চতুর্থ শ্রেণি
আমি যেদিন অপরাজিত দেখলাম তারিখ ছিল ১৩/২/১৪২৯ । আমার দেখেই অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল। প্রশ্নগুলো যদিও কাউকে আর করা হয়নি। তাও, আমি বেশ কয়েকটা নির্দিষ্ট বিষয় লক্ষ্য করেছি। যেমন,
ক। অপরাজিততে সমস্ত নাম সামান্য বদলানো হয়েছিল। সত্যজিত রায় হয়েছিল অপরাজিত রায়, বিজয়া রায় হয়েছিল বিমলা রায়, সুকুমার রায় হয়েছিল শ্রীকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী হয়েছিল বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছিল বিভূতিবরণ মুখোপাধ্যায়, অপু-দূর্গা হয়েছিল মানিক-উমা, সর্বজয়া হয়েছিল সর্বমঙ্গলা, হরিহর হয়েছিল হরিকিশোর এমনকি পথের পাঁচালী হয়েছিল পথের পদাবলী এবং আম আঁটির ভেঁপু হয়েছিল তালপাতার বাঁশি। সেটাতে আমার কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল।
খ। সত্যজিত রায় যেখানে চাকরি করতেন, সেখানে আমার একটা মজার ব্যাপার লেগেছে—তিনি একদিন একটা ছবি আঁকলেন, তিনি সেটা প্রথমে দেখালেন তাঁর ভাষায় মুনসীদাকে, তারপর ডিডি (দিলিপ দাস) এবং মিঃ ব্রাউনকে, যিনি পরে বদলি হন মিঃ নিউম্যানের সঙ্গে।
গ। সত্যজিত রায় যেদিন প্রথম শুটিং-এ যান, সেদিন সিনেমা-পাড়ার কয়েকজন লোক আলোচনা করছিল, “এই ওই লোকগুলো কারা রে?” আরে ওই তালঢ্যাঙা লোকটা? ও তো শ্রীকুমারদার ছেলে, হিজিবিজি ছড়া লেখা লোকটার ছেলে বায়স্কোপ করবে।” “অত শখ কীসের? হিজিবিজি ছড়া লিখলেই পারত।” “আর ওই যে পিছনে মোটা ছেলেটা, ও হেড ক্যামেরাম্যান। জীবনে ফিলিম ক্যামেরা ধরেনি।” ইত্যাদি যেগুলো শুনতে আমার কানে লেগেছিল।
ঘ। শুটিং হয়েছিল একটি কাশফুল ভরা গ্রামে। কাশ হওয়ার অপেক্ষায় এক বছর অত্যন্ত চিন্তায় কাটিয়েছিলেন ফিল্ম দলের লোকেরা। বৃষ্টির জন্যেও সত্যজিত রায় অপেক্ষা করেছিলেন দু’দিন, এবং সেদিনের জন্য তার দরকার ছিল একজন টাকমাথা লোক। যাঁকে তাঁর পছন্দ হয়েছিল, তাঁর নাম জানতেন না, একটা ছবি এঁকে দেখিয়েছিলেন। এর থেকে আমি শিখলাম সব ভালো কিছুর জন্যই ধৈর্য ধরতে হয়।
ঙ। যাকে উমা সাজানো হয়েছিলো তার মা সম্ভবত সত্যজিত রায়কে অন্য ডিরেক্টারদের মতোই ভেবেছিলেন। তিনি এমন ‘নাচ জানে গান জানে’ করছিলেন সত্যজিত রায় তাকে সিনেমার জন্য বাছাই করছিলেনই না যদি না তার স্ত্রী শাড়ি পরিয়ে উমার মতো সাজিয়ে সত্যজিত রায়কে দেখাতেন।
চ। সত্যজিত রায় অপু(সিনেমায় মানিক)কে এপাশ ওপাশ তাকানোর জন্য, একটা কুকুরকে একটা নির্দিষ্ট দিকে হাঁটানোর জন্য, উমার মৃত্যুর পর সর্বজয়া(সিনেমায় সর্বমঙ্গলা)কে কাঁদানোর জন্য এবং আরো কয়েকটা সাধারণ কিন্তু কঠিন কাজকে সফল করার জন্য কয়েকটা সুন্দর পরিকল্পনা করেছিলেন। এখান থেকেও অনেককিছু শেখার আছে।
ছ। সিনেমাটিতে বারবার বোঝানো হয়েছে যে বাঙালিরা ভাল সিনেমা বিষয় কিছু বোঝেনা কিন্তু মার্কিন-ব্রিটিশরা বোঝে। তেমনটাই কি তখন ছিল?
জ। সবথেকে বেশি যা দেখিয়েছে তা হল পুরোটাই সত্যজিত রায় একটা ইন্টারভিউতে বলছেন। এটা আমার বেশ অন্যরকম লেগেছে।
ছবি- লেখক
খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি