১। গল্পপাড়ার বন্ধুরা
অনসূয়া খাসনবীশ । প্রকাশক: হ য ব র ল । প্রচ্ছদ: সুমিত রায় , অলংকরণ: অনসূয়া খাসনবীশ। দামঃ ১৬০ টাকা
বইমেলা থেকে ছোটদের যত বই এসেছে, এই বইখানি রেখেছিলাম কোনোরকমে উল্টেপাল্টে দেখার জন্য। প্রচ্ছদ বা বাঁধাই দেখে বইটির প্রতি আকর্ষণ হচ্ছিল না। পরে খুলতেই দেখলাম এ তো অসাধারণ! নরম রঙিন সব ছবি, দারুণ ছাপা, ছোট ছোট বিচিত্র সব গল্প।গল্পের অনেক বিষয় বিশিষ্ট কিছু নয়, অথচ ঝরঝরে ভাষায় লেখা তরতরে মায়াবি গল্প। অধিকাংশ গল্পই মন কেড়ে নেয়।
তাদের ব্যাখ্যা দিলে তাদের খাটো করা হবে।তাই নিচে দুটি গল্প থেকে তুলে ধরছি অনসূয়ার ইন্দ্রজাল।
বুড়ো হাসে, তারপর বলে, “শেকড় কি কেবল গাছের থাকে লালাজি? শেকড় থাকে আমাদের সবার মনে। সেই শেকড়ের সঙ্গে বেঁধে থাকে আমাদের বন্ধুরা। …যখন তোমার কাছে কেউ থাকবে না, এই শেকড় তোমায় পুরানো বন্ধুদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।” এই গল্পটা জয়ঢাকে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম। এই লিঙ্কে তাকে পড়ে নিতে পারো।–লালাজির গল্প
“দুধে জ্বাল দিতে দিতে জগা ভাবতে বসল, এইটুকু দুধে সে কী করে মিষ্টি বানাবে ! সামনে অনেক ফুল ফুটেছিল রঙিন, সুন্দর। ফল ফলেছিল রস টুসটুসে।জগার মাথায় একটা বুদ্ধি এল। ছানার সঙ্গে ফুলের রঙ মেশাল, ফলের রস মেশাল। এক থালা মিষ্টি তৈরি করল, সবক’টা আলাদা আলাদা।…অতিথিরা রঙিন মিষ্টি দেখে খুব আনন্দ পেল। … সবাই সব চেটেপুটে খেল। …রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “এ মিষ্টি কে বানিয়েছে ?” পেয়াদা বলল, “জগা ময়রা বানিয়েছে।” রাজা জগাকে ডেকে পাঠালেন। পাড়ার লোক মুখ টিপে হাসল, ভাবল, এবার শাস্তি পাবে। কিন্তু রাজা জগাকে পুরস্কার দিলেন। (জগা ময়রা)
খুব সুন্দর মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন শ্রী বিমোচন ভট্টাচার্য। তাই তাঁর ভাষাতেই বলি, নিজের বাড়ির বাচ্চাদের জন্য কিনুন এই বইটি। …দেখবেন ওরা আনন্দ পাবে। আনন্দ পাবেন আপনিও।
–মৌসুমী রায়
২। বুধু পারুই
শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য। প্রকাশক: আলোকবর্ষ ও সুচেতনা যৌথ প্রয়াস। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: শিবশংকর ভট্টাচার্য। দাম ১৫০ টাকা। ই-যোগাযোগঃ Suchetanapublication
সাতখানা গল্প নয় তো যাদু তুলিতে আঁকা সাতখানি ছবি। অথবা একটা সাতরঙা রামধনু ! যে শৈলীতে অবন ঠাকুর ছবি লিখতেন, যে বিষয়বস্তু ও কল্পনার জগতকে নিয়ে আমাদের বাংলাভাষায় দিকপাল শিশুসাহিত্যিকরা লিখে গেছেন সে ধারাটির পথে নিজস্বতার ঝর্ণা দিয়ে পুষ্ট করে লিখে গেছেন লেখক।
সব গল্পের পটভূমি প্রকৃতি। কখনো অরণ্য, কখনো গ্রাম। সাধারণ মানুষ, আদিবাসী সমাজ, গাছপালা, পাখি, জন্তুজানোয়ার, মিথ নিয়ে এক আশ্চর্য ভঙ্গিতে গল্প লিখেছেন।গল্পের শেষে থাকে কখনো ধাঁধা, কখনো আশ্বাস আর মানবতার জয়, ভালবাসার জয়।
সঙ্গে এ বই থেকে একটা ছোট্ট অংশ তুলে দেবার লোভ সামলানো গেল না।
“বড়ো বড়ো কেন্দু,শাল,সেগুন,আকাশমণি আর মহুয়া গাছের তলায় মানুষ সমান ঝোপ। মাথার ওপরকার সবুজ চাঁদোয়া ভেদ করে খুচরো পয়সার মতো টুকরো রোদ এখানে ওখানে ছড়িয়ে। কোথাও জমাট অন্ধকার বুনো গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে।পাকা রাস্তা ছেড়ে বনের পথ ধরেছি অনেকক্ষণ…দমরু গান ধরেছে , “ও ননী বিহারীপানি কায়মন তোর কলা”। আমরা সবাই সেই গান শুনতে শুনতে যেন বনের পথ দিয়ে চলেছি…”
–মৌসুমী রায়
৩। দুরন্ত ঈশান
অদিতি ভট্টাচার্য। প্রকাশক: আলোকবর্ষ ও সুচেতনা যৌথ প্রয়াস। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: চিরঞ্জিত সামন্ত। দামঃ ১৫০ টাকা। ই-যোগাযোগঃ Suchetanapublication
অদিতি অবনীন্দ্রনাথে মোহাচ্ছন্ন। লেখাতে তারই সুন্দর ছাপ। বইটির নির্মাতাও সম্ভবত তাই। কারণ প্রোডাকশানেও সিগটের সিগনেচার। তবে হ্যাঁ, এর অমধ্যে থেকেও ভা ও গল্পগঠনে অদিতি নিজস্ব একটা ছাপ রেখেছেন। দুটি রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারে ভাস্কর প্রভাকরের ছেলে ঈশান ও সূর্য, রাজপুত্র শৌর্য আর আশ্চর্য ঘোড়া পবন আছে দুটি কাহিনি জুড়ে, আছে ভালো ও খারাপ মানুষের দল। নিষ্ঠুরতা, লোভ, সাধনা, যুদ্ধ, গা শিরশির অ্যাডভেঞ্চার সবকিছুই আছে, শুধু যা নেই তা হল নিষ্ঠুরতা ও রক্তপাতের গ্রাফিক বিবরণ। এই অন্ধকার দিকগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রথগত রূপকথায় ব্যবহৃত ইঙ্গিতময়তা দিয়ে, যাতে সেগুলো গল্পকে সমৃদ্ধ করে, খুদে পড়ুয়াকে শিহরিত করে, কিন্তু তাকে ভয় দেখায় না। আসলে অদিতি দুটো উপন্যাসেই অ্যাডভেঞ্চারের সেই স্পিরিটটাকে ধরেছেন যার শক্তি চিরকালের রূপকথাদের আজও একইরকম জনপ্রিয়তার শীর্ষে তুলে রাখে।
পরিমিত ও দক্ষ ইলাসট্রেশান এই বইয়ের আরো এক সম্পদ।
–দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য