বৈজ্ঞানিকের দপ্তর মহাবিশ্বে মহাকাশে-চান্দ্রপথ অশ্বিনী থেকে রেবতী-২ কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বসন্ত ২০১৮

মহাবিশ্বে মহাকাশে  আগের সমস্ত পর্ব একসঙ্গে

bigganmohabishwe01 (Large)

কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

ভরণীঃ

অশ্বিনীর ঈষৎ পূর্বে, সামান্য উত্তর চেপে অবস্থিত ভরণী চান্দ্রতিথি সংক্রান্ত দ্বিতীয় নক্ষত্রমণ্ডল। এটি তিনটি তারকাযুক্ত ত্রিকোণাকার। এই তারকা তিনটি মেষরাশি বা অ্যারিস (Aries) মণ্ডলে অবস্থিত। ভরণী শব্দের উৎপত্তি ভরণ বা শোষণার্থ ভূ ধাতু থেকে। তৈত্তিরীয় সংহিতায় এর নাম অপভরণী। পৌষ মাসে রাত্রির প্রথম প্রহরে মধ্য আকাশে একে সরাসরি দেখতে পাওয়া যায়। প্রাচীন পাশ্চাত্য তারকাচিত্রে এই নক্ষত্রের নাম মুসকা (Musca)। বর্তমানে এর পাশ্চাত্য নাম পারসিউস (Perseus) এবং অ্যালগোল (Algol)। অ্যালগোল একটি যুগ্মতারা। তাই এর ঔজ্জ্বল্য কমে-বাড়ে। এর প্রভা ষাট ঘন্টা ধরে সমান উজ্জ্বল থাকে। তারপর ঔজ্জ্বল্য কমতে শুরু করে। এটা চলে পাঁচ ঘন্টা ধরে। পরবর্তী পাঁচ ঘন্টা ধরে ঔজ্জ্বল্য আবার বাড়তে থাকে। দশ ঘন্টা ধরে ক্রমান্বয়ে ঔজ্জ্বল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির পর আবার ষাট ঘন্টা এর ঔজ্জ্বল্য স্থিতাবস্থায় থাকে। ঋগবেদে ভরণীর এই যুগ্মতারা যম ও যমী নামে পরিচিত। অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের বিচারে বাম প্রান্তস্থিত তারাটি যোগতারা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যদিও ডান প্রান্তস্থিত তারাটির ঔজ্জ্বল্য (চতুর্থ মাত্রা) সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সূর্যসিদ্ধান্তে এটিকেই যোগতারা বলা হয়েছে। যে তিনিটি তারাকে নিয়ে ভরণী নক্ষত্র কল্পনা করা হয়েছে সেই তিনটি তারার ঋগ্বেদীয় নাম— বিবস্বান্‌, যম, ও সংবরণ বা সংযম।

যমের অপর নাম ধর্ম। রামায়নে মহাকবি বাল্মীকি যমের ভরণী নামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘ভরত’ চরত্রটি সৃষ্টি করেছেন। তাই ভরত ছিলেন ধার্মিক। যেহেতু ধর্মের অর্থ ন্যায় তাই তাঁকে কখনও কোনো অন্যায় কাজ সমর্থন করতে দেখা যায়নি। রামের বনবাসের সময় অযোধ্যার রাজা হওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর। ধর্মানুসারে তিনি সেই সুযোগ পরিত্যাগ করে রামের প্রতিভূস্বরূপ হয়ে চৌদ্দ বছর রাজ্য পালন করেন।          

 কৃত্তিকাঃ

চান্দ্রপথের তৃতীয় নক্ষত্র মণ্ডল কৃত্তিকার অবস্থান ভরণী নক্ষত্র মণ্ডলের কিছুটা পূর্বে সামান্য দক্ষিণ চেপে। মাঘ মাসে রাত্রির প্রথম প্রহরে মধ্যাকাশে এর ছটি তারা খালি চোখে সহজেই দেখা যায়। তাই এর আরেক নাম ‘ষষ্ঠীমাতা’। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে অবশ্য সাতটি তারার উল্লেখ আছে। তাই চলতি বাংলায় এর নাম ‘সাতভেয়ে’। এই সাতটি তারার নাম— অম্বা, নিতত্নী, অভ্রযন্তী, মেঘযন্তী, বর্ষযন্তী, চুপুণীকা ও দুলা। জ্যোতীর্বিজ্ঞানীদের ধারণা তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ রচনা কালে কৃত্তিকায় সাতটি তারাই ছিল। পরে কোনো কারণে একটি তারা অস্পষ্ট হয়ে যায়। তাই পুরাণে ছটি তারার উল্লেখ আছে। কারও কারও দৃষ্টিতে কৃত্তিকার আকৃতি কর্তরিকা অর্থাৎ কাটারির ন্যায়। ঋগ্বেদীয় ঋষিরা এটির মধ্যে অগ্নিশিখা কল্পনা করে এর নাম দিয়েছিলেন অগ্নিরুদ্র। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১০০তম সুক্তের ৩৫তম ঋক [১০/১০০/৩৫] অনুসারে শিবের আরেক নাম রুদ্র। একাদশ রুদ্রের একটির নাম অগ্নি। কুমার কার্তিক শিবের পুত্র। তাই কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জ অগ্নি নামক রুদ্র। অগ্নি কৃত্তিকার অধিপতি। একসময় কৃত্তিকা নক্ষত্রচক্রের আদি নক্ষত্র বলে গণ্য হত।  ঋগ্বেদে অগ্নি বহু নামে অভিহিত। যেমন—   

  • জীবদেহের উত্তাপ তনূনপাৎ,
  • বিদ্যুতাগ্নি শম্পাৎ,
  • প্রত্যক্ষ অগ্নি নরাশংস,
  • বনের আগুন দাবানল,
  • সমুদ্রবারিতে প্রজ্বলিত অগ্নি বাড়বানল বা বড়বা,

bigganmohabishwe02

  • যজ্ঞাহুতি ভক্ষণকারী অগ্নির নাম হুতাশন,
  • বনস্পতির দহন শমী,
  • যজ্ঞহবি বহন করে বলে নাম বহ্নি,
  • ক্রোধাগ্নির নাম জমদগ্নি,
  • ভানুরশ্মি বা রৌদ্রাগ্নির নাম চিত্রভানু,
  • অগ্নির দীপ্তির নাম ভা, তেজ, তপ্‌,
  • অগ্নির উত্তাপের নাম ঊর্জস্বন্ত,
  • জীবনশক্তি বিদিত অগ্নির নাম জাতবেদা, ইত্যাদি।  

পৃথিবী থেকে ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কৃত্তিকা নক্ষত্রপুঞ্জে যে ছটি তারা বর্তমানে দেখতে পাওয়া যায় ঔজ্জ্বল্যের বিচারে সেগুলি পঞ্চম মাত্রার চেয়ে কম নয়। দ্রাঘিমা-অক্ষাংশ বিচারে এই নক্ষত্রপুঞ্জটির যোগতারা হল অ্যালকিয়োন (Alcyone)। এর ইংরেজি নাম প্লাইয়্যাডিজ্‌ (Pleiades)। সাধারণত এটি বৃষরাশির অন্তর্ভুক্ত নক্ষত্রপুঞ্জ বলা হয়ে থাকে।  যদিও এর ১৩২০’ বিস্তারের এক-চতুর্থাংশ মেষরাশিতে (Aries) এবং বাকি তিন-চতুর্থাংশ বৃষরাশিতে (Taurus) অবস্থিত।

তথ্য সূত্রঃ

  • Hindu Astronomy, W. Brennand, London, 1896.
  • প্রাচীন ভারতে জ্যোতির্বিজ্ঞান, অরূপরতন ভট্টাচার্য, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

জয়ঢাকের বৈজ্ঞানিকের দপ্তর

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s