সংযোগ
অরিন্দম দেবনাথ
“মহাগুরু, ওদের দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রযান যেকোনও মুহূর্তে গোলকপৃষ্ঠে নেমে হদিশ পেয়ে যাবে গোলকাভ্যন্তরের মানব বসতির। অনুমতি দেন তো ধ্বংস করে দিই যন্ত্রটিকে!”
“আতঙ্কিত হবেন না ওকারি, আমরা ওদের পূর্বপুরুষরা যদি এত সহস্র মাইল পথ অতিক্রম করে এখানে এসে বসতি গড়তে পারি, তাহলে ওরাও যে একদিন এখানে এসে পৌঁছবে, এ তো জানা ছিল আমাদের।”
“মহাগুরু, ওরা আমাদের প্রাচীন মাতৃভূমিকে লোভের আগুনে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি জমিয়ে বসতি গড়তে চাইছে এখানে। ধীরে ধীরে এই ভূমিকেও শেষ করে দেবে এরা।”
“ওদের এখানে আসা আমরা আটকাতে পারব না, ওকারি। ওরা ইতিমধ্যে পাঁচ সহস্র মাইল দূরে পরীক্ষামূলক বসতি বানিয়েছে। কিন্তু আবহাওয়ার সঙ্গে এখনও সইয়ে নিতে পারেনি, তাই কৃত্রিম আবহাওয়া সৃষ্টি করে বেঁচে আছে। আমাদের পূর্বপুরুষদেরও কয়েক শত বছর লেগেছিল মানিয়ে নিতে, ওকারি। ওরাও পারবে। কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে। ওদের মধ্যে মিশে থাকা আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, ওরা এখানে আরও অনেক অনেক বসত গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ওরা আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে। এটা হতে দেওয়া যায় না। আমাদের উপস্থিতি ওরা এখনও টের পায়নি। তবে আর কিছু বছরের মধ্যে পেয়ে যাবে। এখনি ওদের কোনও কিছুতে আঘাত হানলে ওরা আমাদের উপস্থিতি জেনে যাবে, আক্রমণ হানবে আমাদের ওপর। সেটা হতে দেওয়া যায় না। ওরা হিংস্র হয়ে উঠেছে। ওদের চিরাচরিত বসত ভূমি আর বসবাসের উপযোগী নেই। সব অরণ্য কেটে ফেলায় দূষিত বাতাসে মারা যাচ্ছে আমাদেরই হাজার হাজার উত্তরসূরি।”
“ভালোই তো হচ্ছে মহাগুরু, বর্তমান জনসংখ্যা কমলে ওরা হয়তো আর ধেয়ে আসবে না এখানে।”
“না ওকারি, ওই সামান্য জনসংখ্যা হ্রাসে কোনও পরিবর্তন হবে না আমাদের প্রাচীন মাতৃভূমির। এবার ওঁকে বাচাতে আঘাত হানতে হবে আমাদের। তবে সে আঘাত হবে নিঃশব্দ। ওখানকার জনবসতিগুলো করে ফেলতে হবে প্রায় জনশূন্য। ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসবে সবুজ। ফিরে আসবে বাস্তুতন্ত্র। ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া প্রাণ। হয়তো আমরাও গিয়ে আবার বসত বানাতে পারব আমাদের মাতৃভূমিতে।”
“কীভাবে আঘাত হানব বলুন, মহাগুরু।”
“আঘাত হানার এখনও সময় আসেনি, ওকারি।”
“মহাগুরু আর কয়েক পলের মধ্যে ওদের যন্ত্রযান নেমে পড়বে, খোঁজ পেয়ে যাবে আমাদের, আর ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে ওদের মূলকেন্দ্রে। আমাদের উপস্থিতি জেনে গেলে দলে দলে ওরা এসে পড়বে এখানে আর দখল করে নেবে আমাদের ভূমি!”
“এখনি কোনও বিপদ আসবে না, ওকারি। তুমি শুধু তরঙ্গরহিত বলয়টা চালু করে দাও। যন্ত্রযানের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে ওরা, কিন্তু যন্ত্রের কোনও ক্ষতি হবে না। পরে ওরা ওদের যন্ত্রের হদিশ পেলেও কোনও সংকেত পাঠাতে পারবে না আর ওই যন্ত্র। আমাদের অস্তিত্ব গোপন থাকবে আরও কিছুকাল। এরই মধ্যে প্রত্যাঘাত করতে হবে আমাদের।”
চাঁদের বুকে নামার ২.১ কিলোমিটার আগেই বেস স্টেশনের সঙ্গে যন্ত্রযান বিক্রমের সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেল অকস্মাৎ।
অলঙ্করণঃ অংশুমান