শুভাশীষ গুন
আজ বুবুনের জন্মদিন। আজ তাই তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে সে। নাহলে অন্যদিন ঘ্যানঘ্যান করে আর বাবার বকা খায়। আজ সে মহাখুশিতে রয়েছে। সকাল থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এখন বেলুন লাগানো হচ্ছে। বিশাল আয়োজন চলছে। বুবুনের মা খুব করে সেজেছে। অবশেষে সন্ধ্যা হলো। কত বন্ধু এসেছে বুবুনের। বিশাল পাউন্ডের কেক, তাতে আবার ছোটা ভীম। ক্যান্ডেল নেভাল বুবুন। কেক কাটল। সবার থেকে কত গিফট্ পেয়েছে বুবুন। এবার এল জোকার আর ম্যাজিশিয়ান। বাচ্চাদের আনন্দ বিশাল; সবাই তাদের থেকে লজেন্স পাচ্ছে।
এমন সময়ে বুবুনের বাড়িতে এল একটা প্যাকেজ। দেখল বাক্সের সাথে একটা চিঠিও আছে। খুলে দেখল তাতে লেখা আছে,
প্রিয় বুবুন, কাজের ব্যস্ততার জন্য আসতে পারলাম না, সরি তার জন্য। শুভ জন্মদিন, বুবুন। আরও বড়ো হও। আমার ভালোবাসা নিও। আমার তরফ থেকে ছোটো একটা উপহার।
ইতি
তোমার জ্যেঠুমণি
প্যাকেজটা খুলল বুবুন। তাতে রয়েছে দামি উন্নতমানের একটা সোয়েটার। এই শীতে দারুণ কাজে লাগবে। উন্নতমানের চামড়া। মহাখুশি বুবুন। আসলে বুবুনের জ্যেঠু একজন দার্শনিক। এরপর চলল ভোজনপর্ব। নানপুরী, চানা মশলা, স্যালাড, ফ্রায়েড রাইস্, বাটার চিকেন, ফিশফ্রাই, চাটনি, পাঁপড়, রসগোল্লা, লেডিকেনি আর আইসক্রিম। শেষ হল জন্মদিন।
পরদিন সকাল বেলা থেকেই বুবুন সোয়েটার নিয়েই ঘাঁটছিল। মহাখুশি সে, মুখে খিলখিল করা হাসি। বেশ রঙচঙে সুন্দর ছবি আঁকার সোয়েটার। এমনসময় সেখানে এল কাজের ঝি আর তার বুবুনের বয়সি ছেলে মাধব। বুবুনের মা বলল, “এলে না কেন গতকাল?”
ঝি কেঁদে বলল, “ছেলেটার শরীর ভালো নেইগো বউদি, ধুম জ্বর। শরীর একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে। আমরা তো গরিব। ওর বাবাও বেঁচে নেই। ওষুধ কে কিনবে বলো?”
মাধবের গায়ে হাত দিয়ে দেখা গেলো সত্যিই ধূম জ্বর। বুবুনের মা বলল, এর মধ্যে এখানে এনেছ?”
ঝি বলল, “বলেছিলাম ঘরে থাক, শুনল না।”
বুবুনের মা ঝি-কে কিছু টাকা দিল। এরই মধ্যেই হঠাৎ বুবুন তার নতুন জ্যেঠুর দেওয়া সোয়েটারটা মাধবকে দিয়ে দিল। বাবা-মা উত্তেজিত হয়ে বললম “এ কী করছ বুবুন? এটা তোমাকে জ্যেঠু দিয়েছে। আর এটা তুমি ওই বাইরের ছেলেটাকে দিয়ে দিচ্ছ? “
বুবুন বলল, “মা, বাপি! জ্যেঠু হয়তো আমায় প্রতিবছরই গিফট্ দেবে। ভেবে দেখেছ কি, ওর বাবা নেই! সোয়েটার চলে গেলে আমার আবার আসবে। কিন্ত ওর খারাপ কিছু হলে ফিরে আসবে কি?”
আট বছরের বুবুনের মুখের এই কথায় তার বাবা-মা ভাষা হারাল। বুবুন সোয়েটারটা মাধবের হাতে তুলে দিল।