গল্প-কোলা ব্যাঙের বাড়ি নেমন্তন্ন-অনুরাধা গুপ্ত

 

galpokolabyang (Medium)রবিবার বাচ্চু বাবার সাইকেলের সামনের রডে বসে পিসিমণির বাড়ি এল। গোলগাল, ফর্সা মিষ্টি মুখটা জেগে থাকলে এক মিনিটের জন্যেও বন্ধ হয় না। সারাক্ষণ ঝাঁকড়া-ঝাঁকড়া মাথা ভর্তি চুল নাড়িয়ে বক্‌বক্‌ করেই চলে। দুটো বাড়ি কাছাকাছি, তাই প্রতিদিনই সে এখানে আসে কারো না কারো সঙ্গে। পিসিমণিও বেশিক্ষণ বাচ্চুকে না দেখে থাকতে পারেন না, ওঁর খালি মনে হয়, এইটুকু মেয়ে মাকে ছেড়ে আছে! অবশ্য সবার ধারণা, বাচ্চু তো বাবা-দাদু-ঠাম্মার আদরে মজাতেই আছে! আসল কষ্ট বাবার, একা-একা থাকা।

পিসিমণির প্রশ্নে বাচ্চু জানাল আজ ও কিছুই খাবে না। কারণ জানতে চাওয়ায় বলল, “পিসিমণি, আজতো আমাল কোলাবেঙের বালি নেমন্ত।”

সবাই হেসে ওঠায় জানাল, “আজ ছকালেই তো বাগানে ওল ছঙ্গে দেখা। বেঙ আমায় বলল, বাচ্চু, আজ কিন্তু তোমাল আমাল বালি নেমন্ত, এছো কিন্তু।”

বাবা তখন জানালেন, “দিদি, আসলে ঠিক আসার আগে মা ওকে জলখাবার খাইয়েছেন, তাই পেটে জায়গা নেই। সারা সকাল বাগানে খেলছিল। দাও, যা আছে, আমায় দাও।”

শুনে গম্ভীর মুখে বাচ্চু বলে, “খেলছিলাম কে বলল? কত কাজ আমাল, বাগানের গাছগুলোর ছব খবলা-খবল নিচ্ছিলাম।” একটু পরেই আবার মত পাল্টে বলে, “দাও-দাও, যা দেবাল দাও, নাতো আবাল পিছিমণিল দুঃখু হবে, কত্ত হবে। ভাববেন আজ আমাল বাচ্চুছোনা কিছুটিতি বলতে কিছুটি খেলনা। কত্ত কলে একতু খেয়েই নি।”

পরের দিন আবার যখন বাচ্চু এবাড়ি এল, ওকে গতকালের নেমন্তন্নর কথা জানতে চাওয়ায়, দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বড়োদের মতো বলল, “নাগো পিছিমণি, নেমন্ত খাওয়া আর হল কই, কাল যে কোলাবেঙেল মাল খুব অছুখ হল, তাই ওল মাকে মামাবালি চলে যেতে হল। আমাল বন্ধুবেঙেল মনে খুব কত্ত।”

যাঁরা-যাঁরা মজা করে বাচ্চুর গল্প শুনছিলেন, তাঁদের সবার মুখ শুকিয়ে গেল ওর মনের দুঃখে। আসলে বাচ্চুর মা অসুখের জন্য মামাবাড়ি গেছেন বিশ্রাম নিতে। মামিমার ছোটো মেয়ে আছে, তাই মামির কষ্ট হবে ভেবে বাচ্চুকে ওখানে পাঠানো হয়নি। ও হেসে-খেলে থাকলেও, ওই ছোট্ট মনের কষ্টটা ব্যাঙের নামে হয়তো জানাল। পরিস্থিতি ঠিক করে বাচ্চুই বলে, “আমি বেঙবন্ধুকে বোঝালাম, দুল বোকা, মন খালাপ কত্তে নেই। মা ভালো হলেই চলে আছবেন, তাই না পিছিমণি?”

পিসিমণি বাচ্চুকে বুকে জড়িয়ে বলেন, “একদম ঠিক বলেছে আমার বাচ্চুসোনা।”

ছবিঃ সঙ্ঘমিত্রা