গল্প লুকোচুরি শুভশ্রী ভট্টাচার্য বসন্ত ২০১৯

শুভশ্রী ভট্টাচার্যের আগের গল্পঃ ওপরের দিদা, লাজুকলতা
একটাই গল্প। ছড়ায়  এবং গদ্যে দু-দু’বার পড়বার মজা

লুকোচুরি

শুভশ্রী ভট্টাচার্য

ছড়া-লুকোচুরি

উঠোন জুড়ে মুরগিছানা
মায়ের সাথে খুঁজছে দানা,
গুনতিতে মোট চোদ্দখানা ভাই।
গাছের ডালে হলদে পাখি
‘ধর তো রে’ ডাক উঠছে ডাকি।
মা ভাবল ধরবে নাকি তাই?
তাকিয়ে আছে পাখিটা সেই—
ওদের সেসব খেয়ালই নেই,
মায়ের কিন্তু ওটার দিকেই চোখ।
ছানাপানা ব্যস্ত খেলায়,
মুরগি তাদের শান্ত গলায়
বললে, ‘তোরা পেটের তলায় ঢোক’।
অমনি তারা ছুট্টে এসে
মুরগি মায়ের কোলটি ঘেঁষে
পেটের তলায় সবাই ঠেসে ডুব।
মুরগি ভাবে, কেমন মজা
বাচ্চা ধরা অতই সোজা?
বাইরে থেকে যায় না বোঝা খুব।
একটি ছানা দুষ্টু অতি,
তার কেবলি বাইরে মতি।
মুণ্ডু বাড়ায় ইতিউতি ‘যাহ’।
যেই না পাখি উড়ে গেল
ছানা-পানা বেরিয়ে এল
মুরগি মা-টা শান্তি পেল ‘আহ’।

তারাও তখন ফূর্তি চোটে
উঠোন জুড়ে বেজায় ছোটে,
মুরগি মায়ের পিঠেও ওঠে বেশ।
খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে খাবার,
দেখলে বিপদ ঢুকবে আবার।
এইখানেতেই গল্প আমার শেষ।

গদ্য-লুকোচুরি

চিকচিক, চুকচুক, মিটমিট, গুটগুট– চারটে ছিল মুরগিছানা। তারা কদিন আগেও ডিম ছিল। তখন তাদের মা তাদের ওপর বসে বসে তা দিত। তারপর একদিন ডিম ফুটে মায়ের পেটের তলা থেকে একে একে তারা বেরিয়ে এসেছিল। এ সব কথা খুব বেশিদিন আগের নয়। তাই বিপদ বুঝলেই তারা ছুট্টে এসে মোটাসোটা মায়ের পেটের তলায় সেঁধিয়ে যায়। অনেক সময় মা নিরিবিলি শান্ত হয়ে ঘাসের ওপর বসে রোদ পোহাতে থাকলে তারা কোত্থেকে এসে মায়ের গায়ের ওপর লাফালাফি করতে থাকে। কেউ কেউ আশেপাশে চরে বেড়ায়, আর উত্তেজক কিছুর খোঁজ পেলে মাকে এসে জানিয়ে যায়। মা যখন কোথাও যায় সব কটা বিনা প্রশ্নে মায়ের পিছু পিছু তুরতুর করে দৌড় দেয়। মায়ের কড়া আদেশ যেখানেই যাও লাইন যেন না ভাঙে। তাই তাদের দেখলে মনে হয় যেন রেলগাড়ি চলেছে। শুকনো পাতার মধ্যে লুকোচুরি হুটোপাটি খেলতে ওরা সবাই ওস্তাদ। ওরা জানে বেড়ালদের না হোক মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার ঐটাই পথ। 

আর কিছুকে তাদের ভয় নেই, কেবল বেড়ালকে তাদের দারুণ ভয়। একদিন একটা নিতান্ত নিরীহ বেড়ালছানাকে দেখে চিকচিক টেনে ছুট লাগাল যেদিকে দুচোখ যায়। বাকিরা মায়ের আশেপাশেই ছিল, মায়ের পেটের কোটরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। এদিকে চিকচিক ছুটতে ছুটতে কখন যে পাহাড়ের ঢালের কাছে চলে এসেছে টেরই পায়নি। বেড়ালছানাটাও বোধহয় ভেবেছিল ধরাধরি খেলা হচ্ছে। তাই সে-ও তাড়া করে খানিক দূর অবধি গেল। তারপর অবাক হয়ে দেখল চিকচিক পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বলের মত গড়িয়ে নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। অনেক নিচে চলে যাচ্ছে চিকচিক। আর তার মা-কে প্রাণপণে ডাকছে। 
একটা দাঁড়কাক গাছের ডালে বসে গলা সাধছিল। চিকচিকের ডাক শুনে উড়ে গিয়ে ঠোঁটে করে তাকে তুলে নিল। চিকচিক বলল, আমাকে শিগগির মায়ের কাছে নিয়ে চল। বেড়ালটা আমায় খেয়ে নেবে। দাঁড়কাক বলতে গেল, সে তো আমিও খেতে পারি। কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই ঠোঁটের ফাঁক থেকে চিকচিক টুপ করে পড়ে গেল। আকাশ থেকে চিকচিক পড়ছে উপত্যকায়। সেখানে একটা টলটলে সরোবরে ভাসছিল একটা রাজহাঁস। তার পিঠে চড়ে তার ছানাপোনারা বেড়াতে বেরিয়েছিল। চিকচিক এসে তাদের মাঝখানে চিৎপটাং হয়ে পড়ল। পালকের গদিতে পড়ে তার একটুও লাগল না। হাঁসের ছানারা ওকে নানা রকম কথা জিগ্যেস করতে লাগল। ও বলল তোমরা দেখছি মায়ের পিঠে চড় অথচ আমরা মায়ের পেটের তলায় থাকতেই বেশি ভালবাসি। ওরা চিকচিককে ছোট্ট জলের পোকা খেতে দিল। চিকচিক ওয়াক থু করে ফেলে দিল। বলল, আমরা বাপু ঘাসের দানা খাই, এসব বিচ্ছিরি জিনিস খাই না। তাতে রেগে গিয়ে হাঁসের ছানারা তাকে ঠুকরে দিতে লাগল। ঠেলাঠেলির চোটে চিকচিক জলে পড়ে যায় আর কি। রাজহাঁস মা বকে দিল ওদের। বলল, ‘তোমরা শান্ত হয়ে বস, নৈলে সব কটাকে জলে ছেড়ে দেব। শুধু চিকচিককে নিয়ে বেড়াতে যাব।’ হাঁসের ছানারা অমনি ভদ্র হয়ে বসল, কারণ তারা তখনো ভাল করে সাঁতার শেখেনি। সবে একটু একটু পারে। তাছাড়া একে এই ব্যাটা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, তায় সে তাদের মায়ের পিঠে চড়ে একা একা বেড়াবে– এইটা তাদের কিছুতেই বরদাস্ত হচ্ছিল না। তাই তারা ভদ্র হয়ে বসল। রাজহাঁস পাড়ে এসে পৌঁছতেই তীরবেগে ছুটে চিকচিক ডাঙ্গায় নেমে পড়ল। চিকচিকের মা ততক্ষণে পাহাড়ের ওপর থেকে উপত্যকায় নেমে এসেছে, পেছনে ছানারা। চিকচিক ছুট্টে গিয়ে মায়ের পেটে, না না মায়ের পিঠের ওপর তিড়িং করে উঠে পড়ল। 

ছবিঃ লেখক

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

1 thought on “গল্প লুকোচুরি শুভশ্রী ভট্টাচার্য বসন্ত ২০১৯

  1. Sokale eto sundor lekha dekhe mon bhore gelo re subhoshree..aaro tor proshar hok sobdik theke eta e chae.

    Like

Leave a comment