বৈজ্ঞানিকের দপ্তর- মহাবিশ্বে মহাকাশে-গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে -বুধ গ্রহ -কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় শ২০২১

মহাবিশ্বে মহাকাশে সব পর্ব একত্রে

bigganbudh

‘বেড়াতে গেলে কেমন হয়?’ কথাটা শুনে তিন্নি লাফিয়ে উঠে বলল, কোথায় যাবে- দেশের কোথাও না বিদেশে, পাহাড়ে, জঙ্গলে না সমুদ্রে? পাশে ওর দিদি পিঙ্কি বসেছিল। মোবাইল ঘাঁটছিল। মুখ না তুলেই বলল, ‘সমুদ্র।’ সঙ্গে সঙ্গে তিন্নি বলে উঠল, ‘পাহাড়।’ ব্যাস, শুরু হয়ে গেল দুই বোনের তর্কাতর্কি। বরাবর এমনটাই হয়ে আসছে। পিঙ্কি যা বলে তিন্নি তার উল্টো বলে আবার তিন্নি কিছু বললে পিঙ্কি তার উল্টো বলবে। না থামালে চলতেই থাকবে দুই বোনের তর্ক। তাই তাড়াতাড়ি ওদের থামিয়ে বললাম, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র কোথাও যাব না। যেখানে যাব সেখানে কোনো গাড়ি যায় না, জাহাজ বা নৌকো যায় না এমনকী হেঁটেও যাওয়া যায় না। আমার কথা শুনে দুজনেই নড়েচড়ে বসল, একসঙ্গে বলে উঠল ‘তাহলে কীভাবে যাব?’ আমি বললাম, ‘মানস ভ্রমণে।’ আবারও দুজনে একসঙ্গে বলে উঠল, ‘তার মানে?’ আমি বললাম, ‘কল্পনায়।’ আমার কথা শুনে পিঙ্কি উৎসাহ হারিয়ে আবার ওর মোবাইলে মনোনিবেশ করল। তিন্নি আঁড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কোথায় যাবে?’ আমি বললাম, ‘বুধ গ্রহে।’ আমার কথা শুনে তিন্নি আমার পাশে এসে বলল, ‘বেশ শুরু কর, দেখি তোমার মানস ভ্রমণ কতটা ইন্টারেস্টিং হয়।’ পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে ওকে বসতে বললাম।

দেবতাদের দূত বুধ:

আগেকার দিনে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য রাজা-মহারাজাদের অতি বিশ্বস্ত কিছু লোক থাকত। এরা ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন হত। এদের বলা হত দূত। দেবতাদের খবর আদানপ্রদানকারী দ্রুতগতিসম্পন্ন দূতের নামানুসারে এই নাম রাখা হয়েছিল। বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। শুধু তাই নয়, সৌরজগতের যে কোনো গ্রহের তুলনায় দ্রুতগতিতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তাই প্রাচীনকালে এমন নামকরণ করা হয়েছিল। বুধ কি চাঁদের পুত্র হতে পারে? আমাদের পুরাণে কিন্তু তেমনি বর্ণনা করা আছে।

প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে বুধ গ্রহের নামকরণঃ

শুধ আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য প্রচীন সভ্যতাগুলিতেও বুধ গ্রহের নানা নাম ছিল। সুমেরীয় সভ্যতায় এই গ্রহটি ‘উবু-ইদিম-গাড্‌-উড্‌’ (Ubu-idim-gud-ud) নামে পরিচিত ছিল। ব্যাবিলনীয়রা এর নাম রেখেছিল ‘গা-আড্‌’ (gu-ad) বা ‘গা-উটু’ (gu-utu)। মিশরের দেবতা থথ্‌ (Thoth) ছিলেন মহাবিশ্ব সৃষ্টিকারী শক্তির মানবিক রূপ। তিনি এই শক্তি পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী দেবী মাত্‌ (Maat)-এর কাছ থেকে। মিশরবাসীরা অতীতে বুধ গ্রহকে দেবতা থথ্‌ বলে মনে করত। ‘স্যুই জিং’ প্রাচীন চৈনিকদের দেওয়া বুধ গ্রহের নাম। ইংরেজিতে বুধকে বলা হয় মার্কারি (Mercury)। এই নামটি অবশ্য প্রাচীন রোমানদের দেওয়া। তাদের কাছে গ্রিক দেবতা ‘হারমেস’ (Hermas)-এর পরিচয় হল মার্কারি। এখান থেকেই বুধ গ্রহের নামকরণ হয় মার্কারি।

সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধকে পৃথিবী থেকে সহজে দেখা যায় না:

সৌরজগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধকে পর্যবেক্ষণ করা খুবই কষ্ঠসাধ্য ব্যাপার। এর কারণ এটি সূর্যের অতি নিকটবর্তী গ্রহ। সূর্যের সঙ্গে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রি। তাই পৃথিবী থেকে সহজে একে দেখা যায় না। কেবল মাত্র সকালে ও সন্ধ্যায় ক্ষীণ আলোয় এটি দৃশ্যমান হয়।

উনিশ শতকে অনেকেই দাবি করেছিলেন যে বুধপৃষ্ঠের খুঁটিনাটি নজর করা সম্ভব হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বিতর্ক ছিল। ১৮৮৯ সালে ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী গিওভান্নি ভার্জিনিও শিয়াপারেলি প্রথম বুধ গ্রহের বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করলে তখনকার মতো যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটেলেও পার্সিভাল লাওয়েল, টি. জে. জে. সি (T. J. J. See), ইউজিন মেরি আন্তোনিয়াদি প্রমুখ জ্যোতির্বিদগণ বুধ গ্রহ নিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত ‘La Planete Mercure’ বইতে আন্তোনিয়াদি তাঁর পর্যবেক্ষণ তথা গবেষণার ফলাফল বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করেন। যদিও লেখকের অনেক তথ্যই আধুনিক জ্যোতিরবিদদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

বুধ অভিযান:

bigganbudh03

পৃথিবী থেকে বুধ গ্রহকে ক্ষণিকের জন্য দেখা যায়। তাই গ্রহটিকে পৃথিবী থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ কথা আগেই বলেছি। তাই বুধপৃষ্ঠের খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিজ্ঞানীরা গ্রহটির আকাশে মহাকাশযান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৯৬২ সালে শুরু হল বুধ অভিযানের পরিকল্পনা। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে ১৯৭৩ সালের ২ নভেম্বর কেপ কেনেডি থেকে ‘অ্যাটলাস-সেন্টোর’ রকেটের মাথায় চেপে বুধের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল মহাকাশযান ‘মেরিনার-১০।’ এই প্রথম গ্রহ অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সৌর পাল প্রযুক্তি’ (সোলার সেইল টেকনিক)।  পাল তোলা নৌকা বাতাসের ধাক্কায় যেমন নিজে থেকে চলতে থাকে তেমনই সৌর-বাতাসের ধাক্কায় মহাকাশযানটি বুধ গ্রহের দিকে এগোতে থাকে। এক্ষেত্রে মহাকাশযানের সৌরকোষের প্যানেল দুটিকে পাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এরফলে জ্বালানির অনেকটাই সাশ্রয় হয়। নানা বাধাবিপত্তি কাটিয়ে মেরিনার-১০ বুধের আকাশে পৌঁছয় ১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ।

এরপর সূর্যকে কেন্দ্র করে মহাকাশযানটি ১৭৬ দিনে একবার বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ছবি তুলতে থাকে। তিনবার প্রদক্ষিণের পর গতিপথ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন জেটের সব জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ফলে যানটির ভিতরের তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় সমস্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি। সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায় মেরিনার-১০। এই অভিযান থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলি থেকে বিজ্ঞানীরা বুধ গ্রহের ভূপৃষ্ঠের ৪০ শতাংশ মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হন।

বুধের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় অভিযান:

bigganbudh02

প্রায় ৩৫ বছর পর নাসার বিজ্ঞানীরা বুধ অভিযানের দ্বিতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেন এবং ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরাল মহাশূন্য স্টেশন থেকে ডেল্টা ২ (Delta II) রকেটের মাধ্যমে একটি মহাকাশযান প্রেরণ করেন। দ্বিতীয় অভিযানের এই মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছিল মেসেঞ্জার (Messenger – MErcury Surface, Space ENvironment, GEochmistry and Ranging)। প্রায় চার বছর পর জানুয়ারি ২০০৮ সাল নাগাদ এটি প্রথম বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায়। এরপর অক্টোবর ২০০৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে আরও দু’বার উড়ে যাওয়ার পর ২০১১ সালের মার্চ মাসে বুধের কক্ষপথে প্রবেশ করে এবং গ্রহটিকে প্রসক্ষিণ করতে থাকে।

মেসেঞ্জারকে যে ৬টি মৌলিক বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেগুলো হলঃ

১) গ্রহটির কেন্দ্রের গঠন,

২) বুধপৃষ্ঠের গঠন ও রাসায়নিক উপাদানের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ,  

৩) গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের অনুসন্ধান,

৪) চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রকৃতি নির্ধারণ,

৫) গ্রহটিকে ঘিরে থাকা অতি পাতলা বায়ুর উৎপত্তির কারণ এবং

৬) মেরু অঞ্চলে বরফের অনুসন্ধান।

শুধু নাসা-ই নয়, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) এবং জাপানের মহাকাশ সংস্থা ইসাস যৌথভাবে বুধ অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। মহাকাশযানটির নাম রাখা হয়েছিল ‘বেপি কলম্বো’ (Bepi Colombo)। পরবর্তিকালে এই নাম পাল্টে রাখা হয় ‘গুসেপ্পি বেপি।’

বুধের গঠন:

বুধ অনেকটা চাঁদের মতো। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে তার চাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের চাপের ২x ১০-১২ (2×10-12) ভাগের এক ভাগ মাত্র। বিজ্ঞানীদের ধারণা জন্ম লগ্নে গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল ছিল না। তাই উল্কার আঘাতে বুধের পৃষ্ঠদেশও চাঁদের পৃষ্ঠদেশের মতো ছোট বড় অসংখ্য গহ্বর বা ক্ষতচিহ্নে ভরা। সবচেয়ে বড় গহ্বরটির নাম ক্যালোরিস্‌ প্ল্যানিশিয়া (Caloris Planitia)। প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন বছর আগে মহাকাশ থেকে ছুটে আসা একটি বড় আকৃতির গ্রহাণুর আঘাতে এই প্রকাণ্ড গহ্বরটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।    

বুধের পৃষ্ঠভূমি পৃথিবীর মতো কঠিন। এর ঘনত্ব ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি৩  (5.43 gram/ cm3);  পৃথিবীর থেকে সামান্য কম। পৃথিবীর উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় সংকোচন যা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি। বুধ পৃথিবীর তুলনায় অনেক ছোট। তাহলে এর এত উচ্চ ঘনত্বের কারণ কী? বিজ্ঞানীদের ধারণা গ্রহটির কেন্দ্র তুলনামূলকভাবে অনেক বড় এবং লৌহ সমৃদ্ধ। বুধ অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে যে বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২ শতাংশই হচ্ছে এর কেন্দ্র এবং  গাঠনিক উপাদানসমূহের ৭০ শতাংশ ধাতব আর বাকি ৩০ শতাংশ সিলিকেট জাতীয় পদার্থ।

বুধ গ্রহের কেন্দ্রকে ঘিরে যে ম্যানটেল আছে তার পুরুত্ব খুবই কম। এমনটা হওয়ার কারণ হিসাবে অনেকের ধারণা অনেক আগে বুধের সাথে কয়েক কিলোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট একটি বস্তুপিণ্ডের সংঘর্ষ ঘটেছিল। তাতে ম্যানটেলের বেশ কিছু অংশ খসে পড়ে। পাশাপাশি অন্য একটি মতও রয়েছে। বুধের পৃষ্ঠদেশে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ পর্বত-শিখর বা উচ্চ ভূমি (ridge) দেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মতানুসারে এগুলি গ্রহটির কেন্দ্র ও ম্যানটেল হিসাবে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো কারণে এগুলি শীতল ও সংকুচিত হওয়ার আগেই বুধের ভূ-ত্বক কঠিন হয়ে যায়। ফলে ম্যানটেল পুরু হতে পারেনি।

বুধে বরফ:

যে গ্রহের তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও বেশি সেখানে বরফ থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও এটা সত্যি যে বুধ গ্রহে বরফ থাকাতে পারে। রাডারের সঙ্কেতগুলোকে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের এমনই ধারণা হয়েছে। গ্রহটির মেরুদ্বয়ের কাছে বেশকিছু গভীর খাদ আছে যেখানে সূর্যরশ্মি কখনও পৌঁছোয় না। এই গহ্বরগুলিতেই দীর্ঘকাল ধরে বরফ জমে রয়েছে। বুধ গ্রহে বরফ এল কীভাবে সে সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু বলা না গেলেও বিজ্ঞানীরা দুটি সম্ভাবনার কথা বলছেন-

(১) সুদুর অতীতে উল্কাপিণ্ডের ক্রমাগত আছড়ে পড়া যেগুলির উপাদানে প্রচুর জলের উপস্থিতি, বুধপৃষ্ঠে বিপুল পরিমাণে জল বহন করে নিয়ে এসেছিল।

(২) গ্রহাভ্যন্তর থেকে নির্গত গ্যাস যাতে জলের উপস্থিতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গ্রহটির দুই মেরুর চির অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চল ‘কোল্ড ট্র্যাপ্‌স’ (Cold Traps) হিসাবে আচরণ করায় সেই জল গভীর গহ্বরগুলিতে চির বন্দি হয়ে আছে।

বুধ সম্পর্কে কিছু মজাদার কথা:  

বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। ছোট্ট গ্রহটা সূর্যের চারপাশে ঘুরপাক খায় একটা ছোট্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে। মজার কথা সূর্য বুধের কক্ষপথের মাঝখানে নেই। আছে একটা ধারে। ফলে ঘুরপাক খাবার সময় বুধ কখনো সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনো অনেকটা দূরে সরে আসে। গ্রহটি যখন সূর্যের কাছে থাকে তখন সূর্য থেকে এর দূরত্ব থাকে ৪ কোটি ৬০ লক্ষ কিলোমিটার। আর যখন দূরে থাকে তখন সূর্য থেকে এর দূরত্ব দাঁড়ায় ৬ কোটি ৯৮ লক্ষ কিলোমিটার। ফলে এর আবর্তনের গতিবেগেও হেরফের হয়। কাছে থাকার সময় এর গতিবেগ থাকে সেকেন্ডে ৩৭ কিলোমিটারের মত, আর দূরে গেলে সেটাই দাঁড়ায় সেকেন্ডে ৫৬ কিলোমিটারের মত। সূর্যের চারপাশে ঘুরতে বুধের যত উৎসাহ নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরতে ততটাই আলস্য। পৃথিবীর হিসাবে সূর্যকে এক পাক দিতে বুধ সময় নেয় মাত্র ৮৮ দিন। সেখানে নিজের অক্ষের চারপাশে একবার ঘুরতে গ্রহটি সময় নেয় ৫৯ দিন। বুধের অক্ষ নিজের কক্ষপথের সঙ্গে ২° হেলানো অবস্থায় আছে। শুধু তাই নয় সূর্য অক্ষের মাঝ বরাবর নেই, আছে একটা ধার ঘেঁষে। এরফলে বুধের আকাশে সূর্যোদয় অদ্ভুতভাবে হয়। প্রথমে দিগন্তরেখায় সূর্য দেখা দেয়। প্রভাত শেষ হতে না হতেই সে আবার লুকিয়ে পড়ে। কিছু সময় পরে আবার সে পূব আকাশে দেখা দেয়। এবারে সে ধীরে ধীরে পৌঁছায় মধ্য গগনে। সেখানে খানিক বিশ্রামের পর সূর্য আট দিন ধরে পিছোতে থাকে। হঠাৎ-ই কী মনে করে আবার সে এগোতে থাকে। চলে আসে মধ্য আকাশে। এরপর ধীরে ধীরে নেমে যায় দিগন্তরেখার দিকে। সন্ধ্যার পর নেমে আসে রাত। আরও একটা মজার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সূর্যোদয়ের ফাঁকে বুধ সূর্যকে দু’বার পাক খেয়ে ফেলে। অর্থাৎ, পৃথিবীর হিসাবে বলা যায় বুধ গ্রহে একটা দিন (এক সূর্যোদয় থেকে অপর সূর্যোদয় পর্যন্ত) হতে দু’টো বছর পেরিয়ে যায়।

  • তথ্য সূত্র-
    ১। আকাশ ও পৃথিবী, মৃত্যুঞ্জয়প্রসাদ গুহ, চতুর্থ সংস্করণ ১৯৯৮, শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ।
    ২। ইতিহাসে বিজ্ঞান, জে. ডি. বার্নাল (অনুবাদঃ আশীষ লাহিড়ী), বিজ্ঞান চেতনা।
    ৩।  The Rough Guid to the Universe, John Scalzi, 2003 Rough Guides Ltd.
    ৪। Wikipedia:
    https://en.wikipedia.org › wiki › Mercury_(element)
    https://en.wikipedia.org › wiki › Mercury_(planet)

বৈজ্ঞানিকের দপ্তর সব লেখা একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s