বৈজ্ঞানিকের দপ্তর ভারত ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক -নৃতত্ত্বের দিশারী লুই হেনরি মর্গান-অরূপ ব্যানার্জি-বর্ষা ২০২১

ভারত ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক-সব লেখা একত্রে 

bigganbiggani

মানব সভ্যতা যত এগিয়েছে, ততই মানুষের নিজের শিকড় খোঁজার তাগিদ বেড়েছে। এই বর্ণময় পৃথিবীতে কীভাবে উদয় হল মানুষ, কে জন্ম দিল তাকে? সভ্যতার চাকা ঘুরতেই একদল দার্শনিক বললেন- ঈশ্বরের নির্দেশে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পেট ভরানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রাণী আর গাছপালা। দার্শনিকদের অনেক দল। সেই দলের কেউ কেউ অন্যভাবে ভাবতে লাগলেন। নানা তত্ত্ব, নানা কথা, নানা মত। সাধারণের মগজে ঢুকল না সে সব কথা। সবচাইতে সহজ হল ভগবানের হাত মেনে নেওয়া। তখনো বিজ্ঞান তত উন্নত হয়নি। কিন্তু মানুষের জন্মের ইতিবৃত্ত নিয়ে সাধারণ, কী অসাধারণ- সকলেই অল্পবিস্তর মাথা ঘামাতে শুরু করেছে।

চার্লস ডারউইন বহু দেশ ঘুরে, নানা ফসিলের নমুনা সংগ্রহ করে লিখে ফেললেন বিবর্তনের গবেষণার এক বই – ‘অরিজিন অফ স্পিসিস’। তিনি বললেন- মানুষও সব প্রাণীদের এক প্রাণী মাত্র। গাছপালা, পশুপক্ষীর মত তারও বিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা বললেন, মানুষ নাকি বনমানুষ থেকে সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র এক জীব, যার বিবর্তন হয়েছে অন্যদের চাইতে দ্রুত। লোকে রে রে করে তেড়ে এল।

ডারউইনের মতবাদ ছিল সুষ্ঠু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফল। অনুমানের ভিত্তিতে গড়ে তোলা দর্শন নয়। বিজ্ঞানীরা মেনে নিলেন। ডারউইন পৃথিবীতে এক পরিচিত নাম হলেন। কিন্তু কোনও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান একজনের হাতেই গড়ে ওঠে না। অনেক মানুষের গবেষণা আর চিন্তার ফসল হল যে কোনও আবিষ্কার। যে কোনও আবিষ্কারই শেষ হয় না। নতুন তথ্য নতুন গবেষণায় অন্ধকার দিক উন্মোচিত হয় নতুন নতুন গবেষণায়।

ডারউইনের জন্মের দেড় দশক পর জন্মান লুই হেনরি মর্গান। তিনি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত সাধারণের কাছে। পেশায় উকিল হলেও এই ভদ্রলোক বিজ্ঞানের জগতে এক অসাধারণ কাজ করে গেছেন। তিনি মানবসমাজের বিভিন্ন স্তরের বিকাশ ও বিবর্তন নিয়ে প্রায় সারাজীবন অমূল্য সব কাজ করে গেছেন, যার প্রবর্তিত তত্ত্ব আজ সারা বিশ্বের নৃতত্ত্ববিদদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয়।

১৮১৮ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জন্ম হয় লুই হেনরি মর্গানের। ওকালতি নিয়ে পড়াশুনো করে তিনি প্র্যাকটিস করতে থাকেন আদালতে। মিচিগান শহর থেকে লেক সুপিরিয়ার পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হবার সময় তাঁকে আইনি পরামর্শদাতা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। সেই সময়ে তিনি পশ্চিম আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। এরপর তিনি নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি আমেরিকার আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ান দের জীবন খুব কাছ থেকে দেখে থাকেন।

আদালতে কাজ করবার সময় মর্গানের বন্ধুত্ব হয় এলি পার্কারের সাথে, যিনি ছিলেন রেড ইন্ডিয়ানদের সেনেকা উপজাতির একজন মানুষ। তাঁর কাছ থেকে মর্গান আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে এক অন্যতম উপজাতি যাদের ‘ইরিকয়’ বলা হয়, তাদের সমাজজীবন সম্পর্কে জানতে পারেন। আমেরিকায় তখন বিভিন্ন দেশ- যেমন ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও ইতালির মত শক্তিশালী দেশ উপনিবেশের থাবা আরও শক্ত করছে। আমেরিকার আদিবাসিন্দাদের জমি অন্যায় ভাবে কেড়ে নিয়ে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার নানা ফন্দি ফিকির খুঁজছে উপনিবেশকারীরা। আমেরিকার সরকার নতুন নতুন জমি অধিকার করার কৌশলী আইন সেনেটে পাশ করানোর চেষ্টা করে চলেছে। দুই বন্ধু মর্গান আর পার্কার একটা সংস্থা খুলে ফেললেন ইরিকয়-দের অধিকার সংরক্ষণের জন্য। তথাকথিত সভ্য উপনিবেশকারীদের ফন্দি বুঝিয়ে দিতে গিয়ে ইরিকয়-দের শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করল সেই সংস্থা। প্রথম প্রথম নিরুত্তাপ থাকলেও আস্তে আস্তে ইরিকয় সমাজ মর্গানের সংস্থার উপর আস্থা রাখতে শুরু করল।

মর্গান খুব মিশুকে ছিলেন। কাজ করতে গিয়ে মর্গানের বন্ধুত্ব হয়ে গেল ইরিকয় রেডইন্ডিয়ানদের সাথে। তিনি ইরিকয়-দের ভাষাও শিখে ফেললেন। ওরা মর্গানকে নিজেদের একজন বলে মেনে নিল। মর্গান তাদের সমাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিস্মিত হলেন। আমেরিকার সভ্যসমাজের পরিবারের মধ্যে যে সম্পর্ক, তার একবারে ভিন্ন রূপ দেখতে পেলেন ইরিকয়-দের পরিবারে। ইরিকয়-রা লম্বা লম্বা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করত, যার মধ্যে থাকত ছোট ছোট ঘর। যৌথ পরিবারের বাবা ও কাকাদের সব বাচ্চারাই বাবা বলে ডাকে, অর্থাৎ আলাদা করে কোনও বড় পরিবারের মধ্যে ছোট ছোট পরিবার বাস করে না। সব ছেলেমেয়ের প্রতি সমান দায়িত্ব পালন করে সব বাবা-মা। বহুদিন ধরে খুব কাছ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করে মর্গান বুঝলেন, তারা পরিবারতন্ত্রের আদি ধাপে অবস্থান করছে, ইউরোপ ও আমেরিকার সমাজ যেখানে বিবর্তনে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে। তিনি লক্ষ্য করেন, এই সব আদিবাসীদের সমাজ আত্মীয়তার বন্ধনের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পদের মালিকানা গুরুত্বহীন। সব সম্পদে যৌথ পরিবারের সবার সমান অধিকার। তিনি পুরুষতন্ত্র প্রধান সভ্য সমাজের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সমাজের চিত্র সবার সামনে তুলে ধরেন।

এরপর লুই মর্গান ওকালতি ছেড়ে নৃতত্ত্বের দিকে ঝুঁকে পড়লেন আর নানাজায়গায় ঘুরে রেড ইন্ডিয়ান-দের অন্যান্য উপজাতির জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। মানবসমাজজীবনের বিবর্তনের প্রথম বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে বহু মূল্যবান প্রবন্ধ লিখে ফেললেন। তার তত্ত্ব অনুযায়ী- পৃথিবীর সব দেশে সব মানবসমাজ কতগুলো স্তর পার হতে থাকে বিবর্তনের ধারায়। ক্রমশ উন্নত হতে থাকে সমাজ। তবে ভৌগলিক কারণে সব সমাজ একই সাথে বিবর্তনের একই ধাপে অবস্থান করে না।

মর্গান-এর যুক্তি এতটাই জোরালো ছিল, যে নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা তাঁকে তাদের একজন বলে মেনে নিলেন। আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমী অফ সায়েন্স তাঁকে সম্মানীয় সভ্যপদ দান করল। এই সময়ে তার লেখা বই – ‘দ্য এন্সিয়েন্ট সোসাইটি’ প্রকাশিত হলে তিনি আরও খ্যাতি পেলেন। এই বইতে তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদের সমর্থন করে মানবসমাজের বিভিন্ন ধাপগুলো বিশ্লেষণ করেন। তাঁর এই বই দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক ফ্রেড্রিক এঙ্গেলসকে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করেন। এঙ্গেলস-এর লেখা বই – ‘ফ্যামিলি, প্রাইভেট প্রপার্টি এন্ড স্টেটস’- এর মুখবন্ধে মর্গান-এর গবেষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন এঙ্গেলস।

মর্গান-এর আগে ইউরোপ ও আমেরিকার আলোকপ্রাপ্ত সভ্য সমাজের মানুষদের কাছে আদিবাসীদের সম্বন্ধে ধারণা ছিল অস্বচ্ছ। দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণকারী মানুষেরা আদিবাসীদের দেখা কখনো কখনো পেয়েছিল, কিন্তু তাদের শোনানো গল্প থেকে গড়ে উঠেছিল আজগুবি অবাস্তব কাহিনী, সবটাই ছিল খাপছাড়া। মর্গানে-এর দৃষ্টি দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছেও সম্পূর্ণ ভিন্ন আদিবাসী সমাজের সঠিক চরিত্র ফুটে উঠল।

মর্গান বললেন, ভৌগলিক কারণের জন্য বিছিন্ন থাকায় সমাজের বিবর্তন একই হারে পৃথিবীর সব জায়গায় হয়নি। ফলে কোনও কোনও জায়গায় মানবসমাজ ধীরে বিকশিত হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু আদিবাসীদের জীবন পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে সভ্যসমাজের বিবর্তনের ধারা।

মর্গান দেখালেন মানব সমাজের বিবর্তনের তিনটি ধাপ- ১) স্যাভেজারি বা অসভ্য যুগ, ২) বার্বারিক বা বর্বর যুগ, ৩) সিভিলাইজেশন বা সভ্য যুগ। প্রতিটি ধাপকে তিনটি বিভিন্ন উপভাগে ভাগ করেন মর্গান। এই ধাপগুলো ভাগ করা হয় বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে মানব সমাজের উন্নতির উপর ভিত্তি করে।

অসভ্য যুগ

একবারে সর্বনিম্ন ধাপে মানুষ গাছে ও মাটিতে দু জায়গাতেই স্বচ্ছন্দে বসবাস করত। শিম্পাঞ্জি থেকে হোমোনিনি প্রজাতি সৃষ্টি হল। সেখান থেকে নানা আরও প্রজাতির জন্ম হল, যার মধ্যে ছিল বর্তমান মানুষের পূর্বজ- হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি। এরা প্রথমে গাছের ফলমূল খেয়েই পেট ভরাত। হয়ত বা তখন নিজেদের মধ্যে সংযোগের তাগিদে কথ্য ভাষাও দুটো একটা ফুটতে শুরু করেছে তখন। এরপর কত সহস্র যুগ কেটে গেছে, তার প্রমাণ্য ইতিহাস পাওয়া মুশকিল।

মধ্যবর্তী ধাপে মানুষ শিখল মাছ খাওয়া। কারণ সংখ্যায় তারা বাড়তে শুরু করতেই গাছের ফলমূলের ভাঁড়ারে টান পড়ল। আগুনের ব্যবহার খুব সম্ভবত মানুষ এই সময়েই শিখে ফেলে। মাছ পুড়িয়ে খেলে যে স্বাদু লাগে, সে কথা স্যাপিয়েন্স-রা বুঝতে পেরেছিল নিশ্চয়ই। মাছের সাথে অন্য জলজ প্রাণী খেতেও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠল মানুষ। ফলে তারা নদীর উপত্যকায় থাকতে শুরু করল। দলবদ্ধ ভাবে থাকার সুবিধা বুঝে ঘর বানিয়ে বা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেওয়া, রান্নার কাজে বাসনপত্রের ব্যবহার এই সময়েই শুরু হয়। পাথরের তৈরি ধারালো অস্ত্র বানিয়ে শিকার করতেও অভ্যস্ত হল মানুষ। দলবদ্ধভাবে শিকার ধরা অনেক সহজ হয়ে গেল। এই পর্যায়ে মানুষ চাষ আবাদ আবিষ্কার করে।

অসভ্য পর্যায়ের সবচাইতে উপরের ধাপে মানুষ শিকার করার জন্য তীর ধনুক বানানো শুরু করল। অবশ্যই আগুনের সাহায্যে ধাতু নিষ্কাশনের আবিষ্কার এই স্তরেই হয়। বিভিন্ন দলের মধ্যে শিকার করা ও খাদ্য সংগ্রহের জন্য যুদ্ধ শুরু হল। নতুন নতুন ধাতুর তৈরি ধারালো অস্ত্রের আবিষ্কার ও ব্যবহার হতে লাগল।

বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে যে সমস্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই মর্গান তার পর্যবেক্ষণ লিখে রাখেন। অসভ্য যুগে দলবদ্ধ ভাবে থাকতে গিয়ে গণবিবাহ চালু হয়। আলাদা ভাবে স্বামীস্ত্রী সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি এই পর্বে। সেই নিদর্শন আমেরিকার বিভিন্ন উপজাতির সমাজে তখনো লক্ষ্য করেন মর্গান।

বর্বর যুগ

এই পর্যায়ে মাটির পাত্রের ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমে দড়ি বা শক্ত ঘাস বুনে পাত্র বানিয়ে মাটির প্রলেপ লাগানো হত। তারপর পোড়া মাটির বাসন তৈরি শুরু হয়। এই ধরণের বাসন আগুন প্রতিরোধক, তা মানুষ আবিষ্কার করে। পশুপালন করতে শেখে মানুষ। এশিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে নানা জাতীয় গবাদি পশু পালন করা হয়, কিন্তু আমেরিকা অঞ্চলে শুধু লামাকেই পালন করা হত। পশুপালন করা হত প্রধানত মাংস ও দুধের জন্য।

ইট ও পাথর দিয়ে বাড়ি তৈরি করা শুরু হয় বর্বর যুগের মধ্য পর্যায়ে। রেড ইন্ডিয়ানরা কাঠের তৈরি বাড়ি বানাত। তারা ছোট ছোট বাগান বানিয়ে চাষআবাদ করত। কিন্তু কলোম্বিয়া নদীর অববাহিকায় তখনো মানুষ অসভ্য যুগের উচ্চ পর্যায়ে ছিল, যারা মাটির বাসনের ব্যবহার জানত না।

বর্বর যুগের উচ্চ পর্যায়ে আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। অস্ত্রে লোহার ব্যবহার হলে তীর ধনুকের যায়গা নেয় তলোয়ার, বল্লম ও আরও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। যুদ্ধ নৃশংস হয়ে ওঠে। চাষের কাজে নানা ধরণের লোহার যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হতে থাকে। উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কারণে জঙ্গল কেটে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষআবাদ শুরু করে মানুষ। এশিয়া মহাদেশে লিপি ব্যবহার শুরু হয়। লেখাপড়ার সূত্রপাত হয়। এশিয়া ও ইউরোপে মহাকাব্যের জন্ম হয়। জলপথে যাতায়াতের জন্য জাহাজ তৈরি হতে থাকে, স্থলপথের জন্য তৈরি হয় পশুতে টানা রথ ও গাড়ি। 

সভ্য যুগ

এই পর্যায়ে মানুষ তার বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে উন্নত জীবনের পথ চলা শুরু করে। বাস্প চালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার হওয়ায় শিল্প একধাপে অনেক এগিয়ে যায়। তৈরি হয় কাপড় বোনার কল, বাস্প চালিত জাহাজ ও ট্রেন। শিল্প ও বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শহরাঞ্চল। অভিযাত্রীরা পৃথিবীর নানা অঞ্চলে  প্রাকৃতিক সম্পদের আশায় অভিযান চালায়। পৃথিবীর অজ্ঞাত স্থানগুলো ইউরোপের মানুষের গোচরে আসে। শুরু হয় উপনিবেশ স্থাপন, তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলে দাস প্রথা।

সভ্য যুগে পরিবারের গঠন ও মূল্যবোধ জন্ম নেয়। ব্যক্তিগত মালিকানা প্রাধান্য পায়। পুরুষ তান্ত্রিক পরিবারের জন্ম হয়। এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে সম্পত্তি হস্তান্তর হওয়ার আইন চালু হয়। এক পরিবারের মধ্যে বিয়ে হওয়া প্রথা বিরুদ্ধ হয়।

লুই মর্গান শুধু মানবসমাজের পরিবারতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেই খান্ত হননি, তিনি সমাজবদ্ধ হয়ে বেঁচে থেকে বিবর্তিত হওয়ার ফলে শাসন তন্ত্রের বিবর্তন, শিল্পকলার বিবর্তন, সম্পত্তির বিকাশ, নৈতিক মান ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদে ব্যাখ্যা করেন। সর্বপ্রথম মানবসভ্যতার বিকাশের ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক বিবরণ ও বিশ্লেষণ হয় লুই মর্গান-এর হাতে। তাই মর্গান বিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখায় কোনও তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেই থেমে যাননি, খুলে দিয়েছেন নৃতত্ত্ববিদ্যার গবেষণায় এক বিশাল দিগন্ত, যা নিয়ে আজও চলেছে অনুসন্ধান।

খুব বেশি অর্থ না জমিয়েও জীবনের শেষ বয়সে এসে রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি বড় অনুদান তিনি জমা করেন। নৃতত্ত্বের উপর মূল্যবান কাজের জন্য আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের প্রধান হিসাবে তিনি মনোনীত হন। ৬৩ বছর বয়সে রচেস্টার শহরে লুই মর্গান দেহত্যাগ করেন। 

তথ্য সূত্র:

1) Biographical Memoir of Lewis Henry Morgan, by W H Holmes, National Academy of Science, 1907  2) Researches in the lines of Human Progress from Savagery through Barbarism to Civilization, Lewis Henry Morgan, Henry Holt and Company, 1877

 জয়ঢাকের  বৈজ্ঞানিকের দপ্তর 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s