গল্প শিবাই পণ্ডিতের ই-টোল তৃষ্ণা বসাক শরৎ ২০১৯

পড়াতে পড়াতে একটু ঢুল এসে গেছিল শিবাই পণ্ডিতের। সেটা কেটে গেল অর্বাচীনগুলোর চেল্লামেল্লিতে। “স্যার স্যার দেখুন রামু আপনার ল্যাপটপে কীসব লিখছে।”

“না স্যার কিচ্ছু লিখিনি। বানি নিজে করে আমার ঘাড়ে দোষ চাপচ্ছে।”

“চোপ চোপ!” টিপিক্যাল টুলো পণ্ডিতের গলায় ধমকে ওঠে শিবাই। তার টোল অনেক পুরনো। আগে এখানে কুমীরছানা ছাড়া কেউ পড়তে আসত না। তাও আসত শুধু ফুলচর থেকে নক্র বাবুর সাতটা অপোগণ্ড ছেলে। একবার লোভ করে সব কটা ছানা খেয়ে ফেলায় পেটটাও আপসেট হল, টোলও উঠে গেল। নক্রবাবু সত্যি টাকার কুমীর। সব উঁচু লেভেলে তাঁর জানাশোনা। টাকা ছড়িয়ে মন্ত্রী সান্ত্রী সেপাই সব কিনে রেখেছে। শুধু টোল বন্ধ করেই ক্ষান্ত হল না, জেলেও পুরে দিল। ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন – দুটোই কপালে নাচছিল শিবাইয়ের।  সেটা যে কী করে মোটে তিনবছরের জেলে দাঁড়াল তা অনেকের কাছেই একটা রহস্য। কেউ কেউ বলে এর পেছনে শিবাইয়ের মাতুল শ্রী শ্রীযুক্ত শার্দুল বাহাদুরের একটা বড় ভূমিকা আছে। ওপর মহলে জানাশোনা শার্দুলেরও কিছু কম নেই। বরঞ্চ ডাঙ্গার ব্যাপারে শার্দুলের কর্মতৎপরতা অনেক বেশি। নক্র বাবুর দৌড় তো জল অব্দি।

যাই হোক, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শিবাই কিছুদিন বেশ মনমরা হয়ে ছিল। টোল উঠে গেছে। রুজিরোজগার বলতে কিছুই নেই। জেলখাটা আসামী বলে কেউ তার সঙ্গে মেশেও না। মনের দুঃখে সে একদিন তার মাতুলের গুহায় গিয়ে হাজির হল।

মাতুল তখন মাতুলানী আর কাচ্চাবাচ্চাদের নিয়ে জমিয়ে ব্রেকফাস্ট করছিলেন। আগের দিন দুটি কচি হরিণ শিকার করেছিলেন, তার মাংস, বাছুরের জিভ আর ভোরবেলা মারা মোষের রক্ত এক গ্লাস করে প্রত্যেকের। ছানাপোনাগুলো মোষের রক্ত খেতে গাঁইগুঁই করে বলে গিন্নি ওদের গ্লাসে একটু ভ্যানিলা বা কোকো পাউডার মিশিয়ে দেন। শিবাইকে দেখে শার্দুল হৈ হৈ করে বলে উঠলেন “এসো ভাগ্নে এসো। ওগো শুনছ, শিবাইকে নাস্তা দাও। বাছুরের জিভ ওকে দুটো বেশি দিও। আর ও আজ এখানে দুপুরে খেয়ে যাবে কিন্তু।”

মাতুলানী বিশেষ প্রসন্ন হলেন না বটে, কিন্তু খেতে ঠিকই দিলেন। দুপুরে তো ভূরিভোজ।  সাধলেনও অনেক বার। বললেন “ভয় করে খেও না। এ আর মানুষের বাড়ি আসনি যে ভাগাড়ের পচা মাংস খেতে হবে। শিকার করা টাটকা মাংস। প্রতিটি গরাসে পুষ্টি। আরে  বাদুড়ের শুক্তোটা আগে খাও। প্রথমে তেতো দিয়ে  শুরু করতে হয়।”

আর বহুদিন পরে পেটভরে খেতে পেয়ে, মামার বাড়ির খাতির যত্ন পেয়ে আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় চোখে জল এসে গেল শিবাইয়ের।

দুপুরে খেয়ে উঠে গুহার সামনে শিরিষ গাছতলায় একটা মস্ত  চ্যাটালো পাথরে আধশোয়া হয়ে মামা-ভাগ্নেতে সুখ দুঃখের গল্প হচ্ছিল। মামী গুহার মধ্যে শালপাতার বিছানায় মাংসঘুম দিচ্ছেন। ছানাপোনাগুলো সামনের চত্বরে ঝপাং খেলা খেলছিল। খেলাটা আর কিছুই নয় – একটা বড় কাঠের ওপর ঝপাং ঝপাং করে লাফানো। কাঠের মাঝখানে একটা ফাঁক আছে দেখে শিউরে উঠল শিবাই। তার মনে পড়ে গেল সে একবার ইচ্ছে করে বাঘমামাকে এরকম একটা কাঠের ওপর বসিয়েছিল। মামার লেজ আটকে সে একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড।  ঘটনাটা মনে পড়তে মরমে মরে গেল শিবাই। একবার তো না, বারবার সে মামাকে জব্দ করেছে। কতবার মিথ্যে করে বিয়ে দিতে নিয়ে গিয়ে লোকের ধোলাই খাইয়েছে। একবার তো মামা মরেই গেছিল প্রায়, কিন্তু নেহাত  কথামালার বাঘেদের মরতে নেই বলে বেঁচে আছে। শিবাই শুনেছে মরো মরো মামাকে জড়িবুটি দিয়ে বাঁচিয়ে তুলেছিল ঘুরঘুট্টিতলার বাঘা সর্দার। সেই কৃতজ্ঞতায় বাঘা সর্দারের ছোট মেয়ে রায়বাঘিনীকে বিয়ে করে মামা। নইলে তো মেয়ের বিয়েই হত না। যা ঝগড়ুটে। এমনিতে দেওয়া-থোওয়ার মন আছে। কিন্তু রাগলে জ্ঞান থাকে না। বাচ্চাগুলোকে যা পেটায়।

ঝপাং খেলা দেখে ভয় পেয়ে শিবাই চেঁচিয়ে উঠল, “আরে কাঠের ফাঁকে লেজ ঢুকে গেলে কেলেঙ্কারি হবে যে! এই গহন জঙ্গলে কোথায় বা ডাক্তার, কোথায় বা বদ্যি। ডাক্তার অশ্বিনী এত ব্যস্ত যে একমাস আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রাখতে হয়, তারপর  চিঁহিমেল এলে তবেই নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে দেখা হবে।”

শিবাই যখন এসব বলছে তখন ওদিকে এক ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গেছে। মামী গুহা থেকে বিদ্যুতগতিতে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছেলেপিলের ওপর। চালাকগুলো পালিয়ে গেছে ঝোপেঝাড়ে, আর ছোটটা একটু নাদুসনুদুস, বোকাসোকা, পালাতে পারেনি,  ধরা পড়ে মায়ের কাছে চোরের মার খাচ্ছে।

দেখে শিবাই বলল, “আহা, ছেলেপুলেরা অমন একটু আধটু দুষ্টুমি করেই। তা বলে অমন করে…”

কথা শেষ করতে পারল না শিবাই। মামী এসে চকিতে তাকে এমন একটি থাবড়া  কষালেন যে তার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। সেই অবস্থায় সে শুনতে পেল মামা পাশ থেকে বলছেন, “চেপে যা শিবাই। আর একটি কথা বললে তোকে আর প্রাণ নিয়ে ফেরার গ্যারান্টি দিতে পারছি না।”

কিছুক্ষণ পর আবহাওয়া শান্ত। মামীকে দেখা গেল ছোটটাকে, কোলে নাচিয়ে নাচিয়ে শুয়োরের ললিপপ খাওয়াচ্ছেন। অল্প অল্প হাওয়া দিচ্ছে, শিরিষ ফুলের চূর্ণ ঝরে পড়ছে সমানে।

বিকেলের চা খেতে খেতে শার্দুল বললেন “ভাগ্নে, দেখেছ তো আমার সংসারের হাল। মারছে মারুক, কিন্তু পেটে যদি এককলম বিদ্যে থাকত! বলি কী, তুমি তোমার টোল আবার শুরু কর। নইলে তো ছেলেপিলেগুলো একেবারে  মুখ্যু হয়ে থাকবে।”

শিবাই কাঁচুমাচু মুখে বলে “ইচ্ছে তো করে মামা, কিন্তু কেউ তো ছেলেপিলে পাঠাতে চায় না। নক্র ব্যাটা বাজারে এমন বদনাম করে দিয়েছে, যে আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় কেউ ঘেঁষে না। শ্বশুরমশাই মাঝে মাঝে একটু আধটু মাংস টাংস পাঠান, তাই গিন্নি  কীসব কায়দা করে শুকিয়ে টুকিয়ে বয়ামে ভরে ভরে রাখেন, তাতেই চলছে। এসব শেখার নাম করে তিনি আবার অষ্টপ্রহর টিভির রান্নার চ্যানেল খুলে বসে থাকেন। সে আর এক জ্বালা।”

শেষ কথাটা মামীর কানে যেতে তিনি ধপ করে ছেলেটাকে কোল থেকে নামিয়ে শিবাইয়ের ঘাড়ের কাছে এসে “এই যে ভাগ্নে” বলে এমন চিল্লিয়ে উঠলেন, যে আরেকটু হলে শিবাই চমকে পাথরটা থেকে গড়িয়ে পড়ছিল আর কি! মামী অবশ্য তাঁর সবচেয়ে মোলায়েম  স্বরে কথা বলছিলেন!

“তোমাদের ওদিকে কেবলের সব ক’টা চ্যানেল আসে? আমি কবে থেকে বলছি শেরনী ভি এক অউরত হৈ -সিরিয়ালটা আসছে না, ওই টাইগার ক্লাসিক, টাইগার মুভিস কোন চ্যানেলই আসছে না, কে শোনে কার কথা। ওঁর তো শের-শেয়ার পেলেই হল।”

মামা-ভাগ্নের এবার চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এখানে জোরে কথা বলা নিরাপদ নয় বুঝে তারা পিঁপড়ের পায়ের শব্দের চেয়েও নীচুগলায় কথা বলতে লাগল। কী কথা হল কে জানে। তবে এর সপ্তাহখানেকের মধ্যে   নতুন করে খুলে গেল শিবাই পণ্ডিতের টোল।

আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে সেদিনের সেই দুপুরটার কথা মনে করছিল শিবাই। মামা এগিয়ে না এলে কোথায় থাকত সে? মামা তার জন্যে কী না করেছে? পশু অধিকার কমিশন পর্যন্ত দৌড়েছে। শিয়াল সংসদে তার বিষয়টি নিয়ে গলা ফাটিয়েছে। পশু অপরাধী পুনর্বাসন শিবিরে গিয়ে হত্যে দিয়েছে। একবার একটা ছোট্ট অপরাধ করে ফেলেছে বলে তাকে সারাজীবন ব্রাত্য করে রাখতে হবে?

মামার তৎপরতা আর সঙ্গে মামীর জনসংযোগ দুয়ে মিলে শিবাইয়ের কপাল খুলল। কপালের সঙ্গে সঙ্গে টোলও। মামার চেয়ে মামীর ভূমিকা এ-ব্যাপারে বেশি।  দুপুরের  শেরনী-পার্টিগুলোতে পর্কুপাইন পকোড়া খেতে খেতে মামী ভালুক গিন্নি, চিতা মা’দের বুঝিয়েছে, “ছেলেপুলেকে আমাদের শিবাইয়ের টোলে ভর্তি করে দাও না! নইলে তো মুখ্যু হয়ে থাকবে। এখন জান তো চাকরিবাকরির  কেমন বাজার। বাঘের ছেলে, ভালুকের ছেলে বলে কেউ রেয়াত করবে না। এখন আর সাবেকি উপায়ে শিকার করাও উঠে যাচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলজি বেরিয়ে গেছে। কত্তা বলছিল  ছেলেপুলেদের কম্পিউটার না শেখালে নাকি চলবে না। বলে, ‘গিন্নি, ওরা হচ্ছে জেনারেশন নেক্সট। ওরা কি আর ঘন্টার পর ঘণ্টা ওত পেতে থেকে হালুম করে শিকার ধরবে  বলে তোমার মনে হয়? দেখ না, এখনি কেমন কুঁড়ে হয়ে গেছে, কেবল শুয়ে শুয়ে টাইগারবুক করতে চায়। লেটেস্ট মডেল কিনে দিচ্ছি না বলে বাবুদের কী রাগ! এরা করবে শিকার! ছোঃ! এদের জন্যে রিমোট প্রে গ্যাজেট বেরিয়েছে, যা দিয়ে বাড়ি বসে যে কোন টার্গেটকে নির্ভুল মেরে ফেলা যাবে। তাহলে ভাবো, এসব শেখার জন্যেও তো ওদের ইস্কুল যেতে হবে। আর শিবাই ছাড়া কার এসব পড়াবার এলেম আছে?’  আমি বললাম, সে না হয় হল, কিন্তু শিকার করার আনন্দ ? সেটা কি এই টেকনোলজি দিতে পারবে?  তো কত্তা বলল, রাখো গিন্নি, আনন্দ আর পেতে হবে না। আগে পেট।  তাহলে তোমরাই ভাবো ছেলেপিলেকে শিবাইয়ের টোলে পাঠাবে কিনা।”

এইভাবে, প্রায় পাড়া ঝেঁটিয়ে জোগাড় হল টোলের পড়ুয়া। বাঘে গরুর এক ঘাটে জল খাওয়া যেমন বিরল ঘটনা, তেমনি বাঘ সিংহ হরিণ হাতি খরগোশ চিতার বাচ্চার এক টোলে পড়তে যাওয়াও কম বিস্ময়ের নয়। আহ্লাদে আটখানা হয়ে শিবাই সাইনবোর্ড টাঙাল “কাব নালন্দা। এখানে যত্ন সহকারে পশু শিশুদের পড়ানো হয়।”

ধূমধাম করে উদ্বোধনও হয়ে গেল। ফিতে কেটে নয়, কম্পিউটারের বোতাম টিপে। বোতাম টিপলেন প্রধান অতিথি শার্দুল বাহাদুর। তাঁকে সাহায্য করলেন মুখ্য অতিথি রায়বাঘিনী মামী। অনুষ্ঠানে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও ভালই ছিল। 

সব মিটে যেতে শার্দুল শিবাইকে আড়ালে ডেকে বললেন “আচ্ছা, ভাগ্নে একটা সত্যি কথা বলবে?”

শিবাই ভাবল আবার কী বিপত্তি শুভ কাজে হাত দেবার আগেই। সে ভয়ে ভয়ে বলল “কী মামা?”

“বলছি, তুমি কি সেবার সবকটা কুমীরছানাই খেয়ে ফেলেছিলে? একটাকেও ছাড়নি?”

“ইয়ে মানে মামা” লজ্জা লজ্জা মুখ করে পায়ের নখ দিয়ে মাটি খোঁড়ে শিবাই।

“বুঝেছি বুঝেছি।” এবার অবশ্য মামীর দিকে চেয়ে মুচকি হাসেন মামা। রায়বাঘিনীর মুখেও খেলে যায় কৌতূক। শার্দূল আবার বলেন “যাকগে, সাবধানের মার নেই। সেকেন্ড ইনিংসটা একটু ধরে খেলো।”

আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে শিবাই। বিচ্ছুগুলো কি চেল্লামেল্লি জুড়েছে বাপরে! কানের পোকা বার করে দিল একেবারে! অবশ্য বাচ্চারা তো একটু দুষ্টুমি করবেই। এটুকু সহ্য না করলে তো না খেয়ে মরতে হবে। বাব্বা! কী সব দিন গেছে! খাওয়াই জুটত না কতদিন। শ্বশুরমশাইয়ের পাঠানো মাংস শুকিয়ে কীসব আচার টাচার বানিয়ে রেখে দিত গিন্নি, কী যে অখাদ্য সে-সব! খেতে না চাইলে বলত, “সেকী! এটা তো ডিয়ার ডেভিল কিংবা পর্ক পরমাসুন্দরী। কুকিং ক্লাসে শিখলাম পরশু।” অগত্যা সেইসব অখাদ্যই সোনামুখ করে খেতে হত। তাছাড়া খিদে পেলে বাঘ অব্দি ঘাস খায়,  শিয়াল তো কোন ছার!

সেইসব  কষ্টের দিনের কথা ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠল শিবাই। নিজের গায়ে জোরসে চিমটি কেটে দেখল, এই সুখের দিনটা স্বপ্ন না সত্যি। নিজের চিমটি খেয়ে চেঁচিয়ে উঠল “উঃ!” সেই আওয়াজে ঘর থেকে ছুটে এল শিবাই গিন্নি। টোল জমে ওঠা ইস্তক গিন্নি শিবাইয়ের খুব খেয়াল রাখছে। তা তো রাখবেই। নিত্য নতুন গয়না বানাবার পুরনো শখ মেটাতে পারছে কিনা। দুর্দিনে অবশ্য গয়নাগুলো খুব কাজে এসেছিল। আর তার জন্য গিন্নির মুখ নাড়াও কম খায়নি শিবাই। সেসব কথা মনে করে আরেকবার শিউরে ওঠে শিবাই।

গিন্নি সেটা দেখে তার সদ্য বানানো নথ নাড়িয়ে নাড়িয়ে, শিবাইয়ের পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে আহ্লাদি গলায় বলে “ওগো এত খেটে খেটে তোমার শরীর আধখানা হয়ে যাচ্ছে দেখছি। কটা দিন টোল ছুটি দাও না। একটু বেড়িয়ে চেড়িয়ে আসি। কত পার্ক সাফারি হয়েছে চারদিকে, মানুষরা টিকিট কেটে আমাদের দেখতে আসছে, আর আমরা বুঝি সারাবছর এক জায়গায় বদ্ধ থাকব?”

শিবাই বলে “যখন তখন বললেই বুঝি ছুটি দেওয়া যায়? সরকারি টাকায় চলছে, একটা নিয়ম কানুন নেই?  দেখেছ দেখেছ, ভালু আর শেরু আবার মারপিট করছে। এই ছোঁড়া থাম থাম!”

গিন্নির নজর তখন অন্যদিকে। জিভটা চেটে সে বলে, “ ছানাপোনাগুলো কী পুরুষ্টু দেখো, আহ এই কচি কচি মাংসের সুরুয়া কী যে ভালো হবে খেতে। হ্যাঁগো, টুক করে দুটো আমার রান্নাঘরে পাঠিয়ে দাও না। মনের সুখে রাঁধি!”

শিবাই বলতে গেল, “ও কথা আর মনেও এন না গিন্নি। সেই কুমীরের সাতটা ছানা খাবার মাশুল কত বছর ধরে দিতে হল মনে রেখো।”

কিন্তু সে-সব কিছু না বলে মুচকি হাসল সে। তার হাসিতে কি একটু দুঃখও মিশে ছিল না? এই নধর ছানাগুলো দেখে তারও কি জিভ লকলক করে না? কিন্তু সে গুড়ে বালি। বাঘ মামা সে রাস্তা মেরে রেখেছেন। তাঁর ব্যবস্থায়  নব কলেবরে খুলেছে  শিবাইয়ের ই- টোল। এখানে পড়ুয়াদের আসার দরকারই নেই। বাড়িতে যে যার কম্পিউটারে বসে থাকলেই হবে। শিবাইও নিজের বাড়িতে কম্পিউটার নিয়ে বসে, এইভাবেই পড়ানো চলে। ছানাগুলো চোখের সামনে নাড়াচাড়া করে বটে, কিন্তু গিন্নি বুঝতে পারছে না সে সবই কম্পিউটারের পর্দায়, তাদের ধরা ছোঁয়ার জো নেই। কথায় বলে নরানাং মাতুলং ক্রম। ভাগ্নেকে মামার থেকে কে আর বেশি জানবে তোমরাই বলো?

অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর

জয়ঢাকের গল্পঘর   

4 thoughts on “গল্প শিবাই পণ্ডিতের ই-টোল তৃষ্ণা বসাক শরৎ ২০১৯

  1. ফাটাফাটি। কথামালার নতুন সংস্করণ। টানটান গল্প।

    Like

  2. একদম নিউ জেনারেশনের উপযোগী মজাদার গল্প পড়লাম

    Like

Leave a comment