এই লেখকের আগের গল্প- গিরিগুহার কাপালিক
।।১।।
আনন্দ নিকেতন আবাসনের দুর্গাপুজোটা এ-বছর ভারি জাঁকজমকের সঙ্গে হচ্ছে। গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে তেমন করে পুজো হতে পারেনি। তাই এ-বছর সবাই যেন সেই খামতিটা সুদে-আসলে মিটিয়ে নিতে চাইছে।
মহা অষ্টমীর মহা সকাল। শরতের সোনা রোদ প্যান্ডেলের গা বেয়ে যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। ঢাকের কুড়ুর কুড়ুর শব্দে পুজো মণ্ডপ মুখরিত হয়ে উঠেছে। পুজো প্রাঙ্গণের এদিকে ওদিকে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ছোটাছুটি, হাঁকাহাঁকি, ডাকাডাকিতে মণ্ডপটায় যেন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।প্যান্ডেল নিয়ে তাদের খেলার শেষ নেই। প্যান্ডেলের ফাঁকফোকরে ঢুকে লুকোচুরি খেলা, গোলকধাঁধা খেলা সারাদিন চলছে। এদিকে প্যান্ডেল নষ্ট হয়ে যাবে বলে পুজো কমিটির ছেলেদের চিন্তার শেষ নেই। তারা বাচ্চাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কমিটির ছেলেরা প্যান্ডেল ছেড়ে যেতেই যে-কে-সেই অবস্থা। বাচ্চাদের খেলাধুলো আবার শুরু হচ্ছে।
প্যান্ডেলের ওদিকটায় গঙ্গা নদী। নদীর দু-ধার কাশফুলে সাদা হয়ে গেছে। কাশফুল ছুঁয়ে হাওয়া এসে থেকে থেকে প্যান্ডেল সাজানোর শোলার ফুল, ঝাড় বাতি, টুনি বাল্বগুলোকে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মা আর ঠাকমা-দাদুর সঙ্গে ছোট্ট ডোডো পুজো মণ্ডপে এসেছে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে। পরনে হলদে পাঞ্জাবি আর জিনস প্যান্ট। হাতে ঘড়ি, পায়ে চামড়ার স্যান্ডেলে তাকে দস্তুরমতো বাঙালিবাবু লাগছে।
অঞ্জলি শেষ। তাই মা আর ঠাকমাকে নিয়ে দাদু বাড়ির পথ ধরেছেন। অবশ্য প্রসাদের থালাটা ডোডোর হাতে। সে এতক্ষণ হাওয়ার দোলায় ঝাড় বাতি আর টুনি বাল্বগুলোর নাচন দেখছিল। ফলে ঠাকমা-দাদুর থেকে সে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। পুজো প্রাঙ্গণ ছেড়ে রাস্তায় উঠে দাদু পেছন ফিরে দেখলেন ডোডো সঙ্গে নেই। তিনি রাস্তা থেকেই হাঁক দিলেন, “চলে এসো দাদুভাই। বিকেলে মেলা বসলে ছোটকার সঙ্গে আবার এসো।”
দাদুর ডাকে ডোডোর বাড়ি যাবার খেয়াল ফিরল।
“আসি দাদু।” বলে সে মণ্ডপে ওঠা-নামার কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল। প্যান্ডেলের বাইরে পা বাড়িয়েছে, এমন সময় ডোডো দেখতে পেল, ইয়া বড়ো এক দেশি কুকুর যেন সিংহনাদ করতে করতে মাঠের দিক থেকে তার দিকে ছুটে আসছে। কুকুরটার চোখ দুটো আগুনের ভাঁটার মতো জ্বলছে। তার লম্বা লাল জিভটা লকলক করছে। জিভ থেকে ফোঁটা ফোঁটা লালা ঝরছে। কুকুরে ডোডোর ভীষণ ভয়। এত ভয় সে বোধ হয় ভূতকেও পায় না। ভয়ে আতঙ্কে সে ‘মা!’ বলে চিৎকার করে উঠল। একবার ভাবল দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যাবে। পরমুহূর্তেই ভাবল, মা তো তার থেকে অনেকটা দূরে। বরং সিঁড়ি বেয়ে মণ্ডপে উঠে যাওয়া যাক। হঠাৎই দাদুর শেখানো কুকুর তাড়ানো মন্ত্রটা তার মনে পড়ে গেল। অন্যদিন হলে এতক্ষণে সে পড়িমরি করে ছুটত। কিন্তু আজ সে দাদুর কথামতো ডানহাতের বুড়ো আঙুলটা আঙুলের সাত নম্বর কড়ে ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দাদু বলেছিল, কুকুরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেটা অবশ্য সে পারল না, ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল।
এইভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল তা ডোডোর খেয়াল নেই।
“চোখ খোল দাদুভাই।”
দাদুর কথায় ডোডোর সম্বিৎ ফিরল। সে চোখ মেলল। দেখল, সামনে দাঁড়িয়ে দাদু মিটিমিটি হাসছেন আর তাঁর পায়ের কাছে লুটিয়ে কুকুরটা কুঁইকুঁই করছে। দাদু একগাল হেসে বললেন, “কী দাদুভাই, ম্যাজিকে কাজ করল!”
ডোডো বিস্মিত হয়ে একবার কুকুরটার দিকে আরেকবার দাদুর দিকে তাকাল। বলল, “হ-হ্যাঁ, দাদু। কিন্তু কুকুরটা বশীভূত হল কী করে?”
“ম্যাজিক দাদুভাই। ও কুঁইকুঁই করে প্রসাদ চাইছে। আপাতত ওকে একটু প্রসাদ দাও।”
ডোডো ভয়ে ভয়ে একটু প্রসাদ কলাপাতায় করে মাটিতে রেখে দিল। কুকুরটা পরম আনন্দে সেই প্রসাদ খেতে শুরু করল।
“এখন বাড়ি চল, ঠাকমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে ঠাকমা আবার লুচি-আলুর দম বানাতে বসবে।”
“চলো। কিন্তু ম্যাজিকটা কাজ করে কী করে তা কখন বলবে?”
দাদু ভুরু নাচিয়ে বললেন, “রাতে খাওয়াদাওয়ার পর।”
“বেশ। তাই হবে।” বলে দাদুর হাত ধরে ডোডো ফ্ল্যাটের পথ ধরল।
।।২।।
সেদিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ডোডো দাদুর পিছনে ঘুরঘুর করতে লাগল। দাদু কখন যে ম্যাজিকের গল্পটা বলবে, কে জানে! তার আর তর সইছে না। দাদু সব বুঝে পানের খিলি বানাতে বানাতে বললেন, “কী ব্যাপার দাদুভাই, কুকুর বশীকরণের গল্পটা শুনতে মনটা আঁকুপাঁকু করছে, তাই তো?”
ডোডো উপর-নীচে ঘাড় দোলাল।
পানটা মুখে পুরে, আঙুলের ডগায় একটু চুন মাখিয়ে দাদু আঙুলটা জিভে ঠেকালেন। তারপর বললেন, “শোনো তবে। কুকুর দেখলেই ভয় পাওয়া তোমার থেকে আমার আরো বেশি ছিল। অবশ্য তার কারণও ছিল। আমি ছেলেবেলায় কতবার যে কুকুরের তাড়া খেয়েছি, তার ঠিকঠিকানা নেই। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি ভারি শক্তিশালী, সে তো তুমি জানোই।”
“হ্যাঁ দাদু, বইতে পড়েছি। সেজন্যই গোয়েন্দারা অপরাধী ধরতে কুকুর রাখে। কুকুর গন্ধ শুঁকে অপরাধী শনাক্ত করে দেয়।”
“ঠিক বলেছ।” দাদু হেসে বললেন, “কুকুরেরা সবাই মনে হয় আমার গন্ধ টের পেত। তাই আমার গন্ধ পেলেই তারা আমায় তাড়া করত। কী আর বলব দাদুভাই, দু-তিনবার কুকুরের কামড় খেতে খেতে বেঁচে গেছি।
“একবারের কথা শোনো। তখন আমার বয়স দশ কি বারো। সেদিন বাড়িতে রাজমিস্ত্রি এসেছিল দোতলার ঘর প্লাস্টার করতে। মিস্ত্রিদের জন্য বাবা মিষ্টির দোকানে পরোটা আর তরকারি অর্ডার দিয়ে এসেছিল। ছোটকার দায়িত্ব ছিল সেগুলো নিয়ে আসার। আমি বায়না ধরলুম ছোটকার সঙ্গে আমিও যাব। ছোটকার সঙ্গে বাজারে যাওয়া মানে বাজার থেকে ভালো কিছু খেতে পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা! এজন্য বাড়ির ছোটোরা ছোটকার খুব ন্যাওটা ছিল। যাই হোক, ছোটকার সঙ্গে বাজারে গেছি। ছোটকা মিষ্টির দোকান থেকে আমায় পেট পুরে রসমালাই আর লেডিকেনি খাওয়াল। তারপর পরোটার ছোটো একটা ব্যাগ আমার হাতে দিল আর নিজের হাতে রাখল বড়ো ব্যাগটা। কিছু দূর যাওয়ার পর মনে হল একটা দেশি কুকুর আমাদের পিছু নিয়েছে। আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালাম। দেখলাম, কুকুরটা আমার পিছু পিছু ছুটছে আর ব্যাগটা শুঁকছে। ও কি তবে আমার হাতের পরোটার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চায়? আমি ছোটকাকে বললুম, ‘ওই দ্যাখো কুকুর।’
“ছোটকা বললে, ‘কুকুর তো কী হয়েছে? অমন ছোটা-ফাটা করিস না, কুকুর কিচ্ছু বলবে না।’
“আমি একবার ছুটে ছোটকার ডানদিকে যাই তো আরেকবার বাঁদিকে। কুকুরটাও আমার সঙ্গে সঙ্গে ডান-বাম করে। ছোটকা কয়েকবার ‘হেই হেই’ করে তাকে তাড়াবার চেষ্টা করল। কিন্তু সে আমার পিছু ছাড়ল না। শেষেটা ছোটকার উপর আর ভরসা রাখতে পারলাম না। লাগালাম ছুট। পিছন ফিরে দেখি কুকুরটাও আমার পিছন পিছন ছুটছে। ছোটকা যত বলে দৌড়াস না, আমি তত জোরে ছুটি। আর আমার পিছনে পিছনে ছোটে কুকুরটা। এইভাবে কুকুরটা আমায় বাড়ি পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে এল।”
সব শুনে ডোডো চোখ দুটো গোল গোল পাকিয়ে বলল, “কী সাংঘাতিক কাণ্ড গো দাদু!”
দাদু বললেন, “সে আর বলতে। সাংঘাতিক বলে সাংঘাতিক। আরেকবারের কথা শোনো। স্কুল থেকে ফিরছি। দেখি বড়ো রাস্তার উপর দুটো কুকুরছানা বসে কুঁইকুঁই করছে। ভাবলাম, গাড়ি এলেই তো বিপদ। বেচারারা চাপা পড়বে। বরং বাচ্চা দুটোকে সরিয়ে দেওয়া যাক। যেমন ভাবা তেমন কাজ। রাস্তা থেকে দু-হাতে দুটো বাচ্চা কোলে তুলে নিলুম। তারপর তাদের রাস্তার পাশের গাড়ি বারান্দাতে রাখতে গেলুম। এমন সময় ঘেউ ঘেউ ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মা কুকুরটা আমায় তেড়ে আসছে। সে বোধ হয় ভেবেছিল আমি তার বাচ্চা চুরি করতে এসেছি। আমি ওখানেই বাচ্চা ফেলে দে দৌড়। আর মা কুকুরটা এত পাজি, বাচ্চা না সামলে আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াল। উপায় না দেখে রাস্তার পাশের একটা আমগাছে উঠে পড়লুম। গাছের নীচে বসেও সে খানিকক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে চলল। কুকুরছানাদের আমি যে বিপদ থেকে বাঁচাচ্ছিলাম তা তো মা কুকুরটা বুঝলই না বরং ভুল বুঝে সে আমার শত্রু হয়ে গেল! এই ঘটনার পর থেকে ওই পথ দিয়ে আমায় স্কুল যেতে দেখলেই মা কুকুরটা তেড়ে আসত। ওর ভয়ে স্কুল যাবার সেই শর্টকার্ট রাস্তা দিয়ে যাওয়াটাই আমি দিলুম ছেড়ে। এ-গলি ও-গলি ঘুরে স্কুল যেতে লাগলুম। ফলে স্কুলে পৌঁছতে রোজ দেরি হতে লাগল। এই ঘটনার পর কেন জানি না আমার বিশ্বাস জন্মে গেল যে, সব কুকুরই আমায় শত্রু ভাবে। তাই কুকুর দেখলেই মনে হত এই বুঝি সে আমায় তেড়ে আসবে।
“আমাদের সময় নাইন-টেন মিলে মাধ্যমিক পরীক্ষা হত। তাই নাইন থেকেই সবাই সায়েন্স আর আর্টস গ্রুপ আলাদা আলাদা টিউশন পড়ত। সে সময় আমাদের এই দিকটায় সব থেকে ভালো সায়েন্স গ্রুপ পড়াতেন শুভেন্দুকাকু নামে একজন স্যার। তাই ক্লাস নাইনে বাবা আমায় শুভেন্দুকাকুর কাছে সায়েন্স গ্রুপ টিউশন পড়তে নিয়ে গেলেন। প্রথমদিন গিয়ে দেখি কাকুর বাড়ি ইয়া বড়ো এক বিলেতি কুকুর। সে জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে তার লম্বা জিভটা বের করে হাঁপাচ্ছে। সঙ্গে বাবা আছে বলে হয়তো আমার উপর এতক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। রিস্ক নিয়ে লাভ নেই বাবা! আমি বাড়ি ফিরেই বললাম, ‘কাকুর কাছে আমি পড়ব না।’
“বাবা বললেন, ‘কেন রে, কাকুর পড়ানো বুঝতে পারিসনি বুঝি?’
“আমি কিছু বললাম না। কী করে যে বাবাকে আমার সমস্যার কথা বলব, আর বললেও বাবা কি আর সে সমস্যা বুঝবেন? অগত্যা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“বাবা কিছু না বলে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ক্লাস নাইনে কাকুর কাছে পড়া আমার আর হল না। বাড়িতে একা একা পড়তে লাগলাম। সে যাই হোক, কুকুর ভীতির কারণে আমি অনেক কিছুতেই পিছিয়ে পড়তে লাগলাম। ক্লাস নাইনে সায়েন্স গ্রুপে আমার রেজাল্ট খারাপ হল। বাবা ফতোয়া জারি করলেন, ‘শুভেন্দুকাকুর কাছেই তোকে পড়তে হবে।’
“আমি বললাম, ‘কাকুর বাড়িতে কুকুর আছে, ওই বাড়িতে আমি টিউশন পড়ব না।’
“বাবা রেগে বললেন, ‘বাজে বকিস না। ফাঁকিবাজি চলবে না। ওই বাড়িতেই তোকে পড়তে যেতে হবে।’
বারান্দায় বসে ঠাকমা পান থেঁতো করছিলেন। থেঁতো পান মুখে পুরে ঠাকমা বললেন, ‘চিন্তা করিস না ভাই, কুকুর বশ করার মন্ত্র আমার জানা আছে। এদিকে আয় শিখিয়ে দিচ্ছি।’
“ঠাকমার কাছে গেলাম। ঠাকমা বললেন, ‘সামনে কোনো কুকুর দেখতে পেলেই ভয় না পেয়ে এই দ্যাখ, এমনি করবি আর কুকুরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবি। ব্যস, কুকুর-বাবাজি জব্দ হয়ে যাবে।’
“এ-কথা বলে ঠাকমা আমায় দেখিয়ে দিলেন কেমন করে ডানহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে সাত নম্বর কর ঠেকিয়ে রাখতে হবে।
“ঠাকমা একগাল হেসে বললেন, ‘এই ম্যাজিকে শুধু কুকুর কেন, কঠিন কঠিন অঙ্ক, পরীক্ষা, চাকরির ইন্টারভিউ সব জব্দ হবে।’
“পরদিনই আমি ঠাকমার সঙ্গে শুভেন্দুকাকুর বাড়ি গেলাম। কুকুরটাকে দেখে যথারীতি ঠাকমার ম্যাজিক অ্যাপ্লাই করলুম। ভালোই কাজ দিল। কুকুরটা আমার কাছে এসে আমার প্যান্টটা একবার গন্ধ শুঁকে সেখানেই বসে পড়ল। ঘেউ ঘেউ করল না। তেড়েও এল না। বেশ নিশ্চিন্ত হলুম। কাকুর কাছে পড়তে লাগলুম। এরপর থেকে রাস্তাঘাটে কুকুর দেখলেই আমি আঙুলের সাত নম্বর কড় বুড়ো আঙুলে ঠেকিয়ে কুকুরের দিকে নির্ভয়ে তাকিয়ে থাকতুম। কী বলব দাদুভাই, কোনোদিন কুকুরের তাড়া আর খাইনি। যাই হোক, সায়েন্স গ্রুপে আমি ধীরে ধীরে পোক্ত হয়ে উঠলাম। মাধ্যমিকে রেজাল্ট ভালোই হল। উচ্চ মাধ্যমিক, গ্রাজুয়েশনেও।”
এইটুকু বলে দাদু থামলেন।
ডোডো বলল, “দারুণ ম্যাজিক, দাদু।”
“হ্যাঁ দাদুভাই, এরপর থেকে জীবনে যেখানেই সমস্যায় পড়েছি ঠাকমার শেখানো ম্যাজিক অ্যাপ্লাই করেছি। অঙ্ক না পারলে, ইংরাজি পরীক্ষার আগে, এমনকি চাকরির ইন্টারভিউ হলে ঢোকার আগেও।” বলে দাদু খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগলেন।
ডোডো ভীষণ খুশি হয়ে বলে উঠল, “বেশ মজার ম্যাজিক তো!”
“কুকুরের ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এমনকি বিচারশক্তিও অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। নির্দোষীরা যে নির্ভীক হয়, এটা কুকুর ভালো করেই জানে। তাই নির্ভয়ে তার দিকে তাকালে, ভয়ে দৌড়োদৌড়ি না করলে কুকুর বুঝে যায় লোকটার কোনো বাজে মতলব নেই। তখন কুকুর আর তাকে তাড়া করে না।”
“আর বুড়ো আঙুলে সাত নম্বর কড় ছোঁয়ার ব্যাপারটা?”
“আসলে কী জানো দাদুভাই, জীবনে আত্মবিশ্বাসটাই সব। আত্মবিশ্বাস নিয়ে দু-হাতে গন্ধমাদন পর্বতও তুলে আনা যায়, সেখানে পরীক্ষায় পাশ করা কোন ছার। বুড়ো আঙুলে সাত নম্বর কড় ঠেকানোটা কিছুই নয়। কড়ে আঙুল ঠেকালে মনে একটা বিশ্বাস জন্মে। মনোবল দৃঢ় হয়। মনে হয় কাজটা আমি নিশ্চয় পেরে যাব। আর এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করলে জীবনের সব মুশকিলই আসান হয়ে যায়।”
আত্মবিশ্বাসে টগবগ ডোডোর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে ডানহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে সাত নম্বর কড়টা ছুঁয়ে বলল, “দাদু, তুমি দেখে নিও, বড়ো হয়ে আমি মস্ত বড়ো ডাক্তার হব।”
দাদু ভীষণ খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয় হবে দাদুভাই। মা দুর্গার কাছে সেই প্রার্থনাই তো সবসময় করি।”
খুব ভাল সহজ, সরল, নির্ভেজাল এক ছোটদের নিষ্পাপ গল্প। ভীষণ ভাল লেগেছে।
LikeLike
খুব সুন্দর লেখনী। এক কথায় অনবদ্য ।
LikeLike