গল্প -উড়ান-অনন্যা দাশ শরৎ ২০২১

 অনন্যা দাশ -এর সমস্ত লেখা একত্রে

golpouran1

মাইকের মনটা আজ বড্ড খারাপ। রিঙ্গো আজ আসেনি বলে। রোজ সকালে রিঙ্গোকে না দেখলেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেন এল না রিঙ্গো? সূর্যমুখীর বীজ খেতে তো ও দারুণ ভালোবাসে। অন্যরা তো সবাই প্রায় এসেছিল। হোয়াইটি, শাইনি, গ্রে বিক সবাই, শুধু রিঙ্গোরই পাত্তা নেই। এদিকে যা দানা ছড়িয়েছিল সব অন্যরা খেয়ে নিল। বেলা বাড়ছে, রিঙ্গো গেল কোথায়?

রিঙ্গো আসলে একটা টিয়াপাখি। তার গলায় একটা কালো রিং আছে বলে মাইক ওর নাম দিয়েছে রিঙ্গো। রোজ সকালে মাইক গমের দানা, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি ছড়িয়ে দেয় বাড়ির পিছনের চাতালে আর পাখিরা সব এসে হাজির! ঘুঘু, চড়াই অনেক রকমের পাখিই আসে, কিন্তু রিঙ্গো নামের ওই সবুজ টিয়াটা মাইকের সবচেয়ে প্রিয়। সে এখন ওর কিছুটা যেন পোষ-মানা হয়ে গেছে। ওকে দেখে ভয়ও পায় না। মাঝে মাঝে ওর কাঁধেও বসে।

জেলেদের পাড়ায় থাকে ওরা। ওদের পাড়া থেকে কিছুটা দূরেই একটা জলা-জঙ্গল এলাকা মতন আছে। সেই জঙ্গলেই প্রচুর পাখি থাকে। ওখান থেকেই আসে ওরা। রিঙ্গো এল না বলে মনমরা হয়ে বসেছিল মাইক, এমন সময় টম এসে হাজির। টমকে মনে আছে তো তোমাদের? সেই যে যাকে সবাই বলে তার নাকি বেড়ালের মতো ন’টা প্রাণ আছে? প্রতিবার ঝুঁকি নিয়ে বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়েও যে বেঁচে ফিরে এসেছে, সেই টম।

টম ওকে দেখেই বলল, “কী রে? তোর মনখারাপ কেন?”

“রিঙ্গো আজ আসেনি।”

“দূর, তুইও যেমন! অন্য কেউ বেশি ভালো খাবার দিয়েছে তাই সেখানে গেছে!”

“না না, রিঙ্গো ওইরকম নয়!”

“ঠিক আছে, আজকে আসেনি তো কালকে আসবে। মনখারাপ করিস না। চল, আমি তোকে কোল্ড ড্রিঙ্ক কিনে খাওয়াব। অরেঞ্জ, পাইন-অ্যাপেল, ম্যাঙ্গো যা তোর ইচ্ছে।”

মাইক আবার কোল্ড ড্রিঙ্ক খেতে বড়োই ভালোবাসে। তাই সে বলল, “ঠিক আছে চল।”

ওদের পাড়ার দোকানে গিয়ে হাজির দুজনে। দোকানদার জোকে সবাই চেনে। খুব ভালো লোক। টম আর মাইককে দেখে সে একগাল হেসে বলল, “এসো এসো ছোটো বন্ধুরা, কী চাই তোমাদের?”

টম পকেট থেকে জমানো পেনি পয়সা গুনে বার করে বলল, “একটা দু লিটারের কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল দেবে?”

জো মাথায় হাত দিয়ে বলল, “ওই দেখো! যে জিনিসটা দোকানে একেবারেই নেই সেটাই চেয়ে বসলে!”

“সে কি! তুমি দোকানে কোল্ড ড্রিঙ্ক রাখা বন্ধ করে দিয়েছ?”

“আরে না না! কাল রাতেই একটা লোক এসে যত কোল্ড ড্রিঙ্ক, সফট ড্রিঙ্ক বা জল ছিল সব কিনে নিয়ে গেল। আমাকে আবার মাল তুলতে হবে আজ বিকেলে গিয়ে। আমার তো ছোটো দোকান।”

“সে কি, কোলা, লেমন, অরেঞ্জ, পাইন-অ্যাপেল, ম্যাঙ্গো সব নিয়ে গেল? কে গো? কার বাড়িতে পার্টি আছে?”

“লোকটাকে আমি চিনিই না। এই এলাকার কেউ নয়। তাহলে আমি চিনতাম। এর মাথায় খয়েরি টুপি, চোখে সানগ্লাস আর ঝুলো গোঁফ। গাড়ি ভর্তি করে সব নিয়ে গেল। বলল, ওদের ওখানে নাকি এত সস্তায় সফট ড্রিঙ্ক পাওয়া যায় না। মিসেস পটারের বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টে উঠেছে মনে হয় লোকটা।”

ওদের জায়গাটা বেশ ছোটো বলে ওখানে তেমন হোটেল-টোটেল নেই। মিসেস পটার বলে একজন মহিলা নিজের বাড়ির ওপরতলার তিন-চারটে ঘর টুরিস্টদের ভাড়া দেন।

মাইক হঠাৎ বলল, “বুঝতে পেরেছি কার কথা বলছ! আমি কাল বিকেলে কাকার নৌকোয় কাজ করছিলাম, তখন ওকে হেঁটে যেতে দেখলাম। আমার একদম ভালো লাগেনি। তখন সানগ্লাস পরা ছিল না তাই দেখতে পেয়েছি। ওর চাউনিটা মোটেই সুবিধের নয়।”

টম শুনে বলল, “হুঁ! তা কোল্ড ড্রিঙ্ক তো নেই, অন্য কী খাবি বল।”

মাইক বিমর্ষ সুরে বলল, “নাহ্‌, পয়সাটা তুই রেখে দে। আমার এখন অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। যা গরম। আবার যখন দোকানে আসবে তখন না হয় খাব।”

“ঠিক আছে।”

দুজনে দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ টম বলল, “চল তো একবার মিসেস পটারের বাড়িতে গিয়ে দেখে আসি। জো কিন্তু মোটেই কিছু কম দামে বিক্রি করে না। আমার মামা তো একবার বলছিলেন যে জো সব জিনিসের দাম একটু করে বাড়িয়েই রাখে। ওকে অনেক দূর থেকে জিনিস আনতে হয় আর আমাদের সুবিধা হয় বলে তাই আমরা ওর দোকান থেকে কিনি, কিন্তু বাইরের লোক এসে কেন সব কিনে নিয়ে যাবে তুই বলতে পারিস? আমার ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগছে না।”

“আবার সেই অন্যের কাজে নাক গলাতে যাবি?”

“কিছু হবে না, চল না, যাব আর আসব! মিসেস পটারকে দেখতে পেলে জিজ্ঞেস করব লোকটা কে। ওঁর জন্যে না-হয় তোর কাকার নৌকো থেকে দুটো মাছ নিয়ে নে। বলবি মা পাঠিয়েছেন!”

এই বলে দুটো মাছ নিয়ে মিসেস পটারের বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টে গিয়ে হাজির দুই বন্ধু। বেশ কিছুটা জমি নিয়ে বড়ো বাড়ি। মিসেস পটার এমনিতে ভালো মহিলা বলেই মনে হয়, তবে টম আর মাইক যে ওঁকে খুব একটা ভালো করে চেনে তা নয়। ওদের চড়ে বেড়াবার এলাকা থেকে একটু দূরে থাকেন তিনি। জঙ্গল এলাকাটার কাছে। আগে মিসেস পটার আর ওঁর স্বামী মিলে হোটেলটা চালাতেন, এখন মিস্টার পটার মারা যাওয়া পর উনি একাই সব করেন। মাঝে মাঝে বেশি টুরিস্ট হলে টমদের পাড়া থেকে কাউকে ডাকেন সাহায্যের জন্যে।

গেট খুলে বাগানে ঢুকল দুজনে। কেউ কোথাও নেই।

“কেউ না থাকলে কী করবি? মাছ দুটোকে রেখে দিয়ে আসবি? তাহলে কিন্তু হুলোটা খেয়ে নেবে!” মাইক জানাল।

“ভিতরে গিয়ে দেখি তো আগে। কেউ না থাকলে তখন ভাবা যাবে।”

কিন্তু ভিতরে ঢুকেও কাউকে দেখতে পেল না ওরা। সামনের ঘরটায় কেউ নেই। এমনকি হুলোটা যেটা সবসময় বসে থাকে সেটাও নেই! সামনের ঘরের দরজা সবসময় খোলাই থাকে। মিসেস পটার বলেন, ‘ওটা তো আমার হোটেলের রিসেপশন, ওটা খোলা না থাকলে লোকে ঢুকবে কী করে?’

মাইক এদিক ওদিক দেখে বলল, “আমি চললাম। আর এখানে থেকে কাজ নেই। শেষে কিছু একটা গণ্ডগোল হলে আমাদের নাম লাগবে!”

“তুই বড্ড ভিতু! চল ওপরের তলাটা দেখে আসি। ওই লোকটা অতগুলো জলের আর কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল কেন কিনল সেটা জানতে হবে না?”

“তোর অত কৌতূহল কীসের শুনি? সে খাবে না মাথায় দেবে তাতে তোর কী? সে তো দাম দিয়েই কিনেছে! ওপরে গিয়ে আর কাজ নেই।”

হঠাৎ টম বলল, “এই, কীসের একটা শব্দ হল না?”

ওরা দুজনেই কান পেতে শুনল। হ্যাঁ, একটা শব্দ হচ্ছে, ঘুট ঘুট ঘুট – ঠক ঠক ঠক! শব্দটা যেন মাটির নীচে থেকে আসছে মনে হচ্ছে।

“নীচে কী আছে রে?”

“জানি না তো, চল দেখি।”

“পাগল! আমি ওর মধ্যে নেই। আমি চললাম, শেষে কী বিপদে পড়ব!”

“ঠিক আছে, তাহলে আমি একা একাই যাচ্ছি।” টম ঘোষণা করল।

ব্যস, ওইখানেই মাইক কাত। সে একা টমকে কিছুতেই যেতে দেবে না। টম এদিক সেদিক খুঁজে ঠিক নীচে যাওয়ার সিঁড়িটা বার করে ফেলল। নীচে ঢোকার দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। সেটা খুলে ওরা দুজনে মিলে নীচে নামল। নীচেটা বেশ অন্ধকার। সেই অন্ধকার চোখ সওয়ার পর ওরা যা দেখল তাতে ওদের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল! এবড়োখেবড়ো মেঝেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মিসেস পটার! দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসে আছেন উনি। আর দেওয়ালে মাঝে-মাঝেই মাথাটা ঠুকছেন বলেই ওই শব্দটা হচ্ছে ঘুট ঘুট ঘুট।

“কে আপনার এমন দশা করল?” বলে ছুটে গিয়ে টম আর মাইক মিসেস পটারের বাঁধন খুলে দিল।

ঠিক তখুনি দুম করে একটা শব্দ হল, একটা হা হা হাসি আর খটাস! ওপরের দরজাটাকে কেউ বন্ধ করে দিল ছিটকিনি টেনে। এবার ওরা সবাই বন্দি।

বাঁধন খুলে দিতে মিসেস পটার হাউমাউ করে উঠলেন। একটা টিমটিমে আলো ছিল বেসমেন্টে, সেটা জ্বালানো হল। শুধু ওঁকেই নয়, ম্যাক্স, মানে ওঁর হুলোটাকেও বেঁধে ফেলেছিল লোকটা! তাকেও খোলা হল। সে কুঁই কুঁই করে মিসেস পটারের কোলে গিয়ে বসল। ওঁর কপালের বাঁদিকটা ফেটে গেছে, রক্ত পড়ে শুকিয়ে গেছে।

“কে আপনার এই দশা করল মিসেস পটার? ওই খয়েরি টুপি আর ঝুলো গোঁফ লোকটা কি?”

মিসেস পটার বললেন, “হ্যাঁ!”

“লোকটা কে? কী চায় সে? অত পেপসি কিনেছে কেন?”

মাথা নাড়লেন মিসেস পটার, “আমি কিছু জানি না। বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট তো খালিই ছিল। দিন তিনেক হল লোকটা এসে এখানে উঠেছে। বলল ‘আমাকে বিরক্ত করবেন না’। আমি ভাবলাম আর্টিস্ট বা লেখক কেউ হবে। দু-বেলা খেতে-টেতে দিয়েছি। ঘরের দামও দিয়েছে ঠিকঠাক। কাল রাতে হঠাৎ দেখি ম্যাক্স পাগলা হচ্ছে। ওর ঘরের দরজায় গিয়ে আঁচড় কাটছে! ম্যাক্স এমনিতে কুঁড়ের বাদশা, সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমোয়। সে যখন ব্যস্ত হচ্ছে তখন কিছু একটা গণ্ডগোল ভেবে আমি ওপরে লোকটার ঘরে গিয়ে টোকা দিলাম দরজায়।

“ঘরে কেউ থাকলে আমি তাদের বিরক্ত এমনিতেই করি না, আর এ তো বলেই দিয়েছিল। খাবারদাবার সব নীচের ডাইনিং টেবিলেই দিয়ে দিই। যে যার মতো খেয়ে নেয়। চাইলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েও খেতে পারে। ম্যাক্স ওইরকম করছে বলে আমি বাধ্য হলাম দরজায় টোকা দিতে। ওমা, লোকটা তখন দরজাটা এক চিলতে ফাঁক করে মুখ বার করে বলল, ‘কী চাই?’

“আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, ‘না, মানে সব ঠিকঠাক আছে কি না দেখতে এসেছিলাম। ম্যাক্স কেমন একটা করছিল, তাই।’ ব্যস, আর কিছু বলতে পারার আগেই লোকটা ধাঁ করে একটা রিভলভার বার করে আমার কপালে ঠেকাল! সেইভাবে জোর করে আমাকে এখানে নীচে নিয়ে এল। তারপর মারল এক ঘা। আমি ওই আঘাতে আর ভয়ে তো অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

“জ্ঞান হতে দেখি আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলেছে। ম্যাক্সকেও বাদ দেয়নি! আমার এই বাড়ির এদিকে তো কেউ খুব একটা আসে না। তাও আমি আশা করছিলাম যদি কেউ আসে আর যদি শব্দ শুনতে পায়!

“তোমরা যে এসেছ সেই জন্যে আমি ভগবানের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। কিন্তু লোকটা ওপরের ঘরে কী করছে কে জানে!”

এদিকে নীচের ওই বন্ধ ঘরটা থেকে বেরোবার তো উপায় নেই।

হঠাৎ মিসেস পটার বললেন, “মাথায় ঘা খেয়ে আমার মাথার ঠিক নেই। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম এখানে একটা জানালা ছিল। ওইদিকে।

“সেটাকে বন্ধ করা হয়েছিল কাঠ দিয়ে। আসলে কাচ ভেঙে গিয়েছিল, বৃষ্টির জল ঢুকত ভিতরে বলে জিম কাঠ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। জিমকে আমি মাঝে মাঝে ডাকি বাড়িতে, এটা সেটা কাজ করে দেয় সে আমার হয়ে। দেখো সেই জানালাটা খোলা যায় কি না।”

জানালাটা দেখতে পাওয়া গেল, কিন্তু বড্ড উঁচুতে। নাগাল পাওয়াই মুশকিল।

টমের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সে বলল, “মিসেস পটার, আপনি মাইককে কাঁধে নিন আর আমি মাইকের কাঁধে উঠছি। তাহলেই নাগাল পেয়ে যাব।”

মিসেস পটারের বয়স হয়েছে, তার ওপর মাথায় চোট, তাও উনি রাজি হলেন। ওঁর কাঁধে উঠল মাইক আর মাইকের কাঁধে টম।

দুজনকে কাঁধে নিয়ে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। জানালার থেকে কাঠের টুকরোটা সরাতেই বাইরের আলো দেখা গেল। ভাগ্যিস কাঠটা শুধু টেপ দিয়ে আটকানো ছিল, পেরেক মারা হয়নি! টম ওই ছোটো জানালা দিয়ে নিজের শরীরটাকে এঁকিয়ে বেঁকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।

“আমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি।” বলে ছুটে চলে গেল টম। কারণ, ওই ছোটো জানালা দিয়ে মাইক বা মিসেস পটারের বেরোনো অসম্ভব। ওরা অপেক্ষায় বসে রইল।

টম আর আসে না। শেষে প্রায় আধঘণ্টা বাদে এসে সিঁড়ির ওপরের দরজাটা খুলল।

“কী করব, লোকটা সামনের দিকে নিজের গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সেলফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিল। আমাকে দেখে ফেললে মুশকিল হবে, তাই আমি লুকিয়ে বসে ছিলাম। এখন গাড়ি নিয়ে কোথাও গেছে। এইবেলা ওর ঘরে গিয়ে দেখতে হবে।”

মিসেস পটার ওপরের ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে ওদের সঙ্গে চললেন, সঙ্গে তিনটে ফ্রাইং প্যান। ম্যাক্স শুধু রান্নাঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ভাবখানা এমন যেন আজকের জন্যে অনেক হয়ে গেছে বাপু, এবার একটু ঘুমোই।

ঘর খুলে ওরা যা দেখল তা অবিশ্বাস্য।

ভাবলে এখনও মাইকের গায়ে কাঁটা দেয়। ঘরের খাটে, টেবিলে, মেঝেতে সারি সারি জল আর কোল্ড ড্রিঙ্ক ইত্যাদির বোতল রাখা আর সেই প্রতিটা বোতলে একটা করে পাখি ভরা! বোতলের মুখের দিকটা কেটে জাল দিয়ে আটকনো। বড়ো বোতলে বড়ো পাখি আর ছোটো বোতলে ছোটো পাখি। সবাই একেবারে চটকে-মটকে একশেষ। ভয়ে জুজু!

মিসেস পটার বললেন, “নির্ঘাত জাল ফেলে আমাদের জঙ্গল থেকে এদের ধরেছে। আমি পড়েছি যে এইভাবে বোতলে করে পাখি পাচার হচ্ছে বিদেশে। এক-একটা পাখির দাম ৫০০ – ৬০০ ডলার! কী শয়তান! আর একটু হলেই পালিয়ে যেত!”

বাইরে একটা গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দ হল। লোকটা ফিরেছে!

“এই নাও! তৈরি থাকো।” বলে মিসেস পটার ওদের দুটো ভারী ফ্রাইং প্যান ধরিয়ে দিলেন আর নিজে একটা রাখলেন। “দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেই ওকে চমকে দিয়ে আমাদের আক্রমণ করতে হবে!”

মাইক ফিসফিস করে বলল, “আশা করি সে বুঝতে পারবে না আমরা এখানে লুকিয়ে আছি।”

লোকটা সত্যি আশা করেনি ওরা ঘরে থাকবে। সে নিশ্চিন্ত মনে চাবি দিয়ে দরজা খুলে কয়েকটা পিচবোর্ডের বাক্স নিয়ে ঘরে ঢুকতেই ধাঁই ধাঁই করে মাথায় ফ্রাইং প্যানের বাড়ি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ওকে চাদর দিয়ে বেঁধে ফেলল ওরা। পুলিশে খবর দেওয়া হল, ওরা বলল আসছে।

তারপর লোকটার আনা বাক্সগুলো করে সব প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে বাইরে নিয়ে গেল ওরা তিনজন। ভয়ে আধমরা হয়ে ছিল পাখিগুলো, কিন্তু মরেনি। ছাড়া পেয়ে মহানন্দে আকাশে উড়তে লাগল। ওদের মাথার ওপর কয়েক পাক মেরে ফিরে গেল জঙ্গলে নিজেদের আস্তানায়।

একজন শুধু উড়ল না। মাইকের কাঁধে এসে বসল রিঙ্গো। টম আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল।

golpouran2

ছবি- উপাসনা

জয়ঢাকের গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s