বৈজ্ঞানিকের দপ্তর টেকনো টুকটাক-লিখিব পড়িব পর্ব ৩ কিশোর ঘোষাল বর্ষা ২০১৮

কিশোর ঘোষাল   এর সমস্ত লেখা একত্রে

পণ্ডিতেরা মনে করেন, অন্ততঃ দুই বা তার বেশি প্রাচীন সভ্যতায় ভাষা অনুসারে লিপির সূত্রপাত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথম ধরা হয়, মোটামুটি ৩১০০ বি.সি.তে মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয় সভ্যতায়। আর ৩০০ বি.সি.তে মেক্সিকোর ওলমেক (Olmec) অথবা জ্যাপোটেক (Zapotec) –এর মতো মেসোআমেরিকান (Mesoamerican) সভ্যতায়। এই দুই সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, অতএব ধরে নেওয়া যায়, এই দুই সভ্যতায় লিপির উদ্ভবে একে অন্যের  ওপর কোন প্রভাব ছিল না, স্বাধীনভাবেই লিপির সৃষ্টি হয়েছিল।

এছাড়া আরও দুই সভ্যতার লিপি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তর বিতর্ক আছে – মোটামুটি ৩১০০ বি.সি.তে প্রাচীন মিশর (Egypt) এবং ১২০০ বি.সি.তে চিন। কেউ বলেন এই দুই সভ্যতাতেও স্বাধীনভাবে লিপির সৃষ্টি হয়েছিল, কেউ বলেন ওই দুই সভ্যতার সঙ্গে সুমেরিয় সভ্যতার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল। বাণিজ্য এবং বণিকদের মাধ্যমে দুই সভ্যতার মধ্যে যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তারই ফলে এই দুই সভ্যতার নিজস্ব লিপি রূপ পেতে শুরু করেছিল। তবে বেশির ভাগ পণ্ডিতেরা বলেন, প্রাচীন চিনের বর্ণমালার ওপর অন্য কোন সভ্যতার প্রভাব থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ প্রাচীনকালে চিনের সঙ্গে সুদূর মধ্য প্রাচ্যের সুমের সভ্যতার তেমন কোন যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি। আর চেহারা এবং ভাবনায়, সুমের লিপির সঙ্গে চিনা লিপির তেমন কোন মিলই পাওয়া যায় না। সুমেরিয় কিউনিফর্ম লিপির থেকে প্রাচীন মিশরের লিপিও আলাদা, কিন্তু পণ্ডিতেরা বলেন, এই দুই লিপির ভাবনা ও বিন্যাসে নাকি অনেক মিল আছে!

একই বিতর্ক চালু আছে আমাদের সিন্ধু উপত্যকার লিপি নিয়েও। মোটামুটি ২৬০০ বি.সি.তে এই সভ্যতায় লিপির সূত্রপাত। কিন্তু যেহেতু এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি, তাই অনেক পণ্ডিত এগুলিকে লিপি বলে মানতে নারাজ, তাঁদের মতে এগুলি চিত্রলিপি কিংবা হয়তো লিখিত কোন সংকেত!

সুমেরিয় কীলক লিপি

সুমেরিয় সভ্যতায় ৪০০০ বি.সি.র শেষের দিকে লেখার শুরু হয়েছিল নরম মাটির ওপর গোলমুখ কলম দিয়ে আঁচড় কেটে। প্রথম দিকে শুধু ব্যাবসার হিসেবপত্র রাখতেই এই লিপির শুরু। তারপর ২৭০০ থেকে ২৫০০ বি.সি.র মধ্যে কলমগুলো  হয়ে উঠল ছুঁচোলো সরু। এই ধারালো কলমের খোঁচা খোঁচা দাগের জন্যেই এই লিপির নাম কীলক লিপি (Cuneiform Script)। মোটামুটি ২৬০০ বি.সি. থেকে এই কীলক লিপি নির্দিষ্ট শব্দ বিন্যাস এবং সংখ্যার জন্যে আলাদা হয়ে গড়ে উঠতে থাকে। এই সময় শুধু যে বাণিজ্যের হিসেব রাখা হত, তাই নয়, রাজ্যের অনেক ঘটনা, তথ্য, নির্দেশিকাও লেখা হতে শুরু করল। পাশের ছবিতে প্রাচীন ব্যাবিলন শহরের আলালা (Alalah) থেকে পাওয়া কীলক লিপির একটা নমুনা। নরম মাটির ওপর লিখে, সেটিকে রোদ্দুরে কিংবা আগুনে সাবধানে পুড়িয়ে এই ট্যাবলেটগুলি বানানো হত। সেই সময় সহজ উপযোগিতার জন্যে, এই লিপি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, এবং আশেপাশের অন্যান্য জনপদের লোকেরাও এই লিপির পদ্ধতি অনুসরণ করে, নিজস্ব লিপির ধারা তৈরি করতে শুরু করেছিল। তার মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য প্রাচীন পারস্য লিপি।

মিশরীয় হিয়েরোগ্লিফ লিপি

মিশরীয় সাম্রাজ্যে লিপির একটা বিশিষ্ট স্থান ছিল, সমাজের শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরই লিপি অনুশীলনের অনুমতি মিলত। এই লিপিগুলি মন্দির, মিশরের রাজা ফারাওদের নির্দেশ এবং প্রশাসনিক নানান কাজে ব্যবহার করা হত। মিশরীয় লিপিগুলিকে হিয়েরোগ্লিফিক্‌স্‌ (Hieroglyphics) বলা হয়, যদিও এই শব্দটি গ্রীক। মিশরীয়রা তাঁদের নিজেদের লিপিকে বলতেন “মেডু-নেৎজার” (medu-netjer), যার মানে “ঈশ্বরের কথা”। তাঁরা বিশ্বাস করতেন মহান দেবতা থথ (Thoth), তাঁদের লিখতে শিখিয়েছেন। তাঁদের আরো বিশ্বাস ছিল, দেবতা থথ তাঁদের  এই জ্ঞান উপহার দিয়েছিলেন এই বিশ্বাসে যে, মিশরীয়রা এই জ্ঞানটির পবিত্রতা দায়িত্বের সঙ্গে রক্ষা করবেন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, শব্দের অসীম ক্ষমতা! শব্দ মানুষকে আঘাত করতে পারে, আরোগ্য করতে পারে, সমৃদ্ধি আনতে পারে, আনতে পারে ধ্বংস, এমন কী মৃত মানুষকে বাঁচিয়েও তুলতে পারে! বিখ্যাত মিশরবিজ্ঞানী রোজেলি ডেভিড এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই লিপির উদ্দেশ্য শুধু মাত্র অলংকরণের জন্যে নয়, এমন কি প্রথমদিকে এই লিপি সাহিত্য কিংবা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হত না। এই লিপির গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল, কোন বিশেষ ধারণা বা ঘটনাকে বাস্তব অস্তিত্বে নিয়ে আসা! মিশরীয় মানুষেরা বিশ্বাস করতেন, এইভাবে লিখে রাখলে, সেই সব অলৌকিক দৈবী ঘটনা বা ধারণা বাস্তবে বার বার ঘটবে”!

মিশরীয় মানুষদের বিশ্বাসকে আজগুবি বলে উড়িয়ে দেওয়াই যায়, কিন্তু একটু চিন্তা করলে গভীর একটি বিষয় উপলব্ধি করা যায়। সেই যুগ থেকে আজও, একজন লেখক যখন লিখতে শুরু করেন, তিনি কোন একটি ঘটনা বা ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। লেখা শেষ করলেও তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না, সেই ধারণাকে তিনি সঠিক প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন কিনা! একজন পাঠক যখন সেই সম্পূর্ণ লেখাটি পাঠ করেন, তাঁর মনে নতুন এক ধারণার সৃষ্টি হয়। লেখাটি পড়ে তিনি কখনো মুগ্ধ হন, কখনো ক্রুদ্ধ হন, কখনো ভীত হন, কখনো বা নতুন জ্ঞানে আলোকিত হন। আর তখনই সেই লেখকের লেখা সার্থক প্রতিষ্ঠা পায়। সেই লেখা বার বার বহু যুগ ধরে, বহু পাঠকের মনে আলোড়ন তুলতে থাকে। আমাদের দেশের প্রাচীন লেখক মহর্ষি বেদব্যাস (যিনি মহাভারত লিখেছিলেন), কিংবা আমাদের একান্ত আপন এই সেদিনকার মহাকবি রবীন্দ্রনাথ, তেমনই দুই উদাহরণ হতে পারেন। যাঁদের লেখা পড়ে আজও আমরা মুগ্ধ হই, ঋদ্ধ হই।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ধারণায় মৃত্যুতে একটি জীবনের শেষ হয় না, বরং মৃত্যু হল এক জীবন থেকে অন্য এক জীবনে উত্তরণের পর্যায়। তাই মৃতের সমাধিতে প্রচুর উপহার সামগ্রী রাখা হত, রাখা হত প্রচুর খাবার এবং পানীয়!  সেই সমাধির দেওয়ালে সমস্ত উপহার সামগ্রীর বিবরণ লিখে রাখা হত। তার সঙ্গে লেখা হত, জীবিত অবস্থায় সেই মৃত মানুষটির কৃতিত্বের কথা। সেই কৃতিত্ব হয়তো কোন বড়ো যুদ্ধ জয় অথবা উচ্চস্তরের প্রশাসনিক দক্ষতা। সেই কৃতিত্ব যত বড়ো হত, উপহার সামগ্রীর পরিমাণ ততই বেশী হত। এর সঙ্গে আরো লেখা হত, মৃতব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা বাণী এবং তাঁর মঙ্গলের জন্যে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এইগুলিকেই হয়তো প্রথম আত্মজীবনী এবং সাহিত্যের সূত্রপাত বলা যায়।

অন্য সমস্ত লিপির থেকে মিশরীয় লিপির বৈশিষ্ট্য হল একটি শব্দের বর্ণলিপির শেষে একটি চিত্র (Logogram) এঁকে, বিষয়টিকে বোঝানো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় msh মানে কুমীর, আর miw মানে বেড়াল। বর্ণলিপি দিয়ে লেখার পরে দুই ক্ষেত্রেই কুমীর এবং বেড়ালের ছবি এঁকে বোঝানো হয়েছে। নিচেয় দেখানো ছবিটি লক্ষ্য করলে, বেশ মজা পাওয়া যায়। অনেকটা আমাদের ছোটদের বইয়ে “অ-অজগর আসছে তেড়ে”-র পর অজগরের ছবির মতো!

বিশেষজ্ঞরা ওপরের লিপির পাঠোদ্ধার করে বলছেন, ওপরের লিপিতে লেখা আছে – iw wnm msh nsw, তার মানে “The crocodile eats the king”- রাজাকে কুমীর খায়! সুন্দর এই লিপিতে লুকিয়ে রয়েছে কী ভয়ংকর বার্তা!

ব্রাহ্মী লিপি

আগেই বলেছি ভারতবর্ষের প্রাচীনতম লিপির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সিন্ধুসভ্যতার অবশেষে। কিন্তু ওই লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব না হওয়াতে, পণ্ডিতদের অনেকেই ওগুলিকে লিপি বলে মানতে রাজি নন। আমাদের দেশে তারপর যে লিপির সন্ধান পাওয়া গেছে, তার সময়কাল মোটামুটি ৩০০-২৫০ বি.সি.। মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে প্রথম যে লিপির দেখা পাওয়া যায় তাকে পণ্ডিতেরা ব্রাহ্মী লিপি বলেন। ১৮৩৭ সালে সম্রাট অশোকের এই শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন বিশিষ্ট প্রত্নবিদ এবং ভাষাবিদ জেমস প্রিন্সেপ। যদিও প্রত্যক্ষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু বহুদিন আগে থেকেই যে এই ব্রাহ্মী লিপির চর্চা চলছিল, সে বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে দ্বিমত নেই। তা না হলে সম্রাট অশোকের শিলালিপির এত পরিণত বর্ণ বিন্যাস সম্ভব হত না। কেউ কেউ বলেন, ব্রাহ্মীলিপির উদ্ভব সিন্ধু সভ্যতার ওই অপঠিত লিপির থেকেই এবং অন্য কোন সভ্যতার প্রভাবে নয়, ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব আমাদের দেশেই। ব্রাহ্মীলিপির স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, তার বিন্যাস এবং উচ্চারণ পদ্ধতির কথা বেদের “তৈত্তিরিয় প্রতিশক্য” অংশে বর্ণনা করা আছে। যার থেকে অনেকে মনে করেন, ব্রাহ্মীলিপির সূত্রপাত অনেকটাই প্রাচীন।

ব্রাহ্মীলিপির উল্লেখ প্রাচীন হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ শাস্ত্রে এবং তাদের চৈনিক অনুবাদেও বারবার পাওয়া যায়।  “ললিতবিস্তার সূত্র” গ্রন্থে বলা আছে সিদ্ধার্থ, যিনি পরে গৌতম বুদ্ধ হয়েছিলেন, এক ব্রাহ্মণ লিপিকারের কাছে ব্রাহ্মী লিপি শিক্ষা করেছিলেন এবং বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের সময়কাল মোটামুটি ৫০০ বি.সি। জৈন ধর্মশাস্ত্র “সমবায়াঙ্গ সূত্র” (সময়কাল ৩০০ বি.সি.) গ্রন্থে সেকালে প্রচলিত অন্যান্য লিপির মধ্যে ব্রাহ্মীলিপির নাম আছে প্রথমে এবং খরোষ্ঠী লিপির নাম আছে চতুর্থে। কাজেই ব্রাহ্মীলিপি যে, এই সময়ের অনেক দিন আগে থেকেই ভারতে বহুল প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত লিপি পদ্ধতি, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

অনেক পণ্ডিত মনে করেন, প্রাচীন কালের ভারতে পাথরে খোদাই করে লেখার পদ্ধতি হয়তো জানা ছিল না। তার আগে নরম মাটিতে অথবা তালপাতা, কলাপাতা এবং ভূর্জপাতায় লেখার প্রচলন ছিল। কালের প্রভাবে সেই সব লিপির নমুনা আমাদের সময় পর্যন্ত পৌঁছোয়নি। অতএব, সম্রাট অশোকের শিলালিপিই আমাদের কাছে প্রথম ব্রাহ্মীলিপির নিদর্শন।

খরোষ্ঠী লিপি

ভারতের উত্তরে এবং উত্তর পশ্চিমে,ব্রাহ্মীলিপির সমসাময়িক খরোষ্ঠী লিপিরও প্রচলন ছিল। এই লিপির উদ্ভব হয়েছিল গান্ধারে [যেখানকার রাজকুমারী ছিলেন কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী  (বর্তমান আফগানিস্তান, পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে)]।  সমসাময়িক কালের খরোষ্ঠী লিপির কিছু প্রভাব, ব্রাহ্মী লিপিতে থাকতেই পারে, কিন্তু দুই পদ্ধতির মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। যেমন খরোষ্ঠী লিপি প্রধানতঃ ডানদিক থেকে বাঁদিকে লেখা হত, এখনকার উর্দু লেখার মতো। কিন্তু ব্রাহ্মীলিপি বাঁদিক থেকে ডানদিকে লেখা হয়, যে পদ্ধতিতে আমরা আজও লিখি।

তাছাড়া ব্রাহ্মীলিপির থেকে খরোষ্ঠী লিপির বর্ণবিন্যাস বেশ কিছুটা জটিল। সংখ্যার ক্ষেত্রেও খরোষ্ঠী লিপি অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ওপরের টেব্‌লে দেখ, খরোষ্ঠী সংখ্যাতে ৫ থেকে ৯ কোন লিপি ছিল না, শূণ্যরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। ১, ২, ৩, ৪ সংখ্যাগুলি ছাড়া বাকি সংখ্যাগুলি যোগ করে ব্যবহার হত। যেমন ৯ মানে ৪ ৪ ১। উদাহরণ হিসেবে যদি ২০১৮ লিখতে যাই, লিখতে হবে ১০০০ ১০০০ ১০ ৪ ৪। যেহেতু খরোষ্ঠী লিপি ডান থেকে বাঁদিকে লেখা হত, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা উলটে গিয়ে দাঁড়াবে ৪ ৪ ১০ ১০০০ অর্থাৎ  । 

আর যদি ১৯৯৬ লিখতে যাই, ব্যাপারটা হয়ে উঠবে বেশ গোলমেলেঃ

(২ ৪ ১০ ২০ ২০ ২০ ২০ ১০০ ১ ৪ ৪ ১০০০)!

এই সব কারণেই খরোষ্ঠী লিপি ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হতে থাকল। মোটামুটি ৭০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত আঞ্চলিক লিপি হিসেবে ব্যবহার চালু থাকলেও, পরে এই পদ্ধতি পুরোপুরি অবলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু তাহলেও মানব সভ্যতায় এই লিপির গুরুত্ব এতটুকু কমে না, কারণ আধুনিক লিপি পদ্ধতির পথে এটিও একটি বিশেষ ধাপ।

কাঠের টুকরোর ওপর লেখা খরোষ্ঠী লিপি, ২০০-৩০০ বি.সি.র গান্ধার অঞ্চল থেকে পাওয়া।

ভারতে আঞ্চলিক লিপির বিকাশ

সেই সময় এদেশের আদি বাসিন্দা দ্রাবিড় হোন কিংবা বাইরে থেকে আসা আর্য, সকলেরই জ্ঞান চর্চার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল এই ব্রাহ্মী লিপি। আর্য ঋষিদের স্মৃতিনির্ভর বেদ ও অন্যান্য গ্রন্থ ফুটে উঠতে লাগল রেখায়। যে লিপি শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত ঋষিদের মধ্যে সীমিত ছিল, সম্রাট অশোকের সহযোগিতায় সেই লিপি রাজকীয় লিপি হয়ে উঠল এবং রাজকার্যে ব্রাহ্মীলিপির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ল সাম্রাজ্যের চারদিকে। ব্রাহ্মীলিপি সাধারণ মানুষেরও আয়ত্তের মধ্যে এসে গেল। ব্যাপ্ত এই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও বাড়তে লাগল শিক্ষা এবং জ্ঞানের চর্চা। তাঁরা নিজস্ব বাক্য বিন্যাস, শব্দসম্ভার এবং উচ্চারণের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বদলে নিতে লাগলেন, লিপির বৈশিষ্ট্য। ভারতীয় আত্মিক জ্ঞানের লিখিত রূপ আমাদের সময় পর্যন্ত বয়ে আনার দায়িত্ব নিয়ে, নতুন নতুন ভাষার বিকাশ হতে শুরু করল। কিন্তু সে কথা আজ নয়, পরের সংখ্যায়।

  (চলবে)         

জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর 

2 thoughts on “বৈজ্ঞানিকের দপ্তর টেকনো টুকটাক-লিখিব পড়িব পর্ব ৩ কিশোর ঘোষাল বর্ষা ২০১৮

  1. Sohoj sundor bhasai oitihasik bornona. Ek otyonto dami sonkolon hoye uthte cholche ei lekha guli. Lekhokke onek abhinandan.

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s