বিদেশী গল্প ইংরিজি-সাইন অব ৪০০ রয় ম্যাকার্ডেল, অনুঃ অমিত দেবনাথ বর্ষা ২০১৮

অমিত দেবনাথ    এর সমস্ত লেখা

“৪০০”-এর চিহ্ন

অমিত দেবনাথ

ইদানিং দেখছি হোমসের কোকেনের ওপর বিরাগ এসেছে। তার বদলে সে নেওয়া শুরু করেছে ৭০ পারসেন্ট মরফিন। সেদিনও সে খুশি খুশি মুখে মরফিনের সূচটা হাতে ঢুকিয়েছে, এমন সময় দরজায় করাঘাত এবং আমাদের ল্যান্ডলেডির আবির্ভাব, হাতে টেলিগ্রাম।

টেলিগ্রামটা হাতে নিয়ে হোমস একঝলক চোখ বোলাল।

“হুম”, বলল সে, “কি মনে হচ্ছে, ওয়াটসন?”

আমি নিলাম সেটা। সেখানে লেখা আছেঃ “এখুনি আসুন। আপনাকে দরকার। বাহাত্তর, চিনচবাগ প্লেস, এস.ডব্লিউ.।”

“এ তো অ্যাথেলনি জোনস পাঠিয়েছে”, আমি বললাম।

“ঠিক”, বলল হোমস, “গাড়ি ডাকো।”

আমরা অচিরেই পৌঁছে গেলাম সেখানে। এটা কোল্ডস্ল-এর ডোয়াগার কাউন্টেসের বাড়ি। পুরোন আমলের প্রাসাদ একখানা, চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। ড্রয়িং-রুমের টুপি রাখার জায়গাটা দেখলাম জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখন সেটা ইচ্ছে করেই করা হয়েছে কিনা, যাতে বেশ বনেদিয়ানার ছাপ পড়ে, সেটা বলা মুশকিল।

বাড়ির দোরগোড়াতেই ছিল অ্যাথেলনি জোনস। মুখ দেখেই মনে হচ্ছিল ভেবড়ে গেছে। “যত্ত সব ঝামেলা, বুঝলেন স্যার। লেডি কোল্ডস্ল-এর খাসকামরায় কে যেন ঢুকেছিল। তারপরেই সেই বিখ্যাত কোল্ডস্ল হিরেগুলো গায়েব!”

একটি কথাও না বলে হোমস তার পকেট থেকে আতসকাচটা বার করে আবহাওয়াটা পরীক্ষা করতে লাগল। তারপর শান্ত গলায় বলল, “বাতাসে রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।”

তারপর আমরা ভেতরে ঢুকলাম। লেডি কোল্ডস্ল-কে কোথাও দেখলাম না। একেবারেই ভেঙে পড়েছেন বোধহয়। আমরা সরাসরি চলে গেলাম চুরির জায়গায়। দেখলাম সব কিছুই ঠিকঠাক আছে, শুধু জানলা আর আসবাবপত্রের কাচগুলো চুরমার করে ভাঙা আর দেয়াল থেকে ছবিগুলো টেনে খুলে নেওয়া হয়েছে। চোর দেখলাম ওয়ালপেপারগুলোও টেনে খোলার চেষ্টা করেছিল, যদিও সফল হয়নি। কাল রাত্তিরে বৃষ্টি হয়েছিল। দেখলাম যেখান থেকে রত্নগুলো চুরি করা হয়েছে, কাদা-মাখা পায়ের ছাপ সেই অবধি চলে গেছে। সারা ঘরে একটা বিকট কড়া চুরুটের গন্ধ। এ সব অতি তুচ্ছ ব্যাপার ছাড়া ওই ঘরে চোর ঢোকার আর কোনও প্রমাণ পেলাম না।

পরক্ষণেই শার্লক হোমস মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে পায়ের ছাপগুলো পরীক্ষা শুরু করল একটা স্টেথোস্কোপ দিয়ে। “হুম”, বলল হোমস, “এখান থেকে কিছুই বোঝনি নিশ্চয়ই, জোনস?”

“কিছু না স্যার, কিছু না”, বলল গোয়েন্দা জোনস, “তবে আশা রাখি পারব, বড়োসড়ো পুরস্কার আছে।”

“না পারার কিছু নেই, এ কেস জলের মতো সোজা, বুঝলে!” বলল হোমস, “চুরিটা হয়েছে রাত তিনটের সময়। চোর বেশি লম্বা নয়, চেহারা ভাল, মাঝবয়সী, বউয়ের কথাও ওঠে-বসে – স্ত্রৈণ যাকে বলে, একটা চোখ ট্যারা। লোকটার নাম স্মিথ, থাকে ২৩৯ টফ টেরেস-এ।”

জোনস বিরাট হাঁ করল একখানা। “বলেন কি? শেষ অবধি মেজর স্মিথ? শহরের অন্যতম সেরা ধনী আর গণ্যমান্য ব্যক্তি?”

“তিনিই।”

আধঘন্টার মধ্যেই আমরা স্মিথের বিছানার পাশে হাজির হয়ে গেলাম এবং মেজরের যথেষ্ট আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল।

বাড়ি ফেরার পর আমি বললাম, “সত্যি হোমস, বিশ্বাস কর, এত তাড়াতাড়ি তুমি যে কী করে এই সমস্যার সমাধান করলে, কিছুই বুঝতে পারলাম না।”

“এক্কেবারে সহজ ব্যাপার”, বলল হোমস। “ঘরে ঢুকেই চুরুটের গন্ধ পেলাম। এই চুরুটটা স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে দিয়ে থাকে। আমি চুরুটের ধোঁয়ার ওপর অনেক গবেষণা করেছি, জানো নিশ্চয়ই। একমাত্র স্ত্রৈণ ধরণের লোকেরাই বাইরে এই ধরণের চুরুট খায়। তারপর পায়ের ছাপ দেখে বুঝলাম লোকটার অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে। তাহলে নিশ্চিতভাবে “৪০০”-এর সদস্যরাই এর সঙ্গে জড়িত। এখন প্রশ্ন হল, “৪০০”-এর সদস্যদের মধ্যে স্ত্রৈণ কে এবং কার সদ্য অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়েছে? তক্ষুনি বুঝতে পারলাম, এটা মেজর স্মিথ ছাড়া আর কেউ না, কারণ সে মাঝবয়সী, ভাল চেহারা আর তার একটা চোখ ট্যারা।”

সত্যি, অসামান্য হোমসের অসাধারণ কার্যকলাপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। হোমসকে সেটা বলেও ফেললাম।

“আসলে তুমি যদি বুঝতে পারো কোনটা কীভাবে ঘটেছে, তাহলে দেখবে সমাধানটা একদম সহজ হয়ে যায়”, গম্ভীর গলায় বলল হোমস।

আমরা যদ্দুর জানি, কোল্ডস্ল ডাকাতির ঘটনার এখানেই শেষ।

তবে শেষ করার আগে আরও কয়েকটা কথা বলতেই হচ্ছে। আমার অসাধারণ বন্ধুর অসামান্য সমস্যার সমাধানের কৃতিত্বে হিংসুটে জোনস কালি লাগিয়ে দিয়েছে। সে ইচ্ছে করে মেজর স্মিথকে দিয়ে একটা অকাট্য অ্যালিবাই প্রমাণ করিয়ে দিয়েছে এবং শুধু তাই নয়, অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় দিয়ে একজন কুখ্যাত বদমাশকে চোর হিসেবে গ্রেফতার করেছে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দাখিল করে তাকে অপরাধীও সাব্যস্ত করেছে। এই চোরটা নাকি কিছু হিরে বন্ধক রাখার চেষ্টা করছিল, যেগুলোর সঙ্গে চোরাই হিরেগুলোর অদ্ভুত মিল।

কী আর বলব, জোনসই সমস্ত কৃতিত্ব নিয়ে নিল। আমি এ ব্যাপারে কাগজের রিপোর্টগুলো হোমসকে দেখাতেই সে শুধু হাসল, বলল, “বরাবরই তাই হয়, ওয়াটসন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডই সমস্ত কৃতিত্ব নেয়।” তারপর যখন দেখলাম, সে বেহালা নিয়ে “সুইট মেরি” বাজাতে বসেছে, আমি মরফিনের দিকে হাত বাড়ালাম। এক্ষুনি আমার একডোজ কড়া মরফিন না নিলে আর চলছে না।

—————————————————————–

রয় এল. ম্যাককারডেল (Roy L. McCardell) রচিত “দি সাইন অব দ্য ৪০০” (The sign of the 400) অবলম্বনে।

জয়ঢাকের  সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

 

   

           

  

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s