ভারত ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক-সব লেখা একত্রে
মাইকেল ফ্যারাডে – এক অসামান্য কর্মযোগী
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের কথা। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার থেকে ভাগ্য অন্বেষণের উদ্দেশ্যে লন্ডনে বাসা বাধল জেমস ও মার্গারেট। জেমস ছিল একজন লৌহকার। দারিদ্রের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে করতে জেমসের শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় দুই পুত্রকে নিয়ে দিন গুজরানের তাগিদে মার্গারেট লোকের বাড়ি ছোটখাট কাজ নিল। অসুস্থ্য জেমস অল্প বয়সেই মারা গেলো। স্বামী মারা যেতে দুই ছেলেকে নিয়ে মার্গারেট পড়ল অথৈ জলে। মার্গারেটর ছোট ছেলের নাম ছিল মাইকেল। তার আবার জন্ম থেকে জিভের জড়তা, কথা বলতে অসুবিধা। বড় ছেলে রবার্ট স্কুল যেত নামমাত্রে। বাবার কাছে শেখা লোহার কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা আনতে চেষ্টাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। এদিকে মাইকেলের মাথায় অনেক বুদ্ধি। কিন্তু কথার জড়তার জন্য স্কুলে শিক্ষকেরাও ওর প্রতি বিরুপ। একদিন হল কি, মাইকেলের ক্লাস টিচার ওর অস্পষ্ট কথায় বেজায় রেগে গিয়ে রবার্টকে একটা পেনি দিয়ে বলল, একটা ছড়ি কিনে আন, আজ একে মেরে শেষ করে দেব। রবার্ট তার ভাইকে বড্ড ভালবাসত। সে পেনিটা ছুঁড়ে দিল স্কুলের পাঁচিলের বাইরে আর ভাইকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে মাকে সব কথা খুলে বলল। মার্গারেট রেগে গিয়ে দুই ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলো। ব্যস, ইতি হয়ে গেলো দুই ভাইয়ের লেখাপড়া। রবার্ট পুরোপুরি লোহারের কাজে মনোনিবেশ করল। মাইকেল কাজ নিল লন্ডন শহরের এক বই বাঁধাইয়ের দোকানে।
তখন যদিও ছাপাখানার আবিষ্কার হয়ে গেছে আর লন্ডন শহরে ১৭১৮ সালে এসেও গেছে প্রথম ছাপাখানার যন্ত্র, হাতে লেখা বইয়ের চলন তখনো থেকে গেছে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল বই বাঁধাইয়ের জন্য মাইকেলের দোকানে আসে। ফলে হল কি, বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যসম্বলিত বই বাঁধাইয়ের জন্য দোকানে এলেই মাইকেল সব পড়ে ফেলে। ধীরে ধীরে উৎসাহ থেকে জ্ঞান বাড়তে থাকে মাইকেলের। মাইকেলের হাতে এনসাইক্লোপিডিয়া বাঁধাইয়ের কাজ আসবার পর সে সব খণ্ড গুলি পড়ে ফেলল। শুধু কী পড়েই তার শান্তি ছিল? মোটেই না। রসায়ন আর পদার্থবিদ্যার প্রবন্ধ পড়া শুরু হয়ে গেলো। বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ হাতে পেয়ে এই বিষয়ে কাজ করতে উৎসাহিত হয়ে কয়েক পেন্স খরচ করে একটা মেশিনও বানিয়ে ফেলল। রসায়নে আগ্রহি মাইকেলের মনে হল কিছু পরীক্ষা হাতে নাতে করে দেখতে হবে। কিন্তু পরীক্ষা করবার জন্য যন্ত্রপাতি জোগাড় করবার টাকা আসবে কোথা থেকে? মাইকেলের রোজগার পাতি তেমন কিছু ছিল না। কাজেই, বড়ভাই রবার্ট ভালবেসে তার কষ্টে উপার্জিত জমানো টাকায় ভাইয়ের ইচ্ছা পূরণ করল।
লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি ছিল সেই সময়ে বিজ্ঞান সাধনার পীঠস্থান। বিখ্যাত বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভি তখন লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির অধ্যক্ষ। সবে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছে। নামের আগে ‘স্যর’ বসে যাওয়ার ফলে রয়্যাল সোসাইটিতে সবাই ডেভির বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতা শুনতে আসে। ডেভি তখন তার বিখ্যাত ‘সেফটি ল্যাম্প’ আবিষ্কার করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহী মাইকেল নিয়মিত রয়্যাল সোসাইটিতে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা শুনত ও সযত্নে লিখে রাখত । মাইকেলের হাতের লেখা ছিল ঝকঝকে, নজর কাড়া সুন্দর। হাতে লেখা নোটগুলি সে নিজের হাতে সুন্দর ভাবে বাঁধিয়ে রাখত। তার এই কাজে উৎসাহ যোগাতো বই বাঁধাইয়ের দোকানের মালিক জর্জ রিবো। তিনি ছিলেন গুনের পূজারী। সহজেই প্রবল মেধার অধিকারী ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে চিনে নিতে পেরেছিলেন রিবো। রিবোর সাহায্যে ফ্যারাডে দোকানের অন্য কাজের সাথে সাথে বিজ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ডেভির তিন চারটে বক্তৃতা শুনে,তার হাতে লেখা প্রতিলিপি বানিয়ে, পাঠিয়ে দিলেন একদিন ডেভির দপ্তরে। সাথে একটি আর্জি, রয়্যাল সোসাইটিতে বিজ্ঞানাগার সহায়ক হিসাবে যোগ দিতে চান। ডেভি তো পড়েই ফ্যারাডের প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। চিঠি পাঠিয়ে পরামর্শ দিলেন, বিজ্ঞান চর্চা ভুলে যাও, ও কোনও কম্মের চাকরী নয়। তার চাইতে বরং বই বাঁধানোর কাজে ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।
কিন্তু ফ্যারাডে অত সহজে হার মানবার পাত্র ছিলেন না। তিনি তখন মনে মনে বই বাঁধানোর দোকানের কাজে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি বিজ্ঞান অনুসন্ধানে নিজের হাত শক্ত করবেন বলে স্থির করে নিয়েছেন। অনেক চিঠি চালাচালি করেও চিড়ে ভিজল না। কিন্তু আভাবনীয় ভাবে একদিন ফ্যারাডের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেলো। ডেভির বিজ্ঞানাগারের সহায়ক কাজে কিছু ভুল করে চাকরী খোয়াল। বাধ্য হয়েই ডেভি ফ্যারেডেকে নিজের সহকারী নিযুক্ত করলেন। সামান্য বেতন আর রয়্যাল সোসাইটিতে দুটি থাকবার ঘর বরাদ্দ হল ফ্যারাডের জন্য। তিনি মনোযোগ সহকারে পরীক্ষাগারে কাজ শুরু করলেন। ডেভিও তার সহকারীর কাজে বেশ খুশি।
বছর ঘুরতে না ঘুরতে স্যার হামফ্রে ডেভির আমন্ত্রণ এলো ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে, বক্তৃতা দিতে হবে আর তার সাথে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলি হাতে কলমে করে দেখাতে হবে। মাইকেল ফ্যরাডে তাই ডেভির সঙ্গী হলেন। যে ছেলেটি জীবনে লন্ডন শহরের বাইরে যায়নি, হটাত বিদেশ ভ্রমণের সুযোগে সে যে চমৎকৃত হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিঠি লিখে মায়ের সাথে সেই আনন্দ ভাগ করে নিলেন মাইকেল। সুন্দর হাতের লেখায় দীর্ঘ পত্র দিলেন বন্ধুদেরও। লেখা চিঠির মাধ্যমে জানা যায় ইউরোপ ভ্রমণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ফ্রান্সে তিনি পদার্থবিদ অ্যাম্পিয়ারের সান্নিধ্যে অনেক আভিজ্ঞতা লাভ করেন। ডেভির সহকারী এই ক্ষুরধার মেধার যুবকটি সহজেই বিজ্ঞানী মহলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ইতালিতে মিউসিয়ামে রাখা গ্যালিলিওর নিজের হাতে গড়া টেলিস্কোপ দেখার অভিজ্ঞতার কথাও বর্ণনা করে গেছেন মাইকেল তার ডায়েরিতে। এখানেই আলেক্সান্দ্রা ভোল্টার সাথে সাক্ষাত হয় তাঁর। চমৎকার মনের হাসি খুশি ভোল্টার কথা লিখে রেখে গেছেন সেই ডায়েরিতে। নিয়মিত চিঠি লিখতেন বই বাঁধাইয়ের দোকানের মালিক রিবোকেও। ডাইরিতে ডেভির নতুন নতুন পরীক্ষার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন।
ইতালি সফর শেষ করে ডেভি ও ফ্যারাডে পাড়ি দেন জার্মানি। এখানে ডেভির দাহ্য গ্যাসের কাজে সহায়তা করে রসায়ন বিজ্ঞানের নতুন পাঠের সংস্পর্শে আসেন ফ্যারাডে। ঠিক যখন তুর্কি এবং গ্রীসের দিকে রওনা দেওয়া স্থির হল, তখনি সেখানে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বাধ্য হয়ে লন্ডনে ফিরে আসতে বাধ্য হন ফ্যারাডে ও ডেভি। ফিরে আসার পর শুরু হয় মাইকেল ফ্যারাডের রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞান সাধনা। আর এইখানেই তিনি সারাজীবন মুল্যবান আবিষ্কার করে মনুষ্য সমাজকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।
ফ্যারাডের বৈজ্ঞানিক জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে মুলতঃ তিনি রসায়নের উপর কাজ করে গেছেন। উল্লেখযোগ্য গবেষণাগুলির মধ্যে কার্বনের উপর গবেষণা, ক্যাপিলারি টিউবের মধ্যে দিয়ে গ্যাসের সঞ্চালন, বেঞ্জল ও বিউটিলিন আবিষ্কার উল্লেখ্য।
পনের বছর এই সুদীর্ঘ গবেষণার পর তিনি পরবর্তী দশ বছর তড়িৎপ্রবাহ ও তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা ও আবিষ্কার করে যান। ফ্যরাডেই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন, তড়িৎ ও চুম্বকের সম্পর্ক পরস্পর ওতপ্রত ভাবে জড়িত। এই সময়ে আবিষ্কার হওয়া একটি পরীক্ষা ফ্যারাডেকে ভাবিয়ে তোলে। সেই পরীক্ষায় দেখানো হয়, একটি সফট আয়রন সিলিন্ডারের চতুর্দিকে বিদ্যুৎবাহী তারের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ ঘটলে চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। ফ্যারাডে ভাবলেন, তাহলে উলটোটাও তো হওয়া সম্ভব। অর্থাৎ যদি চুম্বক ক্ষেত্রকে ঘোরানো যায়, তাহলে বিদ্যুৎবাহী তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটবে কী?
বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যেমে তিনি হাতে কলমে ফল পেলেন। বিদ্যুৎবাহী তারের কুণ্ডলীর কাছে যদি কোনও চুম্বক নিয়ে আসা হয়, তাহলে গ্যালভানোমিটারে বিক্ষেপ দেখা যায়, অর্থাৎ তারের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত হয়ে থাকে (উপরের ছবিতে যেমন দেখানো আছে)। চুম্বকের উত্তরমেরু কুণ্ডলীর কাছে দ্রুত নিয়ে এলে যেদিকে তড়িৎ প্রবাহিত হয়, দক্ষিণ মেরু কাছে আনলে তার উলটো দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এই পরীক্ষাটি পরবর্তী কালে ফ্যারাডেকে অল্টারনেটিং কারেন্ট আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। চুম্বক ক্ষেত্রের
মধ্যে হাতলের সাহায্যে একটি আয়তকার তারের কুণ্ডলী ঘুরিয়ে অল্টারনেটিং কারেন্ট তৈরি করে দেখান (নিচের ছবিতে যেমন দেখানো আছে)। চুম্বক ক্ষেত্রের বলরেখার পরিবর্তনের ফলে তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারেন। এই তড়িতকে বলা হয় ইন্ডিউসড কারেন্ট। এই তড়িতের সৃষ্টি ব্যখ্যা করে ফ্যারাডে একটি প্রবন্ধ লেখার পর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল এই অংকের সূত্র দিয়ে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেন।
স্কুলের প্রথাগত শিক্ষার অভাবে মাইকেল ফ্যারাডের অংক শিক্ষা হয়নি। তাই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত তথ্যের ব্যাখ্যায় অংকের সাহায্য নিতে পারেননি সারাজীবন। কিন্তু তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত বিজ্ঞান সচেতন মন নিত্য নতুন আবিষ্কারের ডালি সাজিয়ে একটু একটু করে মনুষ্য সমাজকে উন্নতির এক এক ধাপ পার করিয়েছে। ম্যাক্সওয়েল ও এ্যাম্পিয়ারের মতো সনামধন্য বিজ্ঞানী তাঁর খুব কাছের মানুষ ছিলেন এবং অংকের সূত্র দিয়ে ফ্যারাডের অনেক আবিষ্কার ব্যখ্যা করে গেছেন।
রসায়ন থেকে পদার্থবিদ্যায় ফ্যারাডের আগ্রহ ও অনুসন্ধান অনেক তৎকালীন পদার্থবিদ খুব ভালো নজরে দেখেননি। কিন্তু জনপ্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা ফ্যারাডের কাজে বিন্দুমাত্র বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। রয়্যাল সোসাইটির পরীক্ষাগারেই নিজেকে আবদ্ধ করে জনসমাজ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। ফলে আরও অনেক নিত্যনতুন আবিষ্কার জন্ম নেয়। তড়িৎ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে করতে আশ্চর্য জনক ভাবে তড়িৎ রসায়নের সূত্র আবিষ্কার করেন তিনি। ধাতুর লবণের মিশ্রণে তড়িৎ প্রবাহিত করে দেখলেন বিদ্যুতবাহকের উপর জমতে থাকা ধাতুর পরিমাণ কেবল মাত্র নির্ভর করে কতটা তড়িৎ কতক্ষণ ধরে প্রবাহিত হচ্ছে, তার উপর। এই পরীক্ষা জন্ম দেয় বিখ্যাত ‘ফ্যারাডেস ল অফ ইলেক্ট্রোলিসিস’ এর। এই সময়ে তিনি বস্তুর চুম্বকীয় ধর্মের উপর কাজ করতে থাকেন। লক্ষ্য করেন ধাতব পদার্থ, যেমন লোহা নিকেল ইত্যাদি চুম্বক ক্ষেত্রে রাখলে, বলরেখা বরাবর সেই পদার্থ অবস্থান করে, কিন্তু অধাতব পদার্থ চুম্বক ক্ষেত্রে রাখলে, তারা বলরেখার লম্ব বরাবর অবস্থিত হয়। প্রথম শ্রেনির বস্তুর নামকরণ করেন, প্যারাম্যাগনেটিক ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বস্তুর নামকরণ করেন ডায়াম্যাগনেটিক। প্রায় একই সময়ে তার দীর্ঘ দশ বছরের গবেষণার ফল হিসাবে আবিষ্কৃত হয় উন্নত মানের টেলিস্কোপে ব্যবাহার যোগ্য কাঁচ। তার গবেষণা জীবনের তৃতীয় ভাগ অতিবাহিত হয় আলো এবং চুম্বক শক্তির মধ্যে সম্পর্ক। যদিও তিনি অনুমান করেন
যে চুম্বক শক্তি আলোর রশ্মিকে সমবর্তন করতে সক্ষম, কিন্তু আলোর এই ধর্ম পরীক্ষা করে দেখাতে পারেননি। পরবর্তীকালে অন্য পদার্থবিদেরা এই ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান।
ফ্যারাডে তার কাজের পেটেন্ট করে টাকাপয়সা রোজগার করার কোনোরকম চেষ্টাই করেননি, কারণ তিনি মনে করতেন বিজ্ঞান গবেষকের কাছে বেঁচে থাকবার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার চাইতে বেশি অর্থ, অনর্থক। ইংল্যান্ডের রানী ফ্যারাডেকে একটি বাড়ি দান করেন। বাধ্য হয়েই সেই প্রস্তাব মেনে নিতে হয় ফ্যারাডেকে। কিন্তু মাসে দুএকদিন সেই বাড়িতে তিনি থাকতেন তার স্ত্রী সারা বারনার্ডকে নিয়ে। অন্য সময়ে রয়্যাল সোসাইটির দুই কামরার বাসস্থানে গবেষণার প্রয়োজনে থাকতেন। রয়্যাল সোসাইটির অধ্যক্ষ হিসাবে মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও সেই পদে যোগদান করতে অস্বীকার করেন ফ্যারাডে। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ মাইকেল হয়ে বেচে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। তাকে প্রদান করা নাইট উপাধিও প্রত্যাখ্যান করেন।
জীবনের শেষ পাঁচ ছয় বছর ফ্যারাডের শরীর ভেঙে পড়ে। তবু তিনি তার গবেষণাগারে কাজ নিয়ে মেতে থাকেন। জানা যায়, এই সময়ে তিনি সমুদ্রের ধারে লাইট হাউসের ইলেকট্রিক আলোর কাজে এত বেশি মেতে উঠেছিলেন যে ঠাণ্ডা লেগে তার শরীরের আরও অবনতি ঘটে। ফ্যারাডের স্মৃতিশক্তিও এই সময়ে ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে। ১৮৬৭ সালে পচাত্তর বছর বয়সে এই কর্মযোগী বিজ্ঞান সাধকের জীবনাবসান হয়।
কর্মযোগী বিজ্ঞান সাধক মাইকেল ফ্যারাডের চরিত্রের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল প্রচার বিমুখতা এবং সরল জীবন যাপন। পরীক্ষা মূলক গবেষণায় তাঁর নাম বিজ্ঞানের পাতায় পাতায় অমর হয়ে থাকলেও রয়্যাল সোসাইটির দলিলে ফ্যারাডের নাম একজন সাধারণ পরীক্ষাগার সহায়ক হিসাবেই লেখা আছে। কিন্তু ফ্যারেডের হাতে লেখা নোটস, তাঁর স্বহস্তে বাঁধিয়ে রাখা বই, রয়্যাল সোসাইটি সসম্মানে তাদের সংগ্রহশালায় সযত্নে রেখে দিয়েছে।
জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর