ধারাবাহিক উপন্যাস- এক দুই তিন (পঞ্চম পর্ব) অদিতি ভট্টাচার্য-শীত ২০২০

এপিসোড ১, এপিসোড ২, এপিসোড ৩, এপিসোড ৪

অদিতি ভট্টাচার্য

অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে নীলুর সাড়ে আটটা বেজে গেল, আজ কাজের চাপ ছিল। এসে শুনল পিসিমণি ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু নীলুকে সমরের মারা যাওয়ার সময়, মার্ডার ওয়েপন ইত্যাদির খবর দিয়ে দিতে বলেছেন।

“এগুলো না বললে বাছার আমার মন খারাপ হবে, একেই যা হাঁড়ির মতো মুখ করে অফিসে গেছে!” বলেছেন পিসিমণি, আর বলে ঘরে ঢুকে গেছেন।

“তার মানে ডোকরার মূর্তিটা দিয়ে মারা হয়েছে? তাহলে পিসিমণির এত ভাবনার কী হল? সীতাংশুবাবুই খুন করেছেন, এ তো পরিষ্কার। অবশ্য তাঁকেও খুঁজে বের করতে হবে, মূর্তিটাকেও।” সব শুনে নীলু বলল, “আর প্রদীপ রাহার সঙ্গে দেখা করে কী হল? কী বলল সে?”

“জানি না। বড়দি সেসব কিছুই বলেনি।” নীলুর বাবা বললেন।

রাতে খাওয়ার সময় পিসিমণি বেরোলেন ঘর থেকে—মুখ গম্ভীর, কোনোদিকে কোনো খেয়াল নেই, একমনে যে কিছু ভাবছেন তা বেশ বোঝা যায়। নীলু জানে এ সময় কিছু জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় না, তাই ও আর কিছু জানতে চাইল না।

একসময় পিসিমণি নিজেই বললেন, “সব দেখেও কেন দেখতে পাচ্ছি না বল তো নীলু? সব মিলেও যেন মিলছে না! আজকাল কি আমার মাথা সত্যিই কাজ করে না রে?”

“না না, এসব তুমি কী বলছ পিসিমণি?” নীলু ব্যস্ত হয়ে উঠল। এসব কথা পিসিমণির মতো মানুষের মুখে শুনতে মোটেও ভালো লাগে না। “তুমি না পারলে কেউই পারবে না, ও তুমি একটু ভাবলেই পেয়ে যাবে। কিন্তু তুমি কী ভাবছ? সীতাংশুবাবু কোথায় গেলেন? খুন তো উনিই করেছেন, তাই না?”

পিসিমণি আর কিচ্ছু বললেন না, চুপচাপ খাওয়া শেষ করে আবার নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।

সকালে অফিস বেরোনোর সময়েও দেখল পিসিমণি গম্ভীর মুখে বারান্দায় বসে, চোখমুখ দেখে মনে হয় সারারাত ঘুমোননি। নীলু আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। এসব সময়ে অফিসে কাজে মন বসানো খুব শক্ত হয়। দুপুরের দিকে একবার ফাঁক পেয়ে বাড়িতে ফোন করল।

“আমিই তোকে করতে যাচ্ছিলাম।” নীলুর বাবা বললেন, “বড়দি বলল আজ পারলে সন্ধের মধ্যে বাড়ি ফিরিস, কী দরকার আছে নাকি আর কাল ছুটি নিস।”

“তার মানে সব রহস্যের সমাধান? সীতাংশুবাবুকে পাওয়া গেছে?”

“সেসব জানি না, বড়দি যেটুকু বলতে বলেছিল বললাম। জানিসই তো বড়দি নিজে থেকে কিছু না বললে জানার কোনো উপায় নেই।” নীলুর বাবা ফোন ছেড়ে দিলেন।

নীলু যে কী করে বাড়ি ফিরল তা নীলুই জানে। আজ যেন রাস্তা আর শেষই হতে চাইছিল না!

নীলু বাড়ি ফিরতেই পিসিমণি নীলুর বাবা-মাকে বললেন, “রাতে আমাকে বেরোতে হবে, সঙ্গে নীলুও থাকবে। কোথায়, কেন, কী ব্যাপার এসব জিজ্ঞেস কোরো না, এখন বলতে পারব না। মা আগে সব রহস্যের সমাধান করে দিন, তার পরে সব বলব।”

এই রাতে বেরোনো, নীলু উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, “একটা কথা বলো পিসিমণি, রাতে বেরোচ্ছ মানে কিছু ব্যাপার তো বটেই। অন্ধকারে কি কোথাও লুকিয়ে থাকার ব্যাপার-ট্যাপার আছে?”

“তা ধরে নাও আছে।”

“তাহলে কিন্তু সেরকম জামাকাপড় পরতে হবে, মানে গাঢ় রঙের যাতে বোঝা না যায়। আমার তো কোনো অসুবিধে নেই, কালো টি-শার্ট আর কালো প্যান্ট পরব, কিন্তু তোমাকেও ওরকম রঙের পরতে হবে। তুমি যেরকম হালকা হালকা রঙের পরো সেরকম হলে চলবে না।”

“ও নীলু, তুই তো খুব কাজের কথা বলেছিস বাবা। এখন কালো রঙের শাড়ি কোথায় পাই? তোর মারও কি আর কালো রঙের শাড়ি আছে?”

“কালো নেই, তবে ডিপ চকোলেট আছে। দাঁড়াও বড়দি দেখাই তোমাকে, এটাতে মনে হয় হয়ে যাবে।” নীলুর মা শাড়ি নিয়ে এলেন।

গাঢ় চকোলেট রঙের ওপর ঘিয়ে রঙের সরু সরু ডুরে আছে বটে, তবে বেশ ফাঁক ফাঁক। পিসিমণি দেখে বললেন, “এতেই হবে।”

“শুধু তোমরা দুজন যাবে? আর কেউ সঙ্গে গেলে হয় না?” নীলুর মা বললেন। ওঁরা বেশ চিন্তিত পিসিমণির এই নৈশ অভিযানকে নিয়ে।

“না, বেশি লোক নেওয়া যাবে না।” পিসিমণির সাফ জবাব। তারপর ওঁদের অবস্থা দেখে বললেন, “অকারণ চিন্তা কোরো না ভাই। না আমার কোনো বিপদ হবে, না আমার নীলুর। নিশ্চিন্তে থাকো।”

আদি সপ্তগ্রামে যখন পৌঁছলেন তখন বারোটা বেজে গেছে। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় লোক নেই, চারদিক নিঝুম। গাড়ি থেকে নেমে দুজন একটা গাছের আড়ালে দাঁড়ালেন। সামনে একটা বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, দু-তিনটে দেওয়াল আধভাঙা অবস্থায় দাঁড়িয়ে। তৃতীয়ার চাঁদের স্বল্প আলোয় সেগুলোকে ভূতুড়ে মনে হচ্ছে। খেয়াল করলে বোঝা যায় ভাঙা বাড়ির সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে, লোকটার পায়ের কাছে কিছু একটা আছে। এর ঠিক বাঁ-পাশেই একটা একতলা বাড়ি। সে বাড়ির গেট খুলে একটা লোক আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসে ভাঙা বাড়ির দিকে গেল। তারও হাতে কিছু আছে। দুজনে সামনাসামনি হল। প্রথম লোকটা তার পায়ের কাছের জিনিসটা তুলে দেখাল দ্বিতীয় জনকে, এবার বোঝা গেল সেটা একটা ব্যাগ। দ্বিতীয়জন যেই সেটা দেখতে মুখ নীচু করল, অমনি একটা কাণ্ড ঘটে গেল। ভাঙা বাড়ির এদিক ওদিক থেকে যেন মাটি ফুঁড়ে কয়েকজন বেরিয়ে এসে দ্বিতীয়জনকে ঘিরে ফেলল। একজনের গলা শোনা গেল, বেশ জোরেই সে বলছে, “চলে আসুন বড়দি, কাজ হয়ে গেছে।”

“এসেই তো গেছি ভাই! এই বয়সে কী খাটাখাটনিই না হচ্ছে, রাতে একটু ঘুমোনোরও উপায় নেই! যান দারোগাবাবু, এবার আপনার অতিথিকে নিয়ে যান, ভালো করে খাতিরযত্ন করুন, আরেকজনকেও নিয়ে আসুন আর আমার কথা সত্যি কি না সব মিলিয়ে নিন।” বললেন পিসিমণি।

 

 

পাড়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। পিসিমণি আবার খুনের রহস্য সমাধান করেছেন। পল্লব হাজরা ফোন করে জানিয়েছেন, পিসিমণি যা যা বলেছিলেন সব ঠিক। সীতাংশুকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তিনি পালাননি, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। খুন তিনি করেননি, পাওয়া গেছে যক্ষিণীর মূর্তিও। সাজ যে সন্ধেবেলা বাড়ি পিসিমণিকে সব খুলে বলতে হবে তা বলাই বাহুল্য। মিহির রায় যে আসবেন সে তো আগেই বলে দিয়েছেন। আদি সপ্তগ্রাম থেকেও নাকি অনেকে আসবেন, এমনকি পল্লব হাজরাও। পিসিমণি নাকি তাঁকেও আসতে বলেছেন। বলেছেন, “সবাই আসছে যখন আপনিও আসুন, পায়েস করছি, খেয়ে যাবেন। আমার নীলু বলে আমার মতো পায়েস নাকি কেউ করতে পারে না।”

“পায়েস তো খাব, কিন্তু তুমি আগে সব বলো তো, আমার আর তর সইছে না। কাল রাতে কাকে ধরলে সে তো দেখলাম, কিন্তু তিনি কী করে এর মধ্যে জড়ালেন আর ইন্সপেক্টর হাজরার আরেকজন অতিথিই বা কে সেসব তো কিছুই বলোনি।” নীলু বলল।

“এটা কিন্তু একেবারে ঠিক কথা। আপনি আগে সব বলুন বড়দি।” সবাই সমস্বরে নীলুর কথাতেই সায় দিলেন।

“বেশ ভাই, বলছি সব, শুনুন। তবে এখানে তো অনেকে কিছুই জানেন না, তাই আমাকে আগের কথাও সংক্ষেপে বলতে হবে।” পিসিমণি বলতে শুরু করলেন, “গত শনিবার আদি সপ্তগ্রাম থেকে সমরবাবু আমার কাছে এসেছিলেন একটা যক্ষিণীর মূর্তি নিয়ে কথা বলতে। মূর্তিটা সমরবাবুর ঠাকুর্দা রাজস্থানের এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে পেয়েছিলেন। মূর্তিটা পাওয়ার পরই নাকি ওঁর ব্যাবসার খুব উন্নতি হয়, তাই ওঁর ধারণা হয় যে মূর্তিটা খুব পয়া। ওঁর পর মূর্তিটা পান সমরবাবুর বাবা। উনি নির্দেশ দিয়ে গেছিলেন যে মূর্তিটা যেন বাড়িতেই রাখা হয়, অন্য কোথাও যেন সরানো না হয়। সমরবাবুর দাদা অল্প বয়সে মারা গেছিলেন, সমরবাবুর বাবা তাই মূর্তিটা সমরবাবুকেই দিয়ে যান। মূর্তি বাড়িতেই ছিল, কিন্তু সে জিনিস যে উল্কাপিণ্ড দিয়ে তৈরি আর তার গলার হারে আবার হিরে বসানো আছে এসব কথা কেউই জানতেন না, সমরবাবুও নয়। কেউ জানতেনই না যে মূর্তিটা এত দামি কিছু হবে। সে কথা ওঁকে বলেছিলেন দেবব্রতবাবু। খুব জ্ঞানীগুণী মানুষ ইনি, এসব জিনিসের সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। খবরের কাগজে এই উল্কাপিণ্ড থেকে তৈরি জিনিসের ওপর একটা লেখা বেরিয়েছিল কিছুদিন আগে, সেখানে ওঁর মতামত নেওয়া হয়েছিল। সমরবাবু সে লেখা পড়ে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই সময় সমরবাবুর ছেলে সীতাংশু আর দুই ভাইপো শান্তনু আর অতনুও জেনে যায় যে মূর্তিটা অত দামি। অস্বাভাবিক তো কিছু নয়, ওরকম একটা মূর্তির ফটো দেওয়া ছিল কাগজে। মূর্তি নিয়ে শুরু হল অশান্তি, তিনজনের প্রত্যেকেই চায় সেটা। শান্তনুর আবার অন্য যুক্তি। তার কথা, তার বাবা অল্প বয়সে মারা গেছিলেন বলেই সমরবাবু মূর্তিটা পেয়েছেন, নাহলে কখনোই পেতেন না। এখন এই তিনজনের মধ্যে সে বড়ো, অতএব সমরবাবুর উচিত মূর্তিটা তাকেই দেওয়া। অতনুরও তাই মত, কিন্তু সীতাংশুই বা ছাড়বে কেন? সমরবাবু পড়লেন সমস্যায়। এদিকে দেবব্রতবাবু আবার পরামর্শ দিয়েছেন মূর্তিটা মিউজিয়ামে দিয়ে দিতে কারণ সমরবাবুর আবার এ পরামর্শ মোটেই ভালো লাগেনি, উনি ভাবছিলেন দেবব্রতবাবু আসলে মূর্তিটা হাতানোর চেষ্টায় আছেন। আমি যখন এ কথা দেবব্রতবাবুকে বললাম, উনি তো শুনে একেবারে যাকে বলে বাক্যিহারা হয়ে গেলেন!”

“একদম সত্যি কথা বলেছেন বড়দি। আমি আপনার কথা শুনে আকাশ থেকেই পড়েছিলাম। সমরবাবু যে আমার সম্পর্কে এরকম ধারণা করেছিলেন তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল!” বললেন দেবব্রতবাবু।

“কিন্তু তুমি দেবব্রতবাবুর সঙ্গে দেখা করলে কখন? আমাকে তো বলোনি।” নীলু বলল।

“কখন দেখা করলাম সে কি অত জরুরি কিছু বাছা? করেছি দেখা পরশু এক ফাঁকে, ফোন তো আগে করাই ছিল। কিন্তু ও নীলু, তুই না আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট? কোথায় আমাকে সাহায্য করবি তা না, আমাকে আরো বকাচ্ছিস! এবার তুইই বল না বাবা, সমরবাবু কী কী বলেছিলেন মানে আরো কী কী হয়েছিল। আমি আর অত বকতে পারি না!”

এতে তো নীলু খুশিই হয়, তাই বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে সব বলল। উড়োচিঠি পাওয়া থেকে শুরু করে শান্তনুর মিথ্যে কথা বলা, সমরবাবুকে শাসানো, মূর্তির ছবি নিয়ে দেবব্রতবাবুর একজনকে সঙ্গে করে নিয়ে আসা থেকে প্রদীপ রাহার মূর্তি কিনতে চাওয়া, ফোন করা—সবই।

“আমি সমরবাবুকে বলেছিলাম ওরকম একটা দামি জিনিস বাড়িতে না রাখতে।” পিসিমণি আবার বলতে শুরু করলেন, “ওঁর তখন সে কথা মোটেই মনঃপূত হয়নি, কারণ ও-মূর্তি নাকি বাড়িতে রাখারই কথা। কিন্তু পরে উনি সিন্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন। শনিবার বিকেলে ফোনে আমার সঙ্গে কথা হল। বললেন, এত টেনশন আর সহ্য করতে পারছেন না, মূর্তিটা সোমবারই ব্যাঙ্কের লকারে রেখে আসবেন। কিন্তু তা আর হল না, শনিবার রাতেই খুন হয়ে গেলেন। খুন যে হয়েছেন সেটা অবশ্য আমি প্রথমে জানতে পারিনি। আমি বেশ সকাল সকাল, তখনো সাতটা বাজেনি, আমার মনে আছে, ফোন করেছিলাম সমরবাবুকে সব ঠিকঠাক আছে কি না জানতে। উনি খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তো, তাই। এক মহিলা ফোন ধরে বললেন সমরবাবু মারা গেছেন। শুনে তো আমি বাক্যিহারা! নীলুকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে তুলে নিয়ে চললাম আদি সপ্তগ্রাম। সেখানে গিয়ে জানলাম সমরবাবু খুন হয়েছেন। দারোগাবাবু ছিলেন, তিনি আমাকে খুব খাতির করে সমরবাবুর ঘরে নিয়ে গিয়ে সব দেখালেন। মূর্তি যে নেই তা তো বলাই বাহুল্য, সমরবাবুর ঘরের আলমারির লকারে থাকত, সেখান থেকে বার করে নিয়েছে। সমরবাবুর মাথায় ভারী কোনো জিনিস দিয়ে মেরেছে আর তাতেই উনি মারা গেছে। কিন্তু সে জিনিস সারাবাড়িতে কোথাও পাওয়া গেল না।

“এদিকে আমার মনে হল খুনি ঢুকল কী করে সমরবাবুর ঘরে? সিঁড়ি দিয়ে উঠে যে সদর দরজা সে তো ভেতর থেকে তালাবন্ধ থাকে রাতে। সকালেও ভেতর থেকেই বন্ধ ছিল। তার পাশেই সীতাংশুর সদর দরজা, সে দরজাও বন্ধ ছিল ভেতর থেকে। তাহলে? অবশ্য সীতাংশুর বৈঠকখানা আর সমরবাবুর বৈঠকখানার মাঝে একটা দরজা আছে, সে দরজা দিনে রাতে চব্বিশ ঘণ্টা সবসময়েই খোলা থেকে। তার মানে সীতাংশুর পক্ষে খুন করা সবচেয়ে সুবিধে। সন্দেহও সীতাংশুর ওপর হচ্ছে। একে তো সে খুব বদমেজাজি, অল্পেই রেগে যায়, তার ওপর আগেরদিন সন্ধেবেলা তার সঙ্গে সমরবাবু, শান্তনু আর অতনুর কথা কাটাকাটি হয়েছে। সে নাকি একখানা ডোকরার মূর্তি হাতে নিয়ে শান্তনুর দিকে তেড়েও গেছে আবার নিজের বাবাকে শাসিয়েওছে যে মূর্তি তাকে না দিলে সে যা হোক করে কেড়ে নেবে। দারোগাবাবু প্রথম থেকেই ধরে নিলেন খুন সীতাংশুই করেছে, আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললেনও সে কথা। কিন্তু খেয়াল করে দেখলেন না যে সমরবাবুর সদর দরজায় কী লক লাগানো। হয় না একরকম লক যেগুলো বাইরে থেকে দরজা টেনে দিলেও বন্ধ হয়ে যায়? সেইগুলো।”

“ওরকম লক তো অনেক সময় দরজার নবেও লাগানো থাকে।” বললেন নীলু্র বাবা।

“আমার মনে হল তাহলে তো যে কেউ বাইরে থেকে দরজা টেনে বন্ধ করে দিতে পারবে। যদিও অত রাতে ভেতরে ঢুকল কে সেটাও কথা। এর মধ্যে সেদিনই আবার সীতাংশু উধাও হয়ে গেল। দারোগাবাবু খুব উত্তেজিত হয়ে আমাকে বললেন সীতাংশু নিশ্চিত এই খুন করেছে, নাহলে পালাত না।” পিসিমণি আড়চোখে হাজরার দিকে তাকালেন।

তিনি তখন পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বার করে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে দেখছেন।

“তবে দারোগাবাবু কিন্তু একটা উপকারও করলেন। বললেন সমরবাবুর মোবাইল ফোন নিয়ে এসেছেন। তাতে নাকি শনিবার সারাদিন, রবিবার সকালেও কেউ ফোন করেনি। বুঝলাম খুনি আমার জন্যে… ও নীলু, ইংরিজিতে কী যেন বেশ বলে বাবা, কী ফেলে গেছে?”

“ক্লু পিসিমণি।” নীলু উত্তর দিল।

“হ্যাঁ, ক্লু। মনে পড়ছিল না, বুড়ি হয়েছি কিনা।” পিসিমণি একগাল হেসে বললেন, “বুঝলাম খুনি ক্লু ফেলে গেছে আমার জন্যে। আমিই তো ফোন করেছি সমরবাবুর ওই মোবাইলে শনিবার বিকেলে, রবিবার সকালে। আমার নীলুও খুব বুদ্ধিমান ছেলে। যেই আমি ওকে বললাম, ‘মোবাইল ফোনের কল লিস্ট কেউ উড়িয়ে দেয় কেন বল তো নীলু?’ বাছা বলল, ‘যাতে কেউ দেখে না ফেলে।’ আমার খটকা লাগল। কেন, দেখে ফেললে কী হবে?

“এদিকে আরো কতগুলো খটকা। শান্তনু কেন মিথ্যে কথা বলল? আমি মানসের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বল্টু শিলিগুড়ি গেছে। তাহলে? কী দিয়ে খুন করা হল আর সে জিনিস গেলই-বা কোথায়? অতনু হোমিওপ্যাথি ওষুধ খায়, সমরবাবুই দিয়েছেন, অথচ বলল যে ওর নাকি কোনোদিন হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার দরকার হয়নি! নিজের কানে শুনলাম। দিলীপবাবু পেটরোগা মানুষ, আর্দ্ধেক জিনিস হজমই করতে পারেন না, নিজেই বললেন সে কথা, তিনিও সমরবাবুর কাছে যেতেন দেখাতে অথচ তাঁর বাড়ি থেকেই পেঁয়াজ-রসুন-লঙ্কা দেওয়া রান্নার গন্ধ বেরোয়! পেটরোগা মানুষের জন্যে তো ওরকম রান্না হবে না, বাড়িতেও উনি একাই থাকেন। তার ওপর আবার সীতাংশুকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া আবার একটা কাগজের টুকরো!”

“কাগজের টুকরো! সে আবার কী? তা নিয়ে আবার কী খটকা হবে?” মিহির অবাক হয়ে বলে উঠলেন।

“হ্যাঁ ভাই, কাগজের টুকরো, দলা পাকানো। সে কম জ্বালিয়েছে আমায়? বুঝি বুঝি করেও যেন বুঝতে পারি না! সব মিলিয়ে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। ঠিক করলাম, আগে যাব প্রদীপ রাহার কাছে। মূর্তি কেনার ইচ্ছে ওর ষোলো আনা, সীতাংশু বিক্রি করলেও ওর কাছেই করবে মনে হয়।”

“প্রদীপ রাহা কী করে সমরবাবুর কাছে পৌঁছে গেল এটা কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার বড়দি!” দেবব্রত বললেন, “আমার কাছে যখন এসেছিল, আমি তো ভাগিয়েই দিয়েছিলাম।”

“ভাগিয়ে দিলেও একটা জায়গায় গোলমাল করে ফেলেছিলেন ভাই। প্রদীপ রাহা যখন জিজ্ঞেস করেছিল ওরকম মূর্তি কারুর কাছে আছে বলে আপনি জানেন কি না, আপনি বলে ফেলেছিলেন, ‘থাকলেও আপনাকে বলব কেন?’ ওতেই ও যা বুঝে যাওয়ার বুঝে গেছিল। ঘোড়েল লোক এরা, পারে না হেন কাজ নেই। ও আপনার ওপর নজর রাখছিল। আপনি আমার সমরবাবুর কাছে গেলেন এবার ওই বর্ধমান থেকে আসা ভদ্রলোককে নিয়ে, সমরবাবু আপনাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দিলেন না। দেবেন কী করে, উনি তো আপনাকে সন্দেহ করতেন। যা কথা বলার গেটের সামনে দাঁড়িয়েই হল। সমরবাবু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন, হয়তো জোরে জোরেও কথা বলে থাকবেন, রাস্তায় আশেপাশে কেউ থাকলে কিছুই না বোঝার তো কথা নয়। তারপর শুরু হল সমরবাবু সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া, সমরবাবুর বাড়ির একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করল। যেদিন প্রদীপ রাহা এসেছিল সমরবাবুর কাছে মূর্তি কেনার প্রস্তাব দিতে সেদিন যে বাড়িতে উনি একাই আছেন সে খবরও ওই বাড়ির লোকটিই দিয়েছিল।”

“সে কে পিসিমণি?” নীলুর ছোটোবেলার বন্ধু সম্বুদ্ধ জিজ্ঞেস করল। কোনো রহস্যভেদের পর নীলুদের বাড়িতে যখন বৈঠক বসে, পিসিমণি সব বলেন, তখন এ থাকে না তা কখনো হয় না।

“সে তোমরা ভাবো বাছা। ভেবে বলো দেখি, তোমাদেরও মাথা খাটানোর দরকার আছে। প্রদীপ রাহার সঙ্গে কী কথা হল আমি বরং তাই বলি।” বললেন পিসিমণি, “ও নীলু, তুই যে বলেছিলি প্রদীপ রাহা কি আর তোমাকে বলবে মূর্তি সে পেয়েছে কি না, কিন্তু বলেই তো দিল বাবা।”

“বলে দিল?” নীলু সত্যিই আশ্চর্য।

“প্রথমে আমাকে মোটেই পাত্তা দিতে চাইছিল না। যা ব্যবহার করছিল সে আর কহতব্য নয়! কিন্তু আমিও নিভারানি বামনি, যে কাজে গেছি তা না করে আসি কী করে? রাগের মাথায় সে শর্মা বলে ফেললেন, ‘জেনে রাখুন, ও-মূর্তি এই প্রদীপ রাহার কাছেই আসবে সে যেখানেই যাক না কেন, বুঝলেন?’ আমি যা বোঝার বুঝে ওখান থেকে চলে এলাম। গেলাম আদি সপ্তগ্রামে। গিয়ে খুব কাজের কাজ হল। ডোকরার মূর্তিটা যেটা নিয়ে সীতাংশু শান্তনুর দিকে তেড়ে গেছিল সেটা পাওয়া যাচ্ছিল না। সমরবাবুর ড্রয়িং-রুমে শোকেসের ওপর রাখা থাকত সেটা, ওঁর খুব পছন্দের জিনিস। সেটা পাওয়া গেল। সীতাংশুদের অংশর সদর দরজার পাশে ল্যান্ডিং-এ যে জুতোর র‍্যাকটা আছে, তাতে গোটা দুয়েক জুতোর বাক্স আছে। একটাতে একজোড়া চটি ভরা দেখলাম, আরেকটাতে ওই ডোকরার মূর্তি রাখা, তার নীচে আবার রক্ত লাগা! দারোগাবাবু তো খুব খুশি হয়ে সেটাকেই মার্ডার ওয়েপন ভেবে নিয়ে গেলেন। বললেন আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। অবশ্য উনি আগে থেকেই জানেন কে খুন করেছে। তাছাড়া ও-মূর্তিতে যে সীতাংশুর আঙুলের ছাপ থাকবে তা তো জানা কথাই। আমার কিন্তু খটকা লাগছিল। মনে হচ্ছিল যত সোজা ব্যাপার মনে করা হচ্ছে তত সোজা নয়। সেদিন আরো একটা খবর জানতে পারি। যে বলেছিল সে অবশ্য দরকারি বলে বলেনি, কিন্তু আমার সে খবর খুব কাজে লেগেছিল। তারপর থেকেই আবার নতুন করে সব ভাবনা শুরু করলাম। প্রথমটা কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম। নীলুকে বললামও সে কথা। তাতে বাছা আমার ভারি বিশ্বাসের সঙ্গে বললে, ‘তুমি না পারলে কেউ পারবে না পিসিমণি।’ মনে মনে বললাম, ‘পারতে তোমাকে হবেই নিভারানি বামনি, তোমার নীলুর এত বিশ্বাস তোমার ওপর, সে কি কখনো নষ্ট হতে দেওয়া যায়?’ তারপর থেকেই সব আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে শুরু করল।” পিসিমণি থামলেন, বোধ হয় দম নেওয়ার জন্যেই।

“এক এক করে বলুন বড়দি, শুনি।” দেবব্রত বললেন, “মার্ডার ওয়েপনটার কথাই বরং আগে বলুন।”

“নীলু আমার খুব কাজের কাজ করেছে। সমরবাবুর সব ঘরের ফটো তুলে এনেছে। সেসব ফটো খুঁটিয়ে দেখে আমি বুঝলাম খুনি অতি চালাক। ওই ডোকরার মূর্তি দিয়ে খুন করাই হয়নি। ওটাতে রক্ত মাখিয়ে খালি জুতোর বাক্সে ঢুকিয়ে রাখা রয়েছে সীতাংশুকে ফাঁসানোর জন্যে আর নিজেকে বাঁচানোর জন্যে।”

“সেটা আবার তুমি কী করে বুঝলে বড়দি? তাও ফটো দেখে?” খুব আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন নীলুর বাবা।

“হায় রে আমার পোড়া কপাল! মন দিয়ে দেখলে, ভাবলে যে অনেক কিছু বোঝা যায় এও জানো না ভাই। কী আর করব, যাদের কাজ তারা যদি না করে অগত্যা এই নিভারানি বামনিকেই করতে হয়। তাছাড়া সমরবাবু আমাকে বলে গেছিলেন, কিছু হলে আমি যেন দেখি। যাই হোক, ফটোগুলো মন দিয়ে দেখেই সব বুঝলাম। দারোগাবাবু, আপনিও তো ঘরটা দেখেছেন। বলুন তো কী কী দেখেছেন?”

“এই কথাটা আমারও জানার ইচ্ছে। কী করে আপনি বুঝলেন যে মার্ডার ওয়েপন ডোকরার মূর্তিটা নয়, অন্য কিছু, আর সেটা ঘরেই আছে? আচ্ছা দাঁড়ান, বলছি ঘরে কী দেখেছিলাম। খাটের পাশে মেঝেতে সমরবাবু পড়ে, মাথা থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। ঘরে একটা বড়ো স্টিলের আলমারি, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলনা আছে। খাটের মাথার দিকে ঠাকুরের সিংহাসন…”

“ওই সিংহাসনে কী দেখলেন বলুন তো ভাই।”

“ঠাকুর-দেবতার ছবি ছিল, আর… আর কৃষ্ণর একটা বড়ো পেতলের মূর্তি ছিল। ডোকরার মূর্তিটার মতোই সাইজ হবে বা তার থেকেও একটু বড়ো। সিংহাসনের পাশে একটা খাট ছিল, ছোটো, ঠাকুর শোওয়ানোর খাট মনে হয়।”

“সবই তো জানেন, সবই তো দেখেছেন ভাই, কিন্তু ধরতে পারলেন না কেন? সমরবাবু কৃষ্ণভক্ত ছিলেন, নিষ্ঠাভরে পুজো করতেন, ঘড়ি ধরে কৃষ্ণকে শয়ান দিতেন, আবার ওঠাতেন। কখনো এর ব্যতিক্রম হত না। সমরবাবু খুন হলেন রাত একটা থেকে তিনটের মধ্যে। তাহলে কৃষ্ণকে খাট থেকে ওঠাল কে? তখন তো কৃষ্ণর খাটে শুয়ে থাকার কথা। খেয়াল করেছিলেন কি কৃষ্ণর গায়ের হলুদ রঙের সিল্কের চাদর মেঝেতে পড়ে ছিল? সমরবাবু ভক্ত মানুষ, তিনি কৃষ্ণকে ওঠালেও কি এমনভাবে তাড়াহুড়ো করে ওঠাবেন যে গায়ের চাপা মাটিতে পড়ে যাবে আর পড়ে গেলেও তুলবেন না? তার মানে অন্য কেউ রাতে কৃষ্ণকে তুলেছে। কে হতে পারে আর খুনি ছাড়া? ওটা দিয়ে মেরে মুছে-টুছে সিংহাসনে রেখে দিয়েছে। হাতের কাছে বোধ হয় ওটাই পেয়েছিল। ঠাকুরের মূর্তি দিয়ে খুন করা হবে এটা চট করে কারো মনে হবে না। কিন্তু উত্তেজনার বশে আর খেয়াল করেনি যে কৃষ্ণর তখন বিছানায় শুয়ে থাকার কথা!”

“কী নজর আপনার বড়দি! অবিশ্বাস্য!” দেবব্রত বললেন।

“আর ফোনের কল লিস্ট ওড়ানোটা কী ব্যাপার পিসিমণি? ওটা কে করেছে?” নীলুর বন্ধু সম্বুদ্ধ বলল।

“এই তোমাদের ভুল বাছা। আগে ভাবো কেন করেছে, তারপর তো ‘কে’-র প্রশ্ন। কিন্তু তোমরা দেখি উলটো পথেই যাও! এটা বুঝতে আমারও অবশ্য সময় লেগেছে। নিজেকেই বলছিলাম, ‘হাল ছাড়লে হবে না নিভারানি বামনি, ভাবো, ভাবো, ভেবে বার করো।’ ওই মার্ডার ওয়েপনটার ব্যাপার বুঝতেই আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হতে লাগল। মনে হল সীতাংশুকে ফাঁসানোই হচ্ছে, ও খুন করেনি। তাহলে কে করেছে? খুনি ঢুকল কী করে? হঠাৎ মনে হল সমরবাবু যদি নিজেই দরজা খুলে দেন? মানে চেনা লোক? শান্তনু-অতনুও হতে পারে। সে যদি রাতে ফোন করে সমরবাবুকে? তাহলে তো কল লিস্ট ওড়ানো অবশ্যই দরকার। শান্তনু-অতনুকে সন্দেহ করার আরও কারণ আছে। কল লিস্ট ওড়ানো হয়েছে অনেক পরে। সকালে আমি ফোন করার পরে। বাইরের খুনি হলে কি সে এতক্ষণ ওখানে থাকত বা সমরবাবুর মোবাইল ফোন পেত? সে ফোন তো বাড়িতেই ছিল। তার মানে বাড়ির লোক। খুনি কিন্তু আবার ভুল করে বসল। নিজের কলটা ওড়ালেই হত, তা না করে দিল শনিবারের সব কল উড়িয়ে, রবিবারের সকালেরও।

“কিন্তু শুধু খুনি কে জানলেই হবে না, মূর্তিও উদ্ধার করতে হবে। দলা পাকানো কাগজের টুকরোটা নিয়ে খটকা ছিলই, এবার সেটাও পরিষ্কার হল।”

“কিন্তু আমাদের কাছে তো কিছুই পরিষ্কার হল না বড়দি, কিছুই তো বুঝতে পারছি না কাগজের টুকরো থেকে কী বোঝা গেল।” নীলুর মা বললেন।

“একজনের বাড়িতে কাগজের টুকরোটা পেয়েছিলাম। অদরকারি জিনিস ভেবে ছুড়ে বাড়ির দরজার সামনে ফেলে দিয়েছিল, অন্তত তার কাছে আর দরকার ছিল না। আমি তখন তো অত কিছু ভেবে দেখিনি, কী মনে হয়ে নীচু হয়ে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম।”

“মনে পড়েছে!” নীলু চেঁচিয়ে উঠল, “আমি তোমাকে নীচু হতে দেখে জিজ্ঞেসও করলাম, ‘কী হয়েছে পিসিমণি?’ তুমি বললে, ‘কাঠ-পিঁপড়ে কামড়েছে।’ তখনই তুলেছিলে ওটা, তাই না?”

“পিঁপড়ে সত্যিই কামড়েছিল বাছা। পায়ের দিকে তাকাতেই দলা পাকানো কাগজটা নজরে পড়ল, কিছু না ভেবে তুলে নিয়ে বটুয়ায় পুরে নিয়েছিলাম। ছেঁড়া কাগজ যেন কোথায় দেখেছিলাম। পরশুদিন সমরবাবুর ঘরে দেখলাম একটা খবরের কাগজ পড়ে, তার দুটো জোড়া পাতার অনেকটাই ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে, যেন কেউ খুব তাড়াহুড়োয় ছিঁড়েছে।”

“তাই ভাবি, আপনি কেন পুরোনো খবরের কাগজ নিয়ে যেতে চাইছেন! সত্যিই আপনি বুঝিয়ে না বললে আপনার কাজকর্ম কিছুই বোঝা যায় না।” হাজরা বললেন।

“বোঝার চেষ্টা করলে আপনিও বুঝতে পারতেন ভাই, কিন্তু আপনি তো চেষ্টাই করলেন না! সে যা হোক, বাড়িতে এনে মিলিয়ে দেখতেই বোঝা গেল দলা পাকানো কাগজটা ওই কাগজেরই অংশ। মনে হয় মূর্তিটা মুড়েছিল, বাড়িতে এনে কাগজটা খুলে দলা পাকিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। ততক্ষণে আমি বুঝেও গেছি খুনি কে আর মূর্তি কার কাছে আছে।”

“খুনি কে? বলো না পিসিমণি।” “বলুন বড়দি কে খুন করেছিল?” “তক্ষুনি তুমি বুঝে ফেলেছিলে খুনি কে?” এরকম নানান প্রশ্ন নানান কণ্ঠস্বরে একসঙ্গে উঠল।

“আর না বুঝলে চলে কখনো?” পিসিমণির সাফ উত্তর, “ওই প্রদীপ রাহার কথা শুনে একটা কথা আমি বুঝেছিলাম মূর্তি শনিবার রাতে যেই সরিয়ে থাকুক না কেন এখনো তার কাছেই আছে। মূর্তি হাতবদল হলে রাহা খবর পেত না এ হতে পারে না। ওসব খবর আমার থেকে ঢের বেশি সে রাখে, রাখার কায়দাও জানে। বুঝলাম তার মানে মূর্তি এখনো খুনি বা খুনির সহকারীর কাছেই আছে। তাছাড়া আমিও মিহিরবাবুকে ফোন করে মূর্তির ব্যাপারে সব বলেছিলাম, ওঁর সঙ্গে তো আবার অনেকের চেনাশোনা, পুলিশের ওপর মহলেও। এসব কাজকর্মে কারা যুক্ত সে পুলিশও জানে, কোথাও নতুন কোনো মূর্তি হাতবদল হলে সেসব খবর পাওয়ার উপায় তাদের আছে। মিহিরবাবু বলেওছিলেন আমাকে কোনো সাহায্যের দরকার হলে উনি করবেন। কাজেই যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।

“এদিকে পরশু আদি সপ্তগ্রাম থেকে ফেরার পথে দীপক বলল, ‘পিসিমণি, আমার এক ছোটোবেলার বন্ধু এখন এখানে আছে, একটা ওষুধের দোকানে কাজ করে। অনেকদিন দেখা হয়নি। আপনার কাজ তো হয়ে গেছে, আপনার যদি অসুবিধে না থাকে আমি দু-মিনিট দেখা করে যাব? যাওয়ার রাস্তাতেই পড়বে দোকান।’ আমি বললাম, ‘এ আর এমন কী কথা বাছা, যাও বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে এসো, তবে বেশি দেরি কোরো না যেন।’ দীপক ওষুধের দোকানের কাছে গাড়ি থামিয়ে, ‘এক্ষুনি চলে আসব পিসিমণি।’ বলে নেমে গেল। আমিও নেমে পড়লাম, কী করব গাড়িতে বসে? ও মা, দেখি দীপক আবার বন্ধুকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসছে আমার সঙ্গে আলাপ করাবে বলে! বলে কিনা, ‘ইনিই আমাদের পিসিমণি, অনেক বড়ো বড়ো রহস্যের সমাধান করেছেন!’ সে ছেলেও একগাল হেসে বলল, ‘আপনার কথা অনেক শুনেছি আমি, আমার নাম চন্দন। এখানে তো সমর রায়ের খুনের ব্যাপারে এসেছেন? ওঁর এক ভাইপো আমাদের দোকানে আসেন তো ওষুধ কিনতে, এই তো শনিবারও এসেছিলেন।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন ভাইপো? বড়োজন না ছোটোজন?’ সে বলল, ‘ছোটোজনই মনে হয়, ওই যিনি ইস্কুলে পড়ান।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ওষুধ কিনেছিল বলতে পারবে?’ বলল, ‘আমিই তো দিয়েছিলাম, ঘুমের ওষুধ।’ স্ত্রী আর মেয়েদের খাবার মিশিয়ে দিলে তারা তো গভীর ঘুমোবে, অতনু কখন বেরোল, কখন ঢুকল, কিছুই বুঝতে পারবে না!”

“তার মানে অতনুই খুনি!” ঘরে আবার সমস্বরে আওয়াজ উঠল।

“ভেবে দেখলে ওর খুন করার পেছনে কারণ আছে। সমরবাবু কাউকে মূর্তি দিলে দিতেন হয় সীতাংশুকে নয় শান্তনুকে, ও কিছুতেই পেত না, তাই এই রাস্তা। আমি ততক্ষণে কী করব ঠিক করে ফেলেছি। কারণ এরা অতি ধুরন্ধর, এদের ফাঁদে না ফেলতে পারলে হবে না। শুধু একটু সন্দেহ ছিল দারোগাবাবু আমার কথা শুনবেন কি না।”

“কী যে বলেন বড়দি, আমি কেন শুনব না! আপনি যা বলছেন তাই করিনি কি?” হাজরা মাথা চুলকে বললেন।

“তা অবশ্য করেছেন। আমি দারোগাবাবুকে বোঝালাম একবার আমার কথা শুনে দেখুন, আমার মন বলছে ফল হবে। এরপর কী হল আপনিই বলুন না ভাই। আমি আর বকতে পারি না, মুখ ব্যথা হয়ে গেল।”

পল্লব হাজরা নড়েচড়ে বসলেন। “বড়দি আমাকে ফোনে বললেন উনি নিশ্চিত ডোকরার মূর্তি দিয়ে খুন করা হয়নি আর সীতাংশুও খুন করেনি। মার্ডার ওয়েপন এখনো ও-বাড়িতেই আছে আর বললেন মূর্তি আছে দিলীপ পাত্রর কাছে। বড়দির কথামতো আমি দিলীপ পাত্রকে একটা উড়ো ফোন করালাম যেন কেউ মূর্তিটা কিনতে চায় এইভাবে। এও বলা হল যে ও-মূর্তি বিক্রি করার সমস্যা আছে, পুলিশের ওপরের মহল অবধি খবর চলে গেছে। তাছাড়া প্রদীপ রাহা এখনো জানতে পারেনি তাই, পারলে কি সে ছেড়ে দেবে নাকি? এইবেলা যদি মূর্তিটা বিক্রি করে দিতে পারে তাহলে ওরই লাভ, কাকপক্ষীতেও টের পাবে না। ও-মূর্তি নিজের কাছে বেশিদিন রাখা যে বিপজ্জনক তাও ভালো করে বুঝিয়ে বলা হল। সাড়ে বারোটার সময়ে ওর বাড়ির পাশেই যে বাড়িটা ভাঙা হচ্ছে সেখানে মূর্তি নিয়ে আসতে বলা হল। সে একহাতে মূর্তি দেবে, অন্য হাতে টাকা নেবে। কোনো চালাকি যেন না করে এও সাবধান করে দেওয়া হল। বলা হল তোমার বাড়ির ওপর নজর রাখা হচ্ছে, মূর্তি চালান করতে গেলেই ধরা পড়ে যাবে। দিলীপ পাত্রর টাকার দরকার ছিল, সে টোপ খেল। তারপর তো রাতেই তাকে ধরা হল, বড়দিও ছিলেন আমাদের সে নৈশ অভিযানে।

“এই দিলীপও তো পুরোনো পাপী। অল্প বয়সে চুরিচামারি ভালোই করেছে, জেলও খেটেছে। তারপর হঠাৎ কোথায় ডুবে ছিল এতদিন কে জানে, হঠাৎ কিছুদিন আগে এখানে এসে উদয় হয়, ভাড়া থাকতে শুরু করে। এখন অবশ্য কিছু করত না, দল-টল সব ভেঙে গেছিল তো, নিজের বয়সও হয়েছে, একা কিছু করার সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই। এখানে এসে সমরবাবুর সঙ্গে আলাপ হল। একদিন গেছিল ওঁকে দেখাতে, সেই সময় বাপ-ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি কিছু শুনে ফেলেছিল। কায়দা করে সমরবাবুকে বোঝালো উনি যে খুব অশান্তিতে আছেন তা সে বুঝতে পেরেছে, তার নাকি এসব বোঝার ক্ষমতা আছে, তবে সবাইকে বলে না, তেমন বুঝলেই বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে ওঁকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছিল, কিছুটা পেরেওছিল। সমরবাবুরও তখন দুর্বল মন, বলে ফেলেছিলেন যে একটা জিনিস ছেলে-ভাইপোদের মধ্যে কাকে দেবেন এই নিয়ে অশান্তি। এসব শুনে মাথায় আবার বদমাইশি চাগাড় দিল। অতনুর সঙ্গে আলাপ করে ডিটেলে সব জানতে পারল। মূর্তি পেলেও যে হয় সীতাংশু নয় শান্তনু পাবে, তার কপালে লবডঙ্কা এটা দিলীপই অতনুর মাথায় ঢুকিয়েছিল। অতনুরও মাথা খারাপ হল, সামনাসামনি শান্তনুকে সাপোর্ট করত, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অন্য মতলব আঁটত। তারপর যেই শুনল সমরবাবু সোমবার মূর্তি লকারে রেখে আসবেন ঠিক করেছেন, অমনি প্ল্যান ঠিক হয়ে গেল।

“রাতে ফোন করে সমরবাবুকে বলে যে অম্বলের ব্যথাটা খুব বেড়েছে। সমরবাবু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন, রাতবিরেতে কেউ এলেও ফেরাতেন না। অতনু নাকি অম্বলে খুব ভুগত, সমরবাবুই ওষুধ দিতেন। সমরবাবু সে রাতে ভালো ঘুমোননি, সন্ধেবেলার ওই অশান্তির কারণে। অতনু এল। সমরবাবুর আলমারির চাবি কোথায় থাকত সে জানত। সমরবাবু ওষুধ তৈরি করছেন, সে চাবিটা নিয়ে আলমারি খুলে ফেলল। সাবধানেই খুলল, চাবিতে যাতে আঙুলের ছাপ না পড়ে। পরিষ্কার ভাষায় সমরবাবুকে বলল যে সে মূর্তিটা নিয়ে যেতেই এসেছে, ভয়ও দেখাল। কিন্তু সমরবাবু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই খাট থেকে কৃষ্ণমূর্তি তুলে নিয়ে মাথায় মারল। তারপর নিপুণ হাতে সব কাজই করল, কিন্তু ওই যে বলে না অপরাধীরা কিছু না কিছু ক্লু ফেলেই যায়! ওষুধের বাক্স সরাল, ডোকরার মূর্তিটা রুমাল দিয়ে ধরে নিয়ে এসে রক্ত মাখিয়ে জুতোর বাক্সর মধ্যে ঢুকিয়ে রাখল, ওটা নাকি সীতাংশু সোফার ওপর ছুড়ে ফেলেছিল। সেইরকমই পড়েছিল তখনো, কৃষ্ণর মূর্তিটা থেকে রক্ত মুছল, কিন্তু রাখল সিংহাসনে। তারপর যক্ষিণীর মূর্তি নিয়ে বেরিয়ে চলে এল। কিন্তু মূর্তিটা নিজের কাছে রাখতে ঠিক সাহস হচ্ছিল না, পাত্রকে ফোন করলে সেই এসে নিয়ে যায়। বিক্রির ব্যবস্থা পাত্রই করবে এরকমই কথা হয়েছিল। জেরায় দিলীপ আর অতনু এসবই স্বীকার করেছে।

“শান্তনুরও মূর্তি পাওয়ার ইচ্ছে কম ছিল না, কিন্তু খুন করে নেওয়ার এলেম ছিল না। ভয় দেখাত, হুমকি দিত, অশান্তি করত, প্রদীপ রাহার সঙ্গে ষড়ও ছিল—রাহা মূর্তি পেলে ও কিছু টাকা পাবে আর ও পেলে সোজা রাহার হাতেই তুলে দেবে। এক্ষেত্রেও যে কিছু টাকা পাবে তা তো বলাই বাহুল্য।”

“সীতাংশুকে কিডন্যাপ তাহলে কে করল? ওই প্রদীপ রাহাই?” দেবব্রত জিজ্ঞেস করলেন।

“সে আর বলতে!” পিসিমণি বললেন এবার, “শান্তনুই প্রদীপ রাহাকে ফোন করে সমরবাবুর খুন হওয়া আর মূর্তি চুরির খবর দিয়েছিল, সীতাংশুকে যে পুলিশ সন্দেহ করছে সেও বলল। প্রদীপ রাহা করল আরেক ভুল। সেও এটা সত্যি ভেবে সীতাংশুকে অপহরণ করল মূর্তি পাওয়ার জন্যে। পুলিশ রাতেই সীতাংশুকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু তুমি ওদের পাল্লায় গিয়ে পড়লে কী করে?” পিসিমণি সীতাংশুকে জিজ্ঞেস করলেন।

সীতাংশু এতক্ষণ একটা কথাও বলেননি, চুপ করে বসে সব শুনছিলেন। এবার বললেন, “বাজারে যাওয়ার দরকার হয়েছিল। কথা ছিল আমি রবিবার সকালে করে রাখব, তা সে তো আর হয়নি। বাজারে যাওয়ার একটা শর্টকাট রাস্তা আছে, একটু নিরিবিলি। তাও হামেশাই যাই আমি ও-রাস্তা দিয়ে। সেদিনও যাচ্ছি, একটা গাড়ি এসে একেবারে পাশে থামল। গাড়ির দরজা খুলে একটা হাত বেরিয়ে এল, সে হাতে রিভলভার। আমার কোমরে সেটা ঠেকিয়ে আমাকে চুপচাপ গাড়িতে উঠতে বলল। ওপাশের দরজা দিয়ে তখন আরো দুজন নেমে এসেছে। গাড়িতে ওঠার পর আমাকে অজ্ঞান করে দিয়েছিল। জ্ঞান হল যখন দেখি চেয়ারে বেঁধে রেখেছে আর খালি একই প্রশ্ন, মূর্তি আমি কোথায় রেখেছি।”

“সমরবাবুর বাবার ব্যাপারটা কী পিসিমণি, শান্তনুবাবু কীসব যে বলছিলেন?” নীলু জিজ্ঞেস করল।

“ওটা মিথ্যে বলেনি। আমি মুরারিবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জেনেছি, সমরবাবুর বাবা ওই সময়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, পরে অবশ্য উনি এসব থেকে দূরে সরে যান এবং খুব অনুতপ্তও হয়েছিলেন।” পিসিমণি বললেন।

“যাক, বড়দির জন্যে শেষ অবধি সব রহস্যের সমাধান হল।” মিহির বললেন।

সীতাংশু পিসিমণির হাত ধরে বললেন, “আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাব, কী বলে কৃতজ্ঞতা জানাব ভেবে পাচ্ছি না। আপনি না থাকলে বোধ হয় আমি আর ছাড়াই পেতাম না।”

“তোমার বাবা আমাকে বলে গেছিলেন কিছু হলে দেখতে। অবশ্য উনি নিজেই যে এভাবে নিজের ভাইপোর হাতে খুন হয়ে যাবেন, এতটা বোধ হয় ভাবেননি। আমিও ওঁকে কথা দিয়েছিলাম যে সত্যি যদি কিছু হয় তাহলে আমি অবশ্যই যাব। কথা দিয়ে কথা না রাখার পাত্রী নিভারানি বামনি নয় ভাই।” পিসিমণি বললেন, “তুমি কিছু না বললেও কে খুন করল আর মূর্তি কোথায় গেল এ আমি বার করেই ছাড়তাম। তবে তোমাকে বলি, এত মাথা গরম করার অভ্যেস ভালো নয়। এর জন্যে কীরকম বিপদে পড়তে হয় দেখলে তো? শুধু তুমি নও, তোমার জন্যে এরাও বিপদে পড়বে। আর মূর্তিটা নিয়ে কী করবে ভেবে দেখো। এরপর আর বাড়িতে রাখা কি ঠিক হবে? তোমার বাবার জিনিস, কাজেই ও তুমিই পাবে।”

“বাবা বলতেন ও-মূর্তি নাকি পয়া, সবসময় নিজের কাছে রাখতে হয়। অথচ দেখুন ওই মূর্তির জন্যে নিজের বাড়িতে, নিজের ঘরেই খুন হয়ে গেলেন! দেবব্রতবাবুই ঠিক বলেছেন, ও-জিনিস মিউজিয়ামে থাকাই ভালো। সত্যি কথা বলতে ও তো আমাদের জিনিস নয়।”

“সেই ভালো। তোমার যদি মিউজিয়ামে দিতে ইচ্ছে হয় তাহলে দেবব্রতবাবু ব্যবস্থা করে দেবেন, দেবেন তো ভাই?”

“আপনি বলছেন আর আমি দেব না! বলেন কী বড়দি!” দেবব্রত বললেন।

ওঁর বলার ধরনে সবাই হেসে উঠল।

“তবে আমার একটা ইচ্ছে কিন্তু পূরণ হল না। সে পূরণ করা দারোগাবাবুর হাতে। মূর্তিটা দেখার ইচ্ছে ছিল। সেটা তো শুনলাম এখনো থানায় আছে।” পিসিমণি বললেন।

“চলুন আমার সঙ্গে, দেখে আসবেন। আপনি দেখতে চাইছেন আর আমি দেখাব না! বলেন কী! রহস্যের সমাধান তো আপনিই করলেন!” পল্লব হাজরাও দেবব্রতর সুরে বললেন।

“ঠিক কথা। আপনার জবাব নেই বড়দি। কী করে যে এতসব বার করেন! মাথা খেলে বটে আপনার!” নীলুদের এক প্রতিবেশী বললেন।

“মাথা তো খেলানোর জন্যেই ভাই। না খেলালেই বরং তাতে জং ধরে আর তখনই যত মুশকিল। কিন্তু এই কথাটাই আমি সবাইকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে পারি না। পোড়া কপাল আমার!” বললেন পিসিমণি।

—সমাপ্ত—

।।পরের সংখ্যা থেকে নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস নিয়ে ফিরে আসছেন পিটার বিশ্বাস।।

তার বাপকে টেনে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল গোলক দেবতার মন্দিরের নির্বাক পুরুতরা। গোলকদেবতার মন্দিরে কোনো প্রহরা নেই, কিন্তু কারো শক্তি হয় না তাঁর কাছে পৌঁছোবার। তাঁর আশীর্বাদে সিন্ধুনদীর তীর জুড়ে মাথা তুলেছে দুর্ধর্ষ, নিষ্ঠুর, উন্নত মেলুহান সভ্যতা। তাড়া খাওয়া পশুর মতই সিন্ধু নদীর ধার ধরে শহর থেকে শহরান্তরে, তারপর লোথাল থেকে জাহাজের মাল্লা হয়ে উর নগরী। এইখানে এসে অবশেষে থমকে দাঁড়াল সে। উর নগরীর সেই বৃদ্ধ পণ্ডিত তাকে বললেন, "পালিও না। ঘুরে দাঁড়াও। রাক্ষস গোলকদেবতার মৃত্যুবাণ আমি জানি।" তারপর? কেমন করে জন্ম নিল সিনন্ধু উপত্যকার উপাস্য দেবতা পশুপতি? এক আশ্চর্য ঠাসবুনোট থ্রিলারে সিন্ধু সভ্যতার সূচনা থেকে অন্তের কাল্পনিক ইতিহাস। 

সিন্ধু নদীর তীরে

 

 অদিতি ভট্টাচার্যের আরো লেখা               জয়ঢাকের সমস্ত ধারাবাহিক একত্রে

 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s