বহুদিন আগে দুই বন্ধু বনের মধ্যে বাস করত। তাদের নাম লিচু ও কাঁঠাল। লিচু থাকত উঁচু ডালে আর কাঁঠাল থাকত নীচু ডালে। লিচু চারদিকে বহুদূর পর্যন্ত দেখতে পেত আর তার মন অহংকারে ভরে থাকত। সামান্য বাতাস পেলে সে গাছের ডাল দুলিয়ে গর্ব প্রকাশ করত। তাছাড়া সে ছিল কাঁঠালের চেয়ে বেশি খুশি খুশি মনের।
অন্যদিকে কাঁঠাল থাকত নীচু জায়গায়। চেহারায় সে লিচুর চেয়ে ছোটো। সে খুব শান্ত, ভদ্র। দুজনে দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও কাঁঠালের মনে কোনও অহংকার ছিল না। বনের সব গাছ, ফুল-ফল তাকে খুব ভালোবাসত।
দুজনের কথা বনের সব ফল বলাবলি করত। আর লিচুর খারাপ ব্যবহারের জন্য তার নিন্দা করত। এতে লিচুর খুব রাগ হত। সে যখন-তখন কাঁঠালকে গালি দিত।
গরমের সময় এলেই সবাই দুজনকে দেখতে আসত। কাঁঠালকে তো তার মধুর স্বভাবের জন্য সবাই আদর করে অনেক কথা বলত। লিচুকে দেখে সবাই এড়িয়ে যেত, দেখেও না দেখার ভান করত। তার সঙ্গে কেউ কথা বলতে চাইত না। লিচু এটা বুঝতে পেরে সবাইকে বলল, “ওর কী আছে? আমার চেয়ে ও কত ছোটো আর কত নীচুতে থাকে।”
এমনিভাবে বহুদিন কেটে গেল।
একদিন বনদেবতা বনের সকল গাছপালা দেখতে এলেন। তিনি সবার সুবিধা-অসুবিধার খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। কারও কোনও নালিশ থাকলে তা জানাতে বললেন।
সবাই একবাক্যে লিচুর অহংকার এবং কাঁঠালের সঙ্গে তার খারাপ ব্যবহারের কথা বলল। কীভাবে সে অকারণে কাঁঠালের নিন্দা করে ও তাকে হেনস্থা করে, তাও সবাই দেবতাকে বলল।
সব শুনে দেবতা রেগে গেলেন। তিনি লিচুকে অভিশাপ দিলেন এবং বললেন, “আজ থেকে লিচু তার অহংকারের জন্য কাঁঠালের চেয়ে অনেক ছোটো হয়ে যাবে আর কাঁঠাল বড়ো হবে। দুজনের চেহারা একরকম হলেও লিচু কাঁচায় থাকবে টক আর তার একটিমাত্র কোষ বা বিচি থাকবে। পাকলে তবে লোকে তাকে পছন্দ করবে। তবে তার আয়ু হবে কম।
“আর কাঁঠাল কাঁচা থাকলেও লোকে তাকে এঁচোড় হিসেবে যত্ন করে নেবে। তার মধ্যে অনেক কোষ বা বিচি থাকবে। আর পাকলে তার মিষ্টি গন্ধে মানুষ এবং অনেক প্রাণী তাকে যত্ন করে নেবে। এখন থেকে সবার কাছে কাঁঠাল হবে ফলের রাজা।”
এইভাবে পৃথিবীতে কাঁঠাল ও লিচু তাদের বর্তমান চেহারা ও গুণ পেল।
কাউকে ছোটো ভাবতে নেই। অন্যকে ছোটো ভাবলে নিজেই ছোটো হয়ে যেতে হয়।
জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস