তন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের গল্প-তেতলার বারান্দা
রোজ ইস্কুল থেকে বেরিয়ে আমি প্রথমেই ঠিক করি কোন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরব। তিনটে রাস্তা আছে কিনা। এই প্রথম আমাকে একা একা হেঁটে ইস্কুল থেকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ক্লাস সিক্সে উঠেও যদি এত কাছের ইস্কুলে আসা-যাওয়ার জন্যে রোজ রাখুদার রিকশায় উঠতে হয় তাহলে আর জীবনের অর্থ কী, এর চে’ আমি বরং সোদপুরে মামাবাড়ি চলে যাব, কিংবা না খেয়ে মরে যাব—পুরো একমাস ধরে এইসব ঘ্যানঘ্যান করার পর তবে রাখুদার হাত এড়িয়েছি, বাব্বা!
আর এমন নয় যে এই এলাকাটা অচেনা। আমাদের তিনপুরুষের বাস এখানে, আর যারা যারা আছে তাদেরও নাকি ওইরকম, ফলে সক্কলে সক্কলের হয় আত্মীয়, নয় একশো বছরের চেনা। একবার ঠাকুদ্দাকে বলেছিলাম এত বছর ধরে সবাইর একজায়গায় চাক বেঁধে থাকবার কীই-বা দরকার ছিল? শুনে উনি রেগেমেগে চটি ফটাস ফটাস করে ওপরে চলে গেছিলেন। মোট কথা, কোনও কিছু লুকিয়ে করার উপায় নেই এখানে। ক্লাসে হোমওয়ার্ক না করে আনলে, বা লুকিয়ে পকেট থেকে আমড়া বার করে খেলে সে-কথাটা জেঠিমার কাছে আমি স্কুল থেকে ফেরার আগে পৌঁছে যেত, কারণ হেড মিস্ট্রেস শেফালিদি আবার ওঁর ছোটবেলাকার বন্ধু। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সামান্য একটু আলুকাবলি খেলেও সামনের বাড়ির মধুজ্যাঠা সেটা দেখে ফেলে বাড়িতে রিপোর্ট করে দিতেন। জেঠিমা যখন বলতেন, কোনও অচেনা লোকের সঙ্গে কথা বলবে না, কেউ কিছু দিলে খাবে না, এইসব, তখন আমার হাসি পেত, কারণ এখানে সবাই চেনা এবং যেচে কথা বলে (‘এই টুকলি, তোর ঠাম্মাকে বলিস তো আজ সন্ধেবেলা যাব একটু। তোর চুলগুলো ভালো করে আঁচড়াস না কেন?’), আর পয়সা না দিলে কেউ কিচ্ছু খাবার দেয় না। মেজোপিসি বলেন, এখানকার সব লোক নাকি কিপটের জাসু। মানে কী কে জানে, তবে খারাপ কিছুই হবে।
আমি বেশি কথা বলি না, একাচোরা, ঘরে বসে ছবি আঁকি আর গল্পের বই মুখে নিয়ে থাকি বলে খালি অনুযোগ শুনি। বিরক্তি লাগে। মাকে আমার একটু একটু মনে পড়ে, যখন বাবার ঘরের দেওয়ালে টাঙানো ছবিটা দেখি। তখন একটু মনখারাপ হয়, আবার ভুলে যাই। কিংবা মামিমার সঙ্গে কথা বলি ফোন করে। আমার বড়োমামা আর মামিমা আমায় খুব ভালোবাসেন। ছুটিতে মামাবাড়ি সোদপুরে গিয়ে আমি কত থেকেছি ওঁদের কাছে! ছোট্ট থেকে মামিমা আমার খুব কাছের। দুগ্গা ঠাকুরের মতো মুখ মামিমার, আমি গিয়ে থাকলে আমায় কাছে নিয়ে রাত্রে ঘুমোন আর কত্ত গল্প করেন, এখনও আদর করে খাইয়ে দেন। বলেন, টুকলি আমারও মেয়ে তো। সবাই বলে মামা-মামিমার তো নিজের ছেলেমেয়ে নেই, তাই টুকলির ওপর এত টান। মামিমা খুব ভালো ছবি আঁকেন, ওখানকার ইস্কুলে আঁকা শেখান। মা আর মামিমা নাকি ছোটবেলাকার বন্ধু ছিলেন। মা ওঁকে বলেছিলেন, ‘তুই আমার মেয়েকে ছবি আঁকা শেখাস।’ মামিমা আমায় কত রঙ-তুলি-ড্রয়িং খাতা কিনে দেন, কাছে থাকলে আঁকা শেখান।
বাবা ডাক্তার কিনা, তাই খুব ব্যস্ত থাকেন, ফিরতে দেরি হয়। রোজ দেখাই হয় না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বেশ অচেনা জায়গায় যেতে। কিংবা রোজকার ইস্কুল, বাড়ি, খেলাধুলো—মাঝে মাঝে বাড়ির লোকেদের সঙ্গেই একটু বেড়ানো ছাড়া যদি অন্যরকম কিছু হত, গল্পের বইয়ে যেমন হয়, তাহলে… কিন্তু এখানে নতুন কিচ্ছুটি হয় না। সেই তিনপুরুষের ঘরবাড়ি, ময়লা ময়লা থাম, কড়িকাঠে পায়রার বকুমবকুম, চাদ্দিকে লোকজনের ক্যালরব্যালর। ধরো, বেশ একটা অন্যরকম জায়গায় থাকতাম, অন্যরকম লোকজন, অন্যরকম সবকিছু…
যাক গে, কী বলছিলাম? হ্যাঁ, তো তিনটে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। যেটা সবচেয়ে তাড়াতাড়ি হয়, সেটা সোজা, দু-পাশে দোকানপত্তর, কিন্তু এত ভিড়, গন্ধ, আর চ্যাঁচামেচি যে বিচ্ছিরি লাগে আমার। আরেকটা আছে, খানিকটা গিয়ে বাঁদিকে যেতে হয়—দু-পাশে গাছ আর বাড়ি, কিন্তু ওদিকে ঝুনু থাকে বলে ও আমার সঙ্গে সঙ্গে আসে আর বোকা বোকা গল্প করে মাথা ধরিয়ে দেয়। অন্য যে রাস্তাটা সেটা খুব পছন্দ আমার। একটু ঘুর হয় বটে, কিন্তু কী ভালো! ইস্কুলের পিছন দিকের রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। ওদিকে যেতে খেলার মাঠ, বুড়ো শিবমন্দির। চণ্ডীবটের তলায় সবাই পুজো দেয় আর লম্বা দাড়ি একজন তাদের ‘চন্নামেত্তর’ দেন। তার পেছনে ছোটো ছোটো ঝুপড়ি, সেখানে ছাগল, মুরগি, গরু-টরু চরে। ছোট্ট বাচ্চারা এক্কাদোক্কা খেলে, সুর করে ছড়া বলে। ওখানেই রাখুদা বলেছে ওর বাড়ি। অন্যদিকে দূরে একটা কু-ঝিক-ঝিক রেল লাইন। সবচেয়ে ভালো লাগে ডানদিকে মোড় নেওয়ার আগেই একটা পুকুর। তাতে হাঁস ভেসে বেড়ায়, বকেরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, কখনো-কখনো লোকে ছিপ ফেলে। হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে আকাশপাতাল ভাবি।
সেদিন ওই রাস্তা দিয়ে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম সায়েন্সের টিচার মহুয়াদি কেন কক্ষনও হাসেন না, কেউ ঠিকঠাক উত্তর দিলেও গোমড়া মুখে থাকেন। ক্লাসের মঞ্জীরা বলেছে ওঁর দাঁত নাকি খুব খারাপ, তাই। ডানদিকে মোড় নেওয়ার আগেই শুনলাম একটা টুংটুং শব্দ। তাকিয়ে দেখি একটা লোক পুকুরপাড়ে ঝাঁকড়া তেঁতুলগাছটার ছায়ায় বসে গামছা দিয়ে ঘাড় মুছছে, আর অন্যহাতে একটা চকচকে ছোট্ট ঘণ্টা বাজাচ্ছে। তার সামনে একটা ফলের ঠেলাগাড়ি নামানো আছে। লোকটার টিংটিঙে চেহারা, ময়লা খাটো প্যান্টের নীচ দিয়ে সরু সরু কালো ঠ্যাং বেরিয়ে আছে। ছেলেধরা বা দুষ্টু লোক নাকি? দেখে মোটেই সন্দেহজনক মনে হয় না। তাছাড়া এখানে বেশ লোকজন, একটু দূরেই পুকুরে দুজন লোক ছিপ ফেলে পান চিবোচ্ছে, পাশের বাড়ির কাজের লোচনদা ভারী একটা ব্যাগ হাতে হন্তদন্ত হয়ে আমায় পেরিয়ে গেল, ঝুপড়িগুলোর দিকে কারা যেন ক্যাঁওম্যাঁও করে ঝগড়া করছে। আমি কী ভেবে গুটি গুটি পায়ে লোকটার দিকে গেলাম।
লোকটা একগাল হেসে বলল, “ফল নেবে গো দিদিমণি? ভালো ভালো ফল, এমন আর কোত্থাও পাবে না। চেষ্টাচরিত্তির করে জোগাড় করিচি।”
আমি ফলগুলোকে দেখতে লাগলাম। কতরকম রংবেরঙের ফল, কী মিষ্টি গন্ধ! কিন্তু কেমন যেন অচেনা অচেনা গোছের। ছোট্টমতো ডোরা ডোরা আম, গোল গোল চকচকে লিচুতে সোনালি ফুটকি, কলাগুলো খুব লম্বা আর কেমন শুঁড়ের মতো পাকানো।
বললাম, “এ আবার কীরকম সব ফল, আগে দেখিনি তো এমন!”
“কী করে দেখবে দিদিমণি, এসব কি আর আর কারও কাছে পাবে? তোমার দেখার ইচ্ছে হল বলেই তো তোমায় ডাকলাম। ঘণ্টি নেড়ে। নইলে কি আর দেখতে পেতে?”
ওর কথাটা ঠিক বুঝলাম না, কিন্তু মনে হল ওর মুখটা বেশ হাসি-হাসি।
“কিন্তু এগুলো, মানে খাওয়া যায় কি? মানে খেলে কি…”
এমন টুকটুকে রসে ভর্তি ফলগুলো, দেখেই লোভ লাগছিল। কিন্তু জেঠিমা বলেছেন যে…
লোকটা তার রুক্ষু-চুল মাথা দুলিয়ে বলল, “আহা, খাওয়া যাবে না কেন! তবে সব ফল কি আর সকলের জন্য দিদিমণি! যার জন্যে যে ফলটা, সেটাই শুধু তাকে বিক্কিরি করা যাবে কিনা।”
“কত দাম তোমার ফলের?”
“তিন টাকা। সব ফল তিন টাকা। তিন টাকা। শুধু একটা করে বিক্কিরি হবে। তবে বাড়ি নিয়ে গিয়ে খেতে হবে। আর কাউকে দেখানো চলবে না।”
“কেন?”
“নিয়ম।”
“ওই আমের মতো, ওগুলো মিষ্টি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি যদি চাও তো মিষ্টি। যদি চাও তো টক। বা নোনতা। যেরকম চাইবে সেরকমই লাগবে খেতে। কেউ কেউ আচারের মতো চায়, সেরকমও হতে পারে। নুন-ঝাল-টক।”
“সেরকম আবার হয় নাকি!”
আমি দেখলাম লোকটার খাড়া-খাড়া চুলের ভেতর খুব ছোটো ছোটো জোনাকির মতো আলো কেমন জ্বলছে নিভছে। পাশ দিয়ে মানিক দুধওয়ালা, পাড়ায় অনেকের বাড়ি দুধ দেয়, গরু নিয়ে বালতি দড়ি-টড়ি হাতে চলে গেল, আমায় মনে হয় দেখতেও পেল না।
লোকটা ওর রিনরিনে গলায় বলল, “হবে না কেন? ওই কলাগুলো দেখছ তো, ও একটা খেলেই বুদ্ধি খুলে যায়। ধরো একটা অঙ্ক কিছুতেই বুঝতে পারছ না, সেটা টুক করে বুঝে যাবে। রচনা লিখতে গিয়ে ইরেজারে মুছে মুছে খাতা নষ্ট হচ্ছে, কলাটা খেলেই দিব্যি ঝরঝর করে লেখা বেরিয়ে আসবে। ধরো তোমার ইয়ে হলদে পাথরের মালাটা খুঁজে পাচ্ছ না, মনে পড়ে যাবে সেটা গত মাসে তোমার মাসতুতো দিদিকে পরতে দিয়েছিলে। এইরকম আর কি।”
আমি অবাক বললাম, “যাহ্।”
“তাপ্পর ধরো, ওই চৌকো চৌকো আঙুরগুলো। ও যদি একটা খাও, তাহলে তোমার অনেক কিছু মনে পড়ে যাবে।”
“মানে, ওই কলার মতো?”
“না না, কলাগুলো তো বুদ্ধি-ফল। আঙুরগুলো অন্যরকম। ওগুলো খেলে কী হয়, যেসব ঘটনা ঘটেনি, অথচ ঘটতে পারত, সেসব তোমার মনে পড়ে যাবে।”
আমি ওর দিকে চেয়ে রইলাম। পুকুরের ধারে দুটো হাঁস প্যাঁক-প্যাঁক করে ঝুটোপুটি করতে করতে জলে নেমে গেল। যারা মাছ ধরছিল, তাদের মধ্যে একজন রেগে গিয়ে কীসব ইয়ে-টিয়ে বলতে লাগল, বোধ হয় মাছ পালিয়ে যাওয়া নিয়ে।
ফলওয়ালাটা আবার বলল, “মানে কীরকম জানো, ধরো তুমি একদিন তোমার ইয়ে, পিসির বাড়ি লক্ষ্মীপুজোয় না গিয়ে তোমার বন্ধুর জম্মোদিনে গেলে। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোয় গেলে কী কী হতে পারত, সেসব তোমার মনে পড়ে যাবে। ওখানে গিয়ে তোমায় ডানপায়ে হোঁচট লেগেছে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় একটা বিশাল কুকুর দেখেছ, তোমার নতুন গোলাপি জামায় পায়েস পড়ে গেছে… এইসব।”
“কিন্তু ওগুলো তো হয়নি।”
“সেই তো। কিন্তু হতে পারত তো? সেগুলোই মনে পড়বে। ওগুলো হচ্ছে হলেও-হতে-পারত ফল।” লোকটার নীলচে চোখগুলো ঝিকমিক করে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি। পাশ দিয়ে একটা সাইকেল যায় আর ফলওয়ালাটা তাড়াতাড়ি ওর ঘণ্টাটা বাজাতে থাকে। দেখি, আমাদের পাশের রাস্তার চিত্তেশদা। সাইকেল থেকে নেমে এসে ও ঠেলাটার পাশে দাঁড়াল, হেসে বলল, “তুমি এসেছ! উহ্ বাঁচালে, ক’দিন ধরেই ভাবছি তোমার কথা।”
“তাই তো ঘণ্টি বাজালাম। নইলে তো আমায় দেখতে পেতে না।”
“সেই তো। কোথায় যে থাকো।”
লোকটা খুব হাসল। বলল, “আমি তো সবখানেই থাকি। তোমরাই তো দেখতে পাও না। ঘণ্টি বাজিয়ে ডাকতে হয়। যেমন এই খুকিকে ডাকলাম আজ।”
খুকি শুনে মনে মনে একটু বিরক্ত হলাম। লক্ষ করলাম, চিত্তেশদা ওর ভীষণ মোটা চশমার মধ্য দিয়ে আমার দিকে অন্যমনস্কভাবে তাকাল বটে, কিন্তু যেন ঠিক চিনতে পারল না। যদিও ওর খুড়তুতো বোন শম্পা আমার বন্ধু বলে ওদের বাড়ি আমি যাই মাঝে মাঝে। অবশ্য সেটা নাকি ওর স্বভাব। পড়াশোনায় ভয়ংকর ভালো আর বই ছাড়া কিছু জানে না। কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ে। কুঁজো হয়ে হাঁটে। এখন বলল, “ওই পেয়ারা দাও তো। এই নাও টাকা। খুব দরকার আমার।”
“এই তো। কতর জোড় নেবে আজ?”
“তিন। তিনদিনের।”
প্রথমে বুঝিনি, তারপর দেখলাম একটা টুকরিতে অনেকগুলো খুব ছোটো ছোটো সবুজ পেয়ারা, সেগুলো আবার পরস্পরের সঙ্গে দুটো তিনটে বা চারটে করে জোড়া লাগা। লোকটা খুব সাবধানে তিনটে একসঙ্গে জোড়া পেয়ারা চিত্তেশদাকে দিল। চিত্তেশটা সেটা পকেটে পুরো হাত নেড়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল।
আমি বললাম, “ওই পেয়ারা খেলে কী হবে?”
ফলের ছোটো ছোটো টুকরিগুলো গোছাতে গোছাতে লোকটা বলল, “ও হল গিয়ে সময়-ফল। সময় আগে পিছে করা যায়। ও তুমি বুঝবে না এখন। বলিনি, সক্কলের জন্য সব ফল নয়!”
আমি ফলগুলোকে দেখছিলাম, কোনটা নেব। “আচ্ছা, ওই লিচু নিই একটা।”
লোকটা কেমন চমকে বলল, “না না, ও তোমায় এখন দেওয়া যাবে না। ও-লিচু এখন তোমার দরকার নেই। ওটা হচ্ছে মন-ঠিক-করার ফল।”
“অ্যাঁ?”
“আমি বলি কী, তুমি এই কালোজাম নাও একটা। এটা হচ্ছে, কী বলে, স্বপ্ন দেখার ফল। এটা খেলে ভীষণ ভালো ভালো স্বপ্ন দেখবে, ঠিক যেমনটি চাও।”
দেখলাম সবুজ পাতার মধ্যে কালোজামগুলো কেমন নীল মার্বেলের মতো চকচক করছে, টসটসে হয়ে আছে। ভেতরে বেগুনি আভা।
পিঠের ব্যাগ থেকে তিনটে টাকা বের করে ওকে দিলাম। ট্যাঁকে গুঁজে ফেলে গামছাটা মাথায় জড়িয়ে নিয়ে একটা নীল-বেগুনি গোল কালোজাম আমায় দিয়ে বলল, “ঘুমোবার আগে রাত্তিরে খেও। কাউকে বোলো না। এবার আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।” এই বলে ছেঁড়ামতো পকেট থেকে একটা বিশাল ঘড়ি বের করে সেটা দেখে আবার রেখে দিল। ওর ওইটুকু পকেটে অত বড়ো ঘড়ি ঢুকল কী করে কে জানে। ঠেলা তুলে হাঁটতে শুরু করে দিল। আমি ডেকে বললাম, “ও ফলওয়ালা, তুমি কাল আবার এখানেই থাকবে তো?”
“তা তো জানি না খুকিদিদি। যদি সময় হয়, যদি কখনও ঘণ্টা বাজাই, তবেই দেখতে পাবে।”
এই বলে ঠেলা নিয়ে কোনদিকে যেন চট করে চলে গেল। পকেটে কালোজামটা রেখে আমিও বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
বাড়িতে ফিরে রোজকার রুটিন। তবে আজ দেখি বড়োপিসিমা এসেছেন। অবশ্য তাতে খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই কারণ, উনি এলেই দেখেছি খানিক পরেই দারুণ ঝগড়াঝাঁটি হয়।
রাত্তিরে আমাদের মানে ছোটোদের খাওয়ার সময় ছোড়দা বলল, “আজ ঝগড়াটা বেশি হয়েছে বোধ হয়, নিন্দে-টিন্দে হচ্ছে, দেখছিস না কেউ আমাদের কাঁটামাছ না খাওয়ার জন্য বকতে আসছে না?”
আমি চুপচাপ আছি বলে সবাই আমার পেছনে লাগল, যেমন লাগে রোজ। উফ্, ভালো লাগে না। তাড়াতাড়ি খেয়ে, জেঠিমাকে ‘হোমওয়ার্ক শেষ করা হয়নি’ বলে ওপরে নিজের ঘরে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। শোবার আগে একটু বই পড়লাম। ও-পাশের ঘরে মেজোপিসি ঘুমোন, আমি মাঝখানের দরজাটা সাবধানে বন্ধ করে দিয়ে, স্কুলের স্কার্টের পকেট থেকে কালোজামটা বের করলাম। নীলচে টসটসে ফলটা, কী সুন্দর ঠান্ডা ঠান্ডা। মুখে পুরে দিলাম। মিষ্টি রসে মুখটা ভরে গেল, সেই সঙ্গে কী যেন একটা অন্যরকম স্বাদ, অচেনা, কিন্তু কী ভালো। সারা শরীর জুড়িয়ে গেল যেন। মনে হল কোনও চিন্তাভাবনা নেই। এমনিতে আমার একটু দেরি হয় ঘুমোতে, মেজোপিসি এসে তাড়া দিয়ে যান, কিন্তু আজ শুয়ে পড়লাম। চোখদুটো আরামে ভারী হয়ে আসছে। কোথায় যেন ভেসে যাচ্ছি, ঢেউয়ের সঙ্গে উঠছি আর ডুবছি। আর স্বপ্নেরা এল সেই সঙ্গে, সারারাত… সারারাত কত জায়গায় ঘুরে বেড়ালাম যেন। সমুদ্রের ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, নোনা জলের হাওয়া আমার মুখে লাগছে, ফেনায় পা ভিজে যাচ্ছে। রাত্রিবেলা… আকাশে একসঙ্গে দুটো চাঁদ উঠেছে, নক্ষত্রগুলো টুপটাপ ঝরে পড়েই ফুল হয়ে যাচ্ছে, কী মজা। একটা বন, কত গাছ, মাঝখান দিয়ে হাঁটছি আর ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে, একটু দূরে পাহাড়ের চুড়োয় মেঘ জমে আছে। আরে, আমার পায়ের নীচে মেঘ, দু-পাশে মেঘ, দু-হাতের মুঠোয় নীল ফল, মুখে মিষ্টি স্বাদ… কোথা থেকে একটা ঘণ্টির ঝুমঝুম আওয়াজ… কে বাজাচ্ছে? ও হ্যাঁ, ও তো সেই ফলওয়ালাটা!
ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসি। জানালা দিয়ে আলো আসছে। কী চমৎকার সকালটা আজ! ঝরঝরে তাজা!
সেদিন ইস্কুল থেকে ফেরা পথে পুকুরটার ধারে ফলওয়ালাটাকে দেখতে পেলাম না। তার পরদিনও নয়। ও-লোকটার কথাটা কাউকে বলিনি। কী দরকার বাবা! স্কুলের বন্ধুরা কেউ বিশ্বাসই করবে না। আর বাড়িতে বললে সবাই মহা ঝামেলা করবে অচেনা লোকের কাছ থেকে ফল কিনে খেয়েছি বলে। কিন্তু ফলওয়ালাটাকে পেলে আরও স্বপ্ন দেখার ফল কিনবই আমি।
সেদিন চিত্তেশদাকে রাস্তায় দেখলাম ভুরু কুঁচকে কী ভাবতে ভাবতে আমায় পেরিয়ে চলে গেল। ভেবেছিলাম ওকে ফলওয়ালাটার কথা জিজ্ঞেস করব, কিন্তু কী জানি কেন কিছু বলতে পারলাম না। দু-একবার ভাবলাম মামিমাকে ফোন করে বলব কি না। তারপর ভাবলাম, না বলাই ভালো, মামিমা আবার ভয়-টয় পেয়ে একশা হবেন, এমনিতেই নাকি খুব চিন্তা করেন আমায় নিয়ে।
ক’দিন কেটে গেল। একদিন রাত্রে সেই সমুদ্রের ধার দিয়ে হেঁটে যাওয়ার স্বপ্নটা আবার দেখলাম। পরের দিন ইস্কুলে মন লাগছিল না মোটে। সন্ধেবেলা অঙ্ক করছিলাম, এমন সময় বাবা ঘরে এলেন। চেয়ারে বসে এটা-ওটা কথা বললেন, পড়াশোনার খবর নিলেন। তারপর বললেন, “টুকলি, তোকে একটা কথা বলার আছে, বুঝলি?”
পেন্সিল নামিয়ে আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম। বাবা বললেন, “তোর বড়োমামা মুম্বইয়ে বদলি হয়ে গেছেন জানিস তো?”
“হ্যাঁ তো। মামা-মামিমা ফোন করেন তো। কত্ত গল্প হল।”
বাবা বললেন, “শোন টুকলি, এখন জয়ন্তদা মানে তোর বড়োমামারা যেখানে থাকেন সেখানে খুব ভালো একটা স্কুল আছে। নাকি খুব সুন্দর জায়গাটা, সি-বিচের কাছে। ওদের খুব ইচ্ছে তুই ওদের কাছে থেকে ওখানে পড়াশোনা করিস। এখন বল তোর কী ইচ্ছে।”
আমি কীরকম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বাবার দিকে চেয়ে রইলাম।
“তুই যেটা ঠিক করবি সেটাই হবে। অন্য কেউ তাদের ইচ্ছেটা তোর ওপর চাপিয়ে দেবে না।”
“মুম্বই…”
“তুই যখন খুব ছোটো, তখন তোকে নিয়ে আমি আর তোর মা একবার গিয়েছিলাম বেড়াতে। তোর মা বলেছিল, ‘এখানে আমরা থাকলে কী ভালো হত!’ সমুদ্র খুব ভালোবাসত তোর মা।” বাবা চুপ হয়ে গেলেন। তারপর উঠে পড়ে বললেন, “তুই একটু ভেবে ঠিক কর কী করবি। এমন নয় যে আমাদের আর দেখবি না—ছুটিতে আসবি, আমরাও যাব। প্লেনে তো মাত্র আড়াই কি তিন ঘণ্টা রে!”
বাবা আমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি আমার খাতা বন্ধ করে বসে বসে ভাবতে লাগলাম। যাব? কিন্তু এখানে আমি যে সবকিছু জন্ম থেকে চিনি, যতই বিরক্ত লাগুক। স্কুলে সেই কে.জি. থেকে পড়ছি। সঞ্চারী, বর্ষা, অর্পণা ওদের কবে থেকে চিনি। এ-বাড়ির সবাই… যদিও ওদের সবসময় ভালো লাগে না, তা-ও… বাবা, জেঠিমা, মেজোপিসি… ওদের ছেড়ে যাব? জেঠিমা জানেন আমি কী খেতে ভালোবাসি আর মেজোপিসি আমায় স্কুলের পড়া দেখিয়ে দেন দরকার হলে। জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো, দাদা, ছোড়দা, টুনি, রবি… অবশ্য ওদের সঙ্গে তত ভাবও নেই আমার, বড্ড খ্যাপায়। এ-পাড়ার সব অলিগলি আমি হাতের তেলোর মতো চিনি।
কিন্তু, বড়োমামা আর মামিমা! ওঁদের কাছে থাকতে আমার কী যে ভালো লাগে, কেমন আপন-আপন লাগে। মামিমা আমার কাছে মা’র গল্প করেন, আর মামা আমায় সঙ্গে দেশবিদেশের অনেক কথা বলেন। আর মুম্বই, অচেনা জায়গা, কিন্তু কত নতুন নতুন জিনিস, অন্যরকম লোকজন সব সেখানে, নতুন সব বন্ধু হবে, আমি তো তাই চাইছিলাম। আর সমুদ্র, ঢেউ আর বালি… কত বেড়াবার জায়গা, ফোনে মামিমা বলছিলেন, আয় দেখে যা টুকলি!
সে রাত্রে ভালো করে ঘুমোলাম না। কীসব উলটোপালটা স্বপ্ন দেখলাম। স্কুলে কাউকে কিছু বলিনি। বর্ষা যখন বলল, ‘সারাক্ষণ হাঁ করে কী ভাবিস তুই, তুই একটা হাঁদা।’ তখনও চুপ করে ছিলাম। বাড়ির বড়োরা সবাই কেমন গম্ভীর গম্ভীর। আর আমি সারাক্ষণ ভাবছি কী করব, আসলে আমি ঠিক কী চাই।
গত ক’দিন সোজা রাস্তাটা দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলাম নতুন গল্পের বইটা শেষ করব বলে। তাছাড়া আমার ড্রয়িং খাতায় একটা সমুদ্রের ছবি আঁকছিলাম। আজ সেই ঘুরপথটা ধরলাম স্কুল থেকে ফেরার সময়। সেই এক কথাই ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম—যাব, না যাব না? মনটা অস্থির। বোঁচকা-মাথায় একটা লোক, বোধ হয় ধোপা, ঝুপড়িগুলোর দিকে চলে গেল। চণ্ডীবটের তলায় কারা যেন হাত পা নেড়ে কথা বলছে আর সেই লম্বা-দাড়ি লোকটি চাতালে শুয়ে ঘুমোচ্ছেন। কয়েকটা ছাগল চরতে চরতে রাস্তায় উঠে এসেছে, একটা ভ্যান-রিক্সা ওদের সাবধানে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পুকুরটার জলে, হাঁসগুলোর গায়ে রোদ পড়ে চিকচিক করছে, আমি…
‘টিং টিং… টিং…’
চমকে উঠে দেখি, সেই ফলওয়ালাটা! ঠিক আগের মতো তেঁতুলগাছটার নীচে ঠেলা নামিয়ে বসে আছে। গামছা ঘুরিয়ে হাওয়া খাচ্ছে আর আমার দিকে হাসি হাসি মুখে চেয়ে ঘণ্টি বাজাচ্ছে। অবাক হয়ে দেখলাম, স্কুলের উঁচু ক্লাসের হাসিখুশি মলিদি ওর কাছ থেকে কী একটা ফল কিনল, তারপর সেটা পকেটে রেখে হাত নেড়ে অন্য পাশ দিয়ে চলে গেল। আমি লোকটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
“এতদিন কোথায় ছিলে, ফলওয়ালা?”
“এই তো… ছিলাম। তোমার দেখতে পাওয়ার সময় হয়নি, তাই দেখোনি। এখন সময় হয়েছে, তাই তো ঘণ্টি বাজালাম।”
আমার মনে হল লোকটা চিত্তেশদাকেও এইরকম কী যেন বলেছিল। আমি ফলগুলোকে দেখতে লাগলাম। পাকা ফলের মিষ্টি গন্ধ, কেমন ভারী ভারী। বললাম, “ওই কালোজাম খেয়ে দারুণ স্বপ্ন দেখেছিলাম। ওই ফল নেব একটা? কিংবা ওই যে চৌকো আঙুরগুলো…”
লোকটা বলল, “আরে না না! আজ যে তোমার জন্য এস্পেশাল ফল দিদিমণি!”
আমি অবাক হয়ে বলি, “সে আবার কী ফল?”
ওর চোখের রঙটা আজ কেমন খয়েরি। চুলের ফাঁকে সেই জোনাকি-আলো জ্বলছে নিভছে। লালা-নীল চকরা-বকরা শার্টের ছেঁড়া পকেটে ওর ঘড়িটা দেখা যাচ্ছে। ও আমার হাতে সেই সোনালি ফুটকি দেওয়া একটা লিচু তুলে দিয়ে বলল, “এই যে তোমার মন-ঠিক-করা ফল খুকিদিদি। তুমি খুব ভাবছ তো, কোন পথটা ঠিক হবে? কোনটে ভালো? ঠিক না?”
আমি ওপর-নীচ মাথা নাড়ি। হ্যাঁ, ঠিক তাই।
“এই লিচুটা খেয়ে দেখো তো, তোমার মন একেবারে শান্ত যাবে। বুঝতে পারবে কোন সিদ্ধান্তটা তোমার জন্যে ঠিক।”
“কিন্তু আমি নিজেই তো বুঝতে পারছি না কী করব, মানে কী করা উচিত।”
“ফলটা খেলে তুমি স্পষ্ট বুঝতে পারবে কী হলে ভালো হয়।”
টাকা দিয়ে লিচুটা কিনলাম। তারপর বললাম, “তোমায় কি আবার দেখব?”
সে রহস্যময়ভাবে মাথা নেড়ে বলল, “সে-কথা কি আগে থেকে বলা যায়! সময় হলেই আবার তোমায় ডেকে নেব।”
“কিন্তু আমি যদি তখন এইখানে না থাকি।”
সে হাসতে হাসতে বলল, “কিন্তু আমি তো সবজায়গাতেই থাকি। ও নিয়ে ভেবো না দিদিমণি।”
“আচ্ছা, এটা খেলেও কি স্বপ্ন দেখব?”
“দেখতেও পারো, আবার না-ও দেখতে পারো। সব কি বলা যায়? ফলগুলো এক-একজনের কাছে একটু একটু অন্যরকমও হতে পারে। আমায় এবার যেতে হবে খুকিদিদি।”
সে রাত্রে লিচুটা খেতেই চমৎকার স্বাদ লাগল জিভে। মিষ্টি, আবার সেই সঙ্গে কেমন ক্ষীর ক্ষীর। মনটা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে এল। আমি গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আর ঘুমের মধ্যেই জেগে উঠলাম স্বপ্নে। একটা রাস্তা দিয়ে আমি হাঁটছি, দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটা প্রায়ই দু-ভাগ, তিনভাগ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি জানি ঠিক কীভাবে কোনদিকে যেতে হবে। আমি নির্ভুল ছন্দে পা ফেলছি। দু-পাশে ঝোপের মধ্যে ওই লিচুগাছে অনেক ফল ধরেছে। সেগুলোর লোভে অনেক পাখি এসে জুটেছে।
ঘুম ভেঙে যায়। আবার পাশ ফিরে শুই, আবার দেখি স্বপ্নে সেই রাস্তাটা। আস্তে আস্তে সেটা একটা গোলোকধাঁধা হয়ে যায়। একটুও ভয় করে না আমার। আমি বুঝতে পারি এই জায়গাটার বাইরেই সমুদ্র, ঘিরে আছে সবটা তার জল দিয়ে।
আবার যখন ঘুম ভাঙল, তখন সকাল হয়েছে। আমার মন একদম শান্ত। স্পষ্ট বুঝতে পারছি কী করা উচিত আমার। সব ধোঁয়াশা কেটে গিয়ে রোদ উঠেছে। পুকুরের স্থির জলে আকাশের ছায়া। ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে নীচে গেলাম। আজ শনিবার, বাবা এইসময় বাড়ি থাকবেন।
নীচে গিয়ে দেখি বাবা খাবার টেবিলে চায়ের কাপ নিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন। ওদিকের চেয়ারে বসে টুনি আর রবিকে মেজোপিসি ডিমসেদ্ধ আর কলা খাওয়াবার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বিশেষ পাত্তা পাচ্ছেন না।
আমি ডাকলাম, “বাবা।”
বাবা কাগজ খড়মড়িয়ে মুখের ওপর থেকে সরালেন, “কী, মা?”
“আমি মন ঠিক করে ফেলেছি বাবা। আমি মুম্বই যাব।”
বাবা কিছু বললেন না। মেজোপিসি বললেন “সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে টুকলি, মেজদা।”
আমি ওঁদের দিকে তাকিয়ে শুধু একটু হাসলাম। মাথার মধ্যে শুনলাম, ‘টিং, টিং, টিং’ শব্দটা হঠাৎ এসে তারপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।
অলঙ্করণ- মৌসুমী