জুপিটারের গভীরে
ঋত্বিক প্রিয়দর্শী সপ্তম শ্রেণী,এপিজে স্কুল, কলকাতা
১২.৩.২০১৫
আজকাল মশা আর মাকড়রা বড্ড শয়তান হয়ে গেছে। সেইদিন আমায় একটা মাকড় পিঠে চেটেও দিল।আর মশার কথা তো ছেড়েই দাও, রোজ কানের কাছে এসে ভন ভন করে আর কামড়ায়।
২৫.১১.২০১৬
আজকে সুইমিং ক্লাস ছিল।
স্কুল থেকে ফেরার সময় আমার একটা দোকান থেকে বাড়ির জন্য ডিম কেনার কথা। কাছে গিয়ে দেখি, দোকানটা উধাও, ওটার জায়গায় একটা বাঁশবন।
দুপাশ দিয়ে যদি দুটো ট্রাক না আসত, তাহলে নিশ্চই এই ঘটনাটা ঘটত না।
বাঁশবনটার মধ্যে যেই হুমড়িয়ে গিয়ে পড়েছি, পিছন ফিরে যখন জায়গাটা থেকে বের হতে যাব, বুঝলাম যে আমি একটা বিশাল জঙ্গলের মধ্যে ফেঁসে গেছি।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা বিশাল পুকুর দেখতে পেলাম, জলটা একদম ঘুট-ঘুট্টে কালো ছিল, পুকুরটার মধ্যে কিছু ছিল না, একদম খালি ছিল।
হঠাৎ ওটার মধ্যে কিছু একটা ভীষণ তীব্র নীল আলোওয়ালা জিনিস জ্বলে উঠল। কমিকসে যেমন চাইনিজ ড্রাগন দেখেছিলাম, জিনিসটাকে তেমনি প্রায় দেখতে। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যেই দৌড়োতে গেছি, একটা ভীষণ শক্ত শেকড়ের সাথে ধাক্কা খেলাম, পা’টার ছাল ছিঁড়ে গেল।
ধাক্কা খেতেই পুরো পুকুরটার থেকে একটা সাদা আলো বেরোতে লাগল। পুকুরটা দেখতে না দেখতেই চোখের সামনে কালো থেকে সবুজ হয়ে গেল আর ড্রাগনটা একটা তিমির থেকেও বিশাল বিড়াল হয়ে তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল।
“তুমি আমায় এল্কফটর এর অভিশাপ থেকে বাঁচিয়েছ। আমি এই পুকুরটার মধ্যে সাত হাজার বছর থেকে জোনাকি খেয়ে যাচ্ছি… জলের তলার জোনাকি,” বিশাল জন্তুটা আমায় বলল।
“জলের তলায় জোনাকি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“যখন একটা মানুষ মরে যায়, তখন সে জীবনে যত ভাল কাজ করে, সেরকম ১০০০ টা ভাল কাজ করলে জলের তলায় একটা জোনাকি জন্মায়। আমি সেই জোনাকি খেয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু আজকাল এতো লোক বাজে হয়ে গেছে যে আমি আর বেশি জোনাকি পাইনা,” হাসতে হাসতে বিড়ালটা উত্তর দিল।
“এবার যেহেতু তুমি আমায় বাঁচিয়েছ, পুরনো গল্পে যেরকম হয়ে থাকে। আমি তোমার একটা ইচ্ছা পুরণ করব।”
আমি ভাবতে বসলাম, “কী ইচ্ছে? কী ইচ্ছে?”
তারপর অনেকক্ষণ পরে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। বিড়ালটাকে বললাম, “একটা কাজ কর। দুনিয়াতে যত মাকড় আর মশা আছে আর তাদের ডিমদের জুপিটারে টেলিপোর্ট করে দাও।”
বিড়ালটার চোখদুটোর মণি হারিয়ে গিয়ে সারা চোখ সাদা হয়ে গেল, লোম খাড়া হয়ে গেল, তারপর কিছু একটা ফাটার শব্দের সাথে বিড়ালটা বলল, “যা! হয়ে গেছে।” বলে লাফ দিয়ে দুটো ডানা মেলে উড়ে চলে গেল। সেই মুহুর্তে সব দিক কেমন ধেবড়ে যেতে লাগল… পুকুরটার থেকে ৬-৭ টা হাত বেরিয়ে আসতে লাগল।
তারপর দেখি বাঁশবন কি, আমি স্কুলের সুইমিং পুলের বেঞ্চে শুয়ে আছি। স্যর জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এতক্ষণ পুলের তলায় কী করছিলে?”
ভাবলাম নিশ্চয়ই ওটা একটা স্বপ্ন ছিল, কিন্তু আমার পায়ে নতুন-নতুন কাঁটাছেড়া দেখে ভাবনাটা একদম পালটে গেল।
পরের দিন…
মশা-মাকড় উধাও হয়ে গেছে, একটারও কোন চিহ্ন নেই।
নিউজে দেখলাম যে কেনিয়ার কোন বৈজ্ঞানিক বলছে যে সে তার নতুন “ইরালমাসাফার” গ্যাসটার পরীক্ষা করছিল, তাতে নাকি ফল হয়েছে। কিন্তু আমি তো ঠিক বুঝে গেছিলাম যে আসলে কী হয়েছিল।
২০ বছর পর
বাড়িতে সবাই খুব উত্তেজিত, কেন কি কয়েকজন বৈজ্ঞানিক মিলে প্রথম জুপিটারে যাচ্ছে।
টিভির সামনে জড়ো হয়ে যেই বসেছি, খবর এলো যে লোকগুলোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের থেকে যে শেষ ছবিটা এসেছে সেটা হল, একটা কালো জিনিস আর তার দুটো লাল জ্বলন্ত চোখ।
আমার বন্ধু ওয়েন স্পেস কমান্ডো হয়ে যাচ্ছে জুপিটারে জন্তুটার খোঁজে। আমাকেও ডেকেছিল।
কিন্তু আমি ভাবলাম, না গিয়ে আমি এখানে বসে পু্রো ব্যাপারটা ওদের ক্যামেরা থেকে দেখি। তাই হেড সায়েন্টিস্টদের চেয়ারে বসলাম আমি। কিন্তু অভিযানটা শুরু করার পর কুড়ি বছর ক্রায়োস্লিপ-এর সময়টা খুব বিরক্তিকর ছিল। মজাটা এল যখন ওরা জুপিটারকে প্রথম দেখল, তারপর ওখান থেকে চারজনকে একটা এক্সপ্লোরার ড্রোনে জুপিটারের পৃষ্ঠতলের দিকে পাঠিয়ে দিল। সেইখানে আমার মনিটারও ছিল।
একবার মনে হয়েছিল যে যানটার এয়ারশিল্ডটা পুরো ভেঙে যাবে। কিন্তু এয়ারশিল্ডটা বেশ শক্ত ছিল, তাই ভাঙল না।
মনিটারটা চালু করলাম, চালু করতেই দেখি সেই বিশাল গ্রহটাকে, হলুদ! মনিটারটার মধ্যে থেকে স্ক্যান করে দেখি যে বাইরের আবহাওয়াতে ভীষণ হিলিয়াম আর ভীষণ হাইড্রোজেন। যখন নামলাম, মনিটারটা কেঁপে উঠল ল্যান্ডিং-এর প্রভাবে। তারপর সবার মুখগুলো দেখলাম ২০ বছর পর!
আমার মনিটারটা যখন প্রথম জুপিটারের আবহাওয়া তে ঢুকল, তখন একটু কেঁপে উঠেছিল কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে গেল।
চার দিন পর…
এতোদিন তো ঘুরলাম জুপিটারে, কোন কিছু চিহ্ন নেই কোন জন্তুর!
আমাদের যানের দিকে আমরা ফিরে যাচ্ছিলাম, কিন্তু তখনি কাণ্ডটা ঘটল। যাওয়ার সময় রাস্তায় কয়েকটা বিশাল পায়ের চিহ্ন দেখেছিলাম, মানুষের নয়, কোন বিশাল জন্তুর।
যানটা উধাও, কোন চিহ্ন নেই! যানটার জিপিএস চিপটাকে স্ক্যান করে দেখি যে সেই জায়গাটা থেকে যানটা এক মাইল দূর।
হাঁটতে হাঁটতে তো দু’দিন লাগল। ওখানে পৌঁছে একটা বড়ো গুহা দেখতে পেলাম। পাথরের নয়, কিছু চকচকে জিনিস দিয়ে তৈরি। যানটা দেখতে পেলাম কিন্তু সেটা কোন কাজের ছিল না। উপরে ঝুলছিল ওই চকচকে জিনিসটা দিয়ে জড়ানো জাল। চকচকে জিনিসটাকে স্ক্যান করে দেখা গেল যে ওটা হল প্রোটিন ফাইবার, হিলিয়াম আর হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত। এরকম জিনিস তো আগে কখন দেখিনি। জিনিসটাকে টেস্ট করার জন্য একটা টিউবে ভরছিলাম আমরা, তখনি গুহার মধ্যে থেকে একটা আওয়াজ এল, দুটো দানবিক পা বেরিয়ে এল। আমরা পালাতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পিছনের রাস্তা তখন ওই চকচকে জিনিস দিয়ে আটকানো। কী করব এবার?
(এই অবধি গল্প লিখে ঋত্বিক পালিয়েছে। তারপর কী হল জিজ্ঞেস করতে নীচের জিনিসটা মেল করেছে। আমরাও চিন্তায় আছি, বুঝলে! –সম্পাঃ)
সাসপেন্স
লিখিব খেলিব আঁকিব সুখে লাইব্রেরি