অনেককাল আগেকার কথা।
অগস্তাস নামে একজন কাঠুরে, একটা গ্রামে বাস করত। গ্রামটা ছিল এক বিশাল জঙ্গলের মাঝে। অগস্তাস ছাড়া গ্রামের আর কেউ খুব একটা জঙ্গলে ঢুকত না। কারন ওই জঙ্গলে নাকি এক রাক্ষসের বাস। যদিও কেউ কোনদিন ওই রাক্ষসের দেখা পায়নি।
একরাতে প্রচণ্ড শব্দে অগস্তাসের ঘুম ভেঙে গেল। ভয় পেলেও অগস্তাস সাহস করে একটা লন্ঠন আর লাঠি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখে বড় বড় সব গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে। ঠিক যেন ঘাস ভেবে গাছগুলো কেউ একটানে তুলে ফেলেছে। দেখে সে ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
দৌড়ে বাড়ির দিকে পালাতে গিয়ে সে দেখে তার রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে এক ভয়ানক দেখতে প্রাণী। এরকম প্রাণী সে আগে কখনও দেখেনি। পাদুটো নারকেল গাছের মতো লম্বা আর মুখটা অনেকটা গিরগিটির মতো। সমস্ত শরীর সবুজরঙের আঁশে ঢাকা। আর তার মাঝে মাঝে লম্বা লম্বা লোম। একটা হাত মানুষের হাতের মতো আরএকটা হাত অনেকটা হনুমানের লেজের মতো। চোখদুটো কয়লার আগুণের মতো জ্বলছিল।
লেজের মতো হাতটা অগস্তাসের দিকে এগিয়ে আসতেই, অগস্তাস জন্তুটার লম্বা দুপায়ের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে অন্যদিকে গিয়ে দাঁড়াল। জন্তুটা রাগে চিৎকার করে উঠল। চিৎকারের তেজে অগস্তাস উড়ে গিয়ে পড়ল মাটিতে পড়ে থাকা একটা গাছের গায়ে। শরীরে চোট পেলেও। উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়তে শুরু করল অগস্তাস। জন্তুটাও অগস্তাসকে ধরতে তার মানুষের মতো হাতটা বাড়িয়ে দিলো। জন্তুটার হাত থেকে বাঁচতে অগস্তাস উপড়ে পড়া একটা গাছের শেকড়ের ফাঁকে ঢুকে পড়ল। অগস্তাসকে ধরতে জন্তুটার লেজের মতো হাতটা এগিয়ে এলো। লেজ-হাতটা অগস্তাসকে ধরার আগেই অগস্তাস শিকড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এক ছুট লাগালো কাছের একটা গুহা লক্ষ্য করে। গুহাটা লম্বা হলে কী হবে, খুব পিছল ছিল। অগস্তাস পিছলে গিয়ে গুহার ঢালু গা বেয়ে সরসর করে গিয়ে পড়ল এমন একটা জায়গায় যেখানটা একটা হালকা আলো এসে পড়েছিল। অগস্তাস অন্ধকার গুহায় আলো দেখে চমকে গেল। কিন্তু ভয় না পেয়ে সে উঠে দাঁড়িয়ে দেখল গুহার গায়ে একটা রাক্ষসের মূর্তি। ঠিক ওকে তাড়া করে আসা জন্তুটার মতো।
অগস্তাস দেখল মূর্তিটার পাশের দেওয়ালে লাইন দিয়ে আঁকা অনেক ছবি। একটা ছবিতে রাক্ষসটা একটা মানুষকে তাড়া করে আসছিল, ঠিক অগস্তাসের মতো। আরএকটা ছবিতে অগস্তাস দেখল, লোকটা জন্তুটার পিঠের লোমগুলো ধরে জন্তুটার পিঠে ঝুলছে। আরএকটা ছবিতে লোকটা জন্তুটার মাথার ওপর উঠে বসেছে। মাথাটার ওপর একটা সাদা পাথরের মতো কিছু ছিল। অন্য একটা ছবিতে সে দেখল যে লোকটা জন্তুটার মাথার সাদা জায়গাটায় ঘুষি মাড়ছে। আর শেষ ছবিটায় দেখল রাক্ষসটা একটা মাটির হাঁড়ির মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যাচ্ছে। অগস্তাস বুঝল কী করে রাক্ষসটাকে মারতে হবে।
ঠিক তখনি গুহার কতগুলো পাথর খসে পড়ল। আর পাথরের ফাঁক দিয়ে জন্তুটার মানুষের মতো লম্বা হাতটা এসে ওকে গুহার ভেতর থেকে তুলে নিল।
রাক্ষসটা অগস্তাসকে গুহার বাইরে বের করার আগেই, অগস্তাস একটা আলগা পাথরের টুকরো গুহার গা থেকে নিয়ে জন্তুটার হাতের আঁশের ফাঁকের লম্বা মোটা মোটা লোমগুলো আঁকড়ে উঠতে লাগল ওর কাঁধের দিকে। হাতটা গুহার বাইরে বের হবার আগেই অগস্তাস পৌঁছে গেছিল জন্তুটার কাঁধে। তারপর ঘাড়ের লোম বেয়ে নিমেষে পৌঁছে গেল জন্তুটার মাথায়। দেখল, জন্তুটার মাথার ওপর সাদা কী যেন একটা চকচক করছে ঠিক ছবিটার মতো। কিছু না অগস্তাস ভেবেই হাতের পাথরটা দিয়ে বাড়ি মাড়তে শুরু করল ওই চকচকে বস্তুটার ওপর।
(খুদে লেখক অনেকগুলো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছিল গল্পটি বলতে- যেমন roar, scale ইত্যাদি, সেগুলোর বাংলারূপ এখানে দেওয়া হয়েছে- শ্রুতিলেখক)