নিউগেট ক্যালেন্ডার আগের পর্বগুলো
উকিলশিকারী অ্যাটকিনসন
আইজ্যাক অ্যাটকিনসন ছিল বার্কশায়ারের এক ধনী ভদ্রলোকের একমাত্র সন্তান। তার শিক্ষাদিক্ষায় কোন কার্পণ্য দেখাননি কখনো তার বাবা। ভালো স্কুলে পড়তে পাঠিয়েছিলেন তাকে সেই ছোটোবেলাতেই। তবে সেখানে গিয়ে পড়াশোনার বদলে বড়োলোকের বখা ছেলেদের সঙ্গে মিশে সে অল্প বয়সেই বেশ বখাটে হয়ে উঠেছিল।
ষোলো বছর বয়সে স্কুলের পাট চুকতে তার বাবা তাকে পাঠালেন অক্সফোর্ডের ব্রাজেন নোজ কলেজে।
কলেজে এসে অ্যাটকিনসনের ডানা গজালো যেন। ইশকুলের একদল বন্ধুও তার একসঙ্গে সে কলেজে এসে ঢুকেছিল। সবাই মিলে সেখানে নরক গুলজার করে তুলল তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে, মাস্টারদের সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে কোঁদল করে, বইপত্র বিক্রি করে দিয়ে মহাফুর্তিতে দিন কাটতে লাগল তার। আর সেইসঙ্গে জলের মত বাবার টাকাপয়সা খরচ করে চলল ফুর্তির জোয়ার।
তা এইভাবে কলেজে দুটো বছর কাটতে তার বাবা বুঝলে, ছেলের পড়াশোনা তো কিছু হচ্ছেই না, উপরন্তু তাঁর কষ্টার্জিত টাকাপয়সার সর্বনাশ করে দিচ্ছে সে শহরে বসে।
অতএব তার বাবা ভেবেচিন্তে ঠিক করলেন, একে কলেজ ছাড়িয়ে এনে কাজকর্মে জুতে দেয়া যাক। শহরে থাকলে তার উড়নচণ্ডী স্বভাব আরো বাড়তে পারে ভেবে তিনি ঠিক করলেন অ্যাটকিনসনকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে এনে সেখানকার কাজকর্মে লাগাবেন।
সেইমত তাকে ফিরিয়েও আনা হল। বাবা যে তার অপকর্মের জন্য কড়া কোনো শাস্তি না দিয়ে তাকে দয়াদাক্ষুণ্য দেখিয়েছেন সে বোধ তার ছিল না। গ্রামদেশে এসেও দেখা গেল তার স্বভাব বদলায়নি। কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেখানেও শুরু হয়ে গেল তার বেজায় উৎপাত। অন্যের জমিতে হাঙ্গামা করা, গ্রামের মেয়েদের অতিষ্ঠ করা থেকে শুরু করে মাতাল হয়ে হল্লা, মারপিট কিছুতেই তসে পিছপা নয়।
তার শখের খরচ আর হল্লাগণ্ডগোলের জরিমানা ভরতে ভরতে, লোকজনের কাছ থেকে তার নামে নালিশ শুনতে শুনতে অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন তার বাবা। ঠিক করলেন, বাড়ির আদরের বাইরে জগতটা কেমন তা এইবার একটু দেখবার সময় হয়েছে এর। অতএব একদিন সকালে তিনি ছেলেকে সামান্য কিছু টাকা হাতে দিয়ে বাড়ি থেকে দূর করে দিলেন। ভাবলেন বুঝি একটু-আধটু কষ্ট করে কটা দিন কাটালে চৈতন্য ফিরবে এর।
কিন্তু সে গুড়েও বালি দিল অ্যাটকিনসন। প্রথমেই টাকাপয়সাটুকু নিয়ে লণ্ডনে এসে সে কয়েকদিনের মধ্যে সেটুকু উড়িয়ে পুড়িয়ে দিল। তারপর পেটে টান পড়তে ফের একবার বাড়ির পথ ধরল সে। পথে যেতে যেতে পাট ভরাবা জন্য দু একটা ছোটোখাটো চুরিডাকাতি করতে তার বাধল না। বাবার ওপর তার তখন ভয়ানক রাগ। আদরের ছেলেকে এহেন কষ্টের মধ্যে ফেলবার শাস্তি তাঁকে দিতে সে তখন বদ্ধপরিকর।
গ্রামের দিকে ফিরে এলেও বাড়ির দরজা যে তার জন্যতখনও বন্ধ তা বুঝতে অ্যাটকিনসনের অসুবিধে হয়নি। বের করে দেবার সময়েই বাবা তাকে বলে দিয়েছিলেন, কখনো নিজেকে শুধরোতে পারলে তবেই যেন সে বাড়ির দিকে আসবার কথা ভাবে। কিন্তু ততদিনে নিজেকে শোধরাবার সব রাস্তা তো সে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে।
অতএব বাড়ির কাছাকাছি এসে গা ঢাকা দিয়ে রইল সে। তারপর রাত্রিবেলা রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাড়িতে এসে ঢুকল সবাই শুয়ে পড়বার পর। আগে থেকেই তার জানা ছিল রান্নাঘরের জানালায় খিল পড়ে না।
বাড়িতে চুপি চুপি ঢুকে সে প্রথমে সোনারূপোর টাকা মিলিয়ে দেড়শো পাউন্ড হাতিয়ে নিল অ্যাটকিনসন। এইবার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি জেগে উঠল তার। বাবার ওপর প্রতিশোধ নেবার জন্য আগে থেকেই কায়োদা একখানা ঠিক করে রেখে এসেছিল সে। তচুরিটুরির পর পকেট থেকে সে বের করে আনল আগে থেকে লিখে রাখা একখানা কবিতা।
তাতে সে লিখছেঃ
ছেলেকে এমন শাস্তি দিয়েছ কড়া
তুচ্ছ কারণে, করেনি সে লেখাপড়া
যা তুমি শেখাও নিজেও কি তাই করো?
কখনো কি নিজে কেতাবপত্র পড়ো?
আমিই তোমার পরীক্ষা নেব আজ
ছোট্ট সরল কাজ
শেলফে রয়েছে বাইবেল একখানা
সেকথা তোমার জানা
পাঁচটা মোহর রইল পাতার ফাঁকে
বইটি কখনো হাতে নিয়ে তুলে
পাতাগুলো তার দেখ যদি খুলে
খুঁজে পাবে তুমি তাকে।
না হলে, তোমার কবরে যাবার পরে
আমি ফিরে এসে ঘরে
দেখব ওখানে জমা রয়ে গেছে
মোহর ও-পাঁচটি যে
বুঝব আমাকে যা বলেছ তুমি
কখনো করোনি নিজে
এইবার, পাঁচটা সোনার মোহর কবিতার কাগজটা দিয়ে মুড়ে সে বাইবেলটার পাতার ফাঁকে গুঁজে দিয়ে ফের বের হয়ে গেল অন্ধকারে। আর তার কোনো অভাব নেই।
পরদিন সকালে উঠে বাড়িতে চুরি হয়ে যাবার শোকে তার বৃদ্ধ বাবা যখন শেরিফকে খবর দেবার কথা ভাবছেন, ঠিক তখন বাইবেলের ফাঁকে ছেলের কীর্তিটা চোখে পড়ল তাঁর। দুঃখে, ক্ষোভে একেবারে ভেঙে পড়লেন বৃদ্ধ মানুষটি। তারপর খানিক সামলে উঠে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে একটি উজ্জ্বল তরুণকে তাঁর উত্তরাধীকারী করে উইল বানালেন। ত্যজ্যপুত্র করলেন নিজের কুলাঙ্গার সন্তানকে। এর কিছুদিন বাদেই মারা গেলেন তিনি।খবরটা পেয়ে রাগে দাঁত ইড়মিড় করেছিল অ্যাটকিনসন। না বাবার মৃত্যুতে একটুও দুঃখ হয়নি তার। শুধু রাগে উন্মাদ হয়ে অভিশাপ দিয়েছিল সে তাঁকে, তার ভোগে লাগবার বদলে সম্পত্তি অন্য কাউকে দিয়ে যাবার জন্য।
তবে থাক সে কথা। চুরি সেরে বেরিয়ে অ্যাটকিনসন কী করল সে কথায় ফিরে আসি। আসবার পথে বাবার আস্তাবল থেকে তাঁর সেরা ঘোড়াটাকেও চুরি করে নিয়েছিল সে। সেই ঘোড়ায় চেপে এবারে সে ফের এসে রওনা হল লণ্ডনের দিকে।
আক্সব্রিজ এসে যখন পৌঁছুল অ্যাটকিনসন তখন বিকেল হচ্ছে। সেখানে পৌঁছে হঠাৎ কী মনে হতে সে গিয়ে হাজির হল সেখানকার গির্জায়। সেটা ছিল রবিবার। পাদ্রি তখন গির্জায় সারমন দিচ্ছেন। সেদিনের সারমন তিনি বেছেছিলেন সন পল-এর বাণী থেকে।তার বিষয় শেষ বিচারের দিন।
তিনি বলছিলেন, “কারণ তোমরা জান, প্রভুর দিনটি চোরের মত সকলের অগোচরে রাত্রির অন্ধকারে তোমাদের নিকট আসিবে…”
এর পর শেষ বিচারের দিনটার এমন ভয়াবহ বর্ণোনা তিনি দিলেন যে নিতান্ত অ্যাটকিনসনের মত পাকা বদমাশ না হলে তা শুনে মানুষের প্রাণে ভয় ধরবেই। অ্যাটকিনসনের অবশ্য সে-সব শুনে বিশেষ ভয়টয় হল না। উলটে কথাগুলো শুনে একটা বদবুদ্ধি চাপল তার মাথায়।
সারমন শেষ হওয়া অবধি গির্জার কাছেই অপেক্ষা করে রইল সে। তারপর পাদ্রি যখন বাড়ির পথ ধরেছেন, তখন তাঁর পিছু ধরল। শহর থেকে বেরিয়ে আধমাইলটাক গিয়ে রাস্তাঘাট একটু নির্জন হতে অ্যাটকিনসন এসে চড়াও হল পাদ্রির ওপর। পাদ্রি নিতান্ত ভালোমানুষ। হতভম্ব হয়ে বলেন, “আরে কী ব্যাপার? এমন দুম করে আমার ওপর এসে…”
জবাবে অ্যাটকিনসন দেঁতো হেসে বলে, “তোমার ভুল শোধরাতে এলাম পাদ্রিবাবা। বলছিলে না চোর সবার অগোচরে রাতের বেলা আসে!তা, পরের বার যখন বাণীটাণি দেবে তখন সেটা বদলিও। বলবে, ‘কারণ তোমরা জান, প্রভুর দিনটি চোরের মত দিনের আলোয় তোমাদের নিকট আসিবে…’ জুতসই হবে, তাই না? কারণ রাত্রে যে চোর আসে সে তো সবাই জানে। কিন্তু মানুষের দিনে চোর আসবে, দিনদুপুরে শহরবাজারের এত কাছে তোমার সর্বস্ব কেড়ে নেবে এ-কথা কে কবে ভেবেছে, বলো?”
এই বলে পাদ্রিকে খানিক মারধর করে সে তাঁর থেকে এক পাউন্ড আঠারো শিলিং আর একটা রূপোর ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে, তাঁকে বেঁধেছেঁদে রাস্তা থেকে বেশ খানিক দূরে একটা জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রেখে ফের নিপাট ভালোমানুষের মত ঘোড়ায় চড়ে লণ্ডনের দিকে চলল।
আবার একবার, তার সঙ্গে রাজা প্রথম চার্লসের আইনজীবি ‘নয়’-এর দেখা। ‘নয়’ তখন রজকার্যে চলেছেন ঘোড়ায় চেপে। তাঁকে দেখেই ফের দুষ্টুবুদ্ধি চাপল অ্যাটকিনসনের মাথায়। ভাবল এঁকে আইনের ভাষায় চেপে ধরা যাক। গুটিগুটি তাঁর কাছে এগিয়ে গিয়ে সে বলে, “মহোদয়, আমার নিকট আপনার বিরুদ্ধে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের হুকুম রহিয়াছে। অতঃ মহোদয়কে সঙ্গে থাকা যাবতীয় অর্থাদি আমার হস্তে সমর্পণ করিতে আদেশ হয়।”
‘নয়’ নিজেও লোকটি রসিক। একটা গুণ্ডার সঙ্গে নাহক রাগ করে গণ্ডগোল বাধাবার বদলে তিনি নিজেও মজা করেই উলটে প্রশ্ন করলেন, “কাহার হুকুম জানা যাইবে কি?”
জবাবে অ্যাটকিনসন পোশাকের ভেতর থেকে গুটি দুই তিন পিস্তল টেনে বের করে বলে, “এই অস্ত্রের হুকুমে মহোদয়।হুকুমের জোর পরীক্ষা করিতে চান কি?”
উকিলসাহেবের এহেন সয়ালের পর আর জবাব দেবার কিছু ছিল না। অতএব সঙ্গের যাবতীয় টাকাপয়সা দিয়ে “ঋণ” শোধ করে তিনি নিস্তার পান।
তা এরপর দেখা গেল অ্যাটকিনসনকে উকিলে পেয়েছে। রাস্তায় উকিল পেলে আর সে কারো দিকে চোখ দেয় না। এমন উকিলশিকারী ডাকাত সে আমলের ইংল্যান্ডে আর দ্বিতীয়টি দেখা যায়নি। সে-সময় একবার মাত্র আটমাসের মধ্যে কেবলমাত্র নরফোক এলাকাতেই একশো ষাটজন উকিল অ্যাটকিনসনের ‘হুকুম’ এর জোরে “ঋণ” শোধ করে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন।এতে তার মোট আয় হয়েছিল তিন হাজার পাউণ্ডেরও বেশি।তখন তার সাহস এত বেড়ে গেছে যে একসঙ্গে তিন চার কি পাঁচজন উকিল দেখলেও সে তেড়ে গিয়ে তাঁদের সবকিছু কেড়েকুড়ে নেয়। কিন্তু কেউ তার টিকিটি ছুঁতে পারে না।
তবে ইতিহাস বলে, বেশির ভাগ ভয়ানক ডাকাতই শেষমেষ একেবারে সাধারণভাবে ধরা পড়ে যায়। অ্যাটকিনসনের কপালেও তাই ঘটেছিল। তার পরিণতিতেই তাকে শেষমেষ টাইবার্ণের ফাঁসির মঞ্চে উঠতে হয়।
সেখানে ঘুরতে ঘুরতে, টার্নহ্যাম গ্রিন বলে একটা জায়োগায় এসে অ্যাটকিনসনের সঙ্গে এক দোকানদারনির দেখা। ভদ্রমহিলার সঙ্গে খুচরো পয়সায় ভরা একটা ভারী থলে ছিল। ভারী ব্যাগটা দেখে অ্যাটকিনসন ভাবল, না জানি কী সম্পত্তি আছে তাতে। অতএব সে তৎক্ষণাৎ তাঁর সামনে এসে হাজির। থলেটা তার চাই। ভদ্রমহিলার ছিল বেজায় সাহস। ডাকাত দেখে এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি থলেটাকে ছুঁড়ে ফেললেন একটা বেড়ার ওধারে। আর তারপর ঘোড়ার ছুটিয়ে দিলেন কাছাকাছি ব্রেন্টফোর্ড বলে একটা জায়গার দিকে।
এহেন অপমানে অ্যাটকিনসন প্রথমে তো থতমত খেয়ে গিয়েছিল। সে-হেন বিখ্যাত ডাকাতের সঙ্গে একজন মহিলা এই ধরণের দুঃসাহস দেখান কী করে? তবে মহিলাকে তার শাস্তি দেবার বদলে ভারী থলেটার আকর্ষণ তার কাছে তখন অনেক বেশি। অতএব ঘোড়া থেকে নেমে তার রাশটা একটা খোঁটার গায়ে পাক দিয়ে রেখে সে চলল বেড়া টপকে লুঠের মাল তুলে আনতে।
তবে তার ভাগ্য সেদিন অন্য কথা ভেবেছিল। ভদ্রমহিলা একটা মাদি ঘোড়ায় চেপেছিলেন সেদিন। অ্যাটকিনসনের ঘোড়াটা তার গন্ধ পেয়ে হঠাৎ দড়িকাড়া ছিঁড়ে, চিঁ হিঁ হিঁ ডাক ছেড়ে ছুট দিল তার পেছন পেছন। শব্দ পেয়ে পেছন ঘুরে ব্যাপার দেখে ভদ্রমহিলা তাড়াতাড়ি ব্রেন্টফোর্ডে পৌঁছে লোকজনকে খবর দিলেন। খবর পেয়েই সেখান থেকে শকপোক্ত জনাদশেক লোক ঘোড়া ছুটিয়ে এল চোরের খোঁজে।
এরপর আর বেশি কসরৎ করতে হয়নি তাদের। কাছাকাছি একটা মাঠের মধ্যেই তাদের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিল অ্যাটকিনসন। সঙ্গে ঘোড়া নেই। তাই ছুটেই পালাবার চেষ্টায় ছিল সে। কিন্তু তাতেও বাদ সেধেছিল তার পায়ের হাঁটু অবধি তোলা জ্যাকবুটজোড়া। সে জুতো খোলা বেশ কঠিন কাজ। তত সময়ও তার হাতে ছিল না। ফলে ভারী জুতো পরে দৌড়েও পালাবার অবস্থাতে ছিল না সে আর।
অবশেষে যখন সে দেখল তাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে, তখন তাতেও ভয়না পেয়ে সে মরীয়া হয়ে টেনে বের করল দুতিনটে পিস্তল। তাদের গুলিতে চারজন মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেদিন তাকে কাবু করবার আগে।
গ্রেফতার করে অ্যাটকিনসনকে এক ম্যাজিস্ট্রেটের দরবারে পেশ করা হলে তিনি তাকে পাঠালেন নিউগেট কারাগারে। সেখানে এসেও তার চরিত্রের কোনো উন্নতির লক্ষণ ছিল না। দুনিয়ার সকলেই যেন তার কাছে তুচ্ছ। জেলার থেকে সেপাই, অন্য বন্দি সবাই তার উপহাসের পাত্র। তাদের টিটকিরি দিয়েই সেখানে দিন কাটত তার।
বিচারে ফাঁসির হুকুম হয়েছিল অ্যাটকিনসনের। ফাঁসির আগের দিন বেপরোয়া হয়ে একটা পেনসিল কাটার ছুরি দিয়ে সে প্রাণপণে নিজের গায়ে খুঁচিয়ে আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে তার প্রাণ যায়নি। আহত অবস্থাতেই তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে টাইবার্নে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সেটা ছিল ১৬৪০ সাল। তার বয়েস তখন মাত্রই ছাব্বিশ।
যতই উচ্ছন্নে যাক, অ্যাটকিনসন মানুষটা কিন্তু খানিক বিদ্যাবুদ্ধি পেয়েছিল। পড়াশোনা জানত। মরবার আগে ফাঁসিকাঠেদাঁড়িয়ে সে তাই একটা সংক্ষিপ্ত কিন্তু অদ্ভুত বক্তৃতা দেয়। সে বলেছিল, “মহোদয়গণ, ফূর্তিবাজ, ছোট্ট জীবনের মত আনন্দের আর কিচ্ছু হয় না।”