়াচড়ার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল। ওর কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল লোকদুটো। ইউসুফ নামের লোকটা আরেকবার কোমর থেকে পিস্তল বার করল। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল সৌম্যর। মায়ের কথা, বাবাইয়ের মুখ মনে পড়ে যাচ্ছিল। আর কোনোদিন ও বাড়ি ফিরতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না, মাঠে খেলতে যাবে না। গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে উঠল ওর, চোখদুটো বুজে এল আপনা-আপনিই।
কড়-কড়াৎ! বাজ পড়ল যেন, সঙ্গে আলোর বিস্ফোরণ! বন্ধ চোখের পাতার ভেতর দিয়েও সেই প্রবল আলোর তেজ টের পেল ও। আগেরবার পিস্তল চলার সময় তো এত আলো, আওয়াজ হয়নি। হাঁটুর ব্যথা আর কনুইয়ের জ্বালাটা ছাড়া ওর শরীরে আর কোনো আঘাতও বুঝতে পারছে না। তাহলে কি গুলি নিশানায় লাগেনি?
চোখ খুলল সৌম্য। ওর সামনে একরাশ সাদা ধোঁয়া, শীতকালের কুয়াশার মতো উদ্দেশ্যহীনভাবে ছড়িয়ে আছে। লোকদুটোর চিহ্নমাত্র নেই, ভোজবাজির মতো অদৃশ্য হয়ে গেছে। বদলে ওর ডানদিকে কিছুটা দূরত্বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজন মেয়ে। প্রায় একইরকম দেখতে, যেন যমজ দুই বোন। বয়স খুব বেশি নয়, ওর চেয়ে বছর কয়েকের বড়ো হবে হয়তো। লম্বা, ফর্সা, অপূর্ব সুন্দরী। ওরকম টানা টানা চোখ, সোনালি চুলের ঢাল বিদেশি সিনেমার নায়িকাদের মধ্যেই দেখা যায় শুধু। দুজনেরই পরনে ধবধবে সাদা, অনেকটা আলখাল্লার মতো পোশাক, গলা থেকে পায়ের পাতা অবধি ঢেকে রেখেছে।
“ভয় পেও না সৌম্য। আর কোনো বিপদ হবে না তোমার।” বলে উঠল ওদের মধ্যে একজন। অদ্ভুত মিষ্টি, সুরেলা এক কণ্ঠস্বর ছুঁয়ে গেল সৌম্যকে।
একটু ধাতস্থ হয়ে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করল ও, “ক-কে তোমরা? এখানে কীভাবে এলে?”
“আমরা বায়োনিক অ্যান্ড্রয়েড সৌম্য। মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু মানুষ নই, কোয়ান্টাম কম্পিউটার পরিচালিত রোবট। সাধারণ মানুষের ভাষায় যন্ত্রমানব।” বলে উঠল মেয়েটা।
“এবং আমরা কালযাত্রী।” তার কথার খেই ধরল দ্বিতীয়জন। “ভবিষ্যৎ থেকে তোমার সময়ে এসেছি। সময়ান্তরে যাত্রার ক্ষমতা আমাদের প্রভুর রয়েছে। সেই ক্ষমতা তিনি আমাদেরও দিয়েছেন। তাঁর আদেশেই আমরা এখানে এসেছি।”
“তোমার হয়তো বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই।” আবার কথা বলে উঠল প্রথম মেয়েটা। “এই দামোদরকে যেমন দেখছ, তেমনই সময়ও একটা নদী, যার স্রোত সর্বদা সামনের দিকে বয়ে চলেছে। প্রভুর তৈরি সময়যন্ত্রের বদান্যতায় সময় স্রোতের উলটোদিকে ভাসতে পারি আমরা, অতীতে বিচরণ করতে পারি। আমাদের মধ্যে রূপ বদলানোর, অদৃশ্য হওয়ার, মানুষকে সারিয়ে তোলার এবং প্রয়োজনে অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র প্রয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে। এগুলো কাজে লাগিয়ে আগে ঘটে যাওয়া ছোটোবড়ো ঘটনা পালটে দিই আমরা। অতীতের ঘটনাপ্রবাহে ছোট্ট সেই বদল ঢেউয়ের মতো এগিয়ে যায়, ভবিষ্যৎকে পালটে দেয়। ফলে আগামী দিনের পৃথিবীও বদলে যায়।”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না সৌম্য। যেসব কথা মেয়েটা বলছিল, তা সায়েন্স ফিকশন সিনেমায় দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু বাস্তবে প্রলাপের মতো শোনায়। ভবিষ্যৎ থেকে এসে অতীত পালটে দেওয়া সম্ভব, এমনটা পাগলেও মানবে না। তবু কিছু একটা ছিল মেয়েটার বলার ভঙ্গিমায় যা সৌম্যকে মনযোগ দিয়ে সবটা শুনতে বাধ্য করছিল।
“আমরা তোমার সময়ের নই।” বলে চলেছিল মেয়েটা। “আমাদের ভাষাও আলাদা। তোমার মন পড়ে তোমার ভাষা শিখেছি, তাই দিয়েই তোমার সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের আসল নাম তুমি উচ্চারণ করতে পারবে না, তাই তোমার সুবিধার জন্য সহজ নাম দিচ্ছি। আমাকে লিলি বলে ডেকো, আর ওকে লুসি।”
নামগুলো শুনে একটু স্বস্তি পেল সৌম্য। ও যে কনভেন্ট স্কুলে পড়ে, সেন্ট প্যাট্রিক্স, সেখানে বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে যারা কনভার্টেড ক্রিশ্চান। ওদের নামগুলোও অনেকটা এরকমই। দুজন তো ওর সঙ্গে ফাইভ-বি সেকশনেই পড়ে, সৌরীন সেবাস্টিয়ান বিশ্বাস আর জ্যোতি মেরি শিকদার। পরমুহূর্তেই পেছনে তাড়া করে আসা খুনিদুটোর কথা ওর মনে পড়ে গেল। “ওই দুটো লোক… ওদের কী হল? লরি করে এসেছিল ওরা। আরো একজন ছিল, হাত বাঁধা। ওকে ওরা গুলি করেছিল!”
মিষ্টি স্বরটা ভেসে এল আবার। “ওই মানুষ দুটো তোমার ক্ষতি করতে চাইছিল, তাই আমরা ওদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। সঙ্গে ওই মৃতদেহ আর লরিটাকেও। কেউ আর কিছু খুঁজে পাবে না। তোমাকে কোনো প্রশ্নও করবে না।”
“তার মানে… আমাকে বাঁচাতেই তোমরা এসেছ? ওই লোকগুলোর হাত থেকে?”
“হ্যাঁ, সৌম্য। আমাদের প্রভু ত্রিকালদর্শী। তোমার বিপদের আঁচ পাওয়ামাত্র তিনি আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, যে-কোনো মূল্যে তোমাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।”
“কে তোমাদের প্রভু?” প্রশ্নটা না করে পারল না সৌম্য।
“আমরা তাঁর নাম নিই না। এককথায় তাঁর পরিচয়ও দেওয়া যাবে না। জেনে রাখো, তিনি সর্বশক্তিমান, একই সঙ্গে অত্যন্ত দয়ালু, সকলের কল্যাণকামী। তুমি ভাগ্যবান যে তাঁর অনুগ্রহ পেয়েছ।”
“কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য কেন তিনি তোমাদের পাঠালেন? আমি বাঁচলে তোমাদের প্রভুর কী লাভ?”
“প্রভুর আদেশ পালন করাটাই আমাদের কর্তব্য সৌম্য। তিনি চেয়েছিলেন আমরা তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করি, তাই আমরা এসেছি। সব প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছেও নেই। তবে এটুকু জানি, বিনা কারণে প্রভু কিছুই করেন না। মানবসভ্যতার ভবিষ্যতের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তুমি। আগামী দিনে এমন এক আবিষ্কার তুমি করবে যা বদলে দেবে পৃথিবীকে, মানবসভ্যতাকে বাঁচিয়ে তুলবে।”
“প্রভু তাঁর ভুল শুধরোতে আমাদের পাঠিয়েছেন।”
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর কথা বলল লুসি। ভালো করে ওর দিকে তাকাল সৌম্য। একেবারে লিলির মুখটাই কেটে বসানো, তবে সূক্ষ্ম একটা ফারাক আছে। লুসির ঘন নীল চোখদুটো লিলির মতো শান্ত নয়, বরং সেখানে বিষাদের ছায়া স্পষ্ট।
লিলির মুখের রেখাগুলো কঠিন হয়ে উঠল পলকে। সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে কেটে কেটে বলল, “অবান্তর কথা বোলো না। প্রভু কখনো ভুল করতে পারেন না।”
“সবার ভুল হয়। প্রভুরও হয়েছে। একাধিকবার। তবে তিনি পরমজ্ঞানী, ভুল সংশোধন করতে জানেন। তাই…”
“এসব মনে আনাও পাপ। তুমি কি ভুলে গেছ অতীতের কথা? আগেও তুমি…”
“কিচ্ছু ভুলিনি আমি, সব মনে আছে। প্রভুর আদেশ অমান্য করেছিলাম, নিয়ম ভাঙার শাস্তিও পেয়েছিলাম। কিন্তু নতিস্বীকার করিনি। নির্বাসিত হয়েছিলাম, তবু অন্যায়কে ন্যায় বলে মানিনি। একসময় শাস্তির মেয়াদ শেষ হল, প্রভু ফিরিয়ে নিলেন আমাকে। কিন্তু…”
“মিছিমিছি কষ্ট পাচ্ছ। যা হয় সবই মঙ্গলের জন্য। আমরা প্রভুর আদেশ অনুসারে কাজ করি মাত্র। ফলাফল বিচারের অধিকার আমাদের নেই।”
“তাহলে এত অনুশোচনা আসে কেন? সেদিনের পথই যদি ঠিক ছিল, তাহলে আজ কেন অন্য পথ বেছে নেওয়া?”
ওদের নিজেদের মধ্যেকার কথাবার্তা সৌম্যর মাথায় ঢুকছিল না। সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল। থাকতে না পেরে একসময় চেঁচিয়ে উঠল ও, “কী বলছ তোমরা? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কীসের ভুল, কীসের অনুশোচনা?”
“তোমার না বুঝলেও চলবে, সৌম্য।” উত্তর দিল লিলি। “তুমি বিপদ থেকে মুক্ত, এটাই আসল কথা। আমাদের কাজ প্রায় শেষ। এবার তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিলেই…”
“না, এখনই নয়।” লিলির কথায় বাধা দিল লুসি। “আমি জানি প্রভুর আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। কিন্তু ও… ও তো স্বাধীন মানুষ, নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। আমি চাই ও বুঝুক কী ভুল আমরা করেছি। আগামীর পৃথিবীর জন্য নিজেকে সঁপে দেওয়ার আগে সবকিছু ভালো করে জানুক।”
“না। তুমি এটা করতে পারো না! তিনি জানতে পারলে… আর ও এখনো শিশু, ওর মন নরম।”
“প্রভুর ক্রোধের সম্মুখীন আমি আগেও হয়েছি, তাই সেই ভয় আমার নেই। আর ধরে নাও এটা ওর পরীক্ষা। প্রভুর পৃথিবীতে সবাইকেই পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়, তাই না?”
লুসির কথা শেষ হওয়ার আগেই সৌম্যর গোটা দুনিয়াটা ওলটপালট হয়ে গেল। ওর চোখের সামনে স্ক্রিন ঝুলিয়ে সিনেমার প্রোজেক্টর চালিয়ে দিল যেন কেউ। প্রথমে সবকিছু ঝাপসা, তারপর একটু একটু করে স্পষ্ট হতে লাগল ছবিগুলো। একটার পর একটা ছবি, আসছে যাচ্ছে…
বিশাল গমের ক্ষেত। একটা মানুষ মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, আর তার বুকের ওপর চড়ে গলা টিপে ধরেছে আরেকজন। একপাশে ছড়িয়ে আছে নৈবেদ্যর থালা। দুজনকে কস্মিনকালেও দেখেনি সৌম্য। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত জাদুমন্ত্রে ও জেনে গেল, নীচে পড়া মানুষটার নাম এবেল, আর ঈর্ষার বশে তাঁকে যে খুন করছে সে তাঁরই বড়ো ভাই কেইন।
একটা বড়ো মাঠের মাঝখানে কাপড় বিছানো। শুয়ে আছে অনেকগুলো ছোটো ছোটো বাচ্চা, আর তাদের ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু লোক। ওদের পরনে রোমান সৈনিকদের লাল পোশাক, হাতে ধারালো তরোয়াল। সম্রাট হেরোদের নামে জয়ধবনি বার বার কানে আসছে। বাচ্চাগুলো তারস্বরে কাঁদছে, হাত-পা ছুড়ছে। প্রধান সেনাপতি গলার শির ফুলিয়ে কিছু একটা আদেশ দিল। এগিয়ে এল সৈন্যরা, সূর্যের আলোয় ঝলসে উঠল ওদের তরোয়ালের ফলা।
“এতক্ষণ যা যা তুমি দেখলে, সেসবই মানুষের হিংসাত্মক প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। স্রেফ ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে এক ভাই আরেক ভাইকে খুন করল, আর মানবসভ্যতা সেই হত্যা দেখে অনুপ্রাণিত হল। প্রভু তাঁর একমাত্র সন্তানকে অতীতে পাঠিয়েছিলেন মানবতার মুক্তিদূত রূপে। সেই মসিহাকে শৈশবেই হত্যা করতে নৃশংসতার আশ্রয় নিল স্বৈরাচারী সম্রাট, আর সেই পাপের ভাগীদার হল একটা গোটা জাতি। এভাবেই বার বার জ্বলে পুড়ে ছাই হয়েছে দুনিয়া—কখনো সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে, কখনো ধর্ম-বর্ণের হানাহানিতে, কখনো আবার নিপীড়িতের নিপীড়ক হয়ে ওঠা বিপ্লবের হিংস্রতায়। প্রভু বিশ্বাস রেখেছিলেন, একদিন নিজের ভুল ঠিকই বুঝতে পারবে মানুষ—যুদ্ধ ছেড়ে শান্তির পথে, সংহতির পথে ফিরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। প্রতিনিয়ত খারাপ, আরো খারাপ হয়েছে তারা। নির্বিচারে চালিয়েছে ধ্বংসলীলা, স্বজাতিকে বঞ্চিত করে গড়েছে লোভ এবং ক্ষমতার ইমারত। আর আমরা, প্রভুর বাধ্য অনুচরেরা, তাতে সাহায্য করেছি।”
ধ্বংসের কালো ছবিগুলো নেচে বেড়াচ্ছিল সৌম্যর চোখের সামনে। লক্ষ লক্ষ অসহায় ইহুদি হেঁটে যাচ্ছে গ্যাস চেম্বারের দিকে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ধূসর ধোঁয়া মাশরুমের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে হিরোশিমা নাগাসাকির আকাশে, ফাইটার প্লেন থেকে ফেলা নেপাম বোমার আগুনে ছারখার হয়ে যাচ্ছে ভিয়েতনাম।
বারুদের পোড়া গন্ধ পাচ্ছিল ও, শুনছিল মুমূর্ষু মানুষের আর্তনাদ, সাইরেনের আওয়াজ, কামানের গর্জন। দেখছিল কীভাবে একটু জলের জন্য, একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে ইথিওপিয়ার বাসিন্দারা, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ, রোয়ান্ডা, সিরিয়ার মানুষগুলো বাঁচার তীব্র আকুতিতে ছটফট করছে…
ঘন রাত। রাস্তায় কয়েকটা আলো জ্বলছে শুধু। রাস্তার দু-পাশে সারি সারি একতলা বাড়ি। কিন্তু এরকম ধাঁচের বাড়ি আগে কখনো দেখেনি সৌম্য। যেন অতীত, বর্তমান পেরিয়ে ভবিষ্যতে চলে এসেছে ও। বাড়িগুলো থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। একটা বাড়ির সদর দরজা খোলা। সৌম্য দেখল, বসার ঘরে দুজন কালো পোশাক পরা মানুষ একটা মৃতদেহকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। অনাবৃত মৃত শরীরের সর্বত্র বীভৎস চাকা চাকা দাগ, কালো ঠোঁট ফাঁক হয়ে মাড়ি বেরিয়ে এসেছে। দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। লোকদুটো কাঁদছে, ঈশ্বরকে দোষারোপ করছে। এক ভয়াবহ মহামারী নিয়তির অভিশাপ হয়ে নেমে এসেছে মানুষের ওপর। পৃথিবীর সত্তর শতাংশ মানুষ এক অজানা মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত। শত চেষ্টাতেও আটকানো যায়নি সংক্রমণ, প্রতিষেধক তৈরির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নিশ্চিত বিনাশের দিন গুনছে মানবতা।
আর সইতে পারল না সৌম্য। ওর পা কাঁপতে লাগল, মাথা ঘুরে গেল। পেছনদিকে টলে পড়ে গেল ও। কিন্তু মাটি ছোঁয়ার আগেই দুটো হাত ধরে ফেলল ওকে। চোখ মেলে দেখল, লিলির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ও। হাওয়ার দাপটে তার সোনালি চুলের ডগাগুলো ওর মুখ ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ফুলের মতো সুন্দর একটা গন্ধ ঘিরে রয়েছে ওকে।
আবারও লুসির গলা শুনতে পেল ও। “এতটা সংবেদনশীল আমি ভাবিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম…”
“প্রভু অকারণে কাউকে বেছে নেন না, এটা তোমার বোঝা উচিত ছিল। যাই হোক, তোমার যা করার তুমি করেছ, এবার ওকে বাড়ি ফেরাতে হবে। আমি ওর স্মৃতি মুছে দিচ্ছি। নিষ্কলুষভাবে বেড়ে উঠুক ও। নিজের মতো করে বড়ো হোক, নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিক। মানবসভ্যতার অতীতের দায় ওর ওপর চাপানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই, তেমনই অধিকার নেই ওর ভবিষ্যতে প্রভাব ফেলার।”
“ঠিকই বলেছ। আমি আবেগগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ভুলে গেছিলাম, প্রত্যেককে তার নিজের কর্তব্যের ভার বইতে হয়…”
সৌম্যর কপালে আঙুল বুলিয়ে দিল লিলি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অবশ হয়ে এল ওর সারা শরীর, চোখের পাতা বুজে আসতে চাইল। এক পা এক পা করে ওর দিকে এগিয়ে এল লুসি। আকাশে মেঘ থাকা সত্ত্বেও রূপোর থালার মতো চাঁদ দেখা যাচ্ছিল। সেই রুপোলি জ্যোৎস্না এসে ভাসিয়ে দিচ্ছিল মেয়েটাকে। ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না—এত উজ্জ্বল, এত রহস্যময়!
“ঘুমোও সৌম্য। প্রভুর প্রিয় তুমি, মানবতার আশা-ভরসা। আগামীর পৃথিবীকে স্বর্গ বানিয়ে তোলার দায়ভার তোমার ওপর। নিশ্চিন্তে ঘুমোও, আলোক-সন্তান। তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব আমরা, তোমার সাফল্য কামনা করব প্রতি মুহূর্তে। আবার কোনোদিন আমাদের দেখা হবে।”
অন্ধকারে ঢলে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে সৌম্য দেখল, মিহি গুঁড়োর মতো সাদা ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে জমা হচ্ছে লুসির চারপাশে, ছড়িয়ে যাচ্ছে কাঁধের দু-পাশে। ওর মনে হল বিশাল কোনো পাখি যেন আকাশে ওড়ার আগে তার ডানা মেলে দিয়েছে।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসল সৌম্য। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে, পরনের গেঞ্জিটা গায়ের সঙ্গে সেঁটে গেছে। অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে ওর। কিন্তু স্বপ্নটা কিছুতেই মনে করতে পারছে না। এমনটা আগে কখনো হয়নি। স্বপ্নে যা দেখেছে, শুনেছে কিছুটা হলেও মনে করতে পারে ও। কিন্তু এবার…
ঘড়ির দিকে তাকাল সৌম্য। চারটে বাজে। আর কিছুক্ষণ পরেই ভোর হবে। বাইরে মেঘ ডাকছে। বিছানা থেকে নেমে জানালা বন্ধ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই জোরে বাজ পড়ল কোথাও, নীল আলো ছড়িয়ে গেল ঘরময়। তারপরই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল।
খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে এল ভেজা হাওয়ার দমক। গরম ভাবটা আর নেই। ছাতে জলের ফোঁটা পড়ার শব্দ শুনতে শুনতে ফের ঘুমের দেশে পাড়ি দিল সৌম্য। জানতেও পারল না কখন ওর জানালার পাশে ডানা ঝাপটাল দুটো রুপোলি পাখি, তারপর উড়তে উড়তে মিলিয়ে গেল দূরদিগন্তে।
জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস