আগের সংখ্যার অণুগল্পগুলো
দুই পুরুষ
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
থেমস নদীর ধারে সেদিন সন্ধে নেমে আসছিল। নভেম্বরের ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। পার্কের বেঞ্চিতে লম্বা ওভারকোট পড়ে বসে থাকা গম্ভীর লোকটার মুখ হটাত হাসিতে ঝলসে উঠল। সামনে সপ্রতিভ দৃঢ় পদক্ষেপে যিনি হেঁটে আসছেন তাঁকে দেখে ভদ্রলোক বেঞ্চ ছেড়ে সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন – আসুন, আসুন, আপনিও আজ সন্ধ্যেয় হাঁটতে বেরিয়েছেন দেখছি।
পকেট থেকে রুমাল বার করে তিনি বেঞ্চে জমে ওঠা হিম মুছে দিতেই, ইয়াঙ্কি জ্যাকেট পরা ক্ষীণকায় সপ্রতিভ পুরুষটি থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে কী একটা ভাবলেন। তারপর বেঞ্চে বসতে বসতে বললেন
– এই সময়ে ঘরে ফিরে যাওয়া পাখির দল দেখতে কী ভাল লাগে, না?
– সে কী? আপনি সূর্য, তারা, গ্রহ, ধূমকেতু এইসব ছেড়ে আবার কবে থেকে পাখপাখালি…
– আরে ধুর ধুর, অনেক হয়েছে সে-সব! কখনো নিশ্চয়ই জীবনের স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিতে হয়, নাকি?
– আপনার সঙ্গে সামনা সামনি একবারই দেখা হয়েছিল, ভারতে…
– মুম্বাই মুম্বাই, বেশ মনে আছে, কিচ্ছু ভুলিনি।
– আর আপনার সেক্রেটারি সেদিন বলেছিল আপনি সাক্ষাতকারে বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবেন না।
– এখন নিন সাক্ষাতকার। সময় এখন অফুরান। তবে যেদিন সে ফুরাবে, আমরাও…ফুরুত, তাই না? হেঃ হেঃ হেঃ।
– আপনি এত সুন্দর কথা বলেন..
– আগেও বলতাম, নিঃশব্দে। আপনার কথা বলুন, আজকাল কী লিখছেন?
– ধুর ধুর, আমিও ওই স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে… এখন শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে অপরূপ সৌন্দর্য দেখি, এই ব্রহ্মাণ্ড..
– যেন এক গ্র্যান্ড ডিসাইন তাই তো?
– ঠিক বলেছেন! ভেবেছিলাম আপনি আর আমি দুজনে মিলে একটা বই লিখব, আপনাকে বলেওছিলাম…আপনি এত ব্যস্ত ছিলেন…। লেখার হাত আপনারও বেজায় ভালো ছিল কিন্তু!
– হ্যাঃ, আপনি কলমে লিখতেন, আর আমি চোখ দিয়ে। আপনি নোবেল পেলেন, আমার নাম শুধু নোবেলের খেরো খাতায় নমিনেট হল, হেঃ হেঃ হেঃ।
– ছাড়ুন ওসব কথা। কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না, এখনো কিন্তু আপনার লেখার চোখ কৌতুকে ঝলসায়,যেমন সুপারনোভায় …
– নাই বা তুললেন বিস্ফোরণের কথা। চলুন বরং ওই পাহাড়ের চুড়োয় গিয়ে বসি গে। আপনি মহাকাশ দেখুন আর আমি পাখিদের।
হাত ধরাধরি করে উড়ে গেলেন স্যার ভিদিয়া নাইপাল আর প্রফেসর স্টিফেন হকিং হোয়াইট চ্যাপেলের চুড়ায়। থেমস নদী থেকে ভেসে আসা জোরালো বাতাস তাদের সঙ্গী হল। সারাজীবন মানুষের ভিড় যাদের বিপর্যস্ত করেছে, তারা আজ চলেছেন একান্তের খোঁজে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ
ভালো লাগলো একান্তের খোঁজ ।
LikeLike
একেবারে আলাদা
LikeLike
খুব ভালো লাগল । নতুন ধারার টান পেলাম ।।
LikeLike
বাঃ বেশ অন্যরকম – সুন্দর।
LikeLike
খুব সুন্দর
LikeLike
বড্ড সুন্দর
LikeLike
অন্যরকম সুন্দর 😊
LikeLike