আগের সংখ্যার অণুগল্পগুলো
দেওয়ালের গায়ে
প্রতিম দাস
বদলির চাকরি। আধা শহরটায় আসার পর দিন পনেরো একটা সস্তার হোটেলে থাকার পর অফিস কলিগদের সুত্রে খোঁজ পেলাম একটা বাড়ির। অফিস থেকে বেশ খানিকটা দূরে। দেখতে গিয়েছিলাম। চারদিকে অনেক গাছগাছালি। বাইরে থেকে দেখে ভালোই লেগেছিল। একা মানুষের পক্ষে যথেষ্ট। মালিক এখানে থাকেন না। ফ্ল্যাট কিনে কলকাতা চলে গেছেন। যিনি বাড়িটা দেখাতে এসেছিলেন তিনি সম্পর্কে মালিকের ভাইপো।
আগের ভাড়াটে বছর দুয়েক এখানে থাকার পর চলে মাস তিনেক আগে চলে গেছেন। এরপর আর কেউ আসেনি এ বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য।
তালা খুলে ঘরটায় ঢোকার সময়েই একটা কেমন চিমসানো গন্ধ এসে লেগেছিল নাকে। সম্ভবত অনেক দিন বন্ধ আছে বলে। একতলা বাড়ি। দুটো বড় ঘর। সঙ্গে ছোটো দুটো ঘর, রান্নাঘর আর বাথরুম। রান্নাঘরের দরজাটা খুলতেই গন্ধটা আরো জোরালোভাবে নাকে এসে লাগল।
ভাইপো ভদ্রলোক রুমাল বার করে নাকে চেপে ধরে ঘরে ঢুকে জানলা খুলতে খুলতে বললেন, ইঁদুর টিদুর কিছু মরেছে মনে হচ্ছে। আপনি তো কালকে আসবেন। আমি তার আগেই সব পরিষ্কার করিয়ে দে… আরে এগুলো আবার কী!”
ভদ্রলোকের তাকানো অনুসরণ করে দেখতে পেলাম দেওয়ালের গায়ে চারকোনা করে কাটা কালছে কালছে রঙের অনেকগুলো কুঁচকানো কাগজের মতো কিছু লাগানো আছে। গন্ধর উৎস যে ওগুলোই বুঝতে অসুবিধা হল না।
আমিও রুমাল নাকে চেপে ধরে ঘরে ঢুকলাম। ইতিমধ্যে ঘরের এলইডি বাল্বটা জ্বালিয়ে দিয়েছেন সঙ্গী ভদ্রলোক। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম প্রায় এ ফোর মাপের টুকরোগুলোর ওপর ইংরেজিতে একটা করে নাম আর তারিখ মার্কার জাতীয় পেন দিয়ে লেখা। গোয়েন্দা রহস্য গল্পের পোকা আমি। কিরকম একটা সন্দেহ হল। রুমালটাকে নাকে বাঁধলাম। মোবাইলটা বার করে ছবি তুলে নিলাম এক এক করে সবকটা টুকরোর। হোয়াটস অ্যাপ করে পাঠিয়ে দিলাম সাংবাদিক বন্ধু সুজয়কে। সঙ্গে একটা ছোট্ট মেসেজ – এই নামগুলো বিষয়ে একটু খোঁজ নিয়ে জানাস।
রাতে উত্তর পেলাম, “ওই নামের সবক’টা মানুষ গত দু’বছর ধরে নিঁখোজ হয়ে গেছেন। কী ব্যপার বলত? ওই ছবিগুলো কীসের? কোথায় পেলি?”
[BatoutofHell821এর ‘This new old house’ ভাবনায়। যদিও মূল গল্প একেবারেই আলাদা। ]