বন্ধু
প্রমনা চট্টোপাধ্যায়
কিছুতেই ঘুম আসছিল না কুর্চির। সারাদিনের ট্রেকিং কি ওকে ক্লান্ত করতে পারেনি? বা বেশি ক্লান্তি এলেও হয়তো এমন হয়। খানিক ভেবে কু্র্চি তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসে। মাথার উপরে তারাভরা আকাশ। হিমালয়ের কোলে এই ছোট্ট উপত্যকাটাকে এখন বড়ো সুন্দর লাগল কুর্চির। চারপাশে পাইন, ওক, রডোডেন্ড্রনের জঙ্গল। ওর মনে হল, ঐ উপত্যকায় ও একাই জেগে নেই, আরও কেউ যেন জেগে আছে। জঙ্গলটাকে বড়ো জীবন্ত লাগছে। মনে হচ্ছে, কারা যেন সেখান থেকে ওকে দেখছে। কুর্চি কিন্তু ভয় পেল না। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়ায় কী যেন উড়ে এল। দুটো রডোডেন্ড্রন ফুল! কুর্চি হাসল। ওর মনে হল বহুকালের কোনও বন্ধু যেন ওকে উপহার দিল ফুলদুটো। জঙ্গলটা যেন সত্যিই ওর বন্ধু। আর ওর নিজের নামই তো কুর্চি—সেটাও তো একটা বনফুলেরই নাম! আস্তে আস্তে ওর ঘুম পেয়ে যাওয়ায় ও তাঁবুতে ঢুকে পড়ল।
পরদিন সকালে সাজো সাজো রব। আজ ট্রেকিং-এর দ্বিতীয় দিন। কুর্চি ওর বন্ধুদের কাল রাতের অভিজ্ঞতার কথা বলেছে। ওর বন্ধুরা সবাই হাসলেও ও ভাবছিল অন্য কথা। ঘটনাটা নিয়ে ভূতের গল্প লিখলে কেমন হয়? ভূতের গল্প মানেই তো মিথ্যে কিছু ভয়ের ঘটনা, তাই কালকের ঘটনাটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ভূতের গল্প ফাঁদতে বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে কালকেরটা কি ঠিক মিথ্যে? নিজের মনেই হাসল কুর্চি। এবার বোধহয় ও ভূতেও বিশ্বাস করা শুরু করল। যত্তসব!
সকাল ন’টা বাজে। ট্রেকিং টিমটা ছোট্ট উপত্যকাটা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। জঙ্গল থেকে কয়েক জোড়া চোখ তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বন্ধু চলে যাচ্ছে যে!
অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর