মল্লিকা ধরের আগের লেখা- তৃণার স্বপ্নপৃথিবী(উপন্যাস)
সেদিনটা কোনোদিন ভুলবে না এণাক্ষী । সেইদিন ও প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল সেই আশ্চর্য নীল আয়নার। তখন ও পড়ত ক্লাস ফাইভে, গ্রীষ্মের ছুটিতে মামাতো দিদি অরুণার সঙ্গে বেড়াতে গেল। সেই প্রথম বাবা-মা ছাড়া অত দূর যাওয়া ওর। গিয়েছিল অরুণার মাসি-মেসোর কাছে। আগেই শুনেছিল তাঁরা অপূর্ব সুন্দর এক জায়গায় থাকেন।
সত্যিই অপূর্ব জায়গা। চারদিকের দৃশ্য চোখ জুড়োনো সুন্দর। সবুজে সবুজ উপত্যকা। আকাশটা অপরাজিতা ফুলের মত নীল; সেই আকাশে মাথা জাগিয়ে আছে দূরের পাহাড়েরা। কাছেই এক ছোটো পাহাড়ী নদী, এঁকে-বেঁকে বয়ে গিয়েছে সবুজের বনের ভিতর দিয়ে। নদীর ধারে চমৎকার এক পাথরের বাড়ি, বাড়ি ঘিরে বাগান। সেই বাড়িতেই থাকতেন অরুণার মাসিরা। অবাক-খুশি হয়ে এণাক্ষী ভাবছিল, এ যে রাজবাড়ির মতন!
সাদা পাথরের বাড়ি। গোটা বাড়িটাই অপূর্ব, কিন্তু তার মধ্যেও এণাক্ষীর সবচেয়ে চমৎকার লেগেছিল বাড়ির মস্ত ছাদ আর ছাদের মাঝখানে একটা ছোটো গোল ঘর দেখে। ঘরের দেওয়াল গোল হয়ে ঘুরে গিয়েছে, ঘরের ছাদও গম্বুজের মতন। এমন আশ্চর্য ঘর আগে কোথাও দেখেনি এণাক্ষী।
ঘরটাকে ঠিক ঘরও বলা চলে না বোধহয়, কারণ ঘরের যে একটি দরজা ছিল, তাতে কোনও পাল্লা ছিল না। ঘরের দেওয়ালের উপরদিকে অনেক ঘুলঘুলির মতন ছিল, কিন্তু জানালা ছিল না। ঘরের ভেতরে কোনও আসবারপত্রও ছিল না, একেবারে খালি। কোনও পারিবারিক সম্মেলনে ছাদ জুড়ে গল্প-গানের আসর বসলে, ওই ঘরটা ব্যবহার হত জলখাবার রাখার জন্য। অরুণার মাসি এসব পরে বলেছিলেন ওদের। কিন্তু প্রথমদিন ছাদে এসে ঘরটা দেখে এণাক্ষীর কেমন একটা ভয় মেশানো রহস্যের অনুভূতি হয়েছিল, যেন ওটা একটা রহস্যময় কিছু।
একদিন দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়ার পর বাড়ির সবাই ঘুমোচ্ছিল, আর এণাক্ষী ছাদে বেড়াচ্ছিল। সেদিন দুপুরে কড়া রোদ ঢেকে দিয়ে মেঘ করে এসেছিল, ঠান্ডা হাওয়া বইছিল, কাছেই কোথাও বৃষ্টি হয়েছিল, সেই বৃষ্টি-ছোঁয়া হাওয়া। বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ কী যে খেয়াল হল, সে ঢুকল গোল ঘরটায়। আর দেখল ঘরের দেওয়ালে একটা বিরাট ডিম্বাকৃতি আয়না। সোনালি ফ্রেমে ঘেরা, কাচটা ছিল নীলাভ। আগে আয়নাটা দেখেছিল কি না মনে করতে পারল না এণাক্ষী। এগিয়ে গেল আয়নার সামনে। কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে আর ভয়ে সে কাঠ হয়ে গেল। আয়নার ভিতরে তার প্রতিবিম্ব নেই, অন্য কে যেন দাঁড়িয়ে আছেন তার দিকে মুখ করে। যিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, এণাক্ষীর মনে হল তিনি একজন মধ্যবয়সি মহিলা। কিন্তু তাঁর চেহারা, পোশাক সবই খুব অন্যরকম। সবচেয়ে আশ্চর্য তাঁর দুটো চোখ, অতল চোখ যাকে বলে। সেই চোখ মেলে তিনি অপলকে চেয়ে ছিলেন এণাক্ষীর দিকে।
কয়েক সেকেন্ড সম্মোহিতের মতন দাঁড়িয়ে ছিল এণাক্ষী, তারপরেই একটা চিৎকার দিয়ে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। বেশি দূর যেতে পারেনি, ছাদের উপরে লুটিয়ে পড়ল অচেতন হয়ে।
ছাদে কী কাজে যেন এসেছিলেন রাধামাসি, অরুণাদের দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়া। তিনিই দেখতে পান অচেতন এণাক্ষীকে। তারপরে তাঁর ডাকে বাকিরা এলেন, এণাক্ষীকে তুলে নীচের ঘরে নেওয়া হল। জ্ঞান ফেরানো হল, ডাক্তার ডাকা হল। হুলুস্থুলু কাণ্ড যাকে বলে।
পরে এণাক্ষী সবাইকে আয়নার কথা বললে কেউ বিশ্বাস করল না। বলল, ও-ঘরে কোনও আয়না নেই। ওকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েও দিল। সত্যিই কোনও আয়না ছিল না দেওয়ালে। এণাক্ষী চুপ করে গেল। সে নিয়ে আর কোনও কথা বলেনি। এমনকি অরুণার সঙ্গেও নয়।
আরও দিন দশেক ছিল ওরা ওখানে। ঘুরে বেড়িয়ে খুব আনন্দেই কাটিয়েছিল ওই দিনগুলো। কিন্তু আর ছাদে যায়নি এণাক্ষী।
বাড়ি ফিরে পড়াশোনা, স্কুল, গানের ক্লাস, আঁকার ক্লাস ইত্যাদি নানা ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে গিয়েও কিন্তু সেই আয়নার কথা সে ভুলতে পারেনি। সবটাই কি চোখের ভুল? সে কি তাহলে স্বপ্ন বা স্বপ্নের মতো কিছু দেখেছিল?
এণাক্ষী খুব চেষ্টা করত ঘটনাটা ভুলে যাবার, কিন্তু মাঝে-মাঝেই তার মনের মধ্যে ফিরে আসত সেই স্মৃতি। সঙ্গে আসত কেমন একটা অস্বস্তি, একটা কাঁটার খোঁচার মতন অনুভূতি, একটা দম আটকানো ভয়। আস্তে আস্তে সময়ের প্রলেপে ঝাপসা হচ্ছিল স্মৃতি, কিন্তু মুছে যায়নি।
২
দ্বিতীয়বার এণাক্ষী সেই আয়নার দেখা পেয়েছিল প্রথমবারের অনেক বছর পরে। সে তখন কলেজের প্রথম বর্ষে। বন্ধুদের সঙ্গে সে তখন বেড়াতে গিয়েছিল এক প্রত্নস্থলে। সেখানে গুহার দেওয়ালে আদিম মানুষের আঁকা নানারকম ছবি রয়েছে, সেগুলো দেখাই ছিল প্রধান আকর্ষণ। হ্যাঁ, সেসব তারা দেখেছিল, তাদের সবার কাছেই অভিজ্ঞতাটা ছিল দারুণ ব্যাপার।
মাটির নীচে গুহার পর গুহা, পুরো একটা গোলকধাঁধার মতন ব্যাপার যেন। ওদের গাইড ছিলেন ওখানকার একজন প্রত্নতাত্ত্বিক, বন্ধুদের একজনের মামা তিনি। আসলে তাঁর জন্যেই ওরকম অত ভেতরে গিয়ে দেখা সম্ভব হয়েছিল। দলের সঙ্গে যেতে যেতে হঠাৎ এণাক্ষী কেমন করে যেন দলছাড়া হয়ে একটা ফাঁকা গুহার মধ্যে গিয়ে পড়েছিল। গুহাটা অল্প আলোকিত ছিল, গুহার মেঝের একপাশ একটু ঢালু হয়ে মিশে ছিল একটা জলকুণ্ডে। কীসের যেন টানে এণাক্ষী এগিয়ে যাচ্ছিল জলকুণ্ডটার দিকে, সেইদিকের দেওয়ালে আঁকা ছিল একটা আশ্চর্য ছবি। একটা গোল কিছু যা থেকে তিনটে তিরের ফলার মতন রেখা বেরিয়ে এসেছে। এই ছবির অর্থ কী?
সেই ছবিটার কাছে পৌঁছে সে দেখল ডানদিকে গুহার দেওয়াল একটু বেঁকে ঘুরে গিয়েছে এমনভাবে যে ওদিকে কী আছে দেখা যাচ্ছে না। দেখার জন্য ওদিকে যেতেই চমক। দেওয়ালে সেই নীল আয়না, সোনালি ফ্রেমে ঘেরা। আয়নার ভিতরে সেই অচেনা ঘর, আর সেই মহিলা। গভীর চোখ মেলে তাকিয়ে আছেন।
এণাক্ষী পাথরের মূর্তির মতন স্থির হয়ে গেল। সে চোখে দেখতে পাচ্ছিল, কানে শুনতে পাচ্ছিল, কিন্তু নড়বার কোনও ক্ষমতা ছিল না তার। আয়নার ভিতর থেকে তার চোখে চোখ রেখে কী যেন বলছিলেন মহিলা। বিন্দুমাত্র বুঝতে পারছিল না এণাক্ষী। তার কানে ধরা পড়ছিল শুধু কতগুলো আওয়াজ—কখনও মোলায়েম, কখনও তীক্ষ্ণ।
কতক্ষণ ওভাবে ছিল সে জানে না, কিছুটা সময়ের পর তার স্মৃতিতে সবকিছু অন্ধকার। চোখ যখন মেলল, তখন সে ডাক্তারখানায়। বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন আর সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ মামা সেখানে ছিলেন। ওর জ্ঞান ফিরলে স্বস্তির শ্বাস ফেলল সবাই।
পরে এণাক্ষী শুনল তাকে নাকি সতেরো নম্বর গুহার মধ্যে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পেয়েছিলেন প্রত্নস্থলের একজন কর্মী। বন্ধুরা সবাই সাত নম্বর গুহার পরে আর যায়ইনি। এণাক্ষী অত দূরের ওই গুহায় কেমন করে গিয়ে পড়ল সেটাই এক রহস্য।
গুহা থেকে ফিরে কিছুদিন খুব চুপচাপ থাকত সে, নিজের মধ্যে নিমগ্ন। বার বার তার মনে পড়ত সমান্তরাল জগতের কথা। এই যে আমাদের মহাবিশ্ব, বহু সহস্রকোটি গ্যালাক্সি নিয়ে তৈরি এক বিরাট জগৎ যা স্থানকালে প্রতিনিয়ত প্রসারিত হয়ে চলেছে, এই কি একমাত্র? এর সমান্তরালে আরও বহু এইরকম জগৎ নেই কি? এমন কি হতে পারে সেইরকমই এক জগৎ থেকে কেউ যোগাযোগ করতে চাইছে?
ওই ঘটনার আগে থেকেই এণাক্ষী মাল্টিভার্স তত্ত্বের কথা পড়েছিল। এইবারে ঠিক করে নিল ভালো করে জানতে হবে, পরবর্তীকালে যাতে এই নিয়ে গবেষণা করা যায়। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে কলেজ পার হয়ে সে পাড়ি দিল বিদেশে। সেখানকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ পেয়েছিল। সেইখানেই এণাক্ষী মাল্টিভার্স নিয়ে তাত্ত্বিক কাজ করছিল ডক্টর প্রজ্ঞা ভাস্করণের কাছে। প্রথম আর দ্বিতীয় বছরে কাজ এগিয়ে গেল জোরকদমে। তার প্রোগ্রেস দেখে ডক্টর ভাস্করণ বিস্মিত হয়েছিলেন, খুশিও হয়েছিলেন।
তৃতীয় বছরে এণাক্ষীর সবকিছু কীরকম যেন বদলে গেল। কাজের চাপেই কি না কে জানে, একদিন কম্পিউটার ল্যাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ল সে। সেখান থেকে তাকে সরাসরি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে শারীরিক কোনও কারণ পেলেন না তার হঠাৎ অজ্ঞান হবার। কিন্তু সেদিনের পর থেকেই এণাক্ষীর স্বপ্নে ফিরে আসতে থাকল সেই নীল আয়না। অস্বস্তিতে, উদ্বেগে, ভয়ে কীরকম যেন হয়ে গেল এণাক্ষী। সাইকিয়াট্রিস্ট তাকে কিছুদিন বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিলেন। এণাক্ষী তাঁকে আয়নার কথা বলেনি, শুধু নানারকম জটিল দুঃস্বপ্নের কথা বলেছিল।
ডক্টর ভাস্করণ গবেষণা থেকে তাকে ছুটি দিলেন কিছুদিনের। এণাক্ষী গেল কাছের সমুদ্রতীরে ছুটি কাটাতে। সঙ্গে বন্ধু অন্তর্লীনা। সেও কিছুদিন ছুটি পেয়েছিল অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ায়। অন্তর্লীনাও গবেষণা করত ডক্টর ভাস্করণের কাছেই।
৩
আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার ছিল, কৃষ্ণপক্ষের রাত ছিল সেটা। অজস্র নক্ষত্রের ভারে আকাশ যেন নুয়ে পড়েছিল। শুভ্র ওড়নার মতন ভাসছিল ছায়াপথ, দক্ষিণে স্যাজিটারিয়াস (ধনুরাশি) থেকে উত্তরে সিগ্নাস (রাজহংসমণ্ডল) অবধি।
নির্জন সমুদ্রসৈকতে বসে ছিল এণাক্ষী আর অন্তর্লীনা। চাঁদ উঠবে অনেক রাতে। ওরা ঠিক করেছিল চন্দ্রোদয় দেখে তারপরে ফিরবে হোটেলে।
ঢেউগুলো নক্ষত্রালোকে আশ্চর্য দেখাচ্ছিল। একের পর এক আসছে, ভেঙে পড়ছে।
ফিসফিস করে এণাক্ষী বলল, “লীনা, তুই মিরাকলে বিশ্বাস করিস?”
অন্তর্লীনা অবাক হয়ে তাকাল।—“মিরাকল? কীসের মিরাকল?”
এণাক্ষী বলল, “যদি কোনও ইন্টার-ইউনিভার্স পোর্টাল খুলে যায় এখানে? অন্য মহাবিশ্বে প্রবেশের পথ? তাহলে?”
অন্তর্লীনা এণাক্ষীর হাত চেপে ধরে কাঁপা গলায় বলল, “কী বলছিস তুই? আমরা শুধু কতগুলো ইকোয়েশন লিখে হাইপোথেটিকাল সলিউশন বার করি, বড়োজোর সিমুলেশন চালিয়ে দেখি। কিন্তু তুইও জানিস, আমিও জানি সত্যিকার পোর্টাল তৈরি করতে যে-ধরনের এনার্জি দরকার, তার কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই, অন্তত এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
এণাক্ষী বলল, “আমরা খুঁজে পাইনি। কিন্তু অন্য মহাবিশ্বের বুদ্ধিমত্তাযুক্ত জীবদের পক্ষে তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব। হয়তো…” এই পর্যন্ত সে শুধু বলেছিল, সেই মুহূর্তে নির্মেঘ আকাশে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠল। মনের খুব ভেতরে এণাক্ষী বুঝতে পারছিল, এইখানেই সেই পথ খুলে যাবে। এর আগে দু-বার যে আয়না সে দেখেছিল, ওটা ছিল একধরনের আন্তর্মহাবিশ্ব সংযোগ, শুধু দেখা আর শোনার মতন যোগাযোগ হত পারত ওটা দিয়ে। যে-কোনো কারণেই হোক, এণাক্ষীকে টেস্ট সাবজেক্ট করেই সেই জগতের সত্তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন আমাদের জগতে। এখন তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন দুই মহাবিশ্বের যোগাযোগের সেতু। সেই পথ দিয়ে হয় তাঁরা এখানে আসবেন, নয়তো এখান থেকে কাউকে নিয়ে যাবেন।
আশ্চর্য একটা আলোয় ভরে গেল তাদের চারপাশ। এণাক্ষী বুঝতে পারছিল, সময় হয়ে এসেছে। বাধা দিয়ে তো লাভ নেই, অবশ্যম্ভাবীর কোলে নিজেকে সমর্পণ করাই ভালো। মাটির পৃথিবীর সামান্য মানুষ সে, অনন্ত জগতের দরজা যখন তার কাছে খুলে যাচ্ছে, সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করার তো কোনও যুক্তি নেই।
সহসা নক্ষত্রময় আকাশে যেন গর্ত হয়ে গেল একটা, সেখান থেকে ঘূর্ণিজলের ধারার মতন নেমে আসতে থাকল কী যেন। সেই ধারায় ঝলমল করছে কোটি কোটি গ্যালাক্সির প্রতিবিম্ব। বিশাল বিশাল গ্যালাক্সির ধূলিকণার মতন প্রতিবিম্ব।
এই তবে সেই সেতু! এতদিন শুধুই যাকে তারা জেনেছিল গাণিতিক সমাধানের মধ্য দিয়ে, বাস্তবে তবে এতটাই মিল? আহ্, একটা চমৎকার শান্তি ভরিয়ে দিচ্ছিল এণাক্ষীর ভেতরটা। স্তব্ধ হয়ে থাকা অন্তর্লীনাকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে এণাক্ষী এগিয়ে চলল।
শেষ মুহূর্তে অন্তর্লীনাও নড়ে উঠল। হাত বাড়িয়ে বলল, “আমিও যাব।”
সেও এণাক্ষীকে অনুসরণ করল।
শত শত আলোর ফুল ফুটে উঠছিল তাদের চারপাশে। আশ্চর্য সেতুর মুখে গিয়ে তারা দুজনেই মিলিয়ে গেল। পরক্ষণেই সেতুও মিলিয়ে গেল।
অবর্ণনীয় অনন্তের ভিতর দিয়ে ভেসে যেতে যেতে তাদের কি মনে পড়ছিল মায়াভরা এই পৃথিবীর কথা?
অলঙ্করণ- অংশুমান দাশ