বিভাবসু দে-র আগের গল্পঃ পাতালপুরীর দরজা
ছায়ার কায়া
বিভাবসু দে
“মন শুধু একটা অব্যক্ত সত্ত্বা বা কতগুলো নিউরনমাত্র নয়, মন আমাদের অস্তিত্বের এক অত্যন্ত জটিল রহস্য যা সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি। মন শুধু কিছু ভাবনার তরঙ্গ নয়, বরং আমাদের পুরো জৈবতন্ত্রের নিয়ন্তা। দেহের উপর মনের প্রভাব কতটা গভীর ও কতদূর প্রত্যক্ষ হতে পারে তার উপর আমি গত দশ বছর ধরে যা কাজ করেছি তারই কিছুটা আজ তুলে ধরব আপাদের সামনে।”
দিল্লির ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল সাইন্স এন্ড টেকনোলজির কনফারেন্স হল ; সারা বিশ্বের তাবড় তাবড় মনোবিদ, নিউরোসায়েন্টিস্টরা বসে আছেন। সামনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন প্রফেসর আদিত্য চক্রবর্তী ; বিশ্ববিখ্যাত মনোবিদ। বহুবছর ধরে দেহের উপর মনের প্রভাব নিয়ে কাজ করে চলেছেন ; অগুনতি রিসার্চ পেপার রয়েছে তার নামে, দেশ-বিদেশে এমন অনেক সেমিনারে প্রায়ই বক্তৃতা করতে হয়। আজ মন আর দেহের এক জটিল পারস্পরিক প্রভাব নিয়ে এই সেমিনারে বলবেন তিনি।
প্রায় সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ শেষ হল সেমিনার। প্রফেসর চক্রবর্তীও বেশ খুশি, দারুণ রেসপন্স পেয়েছেন আজকের সেমিনারে। সেখানেই ডিনার সেরে মেট্রোয় উঠলেন, সাথে কৌশিক, উনার ছাত্র। এই লাইনের মেট্রোতে খুব একটা ভিড় থাকে না এইসময়, তাই সহজেই বসার জায়গা পেয়ে গেলেন তিনি, কৌশিকও একটু দূরে একটা সিটে বসল। পরের স্টেশন হৌজ খাস ; এখানেও তেমন ভিড় নেই, শুধু একজন লোকই উঠল। একটুসময় এদিক-সেদিক তাকিয়ে বসার সিট্ খালি না থাকায় লোকটা এসে দাঁড়াল প্রফেসরের ঠিক কাছটায়। দেখতে বেশ শিক্ষিত ভদ্রলোক, মাঝারি উচ্চতা, চেহারাটাও বেশ মোলায়েম, পাঞ্জাবি বা হরিয়ানিদের মত অমন কাঠখোট্টা নয়। মোটামোটি আধঘন্টা লাগল কাশ্মীরি গেট পৌঁছুতে, প্রফেসর এখানেই নামবেন তাই স্টেশনের একটু আগেই উঠে দাঁড়ালেন। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপ বৈঠ জাইয়ে। হুম অভি উৎরেঙ্গে।”
ভদ্রলোক বেশ একটু বিনয়ী হাসি সহ প্রফেসরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লেন। কাশ্মীরি গেটে মেট্রো থামল, নেমে পড়লেন প্রফেসর আর কৌশিক। আজ রাত এখানেই একটা হোটেলে থাকবেন, কাল এগারোটায় কলকাতার ফ্লাইট।
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্ট। দশটা বাজতে পাঁচ মিনিট ; সিকিউরিটি চেকিং চলছে, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রফেসর, পেছনেই রয়েছে কৌশিক। হঠাৎ প্রফেসরের নজর পড়ল পাশের লাইনে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোকের দিকে। ইশারায় কৌশিককে জিজ্ঞাসা করলেন, “কৌশিক, কাল ওই লোকটাই দাঁড়িয়েছিল না আমার পাশে মেট্রোতে ?”
কৌশিক বার দুয়েক ঘাড় বেঁকিয়ে দেখার চেষ্টা করল ভালোভাবে।
“আপনার পাশে ? কাল ?”
“হ্যাঁ, হৌজ খাস থেকে উঠেছিল মেট্রোতে।”
“কি জানি প্রফেসর, আমার ঠিক মনে পড়ছে না।”
“ওহ, আচ্ছা।”
কিন্তু প্রফেসর আরো বেশ কয়েকবার তাকালেন লোকটার দিকে, “হ্যাঁ, এই লোকটাই ছিল। আমি নিশ্চিত।”
যথারীতি এগারোটায় ফ্লাইট টেক অফ করল। কলকাতা এয়ারপোর্টে যখন ল্যান্ড করল তখন প্রায় পৌনে একটা ; জিনিসপত্র নিয়ে বেরোতে বেরোতে আরো আধঘন্টা লেগে গেল তাদের। বাইরে প্রফেসরের গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার আগেই দাঁড়িয়ে ছিল, তাতেই উঠে পড়লেন তারা। কিছুক্ষন যাবার পর একটা সিগন্যালে গাড়ি থামল। প্রফেসর আনমনা ভাবে কিছু একটা ভাবছিলেন, হঠাৎ ডানদিকের জানালা দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ল সেই লোকটা। প্রফেসরের গাড়ির দুটো গাড়ি পরেই একটা ট্যাক্সিতে বসে আছে। হতেই পারে কলকাতা এসেছে লোকটা, রোজই তো কত লোক আসছে যাচ্ছে ; কাকতালীয়ভাবে মেট্রোতে দেখা হয়েছিল, তাতে আর এতো ভাববার কী আছে।
বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় তিনটে বেজে গেল। প্রফেসর বিয়ে থা করেননি, একাই থাকেন ; বাড়িতে আর লোক বলতে দিনু, রান্নাবান্না আর ঘরের কাজগুলো করে, অনেক বছর ধরেই আছে। কৌশিক মাঝে মাঝে সাথে থাকে রিসার্চের কাজের জন্যে, তবে আজকে বাড়িতে কিছু বিশেষ কাজ থাকায় সে চলে গেল।
“দাদা, ডাল ভাজা আর মাছের ঝোল করেছি। ভাত চাপিয়ে দেব ?”
“না রে, এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না, ফ্লাইটে একটা বার্গার খেয়ে পেট ভরে গেছে। রাতে বরং একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নেব আজ।”
সন্ধ্যায় রোজ চায়ের কাপ হাতে বাগানে এসে বসাটা প্রফেসরের অভ্যেস । সারাদিনের কাজের ধকল এক নিমেষে মুছে যায় সবুজ গাছে ওই নানান রঙের ফুলগুলোর দিকে তাকালে। বাড়ির সামনেই বেশ প্রশস্ত একখানা বাগান আছে, অনেক দেশী বিদেশী ফুল, পাতাবাহার গাছে সাজানো, দুটো ঝাউ গাছও আছে। একটা ছোট্ট চেয়ার নিয়ে বসলেন প্রফেসর। আকাশের সোনালী রং ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে সন্ধ্যার অন্ধকারে ; দিনের এই সময়টা বড্ডো ভালো লাগে প্রফেসর চক্রবর্তীর।
একটু পরে উঠে পায়চারি করতে লাগলেন। বাগান পেরিয়েই লোহার গেট, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন সেদিকেই। ঠিক সেই সময় হঠাৎ একটা বাইক গেল তার গেটের সমানে দিয়ে, কালো রঙের পালসার। বাইকের পেছনে একজন বসে আছে। লোকটাকে ঠিক দেখতে পেলেন না প্রফেসর, কিন্তু কেমন যেন একটু খটকা লাগল। একটু জোরেই পা চালিয়ে গিয়ে গেটটা খুললেন ; একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে বাইকটা। পেছনে বসা লোকটা ফিরে তাকাল।
“এ তো সেই লোকটা।” প্রফেসরের বুকের ভেতরটা হঠাৎ যেন অকারণেই ধড়াস করে উঠল।
বাইকটা আর দাঁড়াল না, ছুটে চলে গেল তখনি।
“কাকতালীয় ঘটনা কি এমন বারবার ঘটে ! লোকটা আমায় ফলো করছে না তো ? কিন্তু কেন ?” মনের ভেতর নানান প্রশ্ন আশংকা ফেনিয়ে উঠতে লাগল। একবার ভাবলেন কৌশিককে ফোন করবেন, তারপর ভাবলেন এতটা ভয় পাবার মতোও কিছু হয়নি, এখনই ওকে ডেকে আনাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। আর হাজার হোক বাড়িতে একা তো নই, দিনু আছে।
দুপুরের কথামত রাতের খাবারটা আজ একটু তাড়াতাড়িই সেরে নিলেন প্রফেসর, কাল সকালে আবার রিসার্চ সেন্টারে যেতে হবে।
কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ একটা অজানা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তার। বেশ কিছুক্ষন শুনলেন শব্দটা, যেন কারোর নড়াচড়ার শব্দ। মনে হল যেন ঠিক তার বিছানার নিচেই হচ্ছে শব্দটা। বুকের ধুকপুকানিটা একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে, সন্ধ্যার সেই বাইকের ঘটনাটাও মনে পড়ে গেল তখনই। ধীরে ধীরে উঠে বসলেন প্রফেসর, টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে একবার তাকালেন বিছানার নিচে। “না, কেউ নেই, শব্দটাও তো হচ্ছে না আর। হয়তো আমারই মনের ভুল।”
পাশের টেবিলে জল রাখা ছিল, বেশ এক গ্লাস গলায় ঢেলে বুকের উপর হাত রাখলেন একবার, “ফালতু ভয় পাচ্ছিলাম !”
কিন্তু ঘুমোবার জন্য যেইমাত্র পাশ ফিরলেন, মনে হল যেন আচমকা ভয়ে সারাটা শরীর কেঁপে উঠল তার, কলজেটা যেন ফেটে বেরিয়ে পড়বে এক্ষুণি। বিছানার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই লোকটা। “দিনু দিনু…..” বলে চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেলেন প্রফেসর। একটু পর দিনুকে সাথে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন, তন্ন তন্ন করে সারা ঘর খোঁজা হল কিন্তু নেই। তখনও দরদর করে ঘামছেন প্রফেসর।
“কোথায় ? কেউ তো নেই দাদাবাবু। তুমি নির্ঘাত স্বপ্ন দেখেছ।”
স্বপ্ন অবচেতন মনের ছবি বটে, কিন্তু তাই বলে এতটা স্পষ্ট ! নিজের মনকে কিছুতেই বোঝাতে পারলেন না প্রফেসর।
“সে যাই হোক, তুই আজ এখানেই শুবি।”
“ঠিক আছে দাদা।”
দিনু নিজের বিছানাপত্তর নিয়ে এল প্রফেসরের ঘরে, ঘুমিয়েও পড়ল একটু সময় পরেই ; নাক ডাকার গর্জনেই তা বেশ বোঝা গেল।
কিন্তু প্রফেসরের চোখে কিছুতেই ঘুম আসছে না। মনের ভ্রম এতটা স্পষ্ট তো হয় না ; নিজে তিনি বিশ্বের সেরা মনোবিদদের একজন, সারাজীবন কাটিয়েছেন মন নিয়েই, মনের খুঁটিনাটি কিছুই তার অজানা নয়। অনেকবার ভেবেও কিছুতেই যেন হিসাব মিলাতে পারছেন না।
ভোররাতের দিকে কিছুক্ষনের জন্যে দু’চোখের পাতা এক হল, কিন্তু বেশিক্ষন ঘুমোতে পারলেন না, সাতটায় অ্যালার্ম দেওয়া ছিল। উঠে পড়লেন প্রফেসর, রিসার্চ সেন্টারেও যেতে হবে যে। দিনু আগেই উঠে রান্না শুরু করে দিয়েছে। প্রফেসর বাথরুমে গেলেন স্নান সারতে। কিন্তু একটু পরে হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়তেই শিউরে উঠলেন তিনি, সেই লোকটা বাথরুমে, ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে ; আয়নায় ছায়া পড়ছে তার। পেছন ফিরে তাকাতেই সারাটা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল প্রফেসরের। লোকটার চেহারার অর্ধেকটা আর আগের মতো নেই, ঠিক প্রফেসরের মতো হয়ে গেছে দেখতে, আর বাকি অর্ধেকটা রয়েছে আগের মতোই। ভয়ে হাত পা অবশ হয়ে গেল তার। কিন্তু তবু চিৎকার করলেন না।
“এ কি শুধুই মনের ভুল না অন্যকিছু ? আজ জানতেই হবে, নাহলে ভয়ে পাগল হয়ে যাব আমি।”
একটু পরে শক্ত করে দেয়াল ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন ; লোকটা তখনও সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। প্রফেসর বেশ টের পাচ্ছেন, তার জলে ভেজা শরীর একটু একটু করে ঘেমে উঠছে। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে ?”
লোকটার মুখে কোনো কথা নেই, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে ; ঠিক যেন একটা জ্যান্ত লাশ !
“উত্তর দাও। কেন আমার পেছনে লেগেছ ?”
ওদিক থেকে কোনো উত্তর এল না। কিন্তু এবার প্রফেসরের শরীর সত্যি কাঁপতে লাগল ভয়ে ; লোকটার চেহারার বাকি অর্ধেকটাও একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে , আস্তে আস্তে সে যেন প্রফেসরের প্রতিবিম্ব হয়ে উঠতে লাগল।
“এ অসম্ভব ! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি !”
হবহু নিজেকেই যেন আয়নায় দেখছেন প্রফেসর। ভয়ে চিৎকার করে লোকটাকে ঠেলে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। কিন্তু মনে হল যেন লোকটা বাতাস, ওর গায়ে ধাক্কাই লাগল না।
“দিনু দিনু, ওই লোকটা বাথরুমে………”
দিনু মন দিয়ে কড়াইতে খুন্তি নাড়ছে, যেন কিছুই শুনতে পায়নি ও। প্রফেসর ছুটে গেলেন ওর কাছে, কিন্তু এবার যা ঘটল তাতে যেন মাথার ভেতর সব ওলোটপালট হয়ে গেল প্রফেসরের। হাজার চেষ্টা করেও কিছুতেই দিনুকে ধরতে পারছেন না, ওর শরীরটাও যেন বাতাসের হয়ে গেছে, ঠিক ওই লোকটার মত। প্রফেসর বারবার চিৎকার করতে লাগলেন, কিন্তু কিছুই যেন কানে যাচ্ছে না দিনুর, প্রফেসরকে যেন সে দেখতেই পাচ্ছে না।
একটু পরে সেই লোকটা এসে দাঁড়াল, এখন ঠিক তাকে প্রফেসরের মতোই দেখতে।
“দিনু তোর হয়ে গেলে ভাতটা বেড়ে দে, আমায় বেরোতে হবে একটু পরে।”
“দিচ্ছি দাদা।”
প্রফেসর অবাক হয়ে শুনলেন, লোকটার গলার স্বরটাও যে হবহু তার মত হয়ে গেছে। আর দিনু এই লোকটাকে দেখতে পাচ্ছে কিন্তু প্রফেসরকে দেখতে পাচ্ছে না কেন ?
লোকটা বারান্দার দিকে গেল। প্রফেসর ছুটে গেলেন, কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারলেন না তাকে, বাতাসের মত গলে গেল সে আঙুলের ফাঁক দিয়ে।
এবার লোকটা ফিরে তাকাল প্রফেসররের দিকে। তার সারাটা শরীর, মুখ সব প্রফেসরের মত , শুধু মুখে একটা অদ্ভুত ভাব। হাসি আর কান্না একই মুহূর্তে কারো মুখে ফুটে উঠলে হয়তো এমনটাই দেখাবে !
“তুমি এই পৃথিবীর জন্য চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছ প্রফেসর।”
“কে তুমি ? কী হচ্ছে এসব ? এ যে অসম্ভব !”
“কেন প্রফেসর ? নিজের ‘মানস দ্বিখণ্ডন ও মনস্তাত্বিক দেহগঠন’ তত্ত্ব ভুলে গেলে ?”
“মানে ?”
“আমি তোমারই মনের খণ্ডিত অংশ। মন আর দেহ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যতদিন আমি মন ছিলাম, তুমি ছিলে দেহ। তুমি ছিলে প্রত্যক্ষ, আর আমি ছিলাম অদৃশ্য। আজ থেকে তুমি থাকবে নেপথ্যে, আমি বাইরে। এখন আমি দেহ, তুমি মন ; তাই তুমি জগতের কাছে অদৃশ্য। শুধু আমিই দেখতে পাব তোমাকে যেমন তুমি দেখতে পেতে আমাকে।”
প্রফেসরের চোখের সামনে বারান্দার দেয়ালগুলো যেন বনবন করে ঘুরতে লাগল ! যেই ‘মনস্তাত্বিক দেহগঠন’ তত্ত্ব তিনি আবিষ্কার করেছিলেন আজ সেই তত্ত্বই অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে তারই নিজের জীবনে, তারই মন আজ কায়াময় হয়ে তাকে পরিণত করেছে অদৃশ্য ছায়ায়। তার পায়ের নিচের মাটিটা যেন দুলে উঠল, চারিদিক অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে, নিজেরই মনের জটিল জালে আজ হারিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসেরা মনোবিদ !
জগৎটা যখন একটু একটু করে মিশে যাচ্ছে অন্ধকারে, তখন দূরে কোথাও কেউ যেন ডাকছে, “স্যার, স্যার……..”
ধীরে ধীরে আরও তীব্র হতে লাগল ডাকটা। চোখ খুললেন প্রফেসর, কৌশিক পাশে বসে ডাকছে।
“উঠুন স্যার, সকাল হয়ে গেছে। এগারোটায় ফ্লাইট।”
মাথাটা এখনও ঝিমঝিম করছে তার। একটু পরে যখন ঘোর কাটল প্রফেসর দেখলেন তিনি দিল্লির সেই হোটেলেই শুয়ে আছেন ; মাথার পাশের টেবিলে একটা রিসার্চ পেপার রাখা, পাতাগুলো উড়ছে ফ্যানের বাতাসে। তার ফ্রন্ট পেজে মোটামোটা হরফে লেখা, ‘মনস্তাত্বিক দেহগঠন তত্ত্ব——–প্রফেসর আদিত্য চক্রবর্তী’।
অলঙ্করণঃ শিমুল
খুব সুন্দর গল্প। ভাল লাগলো প।
LikeLike