Toyঢাক-গল্প-মানুষ গাছ-তিস্তা দে, সপ্তম শ্রেণি-শিবপুর হিন্দু গার্লস হাইস্কুল-শীত২০২২

toydhakmanushgaachh

গাছটাকে আমার প্রথম থেকেই খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। প্রথম থেকে মানে ক্লাস ফাইভ থেকে। ক্লাসরুমে মাঠের ধারে যে জানালাটা, তার সামনে বসতাম আমি। সেখান থেকে দেখা যেত গাছটা। মোটা গুঁড়ির একটা বটগাছ। তার একদিকে দুটো ডাল মিলে এমন ফাঁক তৈরি করেছে, যেন মনে হয় দুটো চোখ। তাই আমি ওর নাম দিয়েছিলাম ‘মানুষ গাছ’। মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে দু-চারটে মনের কথাও বলতাম। কয়েকদিন ক্লাস হওয়ার পরেই এসে পড়ল করোনা ভাইরাস। দু-দুটো বছর কেটে গেল বাড়িতে।

ক্লাস সেভেনে উঠে আবার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল। এবারে ক্লাসরুম অন্য। ভেবেছিলাম মানুষ গাছটার সঙ্গে আর দেখা হবে না। কিন্তু হল। এই ক্লাসরুমটা এমন একটা জায়গায়, যেখান থেকে ওকে দিব্যি দেখা যাচ্ছিল। জোর করে একটা জানালার ধার কব্জা করে বসলাম। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে আবার আলাপ জমে উঠবে ভেবে মনটা খুশিতে ভরে উঠল।

প্রথম দুটো পিরিয়ড ভালোই কাটল। কিন্তু কাণ্ডটা ঘটল ঠিক দুপুরবেলা। তখন ইতিহাস ক্লাস চলছে। পড়া শুনতে শুনতে একবার তাকিয়েছি গাছটার দিকে। চোখ যেতেই আঁতকে উঠলাম আমি! ওর চোখ দুটো আগুন-রঙা হয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ওর ভেতর দিয়ে আলো এসে চোখ ঝলসে দিচ্ছে। যেন কোনও দৈত্য রেগে গিয়ে কটমট করে দেখছে আমার দিকে। আর-একটু হলেই ভস্ম করে দেবে! আমি তখনই চোখ সরিয়ে নিলাম। সেদিন আর জানালার বাইরে তাকাইনি। পুরোনো বন্ধুর এমন ভয়ংকর রূপ দেখে মনটাও খারাপ হয়ে গেল। তবে কি আর ওর সঙ্গে কথা হবে না?

স্কুল ছুটির পরে সেই বটগাছটার পাশ দিয়ে যাচ্ছি, ভয়ে ভয়ে আবার তাকালাম। ওমা! কোথায় কী! এই ছুটির মধ্যে গাছের পিছন দিকের বাড়িটায় টকটকে কমলা রঙ করা হয়েছে। সেটাই ওই চোখের মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। আর দুপুরবেলা সূর্যের আলোটা ঠিক ওর ওপর পড়ায় মনে হচ্ছিল আগুন জ্বলছে।

ব্যাপারটা বুঝে কী যে আনন্দ হলো আমার! পরেরদিন স্কুলে গিয়ে আবার তাকিয়েছিলাম সেদিকে। তখন থেকে ওই দৈত্যটাও আমার বন্ধু হয়ে গেছে।

খুদে স্রষ্টাদের সমস্ত কাজের লাইব্রেরি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s