গল্প তাজ্জব ব্যাপার অমিতাভ সাহা বসন্ত ২০১৯

অমিতাভ সাহা

ক্লাস ফাইভের বিচ্ছু ছেলে সুমিত। খুব দুরন্ত। একদন্ড অবসর নেই। সবসময় দৌড়ঝাঁপ, ছোটাছুটি লেগেই আছে। স্টুডেন্ট খারাপ নয়। মাথা ভীষণ শার্প। সবকিছু জানার তীব্র কৌতূহল। শুধু ক্লাসের বইয়ের পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত না সুমিত। বড় ক্লাসের বইতেও চোখ বোলাত মাঝেমধ্যে নতুন কিছু শেখার, জানার তাগিদে। বই পড়ার থেকেও ওর বেশি আগ্রহ ছিল হাতেকলমে কিছু শেখার। ক্লাস প্রজেক্টের সময় বুদ্ধি খাটিয়ে নতুন নতুন মডেল তৈরি করত। মাঝেমধ্যে দাদা-দিদিদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে ঢুঁ মারত।

একদিন কেমিস্ট্রি ল্যাবে প্র্যাক্টিক্যাল চলছিল। সুমিত বাইরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছিল, দাদা-দিদিরা টেস্টটিউবে একটা লিকুইডের সঙ্গে অন্য একটা লিকুইড মেশাচ্ছে, সাথে সাথে কালার চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে, কখনও বা ধোঁয়া উঠছে। দেখে ভীষণ উৎসুক হল, এসব কি হচ্ছে! চুপ করে সুযোগ বুঝে সকলের নজর এড়িয়ে ল্যাবে ঢুকে এক কোণায় লুকিয়ে পড়ল।

ক্লাস শেষ হবার পর সবাই চলে গেল। ক্লাসটিচার গার্ডকে বলে দিলেন, রুমটা বন্ধ করে দিতে। বলে চলে গেলেন। গার্ডদা বলল, অন্য রুমগুলো বন্ধ করে আসছি। গার্ডদা যেই সরে গেল, সুমিত চুপিচুপি বেরিয়ে দুষ্টুমিতে মন দিল।

একটা টেস্টটিউব নিয়ে তাতে বোতল খুলে একটার সাথে আরেকটা লিকুইড মিক্স করতে লাগল। আদৌ জানত না, সেগুলো কী। কখনও রঙ পাল্টাচ্ছিল, কখনও বা ভস করে ধোঁয়া উঠছিল। ওর খুব মজা লাগছিল। তাড়াতাড়ি বেরতে হবে। নইলে গার্ডদা এখুনি এসে পড়বে। শেষে কী একটা লবনের মত মেশানোর পর দেখে টেস্টটিউবের নীচে সাদা দইয়ের মত থকথকে একটা জিনিস জমা হয়েছে।

ওপর থেকে জলটা ফেলে দিয়ে দইয়ের মত জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। একদম দইয়ের মতই লাগছিল। একটু মুখে দিয়ে দেখল, দইয়ের মতই টকটক। এভাবেও যে দই বানানো যায়, সেটা তো জানত না। নিজের অজান্তেই ও দই বানানোর একটা নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছে। আজ আর সময় নেই। পরে আরেকদিন এসে জিনিসটা কীভাবে বানাল সেটা নোট করে নিতে হবে ভেবে ল্যাব থেকে বেরিয়ে গেল।

বাড়ি আসার পর খেয়াল করল, প্রচন্ড ঝিমুনি লাগছে আর ঘুম পাচ্ছে। সন্ধেবেলা ঝিমুনির চোটে পড়তেই পারছিল না। রাত্রি ন’টা বাজতেই মাকে বলল, আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে মা। মা তাড়াতাড়ি খাবার দিলেন। সুমিত খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে ওঠার পর ভীষণ ফ্রেশ লাগছিল। রাতে খুব সুন্দর ঘুম হয়েছে। কিন্তু পিঠটা চুলকাচ্ছিল। পিঠে হাত দিয়ে চুলকানোর পর দেখে, অনেকগুলো পাখির পালকের মত হাতে উঠে এসেছে। ভালো করে হাত বুলিয়ে বুঝতে পারল, পিঠে ডানা গজিয়েছে।  এ তো আশ্চর্য ব্যাপার!  ডানা গজালো কীভাবে? পরে ভাবল, কেমিস্ট্রি ল্যাবে দইয়ের মত কী যেন খেয়েছিল, তার থেকেই রিঅ্যাকশন হয়েছে।

সুমিত বাড়িতে কাউকে বলল না। সেদিন স্নান ও করল না। কারণ জামা খুললে সবাই যদি বুঝতে পেরে যায়। স্নান না করেই স্কুলে গেল। সেদিন ক্লাসের পড়ায় মন বসছিল না। মনটা উড়ুউড়ু করছিল। ক্লাসের শেষে বিকেলবেলা সোজা মাঠে চলে গেল। ওখানে বন্ধুরা খেলাধুলা করছিল। সুমিত ওদেরকে ডেকে জামা খুলে পিঠটা দেখাল। ওরা পাখির মত ডানা দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেল।

“দাঁড়া, দেখি উড়তে পারি কিনা,” বলে সুমিত বন্ধুদের সামনে ডানাদুটো মেলে ধরে ঝাপটাঝাপটি করতে করতে দৌড়তে লাগল। মেলে ধরার পর ডানাদুটো যথেষ্টই বড় মনে হল। বন্ধুরা ওর কান্ডকারখানা দেখে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। স্কুলের মাঠে এভাবে কিছুক্ষণ ওড়ার জন্য প্র্যাকটিস করতে লাগল।

কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পরেই সুমিত অনায়াসে আকাশে উড়ে বেড়াতে লাগল। কি দারুণ আনন্দ লাগছিল আকাশে উড়ে বেড়াতে। বন্ধুরা বলছিল, “ওরে সুমিত! নেমে আয়। নেমে আয়।” কিন্তু সুমিত যে আনন্দ পেয়েছে, তা ছেড়ে আর নামতে চাইছিল না। স্কুলের মাঠ পার হয়ে রাস্তাঘাট, অজস্র দালানকোঠার উপর দিয়ে উড়তে লাগল। রাস্তার লোকজনও অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল, একটা বাচ্চা ছেলে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। এরকম দৃশ্য কেউ বাপের জন্মে দেখিনি! রাস্তাঘাটে ভিড় জমে গেল। সুমিতের মনে ভীষণ আনন্দ হতে লাগল। ওর জীবনে এরকম অলৌকিক ঘটনা ঘটবে, কোনদিন ভাবেনি।

উড়তে উড়তে তিস্তা নদীর উপর পৌঁছে গেল। এতক্ষণ ধরে ওড়ার ফলে ওর দম ফুরিয়ে গেল। তাই নদী পেরোবার আগেই জলে নামতে বাধ্য হল। ওর সাঁতার জানা ছিল না। তাই ক্রমাগত হাবুডুবু খেতে খেতে অচৈতন্য হয়ে পড়ল। নদীর জলে ভাসতে ভাসতে ওর দেহ গিয়ে পৌছালো তিস্তাপাড়ের এক গাঁয়ে। এক চাষি বিকেলবেলা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি নদীর ধারে সুমিতকে পড়ে থাকতে দেখলেন। তারপর পেটে চাপ দিয়ে জল বের করার পর সুমিতের জ্ঞান ফিরল। তিনি সুমিতকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে আসছো বাবা?”

সুমিত বলে, “কুচবিহার।”

“এত দূরে কীভাবে এলে তুমি?”

“কেন? আকাশে উড়ে উড়ে!”

“অ্যাঁ! সে কী!”

সুমিত পেছন ফিরে ওঁকে ডানা দেখাল। উনি তো দেখে অবাক হয়ে গেলেন।

“তুমি নিশ্চয়ই ঈশ্বরের কোন অবতার বাবা” বলে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন সুমিতকে। তারপর সুমিতকে ঘাড়ে নিয়ে “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” নাম উচ্চারণ করতে করতে বাড়ি নিয়ে গেলেন।

বাড়ি ফিরে বউকে বললেন, “সাক্ষাৎ ভগবান এসেছেন আজ আমাদের বাড়িতে। এসো বাইরে বেরিয়ে দেখো।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা গাঁয়ের লোক জানতে পারল। সবাই এসে সুমিতকে দেবতাজ্ঞানে প্রণাম করতে লাগল আর যাবতীয় ফলাহার আম, কলা, আঙ্গুর, কমলালেবু, সঙ্গে রসগোল্লা, চমচম আরো কত মিষ্টি নিয়ে আসতে লাগল। সারাদিন আকাশে উড়ে সুমিতের ভীষণ খিদে পেয়েছিল। ও পেট পুরে খেল। ও খেয়াল করল, এ গাঁয়ের লোকজন ভীষণ গরিব। সবারই মাটির বাড়ি, মাটির উঠোন, বাড়িতে কারেন্ট নেই। কিন্তু নদীর পারে বাড়ি হওয়াতে সুন্দর ঠাণ্ডা বাতাস এসে শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছিল, গরম লাগছিল না।

সন্ধেবেলা তুলসির থানে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে গ্রামবাসী মিলে সুমিতকে সিংহাসনে বসিয়ে ওর সামনে গীতা পাঠ করতে লাগল। সুমিত হাত তুলে সবাইকে আশীর্বাদ দিচ্ছিল। পাঠ শেষ হয়ে গেলে চাষিবউ সুমিতকে আলুসেদ্ধ ডাল ভাত খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। পরদিন সকালে উঠে দেখে সবাই ওকে গোল করে ঘিরে বসে আছে।

“এই যে ভগবান চোখ মেলে চেয়েছেন। সবাই আশীর্বাদ নিন” বলে চাষি সবাইকে আহ্বান জানালেন।

সুমিত দেখল, মহা জ্বালা হয়েছে! আর এখানে থাকা যাবে না।

“আমার হিশু পেয়েছে” বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড় দিল।

সবাই পিছু পিছু আসতে লাগল।

“শান্তিতে হিশু তো করতে দেবে!” বলে একটা ঝোপের দিকে এগিয়ে গেল। আর এখানে থাকা যাবে না ভেবে হিশু করেই দৌড়তে দৌড়তে আকাশে উড়ে গেল।

“আমি চললাম। আবার দেখা হবে।”

উড়তে উড়তে হাসিমারা পেরিয়ে জয়গাঁ বর্ডার দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করল। কিছুদূর যাবার পর পাহাড়ের উপর বৌদ্ধদের মন্দির গুম্ফাতে অবতরণ করল। ওখানে কতগুলো ওর মত বয়সি ছেলে খয়েরি রঙের একটা লম্বা পোশাক পরে খেলাধুলা করছিল। সুমিত জানত, এদের লামা বলে। ওদেরকে খেপানোর জন্য বলল, “লামা! গায়ে লাল জামা।”

ওরা এসে সুমিতকে ধরে ফেলল, তারপর বৌদ্ধমন্দিরে একজন বৃদ্ধ লামার কাছে নিয়ে গেল। উনি তখন বুদ্ধের মূর্তির সামনে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। চেঁচামেচি শুনে ওনার ধ্যান ভাঙল। উনি সুমিতের হাত ধরে ভুটানি ভাষায় কী জিজ্ঞেস করলেন, সুমিত বুঝতে পারল না। ও শুধু বলল, “আমি বাঙালি। উড়তে উড়তে এখানে চলে এসেছি।”

বৃদ্ধ লামা বাংলা জানতেন। উনি সুমিতের পিঠে ডানা দেখতে পেলেন। মনে মনে ভাবলেন, এই ছেলে যেখানে সেখানে উড়ে বেড়ালে ভুটান পুলিশের নজরে এলে অ্যারেস্ট করতে পারে। ভুটান সরকার খুব কড়া।

তাই সুমিতকে বললেন, “তুমি এখানে থাকবে?”

এখানে আসার পর থেকে পাহাড়ের শান্ত, মনোরম গাছপালাযুক্ত পরিবেশে সুমিতের খুব ভালো লেগেছিল। তার উপর ভাবল, অনেকগুলো নতুন বন্ধুর সাথে খেলাধুলা করা যাবে। তাই বলল, “হ্যাঁ, আমি এখানে থাকব।”

বৃদ্ধ লামা তখন বললেন, “এখানে থাকতে হলে তোমাকে এখানকার নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা প্রার্থনা করতে হবে। মন্দির প্রাঙ্গন সাফসাফাইয়ের কাজ করতে হবে। বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে। ত্রিপিটক পাঠ করতে হবে। আর যেখানে সেখানে উড়ে বেরানো চলবে না। কি রাজি তো?।”  

বৃদ্ধ লামা বাচ্চা লামাদের ভুটানি ভাষায় কী বলল, ওরা সুমিতকে নিয়ে গিয়ে একটা থাকার ঘর দেখিয়ে দিল। ক’দিন ওখানে থাকার পর বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে আর বুদ্ধের অর্ধ চক্ষু নিমীলিত মূর্তির সামনে বসে প্রার্থনা করার পর ওর মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এল। আগের চঞ্চল দুরন্ত ছেলেটা এক ধীরস্থির ছেলেতে পরিণত হল। বৃদ্ধ লামা গাছগাছড়া সংক্রান্ত অনেক ওষুধপত্র জানতেন। উনি বিভিন্ন জংলি গাছের শিকর বাকর বেটে এক ধরনের লেই তৈরি করেছিলেন। রোজ বিকেলবেলা সুমিতের পিঠে সেই লেইয়ের প্রলেপ লাগাতেন। ক’দিন লাগানোর পর সুমিতের পিঠ থেকে ডানা গেল খসে। কিন্তু তাতে সুমিতের কোন আক্ষেপ রইল না। সে আর আগের মত দুরন্ত নেই। সে ভগবান বুদ্ধের শরণে এসে এক অদ্ভুত মানসিক শান্তি অনুভব করল।

একদিন সকালবেলা উঠে শোনে, পাশেই পাহাড়ে সিনেমার শুটিং হচ্ছে। ওখানে মাঝেমাঝেই নায়কনায়িকারা শুটিং করতে আসে। সুমিতের শুটিং দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। বন্ধুদের সাথে গিয়ে দেখে ওখানে সালমান খান “বাপি বাড়ি যা (পার্ট-২)” য়ের শুটিং করতে এসেছে।  সালমান খানের অভিনয় দেখে সুমিতের বাড়ির কথা মনে পড়ল। মায়ের কথা মনে পড়ল। কতদিন মায়ের হাতে ভাত খায়নি। মা কতদিন আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নি। সুমিত ওখানেই কাঁদতে আরম্ভ করল। সুমিতের কান্না দেখে সালমান খান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “তু রো কিঁউ রাহা হ্যায় মুন্না?”

“আমি বাড়ি যাব।”

সালমান খান একটু আধটু বাংলা জানতেন।

“বাড়ি যাব মতলব ঘর জায়েগা?”

“হ্যাঁ”

“তু রো মত মুন্না, ম্যায় তুঝে ঘর পঁহুছাকে রহুঙ্গা।”

সলমান খান তাঁর শুটিং ইউনিটের লোকজনকে ডেকে বললেন, “আজ কে লিয়ে শুটিং প্যাক-আপ। ম্যায় ইস লড়কে কো ঘর ছোড়নে যা রাহা হুঁ।”

“তেরা ঘর কাহাঁ পড়তা হ্যায় মুন্না?”

“কুচবিহার”

“মেরা হেলিকপ্টার বুলাও”

সালমান খান সুমিতকে হেলিকপ্টারে নিয়ে চললেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ওরা কুচবিহার এয়ারপোর্টে এসে নামলেন। কুচবিহার বিমানবন্দরে বর্তমানে বিমান চলাচল করে না। অনেকটাই ফাঁকা, নিরিবিলি জায়গা। তবু সালমান খানকে দেখামাত্র কোত্থেকে সব লোকজন এসে অটোগ্রাফ নেবার জন্য ভিড় করল। সুমিতের বাড়ি ছিল এয়ারপোর্টের খুব কাছে। সুমিত সল্লুভাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাল। সল্লুভাই সুমিতকে নামিয়ে দিয়ে টাটা করতে করতে হেলিকপ্টারে চলে গেলেন। সুমিত এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি চলে এল। সুমিতের বাবা-মা এতদিন ওকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন, কিন্তু কোথাও পাননি। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। ছেলেকে ফিরে পেয়ে তাঁদের চোখে আনন্দাশ্রু বইতে লাগল। 

অলঙ্করণঃ শিমূল

জয়ঢাকের সমস্ত গল্পের লাইব্রেরি এই লিংকে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s