চুমকি চট্টোপাধ্যায়
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। হাতে অঢেল সময়। অর্চিত আর আমি দু-চারদিনের জন্যে কোথাও বেড়িয়ে আসা যায় কিনা তার প্ল্যান প্রোগ্রাম করছি ওর ঘরে বসে।
“ওই দিঘা, পুরী, দার্জিলিং যাবনা বুঝলি। একটু অফবিট জায়গার কথা ভাব,” আমি বললাম।
“ঠিক বলেছিস,” অর্চিত সায় দিল, “একটা জায়গা আছে, জানিস বিতান। জায়গাটা মোটেই কোনো টুরিস্ট স্পট নয়। নেহাতই গ্রাম। অন্তত আগে তাই ছিল। এখন অবশ্য জানিনা। উন্নতি হয়েছে হয়ত অনেক। আসলে হঠাৎ মনে পড়ে গেল।
“গ্রামটার নাম গড়মানিকপুর। একসময় আমার বড়মামা কিছুদিন ওই গ্রামে ছিলেন। তুই তো জানিস, উনি ছিলেন আর্কিওলজিস্ট। ওই অঞ্চলে কাজ করেছিলেন বছরদুয়েক। সেই সময় একবার বাবামায়ের সঙ্গে গেছিলাম। তিন চারদিন ছিলাম। যদিও আমি তখন বেশ ছোটো, কিন্তু আমার মনে একটা ছাপ ফেলেছিল জায়গাটা। বিশেষ করে বাড়িটা।
“জানিস বিতান, যে বাড়িটা অফিস থেকে ঠিক করে দিয়েছিল বড়মামাকে থাকার জন্যে,সেটা ছিল এক সময়ের জমিদার বাড়ি। পেল্লায় বাড়ি। মামা থাকতেন একতলায় দুটো ঘর নিয়ে।আরও অনেক ঘর তালাবন্ধ দেখেছিলাম।
“দোতলা বাড়ি ছিল। কিন্তু আমাকে কোনদিন দোতলায় উঠতে দেননি মামা। দোতলায় নাকি একটা গুমঘর ছিল যেখানে প্রচুর মানুষকে ঢুকিয়ে অত্যাচার করতেন জমিদার শুদ্ধ ভক্ত। খুবই অত্যাচারী জমিদার ছিলেন।
“যাবি ওখানে? জানি না অবশ্য সেই বাড়ি এখনো টিকে আছে কিনা। তবে যদি থাকে,এবার গেলে সেই গুমঘর দেখবই দেখব। আমার প্রচণ্ড কৌতূহল সেই তখন থেকে।”
“শুনে তো আমারও খুব কৌতূহল হচ্ছে। কিন্তু বাড়িটা যদি এখনও থেকে থাকে, আমাদের মতো অচেনা দুটো ছেলেকে ওই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা কেন ঢুকতে দেবে বলত?”
“সে ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলব। আমি কনফিডেন্ট। তুই যেতে রাজি কি না, শুধু বল।”
*******
গড়মানিকপুর বাস স্টপে যখন নামলাম তখন দুপুর দুটো ষোলো। জব্বর খিদে পেয়েছে দুজনেরই। অর্চিত বলল, “একী রে, এই বাজার এলাকাটা বেশ জমজমাট হয়ে গেছে তো! আগে যখন এসেছিলাম মোটেই এরকম ছিলনা। যদ্দূর মনে পড়ছে, চার- পাঁচটা খড়ের ছাউনির দোকান ছিল । সাইকেল সারাবার দোকান ছিল তার মধ্যে একটা। বড়মামা একদিন আমাকে নিয়ে টায়ারে হাওয়া ভরাতে এসেছিলেন মনে আছে। মামা সাইকেলই বেশি ব্যবহার করতেন। বলতেন, ‘একমাত্র এই বিস্ময়কর যানটিতেই সর্বত্র সেঁধিয়ে যাওয়া যায়!’
“এখন দেখ। কেমন শহুরে পরিবেশ। গাদা গাদা দোকান। রোল, চাউমিন, মোবাইল রিচার্জের দোকান… কী নেই! ধুর, ভালো লাগছেনা । গ্রামগুলো যদি সব শহর হয়ে যায়, তাহলে গ্রামের নিজস্ব ফ্লেভার হারিয়ে যাবে রে! এরপর ছবিতেই ‘ গ্রাম ‘ দেখতে হবে!”
অর্চিতের বিন্দুমাত্র পছন্দ হয়নি গড়মানিকপুর বাজার এলাকার এই উন্নতি। আসলে ওর মনে সেই পুরনো গড়মানিকপুরের সবুজ গ্রাম্য ছবিটা রয়ে গেছে। বললাম, “কী বলছিস রে, উন্নতিই তো সভ্যতার বিকাশের মাপকাঠি। শুধু শহরেই উন্নতি হবে? গ্রাম সেই প্রিমিটিভই থাকবে? গ্রামের মানুষ সুযোগ সুবিধে থেকে বঞ্চিত থাকবে আর আর আমরা ম্যাগনাম হাতে আইনক্সে সিনেমা দেখব? তাই চাস তুই?”
“অ্যাই! মেলা ফ্যাচর ফ্যাচর করিস না তো! খুব জ্ঞান ঝাড়ছিস না? পরে তোর এই কথাগুলোর উত্তর দেব। এখন চল, কিছু খেয়ে নি।”
তাজ হোটেলে আমরা ভাত,ডাল, আলুভাজা আর পার্শে মাছের ঝাল খেলাম তৃপ্তি করে। ও হ্যাঁ, টমেটোর চাটনিও ছিল। খেয়ে দেয়ে তাজ হোটেলের ক্যাশে যিনি বসেছিলেন তাকে অর্চিত জিগ্যেস করল, “আচ্ছা, এখান থেকে মাইল আটেক ভেতরে একটা জমিদার বাড়ি ছিল। ওই অঞ্চলটার নাম সম্ভবত ভক্তগঞ্জ। জমিদার শুদ্ধ ভক্তর বাড়ি। এখনও আছে কি না বলতে পারেন?”
“আজ্ঞে, আছে বৈকি। একদিকের অংশ ভেঙেচুরে গেছে তবে বেশিটাই ঠিকঠাক আছে। তা, বাবুরা অইখেনে যাবেন নাকি?”
অর্চিত ঘাড় নাড়ল।একটু অবাক হলেন ভদ্রলোক। ওই বাড়িতে যাবার লোক বড় একটা আসে না তো! এক ভ্যানওয়ালা কে ডেকে আমাদের পৌঁছে দিতে বললেন।
তাজউদ্দিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে রওনা দিলাম আমরা। হ্যাঁ,তাজউদ্দিনই তাজ হোটেলের মালিক।
********
যেতে যেতে আলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আলি আমাদের ভ্যান চালক। জমিদার বাড়িতে এখনও ভক্ত বংশেরই একটা পরিবার থাকে। তবে বাড়ির অবস্থা মোটেই সুবিধের নয়।
রাস্তা বেশ ভালো হয়ে গেছে । উন্নতির আর এক চিহ্ন। রাস্তার দুপাশে এখনও পর্যাপ্ত গাছপালা। পাঁচটার একটু আগেই পৌঁছে গেছি আমাদের গন্তব্যে। শুদ্ধ ভক্তের জমিদার বাড়ি।
বড়মামা যেভাবে বলে দিয়েছিলেন সেভাবেই ভক্ত বংশের বর্তমান বংশধরদের সঙ্গে কথা বললাম। প্রথমে একটু তো আপত্তি আসবেই। একেবারে অচেনা দুটো ছেলেকে বাড়িতে থাকতে দিতে সহজে কেউ রাজি হয়! নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়ে, লাখ লাখ কথা বলে অবশেষে অনুমতি পাওয়া গেল।
“আমাদের ওপরতলাতেও থাকতে দিতে পারেন। অসুবিধে নেই।”
“না,না। ওপরের ঘরগুলো বহুবছর ব্যবহার হয়না। চূড়ান্ত নোংরা হয়ে পড়ে আছে,” বললেন বাড়ির গিন্নি, বাণীজেঠিমা।
“সে নিয়ে একদম ভাববেন না। আমরা সাফসুতরো করে নেব।”
অর্চিত আর আমার অতি উৎসাহ দেখে শেষে তাঁরা নিমরাজি হলেন। আমাদের আসার উদ্দেশ্য আগেই বলেছি আমরা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডান দিকের ঘরটা খুলে দেয়া হল আমাদের। বাড়িটা এল প্যাটার্নের। বাঁদিকের হাতার শেষ প্রান্তে চারটে সিঁড়ি উঠে সেই গুমঘর।
*******
পরের দিন ভোর ভোর উঠে পড়েছি । মাথায় গুমঘর ঘুরলে কি আর ঘুম হয়! চোখে মুখে জল দিয়েই সোজা গুমঘর। এ বাড়ির কর্তা শিবনন্দনবাবু বার বার করে বলে দিয়েছিলেন, “দেখবে ঠিক আছে। কিন্তু কিচ্ছুতে হাত দেবে না।”
গুমঘরের দরজাটা ছোট মাপের জানলার মত। বা বলা ভালো, ওটা ছোট মাপের জানলাই। শিক বা গ্রিল কিছু নেই বলে দরজা মনে হয়েছিল। ঠেলা দিতেই ক্যাঁচ শব্দে খানিক ফাঁক হল। ভেতরে নিকষ অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। আমরা দুজনেই মোবাইল অন করে আলো ফেললাম। সে আলোতে অস্পষ্ট কিছু হাড়গোড় দেখা গেল। ওইটুকুতেই গা শিউরে উঠেছে। অর্চিত একবার বলল, “নামব নীচে? কী বলিস?”
আমি অর্চিতের শার্ট খামচে ধরে বললাম, “খবরদার না! দেখেছিস মেঝে কতটা নীচে? আলোই পৌঁছচ্ছেনা। লাফিয়ে নেমে পড়লেও উঠতে পারবিনা।” অর্চিত বুঝল। কিন্তু আমরা যারপরনাই হতাশ হয়েছি। কতকিছু রহস্য আশা করেছিলাম । ওই হাড়গোড় ছাড়া তেমন কিছু নেই।
লম্বা করিডর ধরে হেঁটে ফিরছি, হঠাৎ চোখ পড়ল একটা ঘর তালাবন্ধ। কিন্তু পাল্লা দুটো ফাঁক হয়ে আছে। ঘরের মধ্যে কোনো জানলা খোলা থাকার কারণে বা ঘুলঘুলির আলোতেই হোক ভেতরটা আবছা হলেও দেখা যাচ্ছিল। দুজনেই পাল্লা ফাঁক করে উঁকি মারলাম।
“অ্যাই বিতান! দ্যাখ, দ্যাখ, কী যেন একটা ঢাকা দেয়া রয়েছে মেঝেতে। ছোট বাচ্চার মতো লাগছে।”
“হ্যাঁ রে, দেখেছি। কী, তা কে জানে।”
“তুই এখানে দাঁড়া, আমি আসছি।”
খানিক বাদে অর্চিত তার মিনি টুল কিট নিয়ে হাজির হল। ওর ব্যাকপ্যাকে সবসময় এটা থাকে। একটা ছোট্ট স্ক্রু ড্রাইভার মতো বের করে তালায় ঢুকিয়ে এদিক ওদিক করতেই তালাটা খুলে গেল। সন্তর্পণে ঘরে ঢুকে পড়লাম।
খাট, আলমারি, আলনা, চেয়ার…অনেক কিছুই আছে ঘরে। সবই কাঠের। ধুলোতে মাখামাখি। শুধু মেঝেতে রাখা বস্তুটাই ঢাকা দেওয়া।
হাত দেব কি দেব না করতে করতে অর্চিত ঢাকাটা সরিয়ে ফেলল। কাঠের অপূর্ব কারুকাজ করা একহাত মাপের একটা ঘড়ি। ওপরের দিকটা রাজমুকুটের মতো । মাঝখানে বড় সাইজের একটা লাল পাথর বসানো।
“কী দারুণ দেখতে রে ঘড়িটা! চল, এটাকে নিয়ে যাই,” অর্চিত বলল।
“ধ্যাৎ! মাথা খারাপ নাকি? অন্যের জিনিস এভাবে নেওয়া যায়?”
“আমি যদি কিনে নিই, তাহলে?”
“কী আশ্চর্য! তোমাদের বারণ করা সত্ত্বেও তোমরা না বলে ঘরে ঢুকেছ এবং ঘরের জিনিসে হাত দিয়েছ? আমি থানায় জানালে তোমাদের হাজতবাস হবে সেটা জানো?” হঠাৎ পেছন থেকে রাগত গলার আওয়াজটা আসতে আমরা চমকে উঠে ঘুরে তাকালাম। শিবনন্দনবাবু সেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন।
“জানি জেঠু, আমরা অন্যায় করেছি। কিন্তু এমন একটা চুম্বকের মতো টানছিল, যে না ঢুকে পারিনি,” অর্চিত মাথা নীচু করে বলল।
“হবেই তো! ওটা শয়তান ঘড়ি। আমার ঠাকুরদার বাবা ছিলেন জমিদার শুদ্ধ ভক্ত। তিনি এক কারিগরকে দিয়ে ওই ঘড়ির ফ্রেমটা তৈরি করিয়েছিলেন। আর মূল ঘড়িটা আনিয়েছিলেন নেপাল থেকে। ফ্রেমের মাথায় ওই লাল পাথরটা চুনি। কিন্তু ঘড়িটা অশুভ। ঠিক চলতে চলতে হঠাৎ- হঠাৎ কাঁটাদুটো উল্টোদিকে ঘুরত। আর তখনই পরিবারে কারো না কারো মৃত্যু নেমে আসত। তাই ওটাকে ওইভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। দম পড়ে না বলে চলেও না।”
“আচ্ছা, হতেও তো পারে জ্যেঠু, ওই মৃত্যুগুলো এমনিতেই হত। হয়ত ঘড়ির দম কমে গেলে কাঁটা উল্টোদিকে ঘুরত। তার সঙ্গে মারা যাবার আদৌ কোন সম্পর্ক ছিলনা?” আমি জিগ্যেস করলাম।
“প্রথম প্রথম তাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, পুরো দম থাকা সত্ত্ব্ব্বেও কাঁটা উলটো দিকে ঘুরছে এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে পরিবারে। ওই ঘড়ি মৃত্যুর আগাম খবর দিত। মৃত্যু ঠেকানো যায় না একথা ঠিক। কিন্তু আগেভাগে জেনে ‘এবার কার পালা’ ভেবে আধমরা হয়ে থাকার কোন মানে হয় কী? তোমরাই বল?
একটু চুপ করে থেকে অর্চিত বলল, “জেঠু, একটা কথা বলব?”
অর্চিতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন শিবনন্দন ভক্ত।
“বলছিলাম কী, ঘড়িটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে দেখব ভেতরের কলকব্জাতে কোন গলদ আছে কিনা? আমার আবার এসবে খুব ইন্টারেস্ট। বিতান জানে। বাড়িতে কোন যন্ত্রপাতি খারাপ হলে প্রথমেই আমার ডাক পড়ে। আমি ফেল করলে তারপর ওয়ার্কশপে যায়।”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শিবনন্দনবাবু বলেন, “দেখতে চাইছ, দ্যাখো। আমার কিন্তু একেবারেই ইচ্ছে নয় ওটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি হোক। নতুন করে কোন অশান্তি, বিপদ আর চাই না।”
********
অর্চিত খাটে ঘড়ির পার্টস ছড়িয়ে কাজ করছে। আমি জানলা দিয়ে দেখছিলাম এই বাড়িটার পেছন দিকে বুনো ফুল আর আগাছার জঙ্গল। প্রচুর কচু গাছ। তারই মধ্যে একটা হাসনুহানা ফুলের গাছ ঝলমল করছে। বিকেলের আলো মরে আসছে। একটু পরেই সন্ধে নামবে। আজকের রাতটা কাটলেই কাল আবার কলকাতা পাড়ি।
“বুঝলি বিতু, মনে হয় ঠিক করতে পেরেছি । নীচে গিয়ে বাণীজেঠিমার কাছ থেকে একটু নারকোল তেল নিয়ে আয় তো। কাঁটাগুলো একদম জ্যাম হয়ে গেছে।”
খানিক বাদে তেলটেল দিয়ে চালু করে ঘড়িটা টেবিলের ওপর রেখে গর্বের হাসি হাসল অর্চিত, “স্মুদলি চলছে দ্যাখ। কী সুন্দর লাগছে। কাঁটা দুটো মনে হয় রূপোর তৈরি।”
আমি তাকালাম। বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। মাঝখানের ওই লাল চুনিটা ঠিক রক্তচক্ষুর মতো জ্বলজ্বল করছে।
*********
খেয়ে দেয়ে ফের ঘরে ঢুকে পড়েছি। রাত ন’টা বেজে গেছে। ঘরে ঢুকতেই ধ্বক করে বাসমতি আতপ চালের মতো একটা গন্ধ নাকে লাগল। অর্চিত টেবিলের সামনে গিয়ে ঘড়িটার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে।
আমি ওর দৃষ্টি ফলো করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই গায়ে কাঁটা দিল। ঘড়ির কাঁটা দুটো উলটো দিকে ঘুরছে খুব… খুব আস্তে।
“অর্চিত, ঘড়িটাকে যেখানে ছিল সেখানে রেখে আসি চল। আমার একদম ভালো লাগছে না।”
অর্চিতও ঘাবড়ে গেছে। খুটখাট করছে তখনও।
আচমকা আমার চোখ চলে গেল জঙ্গলের দিকের জানালাটায়। এ কী! সাপ! সরসর করে ঢুকে আসছে কালো কুচকুচে একটা সাপ! তার লক্ষ্য অর্চিত। কিছুক্ষণের জন্যে দুজনেরই হাত-পা অসাড়। সাপকে আমি অসম্ভব ভয় পাই। কিন্তু কিন্তু… আটকাতে হবে ওটাকে…
“অর্চিত! অর্চিত!…সাবধান!”
আমার কথায় অর্চিত ঘুরেই দেখতে পায় সাপটাকে। ততক্ষণে আমি দরজার পাশে দাঁড় করানো লোহার খিলটা হাতে তুলে নিয়েছি।
সাপটার অর্ধেকটা মেঝেতে। বাকিটা দেওয়ালে। ঠিক পাঁচ- ছ হাত দূরেই স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে অর্চিত। খিলটা মাথার ওপর তুলে প্রাণপণে মারলাম সাপটার মাথা লক্ষ করে। আঘাতটা পড়ল সাপটার গলার কাছে। মুণ্ডুটা ধড় থেকে আলাদা হয়ে ছিটকে গিয়ে পড়ল অর্চিতের বাঁ পায়ের পাতায়। পাতায় দুটো দাঁত ফুটে গেল।
*******
অর্চিত এখন কলকাতার নার্সিং হোমে। আপাতত লাইফ রিস্ক নেই। তবে খুবই ক্রিটিকাল অবস্থা গেছে। ডাক্তার বলেছে, কেউটে সাপের বিষ । কেউটের শরীর থেকে নাকি বাসমতি আতপের গন্ধ বেরোয়।
আসার আগে আমি ঘড়িটা মাটিতে আছড়ে ভেঙে দিয়ে এসেছি।
অলংকরণঃ ইন্দ্রশেখর
Darun laglo PORE!!!
LikeLike
দারুণ
LikeLike