বইপড়া-একেই কি বলে মৃত্যু?-ধীরেন্দ্র সিংহ জাফা- রিভিউ করলেন মৌসুমী রায় -শরৎ২০২২

প্রকাশক: মঞ্জুল পাবলিশিং হাউস, ভোপাল
http://www.manjulindia.com/
অনুবাদক:রণিতা গুপ্ত
আলোচক-মৌসুমী রায় 
দাম: ২৯৫ টাকা

20220906_205553

১৯৭১ সাল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেঁধেছে। এর আগেও ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। আসলে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সঙ্গে বিশাল ভারতবর্ষকে দুই টুকরো করে দিয়ে গেছিল ঔপনিবেশিক শক্তি। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ। তাই তার বেদনা আর রক্ত গড়িয়ে চলেছে অনেকদিন ধরে। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের যুদ্ধ বাধলে যা হয় ! ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পিছনে জুড়েছিল নতুন জাতীয়তাবাদের আবেগ। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন। তাই এই যুদ্ধ বাংলাদেশ যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত।

এই যুদ্ধে ভারত দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পাশে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে আর তাদের দ্বারা প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীর গেরিলাযুদ্ধে একসময়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা তছনছ হয়ে গেছিল। এমনই এক সময়ে ভারতের পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানের মধ্যে ভেঙে পড়ে কয়েকটি যুদ্ধ বিমান। ফাইটার পাইলটেরা বেঁচে যান, কিন্তু বন্দী হয়ে ঢোকেন পাকিস্তানের জেলে। শ্রী ধীরেন্দ্র সিং জাফা ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন।

শ্রী জাফা তাঁর “Death wasn’t painful“ বইটিতে সেই ভয় ও আশঙ্কাময় যুদ্ধবন্দীজীবন, জেল পালানোর ছোট্ট অভিযান আর অবশেষে মুক্তির গল্প শুনিয়েছেন। মূল ইংরিজি বইটির  প্রকাশক Sage Publication। প্রথম প্রকাশ ২০১৪ সাল। বইটি এর মধ্যে কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায় করা অনুবাদটি প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। অনুবাদ করেছেন শ্রীমতী রণিতা গুপ্ত।

শ্রী জাফার আত্মকাহিনীটি শুধু যুদ্ধ আর বন্দীজীবনের প্রাত্যহিকী নয়। তার সঙ্গে রয়েছে লেখকের অনেক মরমী অভিজ্ঞতার বিবরণ, দেশভাগ ও ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত, সৈনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য আনন্দবেদনার  ঘটনাবলী আর সুরসিক লেখকের গভীর জীবনবোধ নিয়ে এক সুলিখিত আত্মকাহিনী।

মূল ইংরিজি বইটি খুব ঝরঝরে ভাষায় লেখা। বাংলা অনুবাদটিও অত্যন্ত সাবলীল। সঙ্গে তার একটা পাতা দেয়া গেল।

20220906_222230

লেখক কয়েক বছর আগেই যুদ্ধ ও রক্তপাতের লোক ছেড়ে শান্তির অনন্তলোকে যাত্রা করেছেন। বইটি পড়ুন। লেখক তাঁর পাঠকের মধ্যেই বেঁচে থাকেন।

 বই পড়া সম্পূর্ণ লাইব্রেরি