সন্ধ্যা ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০২০ দশম স্থান-আনখেসামুনের হৃদয় দেবদত্তা ব্যানার্জি বসন্ত ২০২০

সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা’২০১৯। দশম স্থান

আনখেসেনামুনের হৃদয়

দেবদত্তা ব্যানার্জী

এক

মিশর দেশটা সম্পর্কে আগ্রহ ছিল সেই ছোটোবেলা থেকেই। আমার ছোটোকাকু নৃতত্ত্ববিদ, মিশরের উপর গবেষণারত। কাকু দেশে এলেই বায়না জুড়তাম মিশর যাব। উচ্চ মাধ্যমিকের পর অবশেষে ছোটোকাকুর সঙ্গেই চলেছি মিশরে। মাঝরাতে কায়রো পৌঁছে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। এত আলো, এত সুন্দর শহর। আমাদের হোটেলটা অবশ্য শহরের বাইরে। হোটেলের দেওয়ালে প্রাচীন মিশরীয় দেওয়াল চিত্র ও হায়রোগ্লিফ লিপি দেখে মনটা নেচে উঠল। কাকুর প্রচেষ্টায় এই হায়রোগ্লিফ অল্প অল্প পড়তে পারি আমি, কিছু শব্দের মানেও জানি। দেওয়াল চিত্রটি সস্ত্রীক তুতানখামুনের। মাত্র দশ বছরের রাজত্বকাল এই কিশোর ফারাওয়ের।

আমাদের প্রথম গন্তব্য লাক্সরের কাছে ভ্যালি অফ কিংস। ছোটোকাকুর বন্ধু গবেষক ডঃ ম্যাথুস আপাতত এখানেই কিছু অনুসন্ধানরত। রুক্ষ পাথর আর চুনাপাথরের পাহাড়ের ভেতর লুকিয়ে ছিল এই সমাধিস্থল। প্রচুর ফারাওদের মমি এখানে পাওয়া গিয়েছিল। এখনও খোঁজ চলছে। উপত্যকা জুড়ে এক নৈঃশব্দ্য, কেমন যেন গা ছমছমে পরিবেশ। ভ্যালিতে ঢোকার রাস্তাটা বেশ সরু, দু’পাশে চুনাপাথরের দেওয়াল। পাথুরে সিঁড়ি উঠে গেছে ধাপে ধাপে। কেভি ৬২, এই সেই ফারাও তুতানখামুনের সমাধি। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল মমির অভিশাপের গল্প। আবছা হয়ে আসা দিনের আলোয় এক অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। পর্যটক কমে এসেছে, দুয়েকজন মিশরীয় ট্র্যাডিশনল পোশাকে সেজে সারাদিন ছবি তুলে রোজগার করে। তারাও ফিরে যাচ্ছে একে একে। দূরের একটা টিলার উপর পাথরের থামের আড়ালে এমনি একটি মহিলা অপলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। পায়ে পায়ে টিলাটার দিকে অগ্রসর হতেই হারিয়ে গেল সে। অনেক খুঁজেও মহিলাকে আর পেলাম না। ফেরার পথে মনে হচ্ছিল আমায় কেউ লক্ষ করছে সর্বক্ষণ। কেমন একটা অস্বস্তি পাক খাচ্ছিল।

দুই

“মিশরের এই মরুভূমির বালির নিচে এখনও চাপা পড়ে আছে কত রহস্য। যদি নতুন কিছু খুঁজে পাই সবাই আমাকে মনে রাখবে। আপাতত আমি ফারাও আখেনাতেনের উপর কাজ করছি।”

“তুতানখামুনের পিতা, নেফারতিতির স্বামী যার আসল নাম ছিল আমেনহোতেপ…”

“ঠিক, ইতিহাস হয়তো তাকে তুতানখামেনের বাবা বা সুন্দরী নেফারতিতির স্বামী হিসাবে মনে রেখেছে। কিন্তু ফারাওদের মধ্যে এই চতুর্থ আমেনহোতেপ ছিলেন এক বুদ্ধিমান রাজা। মিশরীয়দের মধ্যে একেশ্বরবাদের প্রচলন করেছিলেন এই আমেনহোতেপ। সে সময় মিশরে প্রচুর দেবদেবী ছিল। আইসিস, হোরাস, মাত, আনুবিস, ওয়াইরিস… সবচেয়ে উপরে ছিল আমুন। কিন্তু আমেনহোতেপ পূজা শুরু করলেন সূর্যের দেবতা আতেনর। আতেনের কোনও পশু বা মানুষের মতো রূপ নেই, একটা গোল চাকতিকে পূজা করা হত। আমেনহোতেপ নিজের নাম বদলে রাখলেন আখেনাতেন। লাক্সর আর কার্ণাকে সব মূর্তি ভেঙে আতেনের নতুন মূর্তি তৈরি হল। কিন্তু বুদ্ধিমান ফারাও বুঝেছিলেন, কিছু মন্দির ও দেবদেবীর মূর্তি ভেঙে আতেনের পূজা শুরু করলেও জনগণের মনে পুরনো দেবতাদের স্মৃতি থেকে যাবে। তাই নতুন রাজধানী গড়লেন নীলনদের থেকে বেশ দূরে পাহাড়ে ঘেরা এক মরুভূমির মাঝে, আমাৰ্নাতে। তৈরি হল আতেনের এক বিশাল মন্দির। এই নতুন রাজধানী তৈরি হয়েছিল মাত্র পাঁচ বছরে।”

“আমাৰ্নার সেই মন্দির আর শহর কি এখনও রয়েছে?”

“নাহ্‌, সতেরো বছর রাজত্বর পর আখেনাতেন মারা যান। ওর ভাই স্মেনখেরে ফারাও হয়েছিলেন। তিনি মারা যেতেন মাত্র দশ বছরের বালক তুতানখামুনকে ফারাও করে আবার হাল ধরেন আমুনের মন্দিরের পুরোহিতরা। রাজধানী আবার থেবসে সরিয়ে আনা হয়। আমুনের পুরোহিতরা আখেনাতেনের সব মূর্তি ভেঙে ফেলেন।”

পরদিন সকালে আমাদের আমাৰ্না যাওয়ার কথা। কাকু রাত জেগে কাজ করে বলেই পাশের ঘরে আমার একা শোওয়ার ব্যবস্থা। রাতে একটা কেমন খসখস শব্দে ঘুম ভেঙে গেছিল। আবছা আলোয় মনে হল কেউ রয়েছে ঘরে। এমনিতে আমি বেশ সাহসী। একটা ছায়া ছায়া অবয়ব খাটের পাশে এসে দাঁড়াতেই আমি লাইটটা জ্বেলে দিলাম। শূন্য ঘরে আমি একা। বোধহয় স্বপ্ন দেখছিলাম। একটু জল খেয়ে আবার শোওয়ার চেষ্টা করছিলাম। মনে হল কেউ কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। এক নারী কণ্ঠ।

তিন

গাড়িতে যেতে যেতে ছোটোকাকু বলল, “কিউনিফর্ম লিপি চিনিস?”

জানালাম হায়রোগ্লিফ পড়তে পারি, কিন্তু কিউনিফর্ম জানি না। কাকু ট্যাবটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা হল কিউনিফর্ম, ভাষাটা হল আক্কাডিয়ান। ব্যাবিলনিয়রা এ ভাষা ব্যবহার করত।”

একটা পোড়া মাটির স্ল্যাবের ছবি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বললাম, “একটা চিঠি মনে হচ্ছে।”

“আমাৰ্না লেটার। নাম শুনেছিস?”

“হ্যাঁ, ফারাওকে লেখা চিঠি, অন্যান্য দেশের রাজারা লিখত।”

“আখেনাতেনকে লেখা। এর থেকে বোঝা যায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ কতটা সুন্দর ছিল।”

আমাৰ্না এক ভগ্নপ্রায় নগরী। আখেনাতেন ও নেফারতিতি ছাড়া মন্দিরগুলোর গায়ে এই প্রথম আঁকা হয়েছিল সাধারণ মানুষের জীবনগাথা, প্রকৃতির ছবি। ডঃ ম্যাথুসের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে একটা ছবির সামনে এসে দাঁড়ালাম। রাজা ও রানির পাশে তাদের চার কন্যা ও এক পুত্রর ছবি। অদ্ভুতভাবে ছবিটা আমায় টানছিল। আমার পাদুটো কে যেন মাটিতে গেঁথে দিয়েছিল। একমনে ছবিটা দেখছিলাম। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়েছিলাম জানি না, হঠাৎ মনে হল এই ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষের মাঝে আমি একা। চারপাশে তাকিয়ে ডঃ ম্যাথুস, ছোটোকাকু বা অন্য কাউকে দেখতে পেলাম না। এই আমার্নায় এমনিতেই পর্যটক কম আসে। ভাঙাচোরা পাথুরে দেওয়াল আর ইটের স্তূপের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেছিলাম দেবতা আতেনের মন্দিরে। বিশাল এলাকা জুড়ে মন্দির। মাঝে গোল চাকতি রূপে আতেন।

পরিত্যক্ত নগরী, পরিত্যক্ত দেবতা। মিশরীয়রা আখেনাতেনের সৃষ্টিকে মাটিতে মিশিয়ে ওঁর নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। তুতানখামুনের পর ফারাও হোরমহেব আর দ্বিতীয় রামেসিস এই নগরকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। তুতানখামুনের মৃত্যু ঘিরেও রয়েছে রহস্য। নগরীর বাইরে একটা ছোটো মিউজিয়াম আছে। সেখানে গিয়ে দেখি কাকু তিনটে আমার্নিয়ান লেটার নিয়ে গভীর মনোযোগে পড়াশোনায় ব্যস্ত।

ফেরার পথে কাকু বলছিল, “ফারাওদের বিয়ে হত নিজেদের বংশের ভেতর। আখেনাতেন ও নেফারতিতি ভাইবোন ছিলেন। আবার আখেনাতেন শেষ বয়সে নিজের মেয়ে আনখেসেনামুনকে বিয়ে করেছিলেন। আবার এই আনখেসেনামুনের সঙ্গেই তাঁর ভাই তুতানখামেনের বিয়ে হয়েছিল।”

মনে মনে বললাম, ‘বাপ রে, কীসব খটোমটো সম্পর্ক! আনখেসেনামুন… তুতানখামুনের স্ত্রী! এক রহস্যময়ী নারী। তুতানখামুন ছিলেন এক জন্মরুগ্ন সন্তান। একই বংশে বিয়ে হত বলে বোধহয় জেনেটিক অসুখগুলো বেশি হত ওদের ভেতর। তুতানখামুন ছিলেন পঙ্গু। নেটে পড়েছিলাম কুঁজ ছিল পিঠে, ঘাড় ঘোরাতে পারতেন না। ম্যালেরিয়ায় ভুগতেন। ওঁর সমাধিতে বেশ কয়েকটা ওয়াকিং স্টিক দেখেছিলাম। তাঁর সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল আনখেসেনামুনের। ওঁদের দুটো সন্তান হলেও বাঁচেনি একটিও। বোধহয় বিরল জিনঘটিত অসুখ ছিল তাঁদের ভেতর। রাজবংশের নারীদের জীবন তখন এমনই ছিল। মত প্রকাশ বা জীবনসঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা ছিল না। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কিছু ছবি। ছবিগুলো যেন কিছু বলতে চাইছে আমায়।

চার

আবার একটা চাপা অস্বস্তিতে ঘুমটা ভেঙে গেল। হোটেলের ঘরটা বেশ গুমোট লাগছে। জানালার পর্দাটা যেন কেঁপে উঠল। আবছা অন্ধকারে মনে হল কেউ রয়েছে ওখানে। লাফ দিয়ে উঠে আলো জ্বালতেই দেখি কেউ নেই। সেন্ট্রালাইজ এসির জন্য মৃদু উষ্ণতা রয়েছে ঘরের ভেতর। বাইরে এখন ভীষণ ঠাণ্ডা। কিন্তু পর্দাটা মৃদু দোল খাচ্ছে কীভাবে? পর্দা সরিয়ে দেখলাম, দরজা চেক করলাম। সব ঠিক আছে। হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। আমার ঠিক পেছনেই এক মিশরীয় নারী, মাথায় রাজকীয় মুকুট, প্রাচীন পোশাক, চোখ, নাক, মুখ যেন পাথর কেটে বানানো। পেছন ফিরতেই দেখি কেউ নেই, দরজার পর্দাটার ছায়া আয়নায়।

তবে কি রোজ রোজ ভুল দেখছি! মিশর নিয়ে অত্যধিক চিন্তা, রোজকার ঘোরাঘুরির স্ট্রেস, অবচেতনের কিছু কল্পনা সব মিলেমিশে হ্যালুসিনেশন! মিশর নিয়ে গবেষণা করতে করতে বহু গবেষক পাগল হয়ে গেছেন। আমি তো সবে কয়েকদিন হল এদেশে ঘুরতে এসেছি। আমার সঙ্গে এসব কী হচ্ছে? চোখেমুখে জল দিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পরেই ঘুমের দেশে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু স্বপ্নেও বারবার ঘুরে ফিরে এল সেই নারী। প্রথমদিন কিংস ভ্যালিতে দেখা মেয়েটার কথা বোধহয় অবচেতনে গেঁথে রয়েছে।

পরদিন সকালে জলখাবারের টেবিলে ডঃ ম্যাথুস বললেন, “মমিফিকেশন ব্যাপারটা কতটা জানো?”

“ঐ যেটুকু পেয়েছিলাম বইতে। প্রথমে মৃতদেহর মাথার ঘিলু বের করে নেওয়া হত, তারপর পেটের বাঁদিক চিরে বার করে নিত লিভার, কিডনি, যকৃত, ফুসফুস। এরপর ন্যাট্রনের গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেওয়া হত শরীরে যাতে সব জল শুকিয়ে যায়। ন্যাট্রনের গামলায় চুবিয়ে দেওয়া হত শরীরটি। চল্লিশ দিন পর তুলে সুগন্ধি তেল মাখানো হত…”

“দাঁড়াও, দাঁড়াও। তুমি জানো যে ঐ পার্টগুলো বার করে নিত কেন?”

“ওগুলো পচনশীল। ওগুলো শুকিয়ে আলাদা পাথরের জারে রাখা থাকত।”

“আলবাস্টারের জারে আলাদা সংরক্ষণ করে সমাধিতে বা রাখা থাকত। তবে হৃৎপিণ্ড কখনও বার করা হত না। কারণ মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পরের জীবনে প্রবেশ করতে হৃৎপিণ্ডটি দরকার। আনুবিস ও ন্যায়ের দেবী মাত এই হৃৎপিণ্ড ওজন করবে। মাতের মুকুটের একটা পালক একদিকে থাকবে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ড। যদি তা পালকের থেকেও হালকা হয় তবেই মিলবে ছাড়পত্র। তবে ক’দিন আগে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। আমার এক বন্ধু কুইন্স ভ্যালিতে একটি এমন মমি পেয়েছে যার হৃৎপিণ্ডটাই নেই। কী অদ্ভুত!”

“হয়তো ভুলবশত কেউ ওটাও বাদ দিয়েছিল। এমন তো দ্বিতীয় রামেসিসের সঙ্গেও হয়েছিল। ওঁর মমির বাঁদিকের বদলে ডানদিকে সোনার সুতো দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ঐ হৃৎপিণ্ড।”

ছোটোকাকু কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, “রামেসিসের সঙ্গে ভুল হয়েছিল বলে জুড়ে দিয়েছিল, কিন্তু এই মমিতে সেটা আর জুড়ে দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনও জারে সংরক্ষণ করেও রাখা হয়নি। আজ আমরা কুইন্স ভ্যালিতেই যাব।”

আমি আগেই শুনেছিলাম কিংস ভ্যালির একটু দূরে এই ভ্যালি অফ কুইন্সের কথা। রাজপরিবারের মহিলাদের সমাধিস্থল। গাড়িতে যেতে যেতে বললাম, “মমিটি কার জানা যায়নি?”

“না। একটা সাধারণ সারকোফেগাশে মমিটি পাওয়া যায়। তবে মমিটি নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।”

কুইন্স ভ্যালির পাশেই ক্যাম্প করেছেন ডঃ রস। ডঃ ম্যাথুস পরিচয় করালেন আমার সঙ্গে। পাকা চুল-দাড়িতে ভদ্রলোককে অনেকটা কবিগুরুর মতো দেখতে। আমাদের উনি একটা বড়ো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাবুতে নিয়ে গেলেন। একটা বড়ো কাচের আধারে রাখা হয়েছে মমিটি। ওর এক্স-রে, সি.টি. স্ক্যান সব রিপোর্ট ছড়িয়ে আছে একধারে। আমি গিয়ে সারকোফেগাশের সামনে দাঁড়াতেই এক তীব্র বৈদ্যুতিক ঝিলিক ছুঁয়ে গেল আমায়। মমিটি এখনও প্রায় অবিকৃত। মুখের চামড়া শুকিয়ে গেলেও বোঝা যায় এই নারী একদা সুন্দরী ছিলেন। অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম সেদিকে। মনে হল আমি চিনি এই নারীকে।

ডঃ রসের কথায় চমক ভাঙল। উনি বলছিলেন, “এই মমিটা বেশ তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা হয়েছে এবং আমার ধারণা এই নারীর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এর সারকোফেগাশে বুক অফ ডেডের মন্ত্র নেই। একে যে কাপড় দিয়ে জড়িয়েছিল তাতে প্যাপিরাস নেই।”

বাকি কথাগুলো কানে আসছিল, কিন্তু যেন অনেক দূর থেকে। আমি তখন হারিয়ে গেছে এক অন্য জগতে। মাথাটা কেমন টলছিল। এই কুইন্স ভ্যালিতে মনে হয় আগেও এসেছি। অথচ আমার মিশরে আসার মাত্র কয়েকদিন হয়েছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুও গুমোট লাগছিল। পায়ে পায়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

শহর থেকে বেশ দূরে চুনাপাথরের পাহাড়ের গায়ে সুড়ঙ্গ কেটে তার ভেতর সমাধিস্থলটি তৈরি করা হয়েছিল। আস্তে আস্তে প্রবেশ করলাম সেই হাজার হাজার বছরের পুরনো সমাধি কক্ষে। ভেতরে আবছা হলুদ আলো, দুয়েকজন পাহারায় রয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে একটা ছোটো দরজা দিয়ে নিচু ছাদের একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। সামনের শূন্য বেদিতে হয়তো কোনও মমি শায়িত ছিল, তবে এখন ফাঁকা। ঘরের ভেতর কিছুই নেই আর। হঠাৎ দেখি ঘরের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই নারী। আবছা আলোয় মনে হল একেই স্বপ্নে দেখেছিলাম। মেয়েটিকে অনুসরণ করে বেশ কয়েকটি ঘর পেরিয়ে একটা ফাঁকা ঘরে এলাম। মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে আমায় দেখল। তারপর কিছু বলল, কিন্তু ওর ভাষাটা প্রাচীন মিশরীয় ভাষা, বুঝলাম না কিছুই। মেয়েটা এবার আমায় একটা গুহা দিয়ে বের করে নিয়ে গেল পাহাড়ের কোলে। ইশারায় কিছু বলতে চাইছিল। বাইরে তখন গোধূলির আলোয় সেজে উঠেছে প্রাচীন মিশর। ধূপছায়া মাখা পাহাড়ের গায়ে কেমন আদিম গন্ধ। হঠাৎ মেয়েটা আমার কপালের একটা অংশ জোরে চেপে ধরল। মনে হল মাথার ভেতর সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে একের পর এক কালো পর্দা। চারপাশের দৃশ্যপট কাঁপছে। তবে কি ভূমিকম্প হচ্ছে? বসে পড়েছিলাম একটা পাথরের উপর।

পাঁচ

শরীরটা ভীষণ হালকা মনে হল। আমি যেন হঠাৎ প্রাচীন মিশরে চলে এসেছি। থেবস নগরী, এক বিশাল প্রাসাদের অন্দর মহলে সেই মহিলা এক চরের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক গোপন পত্র। ভেড়ার চামড়ার উপর লেখা এক পত্র যাতে রয়েছে এক অনুরোধ। সেই নারী হিট্টি রাজা প্রথম সাপ্পিলুলিমাসের কাছে তাঁর একটি পুত্রকে বিয়ে করতে চেয়ে প্রার্থনা জানিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন যোগ্য ও রাজবংশীয় কেউ যেন মিশরের ফারাও হয়। সেদিক দিয়ে হিট্টিরা সে সময় ছিল অনেক শক্তিশালী।

গোপন পত্র নিয়ে দূত চলে যেতেই নারী কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এক পরিচারিকা এসে তাঁকে বলল, “নিজেকে সামলান মহারানি। আজ যে সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছেন তা দেশের কথা ভেবে নিয়েছেন। একদিন সবাই বুঝবে আপনার এই বলিদানের কারণ। আইয়ের গুপ্তচর রয়েছে চারপাশে। সাবধান।”

ভেজা গলায় তিনি বললেন, “আমার সঙ্গেই এমন কেন হয় বল তো? প্রথম জীবনে কিছু বোঝার আগেই নিজের জন্মদাতার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল। চারদিকে তখন অরাজনৈতিক অবস্থা। দেবতা আতেনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পিতা যে ভুল করেছিল, তার দাম দিতে হল প্রাণ দিয়ে। এবার আমার যখন জ্ঞান হল দেশের কথা ভেবে আবার আমায় নিজের পঙ্গু ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হল। বিধির বিধান মেনে নিয়ে পিতার ভুলগুলো শুধরে সংসার করছিলাম। কিন্তু এ রাজমহলে সবাই আমাদের শত্রু। দু’বার আমার সন্তানকে কেড়ে নিল ওরা। ফারাওকেও বহুবার মারতে চেয়েছে। আমি সর্বদা চোখে চোখে রেখেছি। অসুস্থ রুগ্ন পঙ্গু মানুষটাকে একটা দিনও শান্তি দেয়নি ঐ আই। ফারাওকে মেরে এখন নজর আমার দিকে। ঘৃণা ছাড়া ঐ আইয়ের প্রতি আমার আর কোনও আবেগ নেই। কূটনৈতিক চালে ও সবসময় এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু এবার আমিও দেখিয়ে দেব, মিশরের ফারাও হবে এবার হিট্টি বংশের কেউ।”

“আমুনের মন্দিরে এই প্রার্থনাই জানিয়ে এসেছি আমি। দেবতা আমুনের হাতেই আমাদের রক্ষার ভার এখন।”

ধীরে ধীরে মশালের আলোয় চিনতে পারছিলাম, আনখেসেনামুন ফারাও তুতানখামুনের স্ত্রী। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম ওদের প্রাচীন ভাষা। আবার সব ধোঁয়াশা, ছেঁড়া ছেঁড়া কুয়াশার চাদরের ফাঁকে নতুন দৃশ্য।

আনখেসেনামুন দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রাসাদের ছাদে, রাজধানীর শেষ সীমানার দিকে চেয়ে রয়েছেন আজ ক’দিন। চরের ফেরার সময় হয়েছে। হিট্টি রাজবংশের কোনও এক কুমার কি আসবে তার সঙ্গে! ঐ বোধহয় দূরে দিকচক্রবালে একটা ছোট্ট ধুলোর ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে। কপালে মৃদু কুঞ্চন নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছেন রানি আনখেসেনামুন। হঠাৎ সেই পরিচারিকা এসে বলল, “খারাপ খবর, মহারানি। হিট্টি রাজা প্রথম সাপ্পিলুলিমাস তাঁর পুত্র জান্নানজাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু মিশরে প্রবেশ করার সময় মিশর সীমান্তে জান্নানজাকে হত্যা করেছে হোরেমহেব নামের এক নিষ্ঠুর সেনাপ্রধান। আই এবার বলপূর্বক আপনাকে বিবাহ করবে।”

“না! আইকে বিবাহ করব না আমি। প্রাণ থাকতে আর নয়।” রানি দৌড়ে যান অন্দরমহলে।

আমি এক অবাক দর্শক। একদল সৈন্যর ছোটাছুটি, অন্দরমহলে এক শোরগোল। এঘর ওঘর ঘুরে একটা বড়ো হলঘরে দেখি আনখেসেনামুনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আই। মিশরের মহামন্ত্রী। বৃদ্ধর দু’চোখে লোভ, সম্পর্কে তিনি আনেখাসেনামুনের পিতামহ। কিন্তু মিশরে রাজবংশের মধ্যে এমন বিবাহ তখন হত। আনখেসেনামুন হাসছেন। তিনি কি প্রবল মানসিক চাপে পাগল হয়ে গেলেন? হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছেন। আইয়ের প্রস্তাবে তিনি সম্মত নন, দৃঢ় গলায় জানিয়ে দিলেন অবশেষে। আইয়ের দু’চোখে তখন ফারাও হওয়ার স্বপ্ন। গম্ভীর কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, “আর কোনও পথ নেই। আমায় বিবাহ করে নতুন জীবনে প্রবেশ করো, সুখে থাকবে।”

হাসি থামিয়ে আনখেসেনামুন উঠে দাঁড়ান। বলেন, “আর যদি আমিই না থাকি? তখন!”

রানির ঠোঁটের কষ বেয়ে নেমে আসে এক রুধির ধারা। আই কিছু বোঝার আগেই রানি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। তীব্র বিষ ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে সর্ব অঙ্গে।

আমি বিহ্বলের মতো দাঁড়িয়ে দেখছি। আবার ঘোলাটে আঁধারে ঢেকে গেল সব। হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে গেলাম বেশ কিছুটা। অল্প আলোর আভাস, একটা বেশ ঠাণ্ডা ঘর, ওয়াবেত। বিজাতীয় গন্ধ, মমি তৈরির কারখানা। আই বলছেন, এই নারীর মমি বিশেষভাবে তৈরি হবে। এর হৃদয় আলাদা করে সংরক্ষণ করতে চান তিনি। আনুবিসের মুখোশ পরা লোকটা কেঁপে উঠল। মনে করিয়ে দিল, হৃৎপিণ্ড উপড়ে নিলে এই মমির আত্মার মৃত্যু হবে। সে আর জীবন ফিরে পাবে না। হৃদয় ছাড়া দেবী মাত কাউকে অন্য দুনিয়ায় প্রবেশ করতে দেবে না। কিন্তু আই শুনবেন না। একটা থলিতে বেশ কিছু স্বর্ণমুদ্রা এগিয়ে দেন তিনি সে মুখোশধারী আনুবিসের দিকে। বলেন, এটা আদেশ। আনুবিস নিয়ে নেয়। মমিফিকেশনের কাজ শুরু হয়।

আই চলে যেতেই হৃৎপিণ্ডটাকে একটা পাথরের জারে ভরে সরিয়ে ফেলে লোকটা। এবার মন দিয়ে করতে থাকে বাকি কাজ।

অবশেষে মমিটা নিয়ে চলে গেল আইয়ের লোকেরা। চারটে জারে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও সঙ্গে নিল। ওদের হাতে সময় কম, মমিটা কবর দিলেই আই ফারাও হতে পারবেন। যত তাড়াতাড়ি এই কাজ শেষ হবে, আই বসতে পারবেন সিংহাসনে। দেরি করলে বা বেশি লোক জানলেই বিপদ। বিদ্রোহ শুরু হবে। হিট্টি রাজকুমারকে মেরে হোরেমহেব ফারাও হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তার আগেই আইকে বসতে হবে সিংহাসনে। আমুনের আশীর্বাদ রয়েছে আইয়ের মাথায়।

ওরা বেরিয়ে যেতেই একটা ছোটো কানওয়ালা পাথরের জার খোলে সেই মুখোশধারী। এক ঝলক দেখে নেয় চারপাশ। মুখোশ খুলতেই চমকে উঠি আমি। এ যে আমার প্রতিচ্ছবি! আমি… আমার অবয়ব! চোখের সামনে সব অন্ধকার, বুকের মধ্যে একরাশ শূন্যতা। ঠাণ্ডা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি আমি।

ছয়

“আমার হৃদয় ফেরত দাও, সেশেতা। আমি মুক্তি পাইনি এখনও।”

আনখেসেনামুন! আমার সামনে! উঠে বসি আমি।

“কোন পাপ না করেও ওয়াইরিসের সামনে আমি দাঁড়াতে পারছি না।” ওঁর দু’চোখে জল।

আই বলেছিলেন হৃৎপিণ্ডটা আলাদা করে সংরক্ষণ করতে। কিন্তু আমি জানতাম তিনি শয়তান। নষ্ট করে ফেলবেন ঐ হৃদয়। তাই লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম পরে চুপিচুপি সমাধিতে গিয়ে আবার জুড়ে দেব। রানি আনখেসেনামুনকে পছন্দ করতাম আমরা। তুতানখামুনের এই প্রেয়সী দেশকে ভালোবাসতেন। ফারাওয়ের সঙ্গে রাজকার্য পরিচালনায় দক্ষ ছিলেন এই নারী। কিন্তু কূটনৈতিক রাজনীতির শিকার হয়ে তিনি আজ জীবনমৃত্যুর মাঝে।

“সেশেতা, আমি জানি তুমি আমার ভালোর জন্য লুকিয়ে রেখেছিলে ঐ হৃদয়। কিন্তু তারপর…”

“আমার এক সহকর্মী হেব খবরটা পৌঁছে দিয়েছিল আইয়ের কাছে কিছু স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে। ভ্যালি অফ কুইন্সে পৌঁছে গেছিলাম আমি। সোনার সুতোয় সেলাই করে দিতাম সেই হৃদয়। কিন্তু তার আগেই…”

“আইয়ের সৈন্যরা তোমায় আক্রমণ করেছিল।”

অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে, পুব আকাশে হালকা গোলাপি আভা। আমি বললাম, “আসুন আমার সঙ্গে।”

পাহাড়ের পেছনের একটা ফাটল গলে আমরা ঢুকে পড়েছিলাম একটা গুহার ভেতর। একের পর এক ছোটোবড়ো ঘর পার হয়ে একটা চাতালে এসে পৌঁছলাম। একটা ভগ্ন সিঁড়ি উঠে গেছে উপরের দিকে। সেটা বেয়ে কিছুটা উঠতেই বাঁদিকে একটা গোল গর্ত। প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে গেলাম। কিন্তু এ কী? পাথর দিয়ে মুখটা কে বন্ধ করল? অনেক ধাক্কা দিয়েও পাথর নড়ল না। আনখেসেনামুনের দু’চোখে জল। বললেন, “আমার আত্মা কি এখানেই আটকা থাকবে? আমার কি মুক্তি নেই?”

ভোরের আলো ফোটার আগে কিছু করতেই হবে আমায়। আনেখাসেনামুনের হাত ধরে ছুটে গেলাম বাইরের দিকে। পাথরের খাঁজে পা রেখে প্রায় দু’শো ফুট উঠলে একটা গুহামুখ রয়েছে। ওখানে পৌঁছে গেলে ঐ গর্তের উলটো পথে ঢুকতে পারব। মাধ্যমিকের পর পুরুলিয়ায় মাউন্টেনিয়ারিংয়ের একটা ছোটো কোর্স করেছিলাম।

দূরে একটা শ্রমিকদের তাঁবু চোখে পড়ল। একগাছা দড়ি ওখানেই পেলাম। গুহামুখটার কাছে পৌঁছতে তেমন কষ্ট হয়নি। মাকড়সার জাল সরিয়ে হাজার হাজার বছর পর কেউ পা দিল ঐ কৃষ্ণগহ্বরে। একটা খাঁজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম ঐ আলবাস্টারের জার। বার করে দিলাম আনখেসেনামুনের হাতে। হঠাৎ করে যেন ভূমিকম্প শুরু হল। ছোটোবড়ো পাথর গড়িয়ে আসছে, চারপাশে গুড়গুড় শব্দ। গুহার বাইরে বেরিয়ে আসতেই সব অন্ধকার।

সাত

জ্ঞান ফিরতেই দেখি ছোটোকাকু, ডঃ ম্যাথুস সবাই আমায় ঘিরে রয়েছে উদ্বিগ্ন মুখে। একটা ছোটো তাঁবুতে শোয়ানো হয়েছে আমায়। কাকু বলল, “একা একা গুহায় ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলি বোধহয়। কাল সারারাত আমরা তোকে খুঁজেছি। এত বড়ো এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তোকে পাইনি। ওদিকের পাহাড়গুলো পরিত্যক্ত, খুঁড়লেই ধ্বস নামে। তাই ওদিকে আপাতত কাজ বন্ধ। তুই একা একা ওদিকে কী করছিলি?”

আমি নির্বাক। মাথাটা ইটের মতো ভারী। চারপাশে খুঁজছিলাম আরেকজনকে।

“এই খালি জারটা তোমার পাশেই পড়ে ছিল। কোথায় পেয়েছিলে?” ডঃ ম্যাথুস বললেন। ওঁর হাতে সেই আলবাস্টারের জার, তবে খালি।

হঠাৎ উদ্ভ্রান্তের মতো তাবুতে ঢুকলেন ডঃ রস। বললেন, “একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। মমিটাকে আবার পরীক্ষা করছিলাম, হৃৎপিণ্ডটা রয়েছে সস্থানে!”

“মানে? তা কী করে হয়!” ডঃ ম্যাথুস লাফিয়ে উঠলেন।

“এখনই আমি নতুন করে সিটি স্ক্যান করেছি। আসলে সকালে দেখি মমিটার বুকের কাছটা কেমন যেন চেরা। আগে চোখে পড়েনি। ভালো করে লক্ষ করে মনে হল চেরাটা টাটকা, সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করলাম। আর মমির হৃদয়… তা রয়েছে যথাস্থানে!”

আমায় ফেলে ডঃ রসের সঙ্গে ছুটল সবাই। আমার মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। হাজার বছর আগে যা পারিনি, এবার পেরেছি। বিদায় আনখেসেনামুন। এবার মাটির নিচের পৃথিবীতে তুমি প্রবেশ করবে। ওয়াইরিসের আদালতে প্রবেশাধিকার পাবে। মুক্তি পাবে অবশেষে। বিদায় তেজস্বিনী নারী।

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

2 thoughts on “সন্ধ্যা ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০২০ দশম স্থান-আনখেসামুনের হৃদয় দেবদত্তা ব্যানার্জি বসন্ত ২০২০

Leave a comment