গল্প রন্টির হোমওয়ার্ক খাতা সপ্তর্ষি মাজি শরৎ ২০১৮

রন্টির হোমওয়ার্ক খাতা

সপ্তর্ষি মাজি

অনেকক্ষণ ধরে ভেবেও কোনও কূলকিনারা পেল না রন্টি। দিব্যি তো কাল রাতে ম্যাথসের হোমওয়ার্কগুলো সব কমপ্লিট করেছিল। সকালবেলায় মনে করে ঠিক খাতাই ব্যাগে ঢুকিয়েছিল। তাহলে এগুলো এল কোথা থেকে তার ম্যাথসের খাতায়! আর ম্যাথস টিচার যা রাগী, ভাবলেই কান্না পায়। তাও সে বেঁচে যায় যদি তাকে বেঞ্চে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়। কিন্তু একবার যদি মেয়েদের সাথে বসিয়ে দেয় তাহলেই কেস জন্ডিস। সে যে মেয়ে হয়ে যাবে! আর তাকে কেউ খেলতে নেবে না।

শুধু কি তাই! ক্লাস শেষ হলে মিস গিয়ে নানিদিদিকে বলে দেবে। আর নানিদিদিটাও খুব পাজি। রসিয়ে রসিয়ে মাকে সব বলে। এই সেদিন অপর্ণার জামায় তরকারি লেগে গিয়েছিল। রন্টি জলের বোতল নিয়ে গিয়েছিল ধুয়ে দেবে বলে। অসাবধানে একটু বেশিই জল পড়ে গিয়েছিল অপর্ণার জামায়। এইজন্যই বলে কারোর উপকার করতে নেই। স্কুলে শাস্তি তো পেলই, উলটে গার্জেন কল হল। আর নানিদিদিও মাকে বলে বেড়ালো, সে নাকি অপর্ণাকে স্নান করিয়ে দিয়েছে। ভাবো একবার, তার ন’মাসের বোনেরই স্নান করতে এক বালতি জল লাগে। এক বোতল জলে কেউ স্নান করতে পারে নাকি!

আর মা’টাও হয়েছে তেমনি। একচোট পিটুনি তো খাবেই আর ওয়েট করে থাকতে হবে আরেক চোটের জন্য কখন বাবা অফিস থেকে আসবে। সেদিন যেমন। বৃষ্টি হয়ে রাস্তায় জল জমে গিয়েছিল একটা জায়গায়। কতকগুলো পিঁপড়ে জল পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছিল না। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।’ হাতের কাছে কিছু না পেয়ে তাই টিফিনের কলার খোসাটা জলের উপর রেখে এসেছিল রন্টি। তাতে যদি দারোয়ানকাকু আছাড় খেয়ে পড়ে তাতে কি তার দোষ! দারোয়ানকাকু একটু দেখে চলতে পারে না! আর বাবা অফিস থেকে ফিরতে না ফিরতেই সেগুলো বলতে হবে! বাবাকেও একটু শান্তিতে থাকতে দিল না তার মা।

ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ল দিন কয়েক আগের কথা। সানুকে বাড়িতে ডেকে সে বোঝাচ্ছিল ভূত বলে কিছু হয় না। সেদিন রাতেই জি-বাংলার ভুতু স্বপ্নে দেখা দিয়ে বারণ করেছিল এসব বলতে। কিন্তু রন্টি শুনলে তো! এখন বুঝতে পারছে এসব ভুতুরই কান্ড।

ভুতুটাও বজ্জাতের হাড্ডি। যদি সে আছে সেটা বোঝানোর দরকার হত তাহলে দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দিতেই পারত। সেও ভুতুর সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে হিস্ট্রিস্যারের কালো চুলদাড়ি সব সাদা করে দিত এক্কেবারে। আরও ভালো হত পড়াশুনাই বন্ধ করে দিত। কিন্তু তা না। হোমওয়ার্কের খাতা নিয়েই যত ঝামেলা করতে হল! তাও করবি কর ম্যাথস টিচারের খাতায়!

কিন্তু কী আর করা যাবে। ক্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখল আর ঠিক এক বেঞ্চ পরেই তার ডাক পড়বে। ভয়ে তার বুকে দ্রিম দ্রিম বাজতে শুরু করে দিয়েছে এতক্ষণে।

কিছুক্ষণ পরে আর থাকতে না পেরে নিজেই কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে পড়ল রন্টি। ম্যাম থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে, সৌনক?”

“হোমওয়ার্ক।” ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল রন্টি।

“হোমওয়ার্ক করনি?”

“করেছিলাম।”

“তাহলে?”

“বাঘ-সিংহ খেয়ে নিয়েছে।”

“খেয়ে নিয়েছে!”

“লোকজন সব জঙ্গল কেটে দিচ্ছে। বাঘ-সিংহ কোনও খাবার পাচ্ছে না। তাই শেষে আমার হোমওয়ার্ক সব খেয়ে নিয়েছে।”

“তাই নাকি?” চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করলেন ম্যাথস টিচার।

“হ্যাঁ, মিস। এখনও আমার খাতাতেই বসে আছে ওরা।” এই বলে ব্যাগ থেকে হোমওয়ার্কের খাতাটা বের করল রন্টি।

অলঙ্করণঃ মৌসুমী

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s