গল্প-হানাবাড়ির কান্না-আবীর গুপ্ত-বসন্ত ২০২১

 আবীর গুপ্তর আগের গল্প  মহাসঙ্কটে সুনন্দ, মহাসঙ্কটে পৃথিবী

(১)

সৌমেন আর বাবলু যখন পোড়ো বাড়িটার কাছে পৌঁছল, তখন বিকাল প্রায় পাঁচটা বাজে। শীতকাল, তাই দিনের আলো বেশ কম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে আসবে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক। শীতটাও জাঁকিয়ে পড়েছে। দুজনেই রাতে থাকতে হবে বলে গায়ে হাফ সোয়েটারের সঙ্গে ফুল সোয়েটারও পরে এসেছে। কাঁধের ব্যাগে শুকনো খাবার আর জল ছাড়াও গায়ে দেওয়ার চাদর আর ফোল্ডিং মাদুরও আছে।

বাবলু সৌমেনকে জিজ্ঞাসা করল, “টর্চ, মোমবাতি আর দেশলাই আনা হয়েছে তো? তাড়াতাড়ি করে গোছাতে গিয়ে আমি বোধ হয় নিতে ভুলে গেছি।”

সৌমেন থেমে জবাব দিল, “নিশ্চিন্তে থাক, আমি সব চেক করে দেখেছি। এখন ও নিয়ে ভাবিস না। বরঞ্চ রাতের কথা ভাব। বাড়িটা সম্বন্ধে যা শুনেছি তা যদি সত্যি হয়…”

বাউন্ডারি ওয়াল জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে। ভিতরে এককালে কোনো বাগান হয়তো ছিল, এখন আগাছার জঙ্গল। দুজনেই নিঃশব্দে এগিয়ে চলল। সৌমেন একবার পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিল সেল ফোনটাকে এনেছে কি না। দরকার হলে ফোন করে সাহায্য চাইতে হতে পারে। কী মনে হল, সেল ফোনটাকে বার করে দেখল টাওয়ার আছে কি না। না, ফুল টাওয়ার শো করছে। এটা অবশ্য একটা ভালো দিক। এখানে, এই অজ পাড়াগাঁয়ে সেল ফোন যে কাজ করছে এটা ভাবাই যায় না।

আগাছার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে কোনোরকমে ওরা যখন বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছল তখন ওদের বেশ ভয়ই লাগছে। দুজনেই অত্যন্ত সাহসী ছেলে, তাও… চারদিক কেমন যেন একটা নিস্তব্ধ, কোনো আওয়াজ নেই। এমনকি ঝিঁঝিঁর ডাক তো দূরের কথা, গাছের পাতার মধ্য দিয়ে হাওয়া বয়ে গেলে যে শোঁ শোঁ আওয়াজ হয়, সেটাও নেই। কেমন যেন দমবন্ধ করা গুমোট পরিবেশ।

সদর দরজা হাট করে খোলা। ওরা একটু ইতস্তত করে খোলা দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকল। ওরা একটা বড়ো হল ঘরের মতো ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই সশব্দে সদর দরজা বন্ধ হয়ে গেল! ওরা আঁতকে উঠে সদর দরজার দিকে তাকাল; দরজাটার ছিটকিনি নিজে নিজেই আটকে যাচ্ছে দেখে আতঙ্কে শিউরে উঠল।

(২)

সৌমেন সরকার আর বাবলু রায় কলকাতার একটা নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। দুজনেই ফিজিক্স অনার্স নিয়ে পড়ছে। মজার বিষয় হল, ক্লাস ওয়ান থেকে দুজনেই একসঙ্গে একই স্কুলে পড়া শুরু করে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক আর হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়। দুজনে যেমন সাহসী, তেমনই ডাকাবুকো। ভূতপ্রেতে একদম বিশ্বাস করে না। আর দুজনেই বেড়াতে খুব ভালোবাসে। ফার্স্ট সেমিস্টারের পরীক্ষার পর সৌমেনই বাবলুকে বলল, “চল কোথাও ঘুরে আসি।”

“কোথায়?”

“শিমুলতলার কাছে আমাদের দূরসম্পর্কের এক কাকা থাকেন। অনেকবার আমাদের ওঁর ওখানে যেতে বলেছেন। যেখানে থাকেন সেটা প্রায় অজ গ্রাম। ওখানে যাওয়া যেতে পারে। গ্রামও দেখা হল, বেড়ানোও হল, আবার কাকার ওখানেও যাওয়া হল।”

ব্যস, এরপরই দুজনে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে ট্রেনে শিমুলতলা, তারপর ওখান থেকে ট্রেকারে চেপে প্রায় দশ কিমি পথ গিয়ে যেখানে নামল সেখান থেকে কাকাদের গ্রাম মিনিট দশেকের হাঁটাপথ। গ্রামের নামটা বেশ সুন্দর, বেড়িতোরিয়া। গ্রামের পাশেই জঙ্গল। এই জঙ্গলে নাকি হাতিও মাঝেমধ্যে চলে আসে। যখন আসে তখনই বিপদ, হাতির পাল গ্রামের ক্ষেতে ঢুকে পড়ে পায়ের চাপে সব নষ্ট করে দেয়।

সৌমেনের কাকা ওদের দেখে এত খুশি হলেন যে বলার নয়। অত্যন্ত সরল সোজা মানুষ, বাচ্চাদের মতন সবাইকে ডেকে ডেকে ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।

ওরা ঠিক করেছিল দিন তিনেক থাকবে। এর মধ্যে শিমুলতলায় একদিন গিয়ে ঘুরে আসবে।

কাকার সঙ্গে নানান গল্প হচ্ছিল। এ-কথা সে-কথার পর বাবলু জিজ্ঞাসা করল, “এখানে কী কী দেখার আছে?”

কাকা একটু ইতস্তত করে বললেন, “দেখার জায়গা বলতে তো সেরকম কিছু নেই। পাশেই জঙ্গল আছে, ওখানে পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারো। জন্তুজানোয়ার সেরকম কিছু নেই। মাঝেমধ্যে অবশ্য হাতির পাল আসে, তখনই যা একটু। এছাড়া দেখার জায়গা বলতে রাজবাড়ি। তবে ওখানে না যাওয়াই ভালো।”

বাবলু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কেন? ঢুকতে দেয় না বুঝি?”

“না না, ওই বাড়িতে কেউ থাকে না। আসলে ওটা পোড়ো বাড়ি। আগে লোকে দেখতে যেত, কিন্তু এখন ভয়ে যায় না।”

“ভয়ে! কেন, কীসের ভয়?”

“ভূতের ভয়। ওই বাড়িতে অপদেবতা আছে। অনেকরকম গল্প আছে বাড়িটা নিয়ে। আমাদের গ্রামের একটি ছেলে ওই বাড়িতে রাত কাটাতে গিয়েছিল, পরদিন ওকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর থেকেই…”

সৌমেন উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “ছেলেটি ভূতের ভয়ে মারা গেছে, নাকি কোনো বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা গেছে?”

“আমি দেখিনি, শুনেছি। দোতলার একটি ঘরে ছেলেটি মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। মুখটা নাকি বীভৎস দেখতে লাগছিল।”

“হয়তো একা ছিল বলে ভয়ের চোটে হার্টফেল করে মারা গেছে। এতে ভূত আছে বলে প্রমাণ হয় না। বাড়িটা কোথায়?”

“জঙ্গলের মধ্যে। পূর্বদিকে একটু গেলেই বাড়িটা। সমাদ্দাররা বছর কুড়ি হল বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন কলকাতা। আসেন না। মাঝে বাড়ি বিক্রির চেষ্টাও করেছিলেন। ওই ভূতুড়ে বাড়ি কে কিনবে!”

“রাজবাড়ি বললেন কেন? ওঁরা কি আগে রাজা ছিলেন?”

“হ্যাঁ, বেশ কয়েক পুরুষ আগে ওঁরাই এখানকার রাজা ছিলেন। এখন তো রাজা, রাজত্ব এসব কোথাও কিছু নেই। ওঁদের বাড়িটাকে তাই গ্রামের লোকেরা রাজবাড়ি বলে।”

“ওখানে আর কেউ কোনোদিন রাতে থাকেনি?”

“না। গ্রামের লোকেদের অত সাহস নেই ওখানে থাকে। আমারই তো ওই বাড়ির ধারে কাছে গেলে ভয়ে দমবন্ধ হয়ে আসে।”

সৌমেন আর বাবলু এই নিয়ে আর কথা বাড়াল না। ঠিক করল বাড়িটাকে দেখতে যাবে।

(৩)

পরদিন দুজনে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন বাড়িটায় পৌঁছল তখন সকাল প্রায় আটটা। চারপাশের বাউন্ডারি ওয়াল জায়গায় জায়গায় ভাঙা। বাড়িটা বেশ বড়ো আর দোতলা। সদর দরজা দিয়ে ওরা ভিতরে ঢুকল। চারদিক কেমন যেন নিস্তব্ধ দমবন্ধ করা পরিবেশ। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রথমে একটা বড়ো হল ঘর। সদর দরজার ঠিক উলটোদিকে হল ঘরের মধ্যে আরেকটা দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরোতেই করিডোর। দু-পাশে বেশ কয়েকটা দরজা দেখে বুঝল, সেগুলো সবই ঘরের দরজা। দরজাগুলো বন্ধ। একটা দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেল। ভেজানো ছিল। করিডোরের অপর প্রান্তে দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ি। ওদের যে ভয় লাগছে না তা নয়, কিন্তু ভয় পাওয়ার মতো তখন কিছুই ওরা দেখতে বা শুনতে পায়নি। তাই সাহস করে দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে পড়ল।

দোতলাটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বাবলু চারপাশে তাকাতে তাকাতে সৌমেনকে জিজ্ঞাসা করল, “আজ রাতে এখানে থাকবি? দারুণ একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে।”

সৌমেন থেমে জবাব দিল, “আমিও তাই ভাবছি। শুধু কাকাকে ম্যানেজ করা দরকার। কাকা হয়তো রাজি হবেন না।”

“ওঁকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। তাহলে তো নিশ্চয়ই তোর আপত্তি নেই?”

দুপুরে কাকার সঙ্গে ভাত খেতে বসে বাবলু যখন রাজবাড়িতে রাতে থাকার কথা তুলল, কাকা তীব্র আপত্তি করলেন। সৌমেন আর বাবলু ওঁর আপত্তি মানতে চাইছিল না। অবশেষে উনি রাজি হলেন। শর্ত একটাই, কোনো সমস্যা দেখলেই ওরা হয় ওই বাড়ি ছেড়ে তখুনি চলে আসবে, নয়তো সেল ফোনে ফোন করে কাকাকে খবর দেবে। উনি লোকজন নিয়ে ওদেরকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসবেন।

বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ ওরা কাঁধের ব্যাগে সবকিছু গুছিয়ে ওই পোড়ো রাজবাড়িতে রাতে থাকার জন্য রওনা দিল।

(৪)

সদর দরজার ছিটকিনি নিজে থেকেই বন্ধ হতে দেখে দুজনে আতঙ্কে শিউরে উঠল। দরজার কাছে দৌড়ে গেল, ছিটকিনিটা খোলবার চেষ্টা করেও পারল না। শক্ত হয়ে আটকে গেছে। সৌমেন বাবলুর দিকে তাকিয়ে দেখল, বাবলু ভয়ে কেমন যেন জড়সড় হয়ে গেছে। নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছিল ওরা নানাভাবে। হয়তো দরজা জোরে বন্ধ হওয়ায় ছিটকিনিটা কোনোভাবে আটকে গেছে। কিন্তু তাই-বা কীভাবে হয়!

সৌমেন ছিটকিনিটা আবার খোলবার চেষ্টা করল, এবারে কিন্তু সহজেই ছিটকিনিটা খুলে গেল। দুজনে দরজা খুলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর সৌমেন বলল, “মনে হয় ছিটকিনিটা দরজা জোরে বন্ধ হওয়ার জন্য আটকে গিয়েছিল। এখন কী করণীয়? রাতে থাকবি, নাকি ব্যাক করবি?”

“এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে! সাপ-টাপ থাকতে পারে। অবশ্য শীতকালে সাপের চান্স কম। কিন্তু যদি হাতি আসে? এর থেকে এখানে রাত কাটানো ভালো।”

দুজনে একটু ইতস্তত করে টর্চ জ্বালিয়ে আবার ঢুকল। এবারে কিন্তু দরজা বন্ধ হল না। ওরা দুজনে হল ঘরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে উলটোদিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে করিডোরে গেল। করিডোরের শেষে সিঁড়ি। দুজনে সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিল। দু-পাশের ঘরগুলো থেকে কীরকম যেন একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ আসছে। অথচ এই আওয়াজ ওরা যখন সকালে এসেছিল তখন পায়নি। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে সেই একতলার মতোই লম্বা করিডোর আর দু-পাশে ঘর। হাঁটতে হাঁটতে করিডোরের শেষপ্রান্তে থাকা বড়ো হল ঘরটায় এল। এই হল ঘরটা একতলার হল ঘরের ঠিক ওপরে। ব্যাগ থেকে মাদুর বার করে খুলে একটা মোম জ্বালিয়ে দুজনে মাদুরে বসে পড়ল।

হল ঘরের জানালাগুলো বন্ধ ছিল। একটা জানালা খোলা ছিল, ঠান্ডা হাওয়া আসছে দেখে সেটাও ওরা বন্ধ করে দিল। মাদুরে দুজনে চুপ করে বসে ছিল, কারোরই কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। বাবলুই নিস্তব্ধতা ভেঙে প্রথম কথা বলল, “চুপ করে বসে থাকার থেকে আয় দুজনে মিলে গান ধরি।”

ওরা বাংলা আর হিন্দি সিনেমার বেশ কিছু জনপ্রিয় গান গাইল।

সময় যেন কাটতেই চাইছে না। দুজনে ঘড়ি দেখল, রাত প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। অথচ মনে হচ্ছে কতই না রাত হয়েছে। সৌমেন পকেট থেকে সেল ফোনটা বার করতে করতে বলল, “কাকাকে একটা ফোন করে দিই, হয়তো চিন্তা করছেন।”

ফোনে কিছুতেই কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে না দেখে অবাক হয়ে ডিসপ্লেটা দেখতেই কারণটা বুঝল, টাওয়ার নেই। অথচ নীচে বাগানে তো ফুল টাওয়ার ছিল! উঠে গিয়ে জানালার কাছে গেল, সেখানেও টাওয়ার নেই। একটা জানালা খুলে চেষ্টা করল, তাতেও টাওয়ার পেল না। বাধ্য হয়ে ফোনটা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বিরক্ত হয়ে বলল, “এদের কী যে সব সার্ভিস! কখনো টাওয়ার আছে, কখনো নেই।”

রাত আটটা নাগাদ কাকিমার কাছ থেকে আনা রুটি, সবজি আর নারকোলের সন্দেশ খেল। সৌমেন হাসতে হাসতে বাবলুকে বলল, “কী রে, ভূত-টুতের তো কোনো চিহ্ন নেই। তখন দরজার ছিটকিনিটা বোধ হয় হাওয়াতেই বন্ধ হয়েছিল। ওরকম বন্ধ হতে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোর ভয় লাগেনি?”

“হ্যাঁ, তা অবশ্য একটু… ওরকম দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।”

সবে ওরা দুজনে মাদুরে শোওয়ার চেষ্টা করছে, এমন সময় খেয়াল করল, মোমের আলোয় ওদের ছায়াদুটো কেমন যেন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে দুজনের মাথাতেই তিনকোনা বেশ উঁচু টুপির মতন রয়েছে। বাবলু হেসে সৌমেনকে সেটা বলতে যেতেই চমকে গেল। শুধু টুপিই নয়, দুজনের হাতেও মনে হচ্ছে লম্বা লাঠির মতন কী যেন রয়েছে। দুটো ছায়াই ওদের দেখে ঘুরে দাঁড়িয়ে পড়ল। বাড়ির মধ্যেই কোথাও কোনো বাচ্চা কাঁদছে; ওরা পরিষ্কার সেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। একটা ছায়া আরেকটা ছায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে কী যেন বলল। দুটো ছায়াই ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

হঠাৎই ছায়াদুটো দরজার দিকে এগিয়ে গেল। তারপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

ওরা দুজনেই হতভম্বের মতো বসে ছিল। যা এতক্ষণ দেখছিল তা কি সত্যি? নাকি চোখের ভুল?

বাবলু বেশ ভয় পেয়ে গেছে। চাপা গলায় সৌমেনকে বলল, “চল চলে যাই, আমার কিন্তু এসব ভালো ঠেকছে না।”

“কিন্তু ভূত দেখব বলেই তো আমরা এখানে এসেছি। এতেই ভয় পেয়ে যাচ্ছিস? তাহলে এলি কেন?”

“সত্যি সত্যিই যে ভূতের বাড়ি তা যদি বুঝতাম! তুই আরেকবার ফোনটায় চেষ্টা কর।”

সৌমেন ফোন বার করে দেখল, টাওয়ার একেবারেই নেই তা নয়, টাওয়ারের চারটে দাগের মধ্যে একটা দাগ শো করছে। ও ফোনটা করার চেষ্টা করতেই শুনল রিং হচ্ছে।

ও-পাশ থেকে কেউ ফোনটা ধরল। সৌমেন কথা বলতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। এক ভয়ংকর বীভৎস গলার আওয়াজ ভেসে এল ফোনে। শুনল তার হুংকার, “তোরা ভুল করেছিস এখানে এসে। আমাদের শান্তি নষ্ট করেছিস। এর শাস্তি তোদের পেতেই হবে।”

(৫)

সৌমেনের কাকার মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল সেল ফোনের বিকট আওয়াজে। এই আওয়াজ তো এই ফোনে সেট করা নেই! ফোনটা ধরতেই উলটোদিক থেকে শুনলেন সৌমেনের গলা, “কাকু, আমাদের বাঁচাও! আমাদের…”

সৌমেনের গলার আওয়াজকে ছাপিয়ে এক বীভৎস ভয়ংকর গলার আওয়াজ শুনলেন, “ওরা আমাদের শান্তি নষ্ট করেছে। এমন শাস্তি…”

ফোনটা কেটে গেল। উনি রাতেই লোকজন জোগাড় করে আসতে চাইছিলেন, কিন্তু গ্রামের কেউই অত রাতে ওই হানাবাড়িতে যেতে চাইছিল না। অবশেষে জনা দশেক ছেলে ভোরবেলায় যেতে রাজি হল ওই বাড়িতে।

ভোরে যখন পৌঁছলেন সৌমেনের কাকা, তখন বাড়ির সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখে চিৎকার করে ওদের নাম ধরে ডাকলেন। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঢুকলেন। একতলার হল ঘরের মেঝেতে দুজনের দেহই পড়ে ছিল। দেহে প্রাণ নেই। মুখদুটো বীভৎস হয়ে আছে। দুজনের চোখই ছিল সদর দরজার দিকে।

অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর

জয়ঢাকের গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s