কাকুয়া
অরিন্দম দেবনাথ
‘দেখছি, বৌদি।’ শুনতে শুনতে টুকুর মার পাগল হবার অবস্থা। ভাবলেন নিজে গিয়ে লাঠি দিয়ে ড্রেনে ফেলে দেবেন। তারপর মনে হল, ওতে করে লাভ হবে না, উলটে ড্রেনের মধ্যে পচে আরও গন্ধ ছাড়বে। তারপর আশেপাশের বাড়ির লোক উলটে ওঁর নামে কাউন্সিলারের কাছে কমপ্লেন ঠুকে দেবে। পুরসভার লোক এসে অনেক টাকা জরিমানা করে যাবে। তাহলে উপায়? ভাবতে ভাবতে ছাদের আলসে থেকে ভেসে এল একটা আওয়াজ, “কা…”
হাওয়ার দমকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধটা। মাঝে-মাঝেই।
দুটো বেড়ালের মাপের ইঁদুর দু’দিন ধরে মরে পড়ে আছে গলির ঠিক মাঝখানে। সাইকেল, রিক্সা, বাইক ওই ইঁদুরদুটোর ওপর দিয়ে চলে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি সব বের করে দিয়েছে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। আশেপাশের বাড়ির লোকেদের কোনও হেলদোল নেই। দরজা-জানালা বন্ধ করে এসি চালিয়ে আছে সব। গন্ধে সমস্যা শুধু টুকুর মার। কোনও চড়া গন্ধ সহ্য হয় না ওঁর। সে দুর্গন্ধ বা সুগন্ধ যাই হোক না কেন। দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকাটাও ওঁর পছন্দ নয়। দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে টুকুদের বাড়িতে এসি নেই।
বেশ কয়েকবার পুরসভার কাউন্সিলারকে ফোন করছেন উনি মরা ইঁদুরগুলো সরানোর ব্যবস্থা করতে। প্রতিবার কাউন্সিলার উত্তর দিয়েছেন, “দেখছি, বৌদি।”
“আরে, তোরা এতদিন কোথা ছিলি!” উত্তেজনায় গলা বুজে এল টুকুর মার। “ওরে আমার কাকুয়ারা রে। ওরে আমার মিষ্টি সোনা, কতদিন তোদের ডাক শুনিনি। তোদের তো দেখাই যায় না। তোদের জন্য মুড়ি নিয়ে আসি। সঙ্গে বিস্কুটও দেব।”
“মা, তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ?” পেছন থেকে মায়ের আঁচল টেনে ধরল টুকু।
“আরে এই কাকগুলোর সাথে। ওদের একটু খেতে দিই।”
“কেন মা? তুমি তো ওরা এলেই তাড়াও! বলো, অলক্ষুণে সব জীব!”
“না না, অলক্ষুণে হবে কেন? ওরা কত উপকারী জানিস?”
হাতে একমুঠো মুড়ি আর বিস্কুটের টুকরো নিয়ে দরজা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন টুকুর মা। তারপর রাস্তায় মুড়ি-বিস্কুট ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে চললেন রাস্তায় পড়ে থাকা ইঁদুরদুটোর দিকে। “আয় কাকুয়া, আয়…”
অলঙ্করণঃ অংশুমান