গল্প-এক দেবশিশুর গপ্পো-অপর্ণা গাঙ্গুলী শীত ২০২০

অপর্ণা গাঙ্গুলীর আরো গল্প- ছেলে আর দয়ালু কুমির   বোতলের ভূতুয়া    কেজো ভূতের গল্প,  রাক্ষসের বন্ধুরা, মাখনলালের ম্যাজিক ডায়েরি, মাখনলালের খাঁড়া আর মরকত মণি

এক যে ছিল ছেলে। নাম মোহর। বাবা-মা তাকে সে নামে ডাকত না অবিশ্যি। বলত ‘ছেলে’। থাকত সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে হেতাল বনের ধারে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘরে। কুঁড়েঘর মানে কুঁড়েঘরই। ছেলের বাপ-মায়ে লতাপাতা দিয়ে সে ঘর বেঁধেছিল। মাটির দেয়াল, পাতার ছাউনি। কেমন, বেশ নয়? তা বেশ না হয়েই বা করবে কী তারা? গরিবের গরিব হদ্দ গরিব কিনা।

তা সেসবে ছেলের দুঃখু-কষ্ট মোটেই ছিল না যে। সারাদিন সে গাছে গাছে চড়ে বেড়াত। হনুমানের মতো লাফ কেটে এ-ডাল থেকে ও-ডালে ফস করে উড়ে যেতে পারত। দেদার ফল খেত গাছের—জামরুল, আতা, বুনো লিচু, ফলসা—যখন যা পেত আর কী। তবে বাবা-মায়ের ওই ছেলেকে নিয়ে ভারি চিন্তা ছিল। কী চিন্তা তা বাবা বা মা কেউই বলত না ওকে। তবু যখন পূর্ণিমার রাতে ওরা তিনজন কুঁড়েঘরের সামনে বসে জোছনা পোহাতে পোহাতে সারাদিনের গপ্পোগাছা করত আর নালতে শাকের ঝোল সপসপ খেত, তখন ছেলে দেখত মায়ের চোখ দিয়ে পায়রার ডিমের মতো, বিম্ব ফলের মতো টলমল জল ঝরে। বাবার মুখ পশ্চিমের মেঘলা আকাশের মতো কালো হয়ে আসে, এই বুঝি বৃষ্টি পড়ল। তখন ছেলে আর থাকতে না পেরে বলে উঠত, ‘ও মা, ও বাবা, তোমরা দুঃখ করো কেন? আমি যখন বড়ো হয়ে মস্ত পড়াশোনা শিখব, দেখবে আমি দেশদেশান্তরে ঘুরে অনেক টাকা আনব। দেখবে আমাদের অনেক বড়ো বাড়ি হবে, পুকুরে মাছ, ধানিজমি হবে, গোয়ালে গরু আর গাছে পাকা ফল হবে, মহিষ চালাবে বাবা আর বীজ বুনবে, এই হিঁচ-হিঁচ-হিঁচ-হিঁচ-হিঁচ আওয়াজ উঠবে বাবার গলায়। তখন দেখবে সাত গাঁ থেকে লোকজন কেমন এসে পড়বে আমাদের বাড়ি দেখতে, জমি দেখতে, বাগান-মাঠ-গোয়াল দেখতে।’ বলে বাবা-মায়ের দিকে তাকায় ছেলে। ওর চোখে জোনাকির মতো স্বপ্নরা ভিড় করে আসে দিপ-দাপ দিপ-দাপ। বাবা-মা কিচ্ছু বলে না। ওরা এক গরাস খায়, একবার চোখ মেলে। এক চোখে জল, অন্য চোখে হাসি নিয়ে ছেলের দিকে চায়। শুধু মুখে বলে, ‘তাই হোক বাছা, তাই হোক রে ছেলে, তাই হোক।’ আর ঠিক তখনই কাছের বন থেকে তক্ষক ডেকে ওঠে ‘হোক হোক তাই হোক তাই হোক,’ টিকটিকি বলে ‘ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক তাই হোক,’ বনবিড়াল বলে ‘খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক ভালো থাক,’ সোনা ব্যাঙ বলে ‘মক-মক মক-মক সুখে থাক’।

তা এইসব আর কী। তখন সেই পূর্ণ চাঁদের মায়ায়, রুপোলী জোছনার ফুল গায়ে মেখে, তারাভরা আকাশের নীচে ছেলে আর তার বাবা-মায়ে ঘুম যায়।

তা এমনি করেই কেটে যাচ্ছিল দিনক্ষণ। একদিন কাজ থেকে ফিরতি পথে বনের ভেতর দিয়ে চলতে চলতে ছেলের মা তার বাপকে শুধোল, “তা হ্যাঁ গা, আমরা কি ছেলেকে কোনোদিন পাঠশালায়-ইস্কুলে পাঠাতে পারব না?”

বাবা একটু বিষম খেল এ কথা শুনে। কেঁপে উঠল বাপের গলা। সে বলল, “তুমি তো সবই জানো ছেলের মা, তবে কেন শুধোও?”

গলার কাছে একদলা কষ্ট ঠেলে এল ছেলের মায়ের। সে চুপ করে গেল।

বাবা আবার বলল, “পাঠশালে পড়তে টাকা-টুকা যেটুক যা লাগবে, কাজ-বাজ করে দেব’খনে, কিন্তু তুমি তো সবটাই জানো, আর বলো কেন?”

তখন সারাটা পথ মুখে কুলুপ এঁটেই থাকে দুইজনে। আর কোনো কথাই বলে না কেউ সারাটা পথ। আর বাড়ি ফিরে এসে ছেলেকে দেখেই বুক জুড়িয়ে যায় ওদের। এইটুকু একরত্তি সেই ছেলে কী ভালোই না বাসে বাবা-মাকে। আসলে ও এমনই। বনের পশুপাখি, গাছপালা সবাইকেই ভালোবাসে ওই ছেলে। কোত্থেকে ছুটে এসে বাবা-মায়ের হাতে দুটো লালচে পাকা পাকা জামরুল দিয়ে বলে, “এই নাও, খাও দিকিন। জল আনি।” বলে হুটপাট করে এক বড়ো তালপাতা এনে বাতাস করতে থাকে বাবা-মাকে। মা-বাবা ওকে দেখে সব দুঃখু ভুলে যায়।

সেদিন হল কী, বনে ঘুরতে ঘুরতে এক ছোট্ট পুকুরের দেখা পেল ছেলে। সে কখনো পুকুর দেখেনি। ওদের ঘরের কাছে একটা পাগলা ঝোরা আছে। ওই থেকেই জল এনে রাখে মা-বাবা। তাই খায় ওরা। এতদিন গেছে, এ পথে সে তো আর আগে আসেনি। কেমন সুন্দর জল, নীল নীল স্বচ্ছ। ছেলে এগিয়ে যায় জলের ধারে। তাই তো! ওই তো সে নিজেকেও যেন দেখতে পাচ্ছে, তাই না? বাতাস বইছে বলে কাঁপছে জল তিরতির সিরসির। ছেলে তাই পা টিপে টিপে কিনারে এসে জলের দিকে তাকায়। কিন্তু ও কে? ও কাকে দেখছে ওই ছেলে? ওইরকম বিশ্রী মুখ, সে মুখচোখ যেন ভারি অন্যরকমের। গোল্লাপানা চোখ, নাকের কাছে শুধু দুটি গর্ত, কানদুটো মুড়ে এইটুকখানি যেন মাংসপিণ্ড ঝুলছে, দানবের মতো দাঁত, এবড়োখেবড়ো, থ্যাবড়া কপাল, ধ্যাবড়া গাল। ছি ছি ছি! এই সে? এই ছেলে?

না না, সে কী করে মা-বাপের কাছে মুখ দেখাবে? ছেলে দু-হাত মাথার ওপর তুলে আর্তনাদ করতে থাকে। আর সেই আর্তনাদে ছুটে আসে বনের যত পাখি-পশু। কিন্তু ততক্ষণে ছেলে এত কাঁদছে, এতটাই কাঁদছে যে চোখের জল গিয়ে মিশে যাচ্ছে পুকুরে। তখন হাঁসেরা প্যাঁক প্যাঁক করে উঠে আসে জল থেকে, ব্যাঙ মক-মক করে ওর পাশে চুপটি করে এসে থেবড়ে বসে, মা কাঠবেড়ালি বাদাম গুছোনো ছেড়ে-টেড়ে ছেলের কাঁধের ওপর উঠে পড়ে ওর গালে চুকচুক চুম দেয়, বনবিড়ালটা মাছ ধরা ছেড়ে ওর কাঁধের ওপর হাত রাখে আর বাবা হনুমান ওর সব দলবল নিয়ে এসে পড়ে ছেলের দুঃখে সমবেদনা জানাতে।

কিন্তু ছেলে কেন কাঁদছে ওরা বুঝলে তো! তাই ওরা সব্বাই জানতে চায়, ছেলের কী হয়েছে। ছেলে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ওগো, তোমরা কী? এত্ত দিন ধরে আমাকে দেখছ আর আমাকে তোমরা ঘেন্না করোনি!”

পশুপাখিরা বেজায় অবাক।

“সে কি! তুমি যে আমাদের বন্ধু। বন্ধুকে বুঝি কেউ ঘেন্না করে?”

ছেলে আরো চিৎকার করে বলে, “দেখছ না আমাকে কী বিশ্রী দেখতে? আমি তো অন্য মানুষের মতো নই। আমি তো আমার বাবা-মাকেও দেখেছি, কই, ওরা তো এমন নয়?” বলে হাত-পা ছুড়ে ছুড়ে বেজায় রকম কাঁদতে থাকে সেই ছেলে।

আর সব শুনে-টুনে সেই বনবিড়াল, হাঁস, সোনা-কোলা ব্যাঙ, কাঠবেড়ালি, হনুমানের দল আর পুকুরপাড়ের সব গাছেরা এমন হাসতে থাকে, এমন হাসতে থাকে কী আর বলি। হাসতে হাসতে, হাসতে হাসতে ওদের পেটে খিল ধরে যায় তবু হাসি থামে না। আর সেই হাসি শুনে ছেলের মনে হয় যেন ঝড় উঠেছে, যেন চারদিকে ঝরনা ঝরঝর করে ঝরে পড়ছে, কী সুন্দর যে সুর বেজে উঠেছে প্রকৃতিতে। আর তখন ছেলে কান্না থামিয়ে বন্ধু পশুপাখি গাছেদের দিকে তাকিয়ে থাকে কেবল।

ছেলে শুনতে পায়, ওরা বলছে, “কে বলেছে তুমি বিশ্রী? বাজে? তুমি সুন্দর, কারণ তোমার মন সুন্দর, তুমি আমাদের ভালোবাসো।”

“সত্যি?”

ছেলে তখন চোখের জল মুছে একে একে সব গাছ আর পশুপাখিদের জড়িয়ে ধরে। ছেলে এদ্দিনে বুঝতে পারে ওর বাবা-মা ওকে নিয়ে কেন এত কষ্ট পায়, দুঃখু করে। কেন ওরা ছেলেকে ইশকুলে পাঠায় না।

সেদিন সন্ধেবেলা বাবা-মা বাড়ি ফিরল কাজ থেকে। রোজের মতো ছেলে এগিয়ে দিল ফল, জল। কিন্তু মায়ের মন। ছেলের মুখ দেখে মা বুঝতে পারল কেমন যেন অন্যরকম। আর বাবা বলল, “কী রে ছেলে, আজ বুঝি ফলপাকুড় ভালো পাসনি?”

ছেলে হাসল, কিন্তু সে হাসিতে মেঘলা বিকেলের মতো অনেকটাই মনখারাপ মিশে ছিল। বাবা-মা দুজনে দুজনের দিকে চাইল, মাথা নাড়ল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আর ছেলের বুকে এই প্রথম একটা দুঃখের বাবলা কাঁটা খচখচ করে বিঁধতে লাগল।

ছেলে রাতে কিছু না খেয়েই ঘুম গেল। আর ছেলের বাবা-মা ছেলের মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে রাতের আঁধারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে রাত কাবার করে দিল। ওদের মনে পড়ল, ছেলে জন্মানোর পর ওই বিদঘুটে চেহারা দেখে গ্রামের সব্বাই ওদের একঘরে করেছিল। বলেছিল, মানুষের পেটে দানব হয়েছে। গাঁয়ের লোক, কিছু বোঝে না আর কুসংস্কারে ওদের মনগুলো ভর্তি। গ্রামের ডাক্তারবাবু সদাশয় মানুষ। তিনি বলেছিলেন এ এক জন্মগত ত্রুটি, যার হয় তার হয়। ভিনদেশে নাকি এর চিকিৎসা আছে। অস্ত্রোপচার করে একটু ভালো দেখতে করা যায়। কিন্তু এখানে সেসব অসম্ভব। তাই গ্রামের লোকের বাঁকা কথায় তিক্ত-বিরক্ত হয়ে ওরা ছেলে নিয়ে চলে আসে বনের ধারে। আর সেই থেকেই এই থাকাথাকি। এ যাবৎ ওরা ছেলেকে বলেনি ওর বিশ্রী মুখশ্রীর কথা। কখনো কোনো আয়না রাখেনি ঘরে, পাছে ছেলে নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।

এইসব ভাবতে ভাবতে, ভাবতে ভাবতে যখন রাত কেটে গেল, তখন সকালে উঠে ছেলের ঘুমন্ত বিচ্ছিরি মুখটা দেখে মা আর বাপ দুজনে ওর কপালে চুম দিল আর ঠিক তক্ষুনি একটা প্রকাণ্ড লাল সূর্য সবথেকে উঁচু গাছটার পেছন থেকে টপ করে আকাশে উঠে পড়ল।

তা সেদিন রাতে কী হল, ছেলে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল। এর আগে পরির গল্প সে মায়ের কাছে শুনেছিল। ছেলে দেখল এক ছোট্ট পরি, তার গোধূলির মেঘরঙা ফুরফুরে পাখনা আর ইয়া লম্বা ফলসারঙা চুল, ছেলেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই পরির পেছনে পেছনে ছুটে গেল ছেলে আর পরি সেই পাগলা ঝোরা, যেখান থেকে মা-বাবা জল আনে, তারও ওপরে মণি ঝোরার কাছে নিয়ে চলল ছেলেকে। পরি মেয়ে এক এক পা পাথরে রেখে উঠে যায়, আর ওর পায়ের ঝিনুকের নূপুর ছুমছুম বাজে। ছেলেও লাফাতে লাফাতে এ পাথর সে পাথর ডিঙিয়ে পথ চলে। ওমা, পরি মেয়ে ওই মণি ঝোরার দিকে আঙুল উঁচিয়ে কী যে দেখাল, ছেলে কিছু না বুঝেই সেই ঝকঝকে দুধের ফেনার মতো জলে স্নান করবার লোভ সামলাতে পারল না। পরি মেয়ে সেই না দেখে খিলখিলিয়ে কোথায় যে পালিয়ে গেল কে বলবে। শুধু অনেকক্ষণ ধরে তার হাসির টুকরোগুলি পাহাড়ে, বনে, ঝরনার জলে আঘাত করে ফিরতে লাগল। স্নান সেরে ছেলে যখন বাড়ি এল তখন মা-বাবা তাকে দেখে যারপরনাই অবাক হয়ে গেল আর ছেলে বুঝতে পারল, ওর চোখমুখ একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ও আর আগের মতো বিশ্রী দেখতে নেই। আনন্দে যেই না চেঁচিয়ে উঠেছে, ব্যস। অমনি ঘুম ভেঙে গিয়ে অত সুন্দর বাহারি স্বপ্নখানা কোথায় উড়ে গেল। হায় হায়, ছেলে দেখল সে ঘরে শুয়ে পড়ে আছে আর বাবা-মা চলে গেছে কাজে।

কিন্তু স্বপ্ন যদি সত্যি হয়ে থাকে? তাই সব কাজ ফেলে ছেলে ছুটল সেই পুকুরপাড়ে। পুকুরের ধারে গিয়ে সে আবার দেখল নিজেকে। কিচ্ছু না, পরির স্বপ্নে কোনো ফল হয়নি। ওই তো তোবড়ানো গাল, গোল্লা গোল্লা চোখ, গর্তওলা নাক, এবড়োখেবড়ো দাঁত আর ঠোঁটের ওপরটা কাটা—কী বিচ্ছিরি, মাগো! ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘরের দিকে চলতে লাগল।

ঝাপসা চোখ নিয়ে ঘরের পথে চলতে চলতে হঠাৎ কী মনে হয় ছেলের, ঘুরে দাঁড়ায়। আর তারপরই বেদম ছুটতে থাকে পুকুরের দিকে। যতক্ষণ না পুকুরের সামনে পৌঁছায় থামে না সে। আর তার ওই ছুটে যাওয়া দেখে যত পশুপাখি তার কাছাকাছি এসে জড়ো হয়। গাছেরা সব অবাক তাকিয়ে থাকে। ছেলে হাঁটু মুড়ে বসে পুকুরের জলে ভালো করে নিজের মুখটা দেখে। তখন সকালের সূর্য গাছপালার ফাঁক দিয়ে এসে পড়েছে ছেলের মুখে, পুকুরের জল রোদ মেখে যেন হিরে ঠিকরোচ্ছে এত এত। ওই মায়াবী আলো মেখে ছেলের ভারি ভাল্লাগে। আহা, পৃথিবীটা কত্ত সুন্দর। ওর বন্ধু পশুপাখিরা কত্ত ভালো আর গাছগুলো কত্ত মায়াময়, ভাবে ছেলে। আর নিজের ছায়া জলে দেখে তত খারাপ লাগে না ছেলের। মনে মনে ভাবে, এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্মেছি, আমার এত বন্ধু—আমিও অনেক ভালো, অনেক সুন্দর। আর ঠিক সেইদিন থেকে নিজেকে আরো আরো আবারও ভালোবাসতে থাকে ছেলে।

বিকেলে বাবা-মা এসে পড়লে ফল-জল দিয়ে কথাটা পাড়ে। “মাগো মা, বাবাগো বাবা, আমাকে ইস্কুলে দাও না কেন, কেন পাঠশালায় পড়তে দাও না?”

ছেলে জানে মায়ের চোখ থেকে জল ঝরবে, বাবার মনে মেঘ করবে, তবুও বলে। মা আমতা আমতা করে, বাবার কথা বেঁধে যায় মুখে, কিচ্ছু বলতে পারে না ওরা।

তারপর ছেলে ওদের বলে, “আমাকে বিচ্ছিরি দেখতে, তাই তোমাদের চিন্তা! কে কী বলে, কে কী করে, তাই না?”

মা-বাপের চোখ কপালে ওঠে। তখন ছেলে সব বলতে থাকে, সেই পুকুরের কথা, নিজেকে দেখার কথা, বন্ধুদের কথা, নিজেকে নিজের আবার ভালোলাগার কথা—সব বলে, সব। বাবা-মা তখন হেসে কেঁদে ষোলোখানা হয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।

আর তার দুইদিন পরে বাবা আর মায়ের হাত ধরে ছেলে ইস্কুলে যায়। সেলেট-পেন্সিল বগলে চেপে গটগট হাঁটে, মটমট চায়। ওর পশুপাখি বন্ধুরা ওকে খানিকটা পথ এগিয়ে দিয়ে আসে। গাছেরা মাথা দুলিয়ে আনন্দ করে। ছেলে ইস্কুলে যায়। ও ঠিক করে নিয়েছে, ইস্কুলে ওর চেহারা নিয়ে কেউ কিছু বললে ও কিছু মনে ভাববে না। পৃথিবী কত্ত সুন্দর। আহা! ও সবাইকে দেখিয়ে দেবে ওর মুখটা বিচ্ছিরি হলে হবে কী, ওর মনটা ওই মণি ঝোরার মতো সুন্দর।

মোহর দেবশিশুর মতো হাসতে থাকে।

অলঙ্করণ:রাহুল মজুমদার

জয়ঢাকের সমস্ত গল্পের লাইব্রেরি এই লিংকে

2 thoughts on “গল্প-এক দেবশিশুর গপ্পো-অপর্ণা গাঙ্গুলী শীত ২০২০

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s