আজব খাতা হুমোর ডায়েরি তপোব্রত মুখার্জি শীত ২০১৭

হুমোর ডায়েরি  এক নম্বর পাতা   দু নম্বর পাতা     তিন নম্বর পাতা          এবার পাতা নম্বর ৪->

এত যে সব্বাই আন্দোলন-টন করে, এদিকে কেউ খেয়াল করেছে কি যে কোত্থেকে এসব এল? জন্মেই তো কেউ এসব শেখেনি, তবে? আসলে মানুষ এসব জানত না। কী করে জানবে, যখন এসব শুরু হল তখন মানুষ কই? কি ঠাণ্ডা চারদিকে! আবার যেখানে যেখানে গরম সেখানে এইসান গরম যে হাওয়া দিলে তুমি এক্কেবারে বাষ্প হয়ে যাবে। পৃথিবী তো তখন আর পৃথিবী, মানে এখনকার মত ছিল না বাপু। ওসব বেশ উদ্ভট কাণ্ড হত। তুমি তো ভাবছ বসে এই চাদ্দিকে যা হচ্ছে, তার চেয়ে উদ্ঘুটে কাণ্ড নাকি আর কিছুই নেই। তবে সেইযুগে থাকলে কী বলতে শুনি?… অবশ্য বলাও যায় না, ছিলে হয়ত। আমি তো ছিলাম না, জানিও না। এই আজকাল একটু একটু যা জানছি তাই বলে টলে যাচ্ছি আর কি।

যাকগে, যা বলছিলাম শুরুতে আর কি, সেই আন্দোলন কোত্থেকে এল-টেল, এখন সে’সব শোন বসে। এর আগেই তো বেশ জানো যে হুমোরা কী করে এলো এখানে। এইবার দেখ, শুধু একা একা তো কেউ থাকতে পারে না, হুমোরও হুমি-র দরকার পড়ে। এ তো জানোই যে হুমোরা সব যারা খাঁচায় বন্দি ছিল, সেই অন্যরকম কারা-দের ফাঁকি দিয়ে-টিয়ে নেমে পড়েছিল। তো, তারপর হল কী, এদিক ওদিক ঘুরে, খাবার খুঁজে খেয়ে টেয়ে বেশ করে পরিপুষ্ট হয়ে-টয়ে তেনাদের মনে হল, নাঃ, এতো কিছু হল, তবু ঠিক কিছু হচ্ছে না।

আসলে হয়েছিল কি, ওই খাঁচা থেকে যে হুমোরা নেমেছিল তারা সব ছেলে কাচ্চা-বাচ্চা নিয়ে গেছিল একদিকে, আর যে হুমিরা নেমেছিল তারা গেছিল অন্য পানে। এইবার, বুঝতেই পারা যাচ্ছে, একদঙ্গল ছেলে-কাচ্চা বাচ্চা আর বুড়ো ধেড়ে একদিকে থাকলে ঠিক কী কী দশা হয়। ওদিকে আবার একগাদা কুচি-কাঁচি সঙ্গে গোটা খানেক বেদো বুড়ি জুটলে যে কি হয় সে তো আর বলে দিতে হবে না, আন্দাজ করাই যায়। ব্যাপার সেই রকমই দাঁড়াল। দিন আর চলেই না।

যা শুনেছি আর কি, ওদিকে তিব্বত বলতে তো সব্বাই চেনেই, সেইখানেই তখন এক হুমি গেছিল ঘুরতে না ফল খুঁজতে কীসের কাজে যেন। তখন এই শক্ত শক্ত বরফদলা, তার সাথে আরও কীসব থাকতো মিশে। সেইসবই ছিল খাবার।

এইবার হয়েছে কী, একদলা বরফ ভেবে কী একটা নরম মত তুলে হুমি বসিয়েছে কামড়। আর বরফও হাত পা ছুঁড়ে হাঁইমাই করতে শুরু করেছে। কামড় বসিয়েই হুমি বুঝেছিল যে এ বরফ সে বরফ নয়। কিন্তু সে যে হাত-পা ছুঁড়ে চ্যাঁচাবে কে জানত! হুমি বেশ অবাক।

আসল কেলো হয়েছিল এই যে ওখানে নাকি কীসব করছিল একটা বাচ্চা-মত হুমো। তখন ওই হুমো-হুমিদের গায়ে খুব জোর ছিল তো, তাই হুমি টানতেই সে এসেছে উঠে কিন্তু সে যে কে তা আর বলবার সুযোগই পায়নি। তার আগেই রামকামড়ানি!

তো, হুমোদের গলার আওয়াজ আজকালের মানুষের মত তো ছিল না, আর তখন মানুষ ছিলই বা কোথায়। সেই এক চিৎকারে কোত্থেকে আরও কত যত হুমো ছিল এলো দৌড়ে। এক মাতব্বর গোছের হুমো আগে আগে তেড়ে এলো বেশ।

কিন্তু ব্যাপার হল, তেড়ে আসাই সার। সামনে এসেই কেমন যেন ভেবলে গেল। বাচ্চা হুমোটা তো তখন হাত-পা ছুঁড়ে যত পারছে অভিযোগ জানাচ্ছে। কিন্তু সে আর কে শোনে তখন।

এইফাঁকে কিন্তু আরও অন্য হুমোরাও এসে গেছে। তারা সব ওই দল-টল বেঁধে খাবার খুঁজতেই বেরিয়েছিল হুমির মত। শুধু বেচারি হুমি-ই কত্তোদূর এসে পড়েছিল বলে যত ঝামেলা শুরু। ততক্ষণে হুমি-বেচারি বেশ ঘাবড়ে গেছে। কি যে করবে বুঝতে পারছে না। রাগবে, কাঁদবে না হাসবে- সব বেচারির গুলিয়ে যাচ্ছে।

যাক গে, কিছুক্ষণ পরে বোম্বাচাক ভেঙে হুমো বলল সে হুমি কে তাদের দিকে নিয়ে যেতে চায়। হুমির তখন খিদেতে পেটের নাড়ি জ্বলছে। তাই আদিখ্যেতা যে তার মোটেই সুবিধের লাগছিল না সে ভালো করেই দিল বুঝিয়ে। তো হুমোগুলো তাকে বুঝিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়ালো কিছু। তারপর হুমি গেল হুমোদের ঘরের দিকে।

তারপর বেশ দিনকতক গেল। (কত দিন বলা মুশকিল। আমাদের দিন আর হুমোদের দিন এক ছিল কিনা তাই বা কে জানে) তারপর একদিন দেখা গেল পালে পালে হুমো আসছে, আর ওপার থেকে হুমি। সেই যে অন্যরকম কারা-দের খাঁচা থেকে পালাবার পর এই এত্ত দিনে সব্বাই এক হল। বোধহয় হুমোদের আগের গ্রহে এমন কিছু ছিল-টিল না, এইখানে এসে, মানে পৃথিবীতে এই প্রথম এমন হল। তো, হল তো হল, খুব বুড়ি হুমি-রা এসে সব সদ্য-বুড়ো, মাঝারি বুড়ো, কচি-আধকচি সব হুমোদের খুব আদর-টাদর করল।

হুমোদের আসলে সবকিছু বড় ঘেঁটে ছিল। হুমি-বুড়ি গুলো ছিল সেই যাকে বলে সাত-বুড়ির এক বুড়ি, সব জানতো-টানতো। তাই মাতব্বর হুমোরা বলল যে এইবার থেকে হুমি বুড়িরাই হুমোগুষ্টি টানবে। সব্বাই তাদের মেনে-টেনে চলবে। সব্বাই তো বেশ খুশি টুসি হল।

তবে তারপর থেকে কিছু খারাপ অবস্থা হল বটে হুমোদের। বেচারাদের সারাদিন ঘুরে ঘুরে বরফ খুঁজে বেড়াতে হত। কাজে ফাঁকি দিলে প্রথমে কিছু ডাণ্ডা-বাড়ি, আর তারপর বুড়ির সারাদিনের বকবক চলত। বেশ কিছু আধবুড়ো হুমো বেশ চেঁচিয়ে-মেচিয়ে এককাট্টা হতে গেছিল বটে (মানে, ওই বলতে পারো আন্দোলন-টনের শুরু), কিন্তু ডাণ্ডা-বাড়ির চোটে সেসব আর বেশি কিছু পারেনি। কিছু কচি হুমো তাই পালিয়ে টালিয়ে গিয়ে একটু গরম-সরম জায়গায় এসে আস্তে আস্তে ইয়েতি হয়ে পড়েছিল।

যদিও তাতে মুক্তি-টুক্তি নেই। কোন পাহারাদার হুমো খুঁজে পেলে ঠিক খবর দিত বুড়িদের। ধরে আনলে সারাদিন কানের কাছে চোদ্দবুড়ি বসে বকে বকে মাথার লোম খসিয়ে দিত হুমোদের।

জানি, এইবার ভাবছ তো, যে ছিল হুমোরা ভালো, মাঝের থেকে এইসব হুমি-টুমি টেনে এনে বিপদ বাড়াল! আচ্ছা ভাব তো, আজ হুমিরা না থাকলে কিন্তু এই আরশোলা, ডাইনোসর, টিকটিকি, ইয়েতি, মানুষ- কেউ থাকত না। কেন? বিজ্ঞান পড়েছ? পড়োনি? তবে বাদ দাও।

আর আমি এসব জানলাম কোত্থেকে? ঠিক, এতো কথা কাগজে বেরোয়নি বটে। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক জায়গায় এখন গুহার ছবি পাওয়াটাওয়া গেছে। এই ধরো স্পেন, মেক্সিকো মায় আমাদের ছত্তিশগড়ে। শুধু সিকিম নাকি, সেসব জায়গায়ও গেছি। তুমি কি শুধু ভাবো তোমার ঠাকুমা-দিদাই গল্প বলে গেছে, আর কেউ কিছু বলেনি? খুঁজে পেলে ইয়েতিদের জিজ্ঞেস করো। না পেলে ঘুরে দেখ। অনেক জনে অনেক কিছু বলে বটে, কিন্তু আসল কথাখানা এইখানে বলে দিলাম। ইচ্ছে হলে বিশ্বাস কর, না হলে সব ঘুরেঘারে তারপর এমন করে একটা রচনা লিখতে বসো তো দেখি।

গ্রাফিক্‌স্‌ ইন্দ্রশেখর

     ক্রমশ

জয়ঢাকের গল্পঘরে সমস্ত গল্প একসঙ্গে পড়ো

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s