এক যে ছিল মেয়ে, তার নাম প্যামেলা। বাবা-মার সঙ্গে ওয়েলসে থাকতো। ওদের পরিবারটা তেমন সচ্ছল ছিল না, ফলে কোনরকমে ওকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। প্যামেলার কিন্তু অনেক বুদ্ধি, আর দেখতেও ভারি সুন্দর। ওকে পড়াশোনায় ভাল ফল করতে তেমন বেশি খাটতে হত না, বুদ্ধির জোরে কম খেটেই খুব ভাল ফল করত স্কুলে।
প্যামেলা মন থেকে চায় যে এরপর কলেজে ভর্র্তি হবে কিন্তু ওর বাবা-মা বলেই দিয়েছেন যে কলেজে পড়াবার মতো সামর্থ ওনাদের নেই। প্যামেলা ভীষণ ভাবে মুষড়ে পড়ে। এই সময়ে একদিন হেডমিস্ট্রেস ওকে জানালেন যে কিছু বাছাই ছাত্রীকে একটি বৃত্তির জন্য পরীক্ষায় বসতে পাঠানো হবে, যার নাম এভেরি স্কলারশিপ। একজন ছাত্রীই এই বৃত্তি পেতে পারে, যা সুযোগ করে দেবে কলেজে বিনি খরচায় পড়ার। প্যামেলা ও আর ক’জন মেয়েকে বাছা হয়েছে এই পরীক্ষায় বসার জন্য। প্যামেলা তো আনন্দে আত্মহারা, কিন্তু হেডমিস্ট্রেস বলেন যে এর জন্য প্রচুর খাটতে হবে কারণ অনেক মেধাবি পড়ুয়ারা এই বৃত্তি পাবার জন্য প্রতিযোগিতায় বসবে।
প্যামেলার এ ব্যাপারে কোন চিন্তাই নেই, সে ভাবল, বুদ্ধির জোরে অনায়াসেই এই বৃত্তিটা পেয়ে যাবে। বিশেষ কাঠ-খড় পোড়াতে হবে না । এই প্রতিযোগিতা তো ওর জন্য হাতের-মোয়া, ইংরাজিতে যাকে বলে ‘এ পিস অফ কেক’।
যখন অন্যরা প্রাণপণে খাটছে তখন প্যামেলা তো পড়াশোনা করছেই না, উল্টো যারা খাটছে-পড়ছে তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছে। একদিন ওদের শিক্ষিকা জানালেন, যারা বৃত্তি পরীক্ষায় বসবে তাদের জন্য একটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। প্যামেলা তো এই খবরে খুব খুশি, ভাবল এই সুযোগে শিক্ষিকাদের দেখিয়ে দেবে ও কত ভালো ফল করবে আসল পরীক্ষাতে। এর ফলস্বরূপ সে একটুও ভয় পেল না স্কুলের পরীক্ষার দিন, উল্টো ভাবল, সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু যখন সত্যি-সত্যি প্রশ্নপত্র পেল, সে একেবারে হতবাক! প্রশ্নগুল প্রচণ্ড কঠিন, ও অর্ধেকের বেশি উত্তরই দিতে পারল না। কোনরকমে কয়েটা প্রশ্নের উত্তর দিল।
পরীক্ষা হয়ে যাবার পরে প্যামেলা ওর শিক্ষিকা মিস ফিলটোনের কাছে গেল আর ওর মনের কথা সব খুলে জানাল। সব শোনার পরে মিস ফিলটোন প্যামেলাকে খুব ভাল করে বোঝালেন, “সব কিছু অত সহজ নয়। কোন অজানাকে আগেই সোজা ভেবে নেওয়া উচিত নয়। বৃত্তি-পরীক্ষার এক সপ্তাহ বাকি, তোমাকে আদা-জল খেয়ে পড়াশোনায় লাগতে হবে, নয়ত বৃত্তি পাবার কোন আশা নেই।”
প্যামেলা শিক্ষিকার উপদেশ বুঝতে পারল, আর সেদিন থেকে খুব পরিশ্রম করা আরম্ভ করল যাতে পরীক্ষার ফল খুব ভাল হয়। দিন-রাত এক করে পরিশ্রমের ফলে পরীক্ষার দিন ওর মনে হল, ও ভালই করেছে।
এক সপ্তাহ পরে পরীক্ষার ফল বের হল আর দেখা গেল প্যামেলা পরীক্ষাতে প্রথম হয়ে বৃত্তি পেয়েছে। ও খুব খুশি কারণ ও জানল এবার কলেজে পড়তে পারবে, তবে এও বুঝল মিস ফিলটোনের পরামর্শ ও সাহায্য ছাড়া সে কিছুতেই কৃতকার্য হতে পারত না। সেই দিন থেকে প্যামেলা কোনদিন কোন ব্যাপারকেই ছোট ভাবত না। সবকিছুর গুরুত্ব দিত। বুঝত সব কিছুই বাচ্চার হাতের মোয়া নয়।