শাশ্বতী চন্দের “টুপুরের পুষ্যিরা”
প্রকাশকঃ অরণ্যমন, প্রকাশঃ বইমেলা, ২০১৮
আলোচনা করলেন মৌসুমী রায়
বইটিতে লেখিকার দশটি গল্প এবং সৈকত মুখোপাধ্যায়ের লেখা একটি চমৎকার “প্রসঙ্গকথা” রয়েছে।
বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনো শিশু বা কিশোর। ঘটনাগুলো তাদের চোখেই দেখা। তাই ছোটদের জন্য এ বই তো বটেই, কিন্তু বড়দের জন্যও শিক্ষণীয়। বড়দের মধ্যেও এক শিশু-কিশোর বেঁচে থাকে। যে কখনো কখনো হারিয়ে যায়। সেই সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে এই বই সাহায্য করতে পারে।
গল্পগুলো নরম মানবিকতায় ভরা।তাতে মানুষ,প্রকৃতি,প্রকৃতির সব জীবদের ভালোবেসে,একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে আনন্দে বেঁচে থাকার গল্প।অনেক গল্পেই কেন্দ্রে আছেন এক “স্বপ্নের মধুরা দিদিমনি”। দিদিমণির মধুর স্বভাবের গুণে তিনি শিশুমনে ভাল কিছু করার ও ভাবার বীজমন্ত্র বুনে দেন।গাছপালাকে ভালোবাসার একটি সুন্দর গল্প,”মৃত্যুঞ্জয় মালি”,যে বাগানের মায়া ছাড়তে পারে না কোনো দিন।ছোটখাটো জিনিষ থেকে অপার আনন্দ পাবার গল্প “বেড়িয়ে আসা”।মন ভাল করে দেয় “দুই শালিখের গল্প” ( এটা শিক্ষকদের বেশি পড়া দরকার)।আর বড় গল্প “টুপুরের পুষ্যিরা” তো সবাইকে নিয়ে জড়িয়েমড়িয়ে বেঁচে থাকার গল্প।বইটি পড়া শেষ হলে মনটা ভাল হয়ে যায়।
বইটির প্রচ্ছদ ও অলংকরণ সুন্দর। ছাপানো ও বাঁধাই যত্নযুক্ত। সামান্য দু-একটি ছাপার ভুল চোখে পড়েছে।তবে লেখাগুলো কোথায়, কোন পত্রিকায় ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে,তার উল্লেখ থাকলে ভাল লাগত। আর লেখিকা যেহেতু উত্তরবঙ্গের মানুষ,তাই আশা করব তাঁর পরের গল্পগুলোতে উত্তরবঙ্গের মায়াবী প্রকৃতি ও মানুষজনের যেন আরো বর্ণনা থাকে।
বইটি সংগ্রহে রাখার মত বা অন্যদের উপহার দেবার মতন। শেষ করি সৈকত মুখোপাধ্যায়ের চমৎকার প্রসঙ্গকথার দুটি বাক্য দিয়ে, “যে ছেলেটা বা মেয়েটা এই বইটা পড়ে ফেলবে,আমার দৃঢ় বিশ্বাস ,সারা জীবনে সে আর অন্ধকার দেখে ভয় পাবে না। সে নিজে তো অন্ধকার পেরিয়ে যাবেই,আরো দশজনের হাত ধরে তাদেরও পার করে দেবে।”