গল্প রামনগরের খুনে পার্থ মন্ডল বর্ষা ২০১৭

“সন্তুদা, বেশি পাকামো করে রিভার্স স্ট্রাইক করতে যাস না আগেরবারের মতো। সোজাসুজি স্ট্রাইক কর, এই বোর্ডেই গেম জিততে হবে। সন্ধে হয়ে আসছে।” আমাদের টু-মেম্বার ক্যারম টিমের স্বঘোষিত লিডার মিমি ইন্সট্রাকশন দিল আমাকে।

একদিকে আমি আর মিমি। আর অন্যদিকে বিল্টু আর বান্টি। খেলা জমে উঠেছে। আমাদের ২২-১৭ লিড। রেড পকেটস্থ করতে পারলে আর মাত্র দুটো কালো গুটি আটকে দিলে এই বোর্ডেই জিতে যাব আমরা।

ঘড়িতে চারটে পঁয়তাল্লিশ। শেষ ডিসেম্বরে দিনের শেষ সূর্যরশ্মি মিমির ঘরের পশ্চিমমুখো জানালা দিয়ে তেরছাভাবে পড়ছে বোর্ডের ওপরে। পড়ন্ত বিকেলে বিষ্ণুপুরে এই সময় ভালোই ঠান্ডা লাগে। টোটনদের ভিডিও হলে কাল দুপুরে মিঠুন-ধর্মেন্দ্রর ত্রিনেত্র দেখাবে। মাইকে তারস্বরে তারই প্রচার চলছে। মিমি আমার ছোটোমামার মেয়ে। আমার থেকে দু’বছরের ছোটো হলেও আমার ওপর তার যত খবরদারি। আমার ছোটোমামা বিষ্ণুপুর হাই স্কুলের হেডমাস্টার।

বিল্টু মিমির সাথে এক ক্লাসেই পড়ে। পাশেই নেতাজি নগরে থাকে। গোপালগঞ্জের স্টেট ব্যাঙ্ক মোড়ে শান্তি মেডিক্যালের মালিক হলেন ওর বাবা, ছোটোমামার বাল্যবন্ধু। বান্টির বয়স আমার মতো, আমার মতোই ক্লাস নাইনে পড়ে। ওর জন্ম, ছোটোবেলা সব কুয়েতে। তবে শীতকালে ওর বিষ্ণুপুরে আসাটা বাঁধা। ওর বাবা ওখানে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করতেন। গেল বার সাদ্দাম যখন কুয়েত আক্রমণ করে, তখন ওর বাবা ফ্যামিলি নিয়ে কোনওমতে প্রাণ হাতে করে দেশে ফেরেন।

আমার মতো বান্টিরও বিষ্ণুপুরে মামারবাড়ি। আপাতত ও মায়ের সাথে মামার বাড়িতে আছে। মাস তিনেক হল ওর বাবা গুজরাটের হাজিরাতে চাকরি পেয়েছেন। এপ্রিলে নতুন সেশন আরম্ভ হলেই ওর বাবা ওদের নিয়ে যাবেন হাজিরাতে।

স্ট্রাইকটা মোটামুটি উতরালো। একটা গুটি ফেলতে পেরেছি। কিন্তু এদিকে বিল্টু পরপর চারটে কালো ফেলে দিয়েছে। মিমি রেড নিলেও কভার করতে পারেনি। বান্টির মতো আমারও প্রত্যেকবার শীতে বিষ্ণুপুরে আসাটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। বাবা খড়্গপুরের রেলের চাকরির সুবাদে পাস পান। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা কোথাও না কোথাও বেড়াতে গেলেও শীতের ছুটিতে আমাকে কেউ অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে না। লালবাঁধ, কালাচাঁদ মন্দির, যমুনা বাঁধ, দলমাদল, এ তো ছোটো থেকেই দেখে আসছি। নতুনত্ব কিছু নেই। আসলে এই সময় শীতে কয়েকটা দিন এই বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা মূল আকর্ষণ। ক্যারম খেলা, আশেপাশে সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে যাওয়া, বাস-স্ট্যান্ড মোড়ে মোনালিসা কেবিনের মোগলাই খাওয়া আর বিষ্ণুপুর মেলা দেখা। আর নীলাদ্রিকাকার বাড়িতে নিউ ইয়ার্স ইভে পিকনিক।

এই বোর্ডটা মনে হচ্ছে বিল্টুরাই পাবে। রেড ওদের জিম্মায়। আর মাত্র তিনটে গুটি। আমাদের সাদা এখনও ছ’টা বাকি। মিমি সুযোগ খুঁজছে কীভাবে খেলাটাকে ভন্ডুল করা যায়। ঘড়িতে পাঁচটা বেজে গেছে। বাইরে প্রায় অন্ধকার। এই সময়ে নিচ থেকে ছোটোমামার গলার আওয়াজ এল, “মিমি, নীলাদ্রিকাকা এসেছে।”

এই সুযোগ। “যা-আ-আ-ই,” বলে মিমি উঠে পড়ল।

“কাল আবার হবে দুপুরে। আজ আর খেলব না।” মিমি দাঁড়িয়ে বলল।

“এই তোর দোষ মিমি। যেই দেখলি হারবি, অমনি পালিয়ে যাবার ফিকির খুঁজছিস।” বিল্টু স্বভাবতই রেগে গেল। আর তাছাড়া মিঠুনভক্ত বিল্টুকে কাল দুপুরে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

“বললাম তো, আজ আর খেলব না।” মিমির ওসব আর শোনার সময় নেই। “এখন চল নিচে, নীলাদ্রিকাকা যখন এসেছে তখন একটা ভালো গল্প শুনতে হবে।”

বিল্টুর মুখ দেখে মনে হল প্রস্তাবটা ওর খুব একটা অপছন্দ হয়নি।

নিচে ড্রয়িং-রুমে সিঙ্গল সোফাতে নীলাদ্রিকাকা বসেছেন। মা, ছোটোমামা ওনাকে কাকা বলে ডাকেন। ছোটো থেকে তা শুনে আমরাও কাকা বলে ডাকি। সাড়ে ছ’ফুট লম্বা। এই ষাটেও চেহারাটা এখনও ছিপছিপে রেখেছেন। বনবিভাগে চাকরির দৌলতে ভারতবর্ষের প্রায় সব জঙ্গলে থাকার অভিজ্ঞতা ওনার। পুরো নাম নীলাদ্রিশেখর বসু। রাধামাধবপুরে সাড়ে তিন বিঘে জমির ওপর পেল্লায় একখানা বাগান আর একটা পুকুর নিয়ে তাঁর বাড়ি। ওনার দাদুর আমলে তৈরি। ওনার দাদু শশাঙ্কশেখর ছিলেন ইংরেজ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট। আর ছিলেন সৌখিন শিকারি। নীলাদ্রিকাকার বাড়িতে একটা আস্ত বাস্কেটবল কোর্টের সাইজের হলঘর আছে শিকারের বিভিন্ন ট্রফিতে ঠাসা। রয়েল বেঙ্গলের মাথা, আস্ত স্টাফড চিতল, হাতির বড়ো দাঁত, চিতাবাঘের ছাল, কী নেই সেখানে। আর সব পুরনো আমলের বন্দুক। রাত্তিরে ওই ঘরে একা ঢুকতে ভয় লাগে আমার।

“কী, সন্তুবাবু? মনে আছে তো? সামনের মঙ্গলবার? তোরা সব সময়মতো চলে আসবি। এবারে কিন্তু স্পেশাল পিকনিক।”

“স্পেশাল কী জন্যে?” বিল্টু জিজ্ঞেস করল।

“স্পেশাল কেন নয় বিল্টুবাবু? এবারে তো আমাদের পিকনিক দশে পা দিল!”

পঞ্চাশে ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে বিষ্ণুপুরে পাকাপাকি ফিরে আসবার পর প্রতিবার এই পিকনিক করেন নীলাদ্রিকাকা। ওনার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকটা ফ্যামিলি নিমন্ত্রিত থাকে। বাগান এই সময় ফুল আর শীতের সবজিতে ভরে থাকে। শান বাঁধানো পুকুরে ঝকঝকে জল। ব্যাডমিন্টন খেলা। বড়োদের গল্প কান পেতে শোনা। আর সর্বোপরি নীলাদ্রিকাকার খাস কাজের লোক কচিদার হাতের রান্না।

“তাহলে স্পেশাল মেনু কী?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“ওটা সারপ্রাইজ থাক। তবে ঐদিন আমার একজন স্পেশাল গেস্ট থাকবে।”

“কে? লাবণ্যপিসিরা?” মিমি জিজ্ঞেস করল।

“ওরা তো প্রতিবার থাকে। স্পেশালের কী হল?” বান্টি বলে উঠল।

ঠিক বলেছে ও। নীলাদ্রিকাকার বোন লাবণ্যপ্রভা বাঁকুড়াতে ডাক্তার। ওনার স্বামীও ডাক্তার। ওঁদের একমাত্র মেয়ে সুদেষ্ণাদি কলকাতা থেকে এবারে ডাক্তারি পাস করে চন্ডিগড়ে এম.ডি. করতে গেছে। ওরা তো প্রতিবার আসে।

“ঠিক বলেছিস।” নীলাদ্রিকাকা বললেন।

“তবে কি মলয়কাকা?” মিমি ঘাড় ঘুরিয়ে নীলাদ্রিকাকাকে বলল।

মলয়াদ্রিশেখর হলেন নীলাদ্রিকাকার দাদা। বয়েসে বেশ খানিকটা বড়ো ওনার থেকে। ‘হলেন’ না বলে ‘ছিলেন’ বলা যায় হয়তো এত দিনে। আমরা কেন, আমার ছোটোমামাও কোনওদিন দেখেননি ওনাকে। খুব ছোটোবেলাতে আমার বড়োমামা আর মা ওনাকে দেখেছেন। মা’র কাছে গল্প শুনেছি যে উনি ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষার পর হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে যান। কেউ বলে সন্ন্যাসী হয়ে গেছেন, কেউ বলে জাহাজের কুলি হয়ে বিলেতে চলে গেছেন।

নীলাদ্রিকাকার বাবা সৌম্যশেখর ছিলেন এখানকার রামানন্দ কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক। উনি শান্তশিষ্ট মানুষ হলেও তাঁর দুই ছেলে ঠাকুরদার গুণ পেয়েছিলেন। দু’জনেই নাকি ছোটো থেকে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ছিলেন। সেই মলয়কাকাকে আর কেউ কোনওদিন দেখেনি। একটা মজার ব্যপার ছিল। নীলাদ্রিকাকা আর মলয়কাকা, দু’জনের গালেই লাল জরুল আছে। একজনের কানের কাছে, আরেকজনের থুতনির পাশে। ওনাদের বাবা মজা করে বলতেন যে, একজন হারিয়ে গেলে আরেকজন ঠিক খুঁজে বের করে নেবে।

“দাদাকে কি আর দেখব এই জীবনে?” শুকনো হাসি দিয়ে বললেন নীলাদ্রিকাকা। “আমার চাকরি জীবনের শুরুর দিকে যখন রামনগরে ছিলাম, তখন আমার বস ছিলেন মিঃ ভার্মা। উনি এখন জবলপুরে থাকেন। উনি আর মিসেস ভার্মা আসছেন। ভার্মা-সায়েব কিন্তু আফ্রিকার জঙ্গলে দীর্ঘদিন ছিলেন। তাই এবারে পিকনিকে জমিয়ে আফ্রিকার সিংহের গল্প শোনা যাবে।” চশমাটা খুলে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছতে মুছতে বললেন নীলাদ্রিকাকা।

এরই মধ্যে মা গরম শিঙাড়া আর খাস্তা কচুরি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। পেছন পেছন মামিমা। হাতে কেরোসিনের ল্যাম্প, তবে শিখাটা কমানো।

“নীলাদ্রিকাকা, ছোটন আজ চিকেন ডাকবাংলা রাঁধছে। রাত্রে খেয়ে যাবে কিন্তু। এই, তোরাও খেয়ে যাবি। আর ঘন্টাদুইয়ের মধ্যে সব রেডি হয়ে যাবে।” মায়ের কথায় বিল্টু-বান্টি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল।

“ছোটন রাঁধছে? তাহলে তো সন্ধেটা এখানেই কাটাতে হয়।” বলে উঠলেন নীলাদ্রিকাকা।

ছোটোমামা চিকেনটা ভালোই রাঁধেন। মামিমাও ভালো রান্না করেন। তবে বাড়িতে চিকেন এলেই ছোটোমামার ডাক পড়ে।

“ল্যাম্পটা রইল এখানে। কারেন্ট গেলে বাড়িয়ে নিবি।” মামিমা বললেন।

এই এক হয়েছে এখানে। সন্ধ্যে ছ’টায় যদি একবার কারেন্ট যায় তবে কম করে একটি ঘণ্টার ধাক্কা।

“ডিনারের এখনও দু’ঘন্টা বাকি। নীলাদ্রিকাকা, একটা গল্প বল।” আমি বললাম।

সঙ্গে সঙ্গে মিমিও, “হ্যাঁ হ্যাঁ, গল্প,” বলে ধুয়ো তুলল।

“যীশুর জন্মদিনে তো পড়াশোনা লাটে উঠেছে মনে হচ্ছে। তা কীসের ফরমায়েশ আজ?”

জঙ্গলে কাজ করবার সুবাদে নীলাদ্রিকাকার গল্পের স্টক অগাধ। ওনার গল্প শুনেই আমাদের ভারতবর্ষের সব জঙ্গল ঘোরা হয়ে গেছে।

“আজ কিন্তু ভূতের গল্প শুনব। জংলি ভূতের গল্প। এই মিমি, তোর ভয় লাগবে না তো?” বিল্টু ফুট কাটল।

“উহ্‌, কী আমার সাহসী ছেলে রে! স্কুলের ছাদে বল উঠে গেলে আর কোনওদিন বলিস না, এই মিমি, ছাদের দরজার কাছে একটু দাঁড়াবি, আমি বলটা নিয়ে আসব?” ভেংচি কাটল মিমি।

“আচ্ছা আচ্ছা, নো ঝগড়া। কিন্তু বিল্টুবাবু, জঙ্গলে কি ভূত থাকে? স্বয়ং করবেট সায়েব তাঁর বইতে চুড়াইল, মানে পেত্নীর সঙ্গে তাঁর টক্করের কথা বলেছেন। তিনি তিনবার জঙ্গলে পেত্নীর হাড় হিম করা চিৎকার শুনেছেন। তৃতীয়বার তিনি সত্যিটা আবিষ্কার করলেন। দেখলেন, আওয়াজ আসছে গোল্ডেন ঈগল জাতীয় একটি পাখি থেকে। তখন ওনার ভুল ভাঙল। ঠিক আছে, ভূত না হলেও তোদের আমি বেশ একটা রোমাঞ্চকর জঙ্গলের গল্প শোনাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রাণটা যে চা-চা করছে মিমিসোনা? তা তোর এই চাচার প্রাণ বাঁচাতে একটু চায়ের অর্ডার দিয়ে আয় তো চট করে।” এই বলে নীলাদ্রিকাকা তাকালেন মিমির দিকে।

মিমি তিরিশ সেকেন্ডের মধ্যে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে একছুটে ফিরে এসে সোফায় আমার গা ঘেঁষে পা গুটিয়ে বসে পড়ল। আমেরিকা থেকে বড়োমামার পাঠানো ইলেকট্রিক কেটেলে চা বানাতে ঠিক দু’মিনিট লাগবে আর সেই দু’মিনিট নীলাদ্রিকাকা চুপচাপ বসে থাকবেন। যথাসময়ে চা এল, সঙ্গে একটু ডালমুট। নীলাদ্রিকাকা আরাম করে একটা টানা চুমুক দিলেন কাপে। আর কোটের বাটনটা খুলে দিলেন।

“শীতে দার্জিলিং চায়ের জুড়ি মেলা ভার, বুঝলি? তাহলে এবারে শুরু করি।” এই বলে নীলাদ্রিকাকা শুরু করলেন।

আমরাও একটু নড়েচড়ে বসলাম।

তখন সময়টা ষাটের দশকের শুরুর দিক। দেরাদুনে ট্রেনিং শেষে আমার বনবিভাগের চাকরির সাত-আট বছর কেটে গেছে। আমি তখন রামনগরে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার। মানে তোরা যেটা করবেট ন্যাশনাল পার্ক বলে চিনিস, সেখানে। অশত্থ, শাল, আম এইসব গাছের ঘন জঙ্গল। সারাবছর সবুজ থাকে। আর প্রচুর পাখি। আমিও তখন সব পাখি চিনে উঠতে পারিনি।

রামনগরে তখন রামগঙ্গা নদীর ওপর ড্যাম তৈরি হচ্ছে। শান্ত জঙ্গলটা একটু ব্যস্ত। পশুপাখিরা একটু বিরক্ত। সরকারের অবিশ্যি বক্তব্য, এই ড্যাম হলে ফি-বছর বন্যা থেকে মুক্তি পাবে এই অঞ্চল। পশুপাখিদের পক্ষে সেটা মঙ্গলের। ড্যাম তৈরি হচ্ছে কালাগড়ে, সোনানদী যেখানে রামগঙ্গাতে মিশেছে, তার ঠিক উল্টোদিকে। ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজার, সাধারণ শ্রমিক নিয়ে কালাগড় তখন সরগরম। আমারও থাকার জায়গা ছিল কালাগড়েই। তরাই এলাকা, শিবালিক হিমালয় স্পষ্ট দেখা যায়। শীতকালে সেখানে উত্তর থেকে আসা পাখিতে ভরে যায়। ভারি সুন্দর জায়গা। সেখানে সরল সাদাসিধে পাহাড়ি মানুষের বাস। বেশিরভাগ হল বকসাস প্রজাতির আদিবাসী। কিছু গুর্খাও আছে। অল্পস্বল্প চাষবাস, কাঠ কুড়িয়েই তাদের জীবন কাটে। কেউ কেউ আবার টুরিস্টদের সাহায্য করে কিছু রোজগার করে। ড্যামের সৌজন্যে এদের জীবিকার নতুন দিক খুলে গেছে। মহিলারা তখন ইঞ্জিনিয়ার, সুপারভাইজারদের জন্যে রান্না, বাসনমাজা এইসব কাজ নিতে আরম্ভ করে। কালাগড়, পাতেরপানি, ঢিকালা, জামুনগর, দোমুন্ডা এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন আমার দায়িত্বে।

সবে বর্ষা গেছে। অক্টোবরের শেষ। আস্তে আস্তে ঠান্ডা পড়ছে। মিঃ ভার্মা তখন একমাসের ছুটিতে। আমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। তার ওপর আমার আন্ডারে জোস জিজু বলে যে প্রবেশনারি অফিসার ছিল, তাকে মায়ের মৃত্যুসংবাদে সুদূর কেরালা যেতে হয়েছে হঠাৎ। গোদের ওপর বিষফোঁড়া, চোরাশিকারিদের উৎপাতও বেড়েছে। হরিণ, বাঘ তো বটেই, এমনকি বাইসন, বুনোমোষও লোপাট হতে থাকল। একার দায়িত্বে এই বিশাল অঞ্চলটা টহল দেওয়া দুষ্কর হতে থাকল দিন কে দিন। তার ওপর এত বাইরের মানুষ এখন এই অঞ্চলে, কে ড্যামের শ্রমিক আর কে চোরাশিকারি, সেটা চিহ্নিত করাটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় একটা কৌশলের অবলম্বন নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়ছিল।

ভেবে দেখলাম, আমাকে ড্যামের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে দেখা করে যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে কৌশল ঠিক করতে হবে। একদিন সাইটে গিয়ে দেখা করলাম। মার্ক হল নামের এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক। বোম্বের বান্দ্রাতে বাড়ি। খুব অমায়িক। আমরা প্রথমেই যেটা ঠিক করলাম সেটা হল, ওই অঞ্চলে সব বহিরাগত শ্রমিকদের একটা তালিকা বানাতে হবে। এটা খুব শক্ত কাজ নয়। কারণ, একটা প্রাথমিক তালিকা ছিলই। যেটা ছিল না সেটা হল ওই শ্রমিকদের সনাক্তকরণ তথ্য, মানে আইডেন্টিফিকেশন ডিটেল। যেহেতু তখন ওই সময়ে আর ওই অঞ্চলে ছবি তুলে রাখবার সুবিধে ছিল না, শ্রমিকদের চেহারার যথাসম্ভব লিখিত বিবরণ আর আঙুলের ছাপ রেকর্ড করবার কথা ভাবলাম আমরা। হল সায়েবকে বললাম উদ্দেশ্য যথাসম্ভব গোপন রাখতে। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন। দু’তিনদিনের মধ্যে তিনি আমাকে জানালেন যে তালিকা বানানোর কাজ শেষ। এই মুহূর্তে ওখানে আড়াইশোর মতো শ্রমিক আছে।

সাধারণত আমি সকালবেলাটা রামনগরের অফিসে পেপার-ওয়ার্ক সারবার কাজে লাগাতাম। লাঞ্চের পর জোসকে নিয়ে টহলে বেরোতাম। আমার ড্রাইভার রামশরণ ঢিকালাতে থাকত। দিনের শেষে ও আমাকে কালাগড়ে নামিয়ে দিয়ে জিপ নিয়ে ঢিকালা চলে যেত।

নভেম্বরের শুরুর দিকের ঘটনা। মিঃ ভার্মার ছুটিতে যাবার একসপ্তাহও কাটেনি। একদিন সকালে ফরেস্ট-গার্ড এসে খবর দিল, মালানির কাছে একটা খুনের ঘটনা হয়েছে। জায়গাটা যেহেতু কোর এরিয়ার মধ্যে, প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব বনবিভাগের ওপরে। প্রয়োজন পড়লে বনবিভাগ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মিঃ ভার্মার অবর্তমানে আমাকেই যেতে হবে। রামশরণকে গাড়ি বের করতে বলে আমি অফিসের বাইরে পা ফেললাম। মিনিট চল্লিশের মধ্যে পৌঁছে যাব আশা করি। রামশরণ একটু জোরেই গাড়ি চালাল। মিনিট পঁয়তিরিশের মধ্যেই খুনের জায়গায় পৌঁছে গেলাম। দুটো ফরেস্ট-গার্ড ওখানে মোতায়েন। তাদের কাছে নির্দেশ ছিল মৃতদেহে হাত না দেবার। কিছু দূরে সাধারণ মানুষের জটলা। জটলার মধ্যে নারায়ণদাসকে দেখলাম। রামশরণের কাছে শুনেছি ঢিকালা থেকে কালাগড় যাবার পথে রামগঙ্গা নদীর কাছে কোনও এক পুরনো মন্দিরের কাছে উনি থাকেন। মাথায় লম্বা চুলের চূড়া, বুক ছাপিয়ে পেটের কাছ পর্যন্ত কাঁচাপাকা লম্বা দাড়ি আর গেরুয়া বসন। সবে হয়তো চল্লিশ পেরিয়েছেন। আর পাঁচটা সন্ন্যাসীর মতোই দেখতে। একটাই চোখে পড়ার মতো ব্যাপার। উনি আমার মতোই লম্বা, আর শরীরে যোগচর্চার ছাপ আছে। প্রায় বছর পাঁচেক হল ওনাকে এখানে দেখা যায় বলে জনশ্রুতি। এলাকার মানুষের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। কেউ বলে উনি হিমালয়ে ছিলেন, কেউ বলে উনি দক্ষিণ ভারতের মানুষ। আমি বিশেষ মাথা ঘামাইনি কোনওদিন।

মৃতদেহের ওপর মনোনিবেশ করলাম। ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলাম। মধ্য তিরিশের এক যুবকের দেহ। গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা। একটু অদ্ভুতভাবে দেহটা পড়ে আছে। পা’দুটো হাঁটু থেকে মোড়ানো, অথচ ওপরের শরীরটা মাটির ওপরে শোয়ানো। মাথাটা ডানদিকে হেলানো। চোখদুটো বিস্ফারিত, মুখটা হাঁ হয়ে আছে – কোনও কিছু দেখে যেন প্রবল ভয়ের চিহ্ন। বাঁ কাঁধ আর গলা খুবলানো। প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। এই বেলাতে সেই রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। গায়ের গেঞ্জি ছিঁড়ে গেছে, বুকে থাবার আঁচড়ের দাগ। আর হাতদুটো যেন নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের ওপরে রাখা। মনে হচ্ছে যেন লোকটা মৃত্যুর আগে হাঁটু গেড়ে হত্যাকারীর কাছে প্রাণভিক্ষা করছিল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বাঘ বা লেপার্ডের আক্রমণে মৃত্যু। হয়তো বাঘটা সামনে থেকে সজোরে আক্রমণ করেছে লোকটার গলা লক্ষ্য করে।  বর্ষা শেষে এ ক’দিন বৃষ্টি হয়নি, তাই আশেপাশে বাঘের পায়ের ছাপ চোখে পড়ল না সেভাবে।

গ্রামের মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃতদেহটির সনাক্তকরণ সম্ভব হল না। বাইরের লোক হবে হয়তো। হল-সায়েবের সাথে যোগাযোগ করা হলে উনিও কোনও ক্লু দিতে পারলেন না। বোঝা গেল, এটা কোনও ড্যাম শ্রমিকের দেহ নয়। কোনও চোরাশিকারির দেহ  নয়তো? এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসার মতো কোনও প্রমাণ হাতে নেই। মৃতদেহ পুলিশের কাছে চালানের বন্দোবস্ত করতে হল। একটা রিপোর্টও লিখতে হল।

দিন দুয়েক কাটল। চোরাশিকারিদের উপদ্রব আরও বেড়েছে। সাধারণ ব্যস্ততায় এই খুনের ঘটনা ভুলেও গেলাম। তারপর আবার একদিন সকালে খবর পেলাম দোমুণ্ডার কাছে খুনের ঘটনা। খুনের প্যাটার্নটা সেই এক। পা মুড়ে পড়ে থাকা দেহ। ঘাড়ের কাছটা খুবলানো, বুকে আঁচড়। এবারে হাতটা ঊর্ধ্ববাহু হয়ে মাটির ওপরে মাথার দু’পাশে ছড়িয়ে আছে। তবে এবারে দেহটির পরনে ফরেস্ট-গার্ডের মতো খাকি পোশাক। এবারেও সনাক্তকরণের চেষ্টা বিফলে গেল। স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস ফল করে দেহটি পুলিশে চালান করা হল।

এর পরের আঠেরো-কুড়ি দিন ছিল দুর্বিষহ। আজ ঝিরনা, কাল পাতেরপানি, পরেরদিন গারিজা, একের পর এক মৃতদেহ। সেই একভাবে দেহ পড়ে থাকা, মৃত্যুর আপাত কারণও সেই এক। এইভাবে আটটা মানুষের প্রাণ গেল। ব্যাপারটা এবারে একটু সিরিয়াস দিকে টার্ন নিল। ওপরওলার নজরেও এল ঘটনাগুলো। আমাকে বলা হল পুলিশের সাথে যথাযথ সমন্বয় সাধন করতে। কারণ, সব দেহ কোর এরিয়াতে পাওয়া যায়নি। সাধারণ মানুষের মনে যথেষ্ট প্যানিক তৈরি হয়েছে।

শেষ যে ঘটনাটা ঘটল, অন্যবারের মতো সেখানেও নারায়ণদাসকে দেখলাম। নারায়ণদাস আমাকে দেখে বললেন, “বেটা, সব লোগ ডরে হুয়ে হ্যায়। ম্যায়নে সবসে বাত কি হ্যায়। মুঝে এক চিজ সাফ নজর আ রহী হ্যায়। লোগোকো ওহি বাত সমঝানে কি কোশিশ ভি কর রহা হুঁ।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেয়া?”

তো উনি বললেন, “ভলে লোগো কি মওত ইস তরহা নহি হো সকতি হ্যায়। ইন লোগোকো আপনে করমো কা ফল ভুগতনা পড় রহা হ্যায়।”

আমি বললাম, “ইয়ে আপ নিশ্চিত রূপ সে ক্যায়সে বোল সকতে হ্যায়?”

প্রত্যুত্তরে উনি বললেন, “ধীরে ধীরে আপ ভি সমঝ যাও গে। লেকিন মেরে সমঝানে পর ইহাঁ কে লোগো কি আপকে উপর বড়তে হুই দাবাও কম হো যায়েঙ্গে, অওর আপ ভি আরামসে ইয়ে ঘটনাও কি চুনৌতি দে সকো গে।”

আমি ভেবে দেখলাম, সাধুবাবা মন্দ বলেননি।

“অওর এক বাত। আপ সাচমুচ ইয়ে বাতাইয়ে, পিছলে দস-পনদরাহ দিনো সে অবৈধ শিকার কে ঘটনায়ে কম হুয়ে কি নহি?”

 সাধুবাবার সাথে চোখাচোখি হল। আমি মুখে কিছু বললাম না, কিন্তু মনে মনে সম্মত হলাম।

এরপর কয়েকটা দিন নির্বিঘ্নেই কাটল। ভার্মা সায়েব কাজে জয়েন করেছেন। খুনের ব্যপারে আমার তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। আমার কাছে সবকিছু শুনে আর ফরেস্ট-গার্ডদের সাথে কথা বলে ওনার ধারণা জন্মাল যে এই মৃত্যুগুলো সাধারণ মানুষখেকো বাঘের আক্রমণে হয়নি। প্রথম কথা, বাঘ মানুষখেকো হয় যখন তার বয়সে শক্তি কমে যায়। আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী সে ধরনের বাঘ এ জঙ্গলে এই মুহূর্তে অপ্রতুল। দ্বিতীয় কথা, বাঘ একদিনেই মানুষখেকো হয় না। প্রথমে সে আশেপাশে বসতি এলাকার গবাদিপশু ধরবার চেষ্টা করবে। আশেপাশে বসতি এলাকায় কোনও গবাদিপশু হারিয়ে যাবার ঘটনা রিপোর্ট হয়নি। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেটা হল, মানুষগুলো শুধু খুনই হয়েছে। বাঘে ওই মানুষগুলোর মাংস খেয়েছে, এটা একেবারেই মনে হয়নি। আমার লাইন অফ ইনভেস্টিগেশনে উনি একটু অসন্তুষ্ট হলেন। কিন্তু আরেকদিকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যেটা, সেটা হল কী, চোরাশিকার একেবারেই লুপ্ত হয়ে গেছে। এই একটা ব্যাপার আমাদের সকলকে স্বস্তি দিয়েছে।

নভেম্বরের প্রায় শেষদিক। ঠান্ডা সেবারে ভালোই। এক বিকেলে আমি রুটিন টহলের পর ফিরছি। খবর পাওয়া গেছে জোস আর দু’একদিনের মধ্যেই ফিরে আসবে। আমি তাই একাই আছি। সঙ্গে ড্রাইভার রামশরণ। সে জানাল যে ওর বিবির আগেররাত থেকে তেজ বুখার। ওকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আমি বললাম যে ওকে আমি ঢিকালাতে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজেই জিপ চালিয়ে কালাগড়ে ফিরে আসব। রামশরণ বেশ কয়েকবার, “অ্যায়সা ক্যায়সে হোগা,” বলল, তারপর দুঃখপ্রকাশ করল। আমি ওকে বললাম কিছু না ভাবতে এই ব্যপারে। ঢিকালা থেকে রামগঙ্গার সমান্তরালে জংলি রাস্তা দক্ষিণে চলে গেছে কালাগড়ের দিকে। মাত্র তো পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ।

ঢিকালাতে রামশরণকে নামিয়ে দিয়ে আমি এগিয়ে পড়লাম। জঙ্গলে সন্ধে একটু তাড়াতড়ি নামে। তার ওপরে শীতের শুরু। শালগাছের ফাঁক দিয়ে রামগঙ্গার ওপার থেকে পশ্চিমে হেলে যাওয়া সূর্য মৃদু উত্তুরে হওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে জংলি রাস্তার ওপরে আলোছায়ার খেলা খেলছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে দিলাম। একটা জায়গায় রাস্তা রামগঙ্গা থেকে অনেকটা বাঁ-দিকে সরে গেছে। রাস্তা আর রামগঙ্গার মধ্যে একটা অগভীর ট্রেঞ্চ আছে। শুনেছি যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ইংরেজরা গুর্খাদের এলাকাছাড়া করবার জন্যে তেহারি রাজাদের জন্যে এই ট্রেঞ্চটা বানিয়ে দিয়েছিল। সন্ধের মুখে এখন বনের জন্তুরা ওখানে জল খেতে আসে। ঐদিন ওই ট্রেঞ্চে তখনও কোনও জানোয়ার চোখে পড়ল না। দিনের ওই সময়ে পাখির ডাক খুব শোনা যায়। একটু খেয়াল করে দেখলাম, তখন পাখির ডাক বিশেষ শোনা যাচ্ছিল না। হয়তো বাঘ এসেছে জল খেতে। গাড়ি চালাতে চালাতে একটু সাবধানী দৃষ্টি রাখলাম চারপাশে। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ট্রেঞ্চে একটা বাঘ জলে শরীর ডুবিয়ে বসে আছে। বেশ কয়েকবার মাথা ডোবাল জলে, আর তারপর শরীরের অর্ধেক জল থেকে বের করে খুব জোরে দু’পাশে ঝাঁকাল শরীরটা। চারপাশে জল ছিটিয়ে পড়ল। তারপর অলস পায়ে ধীরে ধীরে জল থেকে তীরে উঠে ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিজেকে শুকিয়ে নিতে থাকল বাঘটা। বেশ হৃষ্টপুষ্ট যুবক রয়েল বেঙ্গল। ঝকঝকে রং। সূর্যের শেষ আলোটুকু শুষে নিতে থাকল তার উজ্জ্বল শরীর। ট্রেঞ্চের জলে তার প্রতিফলন প্রায় দুশো মিটার দূর থেকে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আমি জিপটা আগেই থামিয়েছিলাম বাঘের স্নান দেখবার জন্যে। এবারে আস্তে আস্তে ম্যানুভার করলাম, ইঞ্জিন বন্ধ করিনি। হাফ মাইল গেলে বাঁ-দিকে একটা সুঁড়িপথ চলে গেছে ট্রেঞ্চের দিকে। ঐটা পেরিয়ে গেলে আরও পনেরো মিনিটের রাস্তা কালাগড়।

অনেকক্ষণ একটানা বলে নীলাদ্রিকাকা একটু থামলেন। ঠিক তখুনি চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন ছোটোমামা। জানেন যে নীলাদ্রিকাকার এবারে চা পানের বিরতির সময় হয়ে গেছে।

“মাংস রান্না কতদূর এগোলো হে ছোটন?” চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নীলাদ্রিকাকা জিজ্ঞেস করলেন।

“হয়ে এসেছে। এরপর প্রত্যুষা ডাল, আলুভাজা আর চাটনি বানাবে।” প্রত্যুষা আমার মামিমা।

“যীশুঠাকুরের জন্মদিনে তো টানটান আয়োজন হে!”

“গোপালের রসগোল্লা উনুন থেকে নামল বলে। একটু পরে গিয়ে নিয়ে আসব। শেষপাতে কয়েকটা গরম রসগোল্লা হজমে সাহায্য করবে।”

“উফ্‌, বাবা! তুমি এবারে যাবে? খাবার আগে গল্পটা শেষ হতে হবে তো!” মিমি বলে উঠল।

“কীসের গল্প চলছে আজ?” ছোটোমামা জিজ্ঞেস করলেন।

“সেটা তো এখনও বুঝতে পারছি না। ডিটেকটিভ হতে পারে, অশরীরী আত্মার হতে পারে, আবার বাঘ-শিকারেরও হতে পারে।” বিল্টু বলল।

“হা হা হা… তাহলে আমার গল্পে রহস্যটা এখনও আছে। কী বলিস? তাহলে চল, বাকিটা বলে ফেলি।”

“গল্প বলা শেষ হলে তোমাকে স্যালাড কাটার দায়িত্ব দেব নীলাদ্রিকাকা।” এই বলে ছোটোমামা নীলাদ্রিকাকার উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ঘর ছাড়লেন।

“তাহলে আমরা কোথায় ছিলাম বান্টিবাবু?”

“ওই তো, বাঘের স্নান দেখে তুমি আবার কালাগড়ের রাস্তা ধরলে।” বান্টি বলল।

“হ্যাঁ, তারপর যা বলছিলাম…

যে সুঁড়িপথটা ট্রেঞ্চের দিকে চলে গেছে, তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। কৌতূহলবশত ঘাড় ঘুড়িয়ে ট্রেঞ্চের দিকে তাকালাম। দেখি, নারায়ণদাস সুঁড়িপথ ধরে ট্রেঞ্চের দিক থেকে হেঁটে ফিরছেন। দেখে বোঝা গেল উনি স্নান করে ফিরছেন। হাতে কমণ্ডলু। আমি অবাক চোখে ওনার আসার পথে তাকিয়ে থাকলাম। জিপ থামিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলাম। অপেক্ষা করতে থাকলাম ওনার জন্যে। উনি কাছে আসতেই ওনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে উঠলাম, “স্বামীজী, ইস ওয়ক্ত আপকা ইস তরহ বেফিকর ঘুমনা ঠিক নহি হ্যায়। আপকো তো কুছ দিন পহলে কে ঘটনাওঁকে বারে মে সব কুছ মালুম হ্যায়।”

“বেটা, ম্যায় এক সাধু হুঁ। মেরে প্রাণ খোনে কা ডর তো বিলকুল নহি হ্যায়।”

আমি এই উত্তরই প্রত্যাশা করেছিলাম। “লেকিন আপ কি জান জানে সে মামলা অওর গম্ভীর হো জায়েগা। আপকো পতা হ্যায়, উস খাড়ি মে ম্যায়নে থোড়ি দের পহলে এক শের কো নহাতে  হুয়ে দেখা হৈ?”

দেখলাম, সাধুবাবার চুলদাড়ি থেকে তখনও জল ঝরছে। পরনের গেরুয়াও ভিজে। “বেটা, ভলা কাম করনে কে লিয়ে পহলে তো সাহস কা হোনা জরুরি হৈ।”

আমি সামান্য হলেও মেজাজ হারালাম, “ম্যায় উৎসুক হুঁ ইয়ে জান নে কে লিয়ে কি, আপ কৌন সা ভলা কাম করনে কে লিয়ে  ইস ওয়ক্ত উস তরফ গয়ে থে।”

স্মিত হেসে নারায়ণদাস উত্তর করলেন, “বেটা, মেরা প্রভু কা সায়ংকালীন সেবা কা সময় হো গয়া হ্যায়। অগর অওর কুছ সময় বিতা সকতে হো তো মেরে সাথ আও। বাস, ইসি ঝাড়ি কে পিছে হি মেরা ঘর হ্যায়।”

আমি গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে ওনাকে অনুসরণ করলাম।

সাধুবাবার খড় দিয়ে ছাওয়া ছোটো কুটিরটি পুরনো ভাঙা একটা শিবমন্দিরের গায়ে। উনি আমাকে উঠোনে একটা পিঁড়ি পেতে দিলেন বসবার জন্যে। তারপর ভেতরে গেলেন। খোলা দরজা দিয়ে ভেতর থেকে প্রদীপের আলো বাইরে আসছে। আমি না বসে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঝিঁঝিঁপোকা ডাকছে। খেয়াল করে দেখলাম, এখন আবার পাখিদের কলরব কানে এল। খুব কাছে বোধহয় একটা ধনেশপাখি আছে। একটানা ট-র-র-র ডাক কানে এল। হঠাৎ আমার মনে হল, এই নারায়ণদাস কে? কোথা থেকে এসেছেন? এর সঙ্গে আমার দেখা বাঘের বা এতগুলো ঘটে যাওয়া খুনের কি কোনও যোগসূত্র আছে?

একটু পরে নারায়ণদাস বাইরে এলেন। হাতে একটা কলা নিয়ে। আমার হাতে দিয়ে বললেন, “বেটা, পহলি বার আপ মেরে কুটির মে পধারে, অতিথি নারায়ণসম হোতা হ্যায়। ইয়ে মেরে প্রভু কা প্রসাদ হ্যায়।”

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, “আপ থোড়ে সে চিন্তিত লগ রহে হ্যায়। লাগতা হ্যায় আপকে মন মে কুছ পহেলি, কুছ দুবিধায়ে হ্যায়।”

আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ধীরে ধীরে, “আপ হ্যায় কৌন? কাহাঁ সে আয়ে হ্যায়? ইধর আপ কিস কারণ রহতে হ্যায়?”

আমার কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে উনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “বেটা, আপ কি হিন্দি সুন কর মুঝে লাগতা হ্যায় আপ বঙ্গাল সে আয়ে হ্যায়। আমিও কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ।”

সেই সময়েই একটা ময়ূরের তীক্ষ্ণ চিৎকারে, নাকি নারায়ণদাসের সঠিক উচ্চারণে বাংলা শুনে, আমি ভীষণ চমকে গেলাম। কারণ, নারায়ণদাসের হিন্দি শুনে কখনওই ওনাকে বাঙালি বলে মনে হয়নি।

“আপনাকে কিছু বলব, কিছু আপনাকে নিজে বুঝে নিতে হবে।” নারায়ণদাস আবার বললেন, “তার আগে বলুন, এত ধরনের সরকারি চাকরি থাকতে আপনি বাড়ি থেকে এত দূরে জঙ্গলে কাজ নিলেন কেন?”

“কারণ, আমি ছোটো থেকেই চাইতাম আমার পেশা যেন রোমাঞ্চকর হয়।”

“সে তো পুলিশের কাজেও রোমাঞ্চ আছে। বনবিভাগে কাজ নিলেন কেন?”

“আমার মনে হত আমার পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের জন্যে প্রকৃতির কাছে যে ঋণ আছে, তা শোধ করবার দায়িত্ব আমার। আমার দাদু ছিলেন নামকরা শিকারি। এককালে প্রচুর প্রাণীহত্যা করেছেন নিছক বিনোদনের জন্যে।”

“ঠিক তাই। মানবজন্ম নিয়ে আমাদের আত্মা এই ধরাধামে আসবার আগে ঈশ্বরের কাছে তার পারমার্থিক ধন গচ্ছিত রেখে আসে। সেই সম্পদের তুল্য ভালো কাজ না করতে পারলে বারে বারে এখানে ফিরে আসতে হবে গচ্ছিত ধন ফেরত পাবার জন্যে। আমি আপনাকে আমার পূর্বজীবনের কথা বলতে পারব না, আমার গুরুর নিষেধ। আমি হিমালয়ে দীর্ঘদিন কৃচ্ছ্রসাধন করেছি, তপস্যা করেছি। আমার মনে হল, এভাবে শুধু ঈশ্বরচিন্তা করে সময় নষ্ট না করে এই পৃথিবীর জন্যে কিছু করা উচিত। তারপর এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে একদিন এখানে এসে পড়লাম। দেখি, পাপে ভরে গেছে এই জঙ্গল। এককালে মানুষ জানোয়ার মারত প্রতিপত্তি দেখানোর জন্যে, বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যে বা বিনোদনের জন্যে। আর আজ তার পয়সার লোভ। এই মহামূল্যবান প্রাণীগুলোর চামড়া, দাঁত, হাড়, শিং মোটা টাকায় চালান হয়ে যাচ্ছে ভিনদেশে। সরকারের একার ক্ষমতা কোথায় চোরাশিকারিদের রুখবার?”

“আর তাই আপনি ঠিক করলেন তপস্যাবলে রাত্রে বাঘ হয়ে চোরাশিকারিদের শাস্তি দেবেন?” আমার গলায় কৌতুকের আভাস স্পষ্ট।

“আপনার অনুমান সঠিক হতেই পারে। আবার এও হতে পারে, আমি যোগবলে একটা বাঘবাহিনীকে পোষ মানিয়েছি।” এই বলে সাধুবাবা জোরে হেসে উঠলেন। হাসির আওয়াজে পাশে গাছ থেকে দু’একটা পাখি উড়ে গেল। অন্ধকার নেমে গেছে। আর বেশিক্ষণ থাকাটা ঠিক হবে না। কিন্তু পুরো কৌতূহল এখনও মেটেনি আমার।

“বিকেলে বাঘের স্নান করার দৃশ্য এখনও ভোলেননি মনে হয়। যা দেখেছেন সব সত্যি দেখেছেন। দৃশ্যের পেছনের কারণ নাই বা অনুসন্ধান করলেন। শুধু এটুকু বলতে পারি, যা হয়েছে তা ভালোর জন্যে হয়েছে। যারা মারা গিয়েছে তারা সত্যি সত্যিই পাপের শাস্তি পেয়েছে। আর আপনাকে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আগামী কয়েকবছর এই অরণ্য সত্যিকারের অভয়ারণ্য থাকবে। জঙ্গল আপাতত বিপদমুক্ত। তবে মানুষের লোভ তো, কোনও চিরস্থায়ী সমাধান নেই এর।”

“আপনি এতটা নিশ্চিত কী করে হলেন? আপনি নিশ্চয় সব জানেন। আমি সবটা শুনতে চাই।” আমি জোড়হাতে মিনতি করলাম।

আমার হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম, সবটা বলা সম্ভব নয়। ভালো কাজ করতে গেলে শুধু সাহসী না, মিতভাষী হওয়া প্রয়োজনীয়। না হলে অহংকারের জন্ম হয়।”

শুক্লাপঞ্চমীর চাঁদের আলোয় নারায়ণদাসের উজ্জ্বল চোখ দেখতে পেলাম। এই প্রথম ওনাকে খুব কাছ থেকে ভালো করে দেখলাম, সেই আঁধার-জোছনার সন্ধেতে। বলিষ্ঠ কাঁধ, ঈষৎ চওড়া চোয়াল, লম্বাটে মুখ, টিকালো নাক, কপালে আর নাকের পাশে বয়সের ডাকে বলিরেখার আগমন আরম্ভ হয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ ধারালো চেহারা। মনের কৌতূহল এখনও মেটেনি।

জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কে?” আমার গলায় কৌতূহল দমন করা অসহিষ্ণু আওয়াজ।

“আমি নারায়ণদাস। এটাই আমার পরিচয়। এর বেশি জেনে কারোর কোনও উপকার হবে না।”

উত্তর পেলাম। আমি এবারে জীপের দিকে হাঁটা দিলাম। দু’পা হেঁটে মাথা ঘুড়িয়ে নমস্কার করে বললাম, “আবার দেখা হবে।”

উনি হাত তুলে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে বললেন, “এই বিশাল পৃথিবীতে ঈশ্বরের নির্দেশে আমরা আবার কোনওদিন মুখোমুখি হতেই পারি। অসম্ভব নয়।”

নারায়ণদাসের এই শেষ কথাটা আমি তখন বুঝিনি। পরদিন সকালে এইসব কথা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে হল, কী বোঝাতে চেয়েছিলেন নারায়ণদাস? বিকেলে রামশরণকে নিয়ে ওনার কুটিরের কাছে গেলাম। কুটিরের চারপাশ ও ভেতর ভালো করে দেখে ওনার ওখানে থাকার চিহ্নমাত্র দেখতে পেলাম না। এবারে অনুধাবন করতে পারলাম ওনার শেষ কথাগুলোর তাৎপর্য।  উনি যে এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যাবেন সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন আমায়। এই ঘটনার পর আমি আরও বছর পাঁচেক ছিলাম ওখানে। ওনাকে আমি আর কোনওদিন দেখিনি।

“তোমার গল্প কি শেষ নীলাদ্রিকাকা?” বান্টি জিজ্ঞেস করল।

“না রে, এখনও একটু বাকি। কিন্তু তার আগে চা চাই।”

অগত্যা, এবারে আমি উঠলাম চা অর্ডার করতে। বসে রইলাম চায়ের অপেক্ষায়। চা এল। চুমুক দিয়ে নীলাদ্রিকাকা আবার শুরু করলেন।

এই ঘটনার পর প্রায় বারো বছর কেটে গেছে। আমি তখন নর্থ-ইস্টে থাকি। আমি তখন ওখানে রিজিওনাল চিফ ফরেস্ট কনজারভেটর। একদিন কানহা টাইগার রিজার্ভের কনজারভেটার মিঃ নাচাপ্পার ফোন পেলাম। সমস্ত ফরেস্ট কনজারভেটারদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় বলে জানতাম যে ওখানে তখন চোরাশিকারিদের উপদ্রব বেড়েছে। ভাবলাম, সে ব্যাপারে হয়তো কোনও আলোচনা করতে চান মিঃ নাচাপ্পা। সিনিয়র ছিলাম, তার ওপর ওনার প্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামীর সঙ্গে আমার পদবীর মিল। তাই আমাকে একটু বেশি শ্রদ্ধা করতেন। ফোনের ওপার থেকে তাঁর কণ্ঠস্বর শুনলাম, “স্যার, আই নিড ইওর কাইন্ড হেল্প। আয়াম কমপ্লিটলি ক্রিপিল্ড উইথ দা রিসেন্টমোস্ট ডেভেলাপমেন্টস অফ সিরিয়াল কিলিং ইন্সিডেন্টস ইন মাই টেরিটরি। আই হার্ড দ্যাট ইউ এক্সপেরিয়েন্সড দা সেম ইন করবেট। আই শ্যাল সেন্ড ইউ দা ফোটোগ্রাফস অফ দা ভিক্টিমস। আয়াম সিওর ইউ ক্যান শেয়ার ইওর ইনসাইটস উইথ মি।”

আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম চোরাশিকারের কী অবস্থা। উত্তরে উনি বললেন যে চোরাশিকার প্রায় নির্মূল। তবে এডমিনিস্ট্রেশনের তুমুল মাথাব্যথার কারণ এই সিরিয়াল কিলিং। কারণ, উনি নিশ্চিত, এটা সাধারণ বাঘের কাজ বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিছুদিন বাদে ফটো এল আমার কাছে। এক এক করে এগারোটা মৃতদেহের ছবি। ছবিগুলো দেখে চমকে গেলাম। সেই পা মুড়ে শোয়ানো দেহ, সেই বিস্ফারিত চোখ, ভয়ে ঠোঁট হাঁ হয়ে যাওয়া মুখ।

“তার মানে, কানহাতেও নারায়ণদাস গেছিলেন? তারপর কী হল?” মিমি প্রায় চিৎকার করে উঠল।

“সে গল্প আরেকদিন হবে, আজ আর নয়। ছোটন এখুনি ডাকল বলে। স্যালাড কাটতে হবে।”

“না না, নীলাদ্রিকাকা, এটা ঠিক হল না। পুরোটা তোমাকে বলতেই হবে।” বিল্টু বলে উঠল।

“একটু রহস্য বাকি থাকুক না হয়। না হলে তো আমার ডিম্যান্ড কমে যাবে।”

“আচ্ছা, আমি যা বুঝলাম তোমার বিবরণ শুনে, নারায়ণদাস তোমার মতোই দেখতে ছিলেন।” বান্টি বলল।

“আচ্ছা, ওনার গালে জরুল আছে কি না খেয়াল করতে পারনি?” বান্টিকে থামিয়ে মিমি বলে উঠল।

ঠিক তো! আমি তো মিমি-বান্টির মতো এই ব্যপারটা খেয়াল করিনি!

“আরে দেখবে কী করে? নারায়ণদাসের গালে তো লম্বা দাড়ি।” বিল্টু বলে উঠল।

“নীলাদ্রিকাকা, সব রেডি। ছোটন বসে আছে তোমার জন্যে। কখন স্যালাড কাটতে আসবে?” মা পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে বললেন।

নীলাদ্রিকাকা, “আহ্‌, বাঁচালি,” বলে হাসতে হাসতে ডাইনিং-রুমের দিকে চলে গেলেন।

“সো আনফেয়ার নীলাদ্রিকাকা!” নিষ্ফল হতাশায় মিমির গলা থেকে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে এল।

ছবিঃ অংশুমান

জয়ঢাকের গল্পঘর

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s